আমেরিকান কবি এমিলি এলিজাবেথ ডিকিনসনের (১৮৩০-১৮৮৬) জন্ম ম্যাচাসুসেটসের আমহহার্স্টে। তিনি ছিলেন অতিপ্রজ ও অন্তর্মুখী–ব্যক্তিগত অনুষঙ্গের এক বিরল কবি। তার প্রায় ১৮০০ কবিতার মধ্যে মাত্র এক ডজনেরও কম জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। ওই সময়ে প্রকাশিত কবিতাগুলো বা মৃত্যুর পর-পর যেসব প্রকাশিত হয়েছে, তা বহুলাংশেই সে যুগে কবিতার যে চলমান ফর্ম বা অভ্যস্ত আঙ্গিক ছিল, তেমনভাবে সম্পাদনা করে প্রকাশের ব্যবস্থা হয়েছিল। ডিকিনসনের সমসাময়িক লেখকেরা অবশ্য তার লেখা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তারপরও ১৮৮৬ সালে এই কবির মৃত্যুর পরে ছোটবোন লাভানিয়া তার কবিতার ভাণ্ডার আবিষ্কার করার আগে, তার কাজের ব্যাপ্তি জনসমক্ষে তেমনভাবে উপস্থাপিত হয়নি।
তার প্রথম কাব্য-সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালে। থমাস ওয়েন্টওয়র্থ হিগিনসন ও মাবেল লুমিস টড প্রচুর সম্পাদনা করে কবিতাগুলো প্রকাশ করেন। একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলন ও প্রায় অপরিবর্তিত প্রকাশনা আমরা পাই ১৯৫৫ সালে, যখন থমাস এইচ জনসন ‘এমিলি ডিকিনসনের কবিতা’ শিরোনামে বইটি প্রকাশ করেন। বর্তমানে ডিকিনসনকে মোটামুটি সব মহলেই একজন গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান কবি হিসেবে ধরা হয়। ডিকিনসনের কালে, তার কবিতাগুলো ছিল সেই সময়ের জন্য সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও ভিন্নধর্মী। ছিল স্বল্পবাক্যে রচিত। তার কবিতার অবশ্যম্ভাবী বৈশিষ্ট্য শিরোনামহীনতা। তিনি কবিতায় ব্যবহার করেন বড় হরফ, যা এখনো তেমন প্রচলিত নয়; আরও ব্যবহার করেন ঘনঘন বিরামচিহ্ন। তার অনেক কবিতার বিষয়বস্তু মৃত্যু ও অমরতার ধারণা। জীবনের শেষাংশে নিঃসঙ্গ সন্ন্যাস যাপন করে গেলেন তিনি। থাকতেন নিমগ্ন একাগ্র। অসংখ্য মৃত্যু যাকে বারবার ছুঁয়ে গেছে আজীবন, নিজেকে গৃহবন্দি রেখে করে গেছেন নিরলস কাব্যসাধনা; তৈরি করেছেন নিজ কাব্যভাষা ও কাব্যদর্শন। তার বুননভঙ্গিও সমকাল থেকে ভিন্ন ও অগ্রগামী।
এমিলি ডিকিনসনের কয়েকটি কবিতা এখানে বাংলায় অনূদিত হলো। যদিও তার কবিতায় কোনো শিরোনাম ছিল না, তবু পড়ার ও মনে রাখার সুবিধার্থে কবিতার প্রথম চরণকে শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা হলো। পি জে কাভানাঘ ও জেমস মিশি সম্পাদিত ‘দ্য অক্সফোর্ড বুক অব শর্ট পোয়েমস’ গ্রন্থে এভাবেই নির্বাচিত কিছু কবিতা সংকলিত হয়েছে। তবে কিছু কবিতা এ ডাবলু এলিসন ও অন্যদের সম্পাদিত ‘দ্য নরটন এন্থলজি অব পোয়েট্রি’র তৃতীয় সংস্করণ থেকেও নেওয়া হয়েছে। এমিলি ডিকিনসনের অধিকাংশ কবিতাই সমিল, তবে অনুবাদে মূলানুগ থাকার উদ্দেশ্যে বাংলায় মিল বজায় রাখা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ এমিলি ডিকিনসনের ১৭৭৫টি কবিতার মধ্যে মাত্র ১০৫টি অনুবাদ করেন। এছাড়া মো. মনিরুজ্জামান, মলয় রায় চৌধুরী, সাফি উল্লাহ, আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির, মেজবাউল হুসেন শাহ্, কল্যাণী রমাসহ অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে ডিকিনসনের কিছু কিছু কবিতা অনুবাদ করেছেন। তবে অন্ত্যমিলের দিকে বিশেষ নজর থাকার কারণে বাংলা ভাষায় কবিতাগুলোকে কখনো-সখনো সুখপাঠ্য মনে হয়নি।
আমরা বাংলা সাহিত্যে এমনতর ড্যাশ যতিচিহ্নের ব্যবহার জীবনানন্দের মধ্যেই লক্ষ করে থাকি। আর জীবনানন্দও অনেকের কাছে ‘নির্জনতার কবি’ হিসেবে পরিচিত! তবে জীবনানন্দের কবিতা কলেবরে তুলনামূলকভাবে বড় ও অনেক পুনরাবৃত্তিতে পরিপূর্ণ।
সে অর্থে বাংলা ভাষায় এমিলি ডিকিনসনের কবিতা নতুন কিছু নয়। তবু যখন ডিকিনসনের মূল কবিতা পাঠের সুযোগ পাই, তখন মনে হয়–ডিকিনসনের যে কাব্যভঙ্গির ছোট ছোট পদ, ড্যাশ, যতিচিহ্ন দিয়ে দিয়ে লেখা ছোট ছোট কথা–অথচ অনেক গভীর অর্থবাচকতা ধরে রাখে–তা যেন আমরা এই অনুবাদগুলোতে সেভাবে পাচ্ছি না। তার যতিচিহ্নগুলো যেন তার হতাশা, আক্ষেপ ও নির্জনতার দীর্ঘশ্বাস হয়ে কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে। এমিলির কবিতায় প্রতিফলিত বোধের নির্মোহতা তার দীর্ঘ সাধনার অর্জন। তার একাগ্র একাকিত্বে নির্বাসন ও সীমাহীন নির্জনতার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে জীবন, মৃত্যু ও অমরতা বিষয়ে এক দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছেন তিনি। এই নির্জনতা ছিল তার নিজস্ব প্রকৃতির। উনিশ শতকে এমন অভিনব শব্দপ্রক্ষেপণ, মুহুর্মুহু যতিচিহ্ন ব্যবহার, বাক্যের যত্রতত্র বড় মাপের অক্ষর ব্যবহার বিশ্বকবিতায় দুর্লভ। আমরা বাংলা সাহিত্যে এমনতর ড্যাশ যতিচিহ্নের ব্যবহার জীবনানন্দের মধ্যেই লক্ষ করে থাকি। আর জীবনানন্দও অনেকের কাছে ‘নির্জনতার কবি’ হিসেবে পরিচিত! তবে জীবনানন্দের কবিতা কলেবরে তুলনামূলকভাবে বড় ও অনেক পুনরাবৃত্তিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু পরম বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করা যায়, এমিলির কবিতা আমৃত্যু একই ধরনের টানটান বুননভঙ্গি ও বাক্য প্রক্ষেপে রচিত–সেই তারুণ্য থেকে শেষ দিন পর্যন্ত।
সবারই জানা, প্রকৃত অর্থে কখনোই কবিতার যথাযথ ভাষান্তর সম্ভব নয়। তাই এতো অনুবাদ পাঠেও আমার তৃষ্ণা মেটেনি। অনুবাদ হতে পারে আক্ষরিক বা ভাবানুবাদ। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ তার অনুবাদের ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছেন কাঠামো ঠিক রেখে সমিল বাক্য বুনে বাংলা ভাষায় তার পরিচিত অনুষঙ্গ দিয়ে বিষয়বস্তুকে ধারণের কৌশল। অনেক ক্ষেত্রেই সুব্রত তার অনুবাদে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদের অনুবাদগুলো যতিচিহ্ন ব্যবহারের বৈশিষ্ট্যকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ যে কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন, তার বাইরেও রয়ে গেছে এমিলির কবিতার বিশাল ভাণ্ডার। আমি মনে করি, বাংলা ভাষায় এমিলির প্রতিটি কবিতাই অনূদিত হওয়া প্রয়োজন। এ রকম ছোটখাটো কিছু বিষয়ের কারণে আমি কবিতাগুলো অনূবাদের প্রয়াস পেয়েছি। এক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি মূলানুগ থেকে কবিতার দীর্ঘশ্বাসগুলো ধারণ করতে এবং কবিতায় এমিলির জীবন ও তার দর্শনকে অনুধাবন করতে। কারণ এমিলি গৃহযুদ্ধের হানাহানির মধ্যে থেকেও অসীম নির্লিপ্ততায় কেবল মৃত্যু ও আত্মার সম্পর্ক নির্ণয়ের আরাধনায় লিপ্ত থেকেছেন। আবার প্রথাগত ধর্মাচরণ থেকেও নিজেকে নির্লিপ্তভাবে সরিয়ে নিয়েছেন। তার রবিবারগুলো তিনি প্রিয়তমের সঙ্গে কিংবা প্রিয়তমের জন্যে প্রার্থনা করে কাটাতেন। তাই তার পক্ষে উচ্চারণ সম্ভব–‘আমার জীবন থামার আগেই দুবার থেমেছে–/ এখনো দেখতে চায় / অমরতা যদি আসে, উন্মোচিত হয়–/ আমার জন্য তৃতীয় পর্ব হবে,/ এত ব্যাপক, এত হতাশার–এইসব মেনে নিতে / যা আগেই দুবার হটেছে। / স্বর্গ বিষয়ে যতটুকু জানি–বিচ্ছেদই সব;/ আর আমরা সকলেই দোজখের প্রয়োজনে।’
নিদারুণ যন্ত্রণার দৃষ্টি ভালো লাগে (২৪১)
আমার নিদারুণ যন্ত্রণার দৃষ্টি ভালো লাগে,
কারণ আমি তো জানি বাস্তবতা তার;
মানুষেরা খিঁচুনির ভনিতা করে না,
এমনকি নকলও না তীব্র বেদনার।
চোখগুলো একদিন চকচক করে ওঠে, আর সেটাই মরণ।
পরিচিত যন্ত্রণাদায়ক পীড়ন দিয়ে তো
জপমালা কপালে ঝুলিয়ে
ছলচাতুরি কিছুতে সম্ভব নয়।
তারা বলে সময় উপশম করে (৬৮৬)
তারা বলে সময় উপশম করে–
সময় করেনি কখনোই উপশম।
একটা প্রকৃত যন্ত্রণা শক্তিমান হয়ে ওঠে,
পেশীতন্তু যেমন, বয়সের সাথে সাথে।
সময় হলো ভোগান্তির পরীক্ষা বিশেষ,
তবে প্রতিকার নয়।
তেমন যদি প্রমাণ মেলে তো, এটাও প্রমিত তবে–
আসলে সেখানে পীড়া-ই ছিল না।
কবরের পরেও উদ্দীপনা (৮৮)
কবরের পরেও উদ্দীপনা–
তার মুখাবয়ব দেখার;
রাজসিক ড্রামের তালে–আমাকে সমর্থন জোগায়,
দিনের পর দিন–সে ইচ্ছা বাড়ে।
আমার জীবন থামার আগেই দুবার থেমেছে
আমার জীবন থামার আগেই দুবার থেমেছে
এখনো দেখতে চায়
অমরতা যদি আসে, উন্মোচিত হয়–
আমার জন্য তৃতীয় পর্ব হবে,
এত ব্যাপক, এত হতাশার–এইসব মেনে নিতে
যা আগেই দুবার পরাস্ত।
স্বর্গ বিষয়ে যতটুকু জানি–বিচ্ছেদই সব;
আর আমরা সকলেই দোজখের প্রয়োজনে।
তাদের শ্বেতপাথরের ঘরে (216–version 1861)
তাদের শ্বেতপাথরের ঘরে নিরাপদে–
প্রভাতের স্পর্শহীন–
আর দুপুরেরও স্পর্শহীন–
পুনরুত্থান দলের বিনম্র সদস্যগণ শায়িত–
শাটিনের ভেলা–আর পাথরের ছাদ!
