যতবার পানি হই, আহ্বানে আহ্লাদে লুটিয়ে পড়ি, কচুর পাতার মতো ততবারই এড়িয়ে যায় আঁখি। কিন্তু উপেক্ষায় গুটিয়ে যাওয়ার মানুষ আমি নই। হাল ধরে রাখতে জানি; আমার তাড়াও নেই খুব। নির্বিবাদে লেগে থাকি তাই নির্ণিমেষ চাতকের মতো, পথচাওয়া নারীর মতো। এই তাকিয়ে থাকতে দেখাটা যখন অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় তার, তখন ছুড়ে দেই পাল্টা নিঠুর অবহেলা। হঠাৎ যেন উধাও আমি, হঠাৎ যেন নেই!
তারপরই হয় উল্টোজাদু। ঘুরে যায় চোখ, ঘুরে যায় বুকধুকপুক আলুক ফুলুক।
সে পর্যন্ত যেতে হলো না অবশ্য। গা-জ্বালানো সব আবোল তাবোল কথা বলছিলাম। তাতেই হয়ে গেল কাজ। হবেই তো, ঘেউ ঘেউ করতেই থাকলে কতক্ষণ আর না তাড়িয়ে থাকতে পারে মানুষ! বিরক্তিভরা মিষ্টি একটা ‘ছেই’ দিয়েই কথা শুরু করল ও।
‘দেকে তো আপনিরে শিক্ষিতই মনে হয়। কিন্তু ভেতর ভেতর এরাম ক্যান? গেঁয়ো এ্যাটটা মেয়ের পিচেও যদি এরাম করে লাগেন, তালি কি সেইটা ভালো ঠ্যাকে কন?’
মোটেই ‘ভালো ঠ্যাকে’ না। তবে পটানোর জন্য এ-ই তো রাস্তা! তাই নিরীহ গলায় বললাম, ‘ভুল বুঝছেন। আমি অমন না।’
‘অমন হন আর যমনই হন, পুরুষ তো পুরুষই।’
আমাকে যারা জানে, তারা জানে, অপমান সহ্য করার ছেলে আমি না। কিন্তু হাত ধরবার গরজ যেহেতু আমারই, নখের আঁচড় খেতে হলে আমাকেই খেতে হবে। সময় হলে ঠিক উশুলও করে নেব। এ পর্যায়ে আপাতত কথা চালানোই জরুরি। জরুরি ওকে বাজতে দেওয়া। এ পদ্ধতিতেই পাত্র বানায় কুমোর। আদরমাখা ছোট ছোট আঘাতে বাগে আনে বেয়াড়া কাদাকে। তারপর আরো আরো মৃদু আঘাতে তাকে গড়ে নেয় মনের মতো। দেখতে কাজটা সহজ খুব, করতে পারাই কঠিন। তবে চেষ্টায় কী না হয়! শুরুটা তাই করলাম শুরু থেকেই। আঁতুড়ঘর ছাড়িয়ে পড়াশোনা, পড়াশোনা মাড়িয়ে বিয়ে—আমার অন্দর বন্দর সব খুলে দিলাম গড়গড় করে। তারপরই ও বাজতে লাগল টুংটাং।
ফলে কথায় প্রতিজ্ঞায় ভেসে গিয়েছিল লোকভয়, নড়ে উঠেছিল ধর্মের বোধ। কিন্তু এ পোশাক যে যে-সে পোশাক না, এ যে ক্ষুর, এ যে করাত, এ যে কাঁচি, বুঝে উঠতেই দু’বার লাল হলো শিমুলবন। ন্যাড়া হয়ে সবুজও হলো দু’বার।
‘ফোর ফাইবে একদম গবেট মার্কা ছিলাম, জানেন? কিন্তু এসেসসিতি এ প্লাস হয়ে গেল দেকে খুব উৎসাহ জাগলো। কত ভালো যে লাগতি লাগল পড়াশুনো! বাপ-মা তো লেগেই ছিল, বাবুদাও সেরাম উটেপড়ে লাগল তখন। আমার অন্তত এ্যাটটা জিনিস ভালো, চিষ্টা করলি ফল পাই। পরের টেস্টে তাই সুজা গোল্ডেন! অথচ কপাল খারাপ, ইন্টার পরীক্ষাই দিতি পারলাম না। পালাতি হলো।’ বেশ কদিন হলো এখানে এসেছি। প্রতিদিনই আঁখির বিশেষত্ব চোখে পড়ে। চুপচাপ থাকে নিজের মতো। কারো কোনো পাত্তা নেই। ধাতবমুখোশের মতো বেয়াড়া এক গাম্ভীর্য ঝুলিয়ে রাখে মুখে। দেহটাও তো যাকে বলে আগুন- সৌন্দর্য্যে ভরা। সবমিলে প্রায় পাগলই করে তুলেছে ও আমায়। তাছাড়া মেয়েদের প্রতি আমার উথাল পাথাল টান তো আছেই! ফলে আর কারো সঙ্গে ওর সম্পর্ক আছে বুঝতেই শোকের পাথর জমল বুকে। আর তা থেকেই নামল ঝিরিঝিরি প্রশ্নের ঝরনা। আঁখিও বোধহয় চুপ করে থাকতে থাকতে ক্লান্ত। একবার মুখ খুলতেই তাই শীতের পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ার মতো হয়ে গেল ব্যাপারটা। অনেক শংকা দোটানা কাটিয়ে প্রথম ঝাঁপটা দিতে পারলে যেমন আর থামানো যায় না ছেলেদের, আঁখিও তেমন বলতেই থাকল। এটা সেটা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছিল যদিও। কোনোটার উত্তর দিচ্ছিল রেখে ঢেকে। কিন্তু মন থাকলে তার আড়াল তো থাকবেই। আর আড়াল মানে ছায়া; ছায়া মানেই সেখানে আলো ফেলার সুযোগ। ফল যা হওয়ার, হলো ঠিক তা-ই। চলতে থাকল কথার রেল।
‘বাবুদা’র কাছে পড়তাম আমরা। কিছুদিনপর মনে হলো সবাইরে না, দাদা যেন আমারেই পড়াচ্চে শুদু!’
