আফগানিস্তানের দারি ভাষায় কবিতা রচনা করে সম্প্রতি লোকপ্রিয় হয়েছেন কবি রেজা মোহাম্মদি। তার জন্ম ১৯৭৯ সালে কান্দাহারে। যুদ্ধে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন শৈশবে। কৈশরের অনেকগুলো বছর কাটিয়েছেন পাকিস্তান ও ইরানের শরণার্থী শিবিরে। তরুণ বয়সে অভিবাসী হন বিলাতে। পড়াশোনা করেন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটিতে। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক। বিলাতে স্থায়ীভাবে প্রবাসী হলেও তার চিত্রছন্দময় কবিতা আফগানিস্তান ও ইরানে জনপ্রিয়। নিচের দুটি কবিতা দারি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন গুল মোহাম্মদ তানিন। ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন মঈনুস সুলতান।
অবৈধ অভিবাসী
সূর্যোদয় হয়েছে পাহাড়ের ওপাশে
ভাসছে শান্ত শুভ্র মেঘদল
বইছে সুবাতাস নির্মল উচ্ছাসে;
আর বাক্সপোটরা নিয়ে পৌঁচাচ্ছে সীমান্তে
কম্বল কেতলি ও পুতুল একটি ঝুলছে
. কর্ডে বাঁধা হয়ে স্যুটকেসের প্রান্তে,
এসে জমা হচ্ছে অনেক ভিনদেশি পরিবার
ওপারে জ্যাম্পেস করে জমেছে কি পার্টি?
ভেসে আসছে মিউজিকের সুরবাহার।
কারা মেতেছে বুঝি যুগল নৃত্যে
ছত্রখান হচ্ছে পানপাত্র মদির হাস্যরোলে,
নওল তরুণ এক পরিয়ে দিচ্ছে ফুল
. যুবতীর সোনালি চুলে।
আর এদিকে আমি-
হাতে নিয়ে আমার ধুঁকপুকে দরাজ হৃদয়,
লুকিয়ে আছি কার্গো জাহাজের তল কুঠুরিতে
থানা গেড়েছে মনে তীব্র ভয়।
অথবা আমার শরীর কর্ডে শক্ত করে বাঁধা
চব্বিশ চাকার ট্রাকের তলায়,
অতিক্রম করছি সীমান্ত
না বলা বাক্যের কাঁটা আটকে আছে গলায়।
প্রবেশ করতে যাচ্ছি মহিমাময় বিলেতি জগতে
আর যাবো না ফিরে এসেছি যে পথে,
পেরিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত তীব্র প্রতীক্ষায়
আজানা দেশে আগন্তুক আমি নিতান্ত নিরুপায়।
অ্যালবাম
কোঁকড়ানো অলকগুচ্ছে খেলা করছে
তোমার সুচারু আঙুল,
ছড়িয়ে পড়ছে মুখে চিকন কিছু চুল।
চোখ জোড়া যেন শরাবের পেয়ালা
মহতি মায়ায় জাদুময়,
পানে উদগ্রীব আমি
. হয়েছি নেশাগ্রস্ত তন্ময়।
পরের ছবিতে খেলছে দুটি শিশু
ওরা সেজেছে ভুত,
কাছাকাছি আমাদের বাহু-দুটি হাত
স্পর্শের ওমে আঁকা এ ছবি নিখুঁত।
পাতা উল্টাই অ্যালবামে
খেলছে বাচ্চা দুটি ডানে ও বামে,
নিমগ্ন হওয়া কি উচিত নিত্যদিন-পরস্পর?
আমরা তো নই
আমাদের অদৃষ্ট নিয়ে খেলছেন যে ঈশ্বর!
পরের ছবিতে দুটি পিঞ্জিরায়
ভিন রঙের জোড়া পাখি খুঁটে খায়
. শস্যের দানা,
লুকোচুরিতে আমাদের শিশুরা
ভাঙছে নিষেধের সীমানা।
তুমি তো নেই পরের পৃষ্ঠায়
আমাদের গুপ্তধন
শিশুদের খেলাধূলা স্বপ্ন সৃজন,
মরে যায়,
সব কিছু নিমেষে মুছে যায়।
পরের ছবিতে আবার যখন যুক্ত হয় তোমার অনন,
নদী বয়ে যেতে চায় সবুজ উপত্যকায়
সৌরভের সাথে চলে বর্ণের রমণ।
ক্রীড়াপ্রিয় হরিণের মতো আমার চোখ দুটি
তোমাকে করে অনুসরণ,
সুচারু আঙ্গুল চুলে তুলে ঊর্মিময় অনুরণন,
অলকচূর্ণে আবার ঢেকে যায় তোমার মুখ
সরাবে কখন চাঁদকুড়ো চুলের নেকাব
আমি হয়ে আছি দরশনে রঙিন-উন্মুখ।