পোড়ো বাড়িটা যেন খেরোখাতা। নিবাসী যুবক তাতে নিরুত্তর আঁকিয়ে। পেন্সিলে, চারকোলে অসভ্য মানুষদের চিন-পরিচিতজন বানানোর পাঠ চলে অভ্যেসের বসে। বায়ান্নটা পোর্ট্রেট। টেরাকোটার মতো দেয়াল-উদ্গত ধ্বস্ত জনজাতি যেন মুখগুলো। নীরবতার ষড়যন্ত্রে চলে এসেছে সুদূর আততায়ী সভ্যতায়। তারা প্রান্তিক। সংখ্যালঘু। কেউ নরসুন্দর সরু মোড়ল, কেউ রিকশা-পেইন্টার গৌরাঙ্গ দাস, কেউ ছুটাকাজের বুয়া সুফিয়া, কেউ বাদমঅলা মঙ্গল মিয়া। গ্রাফাইট রেখায় জ্যান্ত হয়ে উঠেছে বায়োস্কোপঅলা রাজামিয়া, ঘটক রুস্তম আলী মোল্লা, কাসিদা গায়ক রেজা হাফিজ। হাইক্কার মা, শুক্কুর আলী, পরশিয়া বেগম, দেওয়ান আলীর পোর্ট্রেট কামস্ফীত পরিপূর্ণ গমের থোড়ের শীৎকারে যেন রতিমৈথুনে কাতরাচ্ছে-ছিন্নমস্তার অভিশাপের মতো এক উত্তর মানুষ তুলে দিতে।
সভ্যতার নির্মম বিনির্মাণের যে শেষ আনবে! নন্দীপাড়ার রাহেলা বেগম; রিকশা গ্যারেজের মেসে রান্নাশ্রমিক, কোনো দূর এক অচিন জগতের কথা ডুকরে ওঠে তার কণ্ঠে, ‘পইক্-পাখিরা লগে আছিল। অহনও আছে। মানুষ যত খারাপ অইবার পারে পাখিরা কিন্তুক ততডা খারাপ অয় না।’ ট্যাকের হাটের মিন্তি সুরত আলীর মা, ছেলের শোকে হাওড়ের পানির দিকে তাকিয়ে বিনিয়ে বিনিয়ে সারাদিন কাঁদেন! ফুলকুড়োনি পাপড়ির কিশোরী চোখ, ছাই বিক্রেতা আয়েশার বয়ঃসন্ধিক্ষণে প্রথম রজঃস্বলায় দুধে স্ফীতস্তন এবং স্তনাগ্রের শঙ্খশুভ্রতায় সলজ্জ রমণীয় দৃষ্টি অভ্যস্ততায় নির্বিকার। শুধু হাড়-গোড়ের লালশব্দ, মাংসের একত্রে আসার শব্দ শোনা যায় দেয়ালের হৃৎপিণ্ডে-বায়ান্নটি মৃত মুখের!
