মহাজনের অপেক্ষার চোখ বার বার হোঁচট খায়। অনেক তো হলো, আর কত! আর কত অপেক্ষা করবে সে! প্রিন্সেস রঙ্গিলার জন্য মনের মধ্যে আনচান করে। বসে নেই জমিদার ভাই; চেয়ারটাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে হাতঘড়ির পানে তাকায়। সেট রেডি। বালিয়াড়ির বুকে কয়েক দফা বৃষ্টিও নামিয়েছে। এখন কেবল অপেক্ষা। অপেক্ষার সাথে পাল্লা দিয়ে টাকার চিন্তা প্রবল হয়। অপেক্ষায় অপেক্ষায় টাকা ক্ষয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই বিগ বাজেটের ছবি, অনিয়ম হলে বাজেট ঘাটতি হতে কতক্ষণ!
রঙ্গিলার পাশাপাশি ভাইজানের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হিসেবে ভাবে। অনেক ভেবেচিন্তে পরিচালক হিসেবে ভাইজানকে মনোনীত করেছিল। ভেবেছিল সময়মত কাজ উঠে আসবে। বিনিয়গকৃত টাকা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে তার টাকশালে জমা হবে। নিরুপায় হয়ে মহাজন জিজ্ঞেস করে, কী করবেন এখন?
পরিচালক নিরুত্তর। মনে মনে ভাবে, অন্য কেউ হলে এতক্ষণে লাত্থি মেরে বিদায় করতো। বুঝিয়ে দিত কত ধানে কত চাল! নতুন না, ইন্ডাষ্ট্রিতে বহুদিনের পুরাতন সে। যশ-খ্যাতিও কম নেই। তাকে দেখলে সমীহ করে না, এমন মানুষ কমই আছে! কিন্তু প্রিন্সেস রঙ্গিলার বিষয় আলাদা। হিট নায়িকা। পাবলিক খাচ্ছে ভালো। ‘শয়তান এখন মানুষ’ ছবিটা সুপার ডুপার হিট। ফাটাফাটি রকমের ব্যাবসা করেছে। শোনা যাচ্ছে অস্কারেও যাবে! রঙ্গিলা ম্যাডামের বাজার এখন সত্যি সত্যি রমরমা। সময়ের বড় অভাব, জোয়ারের পানির মতো হুহু করে নতুন নতুন অফার আসছে। গাড়ির সামনে নামিদামি পরিচালক হুমড়ি দিয়ে পড়ছে। জমিদার ভাইকেও কম কাঠখড়ি পোড়াতে হয়নি। কৌশলে ছবি করতে রাজি করিয়েছে। এখনো কৌশলের কথা ভাবে। কৌশলে কাজ তুলে আনতে হবে।
কাজ আপাতত বন্ধ। রঙ্গিলা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যে যার মত ব্যাস্ত। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিরীক্ষণ করে। নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ। দায়িত্ব বিষয়ে সচেতন। তারা মোটেও ফেলনা নয়। ব্যাবসা সফল করতে তাদের ভুমিকা অর্থবহ। নৃত্যপরিচালক বেশ গুরুত্ব দেয়। অবসর সময়ে পেশা বিষয়ে টিপস দেয়। ছোটখাট ভুলচুক ধরিয়ে দেয়। টিলার পাশ ঘেঁষে লাইলা। মেয়েটি আনাড়ি। কাজের সাথে মুখও চলে। সঙ্গী সাথিদের সাথে হাসাহাসি করছে। নৃত্যশিল্পী ওরা। জলে ভিজে নায়িকার সাথে আজ নাচানাচি করবে। উদোম শরীর দেখিয়ে পয়সা কামাবে! ওদের হাসি প্রযোজক-পরিচালকের অপছন্দ। ক্ষ্যাপা কুকুরের মত জমিদার ভাই তেড়ে আসে- শালীর মাগী, ভূতায় রস জমেছে, তাইনা? আমার বাঁশ যাচ্ছে আর . . .
