একটি গোলাপ
একটি গোলাপ। এর নিজের ঘ্রাণই এর বাড়ি
আর হাওয়া এর বিছানা।
(A Rose by Adonis; Eng Trans.by Hassan Hilmy)
পিপাসা
কোথাও কি এমন জল আছে যা করতে পারে
জলের পিপাসা নিবারণ।
(Thirst by Adonis; Eng Trans. by Hassan Hilmy)
শোকগাথা
(আমার পিতার জন্য)
১.
আমার বাবা হচ্ছে একটি আগামীকাল
যা আমাদের কাছে ভেসে আসে,
একটি সূর্য,
আর আমাদের বাড়ির ওপরে মেঘদল জাগে।
তাকে ভালেঅবাসি আমি, মাটিতে প্রোথিত গোপনতা,
ময়লা-ঢাকা একটি কপাল।
আমি ভালোবাসি তাকে, তার ক্ষয়িষ্ণু হাড় আর কাদা।
২.
আমাদের বাড়ির ওপরে নীরবতার স্তূপ জমে আছে,
আর নেমে এসেছে এক কান্নার ফোঁপানি—
আর যখনই আমার পিতা মৃত্যুতে লুটিয়ে পড়লেন
শুকিয়ে গেল একটি মাঠ, পালিয়ে গেল গেলচড়ুই।
(Elegies by Adonis; Eng. Trans. by Khaled Mattawa)
আগুনের গাছ
পাতাদের একটি পরিবার বসে আছে ঝরনার পাশে,
অশ্রুর দেশকে তারা করছে আঘাত
বরনার জলকে তারা পাঠ ক’রে শুনিয়েছে
আগুন-কিতাব।
.
আমার প্রতীক্ষা করে থাকেনি আমার পরিবার।
চলে গেছে তারা।
না রেখে
আমার জন্য কোনই আগুন, আলামত ।
(The Tree Of Fire by Ali Esber Adunis; Eng. Trans. by Kamal Abu-Deeb)
এক মহিলার মুখ
এক মহিলার মুখে অধিবাস করি
তার অধিবাস ঢেউয়ের গর্ভে থাকে
ঢেউকে জোয়ার আছ্ড়ে ফেলছে তীরে
শঙ্খগুলোর ভেতরে সে-তটরেখা
হারিয়ে ফেলল আপন পোতাশ্রয়।
এক মহিলার মুখে আমি বাস করি
সে-মহিলা আমায় হত্যা করে,
তার আকাঙ্ক্ষা
আমার রুধিরে সে
হবে বাতিঘর
পাগলামির ষোলকলা শেষ করে।
(The Face Of A Woman by adonis Eng. trans. by Kamal Abu-Deeb)
দিন–রাতের পৃষ্ঠাগুলো
দিনের বেলা আসার আগেই…থাকি আমি।
সূর্যের বিস্ময়েরও আগে– আমি খাক্ হয়ে যাই।
গাছপালা আমার পেছনে দৌড়ায়।
ফুলেদের প্রস্ফুটন হেঁটে যায় আমার ছায়াতে।
তবুও আগামীকাল, সে আমার
চেহারায় নীরবতার এমনসব
দুর্গ গড়ে তোলে, যাতে আর
আমার শব্দেরা খুঁজে পায় না দরজা কোনো
এগুলোর ভেতরে ঢোকার।
করুণা-জাগানো নক্ষত্রেরা পুড়ে হয় ক্ষয়
আর দিনগুলো আত্মভোলা
আমার শয্যায়।
তাকিয়ে চাঁদের পানে ফুলেরা যেভাবে
পাপড়ি বন্ধ করে, বসন্ত আমার বুকে
সে রকম গোটায় নিজেকে।
তাদের জলেরা ধুয়ে মুছে আমার দৃষ্টির
আয়নাটিকে নীরবতার মতো
খাঁটি করে তোলে; আমি জেগে উঠি ঘুমের ভেতরে।
(The Pages of Day and Night by Adonis; Eng. Trans. by Samuel Hazo)
অলস হাঁটাহাঁটি
লম্বা আলখাল্লা গায়ে একটি তারা
পামগাছগুলোর ভেতরর দিয়ে পায়চারি করে।
(Promenade by Adonis; Eng Trans. by Hassan Hilmy)
অশ্রুরা
তারাটি ফুঁপিয়ে কাঁদে—
রাত্রি তারাটিরই চোখের জল।
(Tears by Adonis; Eng. Trans. by Hassan Hilmy)
নয়া নূহ্
১.
