যখন তরিকুল মোয়াজ্জিন আজান দিচ্ছিল, তখন থেকে ফিরছিল ফানেস বিচ্ছু। সন্ধ্যা তখনো ঠিকমতো লাগতে শুরু করেননি কারণ সূর্যটা ডুবেছিলেন ঠিকই কিন্তু লাল আভারা তখনো পশ্চিম দিক বেশ উজ্জ্বল করে ছিলেন। লাল আভাদের মনে হচ্ছিল আলোর ঘনফেনা এবং এগুলোর গায়ে আজানের ফেনা মিশ্রিত হয়ে হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধকারে রূপ নিচ্ছিলেন। যেসব কাকেরা বাড়ি দূরে করেছিলেন তারা ফিরছিলেন বাড়ির দিকে। তাদের পাখারা তখন বলছিলেন—‘কাকগুলো যেহেতু কালো, সেহেতু তারাও কালো’। মাঠের এ মাথায় যে গাছটি স্থির ছিলেন, তাতে একটা বড় পাখির বাসা অবস্থান করছিলেন। সেখানে এসে পৌঁছলে তরিকুলের আজান শেষ হয় এবং ফানেস বিচ্ছু পেছন ফিরে দেখে তার ক্ষেতের দিকে। সেখানে সে একটা কাকতাড়ুয়া তৈরি করে রেখে এসেছে। তার হাতে এখনো হাঁড়ির কালি লেগে আছেন। ফানেস বিচ্ছু কয়েকটি পুরাতন শার্ট নিয়ে গিয়েছিল। সবকটি শার্টই পরিয়ে দেখেছে কাকতাড়ুয়াটিকে এবং যেটিকে বেশি মানানসই মনে হয়েছে সেটি কাকতাড়ুয়াটির গায়ে চড়িয়ে এসেছে। এখন পেছন ফিরে দূরে কাকতাড়ুয়াটিকে দেখতে পেল সে। দারুণ! এটি শুধু কাক তাড়াবেন এমন নয়, এটি গরু ছাগল, অন্য পাখি এমনকি রাতের বেলা মানুষকে তাড়াতেও সক্ষম বলে মনে হলো ফানেস বিচ্ছুর। কাকতাড়ুয়াটির আদল এতটাই মানুষের মতো যে, এ অঞ্চলে যদি বাঘ-সিংহের বাস থাকত, তবে বাঘ সিংহগুলো প্রায়ই ভুল করে কাকতাড়ুয়াটির ওপর চড়াও হতেন মানুষের রক্ত পান করার বাসনায়। কাকতাড়ুয়াটিকে দেখে নারীদের মধ্যে কাম জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তার মনে হলো। একটি সুন্দর কাকতাড়ুয়া তৈরি করতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। বড় রাস্তা পার হওয়ার আগে ফানেস বিচ্ছু আবার ঘুরে দেখল দূরে, তার ক্ষেতের দিকে এবং দেখল চমৎকার দায়িত্ব নিয়েই কাকতাড়ুয়াটি দাঁড়িয়ে আছেন।
দুই.
পঁচিশটি বছর যখন একে একে পার হয়ে গেছেন, তখন তমিজ খন্দকার ভাবল—গ্রামে কটা দিন থেকে আসি। পঁচিশ বছর আগে ঢাকা যাওয়ার পর তেমনভাবে আর নিজ গ্রামে যাওয়া হয়নি। বড় জোর দিনে এসেছে, কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে কাজ সেরে আবার ফিরে গেছে। ঢাকা গিয়ে প্রায় ঢাকাতে বসে থেকেই নির্বাচন করেছে। একবার পাস করেছে, একবার ফেল করেছে। এমপি-মন্ত্রী হয়েছে। দুপুরে খেতে খেতে তার মুখ দিয়ে বের হয়ে এলেন কথাটি—‘এবার কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে থেকে আসব’। কথাটি যখন তার মুখ দিয়ে বের হয়ে এলেন, তখন তার বউয়ের মনটা খারাপ হয়ে গেলেন। সে মন খারাপ করে বসে থাকল। অন্যদিকে তার মেয়ে ফরিদা খন্দকার খুশি হয়ে উঠল। তার বয়স তেইশ চব্বিশ। যেহেতু তমিজ খন্দকার একথা বলেছে, সেহেতু মতটি স্থিরও হয়ে গেছেন। তমিজ খন্দকার গত সরকারের কৃষিমন্ত্রী ছিল। এবার সে আর কোনো মন্ত্রী নয় এমনকি এমপিও না।
তিন.
মন্ত্রীর বাড়িটি ঠিক একই রকমভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, যেমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন পঁচিশ বছর আগে। রিকশা এসে থামলেন মূল বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। রিকশা থেকে যখন মন্ত্রীর ডান পা’টি নামলেন, তখন বাম পা’টিও তার অর্ধ সেকেন্ডের মধ্যে নেমে আসলেন। বাম পা’টি নেমেই চড়ে বসলেন একটা ব্যাঙের বাচ্চার ওপর। ব্যাