ভাদ্র মাসের একটি দুপুরের মধ্যভাগে, মেঘ জমা আকাশ বেয়ে ঝুমঝুম শব্দে বৃষ্টি নামলে কণক সহসা বিপাকে পড়ে যায়। কণক তখন কলেজ থেকে বাড়ির পথে ফিরছিল। বাড়ি পৌঁছাতে হয়ত সর্বোচ্চ আর পাঁচ মিনিট সময় লাগত। কিন্তু এর আগেই বৃষ্টিতে গায়ের সিল্কের সালোয়ারকামিজটা ভিজে চপচপা হয়ে যায় তার। কোনো উপায় না পেয়ে সে একটি বন্ধ দোকানের সামনে, বাঁশের দুপায়া বেঞ্চে বসে। সেখানে বড় টিনের ছাউনির কারণে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগতে অতিসহজেই বাধাগ্রস্ত হয়। এমনিতে কণক বৃষ্টিপ্রেমী, বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দ তার ভালো লাগে সেই বালিকা বেলা থেকে; সুতরাং এই বৃষ্টিস্নাত মুহূর্তটুকু সে উপভোগ করতে থাকে। রাস্তায় তেমন কোনো মানুষজনের চলাচল নেই এখন। যা ছিল, বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই কণকও কিছুটা শরীর ছড়িয়ে বসে সেখানে। কণক জানে, একান্ত নিজের ঘর ছাড়া আর সবখানে মেয়েদের সংযমী হয়ে থাকতে হয়। সংযমী মানে শরীরটাকে জড়োসড়ো করে রাখা। বুকে মাথায় ওড়না ঠিকঠাক রাখা। সে জামা ওড়না ঠিক রেখে সামান্য হাত পা খুলে বসে। এর মধ্যে সে দেখে, একজন পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের মাঝামাঝি-বয়েসী লোক ভর বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে এসে কণক দাঁড়িয়ে থাকা সেই বন্ধ দোকানটির নিচে দাঁড়ায়। লোকটা হয়ত কোনো সরকারি অফিসে চাকরি করে; তার গায়ের হাফ শার্ট, পরনে কালো প্যান্ট আর বোগলদাবা করা অফিসিয়াল ব্যাগ দেখে তাই-ই মনে হয় কণকের। লোকটা কণকের এক দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার বয়স একটা বিশ্বস্ত বয়সের স্তরে পৌঁছে গেছে বলে কণক নিজের শরীরের দিকে অতটা ভ্রূক্ষেপ করে না; যেমনটা কোনো রগরগা যুবক সামনে এলে করে। সে আগের মতোই হাত পা না গুটিয়ে বসে থাকে।
মাঝেমাঝে আকাশে হরিণের শিং আকৃতির মতো বড় বড় দাগ কেটে আকাশ ফুড়ে বিদ্যুৎ চমকায়। তারপর আবার গুম গুম শব্দে কিছুক্ষণ মেঘ গর্জন করে ওঠে। তাতে কণকের শরীরের ভেতরে একটু শীত শীত অনুভূত হলে সে ছাউনির আরেকটু ভেতরে ঢুকতে যায়। তখন সেই আশ্রয় নেওয়া লোকটিকে দেখে সে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে কণকের বুকের দিকে। কণক কেঁপে ওঠে। মাথা মৃদু ব্যাথা করে ওঠে তার। সে আরেকদিকে মুখ করে দাঁড়ায় সঙ্গে সঙ্গে। মুহূর্তে বুকের ওজন অনেক ভারী ভারী লাগে, কণকের নিজের কাছে। যেন একটা চিকন সুঁই ওই লোকটার চোখ থেকে এসে কণকের বুকের দু’দলা মাংসে কাথা সেলাইয়ের মতো ফোঁড় কাটতে থাকে বারবার। কণক শিরায় শিরায় অস্থির হয়ে ওঠে ক্রমশ। পা দুটো আর স্থির থাকতে পারে না সেখানে।
