ইরান নিয়ে বিতর্কের কোনো শেষ নেই। ইতিহাস বলে, বুর্জোয়া সমাজের লাল চোখ সবসময় ইরানের ওপর ছিল। তাদের সমাজ, জীবন-বাস্তবতা নিয়ে যত না কথা হয়েছে তার চেয়ে বেশি কথা হয়েছে তাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে। অথচ ইরানের সমাজবাস্তবতার কোনও চিত্রই সামনে আনেনি বুর্জোয়া শ্রেণীর গণমাধ্যম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সবসময়ই ইরানকে তুলে ধরেছে নেতিবাচক হিসেবে। এসব নেতিবাচক প্রচারণার সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে চলেছেন ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতারা। বিশেষ করে আশির দশকের পর থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাতাদের লেন্সে উঠে আসতে শুরু করে ইরানের সমাজচিত্র। ঠিক তখন থেকেই বিশ্ব জানতে শুরু করেছে, তাদের জীবনেও সংগ্রাম আছে, তাদেরও সম্পর্কে আবেগ আছে, অনুভূতি আছে।
ইরানি চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্ব দরবারে হাজির হয়েছেন বেশ কয়েকজন পরিচালক। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে অবশেষে ‘অ্যা সেপারেশন’ ছবি জয় করেছে অস্কার। লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক আজগর ফরহাদির নির্মাণে দেখা যায়—সত্য কিভাবে বাস্তবরূপে হাজির হয় মানবজীবনে। তার গল্পে উঠে আসে সম্পর্কের বেড়াজালে আটকে যাওয়া অতীতও। আজগর শুধু সম্পর্কের বাস্তবতাকে তুলে আনেননি, তিনি মানবমনের জটিল, কূটিল অবেগ ও দ্বন্দ্বকেও তুলে এনেছেন মুন্সিয়ানার সঙ্গে। বিশ্বকে জানিয়েছেন, ইরানের মানুষও রক্তে-মাংসে তৈরি মানব। তাদেরও মনের সমুদ্রের অনেক ঢেউ খেলা করে, যা বিশ্বের সব মানব হৃদয়ে ঘটে যায়।
আজগর ফরহাদির ছবি ‘অ্যা সেপারেশন’ ২০১১ সালে মুক্তি পায়। বাস্তবতানির্ভর ছবিটি ২০১২ সালে বিদেশি ভাষায় সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার জয় করে ইতিহাস রচনা করে। এরপর ২০১৩ সালে নির্মাণ করে আরেক অনবদ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য পাস্ট’। এই ছবির পর ইরান চলচ্চিত্র বিশ্ব দরবারে মাথা আরও উঁচু করে দাঁড়ায়। আর এই সাফল্যের জন্য আজগর ফরহাদিকেই উল্লেখ্যযোগ্য নির্মাতা হিসেবে বলা যেতে পারে।
হাজলিট নামক একটি অনলাইন আজগর ফরহাদির সঙ্গে বিশেষ আলাপে বসেছিল। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি সাক্ষাৎকারটি হাজলিট প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন, কালাম মার্স। তিনি চলচ্চিত্র সমালোচক। চিন্তাসূত্রের জন্য সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন শেরিফ আল সায়ার।
আপনার অধিকাংশ চলচ্চিত্রে দেখা যায়, জীবন হুট করেই থমকে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। গল্পের ঠিক ওই মোড়টিই হয়ে ওঠে আবেগপ্রবণ। যেমন, ‘অ্যাবাউট অ্যালি’ ছবিতে বন্ধুদের একটি দল ছুটি কাটাতে আসে। কিন্তু মাঝপথে হুট করেই তাদের একজন নিখোঁজ হয়ে যায়। ‘আ সেপারেশন’ ছবিতেও দেখা যায় একজন মানুষ সংগ্রাম করছে তার বয়স্ক বাবার সেবা করার জন্য। ঠিক ওই মুহূর্তেই তার জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সবকিছু মোড় নিয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করে। কিন্তু ‘দ্য পাস্ট’ ছবিতে ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে।
