পাশের রুম থেকে ভেসে আসছে নাক ডাকার শব্দ। অন্য সময় হাবিবের বেশ বিরক্ত লাগতো। আজ ভালোই লাগছে ছগিরের এই উদ্ভট শব্দদূষণ। মোবাইলে টাইম দেখে হাবিব। রাত দুটো বেজে বত্রিশ মিনিট। গভীর রাত। ঘুমের আহ্বানে তলিয়ে গেছে পাড়া। শহরের কোলাহলও বোধহয় কিছুটা থেমে গেছে।
তিন রুমের বাসা হাবিবদের। দক্ষিণের রুমে থাকে ছগির, রিয়াজ। উত্তরের রুমে ফরহাদ, কফিল। যে রুমে হাবিব একা, কয়েকদিন আগেও পুবের এ রুমে তার সঙ্গে থাকতো এনাম। এনাম এখন ছগিরদের সঙ্গে থাকছে। তার কারণ আছে। গভীর রাতে ছগিরের নাক ডাকার শব্দই কেবল সঙ্গ দিচ্ছে হাবিবকে। অন্যকিছু না পাওয়ার কালে রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করা শব্দই আপন মনে হয় হাবিবের। লাইটের আলোয় ঘুম আসতো না তার, এই অভ্যেস কদিনে বদলে গেছে। লাইট না জ্বললে মনে হয়, কবরের অন্ধকার। মনের ভয়টা তখন কয়েকগুণ শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সামনে। লাইটটা ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। বিদ্যুৎ থাকলে তো জ্বলেই, না থাকলেও সাপ্লাই দেয় আলো। ম্যাচ ঘষে মোমবাতি জ্বালানোর দরকার পড়ে না আর। সিগারেট ফুকার অভ্যেস নেই বলে ধারেকাছে থাকে না দেশলাইয়ের বাক্স।
কষ্ট করে, অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে ব্যালকনিতে যায় হাবিব। ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাঁড়াতে চায় সে। স্থির হতে চেষ্টা চালায়। শেষতক সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে শিশু ভাবতে শুরু করে। বাচ্চারা কিছু অবলম্বন করে দাঁড়াতে চায়, পড়ে যায়, আবারও দাঁড়াতে চায়, আবারও পড়ে যায়। চলতে থাকে হার-জিতের এ খেলা। শিশুরা পারে না বয়সের কারণে, হাবিব পারছে না শক্তিহীনতায়। ডান হাত মুখে রাখে হাবিব। টের পায় অশ্রুর উপস্থিতি। নিজেকে তবু প্রবোধ দেয়। বাইরে তাকায়। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সোনাপুর টু হাজিগঞ্জ সড়কটা দেখা যায় পস্টভাবে। খেলাশেষে একা মাঠের রূপ নিয়ে শুয়ে আছে সড়কটা। আরও দূরে সাইনবোর্ড জ্বলজ্বল করছে সোনাইমুড়ি সরকারি কলেজের। সোনাইমুড়ি হয়ে পশ্চিমে নান্দিয়াপাড়া রুহুল আমিন নগরে যাওয়ার রাস্তাটায় দেখা যায় বেওয়ারিশ কুকুরের দল।
সেই বিউটি খালার বদদোয়া বুঝি কিনে নিয়েছে হাবিবের জিহ্বার স্বাদ? ঘটনা সত্য। এরকম কাজের বুয়ারা কাজ করে কয়েক ঘরে। একটা সেরে যায় আরেকটায়।
মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে দারোয়ানের বাঁশি। রাত জেগে ডিউটি করছে, সেটা বোধহয় জানান দিচ্ছে। হতে পারে, চোরসম্প্রদায়কে বলছে, ভায়া, কামের সুযোগ নাই, জেগে আছি আমি! ওটা ধরে গেলে নান্দিয়াপাড়া বাজার নামার একটু আগেই হাতের বামে রুহুল আমিন নগর। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জন্মভিটা। হাবিবেরা একবার গিয়েছিল বীরের জন্মডেরায়। সরকারিভাবে করা লাইব্রেরি কি স্মৃতিকেন্দ্রটির অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছিল সবার। আসলে এখানে বীরশ্রেষ্ঠের মর্যাদা বোঝার লোকের বড় অভাব। তাই অকেজো করে রাখছে লাইব্রেরিটা। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না হাবিব। পা বলে, আর পারছি না। হাত বলে, হলো তো, এবার ভেতরে চলো। চোখ বলে, ঝাপসা লাগছে সব।
বিছানায় নিজেকে সঁপে দেয় হাবিব। বিছানাকেই বেশ বিরক্ত লাগে তার। টানা সাত দিন আজ এই রুমে। সঙ্গী বলতে কেবল বিছানা-বালিশ। খাবার-দাবার এনাম দরোজায় রেখে যায়। তারা, মানে রুমমেটেরা চায় রুমে আসতে, আড্ডা মারতে, হাবিব নিষেধ করে। আপনাদের এখানে আসার দরকার নাই, ভালো করে হাত ধুঁয়ে নেন, ফ্রেশ হয়ে নেন, হাবিব উল্টো উপদেশ দেয়; দরোজার এ-পার থেকে। তার কথায় রুমমেটেরা দমে যায়। বাস্তবতার নিরিখে বিচার করে সময়কে।
এনাম, কফিল, রিয়াজ, ফরহাদ প্রত্যেকেই সোনার ছেলে। প্রাইভেট ব্যাংকে সারাদিন খাটতে হয় গাধার মতো। বসের অর্ডার আর কাস্টমারের চাহিদায় সময় শেষ। সরকারি নির্দেশনা মানে কজন? দশটার আগেই ব্যাংকের মেইন গেটে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে কাস্টমার। কারো মুখে নেই মাস্কের বালাই। সিউকিউরিটি গার্ডেরা মাস্কের প্রসঙ্গ তুলবে, উল্টো কথা শুনিয়ে দেয়। করোনা সব আপনাদের কাছে, কই কোন গরীব আক্রান্ত হইছে? দমে যায় গার্ডেরা, অফিসারেরাও।
অ্যাকাউন্ট দুদিন পরে খোলা যাবে, টাকা এটিএম থেকে নেওয়া যাবে নিজের মতো করে একলা সময়ে; তা মানবে কেন তারা? এসব নিয়েই রিয়াজদের দিন। হাবিব অফিসে যায় না আজ নয়দিন। সিন্টম দেখা যাবার পরই টেস্ট দেয় সে। রেজাল্ট পজেটিভ। তারপর থেকে এই রুমটাই তার সঙ্গি। বেচারা এনাম কষ্ট করে থাকছে অন্যদের সাথে। এনামটার কষ্ট চারিদিকে। অফিসে তার মেহনত অন্যদের চেয়ে বেশি। সে ফিল্ড অফিসার। ফিল্ডে গিয়ে বিনিয়োগ দিতে হয়। নিয়ে আসতে হয় কিস্তির টাকা।
বাইসাইকেল চালিয়ে সে যখন যায় তার সদস্যদের কাছে, কেউবা ফোঁড়ন কাটে, কিস্তিয়লা আসছে! চতুর কেউ বলে, এখন না বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধ আছে, কিস্তি নিতে আসলেন কেন তবে? একবার তো মহা ঝামেলা হয়েছিল এনামের। ঘোর বর্ষা। মাফ নেই তবু অফিসের কাজে। সমস্যা হচ্ছে, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনের কিস্তি আদায় করতে না পারলে পরের সপ্তায় তা উসুল করা মারাত্মক ব্যাপার হয়ে যায়। বৃষ্টিতে তলে যায় যাক, গরমে সব গলে যায় যাক, কিস্তি আদায় করতেই হবে। সেই ঘোর বর্ষায় এনাম যায় ছাতারপাইয়া বাজারের দক্ষিণে কালারাইতায়।