তারপর একসময় বৃষ্টি কমে আসে। আশ্রয় নেওয়া লোকটি বৃষ্টি থামতে না থামতেই বেরিয়ে পড়ে। কণকও ধীরে ধীরে বেরোয় বাড়ির পথে। বাড়ি ফেরে ভেজা জামা-কাপড় নিয়ে। ফাঁকা বাড়ি। তার বাবা বাড়িতে কি না জানতে হলে বাবার ঘর পর্যন্ত যেতে হবে কণককে। নয়তো এই বৃষ্টির মধ্যে নিশ্চিত কোনো চায়ের টঙে আটকা পড়েছে। কণকের বাবা মঞ্জুর আহমেদ রিটায়ার্ড হওয়ার পরে বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে চা-পান খেতে খেতেই অবসরযাপন করেন। তার বয়স এখন ষাটোর্ধ। কণকের মা মারা গেছেন সেই চার বছর আগে। হৃদরোগে ভুগে। পরিবার থেকে এই মানুষটির চলে যাওয়ায় কণক ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ায়। মেয়ের বাবা উদাস ঘোরেন চায়ের টঙে-টঙে। এই বাবা-মেয়ের একত্রে দেখা হয় সারাদিন পর, রাতে খাবার টেবিলে। দুজন সারাদিন যে যেখানেই থাকুক না কেন, রাতে তারা এক টেবিলেই খেতে দেখা যাবে-এটা একটি শৃঙ্খল-নীতি হয়ে গেছে।
কণক ভেজা শরীরে বাবার ঘরের দিকে না গিয়ে জামা-কাপড় বদলানোর জন্য গোসলখানায় ঢোকে। সিল্কের জামা-পায়জামা ভিজে গায়ে লেগে আছে। খোলার আগে একটু সময় নিয়ে সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পূর্ণ অবয়বটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। মনে পড়ে যায় আবার-বৃষ্টিতে আশ্রয় নেওয়া লোকটার তাকিয়ে থাকার ভঙ্গিটা। কণক মেলাতে পারে না। না তো। তার চোখের ভঙ্গিতে কোনো লাম্পট্যের ছাপ ছিল না, তার চোখ থেকে কোমলতার বাতাস বেরোচ্ছিল কি, হ্যাঁ। আর লাম্পট্য না-থাকারই তো কথা, তার বয়সটা চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই। তখন শরীর নিঙ্ড়ে বেরিয়ে যায় লাম্পট্যের রস। তবে কোন ভঙ্গিতে সে তাকিয়েছিল কণকের বুকের দিকে? সে কি কণকের বুকে মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছিল? হয়ত সে এমন উন্নত, পরিপুষ্ট বুক দেখে তার মায়াজালে আটকা না পড়ে পারছিল না। কণক এসব ভেবে আবারও তাকায় নিজের উঁচু বুকে, সটান জামার পরে যেন দুটি মাংসের পাহাড় গড়ে উঠেছে। সে এবার