এটা অবশ্য ঠিক ‘দ্য পাস্টে’র সঙ্গে এবং আমার নির্মিত অন্য ছবিগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমার আগের ছবিগুলোর মধ্যে ঘটনা ঘটছে তখনই যখন আপনি গল্পটি দেখছেন। ‘অ্যাবাউট অ্যালি’ ছবিতে একটি মেয়ে আমাদের চোখের সামনে হারিয়ে যায়। আবার ‘আ সেপারেশন’ ছবিতে স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এই দুই পরিস্থিতির বাস্তবতা আমরা অনুভব করতে পারি। কিন্তু ‘দ্য পাস্ট’ ছবির অধিকাংশ ঘটনাই ঘটে গেছে ৪ বছর আগে। এখন আমরা শুধু তার ফলোআপ দেখছি। সময়ের আলাদা গুরুত্ব আছে। তাই এই ছবিটির সঙ্গে অন্য ছবিগুলোর পার্থক্য রয়েছে। এবং এজন্য হয়তো, হতেও পারে অন্যান্য ছবির তুলনায় এই ছবির রিদম একটু অন্যরকম। যেমন, আ সেপারেশন ছবিতে আদালতের পরিবেশ ছিল খুব দ্রুত। ছবির দম্পতি এখন একসঙ্গেই আছে, এর পর তারা আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু ‘দ্য পাস্ট’ ছবির দম্পতি ইতোমধ্যে আলাদা হয়ে গেছেন। তারা আদালতে গেছেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য। তারা শুধু কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেবেন। এজন্যই ওই দৃশ্যটির গতি ছিল খুব ধীর-স্থির। কারণ মাটির ওপর তখন শান্ত, অথচ ভেতরে পুড়ছে আগুন।
কিন্তু আরও একটা পার্থক্য চোখে পড়েছে। আমার মনে হয়েছে, এই ছবিটি শুধু একটা নতুন ঘটনার সূত্রপাত করেনি, একই সঙ্গে নতুন তথ্যও যোগ করেছে। তার সমস্ত দৃষ্টি ছিল অতীতের পর্দা সরিয়ে দেওয়া।
আপনি ঠিকই বলেছেন। অন্য ছবিগুলোতে ঘটনা আছে। সবকিছু ওই ঘটনাকে নিয়েই ঘটতে থাকে। কিন্তু এই ছবিতে একটি তথ্য আছে। যে তথ্যটি ধুলোয় ঢেকে গেছে। চরিত্রগুলোর দায়িত্ব ছিল ওই ধুলোকে মুছে দেওয়া। অনেকটা আর্কেওলজিস্টদের মতো। তারা সর্বক্ষণ নিত্যনতুন তথ্যের ওপর থেকে ধুলো সরিয়ে দেন। এজন্যই গল্পের তথ্যগুলো দর্শকের কাছে খুব ধীরগতিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এই ছবির মধ্যে অনেককিছু আছে যেগুলোর কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এমনকি অন্য কোনও বক্তব্যের মধ্যেও আসেনি। যেমন, আমরা কেউ তার প্রথম স্বামী সম্পর্কে জানতে পারি না। এমনকি আমরা এও জানতে পারি না মূল চরিত্রের সঙ্গে মেয়েটির কেন ডিভোর্স হয়েছিল। এসব বিষয়ে সম্পর্কে লেখার সময় আপনার প্ল্যানটা কী ছিল, যদিও আপনি জানেন, এসব তথ্য দর্শকের সঙ্গে আপনি শেয়ার করবেন না।
কখনো কখনো আমি জানতাম কিন্তু আমি এগুলো শেয়ার করব না। অন্যসময়গুলোতে আমি সত্যিই কিছু জানতাম না। আমি মনে করি, কেন সবকিছু দেখাতে হবে? আমি মনে করি, হয়তো তার প্রথম স্বামী সম্পর্কে বলে দেওয়ার চেয়ে সেটা দর্শকের ওপরই ছেড়ে দেওয়া ভালো। তারাই একটা গল্প নিজেরা বানিয়ে নিক। আমার কাছে এটাই সঠিক পথ মনে হয়েছে। যদি আমি তার প্রথম স্বামী সম্পর্কে কিছু বিষয় বলে দিতাম, তাহলে দর্শকদের কল্পনা শক্তি খুব বেশি এগুতো না। কিন্তু কিছুই না বলা মানেই হলো, দর্শক তার কল্পনা শক্তি দিয়ে একটি পূর্ণ গল্প তৈরি করে ফেলবে।
