শূন্য পর্ব
pray but one prayer for me,‘twixt thy closed lips,
think but one thought of me up in the stairs.
(William Morris: English poet, novelist, translator, and socialist activist, 1834 –1896)
এই অলস কামচঞ্চল সন্ধ্যা দৃশ্যমান সমস্ত লৌকিকতাকে অস্পৃশ্যের আড়ালে ঠেলে রাতের পোশাক পরে নিচ্ছে নত মুখে। অগভীর থেকে অসুখে ঢুকে যেতে যেতে এই প্যাঁচামুখো শহর জড়িয়ে যাচ্ছে নিয়ন আলোয় পেতে রাখা কৌশলী ফাঁদে। তবু এই সন্ধ্যায় দ্বিধাবিভক্ত আকাশে রুপোর রেখাঙ্কিত বাঁকা চাঁদ নিদারুণ স্থবিরতায় মনখারাপ করে আকাশের ধুলোমাখা শরীরে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বদ্ধ হরিণীর মতো, খানিকটা অস্থির, খানিকটা উদাস। গুম হয়ে যাওয়া বাতাসহীন প্রকৃতিতে মদির গন্ধ, তবু বড় লোভাতুর এই সন্ধ্যা। বিকল্প-বৈভবে মেতে ওঠো এই রাত, বিত্তের ঝকমকানিতে জেগে থাকো সামগ্রিক অন্ধকার।
সাতত্রিশ বছরের মধ্যবয়স্ক বিবাহিত একজন মানুষ পৃথিবী যার নাম রেখেছে রেফাতুল ইসলাম, মা ডাকে বাবু বলে, বন্ধুরা রিফাত, বউ তার নাম দিয়েছে… সর্বসাধারণ রেফু নামেই চেনে তাকে। নামবৃত্তান্ত বাদ থাক। সন্ধ্যা এবং রাত্রির রূপান্তরকালীন এই সময়ে সে নিবিড় মনে চাইতে থাকে ‘মুছে যাক পৃথিবীর চিহ্ন’, নিমগ্ন জোছনার বুকে খরস্রোতা হৃদয় ইজারা দিয়ে আজ তারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে ভেসে যেতে স্বপ্নের শিমুল তুলোর নরমে, খড়কুটোকে অতীত বানিয়ে। চাঁদের আলো যেন হালকা আগুনের শাঁস, যদি কাঁচা কাঁচা দুঃখগুলো সেঁকে নেওয়া যেত? আজ মন গভীর উতলা। রেফাতুল ইসলাম, মা ডাকে বাবু বলে, বন্ধুরা রেফু, বউ তার নাম দিয়েছে…, সর্বসাধারণ রেফু; যে অবশেষে নিজেকে মানুষ নামেই পরিচয় দেয়, সে ভেবে পাচ্ছে না, মন কেন এমন বর্বর হাহাকারে মেতে উঠলো এই অবেলায়? নিবিড় নিরাপত্তাহীনতার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এ শহর, তবু কেন যে ম্লান সময় এমন তাগাদা দিয়ে তাকে বিভ্রান্তির কাঁটাতে জড়িয়ে দিচ্ছে? নিজেকে সে একটু শাসিয়ে দিলো, ‘কী হল্যো মিয়া ভাই…পিছলিয়্যা পড়ছেন মনে হোছে।’
