সেই কবে ছোটবেলা রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ি থেকে জবাফুলের চিকন এক ছোট্ট ডাল ভেঙে এনেছিলাম। ঘরের বাইরের দরোজার পোটনির পাশে লাগিয়েছিলাম।বাড়ির রাস্তার দুদিক ঘিরেই ফুলের বাগান ছিল। গোলাপ রজনীগন্ধা হাসনাহেনার ভিড়ে সেদিন এই জবাফুলের সামান্য ডাল খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। এখন যখন বাড়ির দিকে তাকাই, সেসব অভিজাত ফুলের গাছ এখন আর নেই। কোথায় কবে কিভাবে অযত্নে অবহলোয় হারিয়ে গেছে, সে হিসাবও নেই। কিন্তু জবাফুলের গাছটা অযত্ন অবহেলার ভেতর দিয়েই বড় হয়েছে, ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। সারাবাড়ি তার সৌন্দর্যে আলো করে রেখেছে। আমি কতবার যে এই কথা ভেবেছি আর বিস্ময় চোখে দেখেছি, এখনো দেখি। সে হিসাব মেলানো এখন আর সহজ নয়।
জবাফুলের এই ডালটা লাগানোর সময় মা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বলেছিলেন, ‘এই ডালটা একদিন গাছ হয়ে অনেক বড় হবে’ মায়ের কথাটা হয়তো সেদিন কানেই তুলিনি। হিসেবেই গুনিনি। একদিন সত্যি সত্যি এই ডালটা গাছ হলো। অনেক বড় গাছ হলো। টিনের ঘরের ওপরে উঠে গেলো। বড় ঘরের প্রায় অর্ধেকটা চাল দখল করে নিলো। ফুলে ফুলে ছেয়ে উঠলো। বাড়িটার নামই কিভাবে কিভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলো ‘জবাফুলঅলা বাড়ি’। অনেকটা পথ ভেঙে যেভাবে নতুন পথ তৈরি হয়ে যায়। প্রথমে বোঝা যায় না, পথটা তৈরি হওয়ার পর বোঝা যায়, একট নতুন পথ তৈরি হয়েছে। আমাদের বাড়ির নামের অবস্থাও অনেকটা নতুন পথের মতোই হয়ে উঠেছিল। স্মৃতিস্বর্ণ আলো জড়ানো পুরনো সেই ঘরগুলো নেই। যে ঘরে আমার শিশুকালের গন্ধ লেগেছিল, যে ঘর আমার শৈশবের গন্ধ মাখা, যে ঘরে আমি একটু একটু করে যৌবন ছুঁয়েছি, সেসব এখন নেই।
ঘরে ফিরেই আমি যে সারা বাড়ি তছনছ করে ফেলতাম, মাকে চিৎকার করে ডাকতাম, খাবার দিতে একটু দেরি হলেই সারাবাড়ি মাথায় তুলতাম, আমার সেই বাড়িটা এখন আর নেই। সেই আমিও এখন আর নেই। আমার সব অত্যাচার সহ্য করা সেই মা-ও নেই। মাটির ঘরে চিরকালের ঘুমে ঘুমিয়ে গেছে। আমার যৌবন তখনো নদীর ঢেউ ছুঁইনি, ছুঁই ছুঁই করছে, তখুনি মা হারিয়ে গেলো। স্বপ্নরঙিন একটা পৃথিবী মুহূর্তে একটা কালো মেঘ এসে গ্রাস করে নিলো। আলোমাখা পথ অন্ধকার হয়ে উঠলো। অন্ধকার তো শুধুই অন্ধকার নয়। অন্ধকারেরও যে কত রূপ থাকে-ফণাধারী সাপের মতো কত বিষাক্ত ছোবল থাকে, আমি দেখতে থাকি। আর সাহসের ফণায় আমিও হাঁটতে থাকি পথ, সরাতে থাকি অন্ধকার, বিষাক্ত ছোবলের বিষ নাশ করতে থাকি-এক কঠিন দৃঢ়তায়।
