প্রথম আমেরিকান লেখক হিসেবে এ বছর (২০১৬) ‘ম্যান বুকার প্রাইজ’ পেয়েছেন পল বেটি। তার চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য সেলআউট’-এর জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। তাঁর এই উপন্যাসে মার্কিন বর্ণবাদী রাজনীতিকে স্যাটায়ার করা হয়েছে। বুকার কমিটি বেটিকে মার্ক টোয়েন ও স্যাটায়ার সাহিত্যের মাস্টার জোনাথন সুইফটের সঙ্গে তুলনা করে। পল বেটি একজন অ্যামেরিকান কবি-কথাসাহিত্যিক। তিনি ১৯৬২ সালে আমেরিকার লসএঞ্জেলসে জন্মগ্রহণ করেন। নিজেকে একজন ‘আফ্রো-অ্যামেরিকান’ লেখক বলার চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ লেখক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ পর্যন্ত দুটি কাব্যগ্রন্থ ও চারটি উপন্যাস বের হয়েছে। প্রথম উপন্যাস ‘হোয়াইট বয় শাফল’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। এই বইটি দিয়ে সাহিত্য জগতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। বইটি ইতালি, জার্মানি, ফ্রেঞ্চসহ কয়েকটি ভাষায় এ পর্যন্ত অনূদিত হয়েছে। তার লেখার প্রধান বিষয়বস্তু সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জগৎ, আশা-হতাশা ও ইতিহাসের প্রচ্ছন্নতা। সম্প্রতি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ফ্রেডরিক সিলভেনিজ তার একটি সাক্ষাৎকার নেন। চিন্তাসূত্রের জন্য সাক্ষাৎকারটির সংক্ষেপিত ভাষান্তর করেছেন তরুণ অনুবাদক-সাহিত্যিক অজিত দাশ
ফ্রেডরিক: আপনার ‘হোয়াইট বয় শাফল’ উপন্যাসটি প্রধাণত লসএঞ্জেলসের বোস্টনকে কেন্দ্র করে।আপনি লসএঞ্জেলসে জন্মগ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাই।
বেটি: আমি লসএঞ্জেলসে জন্মগ্রহণ করেছি। সেখানে পড়াশোনা করেছি। পরে নিউইয়র্কে চলে আসি। আর কখনো লসএঞ্জেলসে ফিরে যাওয়া হয়নি।
ফ্রেডরিক: উপন্যাসে উল্লিখিত গানার মতো আপনিও বাস্কেট বল খেলেছিলেন?
বেটি: না।
ফ্রেডরিক: কেন বোস্টনে পড়াশোনা করেছেন?
বেটি: সুস্পষ্ট কোনো কারণ নেই। আমি খুব ভালো ছাত্রও ছিলাম না। তবে মোটামোটি ভালো একাডেমিক রেজাল্ট ছিল। লসএঞ্জেলসে থাকাকালীন খুব হতাশায় ছিলাম। অনেক চিঠি পেয়েছি। কলেজ আমাকে বরাবরই খুঁজে বেড়াতো। পরে মনে হলো লসএঞ্জেলস থেকে বোস্টনের দূরত্ব অনেক। এটা ভালো সিদ্ধান্তই হয়েছে, সেখান থেকে চলে এসেছি। তবে এর বেশি কিছু নয়।
ফ্রেডরিক: কত বছর বয়সে লসএঞ্জেলস থেকে বোস্টনে এসেছেন?
বেটি: সতেরো বছর বয়সে।
ফ্রেডরিক: তার মানে আপনি পরিবার থেকে অনেক দূরেই আছেন?
বেটি: হ্যাঁ। কিন্তু আমার লসএঞ্জেলস ছাড়ার প্রয়োজন ছিল। তাই চলে বেরিয়ে এসেছি।
ফ্রেডরিক: আপনি বলেছিলেন আপনি হতাশ ছিলেন…
বেটি: হ্যাঁ। সচরাচর কিশোর বয়সে মানুষ যে রকম মানসিক সংকটে ভুগে থাকে, আমিও সেরকম মানসিক সংকটে ভুগেছিলাম।
ফ্রেডরিক: সে সময়ে আপনার আশপাশ কেমন ছিল?
