আমরা দুই বোন। আমি আর রাবু। রাবু আমার চেয়ে দুই বছরের বড়।
রাবু শুধু সুন্দরী নয় বুদ্ধিমতীও। ওর সৌন্দর্যের চর্চা সবখানে। সবার মুখে। আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষও রাবুকে চেনে। সে কারণেই কি না, কে জানে ওকে খানিকটা অহঙ্কারী বলে মনে হয়। দিদির সঙ্গে মিশতে আমার একটু কষ্ট হয়। বরাবরই ওর ছায়াকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। শুধু যে দিদির কারণেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নয়। এজন্য বোধ হয় আমিও খানিকটা দায়ী। ওর পাশে দাঁড়ালে সবাই বলে, দুই বোনে কোনো মিল নেই। আকাশ আর পাতাল ব্যবধান। এসব কথা শুনলে খুব অভিমান হয়। অভিমান জমে জমে পাহাড়। পর্বত। আমি চেষ্টা করেও পর্বত ডিঙাতে পারি না।
বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখছি, আমাদের বাড়ির মেয়েরা সন্ধ্যার পর ছাদে যায় না। অলিখিত এই নিয়মটি কেন জানি বাড়ির সবাই মেনেও চলে।
অথচ সূর্যাস্তের সময় চারপাশটা অসম্ভব সুন্দর আর রঙিন দেখায়। আকাশের লজ্জারাঙা মুখ দেখতে প্রায়দিন আমি ছাদে যাই। চুপিসারে। পাখিদের কোলাহল থেমে গেলে আকাশকে রাজ্যের অভিযোগ জানাই। দিদিকে নিয়ে ঝগড়া করি অন্ধকারের সঙ্গে।
বড়দি’র সঙ্গে জহির স্যারের তুমুল প্রেম চলছে। সবকিছু জেনেও আমি চুপচাপ। বাতাসের মতো নীরব। প্রায়ই ভাবি দিদি যদি পালিয়ে যায়, তবে বেশ হয়। কালো বলে সবাই আমাকে যে অপমান করে, ওর প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে সেসব কলঙ্ক দূর হয়ে যাবে। কিন্তু সেই স্বপ্নে আমার মা বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। কী করে যেন তিনি সবকিছু জেনে গেলেন। তারপরেও কোনো শব্দ নেই। স্কুলে যাওয়ার পথে যে বটবৃক্ষ সব পথিকের খবর লিখে রাখে পাতায় পাতায়, মাও বুঝি তেমনি অনড়। বেশ বোঝা যায়, ঘটনাটা তিনি বাবাকে জানাননি। কোনো বিষয় বাবার গোচরে যাওয়া মানে হৈচৈ অতপর পুরো পরিবারের মাথাব্যথা।
আগেও লক্ষ করেছি মায়ের কৌশলগুলো একেবারে অন্যরকম। বাবার মতো নয়। তিনি কলকাঠি নাড়েন আড়াল থেকে।
এক সপ্তাহ সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চললো। তাতে ভাবলাম, মা বোধ হয়, বিষয়টি ভুলে গেছেন কিংবা ঘটনাটিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আমার ভুল ভাঙলো সেদিন বিকেলেই।
জানি না মন খারাপের সঙ্গে অন্ধকার গাঢ় হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না। এ নিয়ে ছোট চাচার সঙ্গে আলাপ করবো ভেবে বিষয়টা মাথায় ঠুকে রাখলাম।
সন্ধ্যার দিকে খেলা থেকে ফিরে এসে দেখি, রাবু একা একা পড়ার টেবিলে বসে আছে। অর্থাৎ জহির স্যার আসেননি। এ নিয়ে ভাবার তেমন অবকাশ পেলাম না। সামনেই আমার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই বই নিয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। আগে কখনো এমন হয়নি। প্রচণ্ড জ্বর নিয়েও স্যার ঠিক পড়াতে আসতেন। সারাদিন মনের ভেতর একটা সন্দেহপোকা খচখচ করে। একপ্রকার অস্থিরতা। জানি তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। বলা যায় টিউশনের টাকাতেই সংসার চলে। শুনেছি তার মায়ের অবস্থাও ভীষণ খারাপ। যখন তখন অবস্থা। এই পরিস্থিতে একটা টিউশনি ছুটে যাওয়া মানে যে নাজুক অবস্থা, সেটা বেশ বুঝতে পারি। এখন কিভাবে সংসার চলবে, কিভাবেই বা তিনি চিকিৎসার খরচ জোগাবেন, এসব ভেবে কিছুটা রাগ হলো মায়ের ওপর।
পরদিন বিকেলবেলা খেলতে যাবো, এমন সময় শুনতে পেলাম বড় চাচি প্রশ্ন করছেন, কী রে ছোট, জহির যে ক’দিন ধরে পড়াতে আসে না, ছেলেটার কি অসুখ-বিসুখ করলো না কি!