বেআদব ধরনের একটা কাঁপুনিতে প্যান্টের ডান-পকেট অশ্লীল চিৎকারে মেতে উঠলো, কাঁপুনির মাত্রাকে রিখটার স্কেলে চড়ালে নিশ্চিত পাঁচ দশমিক শূন্য, শূন্য তিন পার হবে। মাঝে মাঝেই রেফু নামের মানুষটি কায়মনে কামনা করে হোক না এমন এক ভূকম্পন, এই পাপের খোঁয়াড় তছনছ হয়ে যাক, ঢাকা পড়ে যাক সমস্ত ‘ঢাকা’। কাল-ডি-স্যাক এ হাত চালিয়ে দিলো সে, আঙুল চুমে দিয়ে কাঁপুনি উঠে আসছে তার কব্জি, কনুই পেরিয়ে। রেফু ডান কানে চেপে ধরলো কোঁকাতে থাকা স্ক্রিনের ঠোট, কাঁপুনি থেকে চিৎকার হয়ে শব্দগুলো ধাক্কা মারলো টিমপ্যানিক পর্দার নরম হৃদয়ে, সেখান থেকে কম্পনটা মধ্য-কান হয়ে একেবারে মস্তিষ্কের হেয়ারিং সেন্টারকে জড়িয়ে ধরলো।
‘হ্যালো… হ্যালো… কোথায়? কোথায় তুমি? শব্দগুলো মাড় দেওয়া সুতি কাপড়ের নৃশংসতায় ছড়িয়ে গেল নিউরনে নিউরনে। ফাইনাল করেছ? তোমার না আজকেই ফাইনাল করার কথা ছিল, নিশ্চয়ই করোনি, না করলে এখুনি যাও, করে এসো প্লিজ, শুনছ? ধুর… এই মানুষটিকে নিয়ে আর পারা গেল না।’ প্রায় বার বছর আগে যে নারী রেফুর স্ত্রী হয়ে এসেছিল, বর্তমানে নারী থেকে নাম কাটিয়ে মানুষী হয়ে যাওয়া কেউ।
মোবাইল, বিজ্ঞানের নিকৃষ্টতম অথচ উপকারী আবিষ্কার। যদি ছুড়ে ফেলে দেওয়া যেত, ডিজিটাল প্রযুক্তি মনুষ্যত্বে আঘাত হেনেছে, অথচ এই ডিজিটালিকরণে কত প্রচেষ্টা, তিন জি… সাড়ে তিন… চার…! আইলা বিধ্বস্ততায় পাপিষ্ঠ ফুটপাতে আছড়ে পড়লো রেফু, একটা ভাবনা তাকে দৌড়ানি দিচ্ছে, ফুটপাতের স্ত্রী লিঙ্গ কী? আইলা স্ত্রী লিঙ্গ না পুং, রেফুর কেন যেন মনে হল আইলা স্ত্রী লিঙ্গ, ফুটপাত মনে হয় পুং।
এক কামকাতর তরুণী রাতে নাম না জানা কল্পিত ঈশ্বরীর মোম-শরীরে চেপে সে পাড়ি দিতে যাচ্ছিল স্বর্গ ভূমে, সব ধুয়ে গেলো ওয়াশিংমেশিনের রূঢ় বাস্তবতায়, মর্তে ফিরে আসতে সাত ন্যানো সেকেন্ড সময় নিলো রেফু, নিজেকে ধন্যবাদ দিতে ভুল করলো না, কারণ সে তার মায়ের মেধাবী সন্তান, মা বলত। নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকলো আরও কিছু সংকেতবাহী ছয় বা নয় নম্বর বিপদবার্তা সামলানোর জন্য।
রেফু সন্ধ্যাটিকে ছুড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হলো ধুলোবালি ছাইমাখা রাজপথে, সে নিশ্চিত কিছুসময়ের মধ্যেই কামকাতর সন্ধ্যাটি হারিয়ে যাবে ব্যস্ততার চোরাপথে, ঘামে ভেজা বাতাসে অথবা কফ থুথু রক্ত বা লাশের আড়ালে বা অসংখ্য জুতোর তলায় অথবা বাসলরি টেম্পোর চাকায় পিষ্ট হয়ে গত হয়ে যাবে অবাক বিস্ময় বয়ে নিয়ে আসা সন্ধ্যাটি, রেফু এতটুকুও কষ্টবোধে ভুগছে না। বাস্তব এক অত্যাচারী দলিল লেখক।
সংশ্লেষ পর্ব
Everyone is a moon and has a dark side which he never shows to anybody.
(Mark Twain: American author and humorist. 1835 – 1910)
এ শহরটাকে মাঝেমাঝে নিরেট, শূন্য এবং বিশাল এক কৃষ্ণ-ভাগাড় মনে হয় রেফুর , মানুষের দেয়ালে চাপা পড়ে যাওয়া এই শহরের চলমান কীটগুলোকে কাঁটাবনের হরেক রকম দেশি-বিদেশি পাখি, বিদেশি কুকুর এবং বাহারি মাছ বলে মনে হয়, খুব সহজেই যারা একে-অন্যকে বেচে যাচ্ছে নিয়মিত, এমনকি নিজেও নিজেকে। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা প্রতিদিন এই শহরে নেমে না এলে কবেই ভোগে চলে যেত এই পাপের নগরী, অথচ মসজিদের সংখ্যা বিচারে এই শহর পৃথিবীতে এখনো এক নম্বরে, বৈপরীত্যের এক চরম নমুনা হাতের তালুতেই সুড়সুড় করছে। ইদানীং অবশ্য কাকের সংখ্যাও বাড়ছে বেশ, কাক-শুমারি করলে নিশ্চিত ভাবেই বলা যেতে পারে যে কাক মসজিদের আধিপত্যকে হারিয়ে দেবে। বেঁচে থাকা তো এখানে সহজলভ্য, শুধু ঠোঁট দুটো ধারালো রাখতে পারলেই চলবে।
গন্তব্যের ছক এঁকে ফেলেছে রেফু, এ নিয়ে সাতজনকে অনুনয়-বিনয় করেও যথারীতি ব্যর্থ সে, এ শহরের নিয়মিত চরিত্রের আরেকটা উইন্ডোজ এটা, কেউ কারও জন্য নয় এখানে, এমনকি প্রশ্বাসের জন্য বাতাস অথবা মৃত্যুর জন্য নয় কোনো দুঃখানুভূতির বহিঃপ্রকাশ। ক্ষান্ত দিলে তো চলবে না, নতুন একটা পলিসি অ্যাপ্লাই করার মনস্থির করে ফেললো সে।
‘আব্বা, আব্বা, নিকেতন, দুই নাম্বার গেটের কাছেই, কত আ-ব-বা? প্রায় ষাটে ঝুলে থাকা বৃদ্ধ ভীষণ মায়াবৃষ্টিসম্পন্ন দৃষ্টিতে তাকালো রেফুর দিকে, দরজা খুলে গেলো, নির্দ্বিধায় নিজেকে কাঙ্ক্ষিত খাঁচায় সঁপে দিয়ে লোহার ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো সে, সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ তিন চাকার গাড়ি হাঁটতে আরম্ভ করলো। পেছনে ছুঁয়েই থাকলো ফেলে আসা সন্ধ্যাটি।
অনেকগুলো ইনসাল্টিং কাজের অন্যতমটি করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে রেফু, করছে মানে করতে বাধ্য হচ্ছে। গত আট বছরে এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো এই জঘন্য কাজটি করতেই হচ্ছে তাকে, হিজরত, অপ্রিয় অথচ তীব্র সত্য। এই শহরে হিজরত করার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চাকরি অথবা বাচ্চাদের স্কুল পরিবর্তন। রেফুর ক্ষেত্রে দুটোই। ফ্লাট-মালিক হতে না পারা পর্যন্ত ইনসাল্টেড হয়ে যেতেই হবে, কিন্তু যে অবস্থা চলছে তাতে ফ্লাট মালিক হবার আগেই সে নিজেই না ফ্ল্যাট হয়ে যায়, লক্ষণাদি তেমনি বলে। সে যদি কোনোদিন বাড়ির মালিক হয়, তবে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে তার বিহেভ কেমন হবে? বাড়ি-মালিক রা কখনোই ভালো হতে পাতে না, সে কে এমন মহাপুরুষ যে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়াবে?
সন্ধ্যায় হাতির ঝিল বেশ চনমনে, রঙবেরঙের বাতিগুলো এখনো দাঁত কেলিয়ে হাসে, সন্ধ্যা বাড়লে নব্য প্রেমিকযুগল এখানে উত্তাপ ছড়ায়, আকাশ ও পানির কাছে এলে নাকি মানুষের মন খোলাসা হয়, তেমনি কাছাকাছি, ঘেঁষাঘেঁষি হাসাহাসি করার জন্য প্রেমিকবৃন্দ হাতির ঝিলকে বেছে নিয়েছে বেশ, কয়েকদিন আগেও তো এক মাতাল নারী কয়েকজন ছেলে-বন্ধু নিয়ে মাতলামোতে মেতে উঠেছিল। ঢাকা পড়ে যাওয়া ঢাকায় ঘোরাফেরার জায়গা এমনিতে কম, ইদানীং খোলাআকাশপ্রার্থী অনেক মানুষের ভিড় লক্ষণীয় এখানে। হাতির ঝিলকে এফোঁড়ওফোঁড় করে ঝুলে থাকা সেতুটি পার হয়ে অর্ধ-বৃদ্ধ চালিত সিএনজি একটু ডানে বাঁক নিলো, সামনেই একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়লো, যেন মনে হচ্ছে তরুণ সন্ধ্যাতেই মদ খেয়ে চোখ লাল করে উদ্ভ্রান্তের মতো কাকে যেন খুঁজছে, বোর্ডটির দিকে চোখ পড়লো রেফুর, তাতে লিখা ‘কেতন’… ‘নিকেতন’-নি নিভে গেছে।
মিটারের দিকে তাকিয়ে রেফু প্রায় তিনগুণ ভাড়া এগিয়ে দিলো পিতা হয়ে নাযিল হওয়া সিএনজি চালকের দিকে, আসলেই যার বয়স রেফুর বাবার বয়সের মতোই হবে। কোনো কথা না বলে ভদ্রবৃদ্ধ মিটারে ওঠা ভাড়াটা রেখে বাকি টাকাটা ফেরত দিলো, রেফু পুনরায় বিস্মিত হতে বাধ্য হলো, হঠাৎ নীরবতা ভেঙে বৃদ্ধ বললো, বাবা আমার ছেলেটাকে র্যাব পরিচয়ে কারা যেন বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, প্রায় একমাস হয়ে গেলো, বলতে বলতেই একটা তীব্র কষ্টের স্রোত গড়িয়ে পড়লো নৃশংস শহরের উদরে, রেফু কান্নাটাকে গিলে তাকে কিছু একটা সান্ত্বনার মতো বলার আগেই সে সিএনজি স্টার্ট দিয়ে মিলিয়ে গেলো নোংরা শহরে, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো রেফু যতক্ষণ না বিলীন হয়ে গেলো এক দুঃখভারাতুর পিতার আহাজারি, দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেলে কী হবে বৃদ্ধের মুখটা রেফুর মনে তীব্র শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন মাঝরাতের মতো চেপে থাকলো, মন খারাপ করার নিয়মিত উপাদানে আরও একটি দাদা সংযোজিত হলো, কী বা করতে পারে রেফু অথবা সন্তান নিখোঁজ হওয়া বৃদ্ধ, সবাই আসলে একটা অত্যাচারী অন্ধকার ছিপিহীন বোতলে বন্দি।
গত সাড়ে তিন সন্ধ্যার কসরত শেষে বেশ কয়েকটা টু-লেট চেখে রেখেছে রেফু। এর মধ্যে রোডের নখে লেগে থাকা বাসার চতুর্থ তলার বাম পাশটা খাঁ খাঁ করছে, সেটাই মনে ধরেছে রেফু দম্পতির, মানে মনে ধরতে বাধ্য হয়েছে। টু-লেট-এর সঙ্গে একটা গ্রামীণফোনের নম্বর ঘুমঘুম চোখে ঝুলেছিল, সেই নম্বরেই বাড়িওয়ালা নামক একজন মানুষের সঙ্গে সামর্থ্য বিনিময় হয় রেফুর। আজ সন্ধ্যায় আসতে বলেছিলেন সেই ল্যান্ডলর্ড ওরফে বাড়িওয়ালা।
খারাপ হয়ে যাওয়া মন নিয়ে পান খেয়ে দাঁত নষ্ট করা মধ্যবয়সীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা লোহার দরজার সামনে এসে নক করতেই কমবয়সী এক পোশাক (যার মধ্যে কর্ম-ক্লান্ত এক মানুষ ঢুকেছিল) এসে দরজা খুলে দিয়ে বললো, আসেন স্যার, এইদিকে আসেন। অবাক হতে গিয়েও তা ঢেকে নিল রেফু। দ্রবীভূত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো কিভাবে চেন আমাকে? কিভাবে? ক্লান্তির ছাপ গায়ে চাপিয়ে থাকা ছেলেটি বললো, স্যার গত সন্ধ্যায় আপনি আর ম্যাডাম এই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে, আমি শুনছিলাম। ছেলেটির বয়স উনিশ থেকে সাড়ে তেইশের মধ্যে। পরনে শার্ট এবং একটা গ্যাবাডিন প্যান্ট, উচ্চতা চার ফিট এগার বা এর কমবেশি, রেফুসহ অধিকাংশ মানুষেরই পরিচ্ছন্ন একটা ধারণা আছে যে, খাটো মানুষগুলো খুব ক্রিটিক্যাল হয়, এও নিশ্চয় সে রকমই হবে।
তুমি? সে বললো, স্যার আমি এই বাসার সিকিউরিটি। ল্যান্ডলর্ড ওরফে বাড়িওয়ালা কোথায় জিজ্ঞেস করতে সে বললো, স্যার চেম্বারে, রোগী নাই, বলে দুঃখের মধু তার নিজের চেহারায় মালিশ করে বলল আসেন স্যার, এই যে এদিকে। আরও একজন খাটো মানুষের দেখা মিললো, সালাম দিয়ে সামনের চেয়ারে বসার আগেই তিনি চাবি এগিয়ে দিলেন ছেলেটির দিকে, যা উনাকে বাসাটা দেখিয়ে নিয়ে আয়।
দেখার কিছু নেই, বাথরুমগুলোতে ঢুকে মেজাজ খারাপ ধরে রাখা গেলো না, টয়লেটের প্যানগুলোর চেহারা অনেকটা ব্রাশ না করা পানখোরদের মাড়ি এবং দাঁতের মতো মনে হলো। কী আর করা, মেজাজকে প্যানে ফেলে ফ্ল্যাশ করে নিচে নামতে থাকলো রেফু। ফ্ল্যাট পছন্দ হলো, পছন্দ করতে বাধ্য হলো। নিচে নেমে আসতে আসতে আরও কিছু উদ্দেশ্যভ্রান্ত কথা হলো ছেলেটির সঙ্গে। কেন যেন ছেলেটিকে মনে ধরে গেলো রেফুর, একটা নামও দিয়ে ফেললো ছেলেটির, ‘ভালোমানুষ’।
কবরের সমান জায়গাটা ত্রিকোণমাত্রিক, মাকুর মতো, বাসার নিচ তলাতেই, চেম্বার, এদিকওদিক নজর বোলাতেই বোঝা গেলো ইনি শিশুচিকিৎসক, তবে অন্যান্য ডাক্তারের চেম্বারে যেমন মাছির মতো রোগী ভনভন করে এখানে তেমন নয়। কথাবার্তা হলো বেশ কিছুক্ষণ, এই খাটো মানুষটিকে পছন্দ করতে চেষ্টা করেও পারলো না রেফু, দোষটা কার সেটা আসতে আসতে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। দামদর ঠিক হলো, সামনের মাসের ঊনত্রিশ তারিখ তারা হিজরত করছে মালিবাগ থেকে নিকেতন। ভালোমানুষ গেট খুলে দাঁড়িয়ে আছে, রেফু বেরুবার জন্য পা বাড়াতেই ভালোমানুষ বললো, স্যার, এই বাসায় কে থাকে জানেন? রেফু একবার তার মোমবাতি মার্কা মুখের দিকে তাকিয়ে পা বাড়ালো অন্ধকারের দিকে। ভালো মানুষটির ছুড়ে দেওয়া প্রশ্ন, এই বাসায় কে থাকে জানেন? ঘুরপাক খেতে থাকলো রেফুর হাত-পা-চোখ-শরীর এবং মগজজুড়ে, ব্যথাটা নেমে আসছে ঘাড়ে।
অভিবাসন পর্ব
Reading makes immigrants of us all. It takes us away from home,
but more important, it finds homes for us everywhere.
(Jean Rhys: West Indian Novelist. 1894-1979)
বিগত সতের দিনে অনেক কিছু ঘটে গেলো পৃথিবীর উপরিভাগে, অভ্যন্তরে কী ঘটছে সেটা জানা এই কাঙাল দেশের অধিবাসীদের না জানলেও চলে। কিন্তু খবর তো চলে আসে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স-এর বিমান নিখোঁজের ভূপাতিত হওয়ার দৃশ্য লাইভ দেখাচ্ছে তাবৎ চ্যানেলগুলো, কয়েকশো মানুষের খণ্ডাতিখণ্ড শরীরের সঙ্গে সুখ-দুঃখস্মৃতি এবং বর্তমান মিশে গেছে ধ্বংসস্তূপে, আইএসআই নামক ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান, কার বা কোন দেশের ইন্ধনে এই উত্থান সেটা সবাই জানার পরও সবাই নিশ্চুপ, নিরীহ প্যালেস্টাইনদের ওপর জঘন্যতম ইসরাইলি হামলা এবং প্রায় একুশ শত নারী-শিশু-পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা, জাতীয় শোক দিবস পালন এবং খিচুড়ি উৎসব নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা (পিতা আপনি ফিরে আসলে কি এই জাতির ভাগ্যোদ্ধার করতে পারতেন? মনে হয় পারতেন, কারণ আপনি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন এবং তার বাস্তবায়নে যা কিছু করণীয় তা করতেন, এখনকার নেতা-নেত্রীরা শুধু স্বপ্ন দেখা পর্যন্ত) এবং আপনার মৃত্যু দিবসে জন্মদিনের কেক কাটার তোড়জোড়…।
এসব রেফু কেন ভাবছে, এসবে রেফুর কিছু যায় আসে না। ছেলে হারানো সেই শোকাচ্ছন্ন বৃদ্ধের মুখ অথবা ভালো মানুষটির ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্ন, এই বাসায় কে থাকে জানেন স্যার? এগুলোই বরং বেঁচে থাকার সূত্র, যদিও কখনোই গাণিতিক হিসাব মেলে না।
ঊনত্রিশ তারিখ একটা যুদ্ধ, এটাতে জয়ী হওয়াটাই এই মুহূর্তের প্রধানতম কাজ। হিজরত মানে বাসা বদলের চেয়ে জঘন্য কাজ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই, মালপত্র গুছানো, প্যাক করা, ট্রাক ভাড়া, যন্ত্রণার শেষ নেই। তবু করতেই হবে, ওই যে মানুষ, মানুষদের সবকিছুই করতে হয়। ছয় সাত দিনের নিরলস কামলা’য় রেফুর স্ত্রী মানে একজন নারী অর্থাৎ নারী থেকে মহিলা হয়ে যাওয়া কেউ, খুব ধৈর্য সহকারে গুছিয়েছে সব মালামাল, তার সংসারের প্রতিটা খুঁটিনাটি জিনিসই মূল্যবান, স্মৃতিবাহী। তুমুল বৃষ্টিতে ফেঁসে গিয়েও বাসা বদল হয়ে গেলো, কাঁথা- বালিশ, তোশক, ফার্নিচার ভিজে জবুথবু, এরপর তো আরও যন্ত্রণা, পরিপাটি করে জায়গা মতো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, কম তো আর না। ভালোমানুষটি কিন্তু সাহায্য করেছে অকাতরে, তাকে ছাড়া কোনোভাবেই সবকিছু ঠিকঠাক করা সম্ভব হতো না। বাসায় ঢোকা বা বেরুবার সময় মাঝেমাঝেই রেফুর কথাবার্তা হচ্ছে তার সঙ্গে। এমনি এক মনমরা সকালে সে কালো রঙের গাড়িটিকে ইঙ্গিত করে বললো, স্যার, এটা কার গাড়ি জানেন? তার উৎসাহে এবার পানি না ঢেলে ঘি ঢাললো রেফু, না। কেন বল তো? কার গাড়ি?
ভালো মানুষ সোৎসাহে বললো, ম্যাডাম, ম্যাডামের গাড়ি স্যার। তার চোখেমুখে রামধনু খেলে যেতে দেখলো রেফু।
ম্যাডাম? কোন ম্যাডাম? উৎসাহ ঢ্যাঁড়শের মতো সহজেই গিলে ফেলে বললো রেফু।
নায়িকা ম্যাডামের, রেফু দেখলো ভালো মানুষটির মুখটা রীতিমতো ফ্ল্যাশ দিচ্ছে, আরও একটু আগ্রহ দেখালো সে, ভালোই তো, কোন নায়িকা?
গাড়ি ওরফে একটা মধ্যতরুণ একটি কার, টয়োটা নিসান মডেলের টানটান ভ্রূ উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গ্যারেজের তিন নম্বর জায়গায়। সুন্দর সৌম্য চেহারার এক ছেলে পরম যত্নে সেটাকে ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করছে, সে এগিয়ে এসে বললো স্লামুলেকুম স্যার, নাকটা উন্নত, ঠোঁটের দুই পাশে মিষ্টি একটা সৌজন্যতাবোধ, চোখ বেশ স্পষ্ট, গায়ে একটা হাফব্লাক জ্যাকেট, প্যান্ট গুটানো, হাতে একটা ডাস্টার, কিন্তু চেহারায় একটু আড়ষ্টতা মেশানো। প্রথম দেখায় তাকে ড্রাইভার বলে মেনে নিতে বেগ পেতে হলো রেফুর, কিন্তু বাস্তব কি রেফুর কথায় ওঠবোস করে?
বেশ লাগছিল রেফুর, সে কথার ঠোঁটে ব্লেড চালালো না।
ভালো মানুষ বললো, স্যার ওই যে আপনাকে বলছিলাম না, এই বাসায় তো নাটকের নায়িকা ম্যাডাম থাকেন।
হ্যাঁ, হ্যাঁ বলেছিলে তো, ও আচ্ছা তাই বলো—খুব আগ্রহ দেখানোর ভান করলো রেফু, তা না হলে ভালো মানুষ অর্থাৎ সিকিউরিটির উৎসাহে ভাটা নেমে আসতে পারে, মন খারাপও করতে পারে, কী দরকার ওদের মন খারাপ করে দেওয়ার।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ করলো রেফু, ছেলেটি মানে নায়িকার ড্রাইভার বেশ ফুরফুরে মেজাজে, হয়ত এই কারণে যে প্রতিদিন তার সঙ্গে দেখা হয় কথা হয় একজন নায়িকার, এটাতে সে গর্বিত হতেই পারে।
রেফুর মনে পড়ে যায় তের বছর নয় মাস তিন দিন আগের কথা, সে তখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র, বন্ধুরা মিলে হৈ-হুল্লোড় করে স্টেডিয়ামে একটা কনসার্ট দেখতে গিয়েছিল, তখনকার সময়ের খুব কাটতি এক নায়িকার পারফর্ম করার কথা ছিল সে অনুষ্ঠানে, সে কি উত্তেজনা, দূর থেকে এক ঝলক দেখেই কি আনন্দ সবার! আর আজ সে আরেক নায়িকার প্রতিবেশী, নাটকের নায়িকা, সিনেমা করছেন ইদানীং, কমার্শিয়ালগুলোতেও সরব উপস্থিতি, রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ওঁত পেতে থাকা বিলবোর্ডগুলোর দখলও নিয়েছেন বেশ। কোথায় নেই তার উপস্থিতি?