মৃত্যুরা জন্ম নেয় রক্তের ভেতরে, মানুষের দেহে পুষ্টি পায়, ঘা মারে। ওষ্ঠপুট আর মুখের গহ্বর থেকে উড়ে উড়ে আসে। তারপর, প্রমত্ত সামন্তের মতো জীবনের ভূমিকে বিভাজন করে খণ্ড-বিখণ্ড, ছিন্ন-বিচ্ছিন্নের শেষে জোর করে টেনে দেয় দখলের আল।
যুবকটি মৃত্যুকে তুলে নিয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখে। যেন সেটি মানুষের শরীর ছাড়া অন্যকিছু নয়। মৃত্যুর গঠনশৈলী তাকে হতভম্ব করে না। সে শব্দ উচ্চারণ করে, এবং এই তো সে আছে সম্পূর্ণ রুদ্ধবাক হয়ে। এভাবে শব্দের সীমানায় যায়, নৈঃশব্দ্যকে স্পর্শ করে আসে। দৈববাণীর মতো মন্ত্রময় ভাঙন চার দেয়ালে। পোর্ট্রেট করা মানুষগুলোর খুলির ওপর আস্তানা পেতেছে প্রেত-ছায়ার চাঁদ। নারকীয় কষ্টে মানুষগুলোর কী কাতরানি, কে যেন রক্তের লবণাক্ততা চেটে নিচ্ছে জিহ্বায়। ওদের হাসি; নিবিয়ে দেওয়া রক্তে আর্দ্র, স্নাত। আর চোখ ঢেকে যাচ্ছে তন্দ্রাহীনতার ক্ষিপ্ত কুয়াশায়। গন্ধক রঙের পাখি আর কুৎসিত নাড়িভুঁড়ি ঝুলে আছে সেখানে, মনে হলো যুবকের।
ওদের সমস্ত দেহ আর মুখমণ্ডল রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত। এখন ওদের জীবনে স্পন্দন নেই। যেন বৃক্ষহীন সমতল ক্ষেত্রের মতো বিরাণ, বেদনা আর লঞ্ছনার দগ্ধদহনের প্রলেপে আচ্ছাদিত তাদের সারাদেহ। ওদের রক্ত কোনো বনজঙ্গলে গড়িয়ে পড়ে না আর। কোনো তৃষ্ণার্ত বালুর স্তরও তাদের চুষে খায় না। কেউ কখনো এ রক্তধারা অনাবৃত করতেও আসে না। এভাবে ক্রমাগত ওদের বুকের কাঁইয়ের মধ্যেই ডুবে ডুবে যাবে, এই তাজা রক্ত। জাগতিক নিয়ম এমনটা হয়তো না! মধুপিয়াসী মৌমাছিরা জ্যামিতিক স্বতঃসিদ্ধ মেনে ফিরে আসে শত শতকের পরও আপন মণ্ডলে। ঠিক সেই স্থির প্রতিবিম্বনে ইতিহাসও অলক্ষ্যে প্রতিপক্ষ হয়ে যায় তাদের। প্রতিটি রক্তের ফোঁটা তখন জ্বলতে থাকে এক একটি আগুনের ফুলকি হয়ে।
পোর্ট্রেটের চোখে চোখ ফেলে, শীত, ঋতু নাকি নদীগর্ভ থেকে কখন কীভাবে এলো যুবকটি জানতে পারেনি। আর তখনই আত্মার মধ্যে কিছু যেনো শুরু হয়ে গেলো। বিস্মৃত প্রায় পাখিদের ডানায় ভর করে সে পথ খুঁজতে শুরু করলো। এক প্রচণ্ড ভীতি চকচকে ধারালো মূল্য ছুরিকার মতো খণ্ড খণ্ড করে চলেছে তাকে। সিঁটিয়ে যাচ্ছে সে। প্রতিটি নিহত পোর্ট্রেট থেকে জন্ম নিচ্ছে এক একটি শ্যেনদৃষ্টি রাইফেল, প্রতিটি পাপ থেকে জন্ম নিচ্ছে এক একটি বুলেট। একদিন না একদিন যা খুঁজে পাবে হৃৎপিণ্ডের অব্যর্থ লক্ষ্যবিন্দু। সে জানে!
আঁধারের সভ্যতা শুরুর আগে এ যেন পশ্চিম দিগন্তের রক্তাক্ত প্রতিভাস।
বাইরে চোখ মোটা করে তাকিয়ে আছে দুপুর-জৈষ্ঠ্যের সূর্য। রোয়াইল ফলের গাছতলায় যুবকের দ্বিতল ছাড়া বাড়িটি। কিছুটা হলেও তাই ছায়ার স্বস্তি। গাছতলাটা কালো মাটির চটানভূমি যেন। খরানির রুখু মাটি থেকে সহজে আলাদা করা যায়। সেই ভূমিতে একটি কাক আর দুটো ভাত শালিক অনাহারি ভঙ্গিতে চরছে। শ্যামামেয়ে আধ-ঘোমটায় যেমন অরূপরূপিনী; আধেক ছাদের খোয়াড় বাড়িটি তেমনই। ছাদের ওপর শ্যাওলার শ্যামলা আস্তরণ যেন শ্রেয়সীর মেটে মুখের ছাপ। একতলার আধ-ছাদে তোলা হয়েছে পূর্ব-পশ্চিমে পাতা এর অর্ধদ্বিতল ঘরগুলো। দ্বিতলের ছাদে আগুন-গেরুয়া মেটে টালিগুলো সেখানে হাপরের কয়লার মতো জ্বলছে জ্যৈষ্ঠের দহন বাতাসে। মুখোমুখি কয়েকটি টানা দেওয়া দড়িতে কাশফুলের মতো দুলছে দুটি সাদা ফিনফিনে আলখেল্লা। খানিকটা হেঁটে দক্ষিণে এলে চাটাই আর মুলিবাঁশের চার দেয়ালে একচালা টিনের একটি চিলেকোঠা। তবু তারা নেই সেখানে। কবুতরগুলো নিজেদের খোপ ছেড়ে ডানা ঝামড়ে গিয়ে বসে সেই চিলেকোঠার মাথাজুড়ে। টব চোখে পড়ে না। অথচ গাছেরও খুব একদম অভাব নেই। বয়েসী বাড়ির দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে পড়েছে তারা। দেয়ালবৃক্ষ। জানালায় ঘরের অন্তঃসজ্জা সেকেলে ঠেকলো। মাথা তোলা মানুষের নোংরা চোখ ফাঁকি দিতে যুবক যেন আপ্রাণ গৃহবন্দি সেখানে। সবুজ রঙের দু’ভাগ দরজার ঘর। জানালাগুলো কাঠের খিলানের সারিটানা। আলোর বিপরীতে জানালা গলিয়ে খিলানের কঙ্কালময় ছায়াপাত যেনো আলোরই মৃতদেহ; ৩২ লাখ বছর আগে জন্ম নেওয়া আদিমানবী ইথিওপিয়ান লুসির মতো।
দুপুরের ঠিক পরপরই তাড়াহুড়ো করে বদলে যাচ্ছে সূর্যের রঙ। মিষ্টি হয়ে উঠছে রোদ। লালচে একটা আভা খেলা করছে রোয়াইল ফলগুলোর গায়ে। ওদিকে যুবকের মোহ নিজের সঙ্গে নিজের খেলাতেই। নিজেকে হারাতেই ক্ষ্যাপা উৎসাহ তার। বেড়পাকের মায়াজালে নিজেকে আচ্ছন্ন করাটাও দুর্দমনীয় এক নেশা। যুবকটি তাসের ম্যাজিকে জাত ধাঁধিয়ে। চোখ বুঁজে পকেটের মধ্যে থেকে চিড়িতনের গোলাম বের করে দিয়ে বিস্মিত করতে পারে সবাইকে, হরতনের নওলাকে হাত ঘুরিয়ে নিমিষের মধ্যে বানিয়ে দেয় গোলাম। মহিলার শাড়ির ভাঁজ থেকে ইস্কাপনের সাহেব বের করে তার কাছে কপট তাড়না। আর সবার কাছে উচ্ছ্বসিত সাধুবাদ লুফে নিতেও সে নিরন্তর সহজাত। তিন তাসের পাঁচ-দশের কারবারি সে নয়, বায়ান্ন তাস নিয়ে খেলে চলে নিজেই নিজের সঙ্গে। আজ যেন আত্মপক্ষের বিপরীতে খেলতে মন ফিরলো না ওর। উঠে গিয়ে ছোট ফ্রিজ থেকে এক বোতল বাডওয়েজার বের করে আনলো। একটা গ্লাসসহ বোতলটা কাচের