‘প্রজ্ঞাবীজ’—ওশোর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ একশত বিশটি চিঠির অনুবাদ সংকলন। ওশো এই চিঠিগুলো হিন্দিতে লিখেছিলেন (১৯৬৬-১৯৬৯) প্রিয় শিষ্যা মহারাষ্ট্রের মা মদন কুমারী পারখকে। ইংরেজিতে চিঠিগুলোর প্রথম সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল (২০০ পৃ:) ১৯৭৮ সালে ‘সিডস অব রেভ্যুলেশন’ শিরোনামে। এরপর ১৯৯৪ সালে ইংরেজি বইটির নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘সিডস অব উইজডোম’ শিরোনামে পুনঃপ্রকাশিত হয়। বইটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন অজিত দাশ।
আভাস
আমি একজন কৃষক। আমি কিছু বীজ বপন করেছিলাম। সেগুলো গাছ হয়েছে। তাতে ফুল এসেছে। আমার সারাজীবন এই ফুলগুলোর সুবাসে পরিপূর্ণ হয়েছে। আমি এক অন্যলোকে পৌঁছে গেছি। এই ফুলগুলো আমাকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। এখন আমাকে বাইরে থেকে যেমন সাধাসিধে দেখা যায়, আমি আর তেমন নেই।
এক অদৃশ্য-অজানা প্রপঞ্চ আমার ভেতর নিজের দ্বার খুলে দিয়েছে। আমি এমন এক জগৎকে দেখেছি, এমন এক সঙ্গীত শুনেছি, যা চোখে দেখা যায় না, কানে শোনা যায় না। আমি যা পেয়েছি ও জেনেছি, তা আমার ভেতর থেকে জলরাশির মতো প্রবাহিত হতে চাইছে। যেমন করে ঝর্ণা সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়, ঠিক তেমন করে।
খেয়াল করবে, মেঘ যখন জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, কেবল তখনই বৃষ্টি হয়ে ঝরে। যখনই ফুল গন্ধে ভরে ওঠে, তখনই তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। আর যখনই কোনো প্রদীপ জ্বলে আলো ক্রমশ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
এমনই কিছু আমার সঙ্গে ঘটেছে যে, বাতাস আমার কাছ থেকে কিছু ‘প্রজ্ঞাবীজ’ নিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি না, সেগুলো কোন জমিতে গিয়ে পড়বে আর কে সেগুলোর পরিচর্যা করবে। শুধু এটুকু জানি, এই বীজগুলো থেকেই আমি জীবনে অমৃত ও দেবত্বের উপলব্ধি পেয়েছি। আর যে মাটিতে সেগুলো পড়বে, সে মাটিও অমৃত ফুলে পূর্ণ হবে।
মৃন্ময়ের মাঝে চিন্ময় লুকিয়ে রয়েছে, মৃত্যুর ভেতর জীবন। যেমন মাটির ভেতরে লুকিয়ে থাকে ফুল। কিন্তু বীজহীন মাটির সম্ভাবনা কখনোই যথার্থভাবে পরিপূর্ণ হতে পারে না। বীজ সেটিকে প্রকাশিত করে, যা অপ্রকাশিত ছিল, সুপ্ত ছিল।
আমার যা কিছু রয়েছে, আমার যে বীজ সত্তা, অমৃতের, দিব্যের, ভগবৎ চৈতন্যের, আমি সেগুলোকে বিতরণ করতে চাই। জ্ঞানের দ্বারা পরমাত্মাকে জানা যায়, প্রেমের দ্বারা পরমাত্মা হওয়া যায়। জ্ঞান হলো সাধনা আর প্রেম হলো পরিপূর্ণতা।
এক.
