লেবাননের কবি অনুবাদক ও সাংবাদিক জুম্মানা হাম্মাদ ১৯৭০ সালে বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন। গত ৪ বছর যাবত তিনি ক্ষমতাশালী ১০০জন আরব নারীর একজন হিসেবে নির্বাচিত। আরবি ভাষার ষাণ্মাসিক ম্যাগাজিন জাসদ-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা। ৭টি ভাষায় তিনি কথা বলতে পারেন এবং ভাষাবিজ্ঞান ও অনুবাদকর্মে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি বৈরুতের Lebanese American University-তে সৃজনশীল লেখালেখির ওপর শিক্ষকতা করছেন। সাহিত্যকর্মের জন্য দেশে-বিদেশে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো Invitation to a secret feast (২০০৮), Two hands to the abyss (২০০০), I did not sin enough (২০০৩), Bad habits (২০০৭), Geology of the I (২০১২)।
নীল বৃক্ষ
যখন তোমার চোখ আমার নিঃসঙ্গতাকে অবলোকন করে
নৈঃশব্দ্য হয়ে যায় ফল
এবং ঘুম রূপান্তরিত হয়ে যায় ঝড়ে
লুকোনো দরোজাগুলো খুলে যায়
এবং জল শিখে যায় কী করে ভুগতে হয়।
যখন আমার চোখ তোমার নিঃসঙ্গতাকে অবলোকন করে
আকাঙ্ক্ষা উদ্দীপিত ও বিস্তৃত হয়
কখনোবা নগ্ন ঢেউয়ের মতো
দৌড়ায় এক ঢেউ সীমাহীন
কিংবা দুর্বলতার মতো ঝরে ফোঁটায় ফোঁটায়
দুর্বলতা নিদারুণ যন্ত্রণার চেয়েও পোড়ায়
শুরুটা কখনো পরিণত হয় না শেষে।
যখন তোমার চোখ এবং আমার নিঃসঙ্গতা মিলিত হয়
আমি বৃষ্টির মতো নগ্ন আত্মসমর্পণ করি
স্বপ্নের বক্ষদেশের মতো সুবিশাল
দ্রাক্ষালতার মতো কচি যাকে পরিপক্ক করে সূর্য
বহুগুণে আমি সমর্পিত হই
যতক্ষণ না তোমার প্রেমবৃক্ষ জন্ম নেয়
এত উঁচু এবং অবাধ্য
এতোই অবাধ্য যে আমার
তীর ফিরে আসে ছিলায়
আমার মেঘমালায় আঁচড়ায় নীল তালু
বর্ধনশীল আকাশ যাকে কিছুতেই ফেরানো যায় না।
পিশাচ
যখন আমি বসি তোমার সামনে আগন্তুক
আমি জানি কতটুকু সময় প্রয়োজন
আমাদের মধ্যকার দূরত্ব সমাহিত করার জন্য
তুমি তোমার বুদ্ধিদীপ্তির চূড়োয়
এবং আমি আমার ভোজের চূড়ায়
তুমি ভাবছ কিভাবে শুরু করবে আমার সঙ্গে খেলা
এবং আমি আমার গাম্ভীর্যের পর্দার নিচে
ইতোমধ্যে তোমাকে ভোগ করতে শুরু করেছি।
মনে রাখি না আমি
মনে রাখি না আমি
যা আমি দিবালোকে পোশাক অনাবৃত করি
এক পুরুষের জন্য
যার চোখগুলো ছিলো বন্ধ।
মনে রাখি না আমি
যে আমি দৌড়েছিলাম লালার মতো
এবং সে এক অরাধ্য আকাঙ্ক্ষা
এবং আমি ক্ষুধায় লোভী
এবং সে ছিলো এক অসম্ভব বিছানা
এবং আমি ছিলাম বিজয়ী
এবং সে এক কঠোর শহর।
মনে রাখি না আমি, মনে রাখি না
এবং আমি ঝড়ের মতো লোকটিকে জয় করি
এবং সে ছিলো আমার দুর্বলতার দিকে তাকিয়ে থাকা উন্মুক্ত দরোজা
এবং আমি তাকে আক্রমণ করি জ্বরের মতো
