‘বেল বাজে এগোরোডা। অহনও ফটুর দোহান খুলবার নাম নাই! রমিজ্জ্যা একডা কুইড়ার বাদশা। হেয় মনে লয় গুমাইয়া গুমাইয়াই জেবন কাটাইবো।’
‘ছবিঘরে’র গা-লাগোয়া ‘নিরাময়’ ওষুধের দোকান। বিকট শব্দে জং ধরা সাটার খুলেছে পিচ্চি মনা—এই মাত্র। হীরু মিয়া জর্দাভরা ডাবল পানের রসে ঢোক গিলে বলে, ‘কী হইল কাহা? ব্যাজার ক্যান বা?’ এ প্রশ্নের কোনো জবাব হয় না। মতলুব সওদাগরের ব্যাজার বুজার তার অন্তরভার গহীন খাদে। দশকান হওয়ার নয়।
আইজকা দিন কয় ‘ছবিঘরে’ সওদাগরের লেফট রাইট চলতাছে। এইডা না কইর্যা তো তার কুনুই রাস্তা নাই। আইজকা সে যেমুন তারাবিবির মিউ বিলাইডা। ঘাড়ত্যাড়া মহাকঞ্জুস সওদাগর। বিবিজানও খাড়ে দজ্জাল। সমানে সমান। বিষগিট্টু।
সওদাগরের কন্যা পুতুল ডিবি কপাইল্যা জামাই পাইছে। পুতুল এখন হাউইবাজির মতোন ঝিলমিল করতাছে আম্রিকায়! মাধবদী গাঁয়ের মানু কুয়ার মইধ্যেই পইড়্যা রইলো! তারা কয় পুত্রা নাকি ঠ্যাঙের আধা বাইর কইর্যা রাখে। হরহামেশা একখান গাড়িও দাবড়ায়। চুলগুলা ব্যাডাগো লাহান! বাসরে, মাইয়া একখান!
পুতুলের ঘর দুয়ারের কী-বা রোশনাই। পুতুল এখন দেয়ালজুড়ে ফ্যামিলি অ্যালবাম সাজাবে। পুত্র ডিউক, স্বামী হেদায়েতউল্লাহ ও তার নিজের নানা ভঙ্গিমার ফটোগ্রাফ ইত্যবসরে সাজানো হয়েছে। এমনকী নাদান স্বামী অর্ধশিক্ষিত বেকুব শ্বশুর, পাতিলের কালি গাঁইয়া ভূত শাশুড়ির ফটো সগৌরবে টাঙ্গিয়ে রেখেছে। পুতুলের এখন শতভাগ অধিকার তার মা-বাজানের হাসিখুশি ভরা মহিমাময় ফটোগুলো টাঙ্গানো। পুতুলের বাজান জোতদার। তার যে ভূঁই সব সরেস-উঁচা জমিন। ফসলাদি ফলে বেশুমার। মতলুব সওদাগর রাতে বালিশে শিথান দিয়ে দোয়া কালাম যৎকিঞ্চিৎ পড়ে হয়তো, কিন্তু তার ফরজ কর্মটি হলো গোলার ধান, লাল মরিচের ডোল, মৎস্যকুল, সদরের দোকানদারির প্রতিদিনকার হিসাব-নিকাশ মনে মনে এবং সোচ্চারে জপতে থাকা। খাপে খাপে হিসাবাদি মিলে গেলে জোতদার জোরে জোরে তালিয়া বাজায়। ত্যাড়া সুপুষ্ট গর্দান ডানে বামে দোলায়। আর কোথাও সরিষা পরিমাণ গড়বড় হলে দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে। সওদাগর পুতুলের আকদ্ পড়ানোর দিনও ঘণ্টা তিন উধাও হয়েছিল। পুব পাড়ার দশ বিঘা ধানি জমি রেজিস্ট্রি কর্মে মহাব্যস্ত থাকতে হয়েছিল তাকে।
মহল্লায় এত বড় দালান বাড়ি আর কারও নাই। সওদাগর বাড়িতে কত বছর আগে ট্রানজিস্টার, রঙিন টিভির আগমন ঘটেছে। পোর্সেলিনের বর্তনে ভাত খায় মতলুব সওদাগর। তারাবিবির সাতখান মীরপুর কাতান, দুইখান ময়ুরকণ্ঠী রঙের সানন্দা কাতান, এমনকী কমলকারি শাড়িও আছে আলমারির ডালায় ভরা। ভ্যানিটি ব্যাগে রুজ লিপিস্টিক সবই আছে। সাজুনি আয়নাও আছে দীঘলে পাথালে দশাসই। মাধবদীর ঝি-বৌরা দেখে দাঁতকপাটি লাগুক মনে মনে—এ রকম একটা ইশারা ছিল হয়তো তারাবিবির! মানুষটা দিলখোলা। হাসতে হাসতে কুমড়া লতার মতো ঢলে পড়ে। রাও-বাও পারে আশ-পড়শির সঙ্গে। সওদাগর হলো একটা সিমেন্টের থাম্বা। অমাবস্যা লেপ্টে থাকে বছরভর। সওদাগরের ধমকধামকিতে বর্গাচাষিরা, মুনি মানুষগুলা কঞ্চির মতো তড়পায়। এ গাঁয়ের অলিখিত জমিদার সে—গান্দা জমিদার! এক চিল্লানিতে পুরানা গোরস্থানের কব্বরের খোড়ল থেকে দাদা-পরদাদারা হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে! জোতদারের কত লীলা! এই জাতের মানুষটা পুতলারে তার কলজার টুকরা জ্ঞান করে। জামাতা এমএ পাস। হেদায়েতুল্লাহ্কে জোতদার খানিক সম্মান করে আবার ডরায়ও। পুতলাডার সুখের ডরে? এমন দুধারি দাঁতাল করাতের কোন কোণায় মোমডলা খানিক পলিশ ছিল! আল্লাহ্পাক বিনে এ মোজেজা বোঝে না কেউ।
কন্যা বলছে, ‘বাজান কয়েকখান জোস ফটু পাডান। জলদি ত্বরাত্বরি। কুইক কইলাম। আমি ভেরি বিজি বাজান। দেওয়ালে শ্বশুর, শাশুড়ি পান-খাওয়া কালাকুষ্টি দাঁত ক্যালাইয়া হাসতাছেন। আপনেরা কবে হাসবেন আমার ওয়ালে। হেগরে দেখলে আমার মনডা টাটায় বাজান। হাইস্যা হাইস্যা নাইস ফডু পাডান। কুইক। আমার মায়েরে হাসনের কতা কওন লাগব না। মায়ে যেমুন আসমান ফাডাইয়া কানতে পারে, তেমুনই খইমুড়ির লাহান হাসতেও পারে। যত্ত ভেজাল আপনের মুকখানে হাসি দেহি নাই। আপনের হাসিডা যে কেমুন‒মনে করবার পারতাছি না।’
জোতদার মাস ছয় দাড়ি রাখছে। মাথায় ফকফকা টুপিখান বহাল হয়েছে। চক্ষু দুইডা অবশ্য ইটভাটার আগুন, তপ্ত ছনছনে শাবলের ফলা। সওদাগরের কালাকুলা থলথলা গম্ভীর চেহারার দিকে সরাসরি নজর করে এমন কোন ব্যাডা আছে নাহি এ তল্লাটে? সওদাগরের মুখের হাসিটুক কোন মানু দেখছে কি না, জানা দায়। যে ব্যক্তি দেখছে সে আসমানের চান দেখছে।
তারাবিবি দজ্জাল হলেও আমুদে মানুষ। তার হাসি দেখলেও সওদাগর গমগম করতো, ‘এত হাসন বালা না। পরে কান্দন লাগব।’ বিবি জানে সওদাগরের মুখে হাসিডা বেমানান-লাগে! কেমন জানি খাপে খাপে বসে না। কেমুন জানি! দেওয়ার দিনে যেমুন ঝলকানি মারে দেওবিদ্যুৎ। আচানক তার হাসিখান ঝিল্লিক মারতে মারতে গেলো গা। আইলো আর গেলো। যেমুন চাবুকখান মারতে মারতে গেলো গা। সওদাগরের বুজি মনে হয় হাইস্যা গোনা করছে। হাসলে তার কদর কইম্যা যাইবো। তা নইলে জেল জরিমানা কিছু একটা হইয়া যাইবো?
ছবিখানের মইধ্যে মোহররম সওদাগরের নুরানি হাসি। তাঁর দিলের মায়া কুহক! হাসতাছেন বাপধন!
