জর্জ জার্টস এই সময়ের একজন প্রভাবশালী ব্রিটিশ কবি ও অনুবাদক। তিনি বেশকিছু কাব্যগ্রন্থ ইংরেজিতে লিখেছেন। পাশপাশি হাঙ্গেরিয়ান সাহিত্যের বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। কাব্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে পেয়েছেন সম্মানজনক ফ্যাবার মেমোরিয়াল পুরস্কার ও টিএস এলিয়ট পুরস্কার।
জর্জ জার্টস ১৯৪৮ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে রিফিউজি হিসেবে তাকে ইংল্যান্ডে আসতে হয়। এরপর তিনি লন্ডনে আসেন এবং সত্তরের দশকে কাব্যচর্চা শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ দ্য স্লান্ট ডোর ১৯৮০ সালে জিওফ্রে ফ্যাবার মেমোরিয়াল পুরস্কার লাভ করে। ২০১৭ সালে কানাডার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজ’-এর একজন বিচারক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস এই কবির একটি সাক্ষাৎকার নেয়। তবে ওই অনলাইন পত্রিকাটি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর নাম প্রকাশ করেনি। সাক্ষাৎকারটি চিন্তাসূত্রের জন্য অনুবাদ করেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: আপনি কবিতা লিখতে এসেছেন কেন?
জর্জ জার্টস: সেটা তো বলা কঠিন। আমি যখন স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তাম, তখন অপ্রত্যাশিতভাবে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম। আমার এক বন্ধু আমাকে একটা কবিতা দেখিয়েছিল, দেখেই ভেবেছিলাম কবিতাটি খারাপ। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি কবিতা সম্পর্কে কিছু জানতাম। আমি শুধু জানতাম, কবিতাকে কোনো না কোনোভাবে সত্য প্রকাশক হতে হবে, কিন্তু ওই কবিতাটি সে রকম কিছু ছিল না। সেসময় এক মুহূর্তের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, আমার কাছে মনে হয়েছিল আমি কবি হতে চাই। আমি এখনো মনে করি, সত্যই কবিতার কেন্দ্রস্থল। আমি ওই সময় জানতামই না কেন এবং কিভাবে কবিতায় সত্য ফুটে ওঠে। যে উত্তরটা আমি তোমাকে এখন দেব, সেটা হলো আমি কবি। কেননা আমি ভাষাকে একইসঙ্গে ভালোবাসি এবং অবিশ্বাস করি। আমি অ্যাখানধর্মী সাহিত্যের প্রতি কম আকৃষ্ট। আমি অনেকটা আইরিশ দৈত্য ফিন ম্যাককুলের মতো ‘ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গীত’-এর প্রতি অনুরক্ত, আমি সেইসব কবিতায় অনুরক্ত, যেগুলো ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গীতের কাছাকাছি।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: আপনি কোন কোন কবির কবিতা পছন্দ করেন?
জর্জ জার্টস: আমার পছন্দের তালিকা অনেক লম্বা। আধুনিক যুগের ভেতর এলিয়ট, অডেন, ম্যাকলিশ, ম্যাহন ও ব্রোস্কিকে বেশি পছন্দ করি; কিন্তু আরও অসাধারণ কবি আছেন, যেমন- ম্যারিলিন হ্যাকার, এলিজাবেথ বিশপ। এই কবিরা শুধুই ইংরেজি সাহিত্যের। তারা সবাই তাদের নিজেদের মতো করে সত্যের গান গেয়েছেন। সাধারণ জীবনের দ্বন্দ্ব ও আবেগী বিষয়গুলো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের উপস্থাপনা শৈল্পিক ও অসাধারণ। তারা চিন্তার ঝড়ো হাওয়া পৃথিবীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করতে সমর্থ। এই ধারায় অনেকেই আছেন- ডন প্যাটারসন, এলিস অসওয়াল্ড, ম্যাইকেল ডোনাগি, ইয়ান ডুহিগ। এই কবিরা আমার চেয়ে তরুণ।
আমেরিকানদের ভেতর ওয়ালেস স্টিভেনস, জন ক্রো র্যানসম, থিয়োডর রোটকি, অ্যান্থনি হেক। এছাড়া আগের সময়ের লেখকদের ভেতর শেক্সপিয়র, জন ডান, কিটসকে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি জর্জ রবার্ট, জন ক্লেয়ার, আলেকজান্ডার পোপ ও বাইরনকে। কিন্তু এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়, আমি তো এখনো বিদেশি ভাষার কবিদের কথা বললামই না, এমনকি হাঙ্গেরিয়ান কবিদের কথাও না।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: কাব্যচর্চায় আপনাকে কোন বিষয়গুলো উৎসাহ দেয়?