আমরা ভ্রমণ করি কিস্তি চেপে, কাদায়-বৃষ্টিতে,
আমাদের দাঁড়গুলি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিজাত।
কেবল আমরা রই বেঁচে –আর, বাকি সকলেই যায় মরে ।
আমরা চলি ঢেউয়ে ঢেউয়ে, আকাশ ছাপিয়ে ওঠা
লাশের দড়ির সঙ্গে আমাদের জীবনকে বেঁধে।
স্বর্গ আর আমাদের মাঝখানে তবুও রয়েছে এক স্থান অবারিত।
”প্রভু, তুমি আর-আর প্রাণিদের, লোকেদের মধ্য থেকে
কী কারণে আমাদেরই বাঁচালে কেবল?
আর, তুমি কোনখানে এইবার আমাদের করবে স্থাপন ?
তোমার আরেক দেশে, আমাদের আদি ঠিকানায়?
মরণের পাতার ভেতরে, নাকি জীবনের হাওয়ার নিগড়ে?
আমাদের প্রতি প্রাণে, আমাদের ধমনীতে সূর্যের ত্রাস বহমান।
‘প্রথম’ আলোকে আমরা হয়েছি হতাশ,
আমরা হতাশ, প্রভু; সে-আগামীকালের বিষয়ে
আমরা করবো শুরু তাতে এক নতুন জীবন।
সৃষ্টির আদিতম চারা আমরা না যদি হতাম,
এ-জাহান আর এরই প্রজন্মের পরম্পরায়, –স্রেফ
কাদা কিংবা উনুনের ছাই হয়ে যদি থাকতাম,
কিংবা, এতদুভয়ের মাঝামাঝি কিছু একটা যদিবা হতাম,
তাহলে তো আমাদের আর
দু’দুবার দেখতে হতো না এই পৃথিবীকে, আর এর প্রভুকে ও এর জাহান্নাম।”
২.
কালের সূচনা যদি হতো পুনর্বার,
আর যদি জীবনের মুখখানি ডুবে যেতো অগাধ সলিলে,
আর যদি পৃথিবীর উঠতো খিঁচুনি, আর এ-আমারই কাছে
ঈশ্বর, সানুনয়, আসতেন ছুটে,: ” নূহ, তুমি রক্ষা করো জীবিত রয়ছে যতো প্রাণ!’
আমি তার অনুরোধে দিতাম না সাড়া।
আমার কিস্তিতে আমি ভ্রমণ করতাম, মৃতদের
চোখ থেকে কাদা আর সমুদয় নুড়িকে সরিয়ে।
আর, মহাপ্লাবনের কাছে আমি তাদের সত্তার তল মেলে ধরতাম,
তাদের ধমনী-শিরায় আমি ফিস্ফিস স্বরে বলতাম
আমরা এসেছি ফিরে পাড়ি দিয়ে প্রাণহীন অন্তহীন ধু-ধু জলরাশি।
গুহা থেকে বের হয়ে আমরা এসেছি,
বদলে দিয়েছি আমরা অন্তহীন কালের অম্বর,
ভয়তরাসের কাছে মাথা না নুইয়ে আমরা উড়িয়েছি পাল —
সেই ঈশ্বরের কোনো কথা আমরা তো করিনি পালন।
মরণের সঙ্গে শুধু আমাদের সব বোঝাপড়া।
আমাদের তটভূমি সেতো এক চিরচেনা সুখদায়ী হতাশার নাম,
অবিরাম বৈঠা ঠেলে, আমরা দিয়েছি পাড়ি
লৌহ-উদকময় অগভীর সেই পারাবার— অবশেষে;
সেই ঈশ্বরের প্রতি আমরা দিইনি আমল, তার শুনিনি বচন।
অভীপ্সা করেছি শুধু, কোনো এক, নতুন প্রভুর।
(The New Noah by Ali Esber Adonis; Eng. Trans. by Kamal Abu-Deeb)
- দূরের হাওয়া: জুয়েল মাজহার, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, প্রকাশক: চৈতন্য