এত দূরের পথ! এত ভিড়!
ঈদের সময় মকবুলের বাড়ি যাওয়া বড্ড ঝক্কির ব্যাপার। যেতে হয় এতগুলো নদী পার হয়ে! তবু সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এবারের ঈদে যত কষ্টই হোক, বাড়ি যাবে। তার মেয়ে সুমাইয়া দাদাবাড়িতে ঈদ করবে না, তা হয় না। তারপরও জীবনের প্রথম ঈদ সে ঢাকায় করেছে। মকবুলের উপায় ছিল না কোনো। সবেমাত্র সুমাইয়ার জন্ম হয়েছে। একমাস পরই কোরবানির ঈদ এলো। সালেহার শরীরটাও ভালো না। এত ছোট বাচ্চা তার অসুস্থ মায়ের কোলে দিনরাত শুধু ঘুমায়। তাই ওদের নিয়ে এত ঝক্কি-ঝামেলা সামলে বাড়ির দিকে যাত্রা করার সাহস হলো না মকবুল ইসলামের। তাই বাবা-মাকে সেই সুদূর পায়রাকুঞ্জে রেখে এই ইট-পাথরের শহরে সেই ঈদটি কেটেছে তার।
এবার তাই দেরি না করে মেয়েকে কোলে নিয়ে, সালেহাকে সঙ্গে নিয়ে সদরঘাট গিয়ে লঞ্চে উঠে পড়লো মকবুল। সোজা তিনতলায় উঠে একটা কেবিনের সামনে চাদরটা বিছিয়ে দিলো। স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে জুতমতো জায়গায় বসলো। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখতে দেখতে চারপাশটা যাত্রীতে ভরে গেল। মকবুল ভাবে, জায়গাটা পাকাপোক্ত করতে না পারলে রাতে ঘুামানোর জায়গা পাওয়া যাবে না।
মকবুল কাঁধে ঝোলানো গামছায় বাঁধা পুটলাটা ডেকের মেঝেয় পাতা চাদরের ওপরে নামিয়ে রাখলো। মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, সুমাইয়ারে মোর ধারে দেও। সালেহা মেয়েকে বাপের কাছে দিয়ে মুখের নেকাব খুললো। স্বামীর দিকে তাকালো ভয়ে ভয়ে। ওর পেলব মুখটায় তাকিয়ে মকবুল বললো, থাক থাক। এত দূরের যাত্রাপথে মুখ ঢাইককা রাখলে তোমার খুব কষ্ট অইবে।
সালেহা মনে মনে খুশি হয়েছে। গতবারে সে স্বামীকে এই আর্জি জানিয়েছিল। মকবুল সেটা মনে রেখেছে। সালেহা জানে মানুষটা রাগী হলেও মনটা খুব নরম।
আকাশটা ঝকঝকে পরিষ্কার। ডেকের ওপর বিকেলের হলুদ রোদ পড়েছে। লঞ্চটায় মনে হচ্ছে ঈদ উপলক্ষে নতুন করে রঙ করা হয়েছে। চারপাশটা ঝলমলে। নিচ থেকে বুড়িগঙ্গার কালো পানির উৎকট গন্ধ বাতাসে ভেসে আসছে। মাঝে মাঝে লঞ্চটা মৃদুভাবে দুলে দুলে উঠছে। মকবুল পাঞ্জাবির পকেট হাতরে মোবাইল ফোনটা বের করলো। মোবাইলে সময় দেখলো। বিকাল চারটা বেজে বত্রিশ মিনিট। কিছুক্ষণ পরই রোদ কমে যাবে। সন্ধ্যা নামবে। তার আগেই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বসতে হবে।
সালেহা ততক্ষণে গামছায় বাঁধা পুটলাটার গিঁঠ খুলে বের করেছে একটা পানি খাওয়ার মগ, ছোটো একটা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি ও একটা ঢাকনা, দুইটা পাঁকা আম, আধা লিটারের বোতল ভর্তি দুধ, দুইটা থালা, পলিথিনে পেঁচানো চিনি, একটা ছোটো বটি আর কাপড়-চোপড়।
আরও একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে এসেছে সালেহা। ওই ব্যাগে অ্যালুমিনিয়ামের ক্যারিয়ারে আছে রাতের খাবার, এক বোতল পানি, দুই হালি সাগর কলা আর এক প্যাকেট পাউরুটি। এগুলো আর বের না করে ব্যাগটা ডেকের রেলিঙে হেলান দিয়ে রাখলো সে।
আজ স্বামীর খুশি দেখে সালেহার মনটাও ভালো। মকবুল যখন ঘাটে দাঁড়িয়ে রুটি-কলা কিনছিল, তখন সালেহা মনে মনে হেসেছে। এমনিতে মকবুল খুব হিসাবী। যাত্রাপথে তেমন কিছু কিনে খায়না। আজ সালেহা অনেক কিছু রান্না করে নিয়ে এসেছে। তারপরও মকবুল রুটি কলা কিনলো।
সুমাইয়ার জন্মের পর সালেহা এখনো শ্বশুরবাড়ি যায়নি। যাবে কিভাবে! মেয়ের জন্মের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে কাহিল হয়ে পড়েছিল। সোয়ারিঘাটের খুপরি ঘরটায় মেয়েকে বুকে নিয়ে শুয়ে থেকে থেকে পার করেছে ৩৮টা দিন। পাশের ঘরের কমলাভাবী তখন অনেক করেছে সালেহার জন্য। তিনবেলা খবর নেওয়া, সুমাইয়ার যত্ন নেওয়া। এই যুগে কেউ কারো জন্য এতকিছু করে?