নিজের চোখে দেখে না; ওই লোকটির চোখ এনে সেটে দেয় স্বীয় চোখের স্থানে। বুক থেকে দৃষ্টি নামায় আরও নিচের দিকে, আরও নিচে। শরীরে স্পন্দন ওঠে তার। ভাবতে থাকে, সেই কবে তার শরীরে হাত পড়েছিল একজন বৈধ পুরুষের। মাত্র একবারই। তারপর অব্যবহৃত পুকুরের মতো ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায় একটা মেয়েলি শরীর। ভাবতে ভাবতে ঘন আর বড় বড় শ্বাস নেয় সে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে করে তার ভাবনা যেন কোনো অলিগলিতে ঢুকে পড়ে ধীরে-ধীরে। কোনো স্মৃতিপথে। ভাঙ্গা-ভাঙ্গা স্মৃতিপট সেসব।
আহা! কত মধুর ছিল সেসব দিনগুলো। কণকের বিয়ে হয়েছিল তার বাবার ঠিক করে রাখা একটা ছেলের সঙ্গে। তখন কণকের মা বেঁচে ছিলেন। আনন্দ বেদনার সংমিশ্রণে তারা বিয়ে দিয়েছিল একটি মাত্র মেয়েকে। কণকের মনে আছে, বিয়ের দিন চলে যাওয়ার সময় নতুন জামাইয়ের হাত ধরে কতো কেঁদে কেঁদে বলেছিল তার বাবামা—মেয়েটাকে কষ্ট দিও না, আমাদের অনেক আদরের মেয়েকে তোমাদের হাতে তুলে দিলাম, বাবা। জামাইটা শুধু রুমালে মুখ ঢেকে গজগজ করে বলছিল—ঠিকাছে, ঠিকাছে। আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আমার ওপর ভরসা রাখেন। সেদিন কণক বিদায় হওয়ার সময় আশেপাশে জড়ো হওয়া কত মানুষের মন ভার হয়ে গিয়েছিল। সবার চোখের লাল কোণে পানি জমেছিল। অথচ কণক পরে খেয়াল করে দেখলো, তার চোখ থেকে একফোঁটা পানিও সেদিন বের হয়নি। তবে সে একটুও অবাক হয়নি এতে। কারণ কণক আগাগোড়াই এমন কঠিন কঠিন মুহূর্তে না কাঁদা মেয়ে। তারপর দিনে দিনে সংসারী হয়ে উঠতে থাকে। আর কণকের বাবা-মা মেয়েহীন এক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। কিন্তু কী হয়েছিল সেদিন? নদীর স্রোত নির্মলভাবে চলতে চলতে শান্ত নদীতে হঠাৎই থমকে দাঁড়ালে তীব্র ঢেউয়ের ধাক্কা যেমন তীরের মাটিগুলোর চোখ মোটা করে দেয়, তেমনি কাচা রোদওঠা একটি সকালে কণককে সংকুচিত মুখে দুটি বড় ব্যাগসমেত বাড়ির পথে ফিরতে দেখলে কণকের বাবা মা ভেতরে ভেতরে বিস্ফারিত হয়ে ওঠেন। তাদের উদ্বেগ বেড়ে গিয়ে একঝাঁক বিমর্ষ প্রশ্নের কাছে পৌঁছে দেয় কণককে। সে কেন ফিরে এলো পতিগৃহ থেকে? এটা যে কোনো শুভলক্ষণ নয়, তা কণকের বাবা-মা ভালোভাবেই জানেন। তারা খুব ঔৎসুক্য এবং অস্থিরতা নিয়ে তাদের মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে—
এভাবে চলে এলি কেন রে মা?