জর্জ জার্টস: কোনো কিছুর ভঙ্গুরতা, গীতিময়তা ও বলিষ্ঠতা। ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে তার খলনায়ক ও ক্ষয়ক্ষতি, মর্মস্পর্শী চিত্রকর্ম ও মাত্রাতিরিক্ত চাপের বোঝা। বিষয়গুলো খুব সাদামাঠা, যেমন: বৃষ্টি, ফুটপাতের সূর্যের আলো, মানুষের প্রেম, পশু-পাখির উপস্থিতি, বিশেষ করে আমরা কারা এবং এই পৃথিবীটা কী—এগুলো আমাকে উৎসাহ দেয়; অন্য ভাষায় বলতে গেলে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গীত। আমার মনে হয় সব কবিই একই কথা বলবেন।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: কখন এবং কোথায় আপনি লেখালিখি করেন?
জর্জ জার্টস: ১৯৬৭ সালে আমি যখন লেখালিখি শুরু করেছিলাম তখন কম্পিউটার ছিল না, কিন্তু তখন আমার কাছে নোটবুক ও একটা মুদ্রণযন্ত্র ছিল; হস্তচালিত ছোট একটি মুদ্রণযন্ত্র। তারপর বড় ধূসর রঙের একটা কিনেছিলাম, যেটা আমার টেবিলের ওপর রাখতাম। একটা নির্দিষ্ট সময় লেখার পর ওটা বন্ধ হয়ে যেত, তখন আবার লেখায় ফেরার জন্য একটা লিভার টানতে হতো। এখন আমার একটা ল্যাপটপ আছে, কোনো লেখায় ঝামেলা হলে আমি দ্রুত তা ঠিক করার চেষ্টা করি। এটা তেমন কঠিন কাজ নয়, আমি সপ্তাহে পাঁচ দিন কিংবা তার চেয়ে বেশি দিন ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করতে পারি। খুব স্বল্প বিরতিতে ১২ ঘণ্টা করে প্রতিদিন আমি কাজ করতে পারি।
মাঝে মাঝে আমি হাঙ্গেরিয়ান কথাসাহিত্য কিংবা কবিতা অনুবাদ করি। অনেক হাঙ্গেরিয়ান লেখকের মতো, আমি একজন অধিক লিখিয়ে লেখক। হাঙ্গেরির মতো ছোট একটা দেশের ভাষার মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমাদের কাজকে নিজেদের ভালোবাসতে হয়। অবশ্য আমি শুধু ইংরেজি ভাষাতেই লিখি।
যখন ফুল টাইম চাকরি করতাম, ঘড়িতে ভোর ৫ টায় এলার্ম দিয়ে রাখতাম এবং কয়েক ঘণ্টা পড়াশোনা, লেখালিখি, পুনর্লিখন কিংবা উদাস মনে স্বপ্নে দেখতাম। কোনটা করতাম এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ওটা ছিল একটা পবিত্র সময়, যে সময় আমি অন্য কিছু করতাম না। সেসময় বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে থাকত। আমি আমাকে বন্দি করিনি। সেটা ছিল সতেজ মুহূর্ত এবং আমি খুব স্বাভাবিকভাবে আমার কাজে যেতাম। আমি ১৫ বছর একটা স্কুলে চিত্রকর্ম এবং চিত্রকর্মের ইতিহাসের ওপর পড়িয়েছি।
এখন আমার কোনো ফুল টাইম চাকরি নেই, ২০ বছর ধরে নেই, তাই এখন অত কড়া নিয়ম-নীতি নেই, যেটা আছে সেটা শুধু কোনো কাজ শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আমি আমার সেরা লেখাগুলো ওই সময় লিখেছি, যে সময় অন্য কাজের চাপ বেশি ছিল।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: কবিতা লেখার সময় কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন?