বছরগুলো কাটুক সুন্দর–বাঁকা চাঁদে–তারও উপর–
পৃথিবীর সিঞ্চন তার পরিধিতে
আর মহাকাশে–সারিবদ্ধভাবে–
মুকুটেরা–নিপতিত–প্রধান শাসক–আত্মসমর্পণে–
নিঃশব্দ বিন্দুর মতো–বরফের চাকতিতে–
আত্মা তার নিজের সমাজ বেছে নেয় (৩০৩)
আত্মা তার নিজের সমাজ বেছে নেয়–
তারপর–দুয়ার সেঁটে দেয়–
তার স্বর্গীয় সমারোহে–
দৃশ্যমান সে নয়–
অনড়–সে রথের বিরাম গণনায় মগ্ন–
বিনত ফটকে তার–
অনড়–সম্রাট এক নতজানু–
আত্মার গোপন মাদুরের ‘পরে–
আমি তাকে জেনেছি–এক বড় জাতির কাছে–
একটি বেছে নাও–
তারপর–পাথরের মতো–
তার আগ্রহের কপাটগুলো বন্ধ করে দাও–
আমি একটা মাছির ভনভন শুনেছিলাম (৪৬৫)
আমি একটা মাছির ভনভন শুনেছিলাম–যখন আমি মারা যাই–
কামরা’র নীরবতা ছিল
ঝড়ের এক একটি প্রক্ষেপের মাঝখানে যেন
বাতাসের অন্তর্গত নিস্তব্ধতা–
চোখের চারপাশে–কচলে কচলে খটখটে–
আর নিঃশ্বাস সুদৃঢ় সমবেত–
শেষ সূচনার জন্যে–
যখন রাজাই সাক্ষী থাকে–কামরায়–
আমার স্মারকগুলো উইল করলাম–স্বাক্ষরিত হলো
আমার কোন অংশটুকু হস্তান্তরযোগ্য–আর তার পরে
সেখানে হস্তক্ষেপ করে এক মাছি–
নীলের সাথে–অনিশ্চিত হোঁচট খাওয়া ভনভন–
আমার আর–আলোর মাঝে–
তারপর জানালাগুলো ব্যর্থ হলো–আর তারও পরে
আমি দৃশ্যমানকে দেখতে পেলাম না–
এটা মৃত্যু ছিল না, তাই উঠে দাঁড়িয়েছি (৫১০)
এটা মৃত্যু ছিল না, তাই উঠে দাঁড়িয়েছি,
আর, সকল মৃতই শুয়ে থাকে–
এ তো রাত্রি ছিল না, যার জন্যে ঘণ্টাগুলো সব
কুলুপ এঁটেছে মুখে, দুপুরের প্রতীক্ষায়।
বরফ ছিল না এটা, যেমন আমার মাংসে
উত্তর আফ্রিকার গনগনে হাওয়া টের পাই–আগুন সে নয়–
কেবল আমার মর্মর-মসৃণ পদতলে হামাগুড়ি দিয়ে আসে–
যাতে কোনোভাবে কেবল চার্চের একটি টুকরো ধরে রাখতে পারি, শীতল–
আর এখনো, এর স্বাদ, তাদের সবার মতো,
যে আকৃতি আমি দেখেছি
সুসজ্জিত, সমাহিত করার জন্যে,
আমাকে মনে পড়িয়ে দেয়, আমারই জন্যে–
যেহেতু আমার জীবনকে মসৃণ করেছে,
আর বসানো হয়েছে এক ফ্রেমে,
আর চাবি ছাড়া নিঃশ্বাসও নিতে পারি না,
এবং তা ছিল মধ্যরাতের মতো, কিছু কিছু–
যখন সবকিছু দাগাঙ্কিত–থেমেছে–
আর মহশূন্য তাকিয়ে আছে চারপাশে–
অথবা ভয়াবহ তুষার–শরতের প্রথম সকাল,
মাটিতে আঘাত প্রত্যাহার করে–
তবে, প্রায়শই, বিশৃঙ্খল–অনিঃশেষে–শীতল–
কোনো সুযোগ ছাড়াই, অথবা তর্করত–
অথবা নিদেনপক্ষে জমির একটি প্রতিবেদন–
ন্যায্যতার জন্যে–হতাশ।
আমি তোমার সাথে থাকতে পারি না–(৬৪০)
আমি তোমার সাথে থাকতে পারি না–
এখানে জীবন থাকা চাই–
আর জীবন তো ওখানে আছে–
তাকের পেছনে
গোরখোদকের কাছে গচ্ছিত চাবি–
যতনে দেবে সে পুঁতে–
আমাদের জীবন–তার পোরসেলিনে–
কাপের মতো–
গৃহিনীর বাতিলকৃত–
প্রাচীন ফ্যাশন–অথবা ভেঙে যাওয়া–
তুলনায় নতুন যে, কাজে লাগে, তুষ্ট করে–
পুরনোরা ফাটল ধরে–
আমি মরতে পারিনি–তোমার সাথে–
কারণ কাউকে অপেক্ষা করতেই হয়
অপরের চোখের পাতা বন্ধ করার জন্যে–
তুমি–পারোনি–
আর আমি–পেরেছি কি দাঁড়াতে পাশে–
আর তোমাকে দেখতে–স্থির শীতল–
আমার বরফে পরিণত হবার অধিকার ছাড়া–
মৃত্যুর অগ্রাধিকার?
না আমি পেরেছি উঠে দাঁড়াতে–তোমার সাথে–
কারণ তোমার চেহারা
যিশুকে ক্ষুণ্ন করবে–
সে নতুন অনুগ্রহ
সাদাসিধে ভাস্বর হও–এবং বহিরাগত
আমার গৃহমুখী চোখে–
কেবল এ ছাড়া সে অপেক্ষা তুমি
তুমি ছাড়া কেবল তিনিই
খুব কাছে ছড়ানো আলোক –
তারা আমাদের বিচার করেছে–কিভাবে–
তোমার জন্যে–বেহেশত দিয়েছে–তুমি জানো,
অথবা ভাবতে পারো–
আমি পারি নি–
কারণ তোমার পরিতৃপ্ত দৃষ্টি–
এবং আমার আর কোনো চোখ ছিলো না
অপার সৌন্দর্য দেখার
যেমন বেহেশতে আছে
আর তুমি হারিয়ে গেলে আমিও হারাবো–
যদিও আমার নাম
উচ্চকন্ঠে বেজেছে
স্বর্গীয় খ্যাতিতে–
আর তুমি কি–নিরাপদ–
আর আমি–অভিযুক্ত হয়েছি–
যেখানে তুমি নও–
সেই সত্তা–আমার কাছে দোজখতুল্য –
আমরা তাই অবশ্যই মিলিত হবো–
তুমি সেথা–আমি হেথা–
দরোজার ফারাক কেবল
সেই মহাসাগরের–এবং প্রার্থনা–
আর সেই শাদা-শুভ্রতার বিরাজমানতা–
হতাশা–
বাড়িতে ছোটাছুটি ভীষণ ব্যস্ততা (১০৭৮)
বাড়িতে ছোটাছুটি ভীষণ ব্যস্ততা
মৃত্যুর পরে যেন মেদুর প্রভাত
কারখানাময় চরম আনুষ্ঠানিকতা
পৃথিবীর বুকে অভিনীত–
হৃদয় টুকরো টুকরো ভেঙে
আর ভালোবাসা সরিয়ে দূরে
শোকার্ত থাকবো না
আমরা অনন্তকাল।
তারা–মারা যাচ্ছে তারপর (১৫৫১)
তারা–মারা যাচ্ছে তারপর,
জানতো কোথায় গিয়েছে–
ওরা ঈশ্বরের ডান হাতে গেছে–
সে হাত এখন কর্তিত
আর ঈশ্বরকে পাওয়া যাচ্ছে না–
বিশ্বাসের পদত্যাগ
আচরণকে ক্ষুদ্র করে–
জলাভূমির ভূতুড়ে আলো মঙ্গলকর
তারপরে আর কোনো আলো নেই–