আর সুমাইয়ার বাপ! সারাদিন খাটনি করে সন্ধ্যায় বাসায় এসে রান্না করতো। ঘরের সব কাজ করে অসুস্থ স্ত্রীকে ওষুধ খাওয়াতো। সব কাজ শেষ করতে প্রায়ই অনেক রাত হয়ে যেত। তখন মকবুল সালেহার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তো বেঘোরে। একদম কাদা কাদা হয়ে। শিশুর মতো।
হঠাৎ লঞ্চের সাইরেন বেজে ওঠায় সালেহার ভাবনায় ছেদ পড়লো। সে রেলিঙের দিকে এগিয়ে বসলো।
ডেকে ওদের সামনে কেবিন, অন্যপাশে রেলিং। ডানে বামে দুটি পরিবার। ডানদিকের পরিবারটিতে একজন মাঝবয়সী লোক, দুজন তরুণী এবং একটি শিশু। শিশুটি একজন তরুণীর কোলে হাত পা ছুড়ে চিৎকার করে কাঁদছে। ওর কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
তার পাশেই দুজন যুবক। অল্প একটু জায়গায় চাদর পেতে বসে আছে। উসকোখুসকো চেহারার দুজনেই জিন্সের প্যান্ট আর টি-শার্ট পরা। ওদের পায়ে চটি জুতা, একজনের হাতে বাহারি রঙের কাপড় পেঁচানো। সে দুই হাতের আঙুলগুলো দিয়ে কপালের চুলগুলো মাথার পিছনের দিকে সরিয়ে দিতে দিতে কৌতূহল চোখে চারপাশটা ভালোমতো দেখে নিচ্ছে।
মকবুল নড়েচড়ে সালেহাকে আরেকটু আড়াল দিয়ে বসলো।
আবার লঞ্চের সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে পুরো লঞ্চটাই দুলে উঠেলো। বিশাল এই লঞ্চটি চলতে আরম্ভ করেছে।
মকবুল মেয়েকে কোলে নিয়ে পা ছড়িয়ে বসেছে আর সালেহা ইফতারের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। বটি দিয়ে একটা আমের ছাল ছাড়িয়ে আমের একটু কোণা কেটে আঙুলে নিয়ে মেয়ের মুখের সামনে ধরলো সালেহা। ছোট্ট সুমাইয়ার সামনের একটা দাত কেবল উঠেছে। সে ঠোঁট গোল করে আগ্রহী হয়ে মায়ের হাত ধরতে চায়। সালেহা আমটুকু মেয়ের মুখের ভেতর পুরে দেয়। সুমাইয়া বাবার কোলে বসে তার ছোট্ট কপালে ভাঁজ ফেলে টুকটুকে ঠোটদুটো আরও গোল করে পাকা আম খায়।
পশ্চিমের আকাশে লাল সূর্যটা ডুবি ডুবি করছে।এক্ষুনি সন্ধ্যা নামবে। নদীর জলে অস্তগামী লাল সূর্যটার অপূর্ব এক ছায়া পড়েছে। মকবুল ওদিকে তাকিয়ে টুপিটা মাথায় পরে নেয়।মুখে উচ্চারণ করে, আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন।
তখনই সামনের কেবিনঘর থেকে একজন বেগুনি শাড়িপরা তরুণী বেরিয়ে এসে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। তার হাতে একটা বই। তরুণীটি কিছুক্ষণ একমনে নদীর জলের দিকে তাকিয়ে থেকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ঝটপট কয়েকটা ছবি তুললো। কেবিন থেকে নারীকণ্ঠের বৌমা ডাক শুনে সে আবার কেবিনের ভেতর চলে গেলো।
সালেহা ততক্ষণে আম কুচি কুচি করে মগে রেখে পলিথিন থেকে খানিকটা চিনি মগে ঢেলেছে। তাতে পানি মিশিয়ে শরবত বানানো হবে। পাউরুটির প্যাকেট খোলা হয়েছে। তার পাশে দুটি সাগরকলা। হকারের কাছ থেকে পাঁচ টাকার ছোলাও কিনেছে মকবুল। আজকের ইফতারের বিরাট আয়োজন।
চারিদিকেই এখন ইফতারের রকমারি খাবারের গন্ধ মৌ মৌ করছে। অন্যদিন সালেহা বাসায় একা একাই ইফতার করে। ভাতই খেয়ে নেয় সে। আর মকবুল থাকে ডিউটিতে। আযান হলে ওখানেই সে কিছু একটা খায়। রকমারি ছোলা, মুড়ি কিনতে কত পয়সা খরচ হয়! তাই প্রতিদিন সেসব কেনা হয় না। আজকাল মকবুলের একার আয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