এক গ্রামে গিয়েছিলাম। কেউ একজন বলছে, ‘ধর্ম হলো ত্যাগ, ত্যাগ অত্যন্ত কঠিন ও কঠোর সাধনার প্রয়োজন হয়।’ সঙ্গে সঙ্গে আমার ছেলেবেলার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি নদীর ধারে বন্ধুদের সঙ্গে বনভোজনে গিয়েছিলাম। নদীটি ছোট কিন্তু অনেক বালি ছিল। বালিতে ছোট ছোট পাথর চকচক করছিল। আমার মনে হয়েছিল, কোনো মূল্যবান ভাণ্ডার পেয়ে গেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের এত পাথর জমিয়েছি যে, সেগুলো নিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে গেলো। ফেরার পথে পাথরগুলো ফেলে আসতে চোখে জল চলে আসছিল। কিন্তু আমার বন্ধুদের পাথরের প্রতি ঔদাসীন্য দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি। তাদের আমার বড় ত্যাগী বলে মনে হয়েছে। আজ আমার মনে হচ্ছে পাথরকে শুধু পাথর হিসেবে জেনে নিলে ত্যাগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
অজ্ঞান হচ্ছে ভোগ। জ্ঞান হচ্ছে ত্যাগ।
ত্যাগ কোনো ক্রিয়া নয়; এটা এমন কিছু নয় যে করতে হবে, ঘটে যায়। এটা জ্ঞানের পরিণতি। অজ্ঞান হলো যান্ত্রিক। এটিও কোনো ক্রিয়া নয়—অজ্ঞানের সহজ পরিণতি। তাই ত্যাগকে কঠিন ও কঠোর বলার কোনো মানে নেই। প্রথমত ত্যাগ কোনো ক্রিয়া নয়, ক্রিয়া হলে কঠিন হতে পারে। এটি একটি পরিণাম। দ্বিতীয়ত পরিণামে যা পাওয়া যায়, তা অমূল্য।
প্রকৃতপক্ষে ত্যাগ বলে কিছু নেই। কারণ, আমরা যতটুকু ত্যাগ করি, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়ে থাকি। সত্যি বলতে গেলে, আমরা শুধু পরাধীনতাকে ত্যাগ করে মুক্তি পেয়ে যাই। পাথর ত্যাগ করে হীরে পাই। মৃত্যুকে ত্যাগ করে অমৃতকে লাভ করি। অন্ধকার ত্যাগ করে অনন্ত ও শাশ্বত আলো পেয়ে যাই। তাহলে ত্যাগ কোথায়? কোনো কিছু ত্যাগ না করেই সব কিছু পেয়ে যাওয়া ত্যাগ হতে পারে না।
দুই.
গতকাল রাতে কেউ একজন মারা গেছে। তার ঘরে সবাই কান্নাকাটি করছে। আমারও বাল্যকালের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো—আমি প্রথম শ্মশান ঘাটে গিয়েছিলাম। একদিকে চিতার আগুন জ্বলছে, অন্যদিকে লোকজন জড়ো হয়ে গল্প করছে। গ্রামের এক কবি বলছেন, ‘মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না, মৃত্যুতো আমার বন্ধু।’ পরে এই কথাটি লোকের মুখে নানাভাবে শুনেছি। আমি সেই লোকগুলোর চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে লক্ষ করেছি, ভয় থেকেই তারা অভয়ের কথা বলছে।
মৃত্যুকে ভালো কোনো নাম দিয়ে দিলেও এর কোনো পরিবর্তন হয় না। প্রকৃতপক্ষে ভয় মৃত্যুর জন্য নয়, ভয় হলো অজানাকে জানার। যা কিছু অজানা, তা আমাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে। তাই মৃত্যুকে আমাদের জানা প্রয়োজন। আর এই পরিচয় আমাদের ভয় দূর করে দেয়। পরিচয়ের পর যা জানা যায়, তার কোনো মৃত্যু নেই। যে ব্যক্তিত্বকে আমরা ‘আমি’ বলে জানি, সেটির মৃত্যু হয়।
তিন.