ব্যাপারটা আসলেও যে তা-ই, বুঝতে ওর সময় লাগল না বেশি।
কোচিংঘরের চল্লিশ পাওয়ারের লাল আলোটা সেদিন আরো লাল। হঠাৎ পাওয়া নির্জনতাটুকুর ধড়ফড় করছে বুক। ক্ষণে ক্ষণে ঢোক গিলছে সময়। উশখুশ করছে বাতাস। গলা শুকিয়ে গিয়েছে, পানি খুঁজছে ঘরটা। ঘামতে ঘামতে আমতা আমতা করতে করতে তখনই বুকটাকে মুখে তুলে আনল বাবু।
আর তাতেই অদ্ভূত এক রঙধনু জাগল আঁখির দিগন্তে। অমন সময় আমারও তো কেটেছে, তাই জানি রঙধনুটার তিনটা রঙ- লাল হলুদ সবুজ। যার মধ্যে সবুজটা আবার ভীষণ টকটকে, অন্যগ্রাসী। কিন্তু মাথাটা নিচু স্বরটা আরো নিচু করে আঁখি বলল, ‘আমি পারব না দাদা। জানতি পারলি আব্বা কাকারা জ্যান্ত পুড়োয়ে ফ্যালবে।’ শুনেই বেদম হেসেছিল বাবু। ওর আবার হাসির ব্যারাম। শুরু করলে থামতে পারে না। দম আটকে যাওয়ার জোগাড়। সেদিনও লুটিয়ে পড়ল, গড়াগড়ি গেল। একটু থেমে আবার লুটাল, আবার গড়াগড়ি গেল। হলের এক বড়ভাইয়েরও এই সমস্যা ছিল। যখন তিনি ছটফট করতেন, আমাদের অসহায় লাগত। ভীষণ এক আতঙ্কের শুন্যতায় ভরে যেত বুক। এভাবেই যদি চলতে থাকে? যদি থেমে যায় ঘড়ির কাঁটা! আঁখিরও তখন সেই চিন্তা। কী করবে ও, কাকে ডাকবে? হাজার চিন্তা আর শঙ্কায় যখন ডুবছে বেচারি, তখন থামল বাবু। চোখে তার বসন্তের শিশির। শিশিরে খুশির রোদ। ঝিকমিক ঝিকমিক করছে চোখ। ঝলমল করছে মুখ। ঘূর্ণিহাসির দমক আবার আসার আগেই ভারী স্বরটা হালকা করে বলল, ‘তার মানে, তুমার মত আচে! কাকা তালি কোনো ব্যাপার না। হাসিমুকিই মেনে নেবেনে। আমাক পছন্দ করে খুব।’
সে তো আঁখিও করে। দাদার প্রতি মুগ্ধতারও শেষ নেই তার। কিন্তু উজানে ভেসে কি ভাটির টানে মজলে চলে? সাধারণ ঘরের মেয়ে, শিকল বাধা পায়ে। পা ফেললেই ঝনঝনিয়ে বাজে। তাতে আবার নতুন ঢেড়ি! না ভাই, আঁখি পারবে না। ভীষণ তেজে জ্বলছিল বুক। সেই আগুনই আবার রঙ ছড়াচ্ছিল চোখে।
বিদায়টা সেদিন তাই চিনচিনে এক অসম্ভব ব্যথার সুতোয় গেঁথে দিয়েছিল বুকদুটোকে।
তারপর ছুটি। কিছুদিন দেখা নেই আর।
তা সুতো তো বাধাই ছিল। বিরতির ধর্ম মেনে টক মিষ্টি ঝাল ঝাল একটা টানও খুব টানছিল ওদের। ফলে দূরত্বটুকু কমে আসতে সময় লাগেনি। আসতেই বাবু দাঁড়িয়ে গিয়েছিল একপাহাড় যুক্তি নিয়ে। সেগুলো সব আঁখিরও কথা। কিন্তু ধর্মের পাঁচিল পেরোতে সাহস পাচ্ছে না। সরাসরি ‘না’ বলার গরজও তার নেই, কথায় তাই দোটানা সুর। শুনতে শুনতে দার্শনিক হয়ে উঠল বাবু। ‘ধর্ম হলো পুশাক, এ্যাটটা বদলে আর এ্যাটটা পরলিও দ্যাকবা পাত্থক্য নেই বেশি। পাত্থক্য হয় ভেতরের মানুষির, ওই মানুষরাই আসল। তারা যদি চায়, ওই পুশাকের কী ক্ষমতা তাদের আলাদা করে!’ হাবুডুবু মনটা আঁখির যে কুটোই হোক আকড়ে ধরতে পারলে বাঁচত। ফলে কথায় প্রতিজ্ঞায় ভেসে গিয়েছিল লোকভয়, নড়ে উঠেছিল ধর্মের বোধ। কিন্তু এ পোশাক যে যে-সে পোশাক না, এ যে ক্ষুর, এ যে করাত, এ যে কাঁচি, বুঝে উঠতেই দু’বার লাল হলো শিমুলবন। ন্যাড়া হয়ে সবুজও হলো দু’বার।
ততদিন গোপন রোগের মতো একে অন্যকে বয়ে নিচ্ছিল ওরা।
তবে প্রায়ই ঝামেলা পাকাত বাবু। সময়ে অসময়ে দেখা করে। হুটহাট রাগারাগি চোটপাট। আজ সব ছেড়ে দেয় তো কাল আবার চলে আসে দ্বিগুণ কাছে! তাছাড়া উল্টোস্রোতের যাত্রা, পেছনমুখী দোলা তো লাগেই। দক্ষ মাঝির যোগ্য হালে আঁখি সামলে নিচ্ছিল সব। ঝড় ঝাপটা সয়ে যাচ্ছিল প্রাণপণে। তবে প্রেম তো চোখের জল না যে লুকোতে পারবে; এ যে নদী, এ যে সরোবর- এর তার চোখে পড়াটাই তাই স্বাভাবিক। ফলে মায়ের চোখে বাবার কানে হুলু দিচ্ছিল সমাজ। সামনে পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও বলীর আয়োজন করেছিল তারা।
ঠিক এই পর্যন্ত শুনেই আমি মনোযোগ হারালাম।
তিন আঙুলে কাপ আর দুই আঙুলে বিড়ি নিয়ে আয়েশ করছে গার্ড। লিকার আর দুধের মধুতে মিশে যাচ্ছে তামাকের বিষ। মিলিত গন্ধটা সাপের মতো এঁকে আসছে চোখে; বেঁকে আসছে নাকে। আহ! এখন এই উতরোনো সন্ধ্যা, হিম হিম ঠাণ্ডা, আঁধার আর কুয়াশার লুটোপুটি, পুরোনো মাফলারে গলা ঢেকে আব্বা হয়তো চা’র দোকানে যাচ্ছে। যাওয়ার আগে মাকে বলেছে চা করতে। মায়ের মুখে প্রতিসন্ধ্যার গজগজ। ‘ঘরের চায়েই যদি ভেজবা, তাইলি আর দুকানে যাও ক্যান? অনেক হইচে এ্যালা, কিপটেমিডা ছাড়ি দ্যাও। নইলি কিন্তুক খুকারে সব বলে দোবোলাই!’ চোখে শাসন ভুরুতে প্রশ্রয় এঁকে মা তবু চা করছেন! ভাবতেই সরল তরল আবেগের ঢেউ ছুটল বুকে, কিন্তু কাঁদলাম না। আমার বরং চা খেতে ইচ্ছে করল, গলা শুকিয়ে কাঠ। আঁখির কোনো ভাবান্তর নেই যদিও। গল্পটাই বলে যাচ্ছে নিবিড় আগ্রহে। ‘ঘর ছেড়েই বুজলাম উটোন যেরম ঘর না, পতও তেমন উটোন না। শহর মানেই টাকা, টাকা ছাড়া কিছুই বোজে না। আর ভাগ্য খারাপ হলি সে কিরাম নিদ্দয় হতি পারে, বুজতি পাললাম রাত্তিরি। সারাদিন টো টো কোম্পানীর ম্যানেজারি করে সন্দ্যেয় উটিলাম এ্যাটটা হোটেলে। সেকেনে রেইড হলো মাঝরাত্তিরি। খারাপ মেয়েদের সাতে আমাদেরও ধরে নিয়ে গেল পুলিশ।’
মানে! বিবাহিত দুজন মানুষ, হোটেলে থাক বা রাস্তায়, তাতে কার বাপের কী! ‘আটারো হতি বাকি তকনো, বিয়েডা তাই সুজাপতে হইনি। নাম ভাঙায়ে বয়স ডিঙোয়ে সই করিচি। কাগজপত্রও কদিন পরে দেবে। বিয়ের কোনো প্রমাণ তো হাতে নেই, পুলিশ কি আর মুকির কতায় ভেজবে? যা কডা টাকা ছিল তাতেও ওগের পুষাচ্ছে না। কত অনুনয় বিনয় করলাম, কানেই তুলল না।