বেটি: খুব মজাদার। আমরা সানটা মনিকা ছেড়ে বের হয়ে পড়েছিলাম। সেখানে আশি শতাংশ শ্বেতাঙ্গদের বসবাস ছিল। কিন্তু স্কুলগুলোতে প্রায় ষাট শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গের দেখা যেত। আমাদের চারপাশে বেশিরভাগ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার বসবাস করত, ফিলিপিনো কিছু পরিবারও বাস করত। রাস্তার দিকে শ্বেতাঙ্গ পরিবারের বসবাস ছিল। এটা সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া তাই একটা বৈচিত্র্য তো অবশ্যই ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার চেয়ে এদিকের বৈচিত্র্য তুলনামূলক আলাদাই ছিল। আমাদের আশেপাশে অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারদেরই বসবাস ছিল এবং অনেক ঘনবসতি ছিল। লসএঞ্জেলসের ভৌগলিক কারণেই আমাদের চারপাশে একটা ভূতুড়ে পরিবেশ ছিল। আপনি হয়ত নিষিদ্ধ কিছু নামের কথা শুনে থাকবেন যেমন ‘ফিশবোন’? তাদের একটা বাজে প্রভাব আছে সেখানে। এই দলটিকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্রে তারা এমনভাবেই অভিনয় করেছে, যেন সাউথ সেন্ট্রালের প্রতিবেশীদের মতো তারাও শিষ্টাচারহীন। এই দলটিকে নিয়ে আমার উপন্যাসে আমি কিছু তথ্য দিয়েছি। লসএঞ্জেলসে এ রকম অনেক দল আছে। সেখানকার একটি স্থানীয় দলের নাম হলো ‘প্ল্যাবয় গ্যাংস্টার’। আমি জানি না—তারা এখনো আছে কিনা।
ফ্রেডরিক: আপনি কিভাবে এগুলোতে সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন?
বেটি: ওহ না। আমি তাদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছি সবসময়ই। কিন্তু এই দলগুলো চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লোকজনকে বিভ্রান্ত করছে। যৌবনকালে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অন্যদের ঠিক করে দেওয়া নিয়ম-নীতিগুলো আমাদের বিভ্রান্ত করে। যখন দেখা যায় কেউ নির্ধারণ করে দেয়,তখন তুমি কিভাবে তোমার জীবনধারণ করবে? কারও সঙ্গে কিভাবে কথা বলবে, কোন ধরনের জামাকাপড় পড়বে? একবার মা আমাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের পরিহিত বোম্বার জ্যাকেটের মতো একটি জ্যাকেট কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সবচেয়ে গাঢ়-নীল রঙের জ্যাকেটিই পছন্দ করেছিলাম।
ফ্রেডরিক: আমি আপনার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আপনার মায়ের অনেক গল্প আছে সেখানে। আপনি একবার আমাকে বলেছিলেন, আপনার মায়ের জাপানি জিনিসের প্রতি খুব আগ্রহ আছে। লসএঞ্জেলস খুব বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি জায়গা বিশেষ করে সেখানে নানারকম সংস্কৃতির একটা সমন্বয় আছে। খুব কম বয়সেই শিশুরা সেগুলোয় প্রবেশ করতে পারে।
বেটি: আমারও তাই ধারণা। অনেকেরই হয়ত সেই সুযোগ ঘটে। তবে আমার ধারণা—সবাই বোধহয় সেখান থেকে ঠিক সুবিধাটা আদায় করে নিতে পারে না। যখন আমি স্কুলে পড়ি তখন শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গেই স্কুলে যেতাম। সেই ষাটের দশকের শেষের দিকে আমার মা কাজের সূত্রে নানা রকম লোকের সঙ্গেই চলাফেরা করেছেন। বিশেষ করে মেক্সিকান ও এশিয়ান লোকদের সঙ্গে কাজও করেছেন। যখন আমি জুনিয়র স্কুল শেষ করে হাই স্কুলে প্রবেশ করেছি, তখন একটা কৃষ্ণাঙ্গ স্কুলে পড়েছি। সেখানে একজন শ্বেতাঙ্গ ছেলে ছিল—নাম ডেভিড। সে সবসময়ই আমার সঙ্গে চলাফেরা করেছে। একদিন কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে নানা গল্প করেছিল আমার সঙ্গে। বলেছে—কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পর্কে তার কোনো জানাশোনা নেই। আমি বলেছি—কী বলো? তুমি এখানে জুনিয়র ক্লাসে পড়াশোনা করেছ, অথচ তাদের সম্পর্কে কিছুই জানো না? মজার বিষয় হলো সে তো আমার সঙ্গেই চলাফেরা করেছে অথচ তার কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে ধারণাই তৈরি হয়নি। আমি জ্বলজ্যান্ত তার সঙ্গেই ছিলাম অথচ সে আমাকে ঠিক মতো দেখতে পায়নি।
ফ্রেডরিক: বোস্টন থেকে নিউইয়র্কে চলে এসেছেন কেন?
