[আলবেনিয়ান ভাষাবাসী জনগোষ্ঠীর বাসস্থানের পরিধি—হালজামানার আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র ছাড়াও ছড়িয়ে ছটিয়ে আছে সমগ্র বলকান অঞ্চল তথা কসোবো, মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ায়। পনেরো শতক থেকে বিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত পুরো বলকান এলাকা ছিল তুরস্কের অটোমান সালতানাতের অন্তর্গত। ওই সময়কালে ঔপনিবেশিক শাসনপ্রক্রিয়ার কঠোর নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে আলবেনিয়া ভাষায় লিখিতভাবে সাহিত্যের বিকাশ অত্যন্ত দুরূহ হয়ে উঠেছিল। তাই ওই ভাষায় মুদ্রিত সাহিত্যকীর্তির তেমন কোনো নিদর্শন উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিরল । যদিও ত্রয়োদশ শতক থেকে অটোমান শাসন জারি হওয়া অব্দি সময়কালে রচিত বেশ কিছু ধর্মীয় বিষয়-ভিত্তিক পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যায়; ইতালির সিসিলিতে নির্বাসিত কিছু আলবেনিয় লেখকদের যৎসামান্য রচনাও এই ধারার অন্তর্গত।
হালজামানায় আলবেনিয়ান ভাষায় সহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বলকান অঞ্চলে তুরস্কের আধিপত্যের সমাপ্তির পর , যা নিয়ন্ত্রিত পরিসরে বিকশিত হয় মূলত সমাজতান্ত্রিক সময়কালে। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিওন ও সমগ্র পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিলোপ সাধিত হলে এ বিকাশ প্রক্রিয়ায় জোয়ার আসে। সামাজিক ক্রান্তিকালে আলবেনিয়ান সাহিত্যের বিষয়বস্তুতে সাহসী উচ্চারণ উচ্চকিত হয়ে ওঠে দ্রুত এবং সহস্রাব্দের সন্ধিক্ষণ থেকে কবিতার প্রকরণেও ব্যাপক বিবর্তন লক্ষ করা যায়। এখানে উপস্থাপিত কবিতাগুলো নির্বাচিত হয়েছে গেলো গত ত্রিশ বছরের খ্যাতিমান ও স্বল্পখ্যাত, তবে প্রতিশ্রুতিবান কবিদের রচনা থেকে।
ভাষান্তরে উপস্থাপিত কবিতাগুচ্ছের শীর্ষে যেমন আছে লুলজেটা লেশানাকু’র মতো আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন কবির পদাবলী, তেমনি আলী লুকার মতো স্বল্প পরিচিত তরুণ কবির কবিতার কাজও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
কবিতা, ভূমিকাসংক্রান্ত তথ্য ও কবিদের বায়ো-বিষয়ক উপাত্ত নেওয়া হয়েছে ইন্টানেটের একাধিক সূত্র থেকে। ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত কবিতাগুলোতে ইংরেজি অনুবাদকের নাম মূল রচয়িতার নিচে উল্লেখিত হয়েছে। ভূমিকা: অনুবাদক]
পুরানো দিনের সংবাদ
লুলজেটা লেশানাকু
ইংরেজি অনুবাদ: হেনরী ইস্রায়েল
দুটি পাহাড়ের মাঝামাঝি উপত্যকায় আছে যে গ্রামগুলো
ওখানে—হর-হামেশা সংবাদ পৌঁছায়
ঘটনা ঘটে যাওয়ার মাস খানেক পর,
নানা ঘাট পাড়ি দিতে গিয়ে তত দিনে তথ্যের কিছু হেরফের হয়
অতিরঞ্জনে কখনো হয়ে দাঁড়ায় রীতিমতো সাতকাহন,
শেষ পর্যন্ত ঘটনায় নিহত হয়েছেন যিনি—
