নেপথ্য কথা
২০১০ সালে ইপিজেড ও ফোন কোম্পানিগুলোতে সিকিউরিটি গার্ড প্রোভাইড করার কথা ভেবে প্রথম যখন ‘স্টেপ আপ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ নামক সিকিউরিটি কোম্পানিটা খোলা হয়েছিল, তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি যে এসব লেডি ও জেন্টস গার্ডদের ঘিরে গড়ে উঠতে পারে এত এত বিচিত্র সব গল্প। আসলে মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে ঘিরে সবসময়ই তৈরি হতে থাকে নানা গল্প। তবে, ২০১২ সালে যখন আমরা প্রথম অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে গার্ড প্রোভাইড করা শুরু করলাম, তখনই দেখলাম নর-নারীর সম্পর্ক বিষয়ক বিচিত্র সব ঘটনা এখানে ঘতে চলেছে। যা এককথায় কল্পনাকেও হার মানায়। তেমনি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছিল, এই শ্রেণীশত্রু গল্পটির কাহিনি। ঘটনাটির সূত্রপাত হয় ২০১৩ সালে গুলশান-১-এর একটি মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিংকে ঘিরে।
এ সময় রাজবাড়ী জেলা থেকে জহির নামক ২৫/২৬ বছরের এক সুদর্শন যুবক গার্ড হিসেবে আমাদের কোম্পানিতে এসে জয়েন করে। মনে আছে ছেলেটি গ্র্যাজুয়েট ছিল। বেশ ছেলেটি ভদ্র ছিল বলে আমরা তাকে কোনো একটি বড় কোম্পানিতে পোস্টিং দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু সে একেবারেই আনকোরা তাই কিছুটা প্রাথমিক ট্রেনিং দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাকে প্রথমে ২/১ মাসের জন্য গুলশানের সেই অ্যাপার্টমেন্টে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কিছুদিনের কাজের অভিজ্ঞতা হলেই ওকে কোনো ফোন কোম্পানিতে অ্যাডজাস্ট করে দেবো। কিন্তু বিপত্তি দেখা গেলো অ্যাপার্টমেন্টে জয়েন করার পর থেকেই তাকে। অ্যাপার্টমেন্টের মালিকের সুন্দরী বিধবা স্ত্রীকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব ও জল্পনা-কল্পনার ডালপালা ছড়াচ্ছে। তখন তদন্তের উদ্দেশ্যে দ্রুত তাকে হেড অফিসে ফিরিয়ে আনা হয়। আর তখনই জানতে পারলাম, তার সঙ্গে ঘটা গোপন সব চাঞ্চল্যকর কাহিনি।
এরপর তাকে সাভারের এক ইপিজেডে পোস্টিং দেওয়া হয় কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সেই অ্যাপার্টমেন্টের মালিক সুন্দরী ম্যাডামটি তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন। আবারও নিজের কাছে এনে পার্সোনাল ম্যানেজার হিসেবে অ্যাপয়েন্টেড করেন। এই ঘটনার পরপরই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ব্যাপারটি নিয়ে একটি গল্প লিখবো। কিন্তু নানা ব্যস্ততার চাপে সেসময় আর লেখা হয়ে ওঠেনি। পরে একটি অনলাইল পত্রিকা থেকে গল্প চাওয়ায় সেই প্লটের ওপর ভিত্তি করে একটি গল্প লিখে ফেলি এবং নাম দেই ‘শ্রেণীশত্রু’।
গল্পটির মূল চরিত্রের একজন মতিন সাহেব। যার কথা ভেবে আমি এই চরিত্রটি নির্মাণ করেছিলাম, তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। খুব কাছে থেকে তার জীবনযাপন দেখেছি। তিনি আমাদের দেশের একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক ও চেয়ারম্যান। তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ব্যক্তিগত ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে এবং তার বাস্তব জীবন-যাপনকে কেন্দ্র করেই গল্পের নায়কের জীবনকে আমি বর্ণনা করেছি। আর এটাই হচ্ছে আমার লেখা প্রিয় একটি গল্প ‘শ্রেণীশত্রু’র পটভূমি। গল্পটি আমার প্রিয় একটি গল্প কারণ আমাদের এই সমাজের বর্তমান সময়ের যে মানবিক অবক্ষয়ের নানা চিত্র আমরা দেখতে পাই তারই একটির প্রকৃত চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে। গল্পের প্রায় প্রত্যেকটি চরিত্রকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। কল্পনার ডালপালা যে একেবারেই মেলেনি তা নয় তবে বাস্তবতার প্রতিফলনই মূলত গল্পটির শক্তি ও সৌন্দর্য হয়ে উঠতে পেরেছে।
শ্রেণীশত্রু ॥ ফারহানা রহমান
এক.
একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মতিন চৌধুরীর স্ত্রী মারিয়াম চৌধুরী ওরফে মরিয়ম খাতুন যেদিন রাত সাড়ে তিনটা সময় বিএমডব্লিউ ৭ সিরিসের একটি বিলাসবহুল গাড়ি থেকে নেমে ঢুলতে ঢুলতে বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি গার্ড জহিরের গায়ে এসে পড়লো, সেদিন থেকে জহিরের গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। সে জ্বর আর কোনোদিন ছেড়েছিল কি না, কে জানে! তবে, এই যে রাত-বিরাতে পার্টি থেকে বেহেড মাতাল হয়ে ঢুলতে ঢুলতে বাড়ি ফেরা এবং গাড়ির ড্রাইভারের দেহে ভর দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে লিফটে ওঠা। এসবই মারিয়াম চৌধুরীর প্রাত্যহিক রুটিনের মধ্যেই পড়ে। তবে সেইদিনটা ছিল ব্যতিক্রম। গ্যারেজে গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বেখেয়ালে গাড়ির দরজা খুলে একাই নামার চেষ্টা করলেন। আর মুহূর্তেই শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যেতে লাগলেন। তখনো ড্রাইভার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে সামনের দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে তাকে ধরে নামানোর মতো যথেষ্ট সময় হাতে পায়নি। অন্যসময় মারিয়াম ঘোরগ্রস্ত হয়ে বসেই থাকে আর ড্রাইভার দরজা খুলে তাকে ধরে নামিয়ে লিফটে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে। ঘটনাচক্রে সেদিন ব্যতিক্রম হলো।
এদিকে ২৬ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের মতো পেশীবহুল শরীরের অধিকারী, ছয়ফুট লম্বা, অত্যন্ত সুদর্শন মোহাম্মদ জহির আলী ঘটনার দিন সকালেই মারিয়াম চৌধুরীর গুলশানের বহুতল বাড়ির পাঁচজন সিকিউরিটি গার্ডের একজন হিসেবে জয়েন করেছিল। একে তো সে ফ্ল্যাট বাড়ির নিয়মকানুন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি, তার ওপর এরকম অপরূপা সুন্দরী, পুতুলের মতো মোলায়েম এক মেমসাহেবকে চোখের সামনে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে তার পক্ষে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব হয়নি। গাড়িটি গেটের ভেতর প্রবেশ করামাত্রই কৌতূহল বশে সে গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। আর গাড়িটি থামার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেলো মারিয়াম দরজা খুলে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। জহির কাছেই ছিল, সে তৎক্ষণাৎ মারিয়ামকে ধরে ফেললো। আর মারিয়ামও নিজেকে ছাড়িয়ে না নিয়ে বরং জহিরকে জাঁপটে ধরলো। এমন অবস্থায় ড্রাইভার বিব্রত হয়ে জহিরকে সরে যেতে বলেছিল কিন্তু মারিয়াম কিছুতেই জহিরকে সরতে দিলো না বরং জহিরের বাহুবন্দি হয়ে সে বাড়ি ফিরেছিল। পরে জানা গিয়েছিল যে, সে রাতে জহির আর গেটে ডিউটি করেনি।
দুই.