-না দিদি। এরপর কোনো কথা নেই। নীরবতা। মা বোধ হয় ডালে ফোড়ন দিচ্ছেন। সেই সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।
-তাহলে ছেলেটা যে পড়াতে আসে না!
-ওর পড়ানো ভালো ঠেকছে না দিদি।
-কী বলিস! ও তো আমার বড় ভাইয়ের ছেলেটাকে দিব্যি পড়ায়। আর জানিস তো ইমন স্কুলের ফাস্ট বয়।
-বাদ দাও দিদি। যা গেছে তা গেছে।
জহির স্যারের বিষয়ে আর কোনো আলাপ হলো না বাড়িতে। বড়দিও প্রতিক্রিয়াহীন। যেন মানুষটার জন্য মন পুড়ছে না। অথচ গতকাল মধ্যরাত অবধি ওর ঘরের আলো জ্বলছিল। ইদানিং চেহারাটাও বেশ মলিন দেখাচ্ছে। গর্তে ঢুকে গেছে কাজলকালো চোখ। সবকিছু আগের নিয়মে চলছে। আমি দিদির ছায়া ডিঙিয়ে স্কুলে যাচ্ছি। একই স্কুল আমাদের। একই পথ। তবু বড়দি বের হওয়ার দশ কী পনেরো মিনিট পর আমি বাড়ি থেকে বের হই। মা প্রায় ধমক দেন। এজন্য আমাকে প্রতিদিন একটা না একটা ছুঁতো বের করতে হয়। প্রায়দিন চেঁচিয়ে বলি, মা, আমার অঙ্ক বইটা পাচ্ছি না। টেবিল থেকে কে সরালো? সে নিয়ে মমতার মায়ের সঙ্গে তুলকালাম কাণ্ড বাধে, তোমাকে না বলেছি আমার জিনিসপত্র ছোঁবে না।
মাঝেমধ্যে ভাবি, স্কুলে যাওয়ার আরেকটা পথ থাকলে বেশ হতো। যে পথে দিদি চলাচল করে সেই পথের গাছপালাগুলোকেও ভীষণ অচেনা মনে হয়।
সামনে আমার বার্ষিক পরীক্ষা। তাই রবিবারে স্কুলে না গিয়ে একটানা পড়ছি। পড়ছি না বলে পাতা উল্টাচ্ছি বললে বোধ হয় বেশি যুক্তিযুক্ত হয়। এক নাগাড়ে পড়তে আমার কেমন যেন একঘেয়ে লাগে। তবু ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। মা বকবেন। যদিও আমার মন পড়ে আছে উঠানে। ওখানে নাইম আর মমতা খেলছে।
এদিকে দুপুর থেকে দিদির দেখা নেই। কয়েকবার ঘরের জানলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি, কী করছে ও। কিন্তু ওর ছায়ারও দেখা নেই। স্কুল থেকে ফিরে সেই যে ঘরে ঢুকেছে বোধ হয়, খেতেও যায়নি। বেশ শুকিয়ে গেছে এ কদিনের অর্ধাহারে। কারও সঙ্গে কথাবার্তা নেই। একপ্রকার স্বেচ্ছা নির্বাসন বলা যায়। তবে আমাদের মধ্যকার দূরত্ব বুঝি একটু একটু কমছে। নানা ছুঁতোয় আমি ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। যদিও ওর তরফ থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই।
শেষ বিকেল। হঠাৎ সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখি, মা হন্তদন্ত হয়ে ওপরে উঠছেন। সাধারণত বয়স্করা খুব একটা দোতালায় ওঠেন না। তারা একতলার বাসিন্দা। বড়দের মধ্যে শুধু ছোট চাচাই আমাদের সঙ্গে থাকেন৷ সম্ভবত নজর রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা।
মায়ের গমন পথের দিকে তাকিয়ে একটু খটকা লাগে। আমি কিছু শোনার জন্য দু’কান খাড়া করে আছি। সে কারণেই শুনতে পেলাম তার বক্তব্য, কাল থেকে তুই আর স্কুলে যাবি না। তোর খাবার দাবার সবকিছু মমতার মা ঘরে দিয়ে যাবে। মা সাধারণত এমন লঘু শব্দে কথা বলেন না। তারমধ্যে চিৎকার করার একটা প্রবণতা আছে। সম্ভবত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য তিনি এমন নিচু স্বরে কথা বলছেন। ওইটুকু বলেই তিনি হনহন করে নিচে নেমে গেলেন। এমনকি দিদিও চুপচাপ। এমন সিদ্ধান্তের কারণ আমার কাছে ঠিক বোধগম্য হলো না। দিদির বন্দিদশা আঁচ করতে পেরে মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে গেলো।
সন্ধ্যা সাতটা। অনেকটা জোর করে পড়াতে মন বসিয়েছি। এমন সময় নাইম দৌড়ে এলো। ওর চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যায় মারাত্মক কিছু ঘটেছে।
-কী রে গোয়েন্দা। কোনো গোপন খবর আছে নাকি?
