[ফরাসি দেশের সুরিয়ালিস্ত ধারার কবি রবার্ট ডেসনসের (১৯০০—১৯৪৫) জন্ম প্যারিসে। তার বাবা একটি ক্যাফের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। কোনো কোনো সূত্রমতে তিনি মুরগি বিক্রির ব্যবসায়ও যুক্ত ছিলেন। কবি ডেসনসের পেশাগত জীবনের সূত্রপাত হয় কেরারিগিরির মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে সংবাদিকতা করেন, সাহিত্য বিষয়ক কিছু কলামও তিনি লেখেন সংবাদপত্রের জন্য। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে। একই বছর ডাডাবাদী সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রকাশ করে তার পদাবলি। সুরিয়ালিস্ট আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ‘অটোমেটিক রাইটিং’ নামক প্রকরণের চর্চা করে তিনি খানিকটা খ্যাতি কুড়ান। তার বিখ্যাত কবিতাগুলোর মধ্যে ধ্রুপদী ধারায় লিখিত ‘দ্য নাইট অব লাভলেস নাইটস্’ নিঃসঙ্গতার হার্দ্য বয়ানের জন্য বিখ্যাত। ইভন জর্জ নামে এক সংগীতশিল্পীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি মুসাবিদা করেন বেশ কিছু প্রণয়াক্রান্ত কবিতা এবং ‘লা লিবারতে উ ল অমর’ শিরোনামে সুরিয়ালিস্ট ঘরানার একখানি ইরোটিক উপন্যাস। ১৯৩২ সালের দিকে তিনি রেডিওতে কাজ শুরু করেন। তখন তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় পিকাসো ও হেমিংওয়ে প্রমুখের। তিনি জ্যাজ সংগীত ও সিনেমা নিয়ে কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি লগ্নে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে এই কবি মৃতুবরণ করেন প্যারিসে।]
আদর্শ নারী
ওই দিন বিকালে আমার দেরি হয়ে গেলো, কারণ—আমি সুন্দর জন্তুটির দাঁত মেজে দিচ্ছিলাম; যাকে আমি ধৈর্য ধরে শেখাচ্ছি গৃহপালিত হওয়ার কায়দা-কানুন। যার কথা বলছি, সে হচ্ছে বর্ণচোরা এক গিরগিটি। এ মায়াকাড়া জীবটি ধূমপানে অভ্যস্ত। সে সিগ্রেট ফুঁকছিল, যখন আমি তাকে ছেড়ে চলে আসি।
তার সাথে আমার দেখা হয় সিঁড়িতে। সে আমাকে বললো, দেখো, আমি মভ রঙে সাজছি। আমি তখন তার দিকে নজর করে আকাশে নিশানা করি আমার স্ফটিক। আর দৃষ্টি থেকে তার প্রবাহিত হয় একটি নদী।
তালাবদ্ধ হয় যে সবকিছু! তুমি জল ঢালো যে সুদর্শন তৈজসে! আমি অপেক্ষায় বসেছিলাম, যদি-বা পথ চলে যায় সমাধি মন্দিরে।
আমি সে সিঁড়ির কথা বলছি; ওখানেই গ্রন্থাগার। ভিড়ভাট্টা ও কোলাহল ওখানে অতলস্পর্শী। তারপর সূর্য রূপান্তরিত হলো অসংখ্য ঘড়িতে।
চলো ফিরে যাই। কিন্তু আসে না যে সফলতা। স্মৃতি রূপান্তরিত হয় রূপচাঁদা মাছে। খুব কষ্টেসৃষ্টে শার্ট থেকে খুলে পড়ে একটি বোতাম। পড়তে…পড়তে চলে যায় তা সীমাহীন অতলে। তখনই আদালতের রায়টি জানা যায়, ‘পরদিন সকালে নাচের মুদ্রায় বিভোর হওয়া শিল্পী ঝুলবে ফাঁসিতে। ঝলমলে রত্নগুলো উৎসর্গিত হবে তার শরীরের উত্তপ্ত বেদিতে। রত্ন থেকে বেরিয়ে আসছে শোণিত, শুনছ হে সৈনিকবৃন্দ?’
তারপর কী? ভাবছ আয়নার প্রসঙ্গ। নারী, তুমি এক অন্ধকার চত্বর। আর যদি মেঘ হয়ে পড়ে ‘ভুলো না আমায় পাখি’, তারা ওড়াউড়ি করে চিরায়ত বর্তমানে।
ইংরেজি অনুবাদ: এমি লেভিন ও ইয়োহানেস বেইলহার্জ
সড়কের বিচিত্র আকৃতি
যে সড়ক ধরে দৌড়াচ্ছি আমি
যখন আসবো ফিরে—তখন এ পথ হবে ভিন্ন,
সোজা নিশানায় পথরেখা অনুসরণ করা অনর্থক
প্রত্যাশার উদ্দীপনায় প্রাপ্তিযোগ না হলে মন হয় খিন্ন,
আমি আসবো ফিরে অন্য এক জায়গায়
দেখবো—ধ্যান ধরে তখনো বসে আছে তপস্বী বক।
ঘুরপাক খাবো আমি কিন্তু পরিবর্তিত হবে না আকাশ
গতকাল শিশু ছিলাম আমি এখন পূর্ণাঙ্গ পুরুষ,
নীলিমার আলোবাতাসে নিরুদ্বেগে নিচ্ছি নিঃশ্বাস
তারপরও ক্ষয়রোগে সমৃদ্ধ হচ্ছে ফুসফুস।
এ দুনিয়ায় জনপদসমূহ আদতে বেজায় আজব,
অজস্র গোলাপের সুরভিত বাগিচায়
একটি গোলাপের সাথে মেলে না অন্য গোলাপের অবয়ব।
ইংরেজি অনুবাদ: এমি লেভিন