টি-টেবিলে রাখলো। তারপর, নীরবে পান করতে লাগলো ও। অন্যমনস্ক। দুচোখ গর্তে বসা। নিচে গভীর কালির পোচ। মণির পাশে সাদা জমিনে সূক্ষ্ম লাল লাল শিরা জেগে আছে, অনেকদিন ঘুম না হওয়ার লক্ষণ। চেহারায় উদ্বেগের ছাপ। ওর গ্লাস ধরা হাতটা যেন পাথর কেটে তৈরি। শূন্যে স্থির। কাচের গায়ে জমে ওঠা শীতল স্বেদবিন্দু দেখছে ও আনমনে। দুই ভুরুর মাঝখানটা কুঁচকে আছে। আজ তৃতীয় প্রহর রাতে আরেকটি প্রলেতারিয়েত মুখের পোর্ট্রেট আঁকবে সে। চারকোলের চেয়ে পেন্সিলেই গড়তে ভালোবাসে-ওদের অসভ্য মুখগুলো। নিজ চেহারার অমন বিতিকিচ্ছি অবস্থা বোধ হয় সেই গর্ভ বেদনা থেকেই ওর। একে একে বায়ান্নটি পোর্ট্রেট জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিবারই ওর বিকৃতি এর চেয়ে ভালো ছিল না। এ তার বিনাশী সৃজনের আগাম সংকেত। ব্রিটিশ আমলের বড় একটা প্রপেলর ফ্যান মন্থর বেগে ঘুরছে মাথার ওপর। গা চড়চড় করে উঠলো তবু। না পেরে, সামনের খোলা ছাদে সে পা ভাঙলো।
মিষ্টি হাওয়া রোয়াইলের পাতা থেকে উড়ে এসে যুবকের কপালে চুলে বিলি কাটছে। কাছেপিঠে কোথাও, ওই কালো রোয়াইল গাছের ওপাশে এক অদ্ভূত শব্দ হচ্ছে, কান্নার মিহিসুর ভেসে আসছে শব্দের উৎস থেকে। ওখানেই তো স্টিল সেফের প্যাপাইরাস মিউজিয়াম। যার বেসমেন্টে এক কাচের বাক্সে বন্দি ‘দ্য সেভেন্থ স্ক্রোল’। তাহলে কি হিক্সস কাঁদছে!
ছাদের খোলা জায়গা থেকে সরাসরি যুবকের স্টাডিরুমে পৌঁছানো যায়। খোলা দরজার দিকে এগোলো সে। স্টাডিতে ঢুকেই লম্বা স্টিল সেফের সামনে এসে দাঁড়ালো, হাতল ঘুরিয়ে কমবিনেশন লক খুলছে। গাদা গাদা প্রাচীন বই-পুস্তক আর রাশি রাশি গুটানো স্ক্রোল বা প্যাপাইরাস রয়েছে স্টাডিতে, আরও আছে অসংখ্য প্রাচীন মূর্তি; আর্টিফ্যাক্ট, ব্রোঞ্জ ও সিরামিকের কয়েকটি ভাস্কর্যও। পোর্ট্রেটের বাইরেও দেয়ালের গায়ে ঝুলছে বিভিন্ন পটচিত্র, কালীঘাটের পট ও সরাচিত্র। এ সবই তার সারা জীবনের সঞ্চয় ও সংগ্রহ। খুব মনে হচ্ছে, এতোকিছুর মাঝে সেফটা এ ঘরে মানায়নি। সেফের কাচের সুইংডোর খুলে যেতে এক মুহূর্ত স্থির হয়ে থাকলো সে। প্রাচীন এইসব পুরানিদর্শন দিনের মধ্যে যতবারই দেখুক, সশ্রদ্ধ ভয় ও বিস্ময় মেশানো একটা অনুভূতি অবশ করে দেয় ওকে। ‘দ্য সেভেন্থ স্ক্রোল’ ফিসফিস করলো, ওটা ছোঁয়ার মুহূর্তে শক্ত হয়ে উঠলো পেশী। সেভেন্থ স্ক্রোল বা গুটানো প্যাপাইরাসে লেখা সপ্তমলিপি প্রায় চারহাজার বছরের পুরনো, লিখে রেখে গেছে সময়কে জয় করে ইতিহাসে ঠাঁই নেওয়া বিশাল এক প্রতিভা। সে বেঁচে ছিল কয়েক সহস্র বছর আগে, ধুলোয় মিশে নিঃশেষ হয়ে গেছে তার অস্তিত্ব। কিন্তু, তার লিখে যাওয়া সভ্যতার নিষ্ঠুর উন্মেষের কথা চিরন্তন ও অবিনাশী। সভ্যতার কী আশ্চর্য ও রক্তাক্ত কাহিনিই না বলা হয়েছে ওগুলোয়! সেসব যেন কবর থেকে স্পষ্ট উঠে আসে যুবকের কানে, ভেসে আসে স্বর্গীয় উদ্যান থেকে।