মুখ খিঁচানোর জন্য পরবর্তী কথাগুলো ষ্পষ্ট বোঝা যায় না। প্রচণ্ড রেগে আছে। ক্ষুব্ধও বটে!
পরিচালক স্বস্থানে ফিরে গেলে লাইলা বিড়বিড় করে, শালা কাপুরুষ! নায়িকারে কিছু কওনের মুরোদ নাই, যত ঝাড়ি শুধু আমাগোরে! সস্তা পাইছস না?
হাতের ইশারায় সঙ্গীদের কেউ একজন চুপ থাকার ইঙ্গিত দেয়। কানে কানে তিন কান হলে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে। নীলুর পদচারণা এ লাইনে দীর্ঘদিনের। গালমন্দ শুনে অভ্যস্থ। তবু অকারণে অপমান করলে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করলে কষ্ট হয়। হোক না তুচ্ছ, ওরাও তো শিল্পী! শিল্পীর মান যদি না থাকে তবে শিল্পের মুল্য কোথায়? অশ্লিল গালাগালি শুনলে চোখে জল আসে। লাইন ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবে। প্রয়োজনে ঝি-গিরী করবে। তবু ভাল।
মেয়েগুলোর চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। লাইলা আক্ষেপ করে, নীলুদি, আমরা কি একেবারে মুল্যহীন? কোনো প্রয়োজন নেই!
অন্য আরেকজন বলে, মাত্র কয়টা টাকার কাছে জিম্মি আমরা। পরিশ্রম তো কম করি না? অথচ পান থেকে চুন খসলে বিপদ। রক্ষা নেই। চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে। এভাবে আর চলতে পারে না। প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।
প্রতিবাদের কথা ভাবে। কিন্তু বিশেষ লাভ হবে না। এক কথায় চাকরি থেকে ছাঁটাই। না-খেয়ে মরবে। ওদের কাজ আটকাবে না। নতুন নতুন মেয়ে আসবে। তাছাড়া মেয়ে এখন জলের মতো সস্তা। যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শরীর থাকলেই হলো, সব ম্যানেজ করে নেবে। গ্লামার চায় গ্লামার। গ্লামারের দুনিয়া এখন। গ্লামারের কাছে আর্ট মূল্যহীন। অথচ হলিউড বলিউডের চিত্র ভিন্ন। গ্লামারের সঙ্গে তারা আর্টের মিশেল ঘটিয়েছে। পঞ্চাশ পেরিয়েও বলিউডে খানদের দাপট অপ্রতিরোধ্য। মেয়ের বয়েসী অভিনেত্রীদের সঙ্গে চুটিয়ে অভিনয় করছে। একটার পর একটা সফল সিনেমা। দক্ষিণের সিনেমায় রজনিকান্ত এখনো কিংবদন্তি। বয়স তার কাছে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
লাইলার কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাস, সব অন্যায় কি মাথা পেতে নেব?
হয়রে বইন। এটাই আমাগোরে নিয়তি!
