হিন্দি থেকে অনুবাদ: কাজী মহম্মদ আশরাফ
এভাবে আমার মন বয়ে নিয়ে যাই
একা বসে ভাবছি
গত জীবনের সুখ-দুঃখের সহন
বিষধর সুধীজনের দংশনের যন্ত্রণা সয়ে যাই
এভাবে আমার মন বয়ে নিয়ে যাই
এলম খুঁজতে যাই না কোথাও
নিজেই নিজের প্রতি অতি নির্মম
বুকের ক্ষতের অশ্রুর ফোয়ারায় নেয়ে যাই
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মুখ থেকে
মানুষেরই তো বুক আমার!
লজ্জা নেই আমার দেবতার কাছে যদি
দুর্বলতা কয়ে যাই
এভাবে আমার মন বয়ে নিয়ে যাই
কেন জন্ম দিয়েছ
জীবন এবং সময়ের
টানাটানিতে ঘাবড়ে গিয়ে
আমার পুত্ররা আমাকে প্রশ্ন করে
কেন আমাদের জন্ম দিয়েছ?
আর এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই যে
আমার বাবাও কেন আমাকে জিজ্ঞাসা না করে
আমাকে কেন জন্ম দিয়েছিলেন?
আর আমার বাবাকে কেন
তাঁর বাবা জিজ্ঞাসা না করে.. ..
তাঁর বাবাও কেন তাঁকে
বিনা অনুমতিতে
জন্ম দিয়েছেন?
জীবন আর সময়ের টানাপড়েন
শুরু থেকেই ছিল
আজও আছে অনেক
আগামীতেও থাকবে হয়তো বেশি
তুমিই নতুন রেখা সৃষ্টি করো
নিজের সন্তানকে জিজ্ঞাসা করে
তাদের জন্ম দেওয়ার
নতুন অনুভূতি
আমি পাখিকে বলি, “তোমাকে নিয়ে
একটা কবিতা লিখতে চাই।”
পাখি আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার শব্দে কি আমার পালকের রঙ আছে?”
আমি বলি “নাই।”
“তোমার শব্দে আমার কণ্ঠের গান আছে?”
“নাই।”
“তোমার মব্দে আমার ডানার উড়াল আছে?”
“নাই।”
“প্রাণ আছে?”
“নাই।”
“তাহলে তুমি কেন আমাকে নিয়ে কবিতা লিখবে?”
আমি বলি, “তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে যে!”
পাখি বলে, “ভালোবাসার শব্দে কি জোড়া দেওয়ার
শক্তি আছে?”
নতুন এক অনুভূতি হলো
আমি চুপ হয়ে গেলাম!
কাল রাতে আমি কাঁদিনি
দুঃখকে যৌবনে ছড়িয়ে দিয়ে
তোমার বক্ষস্থলে মাথা রেখে
তোমার কোলে পাখির ছানার মতো লুকিয়ে রয়েছি
কিন্তু কাল রাতে আমি কঁদিনি!
প্রেমভরে ঘুরেছি উপবনে
ফল খেয়েছি, ফুল চুমেছি
দুর্দিনের ভার কাল রাতে ডানায় তুলে নেইনি
কিন্তু কাল রাতে আমি কাঁদিনি!
চোখের পানিতে বর্ষা ভরেছি
আমার চোখ ছিল তোমার বুকে
এভাবে স্বপ্নমধুবনে মধুবীজ বুনে দিয়েছি
কিন্তু কাল রাতে আমি কাঁদিনি!
ত্রাহি ত্রাহি করে ওঠে জীবন
রাত যখন কান পেতে শোনে
দেহমনের প্রবল একাকীত্বে
কবি যখন নিজের বাণীতে বিহ্বল ব্যাকুল মন
ত্রাহি ত্রাহি করে ওঠে জীবন!
যখন বুকের ব্যথায় কেঁদে ওঠে
যখন নিঃস্তব্ধতা বুঝে ওঠে মন
বিরহী যখন নিজের হাতে মোছে চোখের পানি
ত্রাহি ত্রাহি করে ওঠে মন!
পথ চলতে চলতে হঠাৎ থামে
পথের পাশে পাথরে বসে
যখন আপন ক্লান্তির পা অক্লান্ত চলার পথে
ত্রাহি ত্রাহি করে ওঠে মন!
ড্রইংরুমে মৃত্যুপথযাত্রী গোলাপ
গোলাপ
তুমি বিবর্ণ হয়ে গিয়েছ
ঘয়ে গিয়েছ বিশ্রী চেহারার
ঝুলে পড়েছ
তোমার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে
তুমি এখন শুষ্ক ফুল
তোমাকে এমন দেখে
আমার মন ভয়ে ভীত
ফুলও এত ভয়ঙ্কর হতে পারে!
আনন্দময় সুরম্য কক্ষে
তুমি যখন
ঋতুরাজের রাজদূত হয়ে এসেছ
রঙ রূপ রস গন্ধ—টাটকা
পাপড়ির স্তরে স্তরে
যেমন অমরত্ব ভর করেছিল
কৃত্রিমতা কত বড় এক
ঝটকা মেরে দিয়েছে
তুমি আকাশের নিচে শুতে
কুয়াশায় ধুতে তোমার মুখ
দুলতে তুমি বাতাসের দুলুনিতে
পাপড়িতে পাপড়িতে ছড়িয়ে পড়তে
ধরণীর আশ্রয়ে
নিসর্গে ছিলেও তুমি অটল সৌন্দর্য।
কেন বেঁচে আছি
অর্ধেকের বেশি জীবন
অতিবাহিত করার পরে আমি ভাবি
কেন বেঁচে আছি?
কিন্তু এরচেয়ে বড় আরেকটি প্রশ্ন
আমি কেন এভাবে চিন্তা করছি?
সম্ভবত এজন্য যে
জীবনটা এখন আর কর্ম নয়
চিন্তন মাত্র
এখন আর কাব্য নয়
দর্শন মাত্র!
যখন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার ছিল
বিজয় অর্জন করার ছিল
অজেয়র তনুমনে সৌন্দর্য অভিলাষ
গড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক ছিল
যখন শত্রুর উত্তেজনা বড় করে দেখার
বিভিন্ন সংঘাত-সংঘর্ষে নিজের
শক্তিরস দেখানোর ছিল
য়খন হৃদয়কে বড় করে দেখার
বৃদ্ধির বাড়বানলকে শব্দবন্ধে
রচনা করার ছিল,
ছন্দে গাঁথা এবং গাওয়ার ছিল
তখন তো কখনো এভাবে আমি
চিন্তা করিনি, “কেন বেঁচে আছি?”
কেন জীবনের কটু মধু
পাগলের মতো পান করে গেছি
আজ বাড়বানল নিভে গেছে
শান্ত হয়ে গেছে ঘূর্ণিবায়ু
বাড়াবাড়ি কমে গেছে
কেটে গেছে বয়স
স্বপ্নের মতো বেঁচে আছি
আজ বড় শূন্য শূন্য লাগে
কাল হয়তো এরচেয়ে বেশি হবে
আজ বালিশে হেলান দিয়ে
ওমর খৈয়াম পড়ার নয়
বিছানার পাশে গীতার সময়।
পড়তে পারেন: আলো নয় ছায়াও নয় ॥ কাজী মহম্মদ আশরাফ