প্রথম পর্বের পর:
আলোকন প্রকল্প
আধুনিকতার ধারণা ইউরোপীয় শিল্পের উন্নতির সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কিন্তু আমি যাকে ‘আধুনিকতার প্রকল্প’ বলি, তা তখনই কেবল স্পষ্ট হয়, যখন আমরা স্বাভাবিক মনোযোগের সঙ্গে শিল্পের পরিচর্যা করি। আমি এখন ম্যাক্স ওয়েবারের ধারণা থেকে একটি ভিন্নতর বিশ্লেষণ দেখাচ্ছি। সাংস্কৃতিক আধুনিকতাকে তিনি ধর্ম ও অধিবিদ্যার তিনটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংক্ষেপিত কারণগুলো থেকে পৃথকীকরণ হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন। এই তিনটি অঞ্চল হচ্ছে: বিজ্ঞান, নৈতিকতা এবং শিল্প। এসব পৃথকীকৃত হয়েছে। কেননা ধর্ম ও অধিবিদ্যার বিশ্ব-বীক্ষা আলাদা হয়ে পড়েছে। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত, এসব পুরনো বিশ্ব-বীক্ষা থেকে জাত সমস্যাগুলোকে এমনভাবে সাজানো যায়; যেন সত্য, স্বাভাবিক অধিকারবোধ, যথার্থতা এবং সৌন্দর্য একটা বৈধতার আওতায় পড়ে। এদের তখন জ্ঞানের, কিংবা ন্যায় বিচার ও নৈতিকতার, কিংবা রুচির প্রশ্নে মোকাবিলা করা যায়। বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ, নৈতিকতার তত্ত্বসমূহ, আইনকানুন এবং শিল্পের উৎপাদন ও সমালোচনা একসময় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক পেশাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব; যেন সমস্যাদি বিশেষজ্ঞের জ্ঞাতসারে চিন্তাভাবনা করা যায়। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই পেশাভুক্ত ব্যবস্থাপত্র সংস্কৃতির তিন রূপের প্রতিটির অভ্যন্তরীণ কাঠামোকে সামনে নিয়ে আসে। সেখানে উদ্ভুত হয় যান্ত্রিকতা রোধ, নৈতিক-ব্যবহারিক ও নন্দনতাত্ত্বিক যৌক্তিকতার কাঠামো, যার প্রত্যেকটিই বিশেষজ্ঞদের নিয়ন্ত্রাধীন। এই বিশেষজ্ঞরা এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে যুক্তিবাদিতায় অধিক সক্রিয়। ফলে, বিশেষজ্ঞদের সংস্কৃতির সঙ্গে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির দূরত্ব তৈরি হয়। বিশেষ ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে যে লাভ হয়, তার প্রতিফলন তৎক্ষণাৎ ও অবশ্যই প্রাত্যহিক ব্যবহারবিধি সম্পত্তিতে পরিণত হয় না। যে জীবন-বিশ্বের ঐতিহ্যগত বিষয় বর্তমানেই অবমূল্যায়িত, এই ধরনের সাংস্কৃতিক যৌক্তিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও উত্তরোত্তর হতদরিদ্র হয়ে পড়ার ভীতি বৃদ্ধি পায়।
আলোকনের দার্শনিকেরা আঠারো শতকে যে আধুনিকতার প্রকল্প তৈরি করেন, তা তাদের বস্তুগত বিজ্ঞান, স্বতঃসিদ্ধ নৈতিকতা ও আইনের উন্নতির ক্ষমতা এবং তাদের ভেতরগত যুক্তির অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত শিল্পে গঠিত। একই সময়ে এই প্রকল্প এমনতর চিন্তাগুলোর প্রতিটির আবশ্যিক সম্ভাবনাকে তাদের দুর্বোধ্য রূপ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। আলোকনের দার্শনিকেরা এই বিশিষ্ট সংস্কৃতির সমন্বয়কে ব্যবহার করতে চেয়েছেন প্রাত্যহিক জীবনের প্রাচুর্যের জন্য—অর্থাৎ প্রাত্যহিক সামাজিক জীবনের যৌক্তিক সংগঠনের জন্য।