জর্জ জার্টস: লেখালিখি হচ্ছে গভীর মনোযোগের সঙ্গে নিরুদ্বেগ উদাসীনতার সংমিশ্রণ। এটা অনেকটা বরফের ওপর স্কেটিং অথবা সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর সার্ফিং খেলার মতো। অথবা শক্ত দড়ির ওপর নৃত্য করার মতো। অথবা এটা পাখির মতো হয়ে যাওয়া। আসলে উপমার প্রয়োগ বাদে এই বিষয়ে কথা বলা কঠিন।
আমাকে আরও বলতে দাও। তুমি মাঝে মাঝে অনুধাবন করবে, একটি কবিতা তোমাকে উষ্ণতা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে একটি কবিতা থেকে তুমি কিছু প্রত্যাশা করো এবং এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। একটি কবিতাকে তোমার প্রত্যাশার ভিতর ফেলাটা খুব জরুরি, বিশেষ করে একজন কবির জন্য।
আমি দ্রুতগতিতে লিখি কবিতায় সঠিক উষ্ণতা ধরে রাখার আকাঙ্ক্ষার জন্য, সঠিক দিকে চালিত করার জন্য, আমাকে সমস্যার ভেতর প্রতিস্থাপন করে ধীরে ধীরে গতিমুখ পাল্টে দেওয়ার জন্য, এটি আমার গাম্ভীর্য ও ব্যগ্রতা নিয়ে একটা খেলা তৈরি করে। এই খেলা খেলার উপাদানগুলো খুব প্রয়োজনীয়। এটা উপমা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। আমি দ্রুত সংশোধন করি, যতটুকু পারি, ততটুকু করি, তারপর পরিমার্জনা করি। আমি আমার কবিতাটি উচ্চস্বরে আমার স্ত্রী ক্লারিসাকে শোনাই। ওর শ্রবণক্ষমতা খুব ভালো। কিন্তু আমি যখন ওকে পড়ে শোনাই, আমি নিজেও আমার কবিতাটি নতুন করে শুনি।
একজন শ্রোতার কল্পনা ও কবির কল্পনা অখণ্ড। আমি মাঝে মাঝে ধারাবাহিক কবিতা নিয়ে কাজ করি, অনুভূতি ও কল্পনার স্তরগুলো বিকশিত করি, যেগুলো একটি কবিতার মাধ্যমে নিঃশেষ করা যায় না। আমি একটি কবিতার শুরু এবং শেষকে প্রবাদতুল্য বাক্সের মধ্যে বন্দি করতে চাই না। আমি বাতাসকে হালকা গুঞ্জন করতে দেই, স্থিরভাবে নয়, পাগলাটেভাবেও নয়, কিন্তু এমনভাবে যেন যে কেউ অনুধাবন করতে পারে, কবিতাটি উন্মুক্ত স্বভাবের।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: প্রথম লেখা প্রকাশ সম্পর্কে যদি বলতেন…
জর্জ জার্টস: এটি দীর্ঘ, চক্রাকার, মাঝে মাঝে হতাশাজনক ঘটনা, একইসঙ্গে আমার কাছে একটা সৌভাগ্যপূর্ণ অজানা পথ। কবিদের, বলতে গেলে সৃজনশীলদের সবারই সৌভাগ্য প্রয়োজন এবং আমার ক্ষেত্রে ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল।
প্রথমত শুরুর দিকে আমার সৌভাগ্য দরকার ছিল। তারপর সৌভাগ্যক্রমে আমি এমন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলাম, যে একজন চিত্রশিল্পী, আমি কী করি, সেটা সে ভালোমতো বোঝে। তারপর এমন সৌভাগ্য দরকার যেন কিছু কবিকে খুঁজে পাওয়া যায়, যারা আমার কাজগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করবে এবং আমাকে উৎসাহ দেবে। আমি সৌভাগ্যবান ছিলাম, কেননা আমার বাড়ির পাশেই একটা সস্তা পুরনো বইয়ের দোকান ছিল।
আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় স্কুল ম্যাগাজিনে, তারপর মার্টিন বেল সম্পাদিত একটি সংকলনে। মার্টিন বেল আমার আর্ট কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তারপর ইয়র্কশায়ার প্রকাশকের একটা পুস্তিকায়। জেফ নাটালও আর্ট কলেজে ছিল। সে আমাকে উৎসাহ দিত। আমি এগুলো করতে কিছুই করিনি, এগুলো স্বাভাবিকভাবে ঘটে গিয়েছিল। তারপর লন্ডনে পিটার পর্টারের সঙ্গে পরিচয়। সে ছিল খুব দয়ালু, জ্ঞানী ও একজন প্রধান কবি।
জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকাতে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে, টাইমস লিটারেরি সাপ্লিমেন্টে। এটা আমার জন্য অনেক কিছু ছিল। পিটার ওটার কবিতার পাতা সম্পাদনা করত। তারপর সে সম্পাদনা ছেড়ে দিল। আমি আমার কবিতা ভালো ভালো ম্যাগাজিনে প্রকাশ করতে থাকলাম, যেমন: অ্যামবিট, দ্য লিসেনার, এনকাউন্টার। সবকিছুই ভাগ্যক্রমে চলছিল। তারপর ১৯৭৮ সালে ফ্যাবার আমাকে তাদের তরুণ কবিদের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে জায়গা দিল। এটা অনেকটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার ছিল।
আমার প্রথম বইটা প্রকাশিত হয় যে বছর স্যাকার ও ওয়ারবার্গ যৌথভাবে ফ্যাবার পুরস্কার পেয়েছিল, তার পরের বছর। সেটা ছিল একটা স্বর্গীয় ব্যাপার। তুমি সৌভাগ্য দেখতে পারছ, তাই না? মাঝে কেটে গেছে অনেক হতাশার মাস এবং বছর, যে সময় তুমি অন্ধের মতো ছিলে, কিন্তু তারা আমার কোনো ক্ষতিই করতে পারেনি। যেটাকে আমি বলি, আমার সৌভাগ্য। সেটা ছিল আমার কাব্যচর্চার ১৩তম বছর। ওই সময় আমি ১০ বছরের বিবাহিত ছিলাম, আমার দুটি সন্তান ছিল। আমি স্কুলে শিক্ষকতা করতাম।
রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস: উচ্চাকাঙ্ক্ষী কবিদের প্রতি কী উপদেশ দেবেন?