উদাহরণ দিয়ে বলা যাবে। যেমন, আহমাদ তার স্ত্রীকে ৪ বছর আগে ছেড়ে গেছে। আমি এটাই বলতে চেয়েছি। কিন্তু আমি চেয়েছি এভাবেই দর্শকের কাছে ছবিটি শেষ হোক। আমি চেয়েছি দর্শকরা ছবি তাদের হৃদয়ের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তার মনে প্রশ্ন আসবে। প্রশ্নটি চিরজীবন হৃদয়ে থেকে যাবে। সেটি হলো—কেন সে ছেড়ে গিয়েছিল? আমার মনে হয়, আমি অনেক কিছুই বলে দিয়েছি কিছু না বলার মধ্যে। যেমন, আমরা জানি না কেন আহমাদ ৪ বছর আগে চলে গেল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যখন সে ফিরে আসল তখন সে সবসময় চেয়েছে সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে। এটিই কিন্তু অনেক কিছু বলে দেয়। আমরা কল্পনা করতে পারি, এমন অনেক চরিত্র আমাদের সমাজে আসে। যারা সব সমস্যা দূর করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে অনুভব করে, আসলে কিছুই করা হলো না। এভাবেই পরোক্ষভাবে আমি বোঝাতে চেয়েছি।
আমার কাছে এটাও মনে হয়েছে—দর্শকরা শুরু থেকেই অনেক প্রশ্ন করেছে। এটা খুব স্বাভাবিক—যে চরিত্রগুলোকে কেউ একজন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে খুব দ্রুত। এবং কীভাবে তারা এই ছবির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই বিষয়টিও উঠে আসে, কিন্তু এই ছবিতে আপনি এটা করেননি। ছবির শুরুতে আহমাদ যাদের সঙ্গে দেখা করছে তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী? এটা স্পষ্ট ছিল না। বিশেষ করে বাচ্চাদের সঙ্গে।
আপনি যখন গল্প বলবেন তখন আপনাকে নাটকীয়তা মাথায় রাখতে হবে। নাটকীয়তা মানেই হলো দর্শক ভাবতেও পারবে না- ঠিক পর মুহূর্তে কি হতে যাচ্ছে। আমার জন্য এটা কোনও খেলা নয়- এটার পেছনে দর্শন আছে। এবং এটা জীবনের মতোই। কারণ ঠিক পরের মুহূর্তে আমার জীবনে কী হবে আমি জানি না। এই অজানা বিষয়টাই আমাদের জীবনকে আকর্ষণীয় করে তোলে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, অনেক সময় আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেন, আমার দেশে মানুষ কীভাবে থাকে? এবং আমি কেন সেখানে ফিরে যেতে চাই? আমি তাদের বলি, এটা খুব আকর্ষণীয় আমার কাছে, কারণ আমি জানি না আমার সঙ্গে সেখানে কী হবে। সুইজারল্যান্ডে পাঁচ বছরের প্ল্যান তৈরি করে চলা যায়। কিন্তু আমি সুইজারল্যান্ডে থাকতে চাই না। কারণ আমি যদি জানি পরবর্তী ৫ বছরে আমার সঙ্গে কী হতে যাচ্ছে, তাহলে সেই জীবনে মজা কোথায়? আমার গল্পের জন্যও বিষয়টা এমনই। আমি চাই না আমার দর্শকরা জানুক এক মিনিট পরে তারা কী দেখতে যাচ্ছে।
‘অ্যা সেপারেশন’ ছবিতে দর্শকদের সহানুভূতি ছিল প্রধান চরিত্র নাদিরের জন্য। কিন্তু ছবির গতি যতই এগিয়েছে ততই নাদিরের মানবতার সঙ্গে সহানুভূতি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছিল। যাইহোক, কিন্তু দ্য পাস্ট ছবির প্রধান চরিত্র দেখতেও খুব স্ট্রেটফরওয়ার্ড ছিল। এমনকি ছবির একমাত্র চরিত্র ছিল অত্যন্ত সবল এবং শক্তসামর্থ্য। এটা কি মানবতাবোধের সঙ্গে অনেকটা বিভ্রান্তির তৈরি করে না?
