[ইউসুফ ইদ্রিস: (জন্ম ১৯ মে, ১৯২৭, আল-বায়রুম (মতান্তরে ফাকুস) মিশর—মৃত্যু ১ আগস্ট, ১৯৯১, লন্ডন, ইংল্যান্ড) মিশরীয় নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। মিশরীয় সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ইউনেস্কোর অনুবাদ সাহিত্য সংগ্রহশালায় ইউসুফ ইদ্রিসের লেখা সংগৃহীত আছে। ইদ্রিস প্রচলিত ধ্রুপদী আরবি বর্ণনার সঙ্গে কথোপকথনের উপভাষা মিশিয়ে ঐতিহ্যগত আরবি সাহিত্যের রীতি থেকে সরে এসে নতুন একধারা তৈরিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। শহুরে এবং গ্রামীণ সাধারণ মানুষের জীবনযাপন তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন–অর্জিত অভিজ্ঞতা উপজীব্য করে তিনি লেখার আখ্যান তৈরি করেন। তাঁর লেখায় যৌনতা আসে কখনো নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে, কখনো বা দগদগে ঘায়ের মতো যা তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পাঠক তাঁর উপস্হাপনার এমন ভঙ্গিতে ভাষাহীন হতে বাধ্য–তাঁর বেশ কিছু গল্প পড়ে এবং ‘হাউজ অব ফ্ল্যাশ’ গল্পটি অনুবাদ করতে গিয়ে সে ধারণা জন্মেছে।
ইউসুফ ইদ্রিস কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৪৫-৫১) মেডিসিন অধ্যয়ন করেন এবং যখন সাহিত্যচর্চা শুরু করেন তখন তিনি কায়রোতে একজন পুরোদস্তুর চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসা পেশা ছেড়ে সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত হন। একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বামপন্থী হিসাবে, তিনি প্রথমে রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসেরের সংস্কারকে সমর্থন করেছিলেন কিন্তু পরে, ১৯৫৪ সালে, নাসেরের বিরোধিতা করার জন্য তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। ইদ্রিসের গল্পের প্রথম সংকলন, আরখাস লায়লি (Arkhas layali-দ্য চিপেস্ট নাইটস), ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরে দ্রুত আরও কয়েকটি খণ্ড প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে আ-লেসা কাদালিক (প্রকাশকাল সম্ভবত ১৯৫৭)।
১৯৬০-এর দশকে তিনি কথোপকথন ভাষা এবং ঐতিহ্যগত লোকনাট্য এবং ছায়া থিয়েটারের উপাদানগুলো ব্যবহার করে একটি অনন্য মিশরীয় নাটকের ফর্ম তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এই পরিকল্পনাটি তিনি ‘আরবি থিয়েটারের জন্য নতুন এক দিগন্ত’ শিরোনামে তিনটি প্রবন্ধের একটি সিরিজের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলেন। পরে এটিকে তাঁর নিজের নাটকে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন, বিশেষত আল-লাহজাত আল-হারিজা(Al-Lahzat al-harija-১৯৫৮; দ্য ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট), আল-ফারাফির (Al-Farafir -১৯৬৪; দ্য ফারফুরস, বা দ্য ফ্লিপফ্ল্যাপ), এবং আল-মুখাতাতিন ( Al-Mukhatatin ১৯৬৯; স্ট্রাইপড ওয়ানস) ইত্যাদি। ইদ্রিসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, আল-হারাম (Al-Haram- ১৯৫৯; দ্য ফরবিডেন) এবং আল-আয়ব(Al-ʿAyb- ১৯৬২; দ্য সিন)। ইন দ্য আই অফ বীহোল্ডার (In the Eye of the Beholder – ১৯৭৮) এবং রিংস অব বার্নিশড ব্রাশ (Rings of Burnished Brass-১৯৮৪) শিরোনামের এই দুটি হলো তাঁর রচনার অনূদিত সংকলন। তার ‘হাউজ অব ফ্ল্যাশ’ গল্পটি আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, সি. লিন্ডলি ক্রস। গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে সি. লিন্ডলি ক্রসের ইংরেজি সংস্করণ থেকে।—নাহার তৃণা]
আংটিটা আলোর পাশে। নীরবতা ছেয়ে আছে ঘর জুড়ে, কান দেখতে পায় না। তার ভেতরেই আঙুল চলে নীরবে। হাতড়ে আংটি পরা হাত পরখ করে নিতে চায়। নিঃশব্দে নিভে যায় আলো। সবকিছু অন্ধকারের দখলে চলে যায়। সে অন্ধকারে চোখ দেখতে পায় না। বিধবা ও তার তিন মেয়ে, এ বাড়ির একটি মাত্র ঘরে থাকে। সেখানে সর্বক্ষণ সুনসান নীরবতা রাজত্ব করে। নীরবতা দিয়েই শুরু হয় এ গল্প।
দীর্ঘকায়া, ফর্সা তন্বী বিধবা নারীটির বয়স পঁয়ত্রিশ। তার মেয়েগুলোও লম্বা, তবে মায়ের মতো সুডৌল দেহের নয় –বেঢপ। তাদের পরনের কালো পোশাকগুলো এখনও খুলেনি কেউ। দিন রাতের হিসেব বাদ দিয়ে একনাগাড়ে বহুদিন ধরে তারা শোকের এই চিহ্ন বহন করছে। তিন মেয়ের সবচেয়ে ছোটোটির বয়স ছয়। বড়টির কুড়ি। উত্তরাধিকার সূত্রে তারা পেয়েছে বাবার গায়ের কালো রং। বিসাদৃশ্য বেঢপ শরীরের মেয়েগুলো বলতে গেলে মায়ের গড়ন-রূপ কিছুই পায়নি।
এক কামরার ঘরটি ছোটো হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য যথেষ্ট বড়ই বলা চলে। নিদারুণ অভাবের ভেতরও ঘরের কোথাও মলিনতা নেই। পরিচ্ছন্ন ঘরের প্রতিটা কোনায় রয়েছে নারী হাতের নিপুণ যত্নের ছাপ। রাতে এই ঘরেই ইতস্তত পড়ে থাকে ওদের চারজনের শরীর। কেউ বিছানায়, কেউ বিছানার আশপাশের মেঝেতে, জীবন্ত উষ্ণ মাংসপিণ্ডের মতো গড়ায়। তাদের শরীর থেকে নির্গত উষ্ণ, অস্হির নিঃশ্বাসে ঘরটা ভরে ওঠে, মাঝেমধ্যে তাতে সঙ্গত করে যায় বুক বিদীর্ণ করা দীর্ঘশ্বাস।
বাড়ির একমাত্র পুরুষটি মারা যাবার পর থেকেই তাদেরকে কুরে কুরে খাচ্ছে সীমাহীন এক নীরবতা। অনেকদিন অসুখে ভুগে লোকটা মারা গেছে দু’বছর আগে।
শোকের দিন শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শোকের অভ্যেসটা থেকে যাওয়ার কারণে এই নিস্তব্ধতা। এ এক দীর্ঘ নীরবতা যেটা কেউ ভাঙেনি, ওটা আসলে ছিল এক ধরণের প্রতীক্ষাজনিত নীরবতা। মেয়েগুলো বিবাহযোগ্য হয়ে উঠেছিল, তাদের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাচ্ছিল কিন্তু তাদের সাথে সংসার করার মতো বর পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন হৃতশ্রী, কাকতাড়ুয়ার মতো দেখতে দরিদ্র, এতিম নারীকে বিয়ে করবে কে? আর দশটা মেয়ের মতো তাদেরও আশা আছে একটা ভালো স্বামী পাবে। যদিও তারা নেহায়েত গরিব, কিন্তু তাদের চেয়েও হৃতদরিদ্র কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আছে। যদিও তারা দেখতে কুশ্রী কিন্তু তাদের চেয়ে আরো কুৎসিত লোকও নিশ্চয়ই আছে। তিনকন্যা ভাবে স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে। অপেক্ষা করতে হবে শুধু, তাদের প্রতীক্ষার পালা সাঙ্গ হবে- কল্পনার পুরুষেরা নিশ্চয়ই আসবে একদিন।
নির্দিষ্ট সময়ে শুধুমাত্র একটা তেলাওয়াতের সুরে ঘরটির নীরবতা ভঙ্গ হয়। এতে কোনো নতুনত্ব নেই কিংবা কোনো ভালোলাগার বিষয় নেই। প্রতি সপ্তাহে এক অন্ধ হাফেজ এসে মৃতের আত্মার শান্তির জন্য কোরান তেলোয়াত করে। প্রতি শুক্রবার বিকেলে সে আসে, তার বেতের লাঠি দিয়ে দরজায় টোকা দেয়। তারপর তাকে হাত ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলে সে পা দুটো ভাঁজ করে মাদুরের ওপর বসে পড়ে। যখন পড়া শেষ হয় তখন সে হাতড়ে তার স্যান্ডেল জোড়া নেয়, তারপর হাত নেড়ে বিদায় জানায় অনির্দিষ্ট কারো উদ্দেশ্যে, সেটা কেউ খেয়ালও করে না। তার এই আসা যাওয়াটা একটা অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। সে নির্দিষ্ট সময়ে আসে তেলাওয়াত করে তারপর চলে যায়। তার এই আসা যাওয়া নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই, তার দিকে কেউ মনোযোগও দেয় না।
এই ক্ষুধা তার আত্মাকে মেরে ফেলেছিল তার হাড্ডিকে শুকিয়ে ফেলেছিল। এটা সে ভালো করে জানে এবং সে যতই তৃপ্ত হোক না কেন, এর স্বাদ ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
এ এক অনিঃশেষ নীরবতা। এমনকি যখন সে শুক্রবার বিকেলবেলা তেলাওয়াতের মাধ্যমে সেই নীরবতা ভঙ্গ করে তখন মনে হয় যেন এক নীরবতা আরেকটা নীরবতার ওপর চেপে বসেছে। অপেক্ষার মতো এই নীরবতারও কোনো শেষ নেই। যেমন শেষ নেই আশার, ক্ষীণ একটা একটা আশা যেন কোথাও জেগে থাকে। সেটা যতই ক্ষুদ্র হোক, তার চেয়েও ক্ষুদ্রতর কোনো আশা নিশ্চয়ই আছে। তারা তো বেশি কিছু চায় না। কখনো চায়নি।
সেদিনের ঘটনার আগ পর্যন্ত নীরবতা অক্ষুন্ন ছিল। এক শুক্রবার দুপুর পার হয়ে বিকেল হয়ে গেল, কিন্তু লোকটা এলো না। সব কাজেরই একটা মেয়াদ আছে সেটা যতই দীর্ঘ হোক একসময় তার অবসান ঘটবেই। এটাও হয়তো সেরকম হলো।
ঠিক তখনই বিধবা আর তার কন্যারা উপলব্ধি করলো এতদিন ধরে এই বাড়িতে একটা ব্যাপার চালু ছিল। সেটা শুধু কোরান তেলাওয়াত নয় যেটা বাড়ির নীরবতা ভঙ্গ করতো। সে ছিল একমাত্র পুরুষ যে সপ্তাহে অন্তত একবার এসে দরজায় কড়া নাড়তো। লোকটাকে নিয়ে তাদের মাথায় অন্যরকম একটা ভাবনার উদয় হলো। লোকটা তাদের মতোই দরিদ্র তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চালচলন খুব পরিচ্ছন্ন। পরণের পোশাক, পায়ের স্যান্ডেলজোড়া, সবসময় পরিষ্কার তকতকে। মাথায় বাঁধা পাগড়িটির পরিপাট্য চক্ষুমানদেরও বিভ্রান্ত করবে। আর তার কণ্ঠস্বরটিও ছিল গভীর, তেজস্বী এবং সুরেলা।
মা-মেয়েরা একসাথে পরামর্শ করতে বসলো চুক্তিটা আবার নবায়ন করা যায় না? এখুনিই তো করা যায়। কাউকে পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনা যায় না? সে কি ব্যস্ত? তা হোক। অপেক্ষা নতুন কিছু নয় তাদের জন্য। বরং অপেক্ষাই করবে ওরা।
সন্ধ্যার সময় লোকটা এসে আবারো তেলাওয়াত করতে বসল। তাকে দেখে মনে হলো সে যেন এই বাড়িতে প্রথমবারের মতো তেলাওয়াত করছে।
তখন তাদের মাথায় আরেকটা ভাবনা এলো। আমাদের কেউ একজন তাকে বিয়ে করলেই তো পারে। তাহলে আমরা প্রতিদিন তার কণ্ঠ শুনতে পাবো। সে অবিবাহিত, কখনো বিয়ে করেনি। তার মুখে সদ্য গজানো গোঁফের রেখা দেখা যাচ্ছে। এই যুবকের সাথে আমাদের কারো বিয়ে হলে আমরা গল্পগুজব করে সময় কাটাতে পারবো। আর বিয়ের জন্য সেও নিশ্চয়ই একটা ভালো মেয়ে খুঁজছে।
মেয়েদের মুখে কথাগুলো শোনার পর মা তাদের প্রত্যেকের চেহারার দিকে তাকিয়ে সম্ভাব্য ভাগ্যবতীকে খুঁজে বের করতে চাইল। কিন্তু মা যখন তাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল প্রত্যেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। যার অর্থ হলো – “এতদিন ধরে যারা একজন সুপুরুষ রাজপুত্রের জন্য অপেক্ষা করেছে, সে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে এখন একটা অন্ধ লোককে বিয়ে করতে হবে?” তারা এমন একজন স্বামী চায় যে চোখে দেখতে পায়। যার স্বাভাবিক দৃষ্টিক্ষমতা আছে। বেচারিরা তো জানেই না পুরুষের জগৎটা কেমন। তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যে একজন পুরুষ শুধু তার দৃষ্টিশক্তি দিয়েই পুরুষ হয়ে ওঠে না।
– তুমি কিন্তু ওকে বিয়ে করতে পারো মা। তুমিই বিয়ে করো!
-আমি?! পাগল নাকি? লোকে কী বলবে?
-যা খুশি বলুক। তাতে কিছু এসে যায় না। পুরুষের আনাগোনাশূন্য একটা বাড়ি যে কতটা নিঃস্ব সেটা কাউকে বোঝানো যাবে না।
-তোদের বাদ দিয়ে আমি বিয়ে করবো? অসম্ভব!
-আমাদের চিন্তা রাখো। তোমার বিয়ে করা উচিত, তাই না মা? তাহলে আমাদের বাড়িটা একজন পুরুষের আনাগোনায় ভরপুর থাকবে। তারপর একে একে আমরাও বিয়ে করবো। তুমিই তাকে বিয়ে করো মা, তুমিই করো!
অতএব মা বিয়ে করল অন্ধ হাফিজকে। তাতে বাড়ির বাসিন্দা একজন বাড়লো, আয় উন্নতিও সামান্য বাড়লো বটে কিন্তু জটিল এক সমস্যাও দেখা দিলো।
প্রথম রাতে দম্পত্তি দুজন বিছানায় গেল, কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমেও তারা কেউ একে অপরের কাছে ঘেঁষার সাহস পেল না। যদিও তিন মেয়েই ঘুমাচ্ছিল, তবু ঘর জুড়ে অস্বস্তি, যেন ওদের প্রত্যেকের জোড়ায় জোড়ায় অন্তর্দৃষ্টির সামনে অন্ধকার ঘরের সবটা বড়বেশি দৃশ্যমান। কন্যাত্রয়ের প্রতিটা ইন্দ্রিয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পড়ে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যকার দূরত্ব রাতভরই জিইয়ে রইল। মেয়েগুলো বড় হয়েছে। দাম্পত্য সম্পর্ক বোঝার মতো ঢের বুদ্ধি তাদের হয়েছে। প্রথম রাতটা কোনোভাবে কাটল। দিনের বেলা কোনো অজুহাত রইল না। মেয়েরা সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল এবং কেউই সন্ধ্যার আগে ফিরলো না। যখন ফিরলো, তখন ওরা কিছুটা দ্বিধা এবং সংকোচ নিয়ে, এক পা এগিয়ে, এক পা পিছিয়ে, দোনোমোনো করতে করতে ঘরের কাছে এলো… ঘরে ঢোকা নিয়ে তাদের একটু দ্বিধা, একটু সংশয় ছিল। গোটা ব্যাপারটায় এমন এক হাস্যরসের সুড়সুড়ি ছিল যে একসময় তারা সবাই হাসিতে ভেঙে পড়ল। তাদের হাসির ওপর বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসা সম্মিলিত একটি হাসির ফোয়ারা আছড়ে পড়লো। পুরুষটির সাথে তাদের মায়ের হাসি শুনতে পেল মেয়েরা। বাইরে দাঁড়িয়ে মায়ের হাসি শুনে মেয়েগুলো ভাবলো তাদের মা এমন করে কখনো হাসেনি। আর সেই লোকটা যাকে সবসময় লাজুক নম্র বিনয়ে বিগলিত দেখেছে সে কেমন করে হাসছে দেখো! ওরা ভেতরে যাবার পরও হেসেই চলেছে নবদম্পত্তি। তাদের মা হাসতে হাসতে ওদের জড়িয়ে ধরে, তার মাথায় ঘোমটা নেই, ভেজা চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো।
মায়ের চেহারা দেখে তারা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলো যেটা এতদিন ধরে ঝুলকালি আর মাকড়সায় ঢাকা টিমটিমে হ্যারিকেন ছিল, সেটা যেন হঠাৎ করে ধবধবে বৈদ্যুতিক বাতি হয়ে জ্বলে উঠেছে। তার চোখ দুটো কেমন উজ্জ্বল দেখাচ্ছে! ঝকঝকে পরিষ্কার চোখ দুটো ভেসে উঠেছে, আনন্দে অশ্রুতে ভরে গেছে, যে চোখ এতদিন দূর কোনো গহীন অন্ধকারে মুখ ডুবিয়ে ছিল।