এক জীবন দুঃখকে আসন বানিয়ে তার ওপর বসে থাকি, দুঃখগুলো সমুদ্রের গোপন গভীর ঢেউয়ের মতো আমার ভেতর বয়ে চলে। আমার বাইরের আনন্দ দেখে সবাই খুশি হয়, মুগ্ধতায় ডোবে।আমার ভেতর পুরের শ্যাওলাজমা নদীতে কেউ ডুব দেয় না।
আমি কত গভীর হয়ে আমার ঘরটা দেখতে থাকি-আমার পুরো বাড়িটা দেখতে থাকি-আমার মায়ের পায়ের প্রতিটি শব্দ খুঁটতে থাকি-আমার মায়ের প্রতিটি নিঃশ্বাস অনুভব করতে থাকি-এঘরে-ওঘরে-উঠোনে-সারাবাড়ি জুড়ে মায়ের হেঁটে বেড়ানো দেখি- স্মৃতির চোখে মাকে দেখি- আমার ঘরে ফেরা দেরি দেখে মায়ের উৎকণ্ঠিত মন আর দুশ্চিন্তার বিষণ্ন চোখ এখনো পথের দিকে ছুটে আসে-মা আমাকে খুঁজছেন। আমার বুকের ভেতর কান্নারা ঢেউ হয়ে ভেসে যায়-চোখের গভীর চোখের জলে ভারি হয়ে ওঠে-আমি বোকার মতো মুখে হাত নিয়ে বসে থাকি, যেনো বোকা এক পাখি।সবাই আমাকে দেখে-ভালোবাসে- স্নেহ-সম্মানে কাছে ডাকে। ভেতরে ভেতরে আমি যে অন্য এক আমি হয়ে থাকি-আমি সেই ছোট্টবেলার আমি হয়ে যাই-ভীষণ জেদি ও দুষ্টু আমি হয়ে যাই, মাকে সারাক্ষণ জ্বালা যন্ত্রণায় অবাধ্য সেই ছোট্টবেলার আমি হয়ে উঠি- সেই আমাকে কেউ দেখে না।
সন্ধ্যাভাঙা রাতে উঠোনে পাটিতে পাখিদের মতো সব ভাইবোন জড়োকুড়ো হয়ে বসে হারিকেনের আলোয় পড়তে বসার নামে কিচিরমিচির করা, সেই আমাকে খুঁজি-মা বসে আছেন পাশে-মিষ্টি শাসনে ও সোহাগে। কিচিরমিচির শব্দের ভেতর দিয়েই মায়ের চোখে স্বপ্নবুনি-একদিন আকাশ ছোঁবো আমরা। মা-ও হয়তো স্বপ্ন দেখেন হারিকেনের সামান্য আলোতে- একদিন আলোর ফোয়ারা হয়ে উঠবে তার আদরের পাখিরা।মা, তোমার মনে আছে, সকাল হলেই স্কুলে যাবার সময় বিনা প্রয়োজনে তোমার কাছে টাকা চাইতাম। তুমি সব বুঝেও না বুঝে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চার আনা আট আনা পয়সা দিতে।তোমার সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে পয়সা দেবার ছবিটা এখন আমার বুকের ভেতর ঝড়োবৈশাখ হয়ে ওঠে।তুমি কতো কষ্ট করেই না সেই পয়সা আমাকে দিতে মা।পয়সার সাথে এ সংসারে তোমার তো কোনো সম্পর্ক ছিল না, পয়সা তো বাবার দখলে।সারাবাড়ি উঠোনে এখনো আমি আমাকে খুঁজি-মা তোমাকে খুঁজি-মায়ের স্বপ্নভরা চোখ খুঁজি-মায়ের শরীরের গন্ধ খুঁজি। দুঃখের গান ছাড়া আর কিছুই পাই নে।রাত গভীর হয়, সারাবাড়ি শান্ত হয়ে আসে-আমি এক নিঃসঙ্গ দোয়েল উঠোনে বসে থাকি-আঁধারের চাদর আমাকে ঘিরে রাখে-মাটি স্পর্শ করে দেখি-যেখানে আমার নিঃশ্বাস-মায়ের গায়ের গন্ধ-মায়ের চোখভরা মনভরা স্বপ্ন লেগে আছে-আমি স্বপ্নগুলো ধরতে অন্ধকারে হাত পাতি-মেঘ ভেঙে প্রবল বৃষ্টি নামে-আমার বুকের তামাদী মাটি হু হু করে কেঁদে ওঠে।
