অনুবাদ: ফারহানা রহমান
[পর্ব-২২]
নানা ধরনের রোমাঞ্চকর-উত্তেজনাপূর্ণ গল্পগুলো পড়ার জন্যই আমরা দুজন আসলে ম্যাগাজিন পড়তাম। দ্রুত ধাবমান ব্যস্ত অথচ আমাদের এই অল্প বয়সের ছোট্ট জীবনের মধ্যে যে বিচিত্র স্মৃতি এবং প্রগাঢ় যত অলিক কল্পনা জমা হয়েছিল, যা আমাদের দুজনকে ভীষণভাবে তাড়িত করে বেড়াতো, সেটা সহ্য করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।
ফলে বেইলি শারীরিকভাবে এবং আমি মানসিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। এইসব কিছুর ফল এবং বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা গেলো বেইলি তোতলাতে তোতলাতে কথা বলতে লাগলো। আর আমি নানারকম ভয়াবহ সব স্বপ্ন দেখে দেখে ঘেমে-নেয়ে চিৎকার করতে করতে ঘুম থেকে উঠতে লাগলাম। বেইলি যখন তোতলাতে তোতলাতে হড়বড় করে কথা বলতে শুরু করতো, তখন ওকে সবাই থামিয়ে দিতো এবং ওকে বলতো ও যেন ধীরে ধীরে গুছিয়ে গুছিয়ে কথা বলে। আর ও যা বলতে চেয়েছিল, সেটা যেন আবারও প্রথম থেকে বলতে শুরু করে। যেন ওর তোতলামি কিছুটা কমে আর ও যা বলতে চায় সেটা যেন অন্যরাও বুঝতে পারে। আর আমি যেহেতু একের পর এক ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে জেগে উঠতে শুরু করেছিলাম, তাই আমার মা আমাকে একদিন আমার রুম থেকে শিফট করে ওঁর বিশাল বিছানায় মিস্টার ফ্রিম্যান এবং মায়ের মাঝখানে শোয়ার জন্য নিয়ে গেলেন।
শিশুরা মনেপ্রাণে সংসারে একটি সুস্থির অবস্থায় পৌঁছাতে চায়। আর সেটাই আসল কারণ যে বাচ্চারা খুব সহজেই যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নেয়। অভ্যাসের দাস হয়ে ওঠে। আমিও ঠিক তেমনই মা আর মিস্টার ফ্রিম্যানের বিছানায় ঘুমাতে ঘুমাতে একসময় এতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম।
একদিন হঠাৎ কোনো একটি বিশেষ কাজে মা খুব ভোরবেলা বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন। আমারও ঘুম ভেঙে গিয়েছিল কিন্তু একটু পরেই আমি আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ টের পেলাম যে আমার বাম পায়ের উরুতে খুব শক্ত কিছু একটা জিনিস চাপ দিচ্ছে। এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা আমার এর আগে কখনো হয়নি। ফলে এক অভিনব অনুভূতি নিয়ে আমি ঘুম থেকে আবারও জেগে উঠলাম। কারও হাতের স্পর্শ পেলে যেমন লাগে এটার স্পর্শ ঠিক তেমন ছিল না। হাতের তুলনায় এটি অনেক বেশি নরম ছিল। আর ওটা আসলে কোনো কাপড়ের স্পর্শের মতোও ছিল না। ওটা আসলে কী ছিল? আর সেটা যাইহোক না কেন, আসল কথা হচ্ছে আমি এমন কোনো ঘটনার মুখোমুখি এর আগে কখনোই হইনি। এতগুলো বছর যে আমি মোমার সঙ্গে ঘুমিয়েছি, কই এমন কোনো কিছুর স্পর্শ তো কখনো পাইনি। আমি হতবাক হয়ে নড়াচড়া করতে একদম ভুলে গেলাম। ওই জিনিসটাও শক্ত হয়ে আমার ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকলো। অনেক কষ্টে আমি আমার মাথাটা কিছুটা বাম দিকে ঘুরিয়ে মিস্টার ফ্রিম্যানকে দেখার চেষ্টা করলাম। আমি দেখতে চাইছিলাম যে তিনি কি আসলে জেগে আছেন, না কি বিছানা ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু দেখলাম যে তিনি আমার পাশেই চোখ খুলে শুয়ে আছেন এবং তার দুটো হাতই কম্বলের বাইরে বের হয়ে আছে। আমি বুঝতে পারলাম যে, ওটা আসলে তার সেই জিনিসটা। আমি তো আগে থেকেই জানতাম যে, লোকটার দুই পায়ের মাঝখানে ওই বিশেষ জিনিসটা আছে, আর এটাও বুঝতে পারলাম যে, ওই জিনিসটা দিয়েই তিনি আমার ঊরুতে খোঁচা দিচ্ছেন।
মিস্টার ফ্রিম্যান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘একদম এভাবেই থাকো রিটি, আমি তোমাকে একটুও ব্যথা দেবো না।’ আমি ভয় পাইনি। যদিও কিছুটা আতঙ্কিত আর উদ্বিগ্ন বোধ করছিলাম কিন্তু সেটা মোটেও ভয় নয়। আর অবশ্যই আমি খুব ভালো করেই জানি যে বহু মানুষই ‘ওইটা’ করে আর কাজটা পুরোপুরি করার জন্য তারা তাদের ওই জিনিসটাকে ব্যবহার করে। কিন্তু আমি তো এটা কখনোই জানতাম না যে, মানুষ তাদের ওই জিনিসটা আরেকজন মানুষের সঙ্গে বা অন্য কারও ওপর ব্যবহার করতে পারে। হঠাৎ করেই মিস্টার ফ্রিম্যান আমাকে টান দিয়ে নিজের ওপর উঠিয়ে নিলেন। আমার দুপায়ের মাঝখানে হাত রাখলেন। তিনি আমাকে একটুও ব্যথা দেননি। কিন্তু মোমা আমার মাথায় একটা ব্যাপার খোদাই করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন যে, আমি যেন সবসময় আমার গোপন অঙ্গ সামলিয়ে রাখি। তিনি সাবধান করে বলতেন, ‘সবসময় নিজের দুইপা বন্ধ করে রাখবে এবং কখনো কাউকে নিজের গোপন জায়গাটা দেখতে দিও না।’