মেয়েটি ডাইম্যানশন চেঞ্জ করে। রঙ্গিলাদের বিপক্ষে কথা বলে, ওদের চাইতে কোন অংশে কি কম আমরা? দেখতে খারাপ নাকি অভিনয় পারি না? নাছরিন আপায় তো প্রমাণ কইরি দিছে, সুযোগ পেলে আমরাও হিট করতে পারি।
নাছরিনের স্মৃতি ওদের সাহস যোগায়। নৃত্যশিল্পী হিসেবে ফিল্মে আগমন অথচ নায়িকা হিসেবেও সুপারহিট! মেধা থাকলে একদিন না-একদিন ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। প্রাসঙ্গিক হয়ে দিলদারের কথা আলোচিত হয়। বস্তুত সে ছিল কৌতুক অভিনেতা। কিন্তু আবদুল্লাহ সিনেমায় নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
বাংলা সিনেমার তখন সুদিন। রাজ্জাক, শাবানা, ববিতা, আলমগীর, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, সূচন্দা, কবরী, হুমায়ন ফরিদী, আনোয়ার হোসেন, রাজিব, রাজু আহমেদের মতো রুচিশীল শিল্পীর পদচারণায় আঙিনা মুখর। সালমান শাহর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিশেষ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। বাংলা সিনোমার এখন ক্রান্তিকাল। দক্ষ নির্মাতা, হৃদয়গ্রাহী চিত্রনাট্য এবং অশ্লীলতার কারণে সিনোমার প্রতি দর্শকরা বিমূখ। একদা সাড়ে চার হাজার প্রেক্ষাগৃহ ছিল। কমতে কমতে এখন তা মাত্র শতাধিক। তবু কেউ কেউ সুদিনের কথা ভাবে। ভাবে, উত্তরণের পথে নিশ্চয় কেউ এগিয়ে আসবে।
সকাল থেকে বাসন্তীর মুখ ভার ভার। ছেলের শরীর খারাপ। সাথে করে যে নিয়ে আসবে, অনুমতি নেই। ক্যারিয়ারের কথা ভেবে বুকের দুধ বন্ধ। ডিমা কমে যাবে। পান চিবাতে চিবাতে প্রোডাকশনের একটা ছেলে আসে। মতলববাজ। ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে। শালা এক নম্বরের মাগীখোর। ইনডোর কিংবা আউটডোর সর্বত্র তাদের রাজত্ব। অন্যায় আবদার। কোনো কিছু পেতে হলে দেহের বিনিময় করতে হয়। লাইলাকে উদ্দেশে ছেলেটি বলে, হায়, লাইলাদি! কেমুন আছেন?
কেমুন আছেন বাক্যটা কানে এলো শরীরে মধ্যে জ্বালাপুড়া আরম্ভ হয়। এ যেন কাঁটা ঘাঁয়ে নুনের ছিঁটা!
শুয়োরের বাচ্চা! মাগী দেখলেই পেটে কামড় ওঠে, তাই না?
ছেলেটি জিহ্বায় কামড় খায়। অনুতপ্ত হওয়ার ভ্যান করে, রাম রাম দিদি। আমি আপনার গ্রেট ফ্যান। বুঝলেন কি না, রঙ্গিলা ম্যাডাম আপনার কাছে কিচ্ছু না।
বুঝতে অসুবিধা হয় না, ছেলেটি চামচামি করছে।
লাভ হবে না বাঁচাধন। ভাগ এখান থেকে। নায়িকার কাছে যা। সেখানে গিয়ে চামচামি কর।
নতুন মডেলের একটা মার্সিডিজ এসে উপস্থিত হলে দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু হয়। শুটিং ষ্পটে হৈচৈ। রঙ্গিলা ম্যাডাম হাজির। সকলের চোখেমুখে আলোর ছটা। দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি। রুপালি পর্দার মানুষটিকে তারা স্বচক্ষে দেখতে চায়। জমিদার ভাই হন্ত দন্ত হয়ে ছুঁটে আসে। ইতিমধ্যেই তার বিমর্ষ ভাব কেটে গেছে। আদুরে কণ্ঠে নায়িকা রঙ্গিলা বলে, ছরি জমিদার ভাই, দেরি করে ফেললাম। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
অসাধারণ দেখাচ্ছে তাকে। যদিও আগের তুলনায় খানিকটা মুটিয়ে গেছে। অনাবৃত নিতম্ব। পাতলা ফিনফিনে এক টুকরো কাপড়ের অন্তরালে অর্ন্তবাস স্পষ্ট হয়ে আছে। অর্ন্তবাসের সাথে মিল করে পেন্টি পরেছে। পায়ে হাইহিল। অবিন্যস্ত কেশ বাতাসে উড়ছে। পারফিউমের মিষ্টি ঘ্রাণ। রঙ্গিলাকে আলিঙ্গণ করে জমিদার ভাই বলে, ওহ, ওয়ান্ডারফুল! কিউট লাগছে বেবি!