পর্দা এমন এক মোহ যাকে কোনোভাবেই অ্যাভইড করা যায় না, কোনোদিনও না। এফডিসির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রেফু প্রায় প্রতিদিন অবাক বিরক্তি নিয়ে দেখে বেশকিছু উঠতি তরুণ হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, হয়ত তাদের স্বপ্নের নায়ক বা নায়িকার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেও হতে পারে অথবা কোনো চিত্রপরিচালকের সঙ্গে আলাপ হয়ে যেতে পারে বা সুযোগ মিলে যেতে পারে সিনেমায় অভিনয়ের।
দিনগুলো কেটে যাচ্ছে ভাতের ফ্যানের মতো, ম্যাড়মেড়ে ভেজা মাদুরের শরীর যেমন। ভালোমানুষ তাকে নিয়মিত খবর দিয়ে যাচ্ছে, নায়িকা কখন কোথায় যাচ্ছে, রেফুর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে তোয়াক্কা না করেই।
বাবা, বাবা জানো আমাদের নিচতলায় নায়িকা থাকে, ছেলেমেয়ে রীতিমতো উত্তেজিত। তার মানে এই অসুখ বাসা পর্যন্ত এগিয়েছে।
নিস্পৃহ থেকে রেফু জিজ্ঞেস করলো, কে বললো বাবা? ভালো মানুষ কি এখানেও বলে গেছে? যেতেও পারে।
বাবা, বাবা, আমরা দেখেছি, একদম টিভির মতো দেখতে। তাইতো, নায়িকারা কি বাস্তবেও দেখতে পর্দার নায়িকাদের মতো হয়। কে জানে? রেফু তো এখনো দেখিইনি। মন কি একটু চাইছে?
রেফুর স্ত্রী মানে একজন নারী অর্থাৎ নারী থেকে মহিলা হয়ে যাওয়া কেউ, সে-ও টুকটাক খবরটবর নিচ্ছে, নায়িকা কোন মুভিতে অভিনয় করছে, কোথায় পারফর্ম করছে, কবে কোথায় যাচ্ছে। প্রতিদিনকার যাপনে কোনো না কোনোভাবে নায়িকার প্রসঙ্গ চলেই আসছে বাসায়, এমনকি বাইরেও, এর মধ্যে নায়িকার বাবার সঙ্গে দেখা হলো, মায়ের সঙ্গেও, ছোট বোনের সঙ্গেও, কিন্তু নায়িকা? কোথায়?
টিভিতে কোনো অ্যাড নাটক বা সিনেমা হলেই ছেলে মেয়ে দৌড়াতে-দৌড়াতে এসে বলছে বাবা, বাবা নায়িকা আন্টিকে দেখলাম। এরই মধ্যে নায়িকার জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় কেক এসেছে, ছেলেমেয়ে রীতিমতো অবাক, বিস্ময় রেফুর মধ্যেও কুরকুর করছে একটু একটু করে। এর মধ্যেই ছেলেমেয়ে একদিন দেখা করে অটোগ্রাফ নিয়ে এসেছে বন্ধুদের দেখাবে বলে, নায়িকা তাদের বলে দিয়েছেন, তাকে আন্টি না ডেকে আপু ডাকতে।
বাস্তব পর্ব
Culture makes people understand each other better. And if they understand each other better in their soul, it is easier to overcome the barriers. But first they have to understand that their neighbour is, in the end, just like them, with the same problems, the same questions.’
