-কাউকে খুঁজছেন?
-জি , এখানে একটা ওষুধের দোকান ছিল।
-সে তো কবেই উঠে গেছে!
-লাগোয়া একটা বটগাছ ছিল।
-কেটে ফেলা হয়েছে।
-কোণের দিকটায় গোবিন্দ কাকুরা থাকতেন।
-চলে গেছেন।
-কাকুর বাড়ির পেছনেই রথখোলা বাজার ছিল।
-পুড়ে গেছে।
-ওহ। কী করে পুড়লো?
-বাদ দিন। সে অনেক কথা। কেন এসেছেন তা তো বললেন না।
-আমি, মানে আমরা তিন জন, মূলত একটা গ্রুপওয়ার্কে বেরিয়েছি। ওরা আমার বন্ধু। একজন ডকুমেন্টরি বানান, একজন চিত্রশিল্পী আর আমি টুকটাক লিখি। এই স্মরণখোলা গ্রামেই কেটেছে আমার শৈশব ও কৈশোর। সত্য ঘটনা অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধের একটা তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে চাই। সেই যে ছোটবেলায় দেশ ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলাম, আর ফেরা হয়নি। তাই বলতে পারেন রথ দেখা, কলা বেচার মতো নিজের গ্রাম দেখা হলো, তথ্যচিত্রটাও তৈরি হলো। এই চিন্তা থেকেই দাদাজানের অর্থাৎ নিজের গ্রামটাকেই বেছে নিলাম। কিন্তু এসে তো মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
-ওহ! আপনি তবে এই গ্রামেরই মেয়ে? আচ্ছা আপনার দাদাজান, কী নাম বলুন তো?
-আলহাজ আযম মোল্লা।
-কী কী নাম বল্লেন?
-জি, আলহাজ আযম মোল্লা। নামটা শুনে এভাবে চমকে উঠলেন? চেনেন বুঝি? অবশ্য দেশ স্বাধীনের বেশ কিছু বছর পর দীর্ঘদিন এই গ্রামের চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে অনেকেই তাকে চেনেন। দাদাজানের মৃত্যুর পর বাবা কেন-যেন আমাদের নিয়ে সেই যে দেশ ছাড়লেনম আর ফিরলেন না।
নির্বাক জব্বার মাস্টার অপলক তাকিয়ে দেখেছেন, তার সন্তানের পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য, শুনেছেন বাবা বাঁচাও, বাবাগো বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার আর ছোট্ট বকুলের বিস্ময়ভরা চোখ। তবু একটি শব্দ বের হয়নি তার মুখ থেকে।
-হুম। চিনি। না চেনার কোনো সুযোগ যে নেই। তাকে না চেনা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, অন্তত আমার জন্যে। তা এতদূর, এত আয়োজন করে এসে শুধু ওষুধের দোকান, বুড়ো বটগাছ, গোবিন্দ কাকা আর বাজারের কথা শুনেই মন খারাপ করে চলে যাবেন? আরও কত হারিয়ে যাওয়ার গল্প বাকি, ফুরিয়ে যাওয়ার গল্প বাকি, সেগুলো শুনবেন না?
-এরপরও মন খারাপ করবো না বলছেন? মন কি বাড়ির কিশোরী বউ? যা শোনাবেন তাই ঘাড় কাৎ করে শুনে যাবে।
-কিশোরী বউ। উফ! অসহ্য আপনি। কেন মনে করালেন?
-কী হলো? কী মনে করালাম আবার?
-ওষুধের দোকানের মালিক হরেন দাসের কিশোরী বউয়ের গল্পটা নিশ্চয়ই শোনেননি।
-হরেন দাস। নামটা চেনা চেনা লাগছে। ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। বাবারই তো বাল্য বন্ধু ছিলেন। বাবার অ্যালবামে হরেন কাকু আর বাবার একটা ছবি আছে বাজারের সেই ফার্মেসিটার সামনে। আহা কী সুন্দর নাম ছিল দোকানটার, ‘বিউটি ফার্মেসি।’ একটা শক্ত হার্ড বোর্ডের ওপরে সাদা কাগজ লাগিয়ে বানানো সাইনবোর্ড। তাতে দোয়াতের কালিতে আঙুল ডুবিয়ে মোটামোটা করে ‘বিউটি ফার্মেমি’ লেখা। কিছু কালি অক্ষর থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে আসাতে এক অনন্য শিল্পরূপ পেয়েছিল সাইনবোর্ডটা। বাবার পুরনো অ্যালবামে ছবিটা দেখে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম জানেন?