বেটি: আমি গ্রেড স্কুলে পড়তে চেয়েছিলাম এবং সেজন্য নিউইয়র্কই কেন নির্বাচন করেছি, তা ঠিক জানি না। আমার মনে হয়েছিল শহরটি ঘুরে বেড়াতে দারুণ হবে। যখন প্রথম এসেছি, তখন খুব ঘৃণা করেছি শহরটিকে। পরে একটি ‘রাইটিং কোর্সে’ ভর্তি হয়েছি এবং ব্রুকলিন চলে এসেছি। এটা সম্ভবত ১৯৮৭ কিংবা ৮৮ সাল হবে।
ফ্রেডরিক: আপনি কি পড়াতেন?
পল বেটি: হ্যাঁ, গ্রেড স্কুলে থাকতে পড়িয়েছি। অন্য একটি স্কুলের প্রফেসর মৃত্যর পর সেখানে কিছুদিন পড়িয়েছি। এটা আমার জীবনের প্রথম শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা।
ফ্রেডরিক: নিউইয়র্ক কি লেখালেখির জন্য উত্তম জায়গা?
বেটি: কম্পিউটার থাকলে আমি যেকোনো জায়গায়ই লিখতে পারব। কিন্তু কম্পিউটার ছাড়া অনেক সময় লাগবে। বেশিরভাগ সময়ই আমি নিজের কামরায় লেখালেখি করি। আমার মনে হয় নিউইয়র্ক থেকে লসএঞ্জেলস নিয়ে লিখতে আমার জন্য সুবিধে।
ফ্রেডরিক: আপনি লসএঞ্জেলস আর ফিরে যাননি?
বেটি: আগে মাঝেমাঝে যেতাম। তবে এখন একেবারেই যাওয়া হয় না। যখন লসএঞ্জেলে যেতাম তখন বাসায় লেখালেখি করা সম্ভব হতো না। মনে হতো আমি সেই চৌদ্দ বছরের কিশোর।
ফ্রেডরিক: এখন পর্যন্ত আপনার বইটি অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে…
বেটি: ইতালিয়ান, নরয়েও, ডাচ, জার্মানসহ কয়েকটি ভাষায় হয়েছে।
ফ্রেডরিক: যখন আপনি ফ্রান্সে ছিলেন, তখন কার্ট ভনেগাট প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর কোন বইটি আপনার পছন্দ?
বেটি: অনেক বই আমার পছন্দ। এখন ঠিক বইয়ের নাম মনে করতে পারছি না। কিন্তু ‘ব্র্যাকফাস্ট অব চ্যাম্পিওনস’ বইটির কথা মনে আছে। যখন তরুণ ছিলাম, তখন বইটি পড়েছিলাম। আমার পড়া সবচেয়ে মজার বই ছিল এটি। বইটি এখনো আমার সঙ্গে জীবন্ত হয়ে আছে।
ফ্রেডরিক: অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ লেখকের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? আপনি কি নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা আফ্রো-অ্যামেরিকান মনে করেন?
