দীর্ঘ ঘুমের পর শরীরটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ সময় পেশীগুলো শিথিল করে দেহটাকে বিছানায় ছড়িয়ে রাখতে বেশ ভালো লাগে। জয়িতা চোখ দুটি দৃষ্টি ঘোলাটে করে গালে বালিশের উষ্ণ-উষ্ণ আদর নেয়। বাসি বিছানার ওম গন্ধটা তার নাকে এসে লাগে। এই গন্ধটা জয়িতার কাছে খুবই পুরনো ও আপন মনে হয়। জীবনের পেছনটা ধোঁয়াটে অতীতে হারিয়ে যেতে চাইলেও কিছু কিছু ঘ্রাণ তাকে সজীব করে রাখে। যেমন তার বাবার শুভ্র পাঞ্জাবির সেই সূক্ষ্ম গন্ধটা, যা ভালোবাসার স্নিগ্ধ একটা সৌরভ ছড়াতো। তার বাবা গত হয়েছে সেই কবে। তবু সে সৌরভ জয়িতার আশে পাশে ভেসে বেড়ায়। হয়ত বসন্তের কোনো বিরহী সন্ধ্যায় কিংবা শরতের বিষণ্ন সকালে সে দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনির গ্রিল ধরে। সেই সৌরভের স্পর্শ তার বিষণ্ন মনকে নাড়া দেয় এক পশলা বৃষ্টির মতো। এসব মুহূর্তে জয়িতা তার বাবার অস্তিত্ব টের পায়। ভালোবাসার অদৃশ্য অলৌকিক স্পর্শে তার বাবা যেন তার মাথায় আদর বুলিয়ে দিচ্ছে, আর বলছে, ভাবিসনে মা, তোর বোবা কষ্টগুলো আমি একটু একটু করে শুষে নেব। জয়িতার বিশ্বাস এই নির্মল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত—ভালোবাসাকে মৃত্যুও ধ্বংস করতে পারে না। সে ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ে ভর করে জীবন্ত থাকে। তবে ভালোবাসা সম্পর্কে এরফানের ধারণাটা তার সঙ্গে একেবারেই মেলে না। এরফানের কাছে ভালোবাসা নিত্য ব্যবহার্য বস্তুর মতো। প্রতিদিনের ব্যবহারে তা অটুট ও স্থায়ী হয়। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আদান-প্রদানের ব্যাপারটা তার কাছে বেশি গুরুত্ব পায়। প্রেমময় দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে এরফান একটা মজার ছেলেমানুষী করে। ড্রয়িং রুমে সে এক জোড়া লাল মোমবাতি প্রতি সাঁঝে জ্বালিয়ে দেয়। অবশ্য এরফানের অনুরোধে জ্বালানোর কাজটা জয়িতাকেই করতে হয়। কারণ সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো সময় কোথায় এরফানের? শোকেসের ওপর সে রেখেছে দুখানা চীনা পুতুল। পুতুল দুটিকে রসিকতা করে এরফান ক্লোন অব জয়িতা বলে। কারণ জয়িতার চেহারার অবয়ব অনেকটা মোঙ্গোলিয়ানদের মতো। জোড়া জোড়া সৌখিন সামগ্রী দিয়ে সংসার সাজালে দাম্পত্য জীবনে নাকি সুখ আসে, স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পক অটুট ও গভীর হয়। ব্যবসার কাজে চিনে গিয়ে সে এ বিশ্বাসটা আমদানি করে এনেছে। এরফান অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী একজন লোক। তিন বছর আগে যখন তার সঙ্গে জয়িতার বিয়ে হয় তখন এরফান ঢাকায় একটি আইন কলেজে শিক্ষকতা করত। বছর দুয়েক আগে কলেজ থেকে ফিরে সে জয়িতাকে বলে, কলেজের চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। এরফানের কথায় জয়িতা অবাক হয়, চাকরি ছেড়ে দিলে মানে? জয়িতার বিস্ফোরিত চোখ দেখে এরফান হাসতে হাসতে বলে, এত আশ্চর্য হচ্ছ কেন? সারা মাস বেতনের অল্প কটা টাকা নিয়ে টানাটানি আর ভালোলাগে না।
কেন,আমি কি কোনো অনুযোগ করেছি তোমার কাছে?
ঐ জন্যই তো তোমাকে এত ভালোবাসি। জয়িতার হাত দুটি ধরে তাকে বুকের কাছে টেনে নেয় এরফান।
জয়িতা এরফানের বুকে নাক ঘষে বলে, তাহলে এখন কী করবে?