-হ্যাঁ। সেই বিউটিকে যেদিন হরেন দাসের সামনেই ছিঁড়েখুঁড়ে খেলো হায়েনার দল, সেও এক অন্যরকম শিল্পরূপ ছিল বটে। উঠোনের এক কোণে হরেন দাসের সেই অসহায়, ফ্যাকাসে, বিবর্ণ চেহারা আর এক কোণে খুবলে খাওয়া বিউটির রক্তাক্ত নগ্ন দেহ। একটু দূরেই হাসনাহেনা গাছের নিচে পড়ে থাকা বিউটির কমলা ডোরা শাড়ি আর হলুদ রঙা ব্লাউজ। বিউটির শরীরজুড়ে বেয়নেটের খোঁচায় জমাটবাঁধা রক্তের দাগগুলো চাঁদের আলোয় রক্তজবার মতো ফুটেছিল। সবাই বলে ওরা চলে যাওয়ার পর নাকি হরেন দাস এসব সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। মিথ্যে, সব মিথ্যে। শান্তি কমিটির সভাপতির নির্দেশে হরেন দাসকে সেদিন জীবন্ত ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতসব নিপুণ মডেল আর সাবজেক্ট সারা উঠোনজুড়ে ছড়িয়েছিল যে, আপনাদের আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এত দারুন শিল্পরূপ ক্যানভাসবন্দি করার ক্ষমতা ভ্যানগগ, ভিঞ্চি, দালি বা অ্যাঞ্জেলো কারোই হতো না, হবেও না কোনোদিন।
-ওহ! কী নির্মমতা! কী ভয়ঙ্কর-নিষ্ঠুরতা! কী নাম ছিল শান্তিকমিটির সেই হায়েনাটার?
-হা হা হা। কী করবেন নাম জেনে? তারাই তো রাজত্ব করে যাচ্ছে এই অবধি। কখনো সভাপতির রূপে কখনো বা চেয়ারম্যানের রূপে। তাদের নির্দেশেই তো আমাদের জন্ম-মৃত্যুর দাগ খতিয়ান তৈরি হয়। তারচেয়ে গল্পটা শুনুন। মেয়েকে হারিয়ে গোবিন্দ কাকুদের এক রাতের মধ্যেই নদী পার হয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয় তার আজন্ম আঁকড়ে থাকা ভিটেমাটি ছেড়ে। অবশ্য শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আমানত হিসেবে যাবতীয় টাকা-পয়সা, গয়নাগাটি এমনকি ঘটিবাটি পর্যন্ত রেখেছিল বলেই জীবন নিয়ে ওপারে যেতে পেরেছিল। নইলে কাকুদের অবস্থাও মেয়ে আর জামাইয়ের মতোই হতো। কী দয়া শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান সাহেবের! আহা। আর আপনারা সেইসব দয়াবানের তৈরি করা গল্পেরই পাঠক।
-কিন্তু আমি তো শুনেছি…
-জানি, দাদাজানের মুখে শুনেছেন টাকাপয়সা নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে গোবিন্দ কাকু। তাই না?
– হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। তাই তো জেনেছি। তাই তো শুনে এসেছি এতদিন। তবে কি…আচ্ছা জব্বার মাস্টারের কথা জানেন কিছু? কুসুমকানন আদর্শ বিদ্যালয়ের বাংলার মাস্টার আব্দুল জব্বার। শুনেছি একসময় বেশ ভালো গান গাইতেন। পুঁথিপাঠেও ছিলেন দারুণ পারদর্শী। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। অনেকেই তার সম্পর্কে অনেক কথা বলে। সত্যাসত্য কিছু জানি না। দাদাজানও বলতো…আচ্ছা আপনি তার কথা কিছু বলতে পারবেন?
-যাক তবু জানতে চাইলেন। তার কথা জানাবো বলেই তো বারবার ফিরে আসি। অপেক্ষায় থাকি কেউ যদি শুনতে চায় সত্যটা। জানেন, রোজ রাতে একগুচ্ছ শিমুল আর একফালি চাঁদ ব্যাগে পুরে বাড়ি ফিরতেন তিনি। শেষ বয়সে এসে ধর্মকর্মে মন দিয়েছিলেন। এক যুদ্ধে ভাষা ছিনিয়ে এনেছিলেন, কিন্তু ভাগ্যটা ছিনিয়ে আনার যুদ্ধে হেরেছেন বারংবার। আর জানেন তো, জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষের কাছে ধর্ম এক প্রলুব্ধ আশ্রয়।
-হ্যাঁ, তিনি তো শুনেছি রাজাকার আর আল-বদরের সঙ্গী হয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের সহযোগিতা করেছিলেন। উফ ভাবতেও কষ্ট হয় এমন সংস্কৃতিবান মানুষ কেমন করে এটা করতে পারলেন।
-হা হা হা। আপনার দাদাজান সত্যিই মেধাবী। গল্পকে কী করে নিজের মতো করে বানাতে হয়, তার কাছে শেখা উচিত। আর কষ্ট করবেন না। সত্যের বাতাস খুব আস্তে বয় কিনা। মিথ্যের ঘূর্ণিঝড়ের মতো এতটা শক্তিশালী নয় বলেই বোধকরি মানুষকে স্পর্শ করতে পারে না সহসা। তাই মিথ্যেটাকে সত্যি ভেবেছেন এতদিন। অবশ্য ভেবেছেন এটাই বা বলি কী করে? তোতা পাখির মতো যা শোনানো হয়েছে, তাই তো গেঁথেছেন মাথার মধ্যে। ধর্ম কী, তা বোঝার সময় আমি পাইনি। তবে এতটুকু জানি সেই নিদানকালে এই একটা মানুষই ধর্মকে যথোপযুক্ত কাজে লাগিয়েছিল। মহিমান্বিত করেছিল ধর্মের চরিত্রকে।
-মানে! কেমন হেয়ালি লাগছে। সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একটু পরিষ্কার করে বলবেন? আমরা তো শুনেছিলাম তিনি…তবে কি যা শুনেছি, সব ভুল?
-হ্যাঁ, পরিষ্কার করেই তো বলতে হবে। এত বছরের মিথ্যের জঞ্জাল সত্যের গায়ে চেপে বসে আছে শ্যাওলার মতো। পরিষ্কার না করে বললে সত্যিটা জানবেনই বা কী করে? বকুল ফুল খুব প্রিয় ছিল তার। খুব শখ করে একমাত্র সন্তানের নাম রেখেছিলেন বকুল। জব্বার মাস্টারের বাহ্যিক দাঁড়ি আর টুপি হায়েনাদের বিভ্রান্ত করতে বেশ ভালোই কাজে লেগেছিল। আর তিনিও সেই সুযোগটা বেশ কাজে লাগালেন। ওদের সাথে মিশে হয়ে গেলেন ওদেরই একজন। সমস্ত গোপন তথ্য ওদের কাছ থেকে জেনে ফাঁস করে দিতে লাগলেন মুক্তিসেনাদের কাছে। ভালোই চলছিল এভাবে। শেষটায় ধরা পড়ে গেলেন শান্তিকমিটির জানোয়ারটার কাছেই। পাকিস্তানি শুয়োরগুলোকে পরামর্শ দিলেন এমন শাস্তি দিতে, যেন সব মুক্তিযোদ্ধার কলিজা কেঁপে যায়। সেইমতে তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হলো ইটের ভাটায়।
-ইটের ভাটায়! কেন? ওখানে কেন?
-তার আদরের দশ বছরের ছেলে বকুলকে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল সেখানে। চোখ খুলে সে দেখলো তার বকুলের সারা শরীরে কেরোসিন ঢালা হচ্ছে। হাত-পা বাঁধা সেই দশ বছরের ছোট্ট বকুল বাবাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্যে ভেবেছিল, বাবা বুঝি তাকে বাঁচাতে এসেছে। বাবা, বাবা, বলে চিৎকার করে উঠেছিল সেদিনের সেই ছোট্ট বকুল। জব্বার মাস্টার চোখের সামনে দেখতে পেলো হাত-পা বাঁধা সন্তানের আশা আর আর্তি মাখা চোখ। ইটের ভাটার সেই গনগনে আগুনে বকুলকে ফেলে দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে শেষ বারের মতো তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মুক্তিবাহিনীর গোপন ঘাটির কথা৷ নির্বাক জব্বার মাস্টার অপলক তাকিয়ে দেখেছেন, তার সন্তানের পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য, শুনেছেন বাবা বাঁচাও, বাবাগো বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার আর ছোট্ট বকুলের বিস্ময়ভরা চোখ। তবু একটি শব্দ বের হয়নি তার মুখ থেকে। একটিও না। এর চেয়ে বড় গল্প বা উপন্যাসের প্লট আপনি আর কোথায় পাবেন বলুন?
বানভাসি জোছনায় যেখান থেকে বকুলের ঘ্রাণ ভেসে এসে ডুবিয়ে দেয় এই গ্রাম। বকুল ফুল আমিও বড্ড ভালোবাসি। আচ্ছা বলতে পারেন, বকুল নিজে কি নিজের ঘ্রাণ পায়? দেখতে পায় তারে?
