আশ্চর্য! ২০টা মিসড কল।
কে দিয়েছে!
মোবাইল সাইলেন্ট রেখে অন্য একটি জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। দেখি অপরিচিত নম্বর। এত রাতে যিনি কল দিয়েছেন, নিশ্চয় আমাকে তার প্রয়োজন। তা না হলে উপর্যুপরি কল দেওয়ার কথা নয়। ফিরতি কল দেওয়ামাত্র রিসিভ করলেন। অন্যপ্রান্ত থেকে জবাব এলো।
-হ্যালো চাচা, আমি রইস উদ্দিন। আপনার এলাকার। চিনতে পারছেন? ওই যে গত ঈদে শরাফত ভাইয়ের দোকানে একলগে চা খাইছিলাম। আমার আব্বার নাম কাদের।
-হ্যাঁ, এবার চিনতে পেরেছি। কী খবর তোমার? এতবার কল দিয়েছ। কোনো সমস্যা না কি?
-চাচা, আপনি তো এলাকায় থাকেন না। মাঝেমধ্যে আসেন গ্রামে। এলাকায় ভালো মানুষ নাই। কুত্তাকাবাড়িতে ভইরা গ্যাছে।
-ঢাকায় থাকতে হয়রে বাপু। ছেলেপুলে সব এখানে। এছাড়া উপায়ও তো নেই। এখন কী সমস্যা হয়েছে বলো।
-চাচা, এলাকায় বিচার নাই। যারা বিচার করবে তারাই এখন অবিচার করে। ক্ষেতে বেড়া দেওয়া হয় যেন গরু-ছাগলে ফসল নষ্ট না করে। কিন্তু এখন বেড়া-ই ক্ষেত খায়। তাই আপনারে কল দিছি। আমাগো উপজেলা ইউএনও আপনার বন্ধুর ছেলে। আমরা জানি। আপনি এই ব্যাপারটা তার কানে দিলে ভালো হয়।
-কী ঘটনা? না জানলে কিভাবে বলবো? তাছাড়া আমি যেহেতু এলাকায় নাই, ঘটনার সত্যমিথ্যা না জেনে ইউএনও-কে বলাটা ঠিক মনে করি না।
-চাচা, আমাগো নজির মেম্বার কুকর্ম করেছে। এক অসহায় মহিলারে জিম্মি করে বেইজ্জতি করেছে। তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নিয়া এখন আর দেয় না। উল্টা ভয় দেখায়। খুনের হুমকি দেয়।
এ-পর্যন্ত শোনার পর আমি মনে-মনে রইস উদ্দিনের ওপর বিরক্ত হই। যেহেতু সরেজমিনে ঘটনা দেখিনি, শুনিনি, সেহেতু সত্যমিথ্যা যাচাই না করে এই ব্যাপারে নাকগলানো ঠিক মনে করিনি।
-ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু সমস্যা তো তোমার নয়। তাহলে এই ব্যাপারে এত আগ্রহ কেন?
-চাচা, আমি এই ঘটনার সাক্ষী। এটাই সমস্যা। সে আমারেও হুমকি দেয়। বলে, রাতের অন্ধকারে আমারে গায়েব করে দিবে। আমি এখন মৃত্যুর ভয়ে আছি।
-আচ্ছা। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখি। তারপর দেখা যাক। তুমি আগামীকাল কল দিও। এখন রাখি।
কথা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে বসি। এখন রাত প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। থেকে থেকে গায়ে লাগে চৈত্রের গরম হাওয়া। শহরের সদাব্যস্ত দিনের কর্মচঞ্চলতা ক্রমশ শিথিল হয়ে এসেছে। চারিপাশে রাতের নীরবতা। দূরে কোথাও তারস্বরে কাঁদছে অবুঝ শিশু। ফ্যানের গরগর শব্দ, হঠাৎ গলিমুখে পাহারাদারের সাবধানী হাঁক। পাড়ার কুকুরগুলোর অকারণ হৈ-চৈ। না, শহরের রাত্রিকালীন বিবিধ ভাবনা এই মুহূর্তে আমাকে স্পর্শ করছে না। এসব ছাপিয়ে আমার মন পড়ে আছে সুদূর গ্রামে। স্মৃতিপথ ধরে হাতড়ে ফিরি সোনালি অতীত। ইদানীং দেখছি গ্রামীণ জীবনেও আর স্বস্তি নেই। গুম-খুনের মতো ঘটনা যেন স্বাভাবিক। গ্রামের সরলপ্রাণ মানুষগুলো কেমন নির্বিকার, পরস্পর সম্পর্কহীন। অথচ আবহমান গ্রামবাংলা তো এমন ছিল না। পরস্পরের মধ্যে ছিল সদ্ভাব ও আন্তরিকতাপূর্ণ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। সুখে-দুঃখে একে-অন্যের পাশে থাকতো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে কী চমৎকার অনুপম দিন আমরা কাটিয়েছি।
মেম্বারের অনুগত একজন হয়েও রইস উদ্দিন তার এমন অনৈতিক কাজ শেষপর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি। যে কিনা গতকাল মধ্যরাতে আমাকে কল দিয়ে ব্যাপারটি অবহিত করেছে।