মা, তুমি একবার বলেছিলে, ‘বাপ, বৃষ্টি হয়ে গেছে।মাটি নরম আছে। এখন চালকুমড়োর চারা এনে ঘরের পাশে লাগা দে। এখন লাগালে তাড়াতাড়ি বড় হবে।’ চালকুমড়োর চারা খুঁজছি বৃষ্টিভেজা মাঠে হঠাৎ আখের জমিতে চোখের সামনে বিশাল একটা গোখরা সাপ। ফণা ধরে ফস ফস করতে লাগলো। ভয় না পেয়ে সে কি আনন্দ তখন আমাদের। মাথায় এক বুদ্ধি সাপটা ধরে বাড়ি নিয়ে যাবো। সেই সাপের সাথে খেলা করছিল আমার আর এক ভাই, আর আমি দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি আসি কলসি নিতে, সাপকে কলসিতে ভরবো বলে।মা আমার অতি ব্যস্ততার সাথে কলসি নেয়া দেখে জিজ্ঞেস করলো, কলসি নিয়ে কই যাচ্ছিস?-মা, সাপ ধরবো।সাপ ধরার কথা শুনে মায়ের মন আর মুখের কি অবস্থা হয়েছিল-কি পরিমান দুঃশ্চিন্তা হয়েছিল, তা আর দেখা বা জানা হয়নি কোনোদিন। এক ভোঁ দৌড় দিয়েই সাপের কাছে চলে আসি। সাথে এলো আর এক ভাই। এসে দেখি, সেই ভাইটা ভয়াল গোখরার সাথে ঠিকই খেলছে।সাপের মুখের সামনে একটু পর পর একটু করে মাটি ছুঁড়ে দিচ্ছে, গোখরা সাপটা রাগে ক্ষোভে ছুঁড়ে দেয়া মাটিতে দংশন করছে আর ফণা তুলছে। আমরা তিনভাই যখন বিষধর গোখরার সামনে কলসির মুখ রেখে, কলসির মুখে মাটির ছোট ছোট টুকরো ছুঁড়ে দিতে থাকি, সাপটি কলসির মুখে ছোবল মারতে মারতে কলসির ভেতরে ঢুকে যেতেই, কলসির মুখ বিদ্যুৎ গতিতে গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলি।তারপর যেন বিজয়ের আনন্দে সাপভর্তি কলসি নিয়ে যখন বাড়িতে আসি, মা শুনেই তো তার দুচোখে আর পুরো মুখে সে কি ভয় আর বিস্ময়! সেই চোখ আমি এখনো খুঁজি।বাড়ির কোথাও সেই চোখ এখন আর বিস্ময়ে দেখে না আমাকে।আমি নদীর নীরব স্রোতের মতো বাড়ির প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে থাকি- মাকে কিছুতেই পাই না, কোথাও পাই না।উৎসবের ভেতরেও আমি কতো যে নিঃসঙ্গ-আমার বুকে কষ্টের কি যে শ্মশান জ্বলে-আমার ভেতরে সমুদ্র কান্না আছড়ে পড়ে- সেই ছোট্ট আমি আমার ভেতরে অবুজের মতো মা মা করে কেঁদে বেড়াই- আমার কোনো শান্ত্বনা থাকে না।আমি এক পাথর মূর্তির মতো শুধুই চেয়ে থাকি।যেন পাথরের চোখ।
আমার চোখে ঝিঙে গাছ, পুইশাকের গাছ আর চালকুমড়োর গাছগুলো এখনো কি সতেজ ও সবুজ।আমার নিজের হাতের লাগানো গাছগুলো দেখে মায়ের চোখ যে কি খুশি হতো-সেই আনন্দউপচে পড়া চোখ লেগে আছে আমার চোখে-মা বলতেন তুই গাছ লাগালেই গাছভরা ফল হয়।