মহান রাত্রি
দাঁড়িয়ে দেখেছি আমি মাঝে মাঝে জানালার ধারে,
দিন শেষে। রাত্রি আমাকে সাবধান করে, চোখ ঠারে—
বিচিত্র শহর যেন অবিশ্বাসী, তার প্রেক্ষাপট নিয়ে
বিষণ্ণতায়, আমায় কেউ তাকে দেয়নি চিনিয়ে।
নিকটের বস্তুদেরও ঠিকমতো বুঝতে কি পারি?
নির্বিকার ওরা, যেন এই কথা কোনও ব্যাপার-ই।
শুধু রাস্তা নিজেকে ল্যাম্পপোস্টের আলোয়
তুলে ধরে, আমার বড়ই আশ্চর্য প্রতীত হয়।
একটা কামরা কোনো বাড়ির ওপরে, যেন জানায়
কিছুটা সহানুভূতি, নিজস্ব বাতির আলোয় দেখা যায়।
আমি সামনে চেয়ে দেখি, ওরা পায় না কি
টের, ঝাঁপ ফেলে দেয়, আমি দাঁড়িয়েই থাকি।
শিশুর কান্নার শব্দ, জানি ওদের মায়েরা রয়েছে ঘরে
কী নিয়ে? অসীম ক্রন্দনের সান্ত্বনাহীন ভূমির ওপরে?
অথবা কোনও কণ্ঠ গেয়ে ওঠে গান, যেমনটা হয়ে থাকে
এক বৃদ্ধ কেশে ওঠে যেন ক্ষোভে, বাইরের পৃথিবীটাকে
তার তুলনায় অনেক শান্ত মনে হয়। হয় যেন বড় দেরি
একটি ঘণ্টা কেটে গেলো আর আমি পাইনি কোনও টের-ই।
সাগর সঙ্গীত
সমুদ্রের প্রাচীন নিঃশ্বাস
রাত্রের জলীয় বাতাস
তুমি এসো উদ্দেশ্যহীন—
ভোরের আলোর যে প্রতীক্ষাধীন
সে করুক সন্ধান
শোনা যায় কি না কোনো গান।
যেমন প্রাচীন প্রস্তরের অনেক গভীরে
থাকে যে শূন্যস্থান, বার হতে চায় যেন ছিঁড়ে।
অনেক উঁচুতে হয়েছে যে ডুমুরের গাছ পোঁতা
কিভাবে চন্দ্রালোকে একা আঁকড়ায় শূন্যতা।
অর্থপূর্ণ শব্দ
‘ঝুঁকে থাকা’, অর্থপূর্ণ এই দ্বৈতশব্দ
আমরা কি জেনেছি যে তারা রয়েছে সর্বত্র?
শুধু নয় হৃদয়ে, যেখানে রয়েছে লুকোনো
পাহাড়ের মতো যেন, উচ্চতায় যেতে যেতে কখনো
সম্মুখের অগ্রসর মাঠের দিকে পড়ে ঝুঁকে
আমরাও যেন তেমনই হই, ইচ্ছা জাগুক বুকে।
একটি পাখির ব্যাপ্ত উড়ান আমাদের দিক হৃদয় বিস্তৃত
প্রয়োজন আর থাকে না ভবিষ্যতের, লাগে যেন অতিরিক্ত।
সব কিছুই প্রচুর। সব কিছু ছিল শৈশবে
অনেকখানি, যখন সময় ছিল অনন্ত বৈভবে।
জীবন দিয়েছে ঢেলে প্রচুর, প্রয়োজনের অধিক
আমরা নই বঞ্চিত, বরং পুরস্কৃত অতি।