আফসোস, এখন অপসৃত হয়েছে সেসব সোনালি দিন। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো দুঃসংবাদ আমাকে জানানো হয়। অথবা না জানালেও ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক ঘটনা সামনে এসে যায়। এই যেমন, অমুকের ছেলে তমুকের মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। ক্ষমতাধর প্রতিবেশী আরেক জনের জমি জোরপূর্বক দখল দিয়েছে। বড়ভাই বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছে। ছোটভাই সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। এমনকি বড়ভাইয়ের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। এই লজ্জা সইতে না পেরে বড়ভাই বিদেশের মাটিতে আত্মহত্যা করেছে। ছেলেকে ত্যাজ্য করে বুড়ো বয়সে বাবা আবার বিয়ে করতে আগ্রহী। এই নিয়ে বাবর সঙ্গে সন্তানের তুমুল দ্বন্দ্ব। এরকম অগণিত দুর্ঘটনার সংবাদ শুনে শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়েছি।
আমার বয়স এখন সত্তরের কাছাকাছি। একদিন গ্রামের জলহাওয়ায় শৈশব-কৈশোর এবং যৌবনের উন্মাতাল সময় কাটিয়েছি। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর সেই যে গ্রাম ছেড়েছি, স্থায়ী ভাবে আর ফেরা হয়নি। কেবল বিভিন্ন সময়ে বিবিধ প্রয়োজনে গ্রামে গিয়েছি। গ্রামবাসীর দুর্দিনে, দরবার-সালিশে পাশে থেকেছি। তারাও আমাকে ভুলে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছি। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘসময় চাকরি করেছি। পেশাগত প্রয়োজনে দূরে থেকেও কখনো বিচ্ছিন্ন থাকিনি। ফলে গ্রামে অবস্থান না করেও মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়েছি। তারা আমাকে সমীহ করে। গ্রামের যেকোনো ঝগড়াবিবাদ কিংবা সমস্যাসংকুল পরিস্থিতিতে আমার হস্তক্ষেপ আশা করে। এভাবেই কখনো ঢাকায় বসে, কখনো-বা গ্রামে গিয়ে নানাজনের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজ রইস উদ্দিনের মৃত্যুভয় দেখে আমার মনও যেন ভেঙে চৌচির। আমাকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মৃত্যুভয়। বয়সের কারণে গায়ে তেমন শক্তি নেই। এই জীবন ও জগতের নানা অভিজ্ঞতা ভিড় করে আছে অলস ও স্থবির সময়। এভাবে বিচিত্র বিষয় নিয়ে জপতে জপতে সময় বাহিত হয়। ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালবেলা। অন্যদিনের তুলনায় আজ ঘুম ভেঙেছে দেরিতে। অবশ্য গতরাতে এপাশ-ওপাশ করে শেষপর্যন্ত ঘুমিয়েছি রাত তিনটায়। ঘুম ভাঙামাত্র ইনবক্স চেক করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমার নাতি আইডি খুলে দেওয়ার পর থেকেই ফেসবুক অবসর জীবনের দারুণ সঙ্গী। দেশ-বিদেশের নানা সংবাদ এবং বাহারি ছবি দেখি। অবসর সময় কাটানোর জন্যে ফেসবুক দারুণ এক মাধ্যম। বলছিলাম ইনবক্স চেক করার কথা। দেখি রইস উদ্দিন আমাকে একটা পত্রিকার লিংক দিয়েছে। যেখানে মাদারীপুর জেলার বিশেষ একটি পত্রিকায় নজির মেম্বারের কুকর্ম নিয়ে বড় একটা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এই সেই নজির মেম্বার, যাকে এলাকার মানুষ ‘ছাগল চোরা’ নামে ডাকে। মূলত মেম্বার হওয়ার আগে একবার ছাগল চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল। সেই থেকে তার নামের আগে এই বিশেষণ। মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরেও ‘ছাগল চোরা’ বিশেষণ মুছে যায়নি।