মরিয়মের জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনা শহরের টুতপাড়া নামক এলাকায়। টুতপাড়া বাজারে মরিয়মের বাবার তিনটি ওষুধের দোকান ছিল। নিঃসন্তান হান্না ও ইমরান দম্পত্তি যেমন আল্লাহর দরবাবে বহু ফরিয়াদ করে বিবি মরিয়মকে চেয়ে নিয়েছিলেন, মরিয়মের বাবা-মাও চার পুত্রসন্তানের পর একটি মেয়ের জন্য নিয়ত করেছিলেন। মেয়ে হলে বিবি মরিয়মের নামে তার নাম রাখা হবে, সেটিই ছিল তাদের মনোবাসনা। চার ছেলের পর যখন ফুটফুটে মেমসাহেবের মতো দেখতে মরিয়মের জন্ম হলো, তখন একটি ছাগলের বদলে আস্ত একটি গরু জবাই দিয়ে তিনি আকিকা করলেন। বিবি মরিয়মের নামেই মেয়ের নাম রাখলেন। আকিকার দিন পাড়ার প্রত্যেককে পেট ভরে মাংসভাত খাইয়ে জনে জনে গিয়ে মরিয়মের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য বাবা-মা দোয়া চেয়েছিলেন।
প্রত্যেকেই মরিয়মের জন্য দুহাত তুলে দোয়া করছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে দেখা গেলো, মরিয়ম যখন একটু একটু করে বড় হচ্ছে, তখন একইসঙ্গে মরিয়মের বাবা সামসুজ্জামানের শরীরের শক্তিও ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে লাগলো। কী এক বিচিত্র রোগে তিনি দিনদিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে লাগলেন। একসময় পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন। মরিয়ম তখন মাত্র ফাতেমা স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। মৃত্যুশয্যায় মরিয়মের বাবা ছেলেদের কাছ থেকে কথা আদায় করে নিলেন, যেন ছেলেরা যেভাবেই হোক, বোনের লেখাপড়া শেষ করায়। পড়াশোনার মাঝখানে যত ভালো বিয়ের প্রস্তাবই আসুক না কেন তারা যেন মরিয়মের বিয়েশাদি না দেয়। তিনি আরও বলে গেলেন, মরিয়মকে যেন কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়, সেদিকে যেন ছেলেরা সবসময় খেয়াল রাখে।
তিন.
মরিয়মের বড় চারভাই ও মা যথাসাধ্য তাদের কথা রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এদিকে মরিয়ম বড় হতে হতে তার রূপের ঝলকে পাড়ার ছেলেরা সব ঝলসে যেতে লাগলো। বহু পাগল প্রেমিকের মন ভেঙে দিয়ে এবং সম্ভাব্য সব বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে এইচএসসি পাস করার পর মরিয়ম আর টুতপাড়ার মতো মফঃস্বলে থাকতে রাজি হলো না। সে ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়বে বলে ঠিক করলো। ঢাকার ব্যয়বহুল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর মতো সামর্থ্য মরিয়মের ভাইদের নেই। কিন্তু বাবার কাছে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবু শেষ চেষ্টা হিসেবে একদিন ভাইয়েরা মরিয়মকে ডেকে বললো, বুন্ডি, দ্যাখ, খুলনা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারস কি না? আমাগের তো সামর্থ্য নাই তোরে প্রাইভেট পড়ানের। তুই ভেইবে দ্যাখ একবার পাবলিক ভার্সিটিতে পড়বি কি না। কিন্তু মরিয়ম সিদ্ধান্তে অটল। ভাইয়েরা নিরুপায় হয়ে বাজারে থাকা তাদের সবচেয়ে বড় ওষুধের দোকানটি বিক্রি করে দিলো।
চার.