ব্যবসা করব। তুমি তো জানো আমি একটা বায়িং হাউসের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। বায়িং-এর ব্যবসা প্রায় শিখে ফেলেছি। বাকিটা শিখব কাজে নেমে। হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত নেইনি, এ পরিকল্পনা আমার দীর্ঘ দিনের।
ধীরে ধীরে এরফান তার ব্যবসার মধ্যে একেবারে ডুবে গেল। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন সে সফলতার মুখও দেখতে শুরু করেছে। মহাম্মদপুরে বড় অফিস নিয়েছে। দেড় রুমের সাবলেট ফ্লাট ছেড়ে চার রুমের সুন্দর ফ্লাটে সংসার পেতেছে। কিছু দিনের মধ্যে একটা গাড়িও নাকি কিনবে সে। কিন্তু এরফান সফলতার সিঁড়ি বেয়ে যত উপরে উঠছে জয়িতা ততই একা হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে তো তার পুরনো জায়গাতেই রয়ে গেছে। তার এ একা হয়ে যাওয়াটা দিন দিন জয়িতার কাছে অসহ্য হয়ে উঠছে। প্রথম প্রথম ব্যবসার ট্রিপে এরফান যখন বিদেশ যেত জয়িতাকে সঙ্গে নিত। এখন তাতেও আগ্রহ দেখায় না এরফান। জয়িতা সঙ্গে গেলে তার এক দিনের কাজ সারতে দুই দিন; তিন দিনের কাজ সারতে ছয় দিন লেগে যায়। এরফানের বিরুদ্ধে জয়িতার মনে এত ক্ষোভ, এত অভিযোগ কেন? নাকি এরফানের মাঝে আজো বিজনকে খুঁজে ফেরে সে। একটি মানুষ কি কখনো আরেকজনের মতো হয়? নিশ্চয় নয়।
আত্মার মতো এ ঘর থেকে ওঘরে ঘুরে বেড়িয়ে জয়িতার দিন কাটে। তবে এরই মধ্যে জয়িতার জীবনে সুখের এক নতুন শিহরণ জেগেছিল। তার দেহের মধ্যে বেড়ে উঠছিল আরেকটি অস্তিত্ব। সেই নতুন অস্তিত্বে জেগে ওঠা নতুন জীবন প্রাণ ভরে পৃথিবীর বায়ু নেবার আগে হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। মৃত প্রায় শুকনো গাছে গজিয়ে ওঠা নব পল্লবের মতো জয়িতা যখন জীবনের নতুন অর্থ খুঁজতে ব্যাকুল তখনই হঠাৎ যেন এক ঝাপটা ঝড়ো বাতাস এসে সমূলে উপড়ে ফেলল তাকে। সে মুখ থুবড়ে পড়ে পুরনো আঁধার গলিতে। ডাক্তার খুব সহজ করে বলেছিল নির্মম কথাটা,পানির যে নিরাপদ গোলকের মধ্যে ভ্রূণ পরিপূর্ণ শিশু হয়ে ওঠে, আপনার সেই গোলকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে একটি শিশুর পরিচিত কান্নায় জয়িতার প্রায় ঘুম ভেঙে যায়। সেদিন শেষ রাতে চিৎকার করে কাঁদছিল ও। সেই কান্নার শব্দে জয়িতার ঘুম ভেঙে গেলে সে বিছানায় বসে পড়ে। অথচ তারপর কোনো কান্না শোনেনি জয়িতা। এরফানকে না জাগিয়ে জয়িতা ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। শিরশিরে হিম বাতাস তার দেহে আদর বুলিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে নিতে চাইল। নীরব নিঝুম রাতের এ দুরন্ত বাতাসটাকে জয়িতার অতি মানবীয় ও জীবন্ত মনে হয়। দুরন্ত সে যেন প্রাণের কথা বলতে চাইছে জয়িতাকে। বাতাস কি জানে তার সেই শিশুটির কথা, যে আসতে চেয়েছিল জয়িতার কোল জুড়ে। যদি সে একবার বাতাসের মতো ভেসে ওর নরম শরীর ছুঁয়ে দিতে পারত।
এই আকস্মিক দুর্ঘটনার পর এরফান যেন তার ব্যাপারে অগ্রহ একেবারে হারিয়ে ফেলেছে। অবশ্য ব্যস্ততাও এর কারণ হতে পারে। এমনও দিন যায় অশরীরী আত্মার মতো নিঝুম রাতে এরফান বাড়ি ফিরে আবার সূর্য ওঠার আগে বের হয়ে যায়। এভাবে জয়িতার একাকী হৃদয় তুষের আগুনে জ্বলতে থাকে। সে জানে না এরফান এখন কার মাঝে ভালোবাসা খোঁজে, অর্থ না কি অন্য কোনো নারী?