একবার মন্দিরে গিয়েছিলাম। সেখানে সবাই পূজা-অর্চনায় ব্যস্ত। ভক্তরা মাথা নত করে মূর্তিকে প্রণাম করছিল। আমার সঙ্গে একজন বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি বললেন, ‘ধর্মে আর মানুষের তেমন শ্রদ্ধা নেই, লোকজন মন্দিরে আসাও ভুলে গেছে।’ আমি বললাম, ‘মন্দিরে ধর্ম কোথায়? মানুষ কেমন আত্মবঞ্চক! নিজের হাতে তৈরি মূর্তিকে ঈশ্বর মেনে নিজেকেই বঞ্চনা করছে। নিজের তৈরি শাস্ত্রকে সত্য মনে করে তৃপ্ত হচ্ছে।’
মানুষের হাতে তৈরি কিংবা বুদ্ধি দ্বারা রচিত কোনো কিছুই ধর্ম নয়। মন্দিরে স্থাপিত মূর্তিগুলো ঈশ্বরের প্রতিরূপ নয়, এগুলো মানুষেরই প্রতিরূপ। শাস্ত্রে যা কিছু লেখা হয়েছে, সেগুলো মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও বিচারের প্রতিফলন মাত্র। সত্যদর্শন নয়। সত্যকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সত্যের কোনো প্রতিরূপ নেই। কেননা সত্য অসীম, অনন্ত ও অমূর্ত। তার কোনো নাম নেই, রূপ নেই, আকার নেই। সত্যকে কোনো আকার দিলেই তা অদৃশ্য হয়ে যায়।
সত্যকে পেতে হলে সমস্ত মূর্তি, সমস্ত ধারণা পরিত্যাগ করতে হয়। মানুষের চেতনা তার মনের কারাগৃহ থেকে মুক্ত হলে সেই অসৃষ্ট সত্য প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে সত্যকে পাওয়ার জন্য মন্দির স্থাপন করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং মূর্তি না তৈরি করে সেগুলো বিলুপ্ত করা উচিত। আকার ধারণাকে পরিত্যাগ করতে হবে, যেন নিরাকার আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। মন থেকে মূর্তি সরে গেলে অমূর্ত প্রকট হয়ে যায়।
অমূর্ত সবসময়ই আমাদের মধ্যে রয়েছে কিন্তু মূর্তের আড়ালে চাপা পড়ে আছে—যেমন মালপত্রে ঠাসা ঘরের মাঝে খালি জায়গাটুকু আমরা দেখতে পাই না। মালপত্র সরালেই খালি জায়গা যেখানে ছিল সেখানেই পেয়ে যাই। সত্যের প্রকাশও ঠিক তেমনি। মনকে শূন্য করলেই তাকে অনুভব করা যায়, যা রয়েছে।
চার.
আজ সকালে এক সন্ন্যাসীর উপদেশ শুনলাম। তিনি বলছিলেন, ‘ধার্মিক হতে হলে ঈশ্বরভীরু হতে হয়। ভয় পেলে তার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। ভয়হীন হৃদয় ভালোবাসতে পারে না।’ সাধারণত আমরা যাদের ধার্মিক বলি, ন্যায়পরায়ণ বলি, মূলত ভয়ের জন্যই তারা ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ হয়েছে।
কান্ট বলেছিলেন, যদি ঈশ্বর বলে কিছু নাও থাকে, তবু ঈশ্বর ধারণাটি অপ্রয়োজনীয় নয়।’ কান্ট একথা বলেছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন, ঈশ্বরভীতি মানুষকে ভালোর পথে নিয়ে যায়। এ রকম কথা শুনলে আমার খুব হাসি পায়। এমন ভ্রান্ত ও অসত্য বক্তব্য আর কিছু হতে পারে না। ধর্মের সঙ্গে ভয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। অভয় থেকেই ধর্মের জন্ম। ভয় ও প্রেম একসঙ্গে থাকতে পারে না। ভয় কিভাবে প্রেম আর ন্যায়পরায়ণতার জন্ম দিতে পারে? ভয় থাকলে প্রেমের শুধু অভিনয় হতে পারে। ভয়ের বিপরীতেই রয়েছে প্রেম। ধর্ম কিংবা প্রেম কাউকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। জাগতে হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্ম নিতে হয়। ঈশ্বর উপলব্ধি কেবল অভয় থেকেই জন্ম নিতে পারে। আরেকটু সঠিকভাবে বললে, ভয়হীন চেতনার উপলব্ধিই হলো ঈশ্বরের উপলব্ধি। যে মুহূর্তে মনের সব ভয় দূর হয়ে যায়, ঠিক তখনই সত্যের আভাস দেখা দেয়।
পাঁচ.