ঢাকা শহরে মরিয়মের কোনো কাছের আত্মীয়স্বজন থাকে না। ফলে মেয়ের সঙ্গে মাকেও খুলনার পাট চুকিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া করে চলে আসতে হলো। জেদ করে মাকে নিয়ে ঢাকায় এসে বসবাস করতে গিয়ে মরিয়ম হাড়ে হাড়ে টের পেতে লাগলো ঢাকা শহরের মতো এমন ব্যয়বহুল এবং ফাঁপা চাকচিক্যময় শহরে টিকে থাকা আসলে কতটা কঠিন ব্যপার। একদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশছোঁয়া ব্যয়ভার বহন করা, অন্যদিকে সব ধনাঢ্য পরিবারের সহপাঠীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করা। সবকিছু মিলিয়ে সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। ভাইয়েরাও এতসব খরচা চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে লাগলো। এদিকে মফঃস্বলের এমন নজরকাড়া অপরূপা সুন্দরী মরিয়মের সঙ্গ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে সিনিয়র-জুনিয়র ভাইয়েরা। একইসঙ্গে যত সহপাঠী ছেলে বন্ধু, তারাও কম যায় না। নতুন নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই সে নানা জনের কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেতে লাগলো। আর সেও যে দুই-একবার ভুল প্রেমের ফাঁদে ফেঁসে যায়নি তা নয়। কিন্তু দেখা গেলো যখনই সে কারও প্রতি সম্পর্কের ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে উঠতে চায়, তখনই তার প্রেমিকরা প্রেমকে অস্বীকার করে বসে, তারা বরং বন্ধুত্বের ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানায়। এভাবে বার কয়েক কষ্ট পেয়ে মরিয়ম সিদ্ধান্ত নেয় পড়ালেখা শেষ করার আগে সে আর কারও সঙ্গে কোনো সিরিয়াস রিলেশনে জড়াবে না। এরপর মরিয়ম লেখাপড়ায় অত্যন্ত মনযোগী হয়ে ওঠে। সিজিপিএ ৪ পেতে থাকে। ক্লাসে ফার্স্ট পজিশন নিয়ে এখন সে তৃতীয় বর্ষে উঠেছে। এসময়টিতেই ঘটে গেলো যত বিপত্তি। দেখা গেলো মতিন চৌধুরী নামক ষাটোর্ধ্ব এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরিয়মদের ক্লাসের মার্কেটিংয়ের প্রফেসর হিসেবে ক্লাস নিতে শুরু করলেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দেশেবিদেশে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে মার্কেটিংয়ের ওপর ক্লাস নেন।
এটি একটি ওপেনসিক্রেট ব্যাপার। কিন্তু তার ছোট মেয়ের চেয়েও অল্প বয়সী একটি মেয়ের এমন উন্মাদনা এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। অথচ এরইমাঝে মতিন চৌধুরী মরিয়মের প্রতি সমস্ত আগ্রহ হারিয়েছেন।
যেদিন প্রথম মতিন চৌধুরী ক্লাস নিতে এলেন, সেদিন থেকেই মরিয়ম তার প্রতি ভীষণ রকম আকর্ষণ বোধ করতে লাগলো। সে রীতিমতো স্যারের প্রেমেই পড়ে গেলো। স্যারের কথা ভাবতে ভাবতে তার লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়া সব শিঁকেয় উঠলো। স্যারকে দেখলেই ক্যামন যেন তার শরীরে জ্বর জ্বর লাগতে থাকে। দিনদিন সে ফ্যাকাসে হয়ে যেতে লাগলো। তার মুখে বিস্বাদ, সারাক্ষণ বমি বমি লাগতে থাকে। শান্ত মেয়ে মরিয়ম এমন একটি অসমপ্রেমের কূলকিনারা খুঁজে না পেয়ে ধীরে ধীরে বিষণ্ন ও অস্থির হয়ে উঠতে থাকে। তার এই পরিবর্তন ক্লাসের সহপাঠীরা খেয়াল করে। আর খেয়াল