কণক মুখ বুজে থাকে। প্রথমদিকে তেমন কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর তুলে না দিয়ে একটি সান্ত্বনাসূচক কথা দিয়ে তদের চুপ করিয়ে রাখে সে। বলে—
জামাইয়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। সে আমার কাছে এসে নত না হলে আমি যাব না তার কাছে। সে আমার সঙ্গে অপরাধ করেছে।
কণকের এমন ছেলেমানুষি কথায় তারাও মনে মনে ছেলেমানুষি হাসি হাসে। তারা ভাবে-এটা অভিমানজনিত একটা অধ্যায়। গণিত বইয়ের ভেতরে যেমন বীজগণিত একটা অপরিহার্য অধ্যায় হয়ে শুয়ে থাকে পাতার ভেতর; তেমনি অভিমান জিনিসটাও বিস্তৃতভাবে জড়িয়ে থাকে যুগলজীবনে। তারা সীমিত অপেক্ষা নিয়ে কণকের দিকে চেয়ে থাকে কিছুদিন। এদিকে সেই নতুন জামাইও আর শ্বশুরবাড়ি-মুখো হওয়ার আর সম্ভাবনা দেখা দেয় না। এভাবে জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ি আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়া, কণকের মতো একজন বিবাহিতা মেয়ের নিশ্চিন্ত ঘোরাফেরা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা এবং এইসব কাহিনি যখন তাদের কারও মনে কোনো রূপ উদ্রেক সৃষ্টি করা ছাড়াই তা নিজস্ব অবস্থায় চলতে শুরু করে; তখন তাদের সরল বাবামা’র কপালে গ্রীষ্মের উঠোন চেরার মতোই আরেকটি দুশ্চিন্তার দাগ কেটে ওঠে। আর তাদের এও বুঝতে বাকি থাকে না যে, তাদের মেয়ে পুরোপুরিই পতিগৃহ ত্যাগ করার কু-ইচ্ছা পুষে রাখছে মনের ভেতরে। তারা আশঙ্কার আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েকে বোঝাতে থাকে, একবার বাবা, একবার মা। পতিগৃহ ছেড়ে আসার কুফল ও একটি জীবন যেভাবে অন্ধকার হয়ে যায়-তার নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে তারা বোঝাতে চায় মেয়েকে। কখনো আবার আশপাশের মুরব্বি ধাঁচের মহিলারাও বুঝিয়ে বলে-মা, যা যা। স্বামী ছাড়তে নেই। দেখনা আমাদের তো এই কতকালে সংসারে কত ঝড়ঝাপটা গেল। আজও দেখ্, আমরা তো একসঙ্গেই আছি।
কিন্তু দিনে দিনে কণকদের বাড়ির আকাশ বদলাতে লাগে, লাল থেকে কালো হয়। আবার কালো থেকে ক্ষয়েরি। কখনো কখনো আবার গাড় হলুদ রং ধারণ করে সেই আকাশের। কণক ধীরে ধীরে মুখ ফোটায়, এবং ভেতরে ভেতরে সবার সম্মুখেই একটি কথা বলার সাহস তৈরি করে ফেললে, সেই উত্তেজনা আর চেপে রাখতে পারে না সে। দুরন্ত বাইন মাছ হাত থেকে ফসকে, পুকুরে লাফ দেওয়ার মতোই কথাটি কণকের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় একদিন।
আমি আর কোনোদিনও ওই সংসারে যাব না। কোনো পুরুষের কাছে আমার জীবনখান নষ্ট করব না।
কণকের মুখে এমন কথা শোনার পরে পড়শীরা সবাই ছিঃ ছিঃ করতে করতে ঘৃণাযুক্ত চোখে তাকাতে শুরু করে তার দিকে, তার মা জ্ঞান হারানোর মতো পরিস্থিতিতে বার কয়েক পড়েও বেঁচে ওঠেন শেষপর্যন্ত। বাতাসে-বাতাসে ফিসফিসানি ছড়িয়ে পড়ে-আরে মঞ্জুর সাবের মেয়েটা কি বর্ণচোরা রে! স্বামী বর্জন করে আসা কি ভালো মেয়ের কাজ? একজন স্বামীবিবর্জিতা নারীর প্রতি সমাজে এত স্পষ্ট ঘৃণা স্বচক্ষে দেখলেও সেই ঘৃণার রেশ মন পর্যন্ত ছোঁয় না কণকের। সে চালকহীন গাড়ির মতো নিজের গতিতে চলতে থাকে দিনের পরে দিন। তারপর মনপোড়া আবহাওয়ার মধ্যে একদিন কণকের বাবা মুখ গম্ভীর করে বাড়ি ফেরেন। কণকের মা তখন হার্টঅ্যাটাকে বিছানায় পড়া। এসে কণককে বলে—
একটা কথা ছিল মা!