বেটি: আমার কাছে এই বাক্যটি ভালো লাগেনি ‘আফ্রো-অ্যামেরিকান’। প্রশ্নটির অর্থ আছে। তবে আমি অপ্রয়োজনীয় উত্তর দিতে আগ্রহী নই। যখন থেকে কলেজে পড়াশোনা শুরু করেছি তখন থেকেই এই শব্দটি শুনতে হয়েছে। তখন লোকজন বলত সবসময়ই আফ্রো-অ্যামেরিকান বলত। এটা হয়ত রিগ্যানিজমেরই প্রভাব। আমি জানি না এটা কে উদ্ভাবন করেছে। আমার একজন বন্ধুর সঙ্গে একবার কিছু আলাপচারিতা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন বলেছিল—তারা আমাদের আফ্রিকান হিসেবেই শনাক্ত করতে চায়।এটা হওয়া উচিত অ্যামেরিকান-আফ্রিকান। আমার মনে নেই আমি তাকে সমর্থন করেছিলাম কিনা। অ্যামেরিকান আফ্রিকানের চেয়ে আমি কৃষ্ণাঙ্গ শব্দটিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব। এটা আরও এক ধাপ শুদ্ধ। হা হা হা…
ফ্রেডরিক: আপনি কি অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ লেখকের সঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন? কিংবা তারা কি কৃষ্ণাঙ্গ লেখক শিরোনামে কোনো আলাদা লেখক গোষ্ঠী তৈরি করতে চায়?
বেটি: হয়েছি। তবে খুব বেশি একটা না। এটা কারও পছন্দের ওপর নির্ভর করে। আমি সে রকম সুশীলও নই। আমি সবসময়ই হারলেম বই মেলায় অনেক কৃষ্ণাঙ্গ লেখকের সঙ্গে দেখা করি। তারা আমাকে সেখানে পাঠ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে বলে। কিন্তু শেষমেষ আর তা হয়ে ওঠে না। আমি অনেক কৃষ্ণাঙ্গ বই দোকানির দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাই। যারা কখনোই আমার বই বিক্রি করে না। কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে এটা খুব একটা যে প্রয়োজনী প্রশ্ন তা নয়। হতে পারে আমি সেই কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে জনপ্রিয় নই।
ফ্রেডরিক: এটা খুব অদ্ভূত ব্যাপার—আপনার বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে অথচ অ্যামেরিকা কিংবা ফ্রান্সের বই দোকানগুলোতে আপনার কবিতার বই খুঁজে পাওয়া যায় না।
বেটি: সেগুলো অনেক পুরনো হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বইটির নতুন সংস্করণ সবেমাত্র বের হয়েছে। তবে প্রথম বইটি খুব কম সংখ্যা বেরিয়েছিল। অনেকেই পুনঃমূদ্রণের কথা বলেছিল। আমি সেটা করিনি। এই বইটি দিয়েই আমার জায়গা তৈরি করেছি। যে কারণেই হোক, আমার অন্যান্য বইয়ের চেয়ে এটিকে আমি সেরা বলব।
ফ্রেডরিক: আমি নিউইয়র্কের একজন কৃষ্ণাঙ্গ লেখকের নাম শুনেছি ট্রে ইলিস। আপনি কি তাকে চেনেন?
বেটি: হ্যাঁ। তিনি একটি বই লিখেছেন ‘প্ল্যাটিচ্যুড’। এটা অনেক ভালো বই। অনেক মজাদার। তিনি একটি অনুস্মৃতি লিখেছেন, সেটিও অসাধারণ। তবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আমি তেমন চিনি না। আমি বলব—এখন গল্পসাহিত্যের খুব দুঃসময় যাচ্ছে। আপনি ট্রের সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন কেন?
ফ্রেডরিক: আপনি যদি বিশ শতকের দিকে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন, আপনি হারলেম রেনেসাঁ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারপর কৃষ্ণাঙ্গ আন্দলনের সঙ্গে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোনো প্রকৃত কৃষ্ণাঙ্গ সাহিত্য নেই অথবা কোনো নান্দনিক আন্দোলনও নেই। কেননা এদেশে সব কৃষ্ণাঙ্গই এখন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলেছেন। অথবা বলা যেতে পারে লেখকরা খুব ব্যক্তিবাদী হয়ে উঠেছেন। আমি বিস্মিত যে আপনার সঙ্গে ইলিসের যোগাযোগটা তাঁর সাহিত্যের মধ্য দিয়েই হয়েছে।
বেটি:আমার মনে হয়, এটা একটা সামঞ্জস্য। আর সেটি হলো সাহিত্য। কোনো বই দোকানে গেলে কি কৃষ্ণাঙ্গ সাহিত্যের আলাদা কোনো শাখা দেখা যায়? এখন কোনো আন্দলন নেই, কেননা চারপাশে লোকজন আছে। এখন কেউ আর নিজেক একা মনে করে না। এই প্রজন্মের ক্ষেত্রেও এটা সঠিক। আমি নিজে কোনো দলভুক্ত লোক নই এবং সেটা পছন্দও করি না।
ফ্রেডরিক: এতে বিস্মিত হই। যখন আমি নিউইয়োর্কে ছিলাম ১৯৯০-এর দিকে, তখন আফ্রিকান-অ্যামেরিকান সাহিত্যের আলাদা শাখা দেখা যেত। এখন শুধু কবিতা ও গল্পের শাখা দেখা যায়। শাখায় বিভাজন নিয়ে আপনার কী অভিমত?