(Paulo Coelho: Brazilian lyricist and novelist, 1947 – )
সাতানব্বইই দিনের মাথায় হঠাৎ একদিন বিচ্ছিন্ন ভোরে দেখা হয়ে গেলো, ইচ্ছা করেই রেফু কনসেনট্রেট করা থেকে বিরত থাকলো, তবু চোখ এড়ায় কই, আচ্ছা নায়িকা হলে কি সবসময়ই শুটিং-বান্ধব ড্রেস এবং মেক আপে থাকতে হয়? রেফু এসব নিয়ে ভাবছে কেন? অসুখ কি তাঁর নিজের মধ্যেও বিস্তার করছে, ছোঁয়াচে অসুখ নাকি বাতাসের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়ায়? বউ নায়িকার ফেসবুক একাউন্টে লাইক দিয়েছে, তার নিউজ ফিডে নিয়মিত নায়িকার পোস্ট আসছে।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় অথবা অফিসের কলিগদের সঙ্গে কথাবার্তায় ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় নায়িকার প্রসঙ্গ চলে আসছে, যেন রেফু নিজেও জানাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে যে তাঁর প্রতিবেশী একজন নাম করা নায়িকা, ব্যাপারটা তার সন্তানদের মাঝেও বিস্তার লাভ করেছে, তারাও স্কুলে বন্ধুদের বলছে তারা নায়িকার প্রতিবেশী, এমনকি রেফুর স্ত্রী পর্যন্ত, পত্রিকায় নায়িকার কোনো খবর আসলে ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় সেই প্রসঙ্গ টেনে আনছে। আশ্চর্যের বিষয় রেফু নিজেকে, তার সন্তানদের অথবা স্ত্রীর মাঝে খুঁজে পেতে আরম্ভ করলো ভালো মানুষটিকে অথবা নায়িকার ড্রাইভারকে।
নায়িকার বাবা একজন কলেজ শিক্ষক, এই কয়েক মাসে এটুকু পরিষ্কার হয়েছে যে নায়িকা খুব একটা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের সুযোগ পান না, তার মা তার সঙ্গে ফেভিকলের মতো সর্বক্ষণ সেঁটে থাকে। নায়ক নায়িকারা সবসময় নিজেকে সর্বসাধারণের আড়ালে রাখতে চেষ্টা করে কিন্তু আলোচনায় না থাকলে তাদের চলেও না।
দর্শন পর্ব:
(All the world’s a stage, and all the men and women merely players: they have their exits and their entrances; and one man in his time plays many parts, his acts being seven ages.:William Shakespear, 1564 –1616)
ভালোমানুষ অর্থাৎ সিকিউরিটি গার্ড, পৃথিবী যার নাম রেখেছে ‘রাশেদ’, যে এখনো একজন পুরুষ অর্থাৎ সে এখনো বিয়ে করেনি, সে বিএ পাস। সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে তার চাকরি করার কারণ সে যে বাসায় চাকরি করে সেই বাসায় একজন নায়িকা থাকেন এবং প্রায় নায়িকার সঙ্গে তার প্রতিদিন দেখা হয় এবং কথা হয়।
ড্রাইভার অর্থাৎ নায়িকার গাড়িচালক, পৃথিবী যার নাম রেখেছে ‘অংকুর’ (সম্ভবত নামটি আডপ্ট করা) যে এখনো একজন পুরুষ অর্থাৎ সে এখনো বিয়ে করেনি, সে এমএসসি ফেল। ড্রাইভার হিসেবে তার চাকরি করার কারণ, সে যে বাসায় চাকরি করে সেই বাসায় একজন নায়িকা থাকেন এবং প্রতিদিন নায়িকার সঙ্গে তার দেখা হয় এবং কথা হয়।
নায়িকার মা, যিনি সর্বক্ষণ সেজেগুজে নিজের মেয়েকেই ফলো করার চেষ্টা করেন, তিনি মেয়ে নায়িকা হয়ে ওঠার আগে কি আসলে এমন থাকতেন?
প্রত্যেকটি মানুষই কি যারা পর্দার শীর্ষে থাকেন তাদের কাছাকাছি থাকতে বা নিজেকে তাদের মতো করে তুলতে বা তাদের আপনজন পরিচয় দিতে পছন্দ করে? কে জানে? কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড, ড্রাইভার ছেলেটি, রেফুর স্ত্রী, সন্তানেরা, নায়িকার মা কিংবা যেমন ইদানীং রেফু নিজেও।
একদিনের এক আড্ডায় রেফুর বন্ধু ইতি তার মোবাইল ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো, বন্ধু তোমাদের নায়িকা! রেফু কি দেখছে এগুলো, হিসাবটা কিছুতেই মেলাতে পারছে না। রেফু ভাবলো, সব হিসাব যে সে মেলাতে পারবে, সেটা কোথায় লেখা আছে। তবু…!