জয়িতার আজকাল বার বার বিজনের কথা মনে পড়ে। বিজন তাকে নীলাম্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। বাটালি পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কত বিকেল তারা হাতে হাত রেখে আকাশ দেখেছে—দুচোখ ভরে আকাশের নীল মেখেছে। এক শারদীয় উৎসবে জয়িতা লাল শাড়ি পরে বিজনের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। বিজন মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছিল, আজ তোমাকে সাক্ষাৎ মা দুর্গা মনে হচ্ছে। তোমাকে আমি আমার হৃদয়ের মন্দিরে প্রতিস্থাপন করলাম। ওখানে আজীবন তুমি থাকবে। আমৃত্যু আমার দেবীর বিসর্জন আমি দেব না।
ধর্মীয় ব্যবধান জয়িতার নীল আকাশ মাখার স্বপ্নকে সত্য হতে দেয়নি। সমাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ওরা ক্ষত বিক্ষত হয়েছে বার বার। বিজন একদিন হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। পরে অবশ্য জয়িতা জানতে পারে সে এখন কলকাতায়। তার কয়েক বছর পর হালি শহরের বাস্তুভিটা সহ সমস্ত সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ওর পরিবারের আন্যরাও ভারতে চলে গেছে। কেমন আছে বিজন? এখন কি তার হৃদয় মন্দিরে জয়িতা বাস করে?
জয়িতা আলসেমির ভারে নুয়ে পড়া চোখের পাপড়ি দুটো তুলে গোল্ডফিশের ছোট জারটার দিকে তাকায়। ওতে মাত্র দুটি মাছ রেখেছিল এরফান। তার একটা আবার মাস খানেক আগে মারা গেছে। যেটা আছে সেটার জীবন প্রদীপ নিভুনিভু করছে। কদিন ধরে কিচ্ছু খাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় জারের তলায় শুয়ে থাকে। কানকো দুটো ধুকপুকিয়ে ওঠানামা করে আর মুখ দিয়ে বুদ বুদ ছাড়ে অবিরাম। জারের গায়ে টোকা দিলে সে লাফিয়ে ওঠে; এদিক ওদিক চায় জীবনের নতুন কোনো প্রত্যাশায়।
মাঝে মাঝে মুখ নেড়ে খাবি খেতে খেতে মাছটা জয়িতাকে কী যেন বলতে চায়। সে যেন বলে, জয়িতা তুমি আমার কষ্ট বোঝো না? আমি তো তোমার প্রতিটি মুহূর্তের খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো হৃদয়ের স্পন্দনের মতোই অনুভব করি। আমার সত্তা যে তোমার সত্তায় বিলীন হয়ে আছে। তুমিও তো আমার মতো স্বচ্ছ এক বলয়ে আবদ্ধ।
গোল্ডফিশের কথার উত্তরে জয়িতা অলস একটা হাসি দেয়।
তুমিও কি আমার মতো চাও না অসীম নীল সমুদ্রে সাঁতার দিতে অবিরাম… অবিরাম, বাধাহীন, বন্ধনহীন…।
জয়িতা আবার হাসে। তার চোখ দুটো বুজে এলে সম্মুখের দৃশ্যপট নীল হয়ে যায়, যেন একটা নীল আকাশ অথবা নীল সমুদ্র। মাছটি আবার বলে ওঠে, আসলে তুমি আমার ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়াটা অনুভব করতে চাইছ আপন অস্তিত্ব দিয়ে। পৃথিবী যখন প্রাণের মুক্তি দিতে কৃপণতা করে তখন প্রাণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মুক্তির পথ খুঁজে নেয়।
জয়িতা অবাক হয়। দার্শনিকের মতো কথা বলে অতটুকু মাছ! মৃত্যুর সফেদ অনুভূতিতে জয়িতার রক্ত কবরের মাটির মতো হিম হয়ে আসে। ফেনিল উষ্ণ রক্ত স্রোত হারিয়ে—পথ হারিয়ে জমাট বাঁধা থলথলে পিণ্ডে পরিণত হয়। সেই সঙ্গে দেহটা জড়ের মতো নিঃসাড় হয়ে পড়ে।
মাছটা আবার বলে ওঠে, তবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে হঠাৎ মরে যাওয়াটা বেশি সুখের নয়? তুমি কি তেমন মৃত্যু আমাকে উপহার দিতে পারো না?