গ্রুপলিডারের বাসায় বসে কিস্তি আদায় শেষে বের হয়ে আসে সে। উঠোনে হাঁটুপানি। সাবধানে পা দেয় এনাম। হঠাৎ সাবধানতার বেখেয়ালে টুপ করে পা চলে যায় ওদিকে। শরীরের গতি রাখতে পারে না সে। ঝপাৎ করে পড়বি তো পড় একেবারে জলভর পুকুরে! ভিজে একাকার ফিল্ড অফিসার এনাম। ভেজা জামায় সে চলে আসে অফিসে। টাকা কামানো কত কষ্টের তা কি সবাই বোঝে? এনামের দীর্ঘশ্বাসটা পস্ট দেখতে পায় হাবিব। ঘুম আসে না হাবিবের। মনের আয়নায় ভেসে ওঠে এরকম অনেকানেক খণ্ডচিত্র। সে-ও মন্দ না। নিঃসঙ্গ সময়ের অবলম্বনের মতো সেগুলো নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে হাবিব। স্রোতে ভেসে আসা খড়কুটোর লাহান স্মৃতির ছাপোনারা ক্রমশ এগিয়ে আসছে তার দিকে।
স্যার, মানে ম্যানেজার স্যার রোজই খবর নেন। শরীরের কি অবস্থা, কেমন গতি সেসব জিজ্ঞেস করেন। আর বলেন, গরমপানি খাবেন, মাল্টার রসটাও উপকারি। অসম্ভব আন্তরিক ম্যানেজার স্যার। অধিনস্তদের সুখেদুখে পাশে থাকেন। পদবীর দূরত্ব কাটিয়ে তিনি সহজেই পরিবারের দীর্ঘদিনের চেনাজানা মানুষটির মতো হয়ে যান আপন গুণে। এনামদের দিয়ে কখনোবা পাঠিয়ে দেন ফলমূল। হাবিব যত পারে হাসি ধরে স্যারকে বলে, আলহামদুলিল্লাহ। এখন কিছুটা ভালো, মানে অনেকটাই ভালো স্যার। সন্তুষ্ট মনে স্যার রেখে দেন ফোন। ভাবে, সে কি আসলেই ভালো? আহ্, ক’দিন আগেও সর্দিসহ বমি, জ্বর একশ দুই। সারা শরীরে কে প্রহার করলো তবে? অসহ্য ব্যথায় বাপের নাম ভোলার দশা। সবচে বড় বিপদ, জিহ্বায় নেই স্বাদশক্তি। বেচারা এনামেরা কত কষ্ট করে রান্না করে! হাবিবের পছন্দসই ম্যানু রাখা হয়। মুখে কী দিচ্ছে, সে খবর ঠিকঠাক পায় না হাবিব। মনেহয়, মুখে মাটি নিচ্ছে। না, মাটিরও একটা চমৎকার ঘ্রাণ থাকে। মুখে দেয়া এসব পদের নেই কোন ঘ্রাণ, নেই কোন টান। এক লোমহা দিতেই ওয়াক করে বের হয়ে আসতে চায় তারা। আর খাওয়া হয় না হাবিবের। হাত ধুয়ে প্লেটে ঢেলে দেয় পানি। সাদা ভাতেরা হাসনাহেনা ফুলের বরণ নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। ছয়তলা বিল্ডিঙের উত্তর পাশেই বড় পুকুর। তারও উত্তরে বিরান বিল। সোনাইমুড়ির মতো লব্ধ সেমি-শহরে এরকম পুকুর তেমনটি নেই।
