সালভাতোর কোসিমোদো
(ইতালির কবি সালভাতোর কোসিমোদো। জন্ম: ২০ আগস্ট ১৯০১ এবং মৃত্যু :১৪ জুন, ১৯৬৮ সাল। তিনি মূলত ইতালিয়ান কবি ও অনুবাদক। ১৯৫৯ সালে, তিনি তার গীতিকবিতার জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। জিউসেপে উঙ্গারেটি ও ইউজেনিও মান্তালের পাশাপাশি তিনি বিশ শতকের অন্যতম প্রধান ইতালীয় কবি হিসেবে সুপরিচিত।)
তিন্দারিতে বাতাস
তিন্দারি, আমি তোমাকে চিনি
প্রশস্ত পাহাড়ের মাঝে,
ঝুলন্ত জলাশয়ে তুমি
ঈশ্বরের মিষ্টি মধুর দ্বীপপুঞ্জ।
আজ, তুমি আমার মুখোমুখি
এবং আমার হৃদয়ে প্রবেশ করো।
আমি বাতাসের শিখরে উঠি
পাইনের বনে বাতাস অনুসরণ করে,
এবং বাতাসের প্রবাহ,
আমাকে সঙ্গ দেয়;
বাতাসে উড়ে আসে
ভালবাসা আর শব্দ তরঙ্গ,
এবং তুমি আমাকে তোমার কাছে টেনে নাও,
যার কাছ থেকে আমি ভুল করে আঁকা শিখেছি
মন্দ এবং নীরবতার ভয়, ছায়া,
নিশ্চিত মিষ্টিমধুরতার ভরসা,
এবং আত্মার মৃত্যু।
এ দেশটি তোমার অজানা
যেখানে আমি প্রতিদিন আরও গভীরে মিশে যাই
তার গোপন পাঠ্যসূচি পুষ্ট করার জন্য।
এক ভিন্ন আলো তোমাকে ঘিরে ধরে,
জানালার পিছনে
রাতের পোষাকে,
এবং আমার এক অন্য আনন্দ
তোমার প্রতিকূলে ঘুমিয়ে থাকে।
নির্বাসন কঠোর হয়
এবং সঙ্গে সম্প্রীতির জন্য অনুসন্ধান,
যা তোমার মধ্যে শেষ হয়েছে
আজ বদলে যাও
উদ্বেগজনক এক মৃত্যুর জন্য,
এবং প্রতিটি প্রেম দুঃখের বিরুদ্ধে
আত্মরক্ষার আবরণ,
অন্ধকারে এক নীরব সিঁড়ি,
যেখানে তুমি আমাকে দাঁড় করিয়ে
দিয়েছো অনাহারের বিরুদ্ধে।
ফিরে আসি, নির্মল তিন্দারি,
আমাকে আলোড়িত করো, মিষ্টি বন্ধু,
নিজেকে পাথর থেকে আকাশে তুলতে;
যাতে আমি ভয়কে রূপ দিতে পারি
জানে না এমন লোকদের জন্য;
কী গভীর বাতাস আমাকে সন্ধান করছে।
ইউজিনিও মান্তালে
(কবি ইউজিনিও মান্তালে। জন্ম: ১৮৯৬ এবং মৃত্যু:১৯৮১সালে। মূলত ইতালিয়ান কবি, গদ্য লেখক, সম্পাদক ও অনুবাদক। ১৯৭৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। ইতালির কবি গিয়াকোমো লিওপার্ডির পর তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইতালিয়ান গীতিকবি হিসাবে বিবেচিত।)
লেবু
আমার কথা শুনুন, কবিরা বিজয়ী
শুধুমাত্র গাছপালার মধ্যে হেঁটে বেড়ান
বিরল নামের: বক্সউড, প্রাইভেট এবং অ্যাকানথাস গাছের জঙ্গলে।
তবে আমি ঘাসের দিকে চলা যাওয়া
রাস্তা পছন্দ করি
ছেলেরা যেখানে অনাহারে
অর্ধ-শুকনো পুকুরে সেচের কাজ করে:
সে পুকুরের তীর ধরে পথ
বেতের ঝার দিয়ে নেমে এসে
লেবু বাগানে থামে।
আরো ভালো যদি নির্জনতার নীলে
পাখিদের ঝগড়া জেগে ওঠে:
আমরা বেশ শান্ত-বাতাসে
গাছের শাখায় পাতাদের বন্ধুত্বপূর্ণ
আরো কিছু ফিসফিসানি শুনবো,
এবং গন্ধ সংবেদনে
পৃথিবীর মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে
হৃদয়ে অনুভব করব এক অস্থির মধুর বৃষ্টি।
এ এক অলৌকিক ঘটনা, যুদ্ধবাজীর
অস্থিরতা এখানে এসে থেমে গেছে;
এখানে আমরা দরিদ্ররাও আমাদের
সম্পদের অংশ গ্রহণ করি,
যা লেবুর ঘ্রাণ।
দেখুন, এই নীরবতার গভীরে
যেখানে সবকিছু
চূড়ান্ত রহস্যময়তার
বিশ্বাসঘাতকতা ছেড়ে এসেছে।
কখনো কখনো আমরা
অনুভব করি যে আমরা
প্রকৃতির ত্রুটি উন্মোচিত করছি,
বিশ্বের স্থির বিন্দু, যার সংযোগ ধরা যায় না,
সেই অধরা গ্রন্থির তন্তু—যা শেষ পর্যন্ত
সত্যের হৃদয়ের কাছে নিয়ে যায়।
চোখ তার চারপাশে ঘুরতে থাকে,
মন জিজ্ঞাসার চেতনায়
বিভোর হয়ে ওঠে তার মাতাল সৌরভে
দিনের সবচেয়ে নিস্তেজ সময়ে।
আপনি যে নীরবতা অনুভব করেন
প্রতিটি ক্ষণস্থায়ী মানব ছায়ায়
তা এক বিভ্রান্তির দেবত্বের মায়া।
কিন্তু মায়া ব্যর্থ হয়,
এবং সময় আমাদের ফিরিয়ে দেয়
গোলমালের শহরে যেখানে নীল
জেগে ওঠে অবরুদ্ধ ছাদের কার্নিসে।
এবং বৃষ্টি পৃথিবীকে ক্লান্ত করে তোলে;
শীতের একঘেয়েমি ভাব
ঘরগুলোর ওজন নিতে থাকে,
আলো কৃপণ হয়ে ওঠে—তিক্ত হয় আত্মা।
সমস্ত দিন ভাঙা দরোজা দিয়ে
একটি উঠোনে, সেখানে গাছের মধ্যে,
লেবুর হলুদ বরণ জেগে ওঠে;
এবং হৃদয়ে
শীতলতা ছুঁয়ে যায়
এবং আমাদের গভীরে
সূর্যালোকের সোনা রঙ
গান গেয়ে ওঠে।