করে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ মা। অথচ মরিয়ম নিজেই বুঝতে পারে না—সে কেন এমন একজন বয়স্ক প্রফেসরের প্রতি এভাবে তীব্র আকর্ষণ বোধ করে। ৬১ বছর বয়সী মতিন চৌধুরী সন্দেহাতীতভাবেই একজন অন্যন্ত স্মার্ট এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী পুরুষ। তিনি বাগ্মী ও চৌকসও। তিনি যখন ক্লাস নেন, ছাত্রছাত্রীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে ২৩ বছরের মরিয়ম যে এভাবে পাগলের মতো মতিন চৌধুরীর প্রেমে পড়বে, সেটা কল্পনা করাও কষ্টকর। একদিকে মতিন চৌধুরী ক্লাসে লেকচার দিতে থাকেন অন্যদিকে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী, বুদ্ধিমতি, সেরা ছাত্রী মরিয়ম মুগ্ধ নয়নে অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। বিশ্বনাগরিক মতিন চৌধুরী ঘাগু লোক। মরিয়মের এমন মুগ্ধ দৃষ্টি চিনতে তার ভুল হয় না। দেশে বিদেশের বহু সুন্দরী রমণীর সঙ্গসুখ তিনি উপভোগ করেছেন। মনে মনে তিনি মরিয়মের সঙ্গ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে উঠলেন। ক্লাস শেষে একদিন তিনি মরিয়মকে নিজের রুমে ডেকে একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিলেন। তিনি জানতেন সেদিন রাতেই তিনি মরিয়মের ফোন পাবেন।
পাঁচ.
স্টক মার্কেট থেকে শুরু করে ব্যাংকিং, রিয়েলএস্টেট, শিপিং, ইলেক্ট্রনিক্স, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, প্রোপারটিস, চোরাকারবারী—হেন ব্যবসা নেই, যা মতিন চৌধুরীর নেই। যুদ্ধের আগে থেকেই তিনি একটি কোম্পানির অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি সেই কোম্পানির বিরাট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। যুদ্ধ-পরবর্তীকালে সেই টাকা দিয়ে বহু বেনামি বাড়িঘর অল্পমূল্যে কিনে নেন অথবা দখল করে নিজ নামে দলিল করে নেন। তিনি তিন সন্তানের বাবা। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে-এক ছেলে। সবাই তার কোনো না কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত। আর তিনি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। অথচ তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা কেউই জানেন না মতিন চৌধুরীর সম্পত্তির সঠিক পরিমাণ। দেশে-বিদেশের বহুস্থানে তার অসংখ্য বাড়িঘর রয়েছে। এক ঢাকা শহরেই তার বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বাড়ি আছে, যেখানে কেয়ারটেকাররা বাড়িঘরের দেখাশোনা করে। বাড়িগুলো খালি থাকে। তবে তিনি মাঝে মধ্যে বন্ধুবান্ধব ও সুন্দরীদের নিয়ে সেখানে মুজরার আসর বসান। মতিন চৌধুরী সংগীত খুব ভালোবাসেন। দেশবিদেশ থেকে বিখ্যাত সংগীতশিল্পীরা এসে সেসব মুজরা জমিয়ে তোলে। সারারাত সংগীতের মূর্ছনায় নাচে গানে বেহুশ হয়ে, বহু পুরাতন দামি সব পানীয়ের প্রভাবে ধনাঢ্য নারীপুরুষের দল মাতাল হয়ে একে অন্যের ওপর ঢলে পড়ে। এভাবে সারারাত নাচগানের পার্টি শেষে সকালে যে যার স্থানে ফিরে যায়। মতিন চৌধুরীর স্ত্রী যে এসব জানেন না, তা নয়। কিন্তু স্বামীর এসব আনন্দ ফুর্তিতে বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার তার নেই। তিনি তার নিজের মতো জগৎ তৈরি করে নিয়েছেন।
ছয়.