এবং তার দৃষ্টিবিভ্রম গলধঃকরণ করে আমার জিহ্বা।
আমি জানতাম পুরুষের শরীরগুলো হলো ভ্রমণ
এবং আমার শরীর হলো অবতরণ ও সহজ বিদায় অভ্যর্থনা
আমি জানতাম পুরুষের হৃৎপিণ্ড হলো একজোড়া হাত
এবং আমার হৃৎপিণ্ড হলো শ্বাসরোধের প্রতিজ্ঞা
যা থাকে মিথ্যে এমনকি যখন তা বিজয়ী হয়।
আমি জানতাম পুরুষের আগমণ হলো এক বিনম্র বন্যা
এবং তাদের প্রস্থান হলো এক ক্ষণস্থায়ী বিপর্যয়
আমি জানতাম কিভাবে তাদের ভুলতে হয়
এমনকি তারা ঝড়ে উড়িয়ে নেয় স্মৃতির ধুলো।
কোনো পুরুষকে কখনো জানতাম না আমি
যার হৃৎপিণ্ড অনুমতি দেয় বিমলানন্দ যা পূর্ববর্ণিত হঠাৎ বিপর্যয়
কোনো পুরুষকে কখনো জানতাম না আমি
যে আমাকে পরিবর্তিত করতে পারে
ঈভ থেকে রমণীতে।
শব
আমি তাকাই আমার শবের দিকে যেখানে তা শুয়েছিল এবং আমি নিজেকে আবিষ্কার করি সুন্দরী। সুন্দরী হলো আহত উপাখ্যান। সুন্দরী হতে পারে শুধু কেউ একজন। আমি আমার শবের দিকে তাকাই এবং আমার শব হলো একটি তার। আমি এর দড়াবাজিকর, এর জিম্মি। এটি কম্পিত হয় এবং আমাকে ফেলে দিতে শাসায়। আমি একে জড়িয়ে ধরি, একে অভিশাপ দেই। তখন হঠাৎ এটি হয়ে যায় মই, এক বলিচিহ্ন, এক হাবুডুবু যার মাধ্যমে আমি আমার পাহাড়গুলোর বিদায় অভ্যর্থনার ডাক থামাতে পারি যা বাস করে আমাকে ছাড়া।
আমার শেষকৃত্যের সময় নাচ হবে, তাতে নিশ্চিত আমি। প্রত্যেক মুখের জন্য থাকবে একটি করে শব্দ, এ আনকোরা ঘৃণা খুলির প্রতিটি হাড়ের জন্য। আমার শেষকৃত্যের সময় নাচ হবে এবং পদক্ষেপের নিচে ঘাস হবে ভারি। করুণাহীন পাহাড়, তাতে চড়া হবে (কিংবা হবে অবরোহণ) মায়ের পেটের মতো যখন তিনি দিয়েছেন যা কিছু ছিল তার দেওয়ার।
ওই তারে আমি হেঁটে যাই আমার শবকে নাড়াচাড়া ব্যতিত। যতক্ষণ না ওকে পুরা হয় এক কাঠের বাক্সে। ওর ওপরে ঢেকে দেওয়া হয় কাপড়ে। পাখিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় সেখানে আসন গ্রহণের। গান গাইবে কিন্তু কবিতা নয়; যেভাবেই হোক ফুলেরা চারপাশে। এর পরিবর্তে হাঁটু গেড়ে বসে এবং ক্ষমা চায় পত্রাবলি যা তোমাকে ছায়া দেয়, কাপড় যা তোমাকে ঢেকে রেখেছে, আকাশ যা মানুষের বিশ্বাস বহন করছে।
আমি আমার মাথা তুলি, আমার অপূর্ব মৃত রমণীর মস্তক এবং সড়কের দিকে তাকাই যেপথে ফিরে যাব আমি। আমি দেখি অপরিব্যপ্ত পাথর যা আমার অনুপস্থিতিকে মনে রাখবে। আমার ভেতর কিছু একটা ঘুমায় এবং আমি জেগে থাকি। কিছু একটা ঘুমায় আমার মধ্যে এবং এটি ছিল আমি নই: সম্ভাব্য সর্বোৎকৃষ্ট জীবন যা আমি যাপন করতে জানি না। তোমার কাছ থেকে কিছুই প্রয়োজন নেই আমার। আমার লাশ মুচকি হাসে আমার প্রতি, আমার ঘাড় প্রায় স্বচ্ছ এবং আমি আমার স্বভাবে বিস্মরণপ্রবণ।
এ নিয়ে এগিয়ে যাও: এখন নাচের সময়।