ডান হাতে কাঁধ এবং বাম হাতে গাল স্পর্শ করে রঙ্গিলা বলে, যাও দুষ্টু! তুমি শুধু মিথ্যে বলো।
না না বেবি, সত্যি বলছি। পাগল হয়ে যাবো আমি।
আসলে হয়েছে কি জানো?
কি হয়েছে ডার্লিং!
ন্যান্সিকে নিয়ে যত বিপদ। কিছুতেই ছাড়তে চায় না। ভীষণ, ভীষণ দুষ্টু।
পরিচালক দ্বিধান্বিত, ন্যান্সি; ন্যান্সিটা আবার কে?
রঙ্গিলা কপালে হাত তোলে। যেনো আকাশ থেকে পড়ে- হায় আল্লাহ, একি বলছো! ন্যান্সিকে চিনো না তুমি?
চোখেমুখে কপোট অনুরাগ, পোষা কুকুর। বিদেশ থেকে আনিয়েছি। ভীষণ সুইট। ছাড়তেই চায় না। রাত্রে একসাথে ঘুমাই আমরা।
পরিচালক নাকা সিঁটকায়, ও ন্যান্সি তাহলে কুত্তা?
ছিঃ ছিঃ জমিদার ভাই, এভাবে বলতে হয় না। ও আমার ন্যান্সি। শুনলে মাইণ্ড করবে।
লাইলা ফিক্ করে হাসে। রঙ্গিলা আড়চোখে তাকায়। সাধারণ একটা নর্তকীর সাহস দেখে হতবাক। ইচ্ছে করলে এই মুহূর্তে ছবি থেকে আউট করতে পারে। জমিদার দুঃখ প্রকাশ করে, ছরি ম্যাডাম। বুঝতে পারিনি। দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেব।
স্যুটিঙের প্রস্তুতি সম্পন্ন। সবাই ব্যস্ত-সমস্ত। ঠিকঠাক আছে কিনা আরেকবার চোখ বুলায়। রঙ্গিলার সঙ্গে চোখে চোখে কথা হয়। ক্যামেরাম্যান নির্দেশের অপেক্ষায়।
রেডি, অ্যাকশন।
শুরু হয় ছন্দময় নৃত্য। গানে গানে এলাকা মুখরিত। উৎসবের আমেজ। রূপালি ফিতার দৈর্ঘ্য ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। পরিচালক ক্লোজ শর্টে আগ্রহী। শরীর পুঁজি করে ফায়দা লুটতে হবে। ক্যামেরাম্যানকে সেভাবেই বোঝানো আছে। দর্শণার্থীর উপচে পড়া ভীড়। এক জনমে নায়িকা দর্শন কজনের ভাগ্যে জোটে? বালিয়াড়ির বুকে প্রচণ্ড বৃষ্টি। সখিদের নিয়ে নায়িকা বর্ষার জলে লুটোপুটি খাচ্ছে। সম্মুখে অথৈই জলরাশি। জল আর জল। হঠাৎ চিৎকারে জলের নিরবতায় ছেদ পড়ে—কাট্ আপ।
জমিদার ভাই লাইলার পানে দ্রুত দিকে এগিয়ে যায়।
পাছায় লাত্থি দেব মাগি। বুকটা জড়িয়ে যাচ্ছে কেন? আরো স্ফিত হবে। তা না হলে সর্বনাশ। পাবলিক মুখ ফিরিয়ে নেবে। ছবি ফ্লপ করবে।
পরিচালকের কানের কাছে মুখ এনে লাইলা ফিস্ ফিস্ করে বলে, ছ্যার, নাচতে নাচতে ব্রা খুলে ফেললে কেমন হয়?
