সোমালি কবি জাসান দাহির ইসমাসিল ‘উইধসামে’ (Xasan Daahir Ismaaciil ‘Weedhsame’) ১৯৮২ সালে কালা-বাইদে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে, সোমালি স্বৈরশাসক সিয়াদের বোমা হামলার ফলে তিনি এবং তার পরিবার ইথিওপিয়ার ডুল-ক্যাড শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সিয়াদ বারে (Siad Barre) ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার পরিবার ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে আসেন। তিনি গেবেলিতে তার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভ করে আমাউদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০১ সালে Academy for Peace and Development আয়োজিত একটি কবিতা প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন। তার কবিতা ও গান সবকটিই সোমালি মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সম্প্রচারিত হয়েছে।
পৃথক প্রাণী
এই আত্মা যে কাঁদছে, ঘুরছে তোমার চারপাশে,
হৃদয় দিয়েই তাকে ফাঁদে ফেলা হয়।
এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুঁজছে তোমাকে,
চোখ খোঁজে, দেখার জন্য ব্যাকুল।
হৃদয় বপন করছে অনুরাগের বীজ,
রোপণ করছে প্রত্যেকটি কোষে।
যদিওবা একে করেছ সতর্ক অথবা খুঁজেছ দোষ,
এই আত্মা বিমুক্ত করছে অনুরাগ,
তোমাকে ব্যতিত বাঁচতে পারে না।
একপাশে রাখছি না আশা,
তোমার লোলুপদৃষ্টি যেনবা উত্থিত লাঠি,
আমি শিখছি না নিজ পাঠ,
করুণা করো না, চুপ থাকতে পারি না আমি,
সদয় উচ্চারণ রহিত করেছ তুমি,
তোমার জন্য ফুল এনেছি,
তুমি আমাকে দিয়েছ কাঁটা।
তুমিই কি ঈশ্বরের একমাত্র সৃষ্টি?
তুমিই কি একা ভালো? সর্বাধিক অসামান্য?
সবচেয়ে প্রতিভাধর ও সম্মানিত
সহকর্মীদের চেয়ে অধিক সৌন্দর্যে?
অথবা এটি আমার ভঙ্গিমা,
আমার স্বাগতম, আমার শুভেচ্ছা,
আমার প্রশংসার বাক্য কিংবা আমার আকাঙ্ক্ষা?
আমি সব নিয়ে গেলাম উরুর নক্ষত্রমণ্ডলে
তোমার তৈরি আলোকে।
তোমার প্রতি অবিচার করিনি আমি,
সমকক্ষ থেকে ফিরিয়ে নেইনি মুখ,
ঘুরাইনি তোমার দিকে আমার পৃষ্ঠ।
যদি তোমাকে আমার আত্মা অর্পণ না করতাম,
তৃষ্ণিত না হতাম তোমার জন্য,
যদি তোমার জন্য অশ্রুজল না ফেলতাম,
তোমার জন্য হৃদয় ঢেলে না দিতাম,
যদি তোমার জন্য এসব শব্দ রচনা না করতাম,
তোমাকে সমাদর না দেখাতাম
আমার জন্য কাঁদতে তুমি।
যে মানবতা এখানে আছে
না দেখা যায়, না করা যায় মূল্যায়ন,
না জানা যায়, না উঁচু করা যায়
বিপর্যয়
যে মাদুরে জীবন শায়িত তা কঠিন।
সাবধান: প্রতিদিন হোঁচট খাই আমরা।
যে জানে না সে জানে না
সিদ্ধান্তের কোন দরজাটি খোলা হবে
যা অনুসরণ করবে না ক্লেশ।
ক্ষুধা মানুষকে চিবুকের কাছে নেয়,
তারপর লোভের তাড়নায় চড়ে, তাই আবার সাবধান:
ভাল বুদ্ধি ব্যবহার করা, দোষারোপ করা, অপরাধ করা
এবং লজ্জা করা আর ওসব পচছে।
মৃত্যুর বর্শা লক্ষ্য মিস করে না,
অথবা হয় না পলকের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী।
ঢাল তা প্রতিহত করে না, কেউ নয় স্থায়ী আপন জীবনে,
সুতরাং আমি একটি বিষয়ে নিশ্চিত: মৃত্যু।
হামাগুড়ি দেওয়া শিশু থেকে দাড়িওয়ালা মানুষ
দুঃসংবাদ আমাকে বিপর্যয়ের সাথে ভারাক্রান্ত করে।
আমি সামর্থ্যদের হারানো অনুভব করি,
যুবকের শোকে কাঁদি,
যাদের দুধ ছিল না, তাদের জন্য অসুস্থ হয়ে কাঁদি।
রিরক্তির খোঁচায় স্ফীত হই, ধাওয়া খাই
হাতে রক্ত। আমি স্মৃতিকাতরে বিমর্ষ হই?