বেটি: আমি এমন ভিন্ন কিছু বলব, মনে হবে বিশ বছর পুরনো। আমার মতে, যদি বিষয়টি এমন হয় যে, বিষয়টি কোনো বই খুঁজে বের করতে সহজ করে দেয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আবার আরেক দিক থেকে একই বই দুই জায়গায় রাখার প্রয়োজন নেই।
ফ্রেডরিক: আপনি কবিতা, উপন্যাস রচনা করেছেন এবং এখনো স্ল্যাম কবিতা চর্চা করেন।
বেটি: হ্যাঁ, এখনো চর্চা করি। আমি যখন প্রথম লেখালেখি শুরু করি, তখন শুধু কবিতাই লিখেছি। আমি নিজেকে একজন স্ল্যাম কবি মনে করিনি কিংবা ভাবিওনি। আমি যখন আবৃত্তি করতাম, তখন উচ্চকণ্ঠে কখনোই আবৃত্তি করতে পারতাম না। স্ল্যাম কবিতার বিষয়গুলো আমি নিউইয়র্কে এসেই প্রথম পেয়েছি। তখন স্ল্যাম কবিতা শুধু মানুষের পড়া এবং মজা করার জন্যই ছিল। এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে ভিন্ন কিছু—একটু বর্ণনাধর্মী, শৈল্পিক কিছু করার চেষ্টা করেছি। তখন নিজের লেখা ত্রিশ-চল্লিশ পঙ্ক্তির কবিতা পড়ে নিজেই বিরক্ত হয়েছি। কেউ কেউ বলেছে আমি তাদের মতো নই। তখন প্রায় ছয় মাসের মতো আমি ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি উপলব্ধি করেছি—তারা এমন কিছু করতে চেয়েছে, যেটিতে আমি অভ্যস্ত নই। ১৯৯৩ সালে আমি প্রথম বার্লিনে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে প্রথম শুনতে পাই ‘উচ্চারিত পৃথিবী’। আমি এটার মানে বুঝতে পারিনি। সেখানে তারা আমাকে নিউইয়র্কের সবচেয়ে রেডিক্যাল কবি বলছে। আমি তাতে খুব বিব্রত হয়েছি।পরবর্তী সময়ে আমি ‘হোয়াইট বয় শাফল’ উপন্যাসটি লেখা শুরু করি।যা আমি করতে চেয়েছিলাম।
ফ্রেডরিক: আপনি কি সেই বইগুলো পড়েছেন, যেগুলো অন্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে?
বেটি: না। জার্মান ভাষায় অনূদিত বইটি কিছুটা পড়েছিলাম। যখন আমি ‘স্লাম্বারল্যান্ডরিড’ শব্দটি পেয়েছি, তখন ভেবেছি অনুবাদক খুব ভালো একটি কাজ করেছেন। আমি ভেবেছি এটা ইংরেজির চেয়েও শুনতে ভালো শোনায়। তোমার হয়ত এ বিষয়ে ভালো ধারণা আছে। উচ্চারণ নিয়ে আমার বলার তেমন কিছু নেই। যদিও উচ্চারণের কিছু ভালো দিকও আছে। তবে কবিতার ক্ষেত্রে উচ্চারণের যথার্থতা নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি আছে। এক্ষেত্রে উচ্চারণ সঠিক না হলে, এটা অপমানই করা হয় লেখককে।
ফ্রেডরিক: আপনি বার্লিন গিয়েছিলেন কেন?