এ বাড়ি থেকে নৈঃশব্দ্য ক্রমশ অপসারিত হয়ে গেল। খাওয়ার সময়, খাওয়ার আগে কিংবা খাওয়ার পরের সময়টা গান, গল্প আর কৌতুকে ভরে উঠল। যুবকটা যখন গান গায় তখন তার কণ্ঠ শুনতে এত ভালো লাগে মনে হয় যেন জনপ্রিয় জুটি উম্মে কুলসুম আর আবদুল ওয়াহাব ভরাট এবং সুললিত কণ্ঠে গাইছে।
-তুমি খুব ভালো কাজ করেছো মা! এই হাসি আনন্দ দেখে আরো কত পুরুষ এদিকে আসবে। কথায় বলে একটা পুরুষ আরো দশটা পুরুষকে ডেকে আনে।
-ঠিক বলেছো কন্যারা। আগামী দিনগুলোতো আরো অনেক পুরুষ আসতে শুরু করবে। তাদের মধ্য থেকে কেউ হবে তোমাদের স্বামী। মেয়েদের উৎসাহে সঙ্গত দেয় মা।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে অন্য পুরুষদের ব্যাপারে মায়ের অতটা আগ্রহ ছিল না। তার ভাবনার সবটা জুড়ে তখন নতুন স্বামী। যুবকটির ভাবনাতেই সে মশগুল। সে অন্ধ তাতে কী? যাদের চোখ আছে তাদের অনেকেই তো আমাদের দেখতে পায় না, তাদের সত্যি সত্যি চোখ থাকা সত্ত্বেও। এই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর যুবকটি তার শক্তি এবং সুস্বাস্থ্য দিয়ে বছরের পর বছর ধরে অসুস্থ, দুর্বল এবং অকালবার্ধক্যে পতিত হওয়া নারীটিকে যেন ক্ষতিপুরণ দিচ্ছে।
নিস্তব্ধতার যুগ কেটে গেছে, জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, আনন্দ-কোলাহল ফিরে এসেছে। লোকটা তার আইনত স্বামী, আল্লা ও তাঁর নবীকে স্বাক্ষী রেখে ওরা বিয়ে করেছে। লজ্জার কী আছে তাতে? সে যা করছে সবকিছুই বৈধ। তাদের আর রাখঢাকের দরকার নেই। যখন রাত নামে তখন স্বামী স্ত্রী দুজনে একে অন্যের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যায়, কোনো সংকোচ বোধ করে না। কন্যারা তখন একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে দূরে সরে থাকে, তারাও বোঝে ব্যাপারটা। তখন তারা বিছানা আকড়ে চুপচাপ পড়ে থাকে, এমনকি তাদের নিঃশ্বাসও আটকে রাখে, কাশি এলেও সেটা প্রাণপণে চেপে রাখার চেষ্টা করে। হঠাৎ যদি কারো বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তখন আরেকটা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে সেটাকে চেপে রাখার চেষ্টা করে।
দিনের বেলা নারীটি ধনী লোকদের বাড়িঘর পরিষ্কার করতে যায়, আর তার স্বামী যায় গরিবদের ঘরে তেলাওয়াত করতে। বিকেলে সাধারণত বাড়ি ফেরার অভ্যেস ছিল না স্বামীটির। কিন্তু রাতের বেলা দীর্ঘ সময় জেগে থাকার ক্লান্তি কাটানোর উদ্দেশে সে বিকেল বেলা ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নেবার জন্য বাড়ি ফিরতে শুরু করে। যাতে আগের রাতের ক্লান্তি কাটানো যায় এবং অনাগত রাতের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা যায়। এক রাতে যখন দুজন দুজনকে নিয়ে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছিল তখন পুরুষটি হঠাৎ করে প্রশ্ন করল: দুপুরবেলা তার কী সমস্যা হয়েছিল? এখন সে এত কথা বলছে, অথচ তখন কেন একদম চুপ করে ছিল? আর এখন তো সে দিব্যি আংটিটা পরে আছে, বিয়েতে স্ত্রীকে দেওয়া তার মূল্যবান একটা স্মারক এই আংটি, কিন্তু দুপুরে সে ওটা পরেনি কেন?