দেখিস একদিন তোর ঘরভরা বাচ্চা হবে। তখন এ কথার মানে বুঝিনি। না বুঝেই হেসেছি। সেই ঘরগুলোর চাল আর জাংলাভরা সবুজ সবজি এখনো চোখে লেগে আছে-সেই গাছগুলো কী দারুণ সতেজ এখনো আমার চোখে-আমি আমার ঘরে যেন এক নিশ্চুপ পাখি হয়ে উঠি।অথচ মা যখন রান্না করতো, তখন রান্না ঘরে চড়ুইয়ের উৎসব থাকতো। সেসব চড়ুই কোথাও হারালো! মায়ের সাথে কি তারাও চলে গেছে! এক জীবন দুঃখকে আসন বানিয়ে তার উপর বসে থাকি, দুঃখগুলো সমুদ্রের গোপন গভীর ঢেউয়ের মতো আমার ভেতর বয়ে চলে। আমার বাইরের আনন্দ দেখে সবাই খুশি হয়, মুগ্ধতায় ডোবে।আমার ভেতর পুরের শ্যাওলাজমা নদীতে কেউ ডুব দেয় না।
আমার গ্রামের ধূলিবালি-লতাপাতা-পথের আঁকাবাঁকা রেখা—গড়াই নদী-পাখিদের গান-ফুলের শোভা ও ঘ্রাণ-আমার মায়ের অবিকল মুখ হয়ে ওঠে; বলে-এই তো আমি তোর মা।আমি আনন্দে-আবেগে ঝড়োকান্নায় কয়া গ্রামকে বুকে জড়িয়ে ধরি-শত তৃষ্ণায় ডেকে উঠি, মা-মা আমার।
মা, আমি যতোবার বাড়িতে যাই, তোমার সেই কান্নাটা ততোবারই আমার বুকের ভেতর এক বেদনা নদী হয়ে যায়।তুমি কেন অমন শব্দ করে-আর্তনাদ করে-বুক চাপড়িয়ে পাগলের মতো কেঁদেছিলে? তুমি তো আর কোনোদিন অমন করে কাঁদোনি।আমি স্কুল থেকে ফিরতেই তোমার কান্না শুনে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম- মা কাঁদছে!আমি আজো তোমার সেই কান্না বুকের ভেতর ঝড়ের মতো বয়ে বেড়াচ্ছি। আমার ভেতর পোড়ামাটির কষ্টের রঙ হয়ে চিরকালের মতো সেই কান্ন গেথে আছে।তুমি সেদিন কেন অমন পাগলির মতো কেঁদেছিলে জানিনে। স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট আমি সেদিন এ কান্না যে সমুদ্র সমুদ্র বেদনা- এর কিছুই বুঝনি, মা।তারপর আমি যখন একটু একটু করে বড় হয়েছি-তোমার সেই কান্না ক্রমশ গভীর হয়ে বিদ্ধ হয়ে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে- অসহায় এক আর্তনাদ আমাকে আছড়ে ফেলে, ছিন্নভিন্ন করে ফেলে-আজো আমার ভেতর পদ্মার বুকভাঙা ঢেউয়ের মতো এক প্রশ্ন, মা তুমি সেদিন অমন করে কেন কেঁদেছিলে? কোন বেদনা তোমাকে বিদ্ধ করেছিল? কোন কষ্ট ও যন্ত্রণা বিষাক্ত তীরের মতো তোমাকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল?-তোমার সেই কান্নাভরা মুখ সমুদ্র সমুদ্র কষ্ট হয়ে এখনো আমার বুকে আছড়ে পড়ে।জানি এই প্রশ্নের উত্তর জানা হবে না কোনোদিন আমার।কিন্তু এই প্রশ্ন যে ক্রমশ আমার ভেতর আকাশ সমান-নেভে না যন্ত্রণার আগুন।