বেটি: মূলত ভ্রমণ করতেই গিয়েছি। এটা যে খুব বড় কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নয়। তবে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এটা আমার দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণ ছিল। আমি ভেবে অবাক হই—আমি কতটা বিকারগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে এই ভ্রমণ করেছি। সেখানে গিয়ে আমি আমার নিজেকে নিয়ে অনেক কিছু শিখেছি; জেনেছি। এই ভ্রমণটি যিনি আয়োজন করেছিলেন, তিনি ছিলেন পূর্ব বার্লিনের। তিনি আমাকে ক্যালিফোর্নিয়ার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রস্তাব দিয়েছিলেন একবছরের জন্য বার্লিনে বেড়াতে যাই, তিনি সেখানে আমার থাকার সব ব্যবস্থা করে দেবেন। আমিও সেই সুযোগটি নিয়েছি। কেননা আমার কোনো চাকরি ছিল না। কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। আমি একবছরের মতো জার্মানিতে ছিলাম।
ফ্রেডরিক: ‘হোয়াইট বয় শাফল’ বইটির নামের মধ্যে একটি রহস্য আছে। এটা শুধু আমার কাছেই নয় অনুবাদকদের কাছেও।
বেটি: আমার ঠিক মনে পড়ছে না কিভাবে বইটির নামকরণ করেছিলাম। আমি লসএঞ্জেলসে ছিলাম এবং একটি পারিবারিক সন্মেলনে আমার বোনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমরা তখন যুবক ছিলাম। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে, আমি নাচতে জানিও না, পারিও না। তখন সে বলেছিলো শুধু আমার জন্য তুমি শুধু একটু সে রকম করে দেখাও, শ্বেতাঙ্গরা যেভাবে নাড়াচড়া করে। পরবর্তী সমযে সেখান থেকে নামটি দিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটিই উত্তম নামকরণ হবে।
ফ্রেডরিক: স্কুবি একটি চমৎকার চরিত্র। যে কেউ এই চরিত্রটি দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে।
বেটি: এটাও আমার এক বন্ধুর নাম। এটা তার ডাক নাম। উপন্যাসের চরিত্রে তারা যেভাবে দেখা করত, আমি এবং আমার বন্ধুও নাটকের ক্লাসে এইভাবে দেখা করেছিলাম। তবে সেখানে আমার বন্ধুর মতো কোনো চরিত্র সরাসরি দেখাইনি। সাইকো লুকু অনেকটা আমার বন্ধুর মতো। লসএঞ্জেলসে লুকু শব্দটিকে অদ্ভুত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফ্রেডরিক: স্পেনিশ ভাষায় লুকু মানে ‘পাগল’।
বেটি: হ্যাঁ, এটার মানে পাগলই। তবে বর্তমানে এটার আরেকটি অর্থ দলগতভাবে করা যায়। অনেকটা সানগ্লাসের মতো। আমি যখন বইটি লিখি, সে সময়ের চেয়ে এরা এখন আরও বেশি শক্তিশালী।
ফ্রেডরিক: উপন্যাসের কিছু কিছু বিষয় আমাকে খুব তাড়িত করেছে। শেষের দিকে আমি ভীষণভাবে হতাশ হয়েছি…দুটো মৃত্যু আছে সেখানে। আপনার কি মনে হয়, বর্তমানে আপনি এরচেয়ে বেশি নিরাশাবাদী কোনো লেখা লিখতে পারবেন? এটা সম্ভবত লসএঞ্জেলে সংঘটিত দাঙ্গার কয়েক বছর লিখেছিলেন…
বেটি: আমি নিশ্চিত যে, ঠিক এরকম কিছু হয়ত আর রচনা করা সম্ভব হবে না। আমি এর চেয়ে আলাদা কিছু ভাবতে পারি না। তবে এটা নিঃসন্দেহ যে, এর চেয়ে বেশি নিরাশাবাদী নই কিংবা খুব বেশি আশাবাদীও নই। প্রতিবারই বিষয়টিকে আমার কাছে আলাদা এবং মৌলিক মনে হয়। হয়ত সে রকম পরিস্থিতি বা বাস্তবতা এখন নেই। কিন্তু একটা আলাদা দৃষ্টিকোণ আছে।আগের মতো এখন আর একই রকম লিখতে পারব না। কেননা আমি তো আর আগের মানুষটি নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমার মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। আমার কাছে বিষয়টি নিরাশাবাদী ছিল না। আশাবাদীই ছিল।
