১. পৃথিবীর আদি হতেই
যোগ + বিয়োগ = কম
যোগ + যোগ = মেলা বেশি
যোগ – যোগ = শূন্য
বিয়োগ + বিয়োগ = মেলা কম
বিয়োগ – বিয়োগ = শূন্য
বিয়োগ – যোগ = কম
২. রাত বারোটার আগে
চাঁদ উঠেছে, তারা ফুটেছে, কলির মুখ ছুটেছে, তার গন্ধ বাতাস রাস্তা রাস্তা বয়ে বেড়াচ্ছে। কম বয়সী জমকালো পোশাক পরা বিলাসি মানুষের মত পৃথিবী। বাতাস বাইরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এ বাড়ির দেয়াল ডিঙিয়ে আসতে পারছে না। গরম, খুব বেশি গরম। মামুন সাহেব বসে আছেন, ঘামছেন। টেবিলের ওপর পেপারওয়েট চাপা দেয় কাগজপত্র, সিগারেটের প্যাকেট, দামি কলম, ব্যথার মলম, পানির জগ, কাঁচের মগ, ফুলদানি, ছাইদানি। মামুন সাহেব দোলনা চেয়ার থেকে উঠে ফ্যানের সুইচ দেন। ফ্যান ঘুরতে শুরু করেছে — ফ্যান ঘুরছে। আরাম লাগছে। সমস্ত শরীরের আরাম, মাথায় চোখে উঠতে শুরু করেছে মামুন সাহেবের। হঠাৎ করে টেবিলের ওপর থেকে একটা কাগজ ব্যাঙের মতো নিচে লাফিয়ে পড়ল। ওটা পেপার ওয়েটের শাসনে ছিল না। মামুন সাহেব কাগজটা উঠিয়ে রাখতে চাইলেন। চোখ দুটো চাইল না।
৩. যখন ভোর ছিল
বাহ্! কী চমৎকার, যায় বল হানির বাবা তোমার পছন্দ আছে, এই শাড়িটা পরেই আজ আলোচনা সভায় যাব। মামুন সাহেবের ঠোঁটে ফোটে গর্ব। রুশিদা সিঁড়ি দিয়ে নামছেন, বুক হতে পিছলে যাওয়া আঁচল ঠিক করলেন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আজ সভাতে যে বক্তব্য দেবেন, তা আওড়াচ্ছেন— যখন কোনো পুরুষ মাথা নিচু করে হাঁটে তখন সে চিন্তাশীল আর মাথা নিচু করা নারী লজ্জাশীল এবং মাথা উত্তোলন করলে, নারী যেখানে স্বাধীনচেতা হয় তখন উন্নত মাথার পুরুষ অবশ্যই গবেট। সিঁড়ির শেষ মাথায় গিয়ে রুশিদা বলেন—হানির জন্য ফিডারে দুধ তৈরি আছে খেতে দিও।
সভা শেষ। বেশ হাততালি পড়ল। মিজান সাহেব এগিয়ে আসছেন—খুব চমৎকার বলেছেন আপনি। ভালো বলবেন তা আমি আগেই জানতাম। রুশিদার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেন। ববকাটা চুলে হাত বুলিয়ে চুলের বিন্যাস বুঝে নেন রুশিদা। লাল লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে সবুজ হাসি—বাহ্ চমৎকার শাড়িতো, পছন্দ আছে আপনার। মিজান সাহেব বললেন —চলুন, কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে দুপুরে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে তারপর যাবেন।
৪. ভোর সময়েই
রাতের সাপের শাসন ধোয়া শেষ করে ব্লাউজের বোতাম আঁটকাতে আঁটকাতে বের হয়ে মিশিকে কোলে নেন মমতা। সকল বোতাম আর লাগানো হয় না, মিশি বুকে মুখ লাগাই। ওকে কোলে করেই সকালের নাস্তা তৈরি করেন মমতা। টেবিল সাজান। প্যান্ট, কোর্ট, শার্ট, টাই, জুতা এগিয়ে দেন স্বামীকে।
কমপ্লিট পরে মিজান সাহেব বের হন—দুপুরে খেয়ে নিও, ফিরতে দেরি হতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে নামছেন।
মিজান সাহেবের হাতে কিসের প্যাকেট বুঝে ওঠার আগেই কানে আসে মিশির কান্না। মিজান সাহেব সিঁড়ির কতদূর নামলেন তা দেখা শেষ না করেই ব্লাউজের বোতাম খুলতে খুলতে মিশির কান্নার দিকে ছুটে যান মমতা।
৫. এর শুরুর কাল নির্ধারিত নেই
১ + ২ + ৩ + ৪ + ৫ + ৬ + ৭ + ৮ + ৯ = ১৩
১- ২-৩- ৪-৫- ৬- ৭- ৮- ৯ = ১৩
১ × ২ × ৩ × ৪ × ৫ × ৬ × ৭ × ৮ × ৯ = ১৩
১ ÷ ২ ÷ ৩ ÷ ৪ ÷ ৫ ÷ ৬ ÷ ৭ ÷ ৮ ÷ ৯ = ১৩
৬. বৃষ্টিকালে কোনো একদিন
খুব সেজেছেন রুশিদা। পরনে নীল রঙের শাড়ি। তার বুক হতে শাড়ির আঁচল পিছলে গেছিল, তা ঠিক করলেন। হানি মামুন সাহেবের আঙুল ধরে মায়ের পাশে পাশে হাঁটছে। আজ বর্ষাবরণ উপলক্ষে খিচুড়ি ভোজ হবে। অদূরে বাসের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন মালেক সাহেব, রফিক সাহেব, তমাল সাহেব, জামাল সাহেব।
মামুন সাহেবের পরিবারের সঙ্গেই হাঁটছেন মিজান সাহেবের পরিবার। মমতা মিশিকে সামলাতেই ব্যস্ত। রুশিদার পেছনে মিজান সাহেব হাঁটছেন। তিনি হানিকে সামলাতে ব্যস্ত। মমতা মিশিকে নিয়ে একটা গাছের নিচে গিয়ে বসে। ও স্তন্য পান করবে বলে কান্না শুরু করেছিল।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মালেক সাহেব লক্ষ করলেন, এবার নিয়ে রুশিদার বুক থেকে পাঁচবার আঁচল পিছলে গেল।
মিশি তার মায়ের বুকের দুধ পান করেছে। হানি বুঝতে পারে না মিশি তার মায়ের আঁচলের তলে মুখ ঢুকিয়ে কী করছিল। হানি কিছুক্ষণ আগে তার বাবা মামুন সাহেবের হাতের দুধপান করেছে।