আমাদের সেই সাদাসিধে বাড়িটা এখন পুরোটাই প্রায় বদলে গেছে। এই সাদাসিধে বাড়িতে তুমি একদিন একবারই শুধু চেয়েছিলে, ‘আমি যেন ম্যাট্রিকটা পাশ করি’।তোমার এই কথাশুনে ছোট্ট সেই আমি খুব হেসেছিলাম।জানতাম মা, কেন তুমি এই সামান্যকে অসামান্য করে চেয়েছিলে।পড়ালেখার চেয়ে খেলাধুলা পাগল আমি। তারপর অগ্রজের অকৃতকার্যতা। তুমি খুব মন খারাপ করেছিলে।কষ্টে তোমার বুকটা নদীর পাড় ভেঙে পড়ার মতো ভেঙে পড়েছিল।আমি তো তোমাকে কথা দিয়েছিলাম মা, ‘আমি শুধু পাশই না ফার্স্ট ডিভিশন পাবো। লেটার পাবো।’ তুমি খুব মন খারাপ করে বলেছিলে, ‘ওসব বুঝিনি বাপ, আমি শুধু চাই, তুই ম্যাট্টিকটা পাশ কর।’ আমি আর কথা বাড়াই নি তোমার সাথে।আমি তো কতোগুলো লেটার মার্ক নিয়ে ফার্স্ট ডিভিশনে ম্যাট্ট্রিক পাশ করলাম।তুমি তো তার আগেই চলে গেলে নক্ষত্র হয়ে আকাশের গায়ে।মা, আমি তো কথা রেখেছি। তুমি তো কথা রাখোনি। এভাবে তো তোমার যাবার কথা ছিল না।ভয়ঙ্কর এক কঠিন জীবনের ভেতর আমাকে ফেলে হারিয়ে গেলে তুমি।বাড়িতে পা দিতেই এখনো মনে হয়, মা, আমি তো ম্যাট্টিক পাশ করেছি।তুমি তো এগিয়ে এসে দুহাত বাড়িয়ে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আনন্দঅশ্রুতে চোখ ছলছল করে আমার দিকে তাকাও না।আমার কপালে তো তোমার স্নেহের চুমুর দাগ পড়ে না।মা, তুমি তো জানো না, আমি কতোদিন কতো অনাহারে পুড়ে, কতো কষ্টের সিঁড়ি ভেঙে- অবজ্ঞা অবহেলার বিষকে সূধা মনে করে পান করে করে আমি আমাকে গড়েছি, শুধু তোমার জন্য।শুধু ম্যাট্টিক নয় মা, সব ডিগ্রিই তো আমি নিয়েছি তোমার জন্য-তোমার মুখ ঈশ্বরের আলোর মতো উজ্জ্বল হবে বলে।এ তো আমার জিদ ছিল মা, সর্বোচ্চ ডিগ্রিটা আমি নেবোই নেবো এবং এটা তোমাকেই দেবো বলে।বাড়িতে পা ফেলতেই মা তোমাকে খুব মনে পড়ে। বাড়িটা খুব শ্মশান লাগে।আগুনটা জ্বলে ওঠে আমার বুকের ভেতর। কেউ দেখে না সেই আগুন, সে আগুনের কোনো রঙ নেই, কোনো রঙ থাকে না।
তোমার সাদাসিধে সেই বাড়িতে উৎসবের কতো রঙ এখন।সেই উৎসবের ভেতর নীরবে নিভৃতে আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি নিরন্তর।এক বিবর্ণ বাতাসে জেগে থাকি, উৎসব আমাকে ছোঁয় না।তবুও সমুদ্রের উপরের নান্দনিক ঢেউয়ের মতো আনন্দের এক ছবি করে নিজেকে সবার সামনে টানিয়ে রখি।আর জবাফুলের গাছটা দেখি, সত্যি মা জবাফুলের গাছটা অনেক বড় হয়েছে-তার ডালপালা থেকে নতুন নতুন গাছ হয়েছে-পুরো বাড়িটাই তো জবাফুলে ছেয়ে আছে। মা, তোমাকে আমি একটুও ভুলিনি, একটি নিঃশ্বাসও না।
আমি বারবার ফিরে আসি কয়া গ্রামে-আমার বাড়িতে মাকে পাবো বলে।আমার গ্রামের ধূলিবালি-লতাপাতা-পথের আঁকাবাঁকা রেখা—গড়াই নদী-পাখিদের গান-ফুলের শোভা ও ঘ্রাণ-আমার মায়ের অবিকল মুখ হয়ে ওঠে; বলে-এই তো আমি তোর মা।আমি আনন্দে-আবেগে ঝড়োকান্নায় কয়া গ্রামকে বুকে জড়িয়ে ধরি-শত তৃষ্ণায় ডেকে উঠি, মা-মা আমার।