উপকূলে দাঁড়িয়ে হুমকি দেই,
অভিযুক্ত সাগরের কৃতকর্মে।
সমুদ্র! বাধা দাওনি, বধ কর দুর্বলদের
যে আচরণ করছ তা অপরাধমূলক
মানুষ আইন দ্বারা বর্মবদ্ধ।
প্রভুর কসম, ডুবে নিচু হয়ে গেছ তুমি।
তোমার পাওনা ক্ষতিপূরণ সুস্পষ্ট।
স্বীকার করো! চুপ করে থেকো না।
প্রভু তোমাকে নরকের আগুনে পাঠাবেন!
তুমিই আমার লোকেদের বিদীর্ণ করেছ,
মিহি রমণী আর পুরুষদের করেছ জখম জনশূন্য স্থানে।
প্রতিদিন নিষ্কাশিত হও, হও খালি,
শুকাও ফোঁটা ফোঁটায় খরা-গ্রস্ত হয়ে
সন্ধ্যায় উন্মুক্ত কর মরুভূমি, হেঁটে চলে যাবে যাযাবর।
কথা বলেছিলাম। ঝাঁকিয়ে গর্জে উঠল সাগর,
তার ঘূর্ণায়মান তরঙ্গে আর ফেনার মন্থনে,
তারপর বলল: তোমার কবিতা প্রতারণামূলক।
যে অভিযোগ দিচ্ছ, দোষারোপ করছ
তার প্রাপ্য নই আমি
এ কি আমার পাওনা? একটু অপেক্ষা কর!
তোমাদের নেতার অভাব,
দুর্বল হয়েছে দেশ। হারিয়েছে ধৈর্য্য, বিবর্ণ হয়েছে হাসি।
তোমাদের বোঝার ক্ষমতা ঘুমন্ত যে মোকাবেলা করবে,
হতাশা বিস্তৃত হয় এবং যাত্রা পরিচালনা করে
তোমার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত।
ঢেউ ধীরে প্রসারিত হয়
মেয়েদের দিকে যেন পাচার হয়েছে অন্ধকারে;
এটা তাদের বিচ্ছিন্ন করেছে,
আঁকড়ে ধরার মতন তাদের কোনো গাছ নেই
আর শিকারী আমোদিত হয় যখন
তাদের বাঁচানোর কোন বন্ধু থাকে না।
ওরা সাহারা যাদের কেটেছে,
ভাল মানুষ বীর হিসেবে ঘোষিত,
কারাগারে কতজন হতভাগা ছিল?
কত গুণী নারী ব্যর্থ হয় সম্ভাবনায় পৌঁছাতে?
গলিত মাংসের উপর শকুন চীৎকার করে
প্রতিটি মৃতদেহে বন্য জন্তুরা নখর আঁচড়ায়
ঈশ্বর প্রদত্ত সন্তানসন্ততি।
নৌকা উল্টালে তরুণরা ছিটিয়ে পড়ে তীরে।
যন্ত্রণাময় মাছ কি ক্ষোভাশ্রুতে কাঁদবে না?
তুমি কি তোমার মৃত্যু সম্পর্কে অজ্ঞাত
উপকূলান্তরে সঞ্চিত? শুধু দেখ!
জবাই হওয়ার দেশান্তর, গণহত্যা ও কুৎসিত মৃত্যু,
মায়েরা শোকের কাপড়ে আবৃত
একটি ভুলের জন্য যা আবার আসে,
এতে কি তোমরা আবদ্ধ হয়েছ?