ব্যালকনি থেকে মাছেদের হাঁটাচলা দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। সেই পুকুরের দিক থেকে আসছে বেনামি পাখির ডাক। মনে ভর করে ভয়। মৃত্যুর মতো কিছু একটা অনুভব করে সে। হাবিব টাইম দেখে মোবাইলে। তিনটা বেজে পাঁচ। এখনো ঘুমিয়ে আছে দেশ, নিজের অনন্ত ঘুমের খবর কী দিয়ে গেছে পাখিটা? অস্থিরতা নিয়ে আসে নানা কু-ডাক। সুরা ইয়াছিনের কিছুটা পড়ে বুকে ফুঁ দেয় হাবিব। মনে হয়, দূর হয়ে গেছে ভয়টা। জিহ্বার অক্ষমতা ভেবে তার কেবলি বিউটিখালার কথা মনে পড়ে। বেচারি কত চমৎকার রান্না করে। মাসশেষে বেতন দিতে হয় তিন হাজার। মাথা হিসেবে পড়ে পাঁচশত টাকা। হালকা হাত ভারী অভ্যেস থাকলেও বিউটিখালার রান্নার হাত ভালো। রান্নার হাতের কথায় হাবিবের মনে পড়ে ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটকের কথা। হাবু ভাই কেমন করে যেন দেখতে চায় বুয়াদের রান্নার হাত! সেই বিউটি খালার বদদোয়া বুঝি কিনে নিয়েছে হাবিবের জিহ্বার স্বাদ? ঘটনা সত্য। এরকম কাজের বুয়ারা কাজ করে কয়েক ঘরে। একটা সেরে যায় আরেকটায়।
এদের হাত থেকে বাঁচতে চাইছে সবাই, আশ্চর্য ঘুমিয়ে আছে থানা, ঘুমিয়ে গেছে যাবতীয় কায়দাকানুন। চোখ খোলে হাবিব, দেখে তার চোখের জলে ভিজে গেছে জায়নামাজ; সেখানে অস্পস্টভাবে দেখা যায় ঝরাপাতার মতো কিছু!
দেশে করোনার আত্মীয়তা বেড়ে গেলে হাবিবদের বিল্ডিঙে যাদের ছিল কাজের বুয়া, সবার চাকরিই নট। তারা তবু স্থির ছিল। অফিস শেষে রান্না করার মতো এনার্জি শরীরে থাকে না। দেখা যায়, একদিন রান্না করলে আর যাওয়া যায় না রান্না ঘরের দিকে। ময়লা বাসনকোসন আর ডেকচি-পাতিলের স্তুপ দেখলে ভয় লাগে মনে। কিন্তু বাড়িয়লা সেসব ভাববে কেন? ঠিকই বলে দেন, আপনারা বুয়া বিদেয় করে দেন। তাদের ঠিকঠিকানা নাই, কত ঘরে যায়। অন্য ভাড়াটিয়ারা আপত্তি করছে। আপনারা তাকে না করে দেন। কতদিন রান্না করছে বেচারি। এই আকালে, মানুষও হয়ে যায় মানুষের পর! বিউটিখালা বিদায়কালে বলে, আপনারা আমার চাকরি খাইলেন! আপনাদের চাকরি কেউ খাইলে কেমন লাগতো? একদিন বুঝবেন আমাদের কষ্ট, বুঝবেন একদিন। ভেজাচোখে বিউটি খালা বিদেয় হয় হাবিবদের বাসা থেকে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লম্বা কথার ফিরিস্তি শেষ করলে খালাকে হাবিব বলে, এই গজব শেষ হলে আপনাকে ফোন দেবো খালা। পৃখিবীর এই অসুখের কাল নিশ্চয়ই শেষ হবে, আপনি আবারো আসবেন আমাদের বাসায়।
ভাবনার এদিক-ওদিক হলেও বিচানায় এদিক-ওদিক করতে বড় অসুবিধা লাগে হাবিবের। সারা শরীরে ব্যথা। ক্যানভাসারের ভাষায়, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। এখন ব্যথা বাড়াবাড়ি রকমের না হলেও কম নয় কিছুটা। ককিয়ে ওঠে সে। মনেমনে জপে মালিকের নাম। দুম করে ভাবনায় চলে আসে মৃত্যুভয়। প্রতিদিনই খবর আসছে, বেড়ে চলছে মৃত্যুহার। পরিচিত মুখ যেনবা হারিয়ে যাচ্ছে অচিন মিছিলে। কান্না আর হাহাকারের ছবি পত্রিকার নিত্য সঙ্গি। হকারদের আসাও নিষেধ এখন, তাও করেছে বাড়িয়লা। কোন কোন পত্রিকা জোর বিজ্ঞাপনী ভাষায় প্রচার করছে, কাগজে করোনার জীবাণু হাঁটে না। হাবিবেরা মোবাইলে পড়ে পত্রিকার তাজা খবর। মুহূর্তেই হাতের মুঠোয় চলে আসে নানান নিউজ।