সংবাদটি গন্থব্যে পৌঁছার আগেই তিনি স্বর্গারোহণে থিতু হতে থাকেন,
আর যদি-বা রাজধানীতে সামরিক অভ্যুত্থানের মতো কিছু ঘটে
তা বাতচিতে উল্লেখিত হতে থাকে ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা’ হিসেবে।
বসন্তে তিরোহিত হয় নির্জনতা…কল্পনার যে সঞ্জীবনী সুরা
প্রতিষেধকের মতো সুরক্ষা করে শরীরকে—শুকিয়ে আসে তা,
জেগে ওঠে চেষ্টনাট প্রজাতির সুঠাম বৃক্ষরাজি,
নেশাগ্রস্ত মানুষজন দেয়ালে তাদের শীতল পিঠ ঠেকিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ।
এখানকার মেয়েগুলো হামেশা বাইরের কোনো পুরুষকে বিয়ে করে
নীরবে ত্যাগ করে পিতৃগৃহ—
পেছনে পড়ে থাকে তাদের স্মৃতিময় অনাঘ্রাতা পঞ্চদশী প্রতিমা।
তবে ছেলেগুলো দূরের কোনো গ্রামে বিয়ে সম্পন্ন করে
ঘরে এনে তুলে কনে বউ,
যে বধূরা বছর ফিরতে অন্তঃস্বত্তা হয়—অতঃপর বিয়োয়
গোলাঘরের খড়বিচালির গাদায় শিশু-পয়গম্বরদের।
ক্ষমা করুন,
আমি আসলে বলতে চাচ্ছি,‘এদের মধ্যে শুধু একটি শিশু হবে পয়গম্বর’,
বাকিগুলো পাথর ছুড়ে ছুড়ে কাটিয়ে দেবে তাদের জিন্দেগি।
(এ বিষয়টাও দৈব ভবিষ্যদ্বাণীর অংশবিশেষ।)
আজকের মতো শরৎকালে কোনো এক দুপুরবেলা
রক্তের গন্ধে অপঘাতে মৃত কাকটির পাশে এসে জড়ো হওয়া
এক দল কাকের মতো ছেলেরা—
ধাওয়া দেবে গ্রামের কংকালকৃশ ডাকপিয়নকে,
ডাকবিভাগের চিঠিপত্র ডেলিভারি দেওয়া গাড়িটি
ধূলোর ধোঁয়া উড়িয়ে পড়িমড়ি করে ছুটে পালাবে।
কলংকিনী নারীটির আঙিনায় ঢুকে পড়ে অতঃপর
তারা নির্দ্বিধায় পেড়ে খাবে আধপাকা নাসপাতি,
বলে কয়েও তাদের বিরত করা যাবে না—ছিঁচকে ছিনতাই থেকে…
আর মোদ্দা কথা হচ্ছে—
নারীটি সম্প্রতি শুয়েছে আধচেনা দুটি পুরুষের সঙ্গে
সুতরাং…বলা চলে…এ ধরনের ব্যবহার তার প্রাপ্য!
একটি বালকের স্কুলব্যাগে চুরি করা নাশপাতির পাশে
পড়ে থাকবে আনা কারেনিনা গ্রন্থটি,
কোনো এক সুযোগ ছেলেটি অস্থিরভাবে পাতা উল্টাবে —
শেষ পৃষ্ঠা থেকে শুরু দিকের প্রথম পর্ব অব্দি
তারিয়ে তারিয়ে স্বাদ নেবে বর্ণনার…
অনেক দিনের কোনো পুরনো পত্রিকার পাতায়
চমকপ্রদ কোনো সংবাদ পাঠের মতো।
[কবি পরিচিত: আলবেনিয়ান ভাষায় খ্যাতিমানদের মধ্যে একজন প্রখ্যাত কবি লুলজেটা লেশানাকু। সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে কবির জন্ম হয় এলবাস এলাকায়। পড়াশুনা করেন তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা এ কবির চারটি গ্রন্থ ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এছাড়া ফরাসি ও জার্মান ভাষায় তার কিছু কবিতা ভাষান্তরিত হয়েছে। কবি ক্রিস্টাল ভিলেনসিয়া পুরস্কারে সম্প্রতি সম্মানিত হয়েছেন ।]
বিম
আলি লুকা
ইংরেজিতে অনুবাদ: মানজোলা নাসি
ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে জানতে চাচ্ছি—বয়স্য বিম
এক সময় আমি গাঢ় লাল রঙের একটি গাড়ি হাঁকাতাম—
মনে আছে তোমার?