জমিদার খুশি হয়। চোখেমুখে আলোর রেখা—আহ লাইলা, এতক্ষণে মনের কথা কইলা। কাটপিচ হিসেবে চালিয়ে দেব। পাবলিক দারুণ গিলবে। রাতারাতি ছবি হিট। আর তুমি হবে নতুন স্টার!
দূর থেকে দু’আঙুলে ভি চিহ্ন দেখিয়ে প্রোডাকশনের ছেলেটি সহমত জ্ঞাপন করে। নুপূর পায়ে লাইলা নৃত্যের ঝড় তোলে। লাইলা একা না, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুলে ওঠে। দূরন্ত যৌবনে ঢেউ খেলে যায়। অঙ্গ দুলিয়ে নাচে। জমিদার মাথা নাড়ে— হচ্ছে। হবে। ছবি হিট হতে বাধ্য। পাবলিক কেন তাদের মরা বাপও হলে ছুটে আসবে।
দূরে বসে মহাজন স্বপ্নের জাল বোনে। কপালরে ভাই, সবই কপাল! কপাল ভালো হলে তার ছবি অস্কারেও যেতে পারে। সত্যজিৎ রায়ের বিদায়ের সাথে সাথে বাংলা সিনেমার যে ভাগ্য বিপর্যয় শুরু হয়েছে তারও অবসান হবে। নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
কাট্ আপ।
সবাই থামে। লাইলা নয়, এবার রঙ্গিলার ভুল। নাচের মুদ্রায় অমিল। পরিচালক ব্যতিব্যস্ত। কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নায়িকাকে প্র্যাক্টিস করায়। একবার। দুইবার। তিনবার। রেডি স্ট্যাট। নাহ, হচ্ছে না। রঙ্গিলার ভুল হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করতে আড়চোখে আশেপাশে তাকায়। লাইলার চোখে চোখ পড়তেই রঙ্গিলা ফুঁসে ওঠে। ঠাস্ করে গালে থাপ্পড় দেয়।
জমিদার ভাই দৌড়ে আসে, কী হয়েছে ম্যাডাম? অ্যানি প্রবেলেম?
ক্ষুব্ধ হয়ে সে বলে, ইয়েস। প্রবেলেম। লাইলাকে আউট না করলে ছবি করব না।
কেন, কী করেছে সে?
আমার পানে তাকিয়ে হেসেছে। এত্তবড় সাহস, ছেমড়ি আমাকে অপমান করে? নিজেকে কী ভেবেছে সে, হিরোইন না কি?
লাইলার হয়ে নীলু ক্ষমা প্রার্থনা করে, প্লিজ ম্যাডাম, সে নতুন। এছাড়া বয়সও বেশি না।
বয়সের কথা উঠলে রঙ্গিলা আরও বিরক্ত হয়। মাগীরা কি তাকে কটাক্ষ করছে! তার বয়সই বা এমন কী? মধ্যস্থতায় আরও কয়েকজন এগিয়ে আসে। লাইলাকে বকাঝকা করে। রঙ্গিলার মন তবু গলে না। সে তার সিদ্ধান্তে অবিচল। নৃত্যশিল্পীর এই দলটাকে কিছুতেই মেনে নেবে না। পরিচালক নিরুপায়। আশাভঙ্গের বেদনা। হতাশার স্বরে বলে, প্যাক আপ। লেটস গো।
গো গো করে নায়িকা বাড়ির পথ ধরে। ঢাকার গাড়িতে নীলু ও লাইলারা অবাঞ্চিত। বালির ওপর পা মেলে সটান বসে আছে। চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা। জীবন কেন এমন! আর কত প্রবঞ্চনা! অনিশ্চিত ভবিষ্যত। ঝাপসা দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকায়। তখন মনে হয়, নৃত্যের ছন্দে প্রমত্ত ঢেউ ছুটে আসছে। নিমেষেই সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে!