বিকট শব্দে হুইসেল বাজিয়ে পড়ন্ত বিকেলে যে ট্রেনটা জয়দেবপুর স্টেশনে এসে দাঁড়ালো তার নাম বলাকা। পুরোপুরি লোকাল না হলেও আশিভাগ লোকাল এ ট্রেনটা মানুষের জন্য যে কতটা আরাধ্য তা যাত্রীদের ছোটাছুটি না দেখলে কেউ ধারণাও করতে পারবে না। ট্রেনে যাত্রী হিসেবে আমি নতুন। ট্রেন আসামাত্র চট জলদি টুপ করে উঠে সুবিধামতো তুলনামূলক ফাঁকা যায়গায় দাঁড়িয়ে যাওয়াটা এখনো পুরোপুরি আয়ত্ব করতে পারি নি। শুধু তাই নয় মাঝে মাঝে ভিড় ঠেলে ট্রেনের দরজা অবধিই পৌঁছতে পারি না। তার আগেই বিকট শব্দে সেই ঐতিহ্যবাহী হুইসেল বাজিয়ে বলাকা উড়াল দিয়ে চলে যায়।
আজকেও এর ব্যতিক্রম হলো না। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। বলাকা আমার চোখের সামন দিয়ে রঙ্গ করে চলে গেলো। অতপর পরাজিত সৈনিকের মতো বুক ভাঙা কষ্ট নিয়ে শ্রান্ত ক্লান্ত দেহে একটা পরিত্যক্ত কাঠের গুঁড়ির উপরে বসে পড়লাম। পাশের টি স্টল থেকে পুদিনা পাতার চা নিয়ে পরবর্তী ট্রেনের জন্য মিনিট গুনতে থাকলাম। বিরক্তিকর সময় যেনো কিছুতেই কাটছে না! ঠিক সেই মুহূর্তেই হন্তদন্ত হয়ে সে এলো। এসেই কোনরকম ভদ্রতার বালাই ছাড়াই জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা নেক্সট ট্রেন কখন জানো?’
আমি গরুর মতো বড় বড় চোখ করে তাকালাম- ‘এক্সিকিউজ মি! আমাকে কিছু বললেন?’
‘নাহ!তোমাকে কেনো বলবো? গাছের গুড়িটাকে বলেছি।’ বলে মুখ বাঁকা করে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকলো সে।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, ‘আপনাকে না ঠিক বুঝতে পারছি না। কি বলছেন?’
সে এবার হাসলো। হাসি হাসি মুখে বললো, ‘তা তো পারবেই না। এতোদিন যখন পারো নি…আজ হঠাৎ কেনো পারবে?’
তার এমন অভিযোগে হকচকিয়ে গেলাম। বললাম, ‘ভটভট করে কি এসব উদ্ভট কথা বলছেন?’
আমাকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে দিয়ে সে বললো, ‘প্রিয়তমেষু আবীর, আর কতকাল তুমি আতেল থাকবা?’
আমি এবার সত্যি সত্যি নড়েচড়ে বসলাম। ক্লাস সেভেনে যখন দিনাজপুর ছেড়েছিলাম তারপর প্রায় একযুগ কেটে গেছে। এ দীর্ঘ সময়ে এ সম্বোধনে কেউ কখনো আমাকে ডাকেনি। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমারো একটা ডাকনাম আছে। মেয়েটার মুখের প্রিয়তমেষু আবীর ডাকটা কানে নয়, সরাসরি হৃৎপিণ্ডে গিয়ে খট করে বিঁধলো। ধকধক বুকে ফ্যাসফ্যাস গলায় বললাম, ‘কে আপনি?’
তার দেবীর মতো গোলমুখখানায় তাচ্ছিল্যের আভা খেলে গেলো। ‘আমি জানতাম তুমি আমায় চিনবে না! আমি রিমি। ব্লুবার্ড স্কুলের রিমি! মনে পড়েছে?’
গায়ে চিমটি কাটলাম। নিজের চিমটির ব্যাথায় নিজেই অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে উঠলাম। তারপর বড় একটা ঢোক গিলে তেরো বছর আগের দিনাজপুরে ফিরে গেলাম। স্কুলে হেডমিস্ট্রেজের রুমে মিটিং বসেছে। জরুরি মিটিং। মূল এজেন্ডা ক্লাস সেভেনের এক ইঁচড়েপাকা মেয়েকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট প্রদান। তার অপরাধ সে সুবোধ ও সেইসাথে অবুঝ একটি ছেলেকে প্রেমপত্র লিখে স্কুলের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে। অভিযোগকারিণী স্বয়ং আমার মা। সেই অবুঝ ছেলেটি আমি নিজেই। মার গলা অভিযোগের ভাঁড়ে কেঁপে উঠলো, ‘চিন্তা করতে পারেন ম্যাডাম! এতটুকুন একটা মেয়ে কিনা প্রেমপত্র লেখে! অকালপক্ক মেয়ে! এমন মেয়েকে স্কুলে থাকলে আমি কিছুতেই আমার ছেলেকে স্কুলে পাঠাবো না। আমি ম্যাডাম এক কথার মানুষ!’ মার কথায় সহমত আঙ্কেল আন্টিগণ গলা মিলিয়ে সায় দিলেন। মামা ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার হওয়াতে এই স্কুলে মাকে সবাই একটু তোয়াজ করে চলে। খুব বড় ধরণের সমস্যা না হলে কেউ সাধারণত মার কথার সাথে দ্বিমত করেন না। এখানেও তাই হলো। মার মতো সবার এক কথা। মেয়েটাকে টিসি দেয়া হোক। রিমির বাবা শুধু হাসলেন। কিছু বললেন না। হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন আজমল স্যার।
নিরুপায় হয়ে পাঁচিল টপকানোর চেষ্টা করলাম। এত উঁচু পাঁচিল যে নাগালই পেলাম না। পাঁচিলের ওপাশে বিয়ে হয়ে গেলো রিমির। নব দম্পতির জন্য দীর্ঘ দোয়া হলো। আমিও হাত উঠালাম। ভালো থাকুক রিমি।
উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘আপনাদের মাথা ঠিক আছে? আপনারা কেমন অভিভাবক?একটা বাচ্চা মেয়েকে এমনি এমনি টিসি দিয়ে দেবেন?মগের মুলুক পেয়েছেন? এমন কিছু হলে সত্যি সত্যি আমি ইস্তফা দিয়ে চলে যাবো!’ আজমল স্যারের এমন রিয়্যাকশনে সবাই হতভম্ভ হয়ে গেলেন। স্যার থামলেন না। মার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললেন, ‘আপনার মতো অভিভাবকরাই স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করছেন। যদি খুব বেশি অসুবিধে হয়, ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। রাস্তা খোলা আছে।’ বলেই স্যার কোনদিকে না তাকিয়ে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রিমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলো। সেও ঘটনার আকস্মিকতায় কান্না ভুলে ফ্যাল ফ্যাল করে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
শেষমেশ রিমিকে আর টিসি দেয়া হলো না। রিমিকে মুচলেকা দিতে হলো, সে আর জীবনেও আমার আশেপাশে আসবে না, কথা বলা দূরে থাক। তবে বিচারে মা খুশি হতে পারলেন না! বিচারের রায় ছেপে তার কাছে বড় হয়ে উঠলো আজমল স্যারের করা অপমান! মা স্কুল চেঞ্জ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেলেন। পরের মাসেই আমি আর মা দিনাজপুর ছেড়ে ঢাকায় চলে এলাম। বাবা ট্রান্সফার না হওয়া পর্যন্ত থেকে গেলেন দিনাজপুরেই। এই রিমি কি সেই রিমি?
রিমিকে ফেসবুকে বহুবার খুঁজেছি। পাই নি। এতো এতো রিমি আর এতো এতো লকড প্রফাইলের ভিড়ে আসল রিমিকে পাবো কীভাবে বলেন? সন্দেহভাজন কয়েকজনকে হাই হ্যালো লিখে টেক্সটও করেছিলাম। রিপ্লাই দিয়েছিলো অনেকেই। একজনের সাথে তো আসল রিমি ভেবে আলাপ অনেকদূর পর্যন্ত গড়ালো। বললাম, ‘রিমি, আমার কথা কি তোমার মনে আছে?’
‘মনে না থাকার কি কোন কারণ আছে?’
‘থাকতেই পারে। এতো এতো মানুষের ভিড়ে কে বা কাকে মনে রাখে?’
‘এতো শক্ত শক্ত কথা বলো কেনো তুমি?’
‘শক্ত মনের শক্ত কথা’
‘আবার!’
‘আচ্ছা। ঠিক আছে আর শক্ত কথা বলবো না। এবার একটা নরম কথা বলি?
‘বলো…’
‘সত্যি বলবো?’
‘এতো ঢঙ করো কেনো?’
‘আচ্ছা ঢঙ না করেই বলছি। তোমাকে না আমি খুব ভালবাসি রিমি!’
রিমি ফিরতি টেক্সটে একটা লাভ ইমোটিকন পাঠিয়ে দিলো। আমি উল্লোসিত হয়ে লিখলাম, ‘এবার তাহলে বলো কবে আমাদের দেখা হচ্ছে?’
‘খুব দ্রুতই!’
আমিও অপেক্ষায় থাকলাম। তারপর একদিন রিমি জরুরি প্রয়োজনে কাচুমাচু করে কিছু টাকা ধার চেয়ে বসলো। বেশি না, হাজার দশেক। রিমির দেয়া দোকানীর এজেন্ট নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বললাম, ‘এত কাচুমাচু করার কী আছে রিমি? আমার টাকা মানে তো তোমার টাকাই!’
রিমি এবার অসংখ্য লাভ ইমোটিকন পাঠিয়ে দিলো! আমি বললাম, ‘তুমি একবার আমার ব্যাগে লাভ লেটার রেখে দিয়েছিলে। কবেকার কথা মনে আছে?’
রিমি লিখলো, ‘ক্লাস টেনে? কেমিস্ট্রি ক্লাসে দিয়েছিলাম বোধহয়।’
আমি আশ্চর্যিত হয়ে বললাম, ‘আমি তো ক্লাস সেভেনেই দিনাজপুর ছেড়ে চলে এসেছি!’
রিমি আর রিপ্লাই দিলো না। টেক্সট সিন করে রেখে দিলো। একটু পরেই চ্যাটবক্সে চলে এলো—‘You can’t reply to this conversation!’