না, না তো।
ওই এ্সইউভি বাহনটি লজ্জড় হয়ে উঠলে
তার বিনিময়ে জোগাড় করে নিয়েছিলাম হাউন্ড প্রজাতির জোড়া সারমেয়—
তাও কী নেই তোমার স্মৃতিতে?
হ্যাঁ, স্বীকার করছি—তারপর কেটে তো গেছে বেশ কিছু দিন।
গাড়িটি যখন দারুণ ফূর্তিতে হাঁকাতাম তখন তা আমার জন্য নিয়ে আসতো নারী-ভাগ্য।
শুমার করে বলা মুশকিল, ঠিক কত জন নারীকে আমি ওই গাড়িতে চড়িয়ে ছিলাম!
এভাবে এটি বিক্রি করে দেয়া ঠিক হয়নি তোমার।
যাক…তারপর…আমি যে এক মারকুটে মর্কট
এ বিষয়টা বোধ করি জানতে কারও আর বাকি নেই।
আমি যখন কারখানায় কাজ করা মেয়ে-শ্রমিকটিকে—
তার বাড়ির গেটে নামিয়ে দেই,
তার প্রতিবেশী এমন খর চোখে আমার দিকে তাকায়—
কী বলবো…তার দৃষ্টিতে যেন আমার চামড়ায় ফোস্কা পড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়;
বাগানবিলাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে ছোট্ট কুকুর
সাথে সাথে ঝনঝনিয়ে বেজে ওঠে বিপদ সংকেত।
ওই কবিটিকে—কিরাকসম কেটে বলছি…জড়িয়ে ছিলাম সঙ্গমে।
পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির তখন কোনো সম্পর্কই ছিল না,
বাস করতো একাকী সে কমবিনাথ এলাকার নির্জন এক পড়ো কুটিরে।
একদিন তাকে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম গির্জায়
কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছিল সে…বিবাহের
একই সময়ে আমার মাথায় ঘুরছিল—কিভাবে ফের তাকে করা যায় সম্ভোগ।
তুমি কী চাও—একদিন আমি তার বইটি নিয়ে আসি তোমার কাছে?
নিজের প্রকাশিত বইপত্র নিয়ে আমার আর আগ্রহ নেই
অনেক তো হলো…বুঝলে বয়স্য বিম,
তবে একটা কথা বলি…আমি আছি কিন্তু কবিতার ওই পঙ্ক্তিগুলোতে।
কবিদের প্রেমিকাকুলের ওই এক সুবিধা:
তারা জন্মায় তবে কালে কালে হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুঞ্জয়ী।
তোমাকে তো আমি চিনি বেশ ভালো ভাবে…বিম
তুমি এখন যেভাবে যাপন করছ নিঃসঙ্গ জীবন
ওভাবে নয়—
তোমাকে এঁকেছি আমি বই এর পৃষ্ঠায় বিবাহিত পুরুষ হিসেবে।
বিম—রঙজ্বলা আধময়লা সুয়েটার পরে
চোখমুখে রাজ্যের উদ্বেগ নিয়ে ওরকম গ্লাসটির দিকে তাকিয়ে আছ কেন?
তোমাকে দেখাচ্ছে—পুরনো ছেঁড়াখোঁড়া পোস্টারের আঠালো দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
পিতৃমাতৃহীন অনাথ ল্যাম্পপোস্টটির মতো।
[কবি পরিচিতি: কবি আলী লুকার কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তবে আলবেনীয় তরুণ সমাজে তার কবিতার প্রতি ক্রমশ আগ্রহ বাড়ছে।]
অস্তিত্ত্ব
মারিকলেনা নিকো
ইরেজিতে অনুবাদ: আলেকজান্দ্রা চেনার ও ব্লেরটি মুরাতাজ
অন্তঃস্থলে নীরবে গোমরাচ্ছে কিন্তু কাউকে বলা যাচ্ছে না
এরকম একটি সামান্য অপরাধবোধের ছোঁয়ায়
মৃত্যু হবে তোমার…
স্মৃতিকে নির্বাসনে পাঠানো কিংবা বিস্মৃত হওয়া কিন্তু
তোমার চরিত্রের সঙ্গে ঠিক মেলে না,
যে উপস্থিতি তোমার নয়—
যে শূন্যতার সঙ্গে তোমাকে আমি ঠিক মেলাতে পারি না,
তারপরও মৃদু স্পর্শ নিয়ে আসে বিরাণভূমির ঘূর্ণিবাত্যা—
দেখতে পাই—বাড়িয়ে দেওয়া প্রসারিত করতল,
ছায়ার ওপারে কী যেন প্রতিচ্ছায়া হয়ে টেনে দিচ্ছে
তোমার ওপর যবনিকা ।
ভাবনার ঊর্ণনাভে তবে কী জড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্ব?