যাই হোক, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়তে শুরু করি। শিরোনাম: ‘মহেশপুর ইউপি সদস্য নজিরুল ইসলামের অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে এক গৃহবধূর আর্তনাদ।’ মফস্বল পত্রিকায় এই ধরনের সংবাদ বেশি থাকে। সুখবরের তুলনায় দুঃখের খবর বেশি ছাপা হয়। এখন অবশ্য জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকাগুলোরও একই দশা। যাই হোক, নজিরুল ইসলাম ওরফে ছাগলচোরা মেম্বারের কুকীর্তির ফিরিস্তি পড়ে ভীষণ মনখারাপ হলো।
বদরগঞ্জ উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়ন। মৃত নাদিরুল ইসলামের ছেলে নজিরুল ইসলাম। যে কিনা বর্তমানে ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এক গরিব গৃহবধূকে ঠকিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে গৃহবধূর বলছেন, আমার স্বামী অন্ধ। কাজকর্ম করতে না পারায় একান্ত নিরুপায় হয়ে অত্র ওয়ার্ডের মেম্বার নজিরুল ইসলামের নিকট যায়। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য মেম্বারের দ্বারস্ত হলে মেম্বার নজিরুল ইসলাম তার ছেলের সাথে আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তখন আমার স্বামী ও আত্মীয় স্বজন প্রস্তাবটি মেনে নেয়নি। স্বামী অন্ধ ও অসুস্থ থাকার কারণে আমার ভাই ও আত্মীয় স্বজন আমার সংসারে আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এভাবে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও ধূর্ত মেম্বার মহিলার ঘরে আসা যাওয়া অব্যাহত রেখেছে। মহিলার স্বামীর নামে ‘অন্ধভাতার কার্ড’ করে দেওয়াসহ সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। প্রথম দিকে দুয়েকবার সহযোগিতা করে বিশ্বাস অর্জন করে। কিছুদিন পর ঘরের পালা গরু বিক্রির ১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোনের ৫০ হাজার টাকা মেম্বার ধার হিসেবে নেয়। যে টাকা তারা মেয়ের বিয়ের খরচ হিসেবে অতি কষ্টে সঞ্চয় করেছিল। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত না দিয়ে মেম্বার নতুন পথে হাঁটে। লাভজনক কাজে বিনিয়োগ করে দেওয়ার কথা বলে সহজ-সরল অন্ধ স্বামীকে ভুল বোঝায়। তার কাছ থেকে অলিখিত কাগজে দস্তখত করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, সম্পত্তি খারিজ করার নামে মেম্বার নজিরুল ইসলাম প্রতারণার করে। অসহায় অন্ধ মানুষটির ভিটেবাড়ি কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। মূলত রইস উদ্দিন এসব ঘটনার সাক্ষী। মেম্বারের অনুগত একজন হয়েও রইস উদ্দিন তার এমন অনৈতিক কাজ শেষপর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি। যে কিনা গতকাল মধ্যরাতে আমাকে কল দিয়ে ব্যাপারটি অবহিত করেছে।
এটুকু বলে চুপ হয়ে যাই। আমার ভেতরে যেন কাটা মুরগির আর্তনাদ। কাকে শোনাবো এই রোদনভরা মধ্যাহ্নের ডাক।
প্রতিবেদনের শেষের অংশ পড়ে আঁতকে উঠি। মানুষ কতটা মনুষ্যত্বহীন বিবেকবর্জিত হলে এমন কাজ করতে পারে! সরকারের দেওয়া ত্রাণ ও কর্জ নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে মেম্বার ওই নারীকে জেলা শহরে নিয়ে যায়। গোপনে অচেতন করার টেবলেট খাইয়ে দেয়। তার কাছ থেকে কয়েকটি অলিখিত কাগজে দস্তখতও নেয়। হোটেল ভাড়া করে রাত কাটিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের দৃশ্য ও বিভিন্ন অশালীন কথা ভিডিওতে ধারণ করে। টাকা দাবি করলে এসব অশালীন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকিধামকি দেয়। শুধু তাই