রুপি কৌর, কানাডাপ্রবাসী কবি, লেখক ও চিত্রশিল্পী। ১৯৯২ সালের ৪ অক্টোবর তিনি ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে রুপি তার মা-বাবার সঙ্গে কানাডায় চলে যান। তার ব্যতিক্রমধর্মী ছোট ছোট সরল কবিতার গভীরতা পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়। রুপি কৌর তার কবিতাগুলো মূলত ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। ফলে এসব কবিতা খুব সহজেই পাঠকের কাছে পৌঁছে যায়। জনপ্রিয়তা পায়। কবিতাগুলোয় উঠে এসেছে ভালোবাসা, হারানোর ব্যথা, ব্যথা ভোলার উপায়, বিপ্লব, নারীবাদ ও অভিবাসন নিয়ে তার নিজস্ব ভাবনাগুলো। মায়ের অনুপ্রেরণায় মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই রুপি ছবি আঁকায় মন দেন। ২০১৪ সালে তার প্রথম বই ‘মিল্ক অ্যান্ড হানি’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রুপি সারা পৃথিবীর পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার দ্বিতীয় বই ‘দ্য সান অ্যান্ড হার ফ্লাওয়ারস’ প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার লিস্টে বই দুটি বহুদিন ধরে অবস্থান করে। লেখক হিসেবে রুপি তার নিজের সময়ের পাঠকের কাছে মনোযোগ পেয়েছেন, যেটি একজন লেখকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খুব সহজে তিনি তার কাজ প্রকাশ করতে পেরেছেন। লেখায় তিনি সর্বজনীনভাবে মানবসমাজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে একজন যুবনারীর একার সংগ্রামকে বর্ণনা করেছেন। একজন উঠতি বয়সী নারীর প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা, শোষক সমাজে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, বেদনা ও বেদনা ভুলে থাকার অভিনব উপায়গুলো খুব সহজে রুপি তার কবিতায় তুলে ধরতে পেরেছেন। সঙ্গে এঁকে দিয়েছেন নারীর সহজাত অভিব্যক্তিও। আর এসবই তাকে সাহায্য করেছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান পেতে। তার কবিতায় আছে একা নারীর কষ্টের নিরাময় ও আশা। একইসঙ্গে সৌন্দর্য ও প্রেমের বর্ণনা। একের পর এক গল্প বলার ঢঙে তিনি কবিতাগুলো লিখেছেন। দুনিয়াজুড়ে রুপি পারফর্ম করেছেন তার এসব কবিতায়। নিজের অনুষ্ঠানগুলো তিনি নিজে ডিজাইন করেছেন। তার কবিতা পাঠের অভিনব স্টাইল ও ইলাস্ট্রেশন মুগ্ধ করেছে শত শত পাঠক ও দর্শককে। এ পর্যন্ত মোট ৩০টি ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়েছে।
‘মিল্ক অ্যান্ড হানি’ থেকে রুপি কৌরের ১০টি কবিতা
১.
সে জানতে চাইলো, কী করে তুমি
অন্যের প্রতি এত দয়ালু হও
আমি বললাম, আমার ঠোঁট থেকে
ফোঁটা ফোঁটা করে দুধ ও মধু পড়ে
কারণ আমার প্রতি
কেউ দয়া দেখায়নি
২.
প্রথম যে ছেলেটা আমাকে চুমু খায়
সে আমার কাঁধগুলো এমনভাবে দাবিয়েছিল
যেন সেটা হ্যান্ডেলবার
সে একেবারে
প্রথম প্রথম
সাইকেল চালাচ্ছে
আমি মাত্র পাঁচবছর বয়সী ছিলাম
তার ঠোঁটের ভেতর
সেই ক্ষুধার আঘ্রাণ ছিল
যা সে তার বাবার কাছ থেকে নিয়েছিল
ভোর ৪টায় যেমন করে তার বাবা তার মাকে ভোগ করে
সেই প্রথম ছেলে ছিল
যে আমাকে আমার শরীর চিনিয়েছিল
কেউ চাইলেই যেন সেটা দেওয়া যায়
যেন আমার এমন ভাবা উচিত
না চাইতেই আমি অনেককিছু পেয়ে গেছি
কিন্তু হায় ঈশ্বর
আমি কি এতটাই শূন্য বোধ করেছিলাম
যেমন ভোর ৪.২৫ মিনিটে তার মায়েরও হয়!
৩.
তুমি তোমার
পাগুলোকে শিখিয়েছ
যে, তারা পুরুষের
ক্ষণিকের বিশ্রামের স্থান
একটি খালি দেহ, অতিথির জন্য
যথেষ্ট শূন্য কিন্তু কেউ কখনো তো
এখানে চিরতরে আসে না আর
থেকেও যেতে চায় না
৪.
তোমার রক্ত
আমার শিরায় শিরায় বহমান
বলো, কীভাবে সেটা
ভুলে যাবো?