দুপুরের তপ্তরোদে ভীষণ গরম লাগছে। দূরে পলাশ ফুলগুলো আগুনের ফুলকির মতো জ্বল-জ্বল করছে। মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। সারিবদ্ধ বাঁশের ঝোপ দেখে প্রশান্ত লাগছে। একটা পরিচিত পাখি গান গাইছে। তার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে সেখানেই বিশ্রাম নিলাম। আমার সঙ্গে থাকা লোকটি জিজ্ঞেস করলো, ‘কিভাবে কাম, ক্রোধকে জয় করা যায়?’ এই প্রশ্নগুলো লোকজন প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে। আসলে প্রশ্ন করার মধ্যেই ভুল রয়েছে। আমি সে কথাই লোকটিকে বললাম।
সমস্যা জয় করার নয়, সেটিকে জানার। আমরা কামকেও জানি না, ক্রোধকেও জানি না। আর এই অজ্ঞতাই আমাদের বঞ্চিত করে। জানলেই সেগুলোকে জয় করা যায়। যখন ক্রুদ্ধ হই কিংবা কাম জাগে, তখন আমাদের চেতনা লোপ পায়। যেখানে চেতনা লোপ পায়, সেখানে ‘আমি’ থাকে না। এই অচেতন অবস্থায় যা হয়, তা একেবারে যান্ত্রিক। চেতনা ফিরে এলেই অনুতাপ হয়। কাম কিংবা ক্রোধের সময় যদি চেতনা লোপ না পায়, যদি সত্তা জাগ্রত থাকে, সচেতন থাকে কেবল তখনই বোঝা যায় ক্রোধও নেই, কামও নেই—শত্রু বলে তখন কিছু থাকে না।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। অন্ধকারে দড়িকে সাপ বলে মনে হয়। কেউ ভয়ে পেয়ে দৌড়ে পালায়, কেউ মারার জন্য প্রস্তুত হয়। উভয়ই ভুল। কারণ তারা দড়িকে সাপ ভেবেছে। কেউ আবার কাছে গিয়ে বুঝতে পারে, এটা সাপ নয়। তাকে না ভয় পেতে হয়, না মারার জন্য প্রস্তুত হতে হয়।
মানুষকে কেবল তার নিজের ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। তার ভেতরে কী আছে, সেটিকে খুঁজে বের করা জরুরি। কোনো কিছুর সঙ্গে লড়াই নয়। আর আমি বলছি লড়াই না করেও বিজয়ী হওয়া যায়। নিজের মনকে জাগিয়ে তোলাই হলো জীবনকে জয় করার সূত্র।
ছয়.