হাজতি অবশ্যি থাকতি হইনি বেশিদিন। মানুষির মুক তো একন মাইক, কোনোকিছু হলিপপরে চাউর। এক না ঘটতিই রটে যায় একশ’ এক। জানাজানি হতি তাই দেরি লাগে না। খবর পেয়ে ওর এক মামাতে না ফুবোতে ভাই আসলো। টাকা পয়সা দে ছাড়ায়ে নে গেল আমাদের। তার ফিলাটেই থাকতি লাগলাম এরপর। সারা ফিলাটে আমি একলা মেয়ে মানুষ। আর উরা দু’জন। ওই দাদাডার আবার নজর খারাপ। বাবুও কিরাম য্যান হইগিয়েচ। প্রায়ই বলে ‘হুট করে বেরোয়ে আসা ভুল হইগিয়েচ। এরাম করে আর কদ্দিন থাকপো?’ সব মিলে কী যে আতঙ্ক আমার তকন! উল্টোপাল্টা কিচু যদি করে ফ্যালে? ইটা সিটা চিন্তা আসে, মনে হয় দম বন্দ হয়ে যাবে। তা একেনেই যদি মরে থাকি আমি, বাবা মা তো জানতিও পারবে না কোনোদিন। এ আমি কী কল্লাম! এর মদ্যি একদিন মেম্বার কাকা আসলো। খবর শুনে তো আমরা থ। বাবা কেস করেচ এদের নামে- ইরা নাকি জোর করে তুলে এনে আমাক গুম করে রেকেচ! চিন্তা করা যায়? তাতাড়ি থানায় গেলাম। আমি যে স্বেচ্চায় আসিচি, বিয়ে করিচি, আর ভালোও আচি- জুবানবন্দি দিলাম।
সারাপাড়া ভেঙে পড়েছিল ওদের উঠোনে। সবাইকে দেখছিল ও শেষবারের মতো। কারো কান্নায় মুখোশ ভিজছে, কারো কান্নায় মুখ। ছেলেদের কেউ কেউ ঢোক গিলছে ওকে দেখে, তখনও! দেখতে দেখতে ও এগুচ্ছিল শেষযাত্রায়।
ভাবলাম এইবারা বুধায় ঘরে তুলে নেবে মেম্বার কাকা। কিন্তুক না, থানাত্তে বেরোয়েই আমাক বাড়ি যাতি বলল। কেন? বিয়েত্তা মেয়ে, আমি বর ছেড়ে যাব কেন? বলল, এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। কাকিমা নাকি পণ করেচ আমারে ছেড়ে না দিলি জলপানিও মুকি দেবে না। তারপর সারাবিকেল আমারে বুজোলো ও। ‘এসব নিয়ে ভেবো না। ভরসা রাকো, আমি তো আচি। কডা দিন এটটু চোক-কান বুজে কাটায়ে দ্যাও। আব্বা আম্মারে ম্যানেজ করে ফ্যালবানে এর মদ্যি।’
সেই আশায় তকন আবার দুজন দু’খাঁচায়।’
কিছুই আর আগের মতো ছিল না। ঘরে জায়গা দিলেও বাবা মা কথা বলেন না আঁখির সঙ্গে। ‘বেরুনে মাগি’ ফিরে আসলে তার অবস্থা একমাত্র পল্লী-ফেরত নারীর সাথেই তুলনীয়। বিয়ের কথা বলেও ও রুখতে পারেনি কাওকে। আমাদের গ্রামগুলো এমনই। উঁচুতলার দোষ ভুল সযত্নে এড়িয়ে যায়, অথচ একই ভুলে ছাই দিয়ে ধরে নিচুতলার মানুষকে। মেয়ে হলে তো আর কথাই নেই! জানি বলেই বুঝতে অসুবিধা হলো না কী যন্ত্রণায় দিন কাটছিল ওর। কথায় কথায় খোঁচা দিত লোকে। আর খোটা যখন তখন। ঘর বাইর কথা বলছিল এক সুরে, এক স্বরে। দিনে দিনে শোর হয়ে উঠেছিল কথাগুলো, শর হয়ে উঠেছিল। কিছুই ভালো লাগত না। অসহ্য লাগত নিজেকেও। যে গল্পের বই এত প্রিয় ওর, সকাল নেই সন্ধ্যে নেই পড়ে থাকত মুখ গুঁজে, তাতেও বিরক্তি তখন। ফাঁক পেলেই তাই ও দম নিতে যেত খালপাড়ে।