যান, ওজু কইরা আয়েন।
ভাবনায় ডুবে গিয়েছিল সে। সালেহার কথায় যেন সম্বিত ফিরে পেলো। মেয়েকে মায়ের কোলে দিয়ে মকবুল বাথরুমের দিকে গেলো। একটু পরই ওজু করে ফিরে আসলো। এসে দেখলো সালেহা মেয়েকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।
বাথরুমের পাশেই একজন লোকের চাদরের কোনায় পাশের লোকটি ভুলবশত জুতা রাখায় লোকটি যারপরনাই ক্ষেপে গিয়ে বলেই যাচ্ছে, মোরে চেনো নাই। লঞ্চের মাস্টাররে জিগাইয়া দ্যাহো। মোরে বেবাক্কে চেনে। মোর লগে বওন লইয়া তেরিবেরি করতে আইয়ো না…।
ওই বেচারা ভুল করে খুব বিপদে পড়েছে। তৎক্ষণাৎ সে জুতা সরিয়ে ফেললেও এই ডেকে তার আশেপাশে যারা আছে তারা তাকে অপরাধী ভাবছে। কেউ একজন বললো, আপনেরা থামেন। আর এক মিনিট পরই আজান দেবে।
সবাই চুপ হয়ে গেলো। এতক্ষণে মাঝনদীতে এসে যাত্রীরা লঞ্চের ঘটঘট শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চের সাউন্ড সিস্টেমে আজান হলো। কয়েকটি অচেনা পাখি এই নদীটার শান্ত জলের ওপর দিয়ে নীরবে উড়ে গেলো। ধীরে ধীরে দিনের আলো বুকে লুকিয়ে আর অন্ধকার গায়ে মেখে পৃথিবীতে রাত নামতে শুরু করেছে।
ইফতার করে নামাজ পড়ে রেলিঙে হেলান দিয়ে বসতেই সালেহার চোখ ঘুম ঘুম। জলধোয়া বাতাস এসে তার দুই চোখে যেন ঘুমের মলম মেখে দিয়ে যাচ্ছে। ঘুমন্ত সুমাইয়াকে কোলে নিয়ে মকবুলও স্ত্রীর পাশে রেলিঙে হেলান দিয়ে বসে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। জেগে উঠল চারপাশের চেঁচামেচিতে। জানা গেলো সেই ক্ষেপাটে লোকটার ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে। সে চিৎকার করে কথা বলছে। দুইজন কেবিনবয় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। সে বলেই যাচ্ছে, এই তোমরা আমারে চেনো না? আমার ব্যাগে হাত দেছে, কত বড় সাহস! চোর, তুমি আমারে চেনো নাই। ঘুঘু দেখছো, ফাঁদ দ্যাহো নাই। ২৪ ঘোণ্টার মঈদদে ব্যাগ আমারে ফেরত দেতে অইবে। আপনেরা হুইন্না রাহেন।
সবাই ভ্রূকুঞ্চিত করে চুপচাপ সব শোনে আর মাথা নাড়ে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রাত বাড়ে, একসময় সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ে, লোকটাও থেমে যায়।
হিম হিম বাতাসে লঞ্চটা মেঘনার ঢেউয়ে ঢেউয়ে বেয়ে চলে। আকাশে মেঘ জমে বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার হলেও কেবিনের জানলা দিয়ে আলো ঠিকরে বাইরে আসছে ডেকে। ডেকের বাল্বের হলুদ আলোতে মকবুল আর সালেহা ভাত খেয়ে নেয়।
ধীরে ধীরে কেবিনের আলোগুলো নিভে যায়। ডেকের যাত্রীরা যে যার মতো শুয়ে পড়তে থাকে। সালেহাও মেয়েকে নিয়ে কাপড়ের পুটলায় মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে বালিশের মতো বানিয়ে মকবুলও শোয়। সেহরির সময় উঠতে হবে। কিন্তু আকাশের অবস্থা ভালো না। বৃষ্টি আসতে পারে। হঠাৎ চমকানো বিজলির আলোয় সে দেখলো তার ডানপাশের পরিবারের তরুণীটিকে। ওই পাশে হাতে কাপড় পেঁচানো যুবকের সঙ্গে আনত চোখে কী কথা বলছে সে!