আলোকনের ভাবুকদের তখনো অসীম প্রত্যাশা যে, শিল্প ও বিজ্ঞান উন্নত হয়ে কেবল প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের নিয়ন্ত্রণেই আসবে না, বরং তা বিশ্ব ও আত্মোপলব্ধি, নৈতিক অগ্রগতি, প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায়বিচার এবং মানবজাতির সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে উন্নীত হবে। বিশ শতক এই আশাবাদকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও শিল্পের পৃথকায়ন বলতে বিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী খণ্ডাঙশগুলোর স্বায়ত্তশাসন এবং তাদের প্রাত্যহিক যোগাযোগের পরিভাষা থেকে বিচ্ছিন্নতা বোঝায়। এই বিভাজন একটা সমস্যা যা বিশেষ দক্ষতার সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার স্পর্ধা সৃষ্টি করেছে। যদি আমরা আলোকনের প্রবণতাগুলোকে ধরে রাখার চেষ্টা করি, যত মৃদুই তারা হোক, অথবা যদি আমরা মডার্নিটির সম্পূর্ণ প্রকল্পকে মৃতও ঘোষণা করি, তবু এই সমস্যাগুলো চিরতরে দূরীভুত হবে না। আমি এখন ফিরে যেতে চাই শৈল্পিক সংস্কৃতির সমস্যায়। ব্যাখ্যা করতে চাই, কেন ঐতিহাসিকভাবে নন্দনতাত্ত্বিক আধুনিকতা কেবল সাধারণ সাংস্কৃতিক আধুনিকতার একটি অংশ মাত্র।
সংস্কৃতি অস্বীকারের ভুল কর্মসূচি
অতি সরলীকরণ করলে আমি বলব যে, আধুনিক শিল্পের ইতিহাস শিল্পের সংজ্ঞা ও প্রয়োগে যে কেউ আরও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দিকে অগ্রসরমান একটি ধারাকে চিহ্নিত করতে পারে। ‘সুন্দর’-এর শ্রেণীবিভাজন এবং সুন্দর বস্তুর জগৎ সর্ব প্রথম রেনেসাঁর কালে উদ্ভূত হয়। আঠারো শতকে সাহিত্য, চিত্রশিল্প ও সঙ্গীত পবিত্র ও ভদ্র জীবন থেকে স্বাধীন কর্মকাণ্ড হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক হয়। অবশেষে, ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে একটি নন্দনতাত্ত্বিক ধারণা জন্ম নেয়, যা শিল্পীদের ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নামের এক বিশেষ চেতনার অনুবর্তী হয়ে নিজ শিল্প সৃষ্টি করতে উৎসাহ জোগায়। নন্দনতাত্ত্বিক জগতের স্বায়ত্তশাসন তখন একটি সুচিন্তিত প্রকল্পে পরিণত হতে পারতো: মেধাবী শিল্পী তখন রুটিনবদ্ধ যুক্তি ও প্রাত্যহিক কাজের অবরোধ থেকে আলাদা হয়ে আপন বিকেন্দ্রিত অধ্যাত্মবাদে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে, তার যথার্থ প্রকাশভঙ্গি দিতে পারতো।
ঊনিশ শতকের মধ্যভাগে চিত্রশিল্প ও সাহিত্যে একটি আন্দোলন শুরু হয়, অক্টাভিও পাজ যার সারসংক্ষেপ খুঁজে পান বোদলেয়ারের শিল্প সমালোচনায়; রঙ, রেখা, আওয়াজ এবং আন্দোলন প্রতিনিধিত্ব করার কারণসমূহ প্রাথমিকভাবে নিষিদ্ধ করে। প্রকাশের মাধ্যম ও প্রোডাকশনের টেকনিকগুলো নিজেরাই নন্দনতাত্ত্বিক বিষয়ে পরিণত হয়। এ জন্য থিওডর ডাবলু অ্যাডর্নো (Theodor W.Adorno) পরবর্তী বাক্যগুলো দিয়ে তাঁর নন্দনতাত্ত্বিক মতবাদ শুরু করতে পেরেছেন: ‘এটা এখন অনুমোদনের জন্য নেওয়া হয়েছে যে, যা কিছু শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় তাকে আর অনুমোদনের জন্য নেওয়ার দরকার নেই। না শিল্পের নিজের, না সমগ্রের সঙ্গে শিল্পের সম্পর্কের, এমনকী শিল্পের বেঁচে থাকার অধিকারেরও নয়।’ এটাই তখন পরাবাস্তবাদ অস্বীকার করেছে: das Existenzrecht der kunstalsknust. বস্তুত, আধুনিক শিল্প যদি জীবনের সমগ্রতার সঙ্গে আপন সুখের সম্পর্ক বিষয়ে কোনো প্রতিজ্ঞার দিকে অগ্রসর না হতো, তবে পরাবাস্তবাবদ শিল্পের বেঁচে থাকার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করতো না। শিলার Schiller) এর ক্ষেত্রে নন্দনতাত্ত্বি স্বজ্ঞা তেমন একটি প্রতিজ্ঞা করলেও বাস্তবে তা পরিপূর্ণ হয়নি। শিলার এর ‘মানুষের নান্দনিক শিক্ষা বিষয়কপত্র’ আমাদের একটা ইউটোপিয়ার কথা বলে, যা এই ‘সুসময়ের প্রতিজ্ঞা’ (promisse de bonheur)-এর পুনরাবৃত্তি করেন, সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য হতে শুরু করেছে, শিল্প পরিণত হয়েছে সূক্ষ্ম দর্পণে, যাতে নন্দনতাত্ত্বিক ও সামাজিক বিশ্বের বিসদৃশ প্রকৃতি প্রতিফলিত হয়। এই আধুনিকতাবাদী পরিবর্তন ছিল ততোটা বেদনাসঞ্জাত, যতটা শিল্প নিজেকে জীবন থেকে পৃথক করেছে এবং নিজেকে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের অস্পৃশ্যতায় আলাদা করে নিয়েছে। এই রকম আবেগের বশবর্তী হয়ে শেষ পর্যন্ত ওইসব বিস্ফোরক শক্তিগুলো স্যুররিয়ালিস্ট পদক্ষেপ রূপে প্রকাশিত শিল্পের স্বয়ংসম্পূর্ণ জগৎকে আঘাত করার জন্য এবং শিল্প ও জীবনের বৈসাদৃশ্যকে শক্তি প্রদর্শন করার জন্য একত্রিত হয়। কিন্তু শিল্প ও জীবন, ফিকশন প্রথা, ধারণা ও বাস্তবকে একই পটভূমিতে দেখার এসব পদক্ষেপ—আর্টিফেক্ট ও ব্যবহার্য বস্তুর মধ্যকার, সচেতন শ্রেণীবিভাজন ও স্বতঃস্ফূর্ত উত্তেজনার মধ্যকার পার্থক্য দূরীকরণের পদক্ষেপ—সব কিছুকে শিল্প এবং সব ব্যক্তিকে শিল্পী ঘোষণা করার পদক্ষেপ। সব মানদণ্ডকে প্রত্যাহার এবং ন্যায়বিচারের সঙ্গে বিষয়গত অভিজ্ঞতার প্রকাশের সমতা তৈরির জন্য এই সমস্ত অঙ্গীকার নিজেদের একপ্রকার ননসেন্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলে প্রমাণ করে। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো আমাদের জীবনমুখী করার এবং শিল্পের যেসব অবকাঠামোকে তারা বিনাশ করতে সচেষ্ট ছিল, সেসবকে যথার্থ আলোকিত করার কাজ করেছে। তারা ফিকশনের মাধ্যমরূপে আর্বিভাব, সমাজের ওপর শিল্পকর্মের সীমা অতিক্রমণে, শৈল্পিক প্রোডাকশনের ঘনীভূত ও পরিকল্পিত চরিত্রের সঙ্গে-সঙ্গে রুচির ন্যায়বিচারের যথার্থ অবস্থানের ক্ষেত্রে একআত্মধ্বংসী নতুন বৈধতা দিয়েছে। শিল্পকে প্রত্যাখ্যান করার র্যাডিক্যাল পদক্ষেপ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে সেই সব পদ্ধতিকে খেসারত দিয়ে, যার মাধ্যমে আলোকন-নন্দনতত্ত্ব তার বস্তুতগত রাজ্যের সীমারেখা টেনেছে। স্যুররিয়ালিস্টরা লিপ্ত হয় চরমতম যুদ্ধে, কিন্তু দুটো বিশেষ ত্রুটি তাদের বিদ্রোহকে ধ্বংস করে দেয়। প্রথমত, স্বতন্ত্রভাবে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক জড়ত্বের ধারকগুলো যখন বিধ্বস্ত হয়, আধেয়গুলো তখন ছড়িয়ে পড়ে। অধোগামিতা কিংবা বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, কোনো বন্ধনমুক্তির ঘটনা ঘটে না।