প্রথম হাত ধরা, কাঁপা কাঁপা চুমু, ফেরার সময় না না করেও হঠাৎ জড়িয়ে ধরা বিকেল সন্ধ্যাগুলো ভেসে গেছে ওই খালে। মাসখানেক আগেও অঢেল জল ছিল। ঢেউ ছিল মাখো মাখো। কিন্তু তখন শুকনো সব। খালের বুক দুপাশ থেকে ঢালু হতে হতে যেখানে নালার মতো সেখানে কাদা। হাঁসেরা কমলা পা খয়েরি ঠোঁট ডুবিয়ে অকারণ খাবার খোঁেজ। বক এসে দাঁড়িয়ে থাকে দূরে, নামে না। ‘আমিও সেরাম দাঁড়ায় থাকি। বুকডা শুকনো শুকনো, খালি খালি; আর মাঝখানডায় চিকন সুতোর মতো ব্যতা। ওরও কোনো খোঁজ নেই। আমারে কি ধুকা দিল ও? না হলি আসচে না ক্যান? আচ্চা দ্যাকেন, ওর কোনো বিপদও যে হতি পারে, সিডা ভাবতাম না। দুরি থাকলি যায় হয় আরকি। দিনি দিনি সন্দ হতি লাগল, অবিশ্বাস জাগতি লাগল। যার হাত ধরে ঘর ছাড়লাম তারে অবিশ্বাস করা যে কী যন্তনার! কী ভাবে যে তড়পাতাম আমি উল্কোমাছের মতো! ওইরাম লাফাতি লাফাতিই তারপর একদিন ছুটে আইলো পাগলডা। হাসি হাসি মুক।’
‘বলিলাম না, সব ঠিক করে ফ্যালব? আম্মা রাজি হয়েচ!’ বাবুদা বলল।
‘আর কাকা?’
‘আব্বাও!’
আঁখির বিশ^াস হচ্ছিল না।
‘রাজি না হয়ে যাবে কনে? আমিও তো ইন্ডিন খাওয়ার ভয় দেখাইচি!’
যাক! এবার তাহলে ঘর হবে আঁখির। আরাধ্য স্বীকৃতিটা মিলবে। শেষ হবে অসহ্য এই যন্ত্রণার। ভাবতেই বিকেলের আলোটা দারুণ সুবাসিত এক ভোরের মতো রাঙা হয়ে উঠল। মনে হচ্ছে চিরভোরের দুনিয়ায় এসে পড়েছে ও। আর সন্ধ্যা নামবে না পৃথিবীতে। কথার গায়ে চাবুকের শব্দ জুড়ে তখনই শর্তটা বলেছিল মেম্বারের ছেলে। ‘তা, এ্যাটটা ব্যাপার, কষ্ট করে শুদু কলমা পড়তি হবে এটটু। মোসলমান হতি হবে তুমার।’
ঝুপ করেই রাত নেমে গিয়েছিল তারপর। লালমাথা শিমুলগাছগুলো মাথাভর্তি অবাধ্য আঁধার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মুখ ভার করে। ‘সব কিছুতিই দেরি হয় আমার। এত বুকা আমি, এতই কমবুঝ, অ থেকে আ’য় পৌঁছতিও ঠকি। সেসবই ভাবছিলাম ফিরার পথে। ভাবছিলাম, ঘর তো মেয়েদের ছাড়তিই হয়, আমিও না হয় ছাড়ব। ধর্মও তো সেরাম মানিনে যে ছাড়তি সমস্যা। কিন্তুক কিরাম যেন জেদ চাপে গেল। আমারই কেন ছাড়তি হবে সব? আচ্চা, দায় সারার জন্যিই এরাম এ্যাটটা শর্ত দেলে না তো সে?’ তা হলে আঁখিও আঁখি! প্রতিমা বিসর্জনের মতো মাঝখালে সব ঢেলে পারে উঠবে না ও। তারচে’ বরং ডুবে যাবে দুঃখরঙের জলে, ভেসে যাবে কষ্টরঙের স্রোতে।
অনেক দিন দেখা নেই তারপর। বাধো বাধো শ্বাসগুলো নাক-সওয়া হয়ে উঠছিল দিনে দিনে। গা-সওয়া হয়ে উঠছিল মানুষের কথা। শুকিয়ে উঠছিল ঘা। তখনই আবার নতুন সন্ধির প্রস্তাব। ‘এইসব পুশাক টুশাক খুলে ফেলে এক হয়ে যাই চলো। চলো, চলে যাই আবার।’ ঘোর মেখে বলেছিল বাবু।
গাঢ় কাজলের মতো সেই ঘোর লেপ্টে ছিল আঁখির চোখেও। কিন্তু পাত্তা দেয়নি। বাবুর ভালোবাসা ওর বোঝা শেষ। ফিরে গিয়েছিল ঝাপসা মনে।
‘পরে শুনি, যাওয়ার পতে এ্যাক্সিডেন্ট হয়েচ। ও আর নেই।’
এমনটাই ধারণা করেছিলাম। তাই চমকালাম না। তবে আঁখির গলা ধরা। ‘একদিকি বাপমায়ের দিব্যি, ওইদিকি আমার জন্যি দুচ্চিন্তা- দুমুকো চাপ সামলাতি পারিনি হয়তো। অ্যাক্সিডেন্ট না, হয়তো আপনা আপনিই মরেচে পাগলডা। আমার জন্যিই হয়তো থেমে গেল ওইরাম এ্যাটটা প্রাণ। কী যে ঘিন্না তকন হচ্ছিল নিজির ওপর!’ নিজেকে তাই ত্যাগ করেছিল ও। বিষের তো আর অভাব নেই গ্রামে। জোগাড় করতেই যা বেগ পেতে হয়েছিল একটু। তারপর সব পানির মতো। ‘কী যে কষ্ট তখন! বুকির মদ্যি যন্তনার চুলো। গালের দুপাশে কাপড়কাচা সাবানের মতো গাঁজলা, গা হাত পা সব নীল। দেকি মা অজ্ঞান, বাবা পাথর। আর আমার তকন মাতায় বাজ- এ আমি কী করলাম?’ সারাপাড়া ভেঙে পড়েছিল ওদের উঠোনে। সবাইকে দেখছিল ও শেষবারের মতো। কারো কান্নায় মুখোশ ভিজছে, কারো কান্নায় মুখ। ছেলেদের কেউ কেউ ঢোক গিলছে ওকে দেখে, তখনও! দেখতে দেখতে ও এগুচ্ছিল শেষযাত্রায়।
প্রিয় খালপাড়েই শ্মশান। ওদের অভিসারের জায়গাটা পার হচ্ছিল যখন, পাতার মতো কাঁপছিল নাকি বুকের ভেতর। মনে পড়ছিল, কেমন অসহায়ের মতো ফিরে গিয়েছিল বাবু শেষদিন। আর কেমন নিষ্ঠুরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল ও। মনে হচ্ছিল, সেই সেই ধর্ম তো ছাড়তেই হলো, কদিন আগে ছাড়লে বাবু হয়তো বেঁেচ থাকত আজ। হয়তো সাপ দেখার ভাণ করে ওকে জড়িয়ে ধরত আবার। ভুতের ভয়ে আঁখিও জড়িয়ে ধরতে কাছে পেত পাগলটাকে। ভাবতেই নাকি হেসে উঠেছিল আঁখি।
ওর গুছিয়ে রাখা জ¦ালানিকাঠেই ততক্ষণে সেজে উঠেছিল চিতা। দেখেই আবার মন খারাপ। এত আয়োজন এত সাজগোজ সব মিশে যাবে ঘরফেরত বিষণ্ন হাওয়ায়। আর যা কিছু মূল্য পেত ওর কাছে, পড়ে থাকবে সব। পড়ে থাকবে বইভরা ঘর। ঘরভরা আলো আর ছায়ায় মেশা স্মৃতি। পড়ে থাকবে গোছানো বালিশকাঁথা। আর অগোছালো বাবা মা। কষ্ট বেশি তাদের জন্যই হচ্ছিল। ‘ওদের মুকির দিকি তাগায়ে হলিও কি আমার ধৈর্য্য ধরতি হতো না? ভাবছিলাম। ভাবছিলাম, মেয়েদের কী দুর্ভাগ্য, বাবারে কোনোদিন জড়ায়ে ধরতি পারে না। খুব ইচ্চা হইছিল সেদিন ধরতি। মা তকনো পড়ে আছে। মুখি পানির ছিটে দিতি ইচ্চা করছিল। ইচ্চা করচিল মুছে দিই তার চোকের নিচের কালিটুক।’ সে সুযোগ যে ওর আর নেই, আঁখি তা জানত। তাই অপারগ পড়ে থাকার চেয়ে দ্রুত সরে যাওয়াই ভালো মনে হচ্ছিল। ও তাই পুড়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। করছিল উড়ে যাওয়ার অপেক্ষা।