ফ্রেডরিক: প্রথম যখন পড়েছিলাম, তখন আমার মনে হয়েছিল—একজন তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের জন্য বিষয়টি অনেক কঠিন। বিশেষ করে অ্যামেরিকায় যদি সে বসবাস করতে চায়। গল্পের বাস্তবতা আগের মতো তেমন একটা বদলায়নি। চরিত্রটি লসএঞ্জেলসে ফিরে যায়। সেটা অনেকটা পরাজয়ের মতো। আবার আরেকদিক থেকে এটা বোস্টনে থাকার চেয়ে অনেক ভালো।
বেটি: এই গল্পগুলো বলা কিংবা লেখার জন্য আমাকে বিশেষ কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে। কেননা ‘পরাজয়’, ‘মুক্তি’, ‘হতাশা’, ‘জায়গা নির্বাচন’—এই শব্দগুলো নিয়েই মূলত বইটি কিন্ত এগুলোর কিছু ভিন্ন মানে আছে। কেননা আমরা সবসময়ই এই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি কিন্তু সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কখনোই দেই না। আমার মনে আছে—যখন ওবামা নির্বাচিত হয়েছিলেন, আমার এক বন্ধু যার গাড়িতে অ্যামেরিকার জাতীয় পতাকা লাগানো, সে বলেছে,আমার মনে হয়েছে এই দেশ তাঁর ঋণ শোধ করেছে। আমি বললাম:তুমি কী বলছ? কার ঋণ শোধ করেছে? আফ্রিকান-অ্যামেরিকানদের? আর বাকিদের কী হবে তাহলে? স্থানীয় অ্যামেরিকানদের কী হবে? জাপানি অ্যামেরিকানদের কী হবে? আমি বুঝেছি সে কী বলতে চেয়েছিল।এই বিষয়গুলো কখনো কখনো বিপদজ্জনক হয়ে ওঠে। কখনো কখনো মানুষের ভাষা গঠন তার অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়। মানুষের অনুভূতিকে কখনো কখনো কোনো নির্দিষ্ট ছাঁচে পরিমাপ করা সম্ভব হয় না। তখন তাঁর অনুভূতিটি হয়ত অন্যের কাছে তামাশা মনে হবে। তুমি হরহামেশা এই বাক্যটি শুনতে পাবে ‘তাঁরা ন্যায় বিচার পেয়েছে?’ কিন্তু এই ন্যায় বিচার শব্দটির আসল মানে কী? আমার মনে হয়—আমাদের আরেকটু আলদাভাবে শব্দ ব্যবহার করা উচিত। জানিনা সেটি সম্ভব হবে কি না। আমি বুঝতে পারি, যখন তুমি বলো, এটা হতাশাজনক…।
ফ্রেডরিক: আমি আসলে গল্পটির এরকম সমাপ্তি প্রত্যাশা করিনি। আর এ কারণেই হয়ত বিস্মিত হয়েছি।
বেটি: সবাই ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করে। তবে সেটি কী? সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলে না। মাঝে মাঝে তুমি এমন কিছু বিষয়ে কথা বলো, যে বিষয়ে তুমি বিন্দুমাত্র অবগত নও। ওবামা হচ্ছে তাঁর একটি ভালো উদাহরণ। একদিক থেকে ওবামাকে মুকুট মণি করে রাখার সব যোগ্যতাই আছে বলো, আরেকদিক থেকে তুমি সেটা চাও না। এটা শুধু সে কৃষ্ণাঙ্গ বলেই নয়, তার অনেক যোগ্যতাও আছে।
ফ্রেডরিক: ওবামার নির্বাচনের কোনো ঘটনা কি জড়িয়ে আছে?
বেটি: এটা ওবামার নির্বাচনেরও অনেক আগের ঘটনা। আমি তখন ‘হোয়াইট বয় শাফল’ লিখছিলাম। আমার মনে আছে, আমি তখন মিনেসোটায় ছিলাম। সেখানে একজন লোক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি নিগ্রো কি না? এই বিষয়টিকেই আমি ধরতে চেয়েছি। এর মানে কী? নিজেকে প্রতিনিয়ত দেখা, মানবিক করে তোলা কিংবা নিজের সম্পর্কে লেখা কখনোই শেষ হয় না। আমি জানি এগুলোর মানে কী। মানুষ আমার প্রতি যেমন আচরণ করুক না কেন আমি সেটিকে আলাদাই মনে করি। তারা আমার চেয়ে আলাদা। কেননা আমি নিজেও চাই তারা, আমার চেয়ে আলাদা হোক। এটা হলো ‘রাজনৈতিক ত্রুটি’। আমি বুঝতে পারি এই লোকগুলো বিষয়গুলোকে এভাবেই বুঝতে চায়।
ফ্রেডরিক: আপনি কি কোনো আফ্রিকান-অ্যামিরিকান তত্ত্ব পড়েছেন?