এ কয়দিন দিনে রাইতে পুত্লার ফোনাফুনিতে কিঞ্চিৎ অতিষ্ঠ জোতদার। মনডা গুবগুব করে। কলিজার টুকরা মাইয়া আম্রিকার সাদাগুলার সাতে মিশ্যা আউলা হইয়্যা গেছে গা। এত হাইস্যা হাইস্যা দিন কাটাইলে এই জোত জমিন গোল্লায় যাইতো রে পুত্লা। হাস্য দিয়া প্যাট ভরবো না মাইয়া।
গত শনিবার মতলুব জোতদার রমিজ্জ্যার ছবিঘরে উপস্থিত হয়েছিল। এই সেদিনকা এই পোলা জাম্বুরা দিয়া ফুটবল খেলছে। আর আজক্যা সে দোকান খুইলা বসছে। কী তার কেরামতি! এই পোলাই তো পুত্লারে বালোবাসার পত্র দিছিল! সেই ব্যাডা তার মাথায় ঘোল ঢালতাছে! কপাল।
অন্ধকার যেন চারপাশ থেকে গিলে খায় সওদাগরকে। সেই গলা সমান আন্দার ঘরে বসে সওদাগরের তিয়াস পাইছিল। পানির তিয়াস। কব্বরের খোড়লে সে গলা পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। দশখান হ্যাজাকি বাত্তির আলো আচানক তার কালাকুলা মুখখান ঝলসে দিয়েছিল। নিজের মাথাখান আর নিজের মনে হচ্ছিল না। ডানে বামে কাতে কত নক্শা। রমিজ্জ্যা কাউ কাউ করে, ‘কাহা এত ব্যাজার ক্যান গো? একটু হাসন লাগব। হাসেন কাহা। আর একটুখানি।’ সওদাগরের বরং কান্দন পাইতাছিল! কেমনে হাসবে সে? ঠোঁট ছড়াইয়া একটা ‘কঠিন’ হাসি হেসেছিল সে। কপাল মন্দ। ক্যামেরাখান পুরাপুরি রেডি হতে হতে সেই ‘কঠিন’ হাসিটুকু কি কোনখানে পালিয়ে গিয়ে রেহাই পেয়েছিল! জানে না সে। অদৃষ্টের ওপর তার কি হাত আছে?
ঠিক পরের দিন। হলুদ রোদমাখা পড়ন্ত বিকালে জোতদার উপস্থিত ‘ছবিঘরে’। মনে হয় মাজারের টানে সে হাজির। ছবিঘরের লোকজন টেবিলে ছড়ানো তার ছবিগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মিঠু আর নিতাই উপুড় হয়ে দেখছে। গতবারের ছবিটা আগুনে পোড়াইয়া ফেলছে জোতদার। সওদাগর আঁধারি ঘরে ক্যামেরার ঝলকানিতে কেবল বেদিশা হয়ে পড়ে। এই বিষয়টি নিয়ে ওরা খোশগল্পে মত্ত ছিল খানিক আগে। নিতাই দাস ক্যারিকেচার করেছিল। দাপুটে মতলুব সওদাগর ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিৎ হাস্যরেখা ফুটাতে ঠোঁটটারে ভ্যাটকায়, ব্যাঁকায়, টান টান করে‒আজব! হাসির ফোয়ারা ছুটেছিল ‘ছবিঘরে’।
জোতদার তরুবুরু করতে করতে নিজের ফটোখান ঈষৎ কম্পমান হস্তে আঁকড়ে ধরে। আচানক বুকের পোক্ত পাঁজর ভেদ করে কয়টা শব্দ উৎক্ষিপ্ত হয়ে বাক্যরচনা করে, ‘আমি নাহি এইরহম!’ তার সদা ভাঁজ পড়া বিরক্ত কপালে আরও কয়টা শীর্ণ নদী জেগে ওঠে!
পুত্লার বায়নাডা তার কাছে কঠিন থেকে কটিনতর হতে থাকে। ‘মাইয়া সাদাগো লগে মিশ্যা আউলা হয়্যা গেছে।’ বিড় বিড় করতে করতে বাড়ি ফেরে সওদাগর।
মাগরিবের পরপর তারাবিবির চওড়া সাজুনি আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে মানুষটা। আহা একমাত্র সন্তান অহনও সয়-সম্পত্তি দাবি করে নাই। চাইছে এক টুকরা হাসি! জোতদারের এখন কান্দন পায়। সাজুনি আয়না তারে ডাকতাছে। সে নবউদ্যোমে দাঁড়ায়। পুষ্পহাসির মকশো করতে থাকে। তারাবানু তেরছা চোখে ঘায়েল করে জীবনসাথী থাম্বা সুরতের মানুষটারে। এমন মধুর জীবনটারে বরবাদ করে দিলো নীরস মানুষটা। বাপরে দোষায় তারাবিবি। খালি শতকানি জমি জিরাত, কাঁঠালবাগ দেইখাই উতলা হয়েছিল তার বাজান। হাসিখুশি ফড়িঙের মতো মেয়েটারে জিন্দা কব্বরে নামায়া দিলো! ‘ফটু তুলবার গেলে চেহারাখান করল্লাতিতা বানাও কিয়েরে?’ নির্ভয়ে কথাকটি বাতাসে ভাসিয়ে দেয় বিবি। বালিকাবেলায় যেমন–কাগজের নৌকাখান পুকুরে ভাসায়ে এক ধেয়ানে বসে থাকতো।
সওদাগর ছনছনে তপ্ত শাবল চক্ষুদ্বয় সামনে পুষ্পহাসির মকশো করতে থাকে। পুত্লার বায়না! বাপের ছবির ভিত্রে নুরানি হাসির মলম লাগবো! বৃদ্ধ শিরা-উশিরায় গরম রক্তঝরনা ছলবল করে ওঠে? ‘আমি মতলুব জোতদার। আমার একখান কথা একখান দলিল! বামুনের নতুন পৈতা লাগব? আহারে আয়নার মইধ্যে হাসিটা আইতাছে। এইতো সোন্দর আইতাছে। কিন্তুক ফটু তুলবার গেলে চ্যাংব্যাঙ করে কিয়েরে?’ পাগলপারা দাপুটে মানুষটা।
তারাবানু এক সিটিংয়ে মায়াদারি হাসি দিয়ে মনকাড়া ফটো তুলেছে। রমিজ্জ্যা শয়তানের ছাও। কয়, ‘আপনের হাসিডা নাহি কবরীর লাহান। কাহা তো রেজ্জাক হবার পারব না ইহজন্মে। কয় মিটিং দিলাম কাহী। হেরে হাসতে কইলে সে খালি তাওড়ায়! মনে লয় হাসতে কইলে তার কান্দন আইসা পড়ে। জীবনভর চিল্লানি পাল্লানিতে ওস্তাদ মানু তাইনে!’ তারাবানুর মনে নতুন জোয়ারের পানি ছলবল করে। ‘এই রহম পাষাণ মানুডার লগে জীবনডা কয়লা করলাম। হরবোলা পক্ষীডারে খাঁচায় বন্দি কইরা রাখলো মানুষডা। হাশরের ময়দানে এর জবাবডা দেওন লাগব। নাকি আল্লাহাল্লাও তার দলে? জোতদারের মনে ভীমরুলের চাক। জন্মকালে মুহে মদু পড়ে নাই। শাউড়ি বাঁইচা থাকলে জিগাইতাম। আহারে শউররে দেখছি। ফিরিশতা। একডা হাসি না দিয়া রাও করতো না গো। জোতদার তারই সন্তান?’
এইবারের লেফট রাইটও বিফলে গেলো। ফটুডার মইধ্যে মানুষডা ইবলিশের চাউনি নিয়ে ভেসে আছে!
ফটুডা নিজের হাতে চুলার আগুনে পোড়ালো মতলুব। হাসতে গেলে কঠিন সওদাগরি ভাবখান তারে হিলহিলে চাবুক মারতে থাকে! মনডা বেকুব বেকুব ভাব ধরে, ‘দুইশো কানি জমিন, কাঁঠালবাগ, রূপালি মৎস্যময় পুকুর দুইডা, হাতিরদিয়া বাজারে ছয়ডা মনোহারী দোহান এক ধেয়ানে গোছ মিছিল করি। আর অহন-পুত্লার জন্যে ফটুর মইধ্যে একখান হাসি ভইর্যা দিতাম পারি না?’ বিবির সাজুনি আয়নার ধারে যাইতে ইচ্ছা হয় না আজ।
আজ যেন বা ‘ছবিঘরে’র পথে আখেরি যাত্রা সওদাগরের। রমিজের ফটো স্টুডিও। অন্ধকার ঘুপচি কবরখানা। পুরান নকশী চেয়ারে আসীন হয় জোতদার। বুকের মইধ্যে কেনবা টিপ টিপ করে। তিন ঠ্যাঙ্গের ওপর একখান তাগড়া বাক্সে-যন্ত্রে? রমিজ্জ্যার ক্যামেরাখান। আজ সে বয়ান করে তার ফটোবিদ্যার বৃত্তান্ত। তার মহিমা! পুতুলের মুখখান কেন জানি তরুণের মনে দাগা দিতে থাকে।
অতপর পাঁচটা হ্যাজাক বাত্তির আলোর ঝলকানি যেন লুটিয়ে পড়ে সওদাগরের মুখখানের ঝলসানো চামড়ায় লোমকূপের গোড়ায়। খানিক ভিমরি খায় জোতদার। হাসতে চায়‒আসে কান্দন। দুই চক্ষু বন্ধ কইর্যা সে মোহররম সওদাগরের‒তার মরহুম বাপধনরে স্মরণ করে। কলজাডা খানিক শীতল হয়।
পরদিন আসরের ওয়াক্তে জোতদার হাজির ফটোঘরে। ‘ছবিঘরে’র তিন জন মানুষ ঝুঁকে পড়ে তার ছবিখান দেখছিল। মনডা কু ডাকে। ‘ফটুর মইধ্যে পোক পড়ছেনি? হেরা পোক বিছরায়?
ফটোখান হাতে হাসি যেন উপচে পড়ে। ছবিখানের মইধ্যে মোহররম সওদাগরের নুরানি হাসি। তাঁর দিলের মায়া কুহক!
হাসতাছেন বাপধন!