কিন্তু তার আগেই বদলে গেল সব। শোক-স্যাঁতসেঁতে সন্ধ্যা সন্ধ্যা বিকেলটা তটস্থ হয়ে উঠল হঠাৎ। ‘পুলিশির গাড়িতি ছুটে আইলো মেম্বার কাকা। আমরা পলানোর পর মেম্বার কাকাও অ্যাটটা কেস দিইলো বাবার নামে। তাতেই কি বাবারে ধরতি এয়েচে আজ? মেয়েরে চিতায় তুলার আগেই কি বাবাক গাড়িত তোলবে পুলিশ? ভাবছিলাম, এত নির্দয়ও কি হয় মানুষ?’ গ্রামের মানুষ তেড়ে এল তখন, তেড়ে এল পাড়ার মাস্তান বাসুদা, ওর কাকারা তো এলই। বাবুর বাবা দাঁড়িয়ে থাকলেন অনড়। ওপারের গাবগাছ যেন। শিকড় ছড়িয়ে দিয়েছেন- কোনো ঢেউই টলাতে পারবে না। হাতে তার ভাঁজকরা একটা কাগজ। দেখাচ্ছেন আর বলছেন তিনি আঁখির শ্বশুর। বউমাকে নিতে এসেছেন। কবর দেবেন ছেলের পাশে।
‘কী বলে! পাগল নাকি?’ হাসতে হাসতে বললাম।‘লোকেরাও তাই ভাবচিল। কী ঘটচে কেন ঘটচে- কিছুই বুজতি পাচ্চে না কেউ। পুলিশ তকন কাগজডা নিলো কাকার হাতেত্তে। তারপর পড়ে গেল গড়গড়।
ছোঁ মেরে তুলে নিল ওর কাপড়। এইমাত্র আসা নেতা গোছের এক লোকের গা ঢাকল সেটা দিয়ে। জড়সড় আঁখি তখন ফুঁসতে লাগল রাগে। খুশিতে যদিও আত্মহারা আমি। বাইরে থেকে যতটা, ভেতরে ও তারচেয়ে আকর্ষণীয়!
থানায় গিয়ে আমরা যে জুবানবন্দী দিইলাম, এইডা সেইডা। পুলিশির মুকি ‘আমি মোসলমান হইচি, কলমা পড়ে বিয়ে করিচি, ধর্ম মতে আমার স্বামীর সাতে আচি, তার সাতেই থাকতি চাই’ শুনে কী যে লজ্জা লাগিল আমার! গ্রামবাসীরও দ্যাকলাম চুয়াল ঝুলে গিয়েচ। মেম্বার কাকার ঠোঁটে তার মেন্দিরঙা দাড়ির মতো চকচকে হাসি। বাবা আরো পাথর। কাকারা আগুন। একটা কাগজের জোরে শ্বশুর যদি হিন্দু বউমারে কবর দিতি চায়, ভাইজিরে পুড়োনোর অদিকার কাকারাও বা ছাড়বে ক্যানো!
গণ্ডগোল হয়ে গেল তকন, হাতাহাতিই লাগে প্রায়।
আগুন আর মাটির ওই টানাটানির মদ্যিই আটকে গেলাম আমি। পরবর্তী কপাল-লিকা নাকি আদালত লেকবে। ততদিন পর্যন্ত একেনেই থাকতি হবে।’
এখানেই আছে ও সেই থেকে। ‘কতদিন হলো?’ অনেকক্ষণ বাদে প্রশ্নটা করতে পারলাম।
‘আড়াই বছর।’
চমকে উঠলাম শুনে। শুধু পোড়াবে না পুঁতবে ঠিক করতে পারেনি বলে এতদিন ধরে মর্গে ফেলে রেখেছে ওরা ওকে! এমনো নৃশংস হয় মানুষ? এমনো ঘটে! বিশ্বাস হচ্ছিল না। ‘শোনেন, আলিপ লায়লার অ্যাটাটা বই ছিল আমার। নিউজপ্রিন্টির ইয়া মুটা বই। কী যে ভালো লাগত! কিন্তু মোসলমানদের বই বলে পড়তি দিত না মা। একেনে তো আর মা নেই, শাহেরজাদির মতো দিনি এটটা করে গল্পও যদি শেষ করতাম, এতদিন মনে হয় শেষ হয়ে যেত সব। পড়াশুনো চালাই গেলি হয়তো থারডিয়ার শেষ করে ফ্যালতাম এতিদিনি।’
আরও কী কী যেন বলে চলল ও। আমি আর শুনতে পেলাম না। আমার শুধু আব্বার কথাটা মনে পড়ছিল, ‘নিজেরে যত দুর্ভাগাই মনে হোক না কেন, হাল ছাড়বা না। কারণ তুমার চেয়ে দুর্ভাগারাও টিকে আচে।’ এতদিন ভেবেছি কথাটা ভুল। আমার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে আছে? না আমি নাস্তিক, না জঙ্গি। মাদকে মজিনি কোনোদিন, মাদকবিরোধী অভিযানে পড়ার কথাও তাই আসে না। তা হলে কোন হিসেবে কাটা পড়লাম? হ্যাঁ, দোষ আমার একটা আছে। মেয়েদের ভালোবাসি খুব। ইচ্ছে করে সবার উষ্ণতাই ছুঁয়ে যাক আমায়, আমার প্রেম আর্দ্র করুক সবাইকে। ওরাও কেমন যেন মাখন হয়ে যায় আমার সামনে এলে! তবে বউ ছাড়া কারোর সাথেই কিছু হয়নি কোনোদিন। তাহলে? আচ্ছা, থাক। ধরে নিলাম বড় বড় অভিযানে হয়ে থাকা ছোট কোনো ভুলেই আমার মৃত্যু। তা মারবে মারুক, কিন্তু এভাবে গুম করবে যে সংবাদটা পর্যন্ত পাবে না বাপমা? আমার বাচ্চা বেচারাও তো জানতে পারল না বাপ তার বেঁচে আছে কি না। এর চেয়ে বেশি নির্মমতা কি হতে পারে আর? আঁখির ইতিহাস না জানলে হয়তো এই প্রশ্নটাই নিজেকে করে যেতাম অনন্তকাল।
অনন্তকালের প্রশ্ন দেখলাম আঁখির কাছেও আছে। ‘এত দিন ধরে পড়ে রইচি, এ্যাটটা বারও সে আমারে দেকতি আসিনি। এত মানষির মদ্যি একলা পড়ে আচে বউডা, আর সে বাপের পাশে ঘুমোচ্ছে নাক ডেকে! এত ভালোবাসা, এত নিবেদন, এত বড় বড় কতা- সব কি তালি মুকিরই ছিল, বুকির কিছুই না?’
আসলেই তো। নিজেই ওকে ভাগিয়ে নিয়ে গেল। তারপর কিছুদিন ভোগদখল করে দিল তাড়িয়ে। আবার মরার পর দেখতেও আসেনি এখানে। এ কেমন ভালোবাসা বাবুর?
মর্গের এই জীর্ণ দিন শীর্ণ রাত জুড়ে ভীষণ ভয়ের ঠাণ্ডা ঢেউ। তার ওপর সময় এখন এতটাই কামুক, ছয় বলো বা ষাট, আট বলো বা আশি, রেহায় নেই কারো। সেখানে এমন উপযোগী পরিবেশে এতগুলো পুরুষের মাঝে ও একা। ভয়ে তাই চুপসে থাকে। যদি লোকেরা ছুটে আসে পুরুষ হয়ে, গায়ে তো এই একটা ভারি থান, ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে, যদি ওরা চেপে বসে ওর ওপর! কেউ দরজা খুলতেই তাই চমকে ওঠে।
শুনতে শুনতে দেখি হুড়মুড়িয়ে লোক ঢুকছে। ঢুকছে তো ঢুকছেই।
আগের দিন বোধহয় নির্বাচন ছিল বা অবরোধ চলছিল অথবা কোনো ভবন ধ্বসে পড়েছে কিংবা অন্যকিছু, মিছিল করে এলো লাশের ভীড়। আঁখি তখন চুপসে গেল আরো।
লাশে লাশে ভরে গেছে মেঝে। এতটাই যে থানকাপড়ে কুলোচ্ছে না। জায়গারও টানাটানি। একটার আড়ালে লজ্জা ঢাকছে আরেকটা। হলের গণরুমের কথা মনে পড়ল তখন আমার। লাশগুলোকে এদিক সেদিক চেপেচুপে ঠেসেঠুসে রাখতে লাগল গার্ডেরা। আঁখিকে রেখে গেল আমার চেম্বারে। আমারই চেম্বারে!
কিছুক্ষণপর ছুটে এল একজন। ছোঁ মেরে তুলে নিল ওর কাপড়। এইমাত্র আসা নেতা গোছের এক লোকের গা ঢাকল সেটা দিয়ে। জড়সড় আঁখি তখন ফুঁসতে লাগল রাগে। খুশিতে যদিও আত্মহারা আমি। বাইরে থেকে যতটা, ভেতরে ও তারচেয়ে আকর্ষণীয়! এই বরফঠাণ্ডার মধ্যেও তাই গরম হয়ে উঠলাম। জেগে উঠল শরীর। আঁখি তখন মুখ খুলল আবার। ঠোঁটে ব্যঙ্গধাঁচের হাসি—‘দ্যাকলেন তো, যে-ই হোক আর যেকেনেই হোক, পুরুষমানুষ পুরুষই।’
বা, অথবা কিংবা
আশান উজ জামান
প্রচ্ছদ: হামিম কামাল
প্রকাশক: চন্দ্রবিন্দু
বইমেলা: (স্টল নম্বর-৬০৭)