রাত শেষ হয়েছে। সূর্যের আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। একটু আগেই আমরা একটি ছোট খাল পার হয়েছি। ট্রেনের শব্দ শুনে এক ঝাঁক সাদা বক কচুরি ফুল থেকে আকাশের দিকে উড়ে গেলো। তারপর কী যেন যান্ত্রিক ত্রুটি হলো, ট্রেন থেমে গেলো। এই নির্জনে ট্রেনের থেমে যাওয়া ভালো লাগছিল।
অপরিচিত কয়েকজন সহযাত্রীও উঠে এসেছেন। তারা রাতে অন্য একটি স্টেশনে ছিলেন। আমাকে সন্ন্যাসী ভেবে পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। তাদের চোখে কিছু জিজ্ঞাসা করার উৎসাহ প্রকাশ পাচ্ছে। শেষমেষ একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যদি কিছু না মনে করেন, একটি প্রশ্ন করতে চাই। আমি ঈশ্বরে আগ্রহী। তাকে পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু লাভ হয়নি। তিনি কি আমার ওপর কৃপা করবেন না?’ আমি বললাম, ‘গতকাল আমি একটি বাগানে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে কয়েকজন বন্ধু ছিল। একজনের পিপাসা পেলো। পাশেই একটি গভীর কুয়ো ছিল। আমার বন্ধু কুয়োতে বালতি ফেললো। কুয়ো থেকে দড়ি টেনে তুলতেই বালতির সব জল তলার ফুটো দিয়ে পড়ে খালি হয়ে গেলো। সবার খুব হাসি পেলো।’ আমার মনে হলো, এই বালতি মানুষের মনের মতো। তাতে অনেক ফুটো রয়েছে। নামে মাত্র বালতি কিন্তু ফুটো দিয়ে সব জল পড়ে যায়। আমাদের মনেও অসংখ্য ফুটো রয়েছে। এই ফুটোযুক্ত মনকে যতই ঈশ্বরের দিকে ছুড়ে মারো না কেন, সেটি খালি হয়ে ফিরে আসবে। তাই তাকে বললাম, ‘বন্ধু আগে বালতি ঠিক করে নাও, পরে জল তুলতে অনেক সহজ হবে। অবশ্য ফুটোয় ভরা বালতি কুয়োয় ফেলে জল তুলে আনতে পরিশ্রম হবে কিন্তু তাতে পিপাসা মেটানো যাবে না। আর মনে রাখতে হবে ঈশ্বর দয়ালু বা কঠোর কিছুই নয়। বালতি ঠিক রাখার দায়িত্ব তোমার। কুয়ো থেকে যেকোনো সময় জল পাওয়া যাবে। সেদিক থেকে কোনো বাধা নেই।’
সাত.
একদিন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম কাগজের নৌকা ডুবে যাচ্ছিল। গতকাল কিছু শিশু বালির ঘর তৈরি করেছিল সেটিও ভেঙে গেছে। প্রতিদিনই অনেক নৌকা ডুবে, ঘর ভাঙে। একজন নারী এসেছিলেন। তার জীবনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। জীবনের সব আশা হারিয়ে ফেলেছে। দুচোখ বসে গেছে। কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল। সবকিছু তার কাছে ব্যর্থ মনে হচ্ছে।
আমি বললাম, কারও স্বপ্ন সত্য হয় না। সব স্বপ্নই বেদনা নিয়ে আসে। কারণ কাগজের নৌকা ভেসে কতদূর যেতে পারে? তাই বলে স্বপ্ন দেখা ভুল নয়, এটা স্বাভাবিক। তবে ভুল আমাদের। আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন দেখি। আর ঘুমিয়ে থাকা উপলব্ধি বাস্তব নয়। ঘুম ভাঙলেই সব হারিয়ে যায়।স্বপ্ন নয় সত্যকে দেখ। সত্যকে দেখলে মুক্তি পাওয়া যাবে। একমাত্র সত্যের নৌকাটি বাস্তব। এই নৌকা জীবনকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়।
স্বপ্নে মৃত্যু রয়েছে, সত্যে রয়েছে জীবন। সত্য মানেই হলো নিজেকে জাগ্রত করা। জাগ্রত হয়ে নিজেক জানা। যতক্ষণ স্বপ্ন রয়েছে ততক্ষণ সত্যদ্রষ্টাকে দেখা যায় না। সত্যকে জানলে কাগজের নৌকা ও বালির ঘরের জন্য কেবল হাসি পাবে।