-কাল বরপক্ষ রাবুদি’কে দেখতে আসবে।
-কী? বিস্ময়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সংযত করে আবার প্রশ্ন করি, কে বললো?
-বাবা আর চাচা মিলে আলোচনা করছেন।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম বড়দিকে কেন স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাতে সব রাগ গিয়ে পড়লো মায়ের ওপর। যদিও আমার বিষণ্ণতা কিংবা মন খারাপের কোনো কারণ নেই। তবু মনোগৃহে মেঘের আনাগোনা।
আমি একতলায় নেমে গেলাম। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য আমাকে বেশিদূর যেতে হলো না। বড় চাচির গলার আওয়াজ রান্নাঘর থেকে বসার ঘর অবধি চলে আসছে।
-কী রে ছোট, রাবুর বিয়ে নিয়ে এত তাড়া কিসের! মেয়েটাকে আর একটু পড়তে দিলে হয় না? আমাদের বকুলকেও তো এসএসসির পরেই বিয়ে দিলাম।
মা বোধহয় খুব নিচু স্বরে কিছু বললেন। যার এক
বিন্দুও বোধগম্য হলো না।
রাতে খাবার টেবিলে বড়দি বাদে সবাই উপস্থিত। কিন্তু ওর অনুপস্থিতি নিয়ে কেউ কোনো কথা তুললো না। যেন এটাই স্বাভাবিক। ঘণ্টাখানেক আগে একবার ওকে দেখেছিলাম পানির জগ নিয়ে নিচে নামতে। এরপর থেকে ঘরটা অন্ধকার। সম্ভবত ও ঘুমিয়ে আছে।
টেবিলে বাবা আর বড়চাচা মিলে আলোচনা করছেন। তবু থমথমে ভাব কাটছে না। যেন ষড়যন্ত্রের ইশারা পেয়ে প্রতাপশালী এক শূন্যতা জুড়ে বসেছে সবখানে।
আজ আমার আনন্দের দিন। খাবার টেবিলে দিদি নেই। সম্ভবত ও কালই চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি। তবু মনের মধ্যে যেমন আনন্দ হওয়ার কথা, তেমন হচ্ছে না। একটা বুকচাপা আর্তনাদ নিয়ে আমি ঘুমাতে গেলাম। তার আগে উঁকি মেরে দেখে নিলাম ওর ঘরের আলো জ্বলছে কি না! ওপাশে কোনো আলো নেই। অন্ধকার। জানি না মন খারাপের সঙ্গে অন্ধকার গাঢ় হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না। এ নিয়ে ছোট চাচার সঙ্গে আলাপ করবো ভেবে বিষয়টা মাথায় ঠুকে রাখলাম।
কিন্তু পুকুরের কাছে গিয়ে দেখলাম, ভুল নয়। সত্যি জলে একটা লাল শাপলা ফুটে আছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই পুকুরে কোনোদিন লাল শাপলা দেখিনি। এই প্রথম। যে জায়গায় রাবুদি’র শরীরটা উপুড় হয়ে ছিল, ঠিক সেই জায়গায় একটা লাল শাপলা বুঝি পুকুরের জল মাপছে।
মধ্যরাতে আচমকা আমার ঘুম ভেঙে গেলো। সচরাচর এমন হয় না। দু’চোখ মেলে বুঝতে চাইছি ঠিক কী কারণে জেগে উঠলাম। কেউ ডাকলো, না কি পাশের বাড়ির বিড়ালটা কিছু ফেলেছে? এদিক-সেদিক তাকিয়েও কিছু আন্দাজ করতে পারছি না। আবার ঘুমাতে যাবো, তখনই শুনতে পেলাম একতলায় হৈচৈ হচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সবার কথাবার্তা শুনে বুঝে নিলাম, দিদি ঘরে নেই। প্রথমে কথাটার অর্থ ঠিক বোধগম্য হলো না। এত রাতে দিদি কোথায় যাবে! নিশ্চয় ঘরের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে থেকে মজা নিচ্ছে। নাইমের সঙ্গে এই খেলাটা ও প্রায় খেলে থাকে।
বাড়ির পুরুষরা টর্চ লাইট নিয়ে যে যার মতো বেরিয়ে গেলো। মা চেয়ারে বসা, তিনি মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কান্না করছেন। বড় চাচি পাশে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছেন সান্ত্বনা দেওয়ার। বাকিরা কর্তব্য স্থির করতে না পেরে যে যার মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমি কোথাও নাইমকে দেখতে পেলাম না। ও বোধ হয় এখনো ঘুমিয়ে আছে।