নাহ্, না আমি পারি না। জয়িতা এক ঝটকায় বিছানা ছেড়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বিকেলের কমলা আকাশ এখান থেকে তেল রঙে আঁকা ছবির পটের মতো দেখায়। ব্যালকনির গ্রিল ভেঙে আকাশের কমলা রঙ মেখে আসতে জয়িতার বড় ইচ্ছে করে। ছোট বেলায় সে শুনেছে মৃতেরা ওই আকাশের নরম বিছানায় ঘুমিয়ে থাকে। রাত হলে তারা হয়ে জেগে ওঠে। তবে কি শৈশবের গল্পবলা দিদা তারা হয়ে আকাশে বাস করে? আজো কি সে শিশু তারাদের গল্প শোনায়? আজ কেন তার কাছে জীবন অর্থহীন—তবে কি মৃত্যুই অর্থময়? জীবনের প্রতি তার বিশ্বাস, আস্থাগুলো শীতের শুকনো পাতার মতো ঝরে ঝরে পড়ছে। অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে বসন্ত ফিরে কি আসবে না তার পৃথিবীতে? যে জীবন প্রাণের স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায় সে তো মৃত্যুরই স্বপ্ন দেখবে। তার সুন্দর স্বপ্নগুলো সজীবতা হারাতে হারাতে যেন ঠুনকো হয়ে গেছে।
সন্ধ্যার কালচে আঁধার আকাশটাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। মুনশি বাড়ির কালো বিড়ালটা ধপ করে ব্যালকনির পাশের বৃদ্ধা পেয়ারা গাছটার ডালে এসে পড়ে। তার জ্বলজ্বলে হলদে নিষ্ঠুর নির্মম শাণিত চোখ জয়িতার অসহায়ত্বকে যেন পরিহাস করছে। প্রতিদিন সে জয়িতার দিকে অর্থময় দৃষ্টিতে এভাবে তাকিয়ে শিকারে বের হয়। কখনো আবার প্রকৃতির নির্বাক চরিত্রগুলো পরিহাসে মত্ত হয়ে ওঠে। নীরব কণ্ঠে তারা বলে, ছি! তবু তুই বেঁচে আছিস। নিরর্থক তোর এ জীবনকে আমি ঘৃণা করি।
হঠাৎ যেন জয়িতার সমস্ত অস্তিত্বকে আবদ্ধ অন্ধকারে গ্রাস করে নিয়েছে। ঠিক যেভাবে ধেয়ে আসা কালো মেঘ গ্রাস করে সুনীল আকাশ। প্রকৃতির অসংখ্য নিষ্ঠুর বিকৃত মুখ তার চোখের সামনে ফুটে উঠতে থাকে। পুরনো স্মৃতির শব ফুঁড়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বঞ্চনার ছোট ছোট ক্ষণ। তিলে তিলে গড়ে তোলা জীবনের বহু অবচেতন অভীপ্সা কেন মিথ্যা হয়ে গেল? জীবনের বাগানে বসন্ত আসার পূর্বেই ঝড়ো হাওয়া এসে কেন সবকিছু তছনছ করে দিল? হায়! কৈশোরের স্বপ্নের কলিগুলো যৌবনে এসে সুবাস ছড়াতে পারল না কেন? জয়িতার সামনে আজ শুধু অন্ধকারের পুরুষ্টু দেয়াল। একটু আলো—এক চিলতে রোদ চায় সে।
অন্ধকার ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে হবে তাকে মুক্তির পথে। ঘর থেকে গোল্ডফিশটা চিৎকার শুরু করে, কোথায় জয়িতা কোথায় গেলে তুমি? আমাকে মুক্ত করো। আমি মুক্তি চাই! ওর কথার ধ্বনিগুলো জয়িতার রক্তের মধ্যে মিশে শিরায় শিরায় বিস্তার পেতে থাকে। ওরা জয়িতাকে আবিষ্ট করে ফেলে। জয়িতা চিৎকার করে ওঠে, উহ! আর পারি না। ঝড়ো হাওয়ার বেগে সে ঘরে ঢুকে গোল্ড ফিশের জারটাকে আছড়ে ফেলে মেঝেতে। মাছটা ঝটফট করতে থাকে। জয়িতা ঘুমের অনেকগুলো ওষুধ এক সঙ্গে খেয়ে ফেলে। বিছানায় চিরনিদ্রার আয়োজন করে।
হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে ওঠে। কে এলো এই অবেলায়? জয়িতা অবাক হয়! ভুল শোনেনি তো? আবার বেজে ওঠে কলিংবেল। ঘরে বিছানার পাশে দাঁড়িয়েছে এরফান। হাতে ফুলের তোড়া। অনেকক্ষণ বেল দিচ্ছি তোমার সাড়া নেই। তাই নিজেই লক খুলে ঢুকলাম। শুভ জন্মদিন সোনা। কী হলো উঠে বসো।
জয়িতা উঠে বসে।
তোমার মনে আছে! মাথাটা তার ঝিম ঝিম করছে।
এ কি! গোল্ডফিশের জারটা ভাঙল কিভাবে? দেখো মাছটা তো ছটফট করছে। এখনই পানিতে না দিলে মরে যাবে!
জয়িতা ছটফট করতে থাকা গোল্ডফিশটাকে একটা পানির বাটিতে রাখে। আর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মাছটার দিকে।