কথাটা শুনে নারীটি লাফ দিয়ে চিৎকার করে উঠে দাঁড়াতে পারতো। তার মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারতো। লোকটাকে খুন করে ফেলতে পারতো। কারণ সে যা বলেছে তার অর্থ একটাই হতে পারে। যা ঘটেছে সেটা একটা ভয়ানক ঘৃণিত ব্যাপার! কিন্তু তার বুকের ভেতরে জেগে ওঠা একটা অব্যক্ত যন্ত্রণাকে নিঃশ্বাসের সাথে আটকে রাখে সে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সে। সে তার কানটা খাড়া করে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। অন্ধকারে সে তার কানকে একাধারে শ্রবণযন্ত্র অন্য দিকে দৃষ্টিশক্তির বিকল্প হিসেবে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার করে প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করল কে এই অকাজটা ঘটিয়েছে। কেন জানি তার মনে হচ্ছিল ওটা মেজ কন্যার কাণ্ড। তার চোখে এমন একটা দুঃসাহসী ব্যাপার আছে যেটা বুলেট দিয়েও দমানো যায় না। তবু সে কান পেতে থাকলো। তিন কন্যার শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রমশ বাড়ছিল, গভীর এবং উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল যেন তাদের জ্বর এসেছে, তাদের ভেতরটা জ্বলছিল, গোঙাচ্ছিল, ভেঙেচুরে যাচ্ছিল, থেমে যাচ্ছিল, এক নিষিদ্ধ স্বপ্ন এসে ঝামেলা পাকাচ্ছিল। তাদের নিঃশ্বাসটা ছন্দে ছন্দে হিসহিসানিতে রূপান্তরিত হলো, যে হিসহিসানি শুষ্ক তৃষ্ণার্ত মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। তার বেদনা আরো তীব্র হয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রাখলো। সে যা শুনতে পেলো ওটা যেন একদল ক্ষুধার্ত মানুষের নিঃশ্বাস। এমনকি সে তার ইন্দ্রিয়ের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেও একতাল উত্তপ্ত জীবন্ত মাংসস্তুপের মধ্য থেকে কাউকে আলাদা করতে পারলো না। তাদের সবাই ক্ষুধার্ত! তাদের সবাই দীর্ঘশ্বাসের সাথে বিড়বিড় করছিল। তাদের নিঃশ্বাসের গোঙানিটা শুধু শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া নয়, ওতে মিশে ছিল একটা আর্তি। ভিখিরির মতো কিংবা তার চেয়েও অধিক কিছু।
সে আসলে তার প্রথম দায়িত্বটা ভুলে দ্বিতীয়টার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। সবার আগে তার মেয়েদের প্রয়োজন তাকে দেখতে হতো। তাদের অপেক্ষা ক্রমশ তিক্ততায় পরিণত হয়েছিল এবং তাদের জন্য কোনো পাত্রের ছায়াও কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। এখানে এসেই একটা তীক্ষ্ণ সুঁইয়ের মতো খোঁচা লাগল তার ভেতরে। তার মেয়েরা ক্ষুধার্ত। হ্যাঁ সেই খাবারটা নিষিদ্ধ বটে, কিন্তু ক্ষুধা তো আরো ভয়ানক ব্যাপার। এরকম খিদের চেয়ে বড় পাপ আর কিছুই নেই। সে নিজেই এটা জানে এবং এই খিদেটা তাকে ভালো করেই চেনে। এই ক্ষুধা তার আত্মাকে মেরে ফেলেছিল তার হাড্ডিকে শুকিয়ে ফেলেছিল। এটা সে ভালো করে জানে এবং সে যতই তৃপ্ত হোক না কেন, এর স্বাদ ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
যতক্ষণ পর্যন্ত সে চোখে দেখতে না পাচ্ছে, সে নিশ্চিত হতে পারবে না আসল ঘটনা কী। এই বাড়িতে সেই তো একমাত্র অন্ধ মানুষ। আর অন্ধকে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। আছে কী?