মতিন স্যারের ভিজিটিং কার্ডটি হাতে পাওয়ার পর থেকেই মরিয়ম একেবারে দিশাহারা হয়ে পড়ে। বহুকষ্টে রাত এগারোটা পর্যন্ত সে নিজেকে ফোন করা থেকে বিরত রাখে। এরপর আর সহ্য করতে না পেরে ফোনকল করে বসে। মতিন চৌধুরী তাকে উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ির ঠিকানা দিয়ে পরেরদিন সন্ধ্যায় সেখানে দেখা করতে বলে। সারাদিন পাগলের মতো অস্থির হয়ে ছিল মরিয়ম। কোন পোশাক পরবে, কিভাবে সাজবে, কী করে সন্ধ্যায় উত্তরায় গিয়ে মতিন স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে? এসব ভেবে ভেবে উতলা হয়ে সে একসময় ফোনে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সন্ধ্যা ছটার মধ্যেই হাজির হয় অদ্ভুত প্রাসাদের মতো দেখতে একটি মেডিটেরিয়ান ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। চারিদিকে অসংখ্য বহুতল বিল্ডিংয়ের এক কোণায় অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। আগেই শিখিয়ে দেওয়া কথা অনুযায়ী বাড়ির সামনে এসেই সে মতিন স্যারকে ফোন করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশাল রাজকীয় দরজা ভেদ করে ম্যানেজার সিদ্দিক মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকেই মরিয়ম থ বনে যায়। চারিদিকে সোফা দিয়ে সাজানো বিশাল এক হলঘরের মাঝখানে সম্ভ্রান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে কুচকুকে কালো রঙের এক গ্র্যান্ড পিয়ানো। হল ঘরের পরেই খাবারের ঘর। চারদিকে টিন্টেড কাচঘেরা ডাইনিং রুমের একপাশে ২৪/২৫ জন বসতে পারে এমন একটি লম্বা খাবারের টেবিল। টেবিলের ওপর সাজানো মাটির বাসনপত্র। এমন সুন্দর মাটির বাসন মরিয়ম আড়ংয়ে দেখেছে। ডাইনিং রুমের পাশেই আরও কিছু শোয়ার ঘর, বাথরুম, বারান্দা এসব আছে কিন্তু এসব দেখার সময় মরিয়মের হয় না। ঘরের ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে সিদ্দিক তাকে নিয়ে দোতলায় উঠে আসে। ওখানেই এক বিলাসবহুল বেডরুমে মতিন চৌধুরী ওর জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন।
সাত.
আগে থেকেই মরিয়ম মতিন চৌধুরীর প্রতি অনুরক্ত ছিল। এবার তার সব ধরনের সংযম ভেঙে পড়লো। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে দিনরাত সে মতিন চৌধুরীকে ফোন করে। সর্বক্ষণ তার সঙ্গ কামনা করে। তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে চায়। একান্তই নিজের করে পেতে চায়। এখন সে উত্তরার বাড়ি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বাড়ির ঠিকানা জানে। এমনকী গুলশানের যে বাসায় তিনি তার স্ত্রীপুত্র নিয়ে বসবাস করেন, সে ঠিকানাও সে জানে। মতিন চৌধুরীর ড্রাইভারের ফোন নম্বর থেকে শুরু করে অফিস এবং বাড়ির দারোয়ানদের, ব্যক্তিগত সহকারী, ম্যানেজার সবার ফোন নম্বরই সে জানে। ফলে তিনি ফোন না ধরলেও মরিয়ম ঠিকই জেনে যায় তিনি কোথায় আছেন। সে সেখানেই গিয়ে হাজির হয়। মরিয়মের এসব লাগামহীন আচরণে মতিন চৌধুরীর মানসম্মান প্রায় ধুলোয় মিশে যাওয়ার পর্যায়ে এসে পড়ে। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গেও তার যথেষ্ট ঝামেলা হয়ে গেছে। দেশে-বিদেশে তার বহু নারীর সঙ্গে সখ্য আছে। এটি একটি ওপেনসিক্রেট ব্যাপার। কিন্তু তার ছোট মেয়ের চেয়েও অল্প বয়সী একটি মেয়ের এমন উন্মাদনা এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। অথচ এরইমাঝে মতিন চৌধুরী মরিয়মের প্রতি সমস্ত আগ্রহ হারিয়েছেন।