নয়, মহিলাকে ব্লাকমেইল করে আরও ১ লাখ টাকা দাবি করে। মানসম্মানের ভয়ে অসহায় মহিলা চুপ থাকলেও মহিলার স্বামী কর্জ নেওয়া টাকা মেম্বারের কাছে দাবি করে। এতে মেম্বার ক্ষিপ্ত হয়। দুদিন আগে সন্ধ্যায় সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অসহায় পরিবারের ঘরে এসে ভাঙচুর করে। মেয়ের গায়ে হাত দেয়। টানাহেঁচড়া করে তাকে নিয়ে যেতে চাইলে মহিলা বাধা দেয়। মেম্বারের সহযোগিরা মা-মেয়ে দুজনের ওপর হামলে পড়ে। অন্ধ স্বামীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়। অসহায় পরিবারের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন আসে। অবস্থা বুঝে মেম্বারের সন্ত্রাস বাহিনী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
প্রতিবেদনের আদ্যন্ত পড়ে চুপ হয়ে রইলাম অনেক্ষণ। প্রতিবেদনে ছড়ানো বিস্তীর্ণ ফাঁদ দেখে বিস্মিত হই। এ-কোন ত্রাসের সমাজে আমরা বসবাস করছি। যেখানে নেই সামান্যতম মানবিকতা বোধ। অসৎ রাজনীতির ক্ষমতা ব্যবহার করে এরকম ঘটনা এখন গ্রামাঞ্চলে সাধারণ ও স্বাভাবিক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকার পাতা ওল্টালে প্রায় প্রতিদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সাধারণ দরিদ্র মানুষ নিগ্রহের শিকার হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। নেতা-পাতিনেতা, মেম্বার-চেয়ারম্যান, কমিশনার এবং কাউন্সিলরের প্রভাব খাটিয়ে এধরনের অপকর্ম দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। একসময় যারা ছিল যাবতীয় অন্যায়ের প্রতিবাদী জনপ্রতিনিধি। এখন তারা নিজেরাই সেসব অপকর্মের মূল হোতা। অপকর্মের শাস্তি হয় না বলে অপরাধী আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু লতিফ চৌধুরী। তার ছেলে আসিফ চৌধুরী দুই বছর ধরে বদরগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও-র দায়িত্বে আছে। এযাবৎ এলাকার অসংখ্য সমস্যা তার মাধ্যমে সমাধান করেছি। এভাবে আর কত? যদি আমরা পরিবর্তন না হই। তবে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ছাগল চোরার মতো অসৎ, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে যেহেতু জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছি। সেহেতু আমরা যারা ভোটার তারা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারি না।
মেম্বার নজিরুলের এমন কুকর্মের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। মোবাইল হাতে নিয়ে এবার ইউএনও-কে কল দিলাম। কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও সে রিসিভ করেনি। বুঝলাম, হয়তো আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। হয়তো নষ্ট রাজনীতির কাছে সেও জিম্মি, অসহায়। অথবা অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। মিনিট দশেক পর আমার অনুমান ভুল প্রমাণ করে ইউএনও কলব্যাক করেছে। কিন্তু কল রিসিভ করেই এমন একটি সংবাদ দিয়েছে যার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
-আংকেল, ভোরের দিকে আপনার গ্রামে রইস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছে। সেটা নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপনার কল রিসিভ করতে পারিনি। দুঃখিত।
রইস উদ্দিন। নামটি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। আচ্ছা, এখন রাখি। এটুকু বলে চুপ হয়ে যাই। আমার ভেতরে যেন কাটা মুরগির আর্তনাদর। কাকে শোনাবো এই রোদনভরা মধ্যাহ্নের ডাক।