প্রথমত বলতে চাই হ্যাঁ। আহমাদ দেখতে অনেক শান্ত এবং ছবির সবচেয়ে নিরাপদ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। কিন্তু ছবির একজন মানুষ আছে যে এটা বিশ্বাস করে না। সেটা হলো ম্যারি। সে বিশ্বাস করে তার জীবনের সব সমস্যার সূত্রপাত হয় আহমাদের চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। সে কিন্তু এটাও বলেছে, যখনই সে অনুভূব করে আহমাদ একজন অসাধারণ মানুষ, তখন সে পেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করে। আমরা যদি অগভীরভাবে চরিত্রগুলোর দিকে তাকাই তবে হ্যাঁ, মনে হবে সে খুব দয়াবান, খুব অসাধারণ মানুষ তার বাচ্চাদের সঙ্গে। কিন্তু একটু যদি গভীরভাবে তাকাই তখন আমরা অনুভব করব, সেই সবকিছুর জন্য দায়ী। আহমাদ এই ছবিতে অনেকটা গোয়েন্দাদের মতো। সে একটা ধাঁধার উত্তর বের করতে চায়। সে এমন কাউকে বের করতে চায় যাকে সে দায়ী করতে পারবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বুঝতে পারে আহমাদ নিজেই সেই ব্যক্তি, যাকে সে খুঁজে ফিরছে। এবং এজন্যই হয়তো সে সবকিছুকে ঢাকার চেষ্টা করছিল। যার জন্য তার পরিবার এবং তার স্ত্রীর জীবনে কষ্ট নেমে এসেছিল।
এমনটা মনে হয়, আহমাদ যখন তার স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে মেয়ের কাছে জানতে চায়।
হ্যাঁ। আহমাদ তার মেয়েকে চাপ দেয় সত্য বলার জন্য। সে বিশ্বাস করত, সে সঠিক কাজটিই করছে। কিন্তু কেন? সে তো নিজেই সত্য বলছে না? সে এমন একটা পথকে বেছে নিচ্ছে যেখানে সে বুঝাতে চাইছে তার কোনও দোষ নেই। এভাবেই সে পুরো ছবিতে বিষয়টা মিটমাট করার চেষ্টা করে গেছে।
এভাবেই সে বিপরীতভাবেই কাজটি করে গেছে।
আমরা জীবনে এমনই করি। সত্যের জন্য সবসময় বড় মূল্য দিতে হয়। এজন্যই বেশিরভাগ মানুষই মিথ্যা বলি। কারণ, এর ফলে আমাদের জীবন সহজ হয়ে ওঠে।
দুটি ছবিই একটা অস্পষ্টতার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। আপনি কেন এমনটা করেছেন?
এটার কিছু কারণ আছে। আপনি যদি দাবি করেন, আপনার ছবি বাস্তবধর্মী অথবা ডকুমেন্টরির মতো, তাহলে আপনাকে বিষয়টার সঙ্গে সততা রাখতে হবে। বাস্তব জীবনে কোনও কিছুরই সমাপ্তি হয় না। বাস্তব জীবনের কোনও গল্পই শেষ হয় না। যেমন, একজন ছেলে এবং মেয়ে প্রেমে পড়ল। তাদের গল্প কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। এটা চলবে। এটা শেষ হবে না যতক্ষণ না তারা আলাদা হবে। আমি আসলে সমাপ্তিতে বিশ্বাসী নই। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। এজন্য আমি ছবির কোনও সমাপ্তি রাখতে চাই না। আমি চাই দর্শকরা ছবিটি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরুক। আমি এমন জায়গায় ছবিটি শেষ করতে চাই যেখান থেকে আরেকটি নতুন গল্প শুরু হতে পারে। ওই গল্পটা দর্শকই বানাবে। যেমন, অ্যা সেপারেশন ছবির শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়, দম্পতির কন্যা সন্তান কার সঙ্গে থাকবে? বাবার সঙ্গে নাকি মায়ের সঙ্গে। এই সিদ্ধান্ত তার ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়। ঠিক এটাই আরেকটা গল্পের সূত্রপাত করে। আমি খুব সচেতনভাবেই আমার দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে চাই না। তা না হলে তারা ছবিটি উপভোগ করতে পারত না।
এটা অবশ্য একটা সন্দেহের মুহূর্তও তো তৈরি করে। যদি আমরা কোনও সিদ্ধান্তেই উপণীত না হতে পারি। আপনি কি মনে করেন, যদি আপনি এভাবে শেষ করতেন, বলে, অ্যা সেপারেশন ছবি- যেখানে দেখানো হবে, মেয়েটি বলে দেবে সে কার সঙ্গে থাকতে চায়। এতে দর্শকরা কি পূর্ণতৃপ্তি পেত? না কি কম সন্তুষ্ট হতো?
দর্শকরা হয়তো অনেক খুশি হতো। কিন্তু তারা ছবিটি ভুলে যেত। বাস্তবতা হলো, মানুষ এখনও আমাকে রাস্তায় আটকায় এবং প্রশ্ন করে ছবির শেষ দৃশ্য নিয়ে। তার মানে হলো মানুষ এখনও আশঙ্কায় আছে মেয়েটির ভবিষ্যত নিয়ে। আমি যদি কোনও সিদ্ধান্ত জানিয়ে ছবিটি শেষ করে দিতাম, তাহলে সবাই পূর্ণসন্তুষ্ট নিয়ে ঘরে ফিরে যেত। আমি কোনও সিদ্ধান্ত দেইনি। তার মানে হলো, দর্শকরা ছবিটির গল্প মাথায় নিয়ে বাড়ি গেছে। সারাজীবন এই গল্প তার হৃদয়ে, তার কল্পনা জগতে থেকে যাবে।