মালিশ শেষে বুড়ো আঙুল চুষতে চুষতে ভোর হয়ে গেলে এখন সেও ধনাঢ্য সুন্দরী মারিয়াম চৌধুরীর পায়ের কাছে পড়ে ঘুমিয়ে থাকে।
মরিয়মের শরীরের উদ্দামতার প্রতি তার কিছুটা কামনার আকুতি ছিল বটে। কিন্তু ওর অযৌক্তিক এই প্রেমের উন্মাদনা আর আসক্তির কাছে তার সমস্ত আগ্রহই মার খেলো। তিনি বরং মরিয়মের কাণ্ডজ্ঞানহীন এই অনুরক্তির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলেন। তিনি একদিন মরিয়মকে ডেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের অনাগ্রহের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন। এর আগেও তিনি বহুবার মরিয়মকে টাকাপয়সা, সহায়সম্পত্তি দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন। দেশবিদেশ থেকে আনা বহু মূল্যবান উপহার তিনি তাকে দিয়েছেন কিন্তু মরিয়মের এসবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। সে শুধু তাকে একান্ত নিজের করে পেতে চায়। এসব দেখে মতিন চৌধুরী একবার মরিয়মের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সত্যি করে বলো তো তুমি আসলে আমার কাছে কী চাও? তুমি কি চাও আমি তোমাকে বিয়ে করি? তোমার কি মনে হয় এটা কোনোভাবে সম্ভব? আমি তো বিবাহিত। দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে আমাকে আমার প্রথম স্ত্রীর কাছে পারমিশন নিয়ে হবে। তোমার কি মনে হয় ও আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের পারমিশন দেবে? আর তুমি আমার মেয়ের চেয়েও ছোট, আমি তোমাকে কী করে বিয়ে করব? প্লিজ এসব পাগলামি বাদ দিয়ে লেখাপড়া শেষ করো আর তোমার সঙ্গে মানায়, এমন কাউকে বিয়ে করো। আমি কথা দিচ্ছি তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন আমি তার সবকিছু তোমাকে দেবো। মরিয়মের কোনো ভাবান্তর দেখতে না পেয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেবেন।
আট.
মতিন চৌধুরীর সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে মরিয়ম একসঙ্গে একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলো। সে যাত্রায় বেঁচে গিয়ে পরেরবার হাতের রগ কেটে ফেললো। এরপর তার ভাইয়েরা তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিল। মতিন চৌধুরীর কাছে সব খবরই আসে। তিনি কোনো গত্যন্তর না পেয়ে শেষে চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে মরিয়মকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর তিনি তাকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে বের হন। মরিয়ম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি তাকে নিয়ে থাইল্যান্ডে যান। মরিয়মকে বডি ম্যাসাজের ওপর ট্রেনিং নেয়ান। এরপর দেশে ফিরে তিনি মরিয়মকে নিয়ে গুলশানে তৈরি করা নতুন বহুতল ভবনের ওপরের দিকের ডুপ্লেক্সে উঠে সংসার পাতলেন।
আট.