তাদের দ্বিতীয় ভুল আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। প্রতিদিনের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বোধসম্পন্ন অর্থবাচকতা, নৈতিক প্রত্যাশা, বিষয়গত প্রকাশভঙ্গি এবং মূল্যায়ন অবশ্যই একে অন্যের দ্বারা সম্পর্কিত। যোগাযোগ পদ্ধতির সব ক্ষেত্রকে একত্রে ধারণ করতে পারে এমন বোধসম্পন্ন, নৈতিক-ব্যবহারিক ও প্রকাশ্য একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকা দরকার। অতএব, শিল্পের মতো একটি একক সাংস্কৃতিক জগৎ উন্মোচনের মাধ্যমে এবং কেবল তেমন একটি বিশিষ্ট জ্ঞান-সমন্বয়ের প্রবেশাধিকার দিয়ে একটি যথার্থ প্রাত্যহিক জীবনকে অন্তত সাংস্কৃতিক দরিদ্র ভবন থেকে বাঁচানো যায়। স্যুররিয়ালিস্ট বিদ্রোহ কেবল একটি বিমূর্ততাকে প্রতিস্থাপন করেছিল মাত্র। তাত্ত্বিক জ্ঞান ও নৈতিকতার জগতে এসব বিফল পদক্ষেপের সমান্তরাল অবস্থান রয়েছে, যাকে আমরা সংস্কৃতির ছদ্ম প্রত্যাখ্যান বলে আখ্যা দিতে পারি। কেবল তারাই কম উচ্চারিত। যুবক হেগেলবাদীদের কালে দর্শনের প্রত্যাখ্যানের কথাও উঠেছিল। মার্কসের কালে তত্ত্ব ও প্রয়োগের সম্পর্কপ্রশ্নে কথা ওঠে। যাই হোক মার্কসবাদী বুদ্ধিবাদীরা একটি সামাজিক আন্দোলনে অংশ নেয়। শুধু তারা পরিধিতে দর্শন প্রত্যাখ্যান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার একটা উপদলীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা শিল্প প্রত্যাখ্যানের স্যুররিয়ালিস্ট কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্যুররিয়ালিস্ট ত্রুটির সমান্তরাল এইকর্মকাণ্ডেও ভুল পরিদৃষ্ট হয়, যখন গোঁড়ামি ও নৈতিক কঠোরতার অনুষঙ্গগুলো দেখা দিতে থাকে।
প্রতিদিনের এই প্রচলিত প্রথার ত্রুটিকে সুস্থ করা যায় কোনো বোধের সঙ্গে নৈতিক-ব্যবহারিকও নন্দনতাত্ত্বিক গৃঢ় বিষয়ের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্রিয়া সৃষ্টি করে। জোর করে অতি স্টাইলসম্পন্ন সাংস্কৃতিক জগতের দ্বার খুলে দিয়ে এবং অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে এই ত্রুটি অতিক্রম করা সম্ভব নয়। পরন্তু আমরা বিশেষ পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও এই জগতসমূহের যেকোনো একটির ভিন্ন রাজ্যে প্রলম্বিত করণের মধ্যকার একটি সম্পর্ক দেখতে পাই: উদাহরণ স্বরূপ, রাজনীতিকে নান্দনিক চরিত্র দেওয়ায় অথবা রাজনীতিকে নৈতিক কঠোরতা দানের, অথবা তাকে মতবাদের গোঁড়ামির কাচে সোপর্দ করার প্রবণতা। যাই হোক, এই প্রপঞ্চগুলো আলোকন ঐতিহ্যের টিকে থাকা প্রবণতাগুলোর দোষারোপ করার দিকে আমাদের ঠেলে দিতে পারে না। কেননা ‘সন্ত্রাসবাদী কারণ’-এর মধ্যে প্রবণতাগুলোর শেকড় প্রোথিত। আধুনিকতার এই প্রকল্পে যারা সচেতনভাবে ও ব্যক্তিক সন্ত্রাসের দৃষ্টিকাড়া কর্মকাণ্ডে দলবদ্ধ হয়, তারা কিছুতেই আমলাতান্ত্রিক সন্ত্রাসের দাবিদারদের চেয়ে কম ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন নয়। আমলাতান্ত্রিক সন্ত্রাস তুলনাহীনভাবে অধিক স্থায়ী ও বিস্তৃত; তা অনুশীলিত হয় অন্ধকারে, মিলিটারি ও গোপন পুলিশের সেলারে এবং ক্যাম্পে ও প্রতিষ্ঠানসমূহে। এই সন্ত্রাস কেবল আধুনিক রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রয়োজনে চলতো এবং তা এই জন্য যে, আধুনিক আমলাতন্ত্রের দমনমূলক ব্যবস্থায় এ ধরনের প্রশাসনিক সন্ত্রাস কাজে লাগে।
চলবে…