বেটি: না।
ফ্রেডরিক: দু’বছর আগে শিকাগো’র এক পণ্ডিত কেনেথ ওয়ারেন একটি বই লিখেছিলেন ‘আফ্রিকান অ্যামেরিকান সাহিত্য’ নামে।
বেটি: এটা খুব তামাশার।
ফ্রেডরিক: তার মতে, আপনি ‘আফ্রিকান অ্যামেরিকান’ শিরোনামটি ব্যবহার করতে পারবেন না।
বেটি: হ্যাঁ, এটার একটা অর্থ তো আছেই। এটা অযৌক্তিক নয়। প্রতিটি মানুষের একটি নিজস্ব বোঝাপড়া, মতবাদ আছে এবং সে অনুযায়ী সে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। কেননা সেটি তার বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সমাজের সাথে সম্পৃক্ত। এতে দোষের কিছু নেই। কোনো বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলে তবেই সেটিকে প্রকাশ করা যায়। এটি সাধারণত নিজেকে একজন ভালো ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করানো। এটা অনেক আমেরিকান সাহিত্যের ইতিহাস বটে। এটা শুধু বর্ণবাদের বিষয় নয়। আমরা যে ঘটনা নিয়ে কথা বলছি, সেগুলো হয়ত বর্ণবাদ নিয়ে। স্ল্যাম কবিতার একটি ভালো দিক এবং একটি খারাপ দিকও আছে। আমি হয়ত একটি পছন্দ করব, আরেকটি করব না। যেমনটি মানুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তুমি কাউকে খুব বেশি পছন্দ করো, আবার কাউকে তেমন পছন্দ করো না।
ফ্রেডরিক: আলোচনার শেষে তিনি বেশ কয়েকজন নতুন কৃষ্ণাঙ্গ লেখকের নাম দিয়েছেন। তবে তাদের কাউকেই বর্ণবাদ নিয়ে তেমন কিছু লিখতে দেখিনি। তিনি অনেকের নামই সেখানে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আপনার নামটি সেখানে উল্লেখ করেননি।
বেটি: তাদের অনেকেই আমাকে স্কুল থেকে চেনে। আমি জানি, তারা কী বলেছে। বিষয়গুলো অনেক সময় অস্পষ্ট এবং সাদামাটা হয়ে থাকে। সেগুলোর কোনো উত্তর হয় না। জাতি-বর্ণ ধারণাই হলো একটা বদ্ধমূল চিন্তা কিংবা বোঝা। মানুষ এসবের সমাধান চায়। আমি জানি না তারা কী চায়। তারা স্বীকৃতি চায়।
ফ্রেডরিক: ইংল্যান্ডের ডিজি রাসক্যালের সঙ্গেও এমনটি হয়েছিল…
বেটি: আমি তাঁকে চিনি না।
ফ্রেডরিক: তিনি একটি হিপ-হপ গানের দল বানিয়েছিলেন। মাত্র সতেরো বছর বয়সে গানের সব রেকর্ড ভেঙে শীর্ষে অবস্থান করেছিলেন। দু’হাজার বারো সালের অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
বেটি: এটা সত্যি চমৎকার।
ফ্রেডরিক: তিনি প্রায় লাখো মানুষের সামনে তার দল নিয়ে গান করেছিলেন।
বেটি: আমাকেও অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমার তো আর গানের গলা ছিল না। আমি আমার কাজকে ভালোবেসেছি এবং কাজের মাধ্যমে কিছু বলতে চেয়েছি। সেই লোকদের দেখো. যারা নিজেদের কাজ সম্পর্কেও কিছু বলতে চায় না। শিল্পী হিসেবে নিজের কাজ নিয়ে না হোক, নিজ সত্তা নিয়েও অনেক কিছু বলার আছে।