দেশে ফিরে আসার পর থেকেই মরিয়মের প্রতি তার ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বদলে গেলো। এখন তিনি মরিয়মকে কথায় কথায় গালাগালি করেন। তিনি তাকে নাম ধরে না ডেকে ফকিন্নির বাচ্চা বলে ডাকেন। দিনদিন মরিয়মের প্রতি তার দুর্ব্যবহার বাড়তেই থাকে। যদিও বাইরের লোকের সামনে তিনি অত্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ করেন। মরিয়মকে নিয়ে তিনি নানা ধরনের পার্টিতে যান, সেখানে তাকে নিয়ে মদ-গাঁজা খেয়ে হুল্লোড় করে রাত কাটান। এমনকী তিনি তাকে অন্যান্য ব্যবসায়িক পার্টনারের সঙ্গে রাতে থাকতেও বাধ্য করেন। মধ্যরাতে বাসায় ফিরে এসে বাকি রাতটুকুতে মরিয়মকে দিয়ে সারা শরীর ম্যাসাজ করান। মরিয়মের সঙ্গে এখন তিনি আর শারীরিকভাবে মিলিত হন না। কিন্তু প্রতিরাতেই তার শরীর ম্যাসাজের জন্য মরিয়মকে দরকার হয়। এরপর ৬৭ বছর বয়সে তার কোলন ক্যান্সার ধরা পড়ে। একইসঙ্গে দিনদিন তার শরীরে ব্যথাবেদনাও বাড়তে থাকে। সারারাত ধরে মালিশ করার ফলে সারাশরীরে ব্যথার তো কিছুটা উপশম হয় কিন্তু পরে দেখা যায় শরীরের সব ব্যথা এসে জমা হয়েছে পায়ের বুড়ো আঙুলে। এরপর বুড়ো আঙুল ঘষতে ঘষতে মরিয়মের হাত ব্যথা হয়ে যায় কিন্তু তার ব্যথার তীব্রতা তখনো কমে না। ওই সময় মতিন চৌধুরী মরিয়মকে আঙুলটি চুষতে বলেন। প্রথমদিকে সে তীব্র আপত্তি জানায়। কিছুতেই সে পায়ের আঙুল মুখে পুরে চুষতে পারবে না বলে জানায়। তারপর চিৎকার করে কান্নাকাটি করে। কিন্তু আঙুল না চুষলে যে মতিন চৌধুরীর ঘুম আসে না। এভাবে পায়ের আঙুল চুষতে চুষতে একসময় রাত ফুরিয়ে যায়। আর সারা পৃথিবীর অন্ধকার কেটে গিয়ে যখন সোনালু আভা ছড়িয়ে একটি নতুন দিনের শুরু হয় সেই ঊষালগ্নে মতিন চৌধুরী ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়েন। আর ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মরিয়মও তার পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
নয়.
মৃত্যুর আগে মতিন চৌধুরী মারিয়মের নামে উইল করে অঢেল সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলেন। রাতবিরাতে পাড় মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা ধনাঢ্য বিধবা সুন্দরী মারিয়াম চৌধুরী এতদিনে স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ উপভোগ করতে শুরু করেছে। নিত্যদিন সে বিছানায় নতুন নতুন সঙ্গী বেছে নেয়। কিন্তু কাউকেই তার সেরকম মনে ধরে না। শেষমেশ গ্রাম থেকে আসা সহজসরল, আকর্ষণীয় দেহের অধিকারী অথচ অন্ধপ্রেমে মত্ত সিকিউরিটি গার্ড জহিরকে তার মনে ধরেছে। জহির এখন তার সঙ্গে একই ফ্লাটে থাকে। সে জহিরকে প্রমোশন দিয়ে ব্যক্তিগত ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তারও এখন শরীরে প্রচুর ব্যথা। সারারাত পার্টি করে আসার পর জহির এখন তার সারাশরীর মালিশ করে দেয়। মালিশ শেষে বুড়ো আঙুল চুষতে চুষতে ভোর হয়ে গেলে এখন সেও ধনাঢ্য সুন্দরী মারিয়াম চৌধুরীর পায়ের কাছে পড়ে ঘুমিয়ে থাকে।