অনাহার! সে নিজের মুখের খাবার নিয়ে তাদের খাইয়েছে। নিজের ভেতরে খিদে জমিয়ে রেখেও আগে তাদেরকে খাওয়ানো তার দায়িত্ব। সে যে তাদের মা! সেটা কী সে ভুলে গিয়েছিল?
তার ভেতর যতই যন্ত্রণা থাকুক, সেটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপার না। তার যন্ত্রণাটা নীরবতায় রূপান্তরিত হলো। তাদের মা সেই মুহূর্ত থেকে আবারও নীরব হয়ে গেল। নীরবতা আদতে তাকে ছেড়ে যায়নি কখনো।
যেমনটি সে ভেবেছিল, সকালে নাস্তার সময় দেখা গেল তার মেজ কন্যা, সে চুপ করে গেছে, একদম চুপ।
রাতের খাবার সময় এলো। অন্ধ যুবাপুরুষটি আনন্দিত, তার ভালো সময় কাটছে। সে এখনো গান গাইছে, মজা করছে. হাসিতামাশায় মেতে আছে। সেই হাসিতে বড় কন্যা আর ছোটো কন্যা বাদে আর কেউ যোগ দিচ্ছে না।
ধৈর্য ধরে পাত্রের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় সেটা অসুস্থতায় রূপ নিলো। কিন্তু সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
একদিন বড় কন্যা তার মায়ের আঙুলে থাকা আংটির দিকে তাকিয়ে বলল আংটিটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। সে বলল একদিনের জন্য ওটা পরে দেখতে পারে কিনা। মাত্র একদিনের জন্য। তার বেশি নয়। মায়ের বুকটা হাহাকার করে উঠল। নিঃশব্দে সে আংটিটা খুলে দিলো। নিঃশব্দে বড় কন্যা সেটা নিজের হাতে পরে নিলো।
সেদিন রাতের খাবারের সময় বড় কন্যাও চুপচাপ হয়ে গেল। সে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে চাইল না।
অন্ধ যুবাপুরুষ নিজের মনে কোলাহল করে গেল, গান গাইল আর হাসতে লাগল কেবল ছোটো কন্যাটি তাতে যোগ দিলো।
দিন গড়াতে লাগল কিন্তু কোনো আশার আলো দেখা গেল না। বয়স বাড়তে বাড়তে বড় বোনদের মতো একই আকাঙ্ক্ষা ছোটো মেয়েটাকেও গ্রাস করল। একদিন সে তার মায়ের কাছে আংটির খেলায় অংশ নেবার জন্য আবদার করল। মায়ের তাতে অমত করার উপায় ছিল না। নিঃশব্দে সে তার পালা শুরু করল।
তারপর থেকে বাতির পাশে আংটিটা রাখা থাকে। চারদিকে নিশ্ছিদ্র নীরবতা নিজের মতো থিতু হয়ে থাকে। কান দেখতে পায় না। নিঃশব্দে একটা আঙুল এগিয়ে আসে। যখন যার পালা আসে সে আংটিটা পরে নেয় নিঃশব্দে। বাতিটা নিভে যায়। অন্ধকার গ্রাস করে চারপাশ। অন্ধকারে চোখগুলো দেখতে পায় না।
ঘরের আর কেউ বাদ রইল না। অন্ধ যুবকটি ছাড়া এই ঘরে উচ্চস্বরে হাসি তামাশা আর গান করারও এখন আর কেউ নেই।
কিন্তু একসময় তার ভেতরেও একটা বোধোদয় ঘটলো। এইসব হাস্যরসের আড়ালে একটা জিজ্ঞাসা তাকে এই নীরবতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য প্ররোচিত করছে। তাকে প্রশ্নটার উত্তর জানার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভেতরটা ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো করে দিতে চাইছে। সেও জানতে চায়, সত্যিটা জানার ইচ্ছে তার। প্রথমে সে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা। তখন নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিল হয়তো এটাই নারীর ধর্ম। সবসময় একরকম থাকে না ওরা। কখনো সে একটা শিশিরকণার মতো তরতাজা, আবার কখনো হেজেমজে যাওয়া পুকুরের মতো দুর্গন্ধযুক্ত। কখনো তার স্পর্শ গোলাপের পাপড়ির মতো, কখনো খসখসে ফেটে যাওয়া নাশপতির মতো। এটা সত্যি, আংটিটা সবসময় পরা ছিল, কিন্তু আংটির ভেতরে যে আঙুলটা সেটা প্রত্যেকবার ভিন্ন ভিন্ন। এখন সে ব্যাপারটা মোটামুটি বুঝতে পেরেছে। সে নিশ্চিত বাকিরাও তাই। কিন্তু নীরবতা ভেঙে কেউ কথা বলছে না কেন? কেন কেউ ব্যাপারটা খোলাসা করছে না?