কপিশ রঙের খাটাশে চোখের টিকটিকিটা দেয়ালে ঝুপা মেরে দেখছিল সে অলৌকিক কাণ্ড। চোখ ঘুলিয়ে এলে তাতে জিহ্বা বুলিয়ে আনছে আবার। ঠিক যেমন করে ওয়াইপার দুলে দুলে গাড়ির কাচের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনে। আতঙ্কে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলো যুবকটি সে সময়। হঠাৎ সংবিৎ ফিরতে ছুটলো দরজার দিকে। সে স্পষ্ট দেখলো, সপ্তম স্ক্রোলের লেখক টাইটা সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছে। যেন রোমান দাস স্পার্টাকাসের সহস্রাব্দের পূর্বপুরুষ সে। গ্লাডিয়েটরের মতো মৃত্যু খেলায় মেতেছে। যুবকটি ওর পিছু নিলো। সাদা শার্টের ওপর ক্রিমসন টাই ফাঁস আলগা করে দিয়েছে ওর। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো সে। চিড়বিড় করছে গায়ের মধ্যে। ট্যাক্সির বিলীয়মান ব্যাকলাইটের আলো দৃষ্টিসীমার বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো এক জায়গায়। সভ্যতার নির্মাতা ভূম্যাধিকারী প্রথা, দখল, বিদ্রোহ দমন, সামন্ততন্ত্র, গৃহযুদ্ধ, হাম্বুরাবির কানুনী দাসত্ব, কলোনিয়াল কালডিয়ানিক শোষণ; এমনকি সুবিধাভোগী পুরোহিতদের ঘোষিত রাজা কাইরুসের ঐশ্বরিক মুখও এই মুহূর্তে ওর স্নায়ুতন্ত্রীতে বায়োস্কোপিক প্রকৌশলে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেখানে সভ্যতা বারবার রক্তাক্ত হয়ে উঠছে; রক্তাক্ত ভূ-ভাগ সভ্যতার গঙ্গোদকে আবার পবিত্র হয়ে যাচ্ছে! রক্ত ও সভ্যতা একাকার হয়ে জমে হয়ে উঠছে রক্তাক্ততা!
সভ্যতার রক্তপ্লাবী ইতিহাসের লেখক, ওই তো সে ছোট হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওকে খুঁজে পেতেই হবে। ওর আস্তিন উত্তর-আফ্রিকান প্রাচীন সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসের পূর্ণায়তন ভাঁড়ার। গা ঝটকে যুবকটি তারপর উঠে পড়লো ব্যস্ত ফুটপাতে। পথচারীদের ধাক্কা এড়াতে এঁকেবেঁকে ফুটপাত অতিক্রম করলো। ততক্ষণে, খড়ের গাদায় খুদের মতো ঘাতক সভ্যতার পথে হারিয়ে যেতে লাগলো বোহেমিয়ান ‘টাইটা’।
এক কুন্তল ছনের পালায় আগুন লাগলে তার মধ্যকেন্দ্রে যেমন ছাইয়ের কালো ছোপ দেখা যায়; অস্তমিত সূর্যের বুকে দিগন্তের গাঢ় মেঘ এখন তেমনি অনুষঙ্গ। আঁধারের সভ্যতা শুরুর আগে এ যেন পশ্চিম দিগন্তের রক্তাক্ত প্রতিভাস। দূরে কোথাও, সন্ধ্যার জল-বন্দরে জাহাজের প্রপেলর অনার্য শিশুর মতো অসভ্য আওয়াজ তুলছে!