৫.
চিকিৎসক পুতুলটি
তোমার সামনে রাখলো
এটি একটি মেয়ের মতোই
তোমার মামা-চাচারা যেমন করে ছুঁতে পছন্দ করে
দেখাও কোথায় তার হাতটি ছিল
তুমি জায়গাটি দেখলে
তার দুপায়ের মাঝখানে এটি
যেন সে খুব অনুতপ্ত
এভাবে তোমার ভেতর আঙুল দিয়ে দেখালো
কেমন লাগছে?
তুমি ঢোক গিললে
তোমার গলা শুঁকিয়ে গেলো
তুমি দাঁত কিড়মিড় করে
একেবারে অসাড় হয়ে
বললে ভালো
—মাঝ সপ্তাহের সেশন
৬.
তার হওয়া উচিত ছিল
তোমার জীবনের প্রথম প্রেমিক পুরুষ
কিন্তু তুমি এখনো তাকেই খুঁজছ
সবজায়গায়
—বাবা
৭.
কী ভীষণ ভয় পেতে তুমি
আমার আওয়াজ
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম
আমিও তাকে ভয় পাওয়ার।
৮.
সে তাদের হাতে থাকা
এমনই এক গোলাপফুল ছিল
যাকে তারা কখনোই
ধরে রাখতে চায়নি
৯.
সবসময় তুমি
তোমার মেয়েকে বলো
তুমি তাকে
ভালোবেসেই বলো
তুমি তাকে রাগ না করে
দুয়ালু হওয়ার জন্য
বিভ্রান্ত হতে শেখাও
যা দেখে মনে হয় সেটা খুব ভালো একটি ধারণা
যারা তাকে দুঃখ দিয়েছে
তার বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত শেখাও
তাদেরকেই বিশ্বাস করতে
যেহেতু তারাও দেখতো আসলে তোমার মতোই
(মেয়ের সঙ্গে থাকা বাবার প্রতি)
১০.
সে বললো, আমি সঙ্গম করেছি
কিন্তু আমি জানি না
প্রকৃতপক্ষে মানুষ ভালোবেসে
মিলিত হয় কেমন করে
দ্য সান অ্যান্ড হার ফ্লাওয়ারস থেকে দশটি কবিতা
১.
প্রেমের শেষ দিনটিতে
আমার হৃদয় আমার দেহের ভেতরেই চুরমার হয়ে গিয়েছিল
২.
শেষ ফুলের গুচ্ছটির কাছে আমি পৌঁছিয়েছিলাম
যা তুমি দিয়েছিলে আমাকে
এখন ফুলদানিতে সেসব ঝরে পড়ার অপেক্ষায় আছে
একের
পর
এক
ঠাস ঠাস করে তাদের মাথা উপড়েছি
আর তাদের খেয়ে ফেলেছি
৩.
তোয়ালে ঢুকিয়ে আমি প্রতিটি দরজার নিচ আটকে দিয়েছি
বাতাসকে বলেছি চলে যাও
আমার তোমাকে আর দরকার নেই
বাড়ির প্রতিটি পর্দা টেনে দিয়েছি
আলো বলেছি চলে যেতে
কেউ ভেতরে আসছে না
আর কেউ বাইরেও যাচ্ছে না
৪.
তুমি ছেড়ে চলে গেছো
তবু আমি তোমাকেই চেয়েছিলাম
যদিও আমার এমন কাউকে পাওয়ার অধিকার ছিল
যে থাকতে চেয়েছিল
৫.
গতকাল
বৃষ্টি তোমার শরীরের ওপর ঝরে পড়ে
আমার হাতকে অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল
আমি মেনে না নিয়ে আকাশকেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি
(ঈর্ষা)
৬.
যা আমরা পেছনে ফেলে এসেছি
তাই আমাকে চুরমার করে দেয়
এটা সেরকম নয়
বরং এটা তাই যা আমরা নির্মাণ করতে পারতাম
অথচ আমরা কী সেখানে ছিলাম
৭.
আমি সেই বাতাসকে ঈর্ষা করি
যা তোমাকে এখনো দেখতে পায়
৮.
হামিংবার্ডগুলো বললো
তুমি তোমার চুল পরিবর্তন করেছ
আমি বললাম, তাতে আমার কী এসে যায়
অথচ তাদের কথা শোনার সময়
আমি তাদের দেওয়া প্রতিটি বর্ণনা শুনছিলাম।
৯.
এই পৃথিবীতে
আমি যা চাইতাম তাই পেতাম
কিন্তু আমি শুধু তারই হতে চেয়েছিলাম।
১০.
তোমাকে ভালোবাসাই ছিল নিঃশ্বাস নেওয়া
অথচ আমার ফুসফুস ভরার আগেই
সেই নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাচ্ছে
(যখন তা দ্রুত নিঃশেষ হয়)