দিদির লাপাত্তা হওয়া নিয়ে অনেক কথা মাথায় এলো। একবার মনে হলো ছাদে। একবার মমতাদের বাড়ির ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কিন্তু মমতার মা’কে দেখে বুঝলাম, এতক্ষণে ওদিকটা খুঁজে দেখা হয়েছে। এতে আমার দৃঢ় সন্দেহ হলো, ও বুঝি জহির স্যারের সঙ্গেই পালিয়ে গেছে।
-রাবুকে কিছু বলেছিস না কি? গতরাতে তো ওকে খাবার টেবিলেও দেখলাম না। এ প্রশ্নের উত্তরে মা চুপ করে রইলেন। এমন সময় রজত কাকু দৌড়ে এসে খবর দিলেন, তোমরা সবাই পুকুরপাড়ে চলো। একটা মানুষ মনে হয় পুকুরে ভাসতেছে।
রজত কাকুর কথায় আমি তেমন ভয় পেলাম না। একদিকে তিনি চোখে কম দেখেন। অন্যদিকে বড়দি শুধু জল নয় অন্ধকারকেও সমানভাবে ভয় পায়। বাবা অসংখ্যবার বলেছেন সাঁতার শিখতে কিন্তু কাজ হয়নি। এমনিতে বাবার নির্দেশকে অমান্য করার দুঃসাহস ও কোনোদিন দেখায়নি। আর সন্ধ্যার পর ওকে কোনোদিন দেখিনি বাড়ি থেকে বের হতে। বিষয়গুলো ভেবে অনেকটা আশ্বস্ত হলাম। কিন্তু উল্টোরথে গিয়ে খবরটা সত্যি প্রমাণিত হলো।
আমার ভীতু দিদি কী করে অতটা অন্ধকার পথ পার হয়ে পুকুরপাড়ে গেলো, সেটা একটা রহস্য। চিন্তারও বিষয়। কিন্তু এ নিয়ে একটা শব্দও কেউ উচ্চারণ করলো না। যেন কবর দিতে পারলেই মুক্তি।
বড়দি’র মৃত্যুর পরদিন থেকে আমি নিয়ম করে পুকুরপাড়ে যাই। সকাল বিকাল। অনেকক্ষণ বসে থাকি পুকুরপাড়ে। বোঝার চেষ্টা করি, সেদিন রাতে কী ঘটেছিল। কেনই বা অমন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েছিল দিদি। এসব ভেবে স্কুলের সময় পার হয়ে যায়। কখনো মধ্যাহ্ন।
এক বিকেলে জহির স্যার এসে ঘুরে গেলেন। আমি বিষয়টা জানলাম পরে। সন্ধ্যার দিকে দরজার আড়াল থেকে শুনতে পেলাম, মা রজত কাকুকে চুপিচুপি বলছেন, ওই ছেলেটাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। দরজা থেকেই বিদায় করবেন।
এ কথা শুনে বুকের মাঝখান থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস অবমুক্ত হলো।
পড়ালেখার চাপে আমি বেশ কদিন বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। যদিও পুকুরটা খুব টানছিল। চুম্বকীয় টান উপেক্ষা করে কোনোমতে পরীক্ষা দিলাম। স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকিনি। ব্যাগটা রজত কাকুর হাতে দিয়ে পুকুরের দিকে বড় বড় পা ফেলছি। দুপুরের হলকা বাতাসে আমার কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। বর্ষা শেষ হতে আরও কিছুদিন বাকি আছে। অথচ পথের ঘাস এমনকি গাছপালা পর্যন্ত নেতিয়ে আছে। সম্ভবত কাল বা পরশু বৃষ্টি হবে। তারই বুঝি আয়োজন চলছে।
পথে যেতে যেতে গাছের আড়াল থেকে যা দেখলাম, তাকে সত্য বলে মেনে নিতে কষ্ট হলো। মনে হলো, এটা চোখের ভুল। এমন ঝাঁ-ঝাঁ রোদ্দুরে অনেকে নাকি চোখে ভুল দেখে থাকে। আর বড়দি যেদিন মারা গেলো, তার পরদিন থেকে এমনিতেই ভুলভাল দেখছি। মনে হচ্ছে এই দিদির ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো। কখনো ঠুকঠাক শব্দ। কিন্তু পুকুরের কাছে গিয়ে দেখলাম, ভুল নয়। সত্যি জলে একটা লাল শাপলা ফুটে আছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই পুকুরে কোনোদিন লাল শাপলা দেখিনি। এই প্রথম। যে জায়গায় রাবুদি’র শরীরটা উপুড় হয়ে ছিল, ঠিক সেই জায়গায় একটা লাল শাপলা বুঝি পুকুরের জল মাপছে।
আরও পড়ুন: প্রথম গল্প