এতটুকু বলে তালাকের কাগজটি মেয়ের হাতে ধরিয়ে দেন মঞ্জুর আহমেদ। জামাই তালাক দিয়ে দিয়েছে মা তোকে। কথাটুকু বলেই সে ডুকরে কেঁদে ওঠে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। কণক পাথরের মতো মুখ করে বাবার কান্না দেখে। কী করবে ভেবে পায় না সে। তারপরও বলে ওঠে-
বাবা! তুমি কাঁদছ কেনৱ? চুপ করো তো, কিচ্ছু হয়নি এটা। মঞ্জুর আহমেদ চোখ মুছতে মুছতে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে মেয়ের দিকে। যেই দৃষ্টিতে লেগে থাকে একজন বাবার মমতা মাখানো চোখ, আর ঝাক ঝাক অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। কণক কি তা বুঝবে কোনোকালেও? সে বাবার কাছ থেকে এসে নিজের ঘরে জানালা খুলে দাঁড়ায়। রাগে তার হাত-পা কাঁপে। অস্থিরতা বয়ে যায় পুরো শরীরে। ক্রমেক্রমে নিজের বর্জিত স্বামীর থেকে তালাক পাওয়ার ক্ষোভ আর অপমানের আড়ালে থাকা ঘৃণার মাত্রা বেড়ে গেলে, গলার ভেতর থেকে একদলা থুথু এনে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে। তখন সেই থুথুটুকু যেন ভেতরে একটা প্রাণ সঞ্চার করেই অধঃমুখী হয়ে জমিনে পড়তে থাকে।
এ তো সেই অনেকদিন আগের কথা, পড়শীরা হয়ত সেসব ভুলতে বসেছে এতদিনে। অথচ সেই কণক এখনো সবার সামনে দিয়ে বসবাস করে যায় বাপের বাড়িতে, কলেজ করে যায় নিয়মিত। কিন্তু মধ্য থেকে একটা নিঃসঙ্গতার দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে জীবনে। মাঝে মাঝে একলা হলে খুব মনে পড়ে মায়ের কথা, মৃত্যুর আগের কয়েকদিনের কথা; যখন সে শুধু মায়ের শিয়রেই বসে থাকত সারাক্ষণ। কখনো কখনো বালিকাবেলার স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে মায়ের ছবির সঙ্গে। আহা। কণক এমন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লে, তখন চুপচাপ মুখে গাম্ভীর্য এনে বসে থাকে দোতলার বড় জানালার পাশে। দেখে খোলা আকাশে বিষণ্ন পাখিদের, তাদের ওড়া দেখে উচ্ছসিত হয়—হয়ত পাখিরাও একাকিনী কণককে দেখে নিজেদের দুঃখ প্রশমিত করার চেষ্টা করে কখনো।
গত দুদিন ধরে, কণক একটানা বসে থাকছে শহরের একটি হাসপাতালে। বাবার অক্সিজেন চলছে। হয়ত এমন দৃশ্যটা তৈরিই হয় পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আভাস হিসেবেই। কণকের মন এতদিনে কেমন যেন স্টিলের থালা হয়ে গেছে, বাবার শোকে শোকে।
অনেকদিন পর আজ নরম বিকালের আলোতে, কণক হাসপাতালের পঞ্চমতলায় বসে জানালা দিয়ে পুরো শহরের ওপরে তাকিয়ে দেখে। তখন কেন যেন একটা বিমর্ষতা ছুঁয়ে যায় তাকে। কণক খেয়াল করে দেখে, বহুদিন পর তার চোখ থেকে পানি ঝরছে। সে খুব আশ্চর্য হয়ে ছুঁতে যায় চোখের পানি; অথচ কি অদ্ভুত! সেই পানি ছোঁয়া যাচ্ছে না। সেই পানি নিচে না গড়িয়ে বরং বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ওপরের দিকে উড়ে যাচ্ছে। কণক জানালার গ্রিল ধরেই তা দেখতে থাকে।
মন্তব্য