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো মকবুল। বৃষ্টি হবে। ডেকে তো বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। যদি ঝড় আসে! নিজের কথা ভাবে না মকবুল। ভাবছে মেয়ের কথা, সালেহার কথা। কী হবে! ভাবতে ভাবতেই ঝিরঝির বর্ষা আরম্ভ হলো। টের পেয়ে সালেহা ঘুমন্ত মেয়ে সুমাইয়াকে আঁচল দিয়ে ঢেকে কেবিনের দেয়ালের দিকে সরে আসলো। কেবিনের দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলো আর দ্রুতবেগে চাদর তুলে ব্যাগ গুটিয়ে নিয়ে মকবুল দাঁড়িয়েছে সালেহার পেছনে। চাদরটা স্ত্রীর পিঠে জড়িয়ে দিলো সে। ততক্ষণে সুমাইয়াকে চাদরে পেঁচিয়ে নিলো সালেহা। কিন্তু এরই মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে গেছে মকবুলের পিঠ। সালেহার পিঠেও পানির ঝাপটা এসে লাগছে।
হঠাৎ খট করে পাশের কেবিনের দরজাটা খুলে গেলো। ছটফটে স্বভাবের সেই তরুণী সালেহাকে কেবিনের ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলো। তুমি এইহানে থাহো, আমি আইতেআছি—বলেই মকবুল ছুটে গেলো।
ঝড় নয়, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। তবু ভালো। ঝড় এলে তো ডুবে মরতে হতো। দুটি কেবিনের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মকবুল ভাবে। কাকভেজা হয়ে সে রীতিমতো কাঁপছে। তার দুই হাতে দুটি ব্যাগ। পাঞ্জাবি থেকে পানি ঝরে পড়ছে মেঝেতে। মকবুলের চোখ গেলো মেঝেতে নিজের নগ্ন পায়ের দিকে। তাড়াহুড়োয় সে জুতা ফেলে এসেছে। থাক। এক্ষুনি আর ওদিকে যাবে না সে। এখানে বৃষ্টির ছাট ততটা আসছে না। ওদিকে গেলেই এ জায়গাটা দখল হয়ে যাবে। তাই মকবুল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ধীরে ধীরে বৃষ্টির তেজ বাড়তে থাকে।
ফজরের আাজনের আগে আগে বৃষ্টি থামে। মকবুল তার বউ-বাচ্চার খবর নিতে সেই কেবিনে যায়। কিন্তু এ কি! কেবিনের দরজা হা হয়ে আছে। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেলো সবাই! বাথরুমে গেলো কি না, ভেবে বাথরুমগুলোর সামনে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করলো কিছুক্ষণ। নানারকম দুশ্চিন্তা আসতে শুরু করেছে মকবুলের মাথায়। ডেকের চারদিকে সে উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজে খুঁজে ঘুরছে। কিন্তু এভাবে ঘুরলে তো ওরা মকবুলকে খুঁজে পাবে না। আবার তাই কেবিনের সামনে এলো সে। একবার উঁকি দিলো ভেতরে। ওইতো সালেহা ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে বিছানার এক কোণায়। সুমাইয়া কই? মকবুল এগিয়ে গিয়ে এক হাতে সালেহাকে টেনে আনে এপাশে। ডাকে। কিন্তু সালেহা জাগে না। মকবুল বলতে থাকে—এ্যাঁই সালেহা, সুমাইয়া কই। এ্যাঁই সালেহা এ্যাঁই…
বলতে বলতে সালেহার নাকের কাছে তার ডান হাতের আঙুল ধরে দেখে সালেহার নিঃশ্বাস ভারী। এমন গভীরভাবে ঘুমোতে দেখে মকবুল রেগে গিয়ে পাশে রাখা পানির বোতল উপুড় করে দেয় সালেহার মাথায়। এ্যাই সালেহা, সুমাইয়া, আমার সুমাইয়া কই?
সালেহা জেগে উঠে বসে কয়েক সেকেন্ডে ধাতস্ত হয়ে বলে, অই মাতারি আমার সুমাইয়ারে চাইছিল, ওরা কই? বলেই ছিটকে বেরিয়ে পড়ে কেবিন থেকে। দৌড়াতে দৌড়াতে দোতলা থেকে নামে। সর্বশেষ কোন ঘাটে, কোথায় থেমেছিল এই লঞ্চ? কারোর কোলে কি সুমাইয়ারে কেউ দেখেছে? মায়ের মনে কত কিছু উঁকি দেয়, সালেহা ডুকরে ওঠে।