বুসটার্ড পাখি যখন ঝোপ থেকে ডাকে
ভারি বাসন্তী বৃষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করতে,
ঝড়ো হাওয়া আর অপরাহ্নের বৃষ্টি,
যথেষ্ট সোমত্ত হওনি কি তুমি?
ছাদের মাদুর শক্ত করে বাঁধতে
তোমার কুঁড়েঘরের কাঠামোতে?
সাধারণ জ্ঞান কি জানান দেয়নি তোমায়
ভোরে ছেড়ে দিতে হবে স্থান
যেখানে গবাদি পশু আর উটের চোয়ালে চিবানোর কিছু নেই,
যেখানে আঁটুলি আর মাংসাশীরা হুমকি দেয়?
যদি জিনিসপত্র ও গৃহ বিক্রি করে দাও,
যদি সন্তানেরা চলে যায়, প্রান্তে যদি হও স্তব্ধ
ভয়ঙ্কর খবর শোনার পর
এবং তোমার সাকুল্য শিলিং পরিশোধ করে মৃত্যুতে
কাকে প্রতিবেশী করবে,
যদি তোমার সমস্ত সম্পদ কেনা হয়ে যায়
যা লোকজন অবজ্ঞা করে,
কেন প্রিয়জনের ভাগ্য বিলাপ? এটাই তোমার প্রাপ্য!
আমি বলেছি আর উত্তরও দিয়েছি:
সাগর! তোমাকে শ্রবণ করি,
স্বীকার করি, অনেক দূরে চলে গেছি আমি।
আমার ক্ষমা গ্রহণ কর।
আমি লোকেদের বলছি:
সমৃদ্ধি হারানো অনুচিত। তরুণদের ধ্বংস হওয়া উচিত নয়,
নিজেদের ফেলে দিও না সাগরে।
আপন কর্তব্য আত্মায় জ্বলে ওঠেনি
তুমি তাকে যা হস্তান্তর করেছ।
তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা ছিল না,
ন্যায়বিচার রক্ষা করেনি, তুমি প্রত্যাশায় ছিলে।
সে ঘুমিয়ে গেল। প্রতিদিন কথা বলত না
উষ্ট্র ভ্রমণে তাকে অনুপ্রাণিত করা সমীচীন,
গন্তব্যের জন্য জড়ো হয়েছ তোমরা।
বিপদ ঘিরেছে তোমাকে, মারা যাচ্ছে সন্তান,
চুরমার হচ্ছে স্বপ্নগুলো।
ঔপনিবেশিক শক্তি পুস্তকে লিপিবদ্ধ হয়েছে
যেখানে পৌঁছাবে না তোমরা
যা মানবতা কামনা করে।
চামড়া এখন আশাপূর্ণ, কেটে গেছে সত্য
আর তোমরা বলছ যে তোমরা মূল্যহীন।
এসবে অভিভূত তোমরা এবং
ডুবন্ত আত্মবিশ্বাসকে ভাগ করেছো।
তোমরা যারা একটি বাড়ি নির্মাণ করতে পার।
নিজ অধিকারে তোমরা মানুষ।
ভ্রান্তিকে পিছনে ফেলে এসো
ক্ষুধা আর সাফল্যের দিকে তাকাও, কম কিসে তোমরা
অন্যান্য সমবয়সীদের তুলনায় এক বর্শা-প্রান্ত।
প্রবল তোমাদের, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
জনগণের তোমাদের প্রয়োজন। আবাস বিচ্ছিন্ন করেনি তোমাদের।
ডাকেনি পশ্চিমা ইউরোপ। গ্রীকদের প্রয়োজন নেই।
কোথায় আত্মসম্মান? তোমাদের স্থান এখানেই।
হাতের বাইরে চলে গেছে জীবন, সামনে যা আসছে তাই নাও
ঘুরে ফিরে বাচ্চাদের দেখ
ঠান্ডায় একত্রে জড়ো, দেয়াল ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে।
শুধুমাত্র তোমাদের প্রচেষ্টা তাদের সাহায্য করতে পারে।
ছিন্নভিন্ন পৃথিবী তোমাদের ঘিরে আছে
কেউ এখনও যা সম্পূর্ণ করতে পারেনি।
দায়িত্ব তোমাদের উপর নির্ভর করছে
কর্তন ও চালনার চেয়েও অধিক চাপ।