কিন্তু একবার রাতের খাবার সময় হঠাৎ করে তার মাথায় একটা প্রশ্ন খোঁচা দিয়ে উঠল: যদি নীরবতা তার গোপনীয়তা প্রকাশ করে দেয়? যদি সে সরব হয়ে ওঠে?
এই প্রশ্নটা মাথায় আসতেই তার গলায় খাবার আটকে যায়।
আর সেই মুহূর্ত থেকে সেও পুরোপুরি চুপ হয়ে গেল। সেও আর নীরবতা থেকে বেরোতে পারলো না।
এখন সে নিজেই ভয়ে আছে যদি এই জঘন্য ব্যাপারটা নিয়ে কেউ কথা বলে ওঠে। একবারের জন্য হলেও যদি কেউ নীরবতা ভঙ্গ করে? যদি একটিমাত্র শব্দও প্রকাশ পায়, তাহলে হয়তো পুরো নীরবতার প্রাসাদটাই ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। আর যদি এরকম কিছু হয় তখন সবকিছু তার ঘাড়ে এসে পড়বে।
একটা অদ্ভুত এবং ভিন্ন ভিন্ন নীরবতার খোলসের ভেতরে প্রত্যেকে আশ্রয় নিতে শুরু করে। এবারের ব্যাপারটা হলো একটা স্বেচ্ছা নীরবতা, যেটা দারিদ্রের জন্য নয়, অসুন্দরের জন্য নয়, ধৈর্যের জন্য নয়, হতাশার জন্য নয়।
বস্তুতপক্ষে এটা হলো গভীরতম ধরনের এক নীরবতা। কারণ এটা খুব কড়াকড়িভাবে নিশ্চুপ থাকার ব্যাপারে একমত হয়েছে, যেটা কোনোরকম চুক্তি ছাড়াই এসে গেছে।
এক বিধবা আর তার তিন কন্যা।
একটা বাড়ির একটা ঘর।
এক নতুন নীরবতা।
অন্ধ তেলোয়াতকারী সেই নৈঃশব্দ্য নিয়ে ভাবতে শুরু করল। নিঃশব্দেই সে নিজেকে আশ্বস্ত করতে শুরু করল যে বিছানায় তার সঙ্গী ছিল তার বৈধ বিবাহিত স্ত্রী। পবিত্র এবং সত্যিকারের স্ত্রী যার হাতে আংটি আছে। সে কখনো তরুণী কখনো বয়স্ক, কখনো তুলতুলে কখনো কঠিন , কখনো মোটা কখনো সরু। ওটা আসলে অন্য পক্ষের ব্যাপার, যে চোখে দেখে ওটা তারই দায়িত্ব। যেহেতু তাদের দৃষ্টিশক্তি আছে, সেহেতু তারা বিষয়টা বুঝতে পারে। ন্যায়-অন্যায়ের দায়ও তাদের। তার এতে কিছু করার নেই। সে বড়জোর সন্দেহ করতে পারে। আর সন্দেহের বিষয়টা কখনোই নিশ্চিত করা যায় না যদি না দৃষ্টিশক্তি থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে চোখে দেখতে না পাচ্ছে, সে নিশ্চিত হতে পারবে না আসল ঘটনা কী। এই বাড়িতে সেই তো একমাত্র অন্ধ মানুষ। আর অন্ধকে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। আছে কী?