আমাকে এই কথাগুলো বলেই তিনি তার পায়ের কাছে পড়ে থাকা ঘরে পরার ছোট প্যান্টটি হাতে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে দ্রুত হেঁটে চলে গেলেন।
‘আচ্ছা দ্যাখো, আমি কিন্তু তোমাকে কোনো ব্যথা দিচ্ছি না। ভয় পেও না সোনা।’ কথাগুলো বলতে বলতেই সে কম্বলটি গা থেকে ছুড়ে মারলো আর মুহূর্তের মধ্যে তার ওই বাদামি জিনিসটা একটি আগুনে পোড়া লাল ভুট্টার মতো লাফিয়ে বেরিয়ে আসলো। সে আমার হাতটাকে নিয়ে ওই জিনিসের ওপর রেখে বললো, ‘ধরো আর এটাকে অনুভব করার চেষ্টা করো।’ মাত্র একটু আগে মরে যাওয়া মুরগির নরম অথচ গরম গরম মাংসের মতো এটিও ক্যামন যেন থকথকে নরম এবং মোচড়ানো যায় এমন একটি মাংসপিণ্ডের মতো মনে হলো। তারপর তার বাম হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে তিনি আমাকে তার বুকের ওপর টেনে তুলে নিলেন। আর একইসঙ্গে সে তার ডান হাত দিয়ে তার ওই জিনিসটাকে ভীষণ দ্রুতভাবে নাড়াতে লাগলেন। সেসময় তার হার্টবিট এতই বেড়ে গিয়েছিলো যে, আমি ভাবলাম লোকটা হয়তো মরেই যাবে। ভূতের গল্পগুলোতে তো এভাবেই রহস্য উদ্ঘাটিত হতে দেখা যায়।
সেখানে দেখা যায় কোনো একটি জিনিস ধরে থাকতে থাকতেই কোনো একটি অথবা কিছুলোক মরে যায় এবং শেষপর্যন্ত ভূত হয়ে যায়। আমিও সেটাই ভেবে খুবই আতঙ্কিত এবং চিন্তিত হয়ে উঠলাম যে যদি এভাবেই মিস্টার ফ্রিম্যান আমাকে শক্ত করে ধরে থাকতে থাকতেই মরে যায়, তাহলে লোকজন এসে তার বাহুবন্দি অবস্থা থেকে আমাকে ঠিক কিভাবে উদ্ধার করবে? লোকটি যেভাবে ভয়ানক শক্তভাবে আমাকে ধরে রেখেছেন, এখান থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য কি তাহলে শেষপর্যন্ত তার হাতগুলোকে কেটে ফেলতে হবে? আর তা না হলে আমি কিভাবে এই শক্ত বন্ধন থেকে মুক্তি পাবো?
ওহ! অবশেষে দেখা গেলো যে লোকটা একটু শান্ত হলেন। আর আমিও মুক্তি পেলাম। তারপর তিনি আমাকে এতই আদর করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে রাখলেন যে, আমার মনে হতে লাগলো, যেন লোকটি আমাকে সারাজীবন ধরে এভাবেই তার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে রাখুক। আমার বুকের ভেতর কেমন এক ভীষণ প্রশান্তি ছড়িয়ে গেলো। তিনি যেভাবে আদর করে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন, সেভাবে কেউ কখনো আগে আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। তাই আমার মনে হতে লাগলো যে, তিনিই আমার আসল বাবা আর আমাকে কখনোই কোথাও যেতে দেবেন না। আর এও মনে হতে লাগলো যে, তিনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। তাই কখনোই আমার কোনো ক্ষতি হতে দেবেন না। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে লাগলাম যে, এতদিনে আমি আমার সত্যিকার বাবাকে খুঁজে পেয়েছি এবং তিনিও তার প্রকৃত মেয়ে অর্থাৎ আমকে খুঁজে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। কিন্তু হায়! আমি অসহায়ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম যে তিনি একটু পরেই আমাকে ময়লা ভেজা তোষকের ওপর ফেলে রেখে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। আর গড়িয়ে গড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ালেন।
‘রিটি শোনো, আমার তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে। এখানেই থাকো। কোথাও যাবে না।’ আমাকে এই কথাগুলো বলেই তিনি তার পায়ের কাছে পড়ে থাকা ঘরে পরার ছোট প্যান্টটি হাতে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে দ্রুত হেঁটে চলে গেলেন।
চলবে…
আমি জানি খাঁচার পাখিরা কেন গান গায়-২১॥ মায়া অ্যাঞ্জেল্যু