জর্জ জার্টস: উত্তম সাহিত্য পাঠ করো, বেশি বেশি করে পড়, কবিতাকে তোমার কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিক অনুভূতির ভেতর প্রবেশ করাও। নিজের কথা এবং অন্যদের কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকো। কবিতা সোজাসুজি কোনো কিছুর প্রকাশভঙ্গি নয়, পৃথিবীকে বলো তুমি কেমন অনুভব করো; এটা এমন একটা অনুভূতি যেটা ভাষা দ্বারা নির্মিত এবং ভাষাতে নিমজ্জিত, তাই শব্দকে এবং শব্দের শৈল্পিক উপস্থাপনাকে ভালোবাসতে শেখো।
কবি হিসেবে নিজের জীবনকে সংকটপূর্ণ অবস্থায় পতিত করো। স্বেচ্ছাচারের প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করো। বেশির ভাগ সময় প্রকাশের চেয়ে অভিজ্ঞতাই উত্তম। অভিজ্ঞতা ভাষার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাই প্রবাহিত হওয়ার জন্য এটাকে কিছু দিতে হয়। আর শোনো, তোমার অভীষ্ট লক্ষ্য কবিতা নয়; কবিতা হচ্ছে ভাষার ভেতর যা ঘটছে, তাই। এর বিষয়বস্তু হবে ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা। যে কবিতা তোমাকে অবাক করবে না, সেটা অন্যকেও অবাক করবে না। রবার্ট ফ্রস্ট, যিনি কবিতা সম্পর্কে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন, এটা তার কথা।
যখন কবিতা প্রকাশের জন্য পাঠানোর কথা ভাববে, তখন বড় বড় ম্যাগাজিনে লেখা পাঠাতে হবে কিন্তু ছোট ম্যাগাজিনকে উপেক্ষা করে নয়। সহজ পন্থায় কোনো কিছু অর্জন করার কোনো সুযোগ নেই। সব ম্যাগাজিনের সম্পাদকের টেবিলে গাদা গাদা কবিতা পড়ে থাকে। তাই চামড়া মোটা করতে হবে। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে লেখালেখি ছেড়ে দিলে চলবে না। লেখালিখি যেমন একটি বিষয়, এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের খোঁজো, যাদের মতাদর্শকে তুমি শ্রদ্ধা করো এবং যারা তোমার লেখা পড়তে চায়। ভালো সাহিত্যিক বন্ধুরা খুব বন্ধুসুলভ।
শুধু সমসাময়িক লেখা পড়লেই হবে না, শুধু জনপ্রিয় ও প্রশংসনীয় লেখাগুলো পড়লেও চলবে না। এটা তোমাকে নির্ধারণ করতে হবে। অতীত ও বর্তমান সময়ের সবকিছু পড়ে ফেলো। অনেক আগে মৃত তোমার পূর্বপুরুষরা কিভাবে এখনো তোমার সঙ্গে কথা বলে এবং তোমাকে অভিভূত করে, এটা বোঝার চেষ্টা করো। পরিশেষে এটা খ্যাতির ব্যাপার নয়, টাকার ব্যাপারও নয়। এটা হচ্ছে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গীত এবং এটা চলতেই থাকে পূর্ববর্তী সময়ের মতোই। তোমাকে ভাষার পুনঃসৃষ্টি করতে হবে ভাষাতে সতেজতা দেওয়ার জন্য, তুমি এই অসম্ভব কাজটি করতে পারবে না। কিন্তু তুমি ভাষাকে যদি এতটা সতেজ করতে পারো যার সুগন্ধ অন্যেরা নিতে পারবে, তাহলে সেটা চিরস্থায়ী হবে। এটা নিয়ে চিন্তাভাবনার দরকার নেই, এটা যদি চিরস্থায়ী না হয়, তাহলে বুঝবে তুমিও চিরস্থায়ী নও।