-প্লিজ থামুন। দোহাই আপনার, থামুন। আমি আর শুনতে পারছি না। আর সইতে পারছি না। দয়া করুন আমাকে।
-না। আজ তো থামার দিন নয়৷ আজ থেমে গেলে আর কখনোই হয়তো সত্যিটা বলা হবে না। আপনাকে যে শুনতেই হবে।
-বিশ্বাস করুন আমি আর নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
-কেন? আপনার দাদাজানের এত বছরের সাজানো মিথ্যে নিতে পেরেছেন, আজ সত্যিটা নেওয়া যাচ্ছে না? কিন্তু জানতে যে হবেই আপনাকে। জব্বার মাস্টারের শেষ পরিণতিটুকু না জানলে ডকুমেন্টরিটা শেষ করবেন কী করে। তাকে নিয়ে আসা হলো রথখোলা বাজারের এই প্রাচীন বটবৃক্ষের কাছে। সবচেয়ে বুড়ো বটগাছে ঝুলিয়ে চামড়া কেটে কেটে তাতে লবণ মাখানো হলো। টানা তিন দিন, বিশ্বাস করুন টানা তিন দিন তাকে ঝুলিয়ে রেখে রোজ একটু একটু করে তাকে খুন করা হলো। অদ্ভুত কথা কী জানেন? বেঁচে থাকার সেই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা নিয়েও জব্বার মাস্টার ঠা ঠা করে হেসেছেন। তীব্র অপমানে তাকে আরও যন্ত্রণা দিয়েছে হায়েনার দল। তবু হাসতে হাসতেই বুড়ো বটের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেছেন তিনি। লাশটা অনেকদিন ঝুলে ছিল। ডকুমেন্টরি বানানোর জন্যে এরচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম, টুইস্ট আপনি আর কোথায় পাবেন? বেশ কিছুদিন পর বুড়ো বটগাছটাও কেটে ফেলা হলো। বাজার পুড়িয়ে দেওয়া হলো। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো সব সত্য ইতিহাস। সেই সত্য ইতিহাসকে মাটিচাপা দিয়ে, আযম মোল্লারা তৈরি করলো অন্য গল্প, ভিন্ন ইতিহাস।
-হা ঈশ্বর! এ নিষ্ঠুরতা কেন শুনতে এলাম। এই তীব্র সত্যি জানার আগে কেন মৃত্যু হলো না আমার? কেন বাঁচে আছি এখনো। ছুরির মতো, তীরের ফলার মতো এই সত্য রক্তাক্ত করছে আমাকে। এই শরীর ভরা তবে এক পিচাশের রক্ত! এক রাজাকারের বংশধর আমি! বলতে পারেন, কেমন করে বের করে ফেলবো এই দূষিত রক্ত? কেমন করে মুছে ফেলবো এই বিষাক্ত জন্মের ইতিহাস!
-জন্মের জন্য দায়ী তো আমরা কেউ নই। যে সত্যটা জানলেন এবার তার স্পর্শে নিজেকে বিশুদ্ধ করুন। নব প্রজন্মকে সত্যটা জানান। অন্তত কথা বলুন, চিৎকার করুন। আপনার কাজ ধমনিজুড়ে প্রবাহিত হোক লোহিত রক্তকনিকার মতো। এতেই মুক্তি মিলবে আপনার। এতেই পাওয়া যাবে মনুষ্যত্বের প্রকৃত পরিচয়। পারবেন? পারবেন সত্যিটা মিথ্যের বাড়ন্ত বাতাসের আগে ছুটিয়ে দিতে? এতটা ডানার জোর কি আছে?
-যত সংঘাতই আসুক, যত ঝড় আসুক কথা দিলাম সত্যিটা সামনে আনবোই। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবো সব মিথ্যে। কথা দিচ্ছি আপনাকে, সত্যিটা না বলা পর্যন্ত থামছি না কিছুতেই। আত্মপরিচয়ের গ্লানিতে কুঁকড়ে যাওয়ার ভয় ছুড়ে ফেলে একবার অন্তত নিজের ডানার শক্তিটা পরখ করতে দিন। জানি বিশ্বাস করতে পারছেন না। আপনার ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসি অন্তত তাই বলছে। তবু আপনার মতো করেই বলি, জন্মের দায় আমার নয়। আমার কাজটুকুই হোক আমার শেষ পরিচয়।
-বেশ। তবে তাই হোক। ভালো থাকবেন। চলি তবে।
– ডকুমেন্টরিটা তৈরি হলে জানাবো আপনাকে। আপনি দেখবেন তো?
– জানাতে হবে না। আমি ঠিক জেনে যাবো।
-আচ্ছা, এত কথা হলো, কত সত্যি জানা হলো, আপনার পরিচয়টা তো জানা হলো না। কে আপনি?
-আমি কে? সত্যিই তো, কে আমি? জানি না তো। এ প্রশ্নের উত্তর জানে জব্বার মাস্টার। এই প্রশ্নের উত্তর জানে ওই ইটের ভাটা। বানভাসি জোছনায় যেখান থেকে বকুলের ঘ্রাণ ভেসে এসে ডুবিয়ে দেয় এই গ্রাম। বকুল ফুল আমিও বড্ড ভালোবাসি। আচ্ছা বলতে পারেন, বকুল নিজে কি নিজের ঘ্রাণ পায়? দেখতে পায় তারে?