নকল রিমি আমাকে ব্লক করে দিলো! তারপর ফেসবুকে রিমি সার্চ প্রজেক্ট বাতিল হয়ে গেলো।
বিকট শব্দে হুইসেল বাজিয়ে চলন্তিকা এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। ব্যতিব্যস্ত যাত্রীরা চলন্তিকার পিছে ছুটছে। আমিও ছুটছি। প্লাটফর্মের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। আমি ব্যস্ত চোখে রিমিকে খুঁজছি। তেরো বছর ধরে যেভাবে খুঁজে চলছি ঠিক সেভাবে।
একদিন স্বপ্নে দেখলাম রিমির বিয়ে হচ্ছে। খুব ধুমধাম করে বিয়ে। গভীর জঙ্গলের মাঝে সাদা রংয়ের একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। শীতের রাত। চারদিকে ঘন কুয়াশার সাদা আস্তরণ। নীল সাদা মরিচবাতির ঝিকিমিকি আর সাদা কুয়াশা মিলে মোহনীয় এক আবহ তৈরী করেছে। আমি জঙলী রাস্তা ধরে ছুটতে ছুটতে বাড়িটার সামনে চলে এলাম। ভেতরে হিন্দি গান বাজছে। হৈচৈ চেঁচামেচিও হচ্ছে খুব। আমি কেন যেনো বাসায় ঢোকার গেটটা খুঁজে পাচ্ছি না। এদিক ওদিক ছুটছি। হঠাৎ ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ! মেয়ে কবুল বলছে।’ আমি চীৎকার করে উঠলাম। রিমি কবুল বলো না, প্লিজ। আমি এসেছি। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনলো না। নিরুপায় হয়ে পাঁচিল টপকানোর চেষ্টা করলাম। এত উঁচু পাঁচিল যে নাগালই পেলাম না। পাঁচিলের ওপাশে বিয়ে হয়ে গেলো রিমির। নব দম্পতির জন্য দীর্ঘ দোয়া হলো। আমিও হাত উঠালাম। ভালো থাকুক রিমি।
আরেকদিন দেখলাম আমি স্বপ্নে ফ্রান্স চলে গেছি। হাফ স্লিভ টি শার্ট আর লুঙ্গী পরে প্যারিসের রাস্তা ধরে হাঁটছি। তীব্র শীতে সবাই কুঁকড়ে আছে। আমার কেন যেনো একটুও শীত লাগছে না। হাঁটতে হাঁটতে আইফেল টাওয়ারের সামনে চলে এলাম। হাজার হাজার পর্যটকে পুরো এলাকা গিজ গিজ করছে। আমার দিকে কেউ তাকচ্ছেই না! হঠাৎ কোত্থেকে একটা মেয়ে আইসক্রিম হাতে হাজির হলো। চোখ কচলে দেখি রিমি! সেই আকাশী-সাদা স্কুল ড্রেস, মাথায় বিনুনি, সেই ক্লাস সেভেনের রিমি। আমার দিকে একটা আইসিক্রিম এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘আবীর আইসক্রিম খাবে?’ আমি হাত বাড়িয়ে আইসক্রিম নিলাম। কী অদ্ভুত কান্ড! হাতে আইসক্রিম ধরে রিমির দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, তবুও আইসক্রিম একটুও গললো না। হঠাৎ মনে হলো এই মুহূর্তটাকে একটা সেলফি তুলে স্মরণীয় করে রাখি। মোবাইল খোঁজার জন্য পকেটে হাত দিলাম। কিন্তু পকেট খুঁজে পেলাম না! থাকবে কি করে? আমার পরনে তো লুঙ্গী! স্বপ্নের মাঝে এতটাই মেজাজ খারাপ হলো যে ঘুমটাই ভেঙে গেলো! ঘুম ভাঙার পর মন খারাপ করে বসে থাকলাম অনেক্ষণ। লুঙ্গীতে পকেট থাকলে কার কি এমন ক্ষতি হতো?
‘কি প্রিয়তমেষু, ভড়কে গেলে?জানো সেদিন বাবা না মাকে খুব বকেছিলো। মুখ ভারী করে বলেছিলো, তোমার মেয়ে বাংলায় এতো কাঁচা কেনো?প্রিয়তমেষু বানান দন্ত স দিয়ে লেখে? আজই বাসায় একটা বাংলা টিউটর রাখবে!’ মেয়েটা কথাগুলো খুব মজা করে বললো। রিয়্যাকশনের জন্য আমার দিকে তাকালো।
আমি হো হো করে হেসে উঠলাম! ‘তাই নাকি!জানতাম না তো!’
তুমি তো অনেক কিছুই জানো না প্রিয়তমেষু! তোমাকে প্রেমপত্র কেনো দিয়েছিলাম জানো? তোমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রেজাল্ট খারাপ করে দেয়ার জন্য! ফার্স্ট হতে পারছিলাম না তো কিছুতেই, তাই। অবশ্য আইডিয়াটা একটা বাংলা সিনেমা থেকে চুরি করেছিলাম! হা হা হা… ’
আমি তাজ্জব হয়ে রিমির দিকে তাকালাম। রিমি হাসছে। আমি স্মৃতি হাতড়ে পুরনো রিমিকে খোঁজার চেষ্টা করছি। এই রিমি কি সত্যি রিমি?
এইতো কদিন আগে মিথ্যে রিমিকে নিয়ে এক কান্ড ঘটে গেলো। সেদিন একটু আগেভাগেই চলে এসেছি স্টেশনে। টাকা খুচরো করার জন্য এ দোকান থেকে ও দোকান যাচ্ছি, ও দোকান থেকে সে দোকান। তবুও খুচরো হচ্ছে না। হচ্ছে না না, দিচ্ছে না। তপ্ত মাথা নিয়ে স্টেশনে পায়চারী করছি। তখনই দেখলাম মেয়েটাকে। স্টেশনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িটার উপর এক ঝাঁক কাক উড়ছিলো। মেয়েটা আনমনে কাকের উড়াউড়ি দেখছিলো। আমি সাহস করে এগিয়ে গেলাম।
‘আরে, তুমি এখানে? What a pleasant surprise!’
মেয়েটা শান্তভাবে হাসলো। বললো, ‘আমার অফিস তো এখানেই!’
আমি খুশিতে আত্নহারা হয়ে বললাম, ‘বলো কী! আমার অফিসও তো এখানে! দাঁড়াও, তোমার সাথে অনেক কথা আছে। টাকাটা আগে খুঁচরো করে আনি।’
এই স্টেশনে অতিথি আপ্যায়ন করার মতো কিছু নেই। ফ্যান্টার দুটো ক্যান নিয়ে দ্রুত চলে এলাম মেয়েটার কাছে। মেয়েটা জায়গা বদল করেছে। খুঁজে পেতে একটু কষ্টই হলো। হন্তদন্ত হয়ে বললাম,
‘নাও ফ্যান্টা খাও। এটা এমন এক বিশ্রী জায়গা, কিচ্ছু পাওয়া যায় না!’
‘থ্যাংক ইউ। আমি কার্বোনেটেট বেভারেজ খাই না।’
‘খাও না! কী বলো! তোমার না ফ্যান্টা খুব প্রিয় ছিলো?’
মেয়েটা এবার সত্যি সত্যি অবাক হলো। বিনয়ের সাথে বললো, ‘সরি। আমি না আপনাকে এখনো ঠিক চিনতে পারি নি!’
আমি চোখ কচলে আবার মেয়েটার দিকে তাকালাম। রিমির মতোই তো দেখতে। কিন্তু বোধহয় রিমি নয়।
‘আপনি রিমি নন?’
‘না তো!’
মেয়েটার ‘না তো’ আমাকে বিব্রত করে দিলো। সদ্য ফুটো হওয়া বেলুনের মতো চুপসে গিয়ে বললাম, ‘সরি! কিছু মনে করবেন না। চিনতে ভুল হয়েছে। অনেকদিন দেখা হয় না তো।’
মেয়েটা কি মনে করেছে কে জানে। পাগল টাগলইও ভেবেছে হয়তো। ভাবুক। পরের ভাবনা চিন্তায় আমার কী এসে যায়?
‘ভাই যাবেন না? ট্রেন তো চলে যাচ্ছে!’ জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষীর সতর্কবার্তায় আমার সম্বিৎ ফিরলো।
বিকট শব্দে হুইসেল বাজিয়ে চলন্তিকা এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। ব্যতিব্যস্ত যাত্রীরা চলন্তিকার পিছে ছুটছে। আমিও ছুটছি। প্লাটফর্মের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। আমি ব্যস্ত চোখে রিমিকে খুঁজছি। তেরো বছর ধরে যেভাবে খুঁজে চলছি ঠিক সেভাবে।