রাতের নীরবতা ভেদ করে পশ্চিম দিক থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। রাস্তার ওপারের এই ক্লিনিকটা জেগে থাকে রাতদিন। ক্লান্তিহীন হল্লাকে মাঝেমাঝে বিদীর্ণ করে দেয় কান্না কি হাসির শব্দ। নবজাতকের আগমন হয় এখানে, কেউবা বিদেয় হয় দুনিয়ার চাষবাস থেকে। কান্নার শব্দ বলছে, বিয়োগব্যথা। সকাল হলে শোনা যাবে আসল খবর। কদিন আগেই তো মারা গেলেন অত্র এলাকার সবচে বড় ডাক্তার, সেবাকেন্দ্র ক্লিনিকটির প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার আনজুমান কবির। কে বিশ্বাস করবে, মৃত্যুর দুদিন আগেও তিনি রোগী দেখছেন! সময় বড় খারাপ।
কারও সঙ্গে কথা বলা কি হাত মেলানো এখন পরিবেশবিরোধী কম্ম। হাবিব ওঠে বসে বিছানায়। বাল্বের আলো দেখে। ওখানে দেখা যায়, মায়ের মুখ। বাড়ির কাউকে বলা হয়নি সে অসুস্থ্য, তার পজেটিভ। মার কান্নায় আকাশ ভাঙবে, বাবার কান্নায় পাতা ঝরবে; কাউকে তাই বলেনি হাবিব। বুঝতেও দেয়নি মনের খবর। আলোয় হাবিব দেখতে পায়, বিউটিখালা খালি বাসন সামনে বসে আছে সন্তানদের নিয়ে। সন্তানেরা খাবার চায়; তাদের মা বলে, ধর, নে, আমার গোস্ত খা তোরা, নইলে যারা আমার চাকরি খাইছে তাদের চামড়া খা। প্রচণ্ড ভয় ঘিরে ধরে হাবিবকে। এ কী দেখছি? আর ভাবতে পারে না সে, বিছানায় আবারো নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
তাহাজ্জুতের সময়টায় বেশ আনন্দ হয় হাবিবের। নিজের কিংবা পৃথিবীর এই ঘোরতর অসুখে এক রত্তি শান্তি বলতে এই মোলাকাত। মালিকের কাছে নত হয় সে, আরজি জানায়। আজ তাহাজ্জুতে দাঁড়িয়ে পা কাঁপে তার। ক্লান্তির অধিক ভয়ে কাঁপতে থাকে সে। হাজার চেষ্টা করেও সুরা ফাতিহা বের হয় না তার মুখ ফুটে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আশ্চর্য এক বেদনায় ভার হয়ে আছে তার। চোখ বন্ধ করে হাবিব। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। চোখের পর্দায় দৃশ্যকল্পের ন্যায় হাবিব দেখতে পায়, চাকরিহারা বুয়াদের অনাহারি বাচ্চারা ঝাড়ু হাতে ছুটে আসছে তথাকথিত আবাসিক এলাকার বিল্ডিংগুলোর দিকে; এলাকায় আসার আগে জ্বালিয়ে দেয় তারা বাজারের যত গুদামঘর, যেখানে এক টাকার জিনিস দশ টাকায় বেচতে মজুত করে রেখেছে হারামখোর ব্যবসায়ীরা। এদের হাত থেকে বাঁচতে চাইছে সবাই, আশ্চর্য ঘুমিয়ে আছে থানা, ঘুমিয়ে গেছে যাবতীয় কায়দাকানুন। চোখ খোলে হাবিব, দেখে তার চোখের জলে ভিজে গেছে জায়নামাজ; সেখানে অস্পস্টভাবে দেখা যায় ঝরাপাতার মতো কিছু!