ঝরে পড়ে তারা—নৈঃশব্দ্যের ফিসফিসোনোর অভ্যন্তরে,
তুমি অবলোকন করো জ্যোতি—
যার কাছাকাছি স্তব্দ হয়ে আছে কোলাহল, বাধাপ্রাপ্ত ও অসুন্দর সমাপ্তি।
আহা—এ দৃশ্যপট জলের মতো গলে যায় ঘন ঘন মৃত্যুর পথপরিক্রমায়
আত্মাহীন বালুকণার মতো যখন সময় হয় পুরুত্থানের—
তৈরি করতে পারে না কোনো আকার,
বর্ণিলও হতে পারে না—কোনো রঙে ছড়ায় না কোনো মহিমা,
বিষয়টা আরেকটু স্পষ্ট করা যাক—
যখন প্রেষণা থাকে অদম্য
যেতে হলে নামো পথে…
এক দিন তো ছিলে তুমি এখানে।
[কবি পরিচিতি: কবি মারিকলেনা নিকো বসবাস করেন কসোবোর রাজধানী প্রিসটিনা শহরে। অ্যাকাডেমিক হিসাবে কবি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন।]
সত্যিকারের স্বাধীনতা
আগরন তোফা
ইংরেজিতে ভাষান্তর: এলভানা জাইমি ও ক্রেগ ঝুরি
সত্যিকারের স্বাধীনতা হচ্ছে কালো কাঁচের একটি শিশি
তাতে—বুদ্বুদ ছড়ানো গ্যাস-পূর্ণ তরলে
জকড়ি মকড়ি লেগে —অষ্টবক্র হয়ে ভাসছে
আরব্য উপন্যাসের বন্দি গোটা কয়েক জিন,
বোতলটির মোমমাখা ছিপি শক্ত করে আটকানো।
স্বাধীনতা হচ্ছে বোতলে পোরা একটি বার্তা
যা রাখা আছে তলকুঠুরির অন্তর্গত কূপের গাঢ় অন্ধকারে।
তোমার জীবন—যা রজ্জুতে রূপান্তরিত হয়ে
পাতকূয়োর তলদেশ থেকে কিছু তুলে আনার মতো যথেষ্ট নয় ।
ছিপি খুলে স্বর্গীয় মুক্তিতে বিস্ফোরিত হয়ে নাস্তিতে ছড়িয়ে পড়াও সহজ নয়।
[কবি পরিচিতি: জন্ম ১৯৬৭ সালে, আলবেনিয়ার ডিবার অঞ্চলে। পড়াশোনা করেন প্রথমে তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে মস্কোর ম্যাক্সিম গোর্কি ইনস্টিটিউটে। তার কবিতা স্প্যানিশ ও ফরাসিসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কবি ‘সিলভাল কোয়েল অ্যাওয়ার্ড’ নামে একটি স্বীকৃতিসূচক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।]
একাকীত্ব
অরিয়ান লেকা
ইংরেজীতে ভাষান্তর: রবার্ট এলসে
গ্লাস দুই পানীয়তে পাওয়া যায় যে নির্জনতা
আসলে তা গভীরভাবে অর্থবহ।
লোহিত বরণ অশ্ব আর শ্বেতশুভ্র ঘোড়াতে তফাত সামান্য
যদি হওয়া যায় স্বত্বাধিকারী তাবৎ আস্তাবলের,
তাহলে ভাগাভাগি করতে হয় না নিজস্ব সম্পদ কারও সঙ্গে।
বৃষ্টিপাত হবে অতি শিগগিরই এবং কপাটও বন্ধ করে দেওয়া হবে,
যারা বসে আছে ঘরের ভেতর—
তাদের ব্যতিরেকে ঢুকতে দেওয়া হবে না অন্য কাউকে।
পাত্র দুই সুরার সঙ্গে জাগে ভাসমান একটি কালো অশ্ব—
করতলগত হয়েছে সমস্ত কিছু এখন আমার
কিন্তু কাছেপিঠে নেই তো তেমন কেউ
যার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হয় এ সম্পদ।
[কবি পরিচিত: কবিতা রচনার সঙ্গে সঙ্গে কবি অরিয়ান লেকা প্রবন্ধ-লেখক ও শিশুতোষ পুস্তকের রচয়িতা হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। ‘পোয়েটেকা রিভিউ’ নামে একটি ম্যাগাজিন নিয়মিত প্রকাশ করে থাকেন। পেশা হিসেবে তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এছাড়া কবি আলবেনিয়ার ‘পোয়েটেকা লিটারারি ফেস্টিভ্যালে’র প্রধান সংগঠকের দ্বায়িত্বও পালন করে থাকেন।]
কীর্তি
মানজোলা নাসি
ইংরেজীতে অনুবাদ: স্বকৃত
বেঁচে ছিল সে দীর্ঘদিন
ফলে
তার দিনযাপনে প্রতিফলিত হয়েছিল জীবনের নিবিড় অভিজ্ঞতা।
অবশ্য—আমাদের জীবনে সচরাচর যা ঘটে থাকে
তা সবসময় একইভাবে ঘটে না।
দৃষ্টান্ত স্বরূপ—আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বার্থপরতার সংকীর্ণতা
অতিক্রম করতে পেরেছি অল্প বয়সে,
আবার আমাদের কারো কারো মৃত্যু হয়েছে পরিণত বয়সে
কিন্তু তাদের জীবনে এ ধরনের কোন সুযোগ আসেনি।
আমরা…কেউ কেউ বিক্রি করেছি—
অন্ত্রতন্ত্র, স্নায়ু ও ঝিল্লি সমেত আমাদের অন্তঃস্থল,
আমাদের কোনো কোনো বান্ধব-স্বজন টিকে থেকেছে কায়ক্লেশে
দুঃসময়ের অভিঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে বাকিরা।
তার জীবনে ঘটেছে যা—তা যে বিশেষ কিছু—এটা বলার কোনো জো নেই,
হরে দরে ঘটনাটি গড়পড়তা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
সত্যি কথা বলতে গেলে…
আমাদের সকলেরই কিন্তু চারদিকে ঘিরে ছিল প্রাচীর
আর ছিলো অনতিক্রম্য সীমান্তও।
এক সময়…আমাদের…প্রায় সকলের প্রতীজ্ঞা ও পরিকল্পনার সুতোটি ছিড়ে ছিল,
চূড়ান্ত সত্য হচ্ছে…
আমাদের সম্মুখে প্রায়শ দাঁড়িয়ে ছিল কচ্ছপের খোলের মতো শক্তপোক্ত ‘না’,
শব্দটির সংজ্ঞায় প্রচ্ছন্ন ছিল অশেষ বৈপরীত্য।
কখনো আমরা ক্রোশ ক্রোশ পথ পরিক্রমা করে
ডিঙিয়েছি পাহাড়…মরুভূমি ও সরোবর…
কিন্তু নাগাল পাইনি দেয়ালটির—
কথাটি না হয় অন্যভাবে বলার চেষ্টা করি:
তার জীয়ৎকালের মেয়াদ ছিলো সুদীর্ঘ—
কীর্তি রেখে যাওয়ার সুযোগও সে পেয়ে ছিল অনেক বার।
[কবি পরিচিতি: পেশাগত জীবনে কবি মানজোলা নাসি যুগপৎ ইংরেজি ভাষা ও সৃজনশীল লেখার বিষয়ের প্রভাষক। অনুবাদ হিসেবেও কবির খ্যাতি আছে। তিনি কিছু স্বাস্থ্য-বিষয়ক পুস্তকও অনুবাদ করেছেন।]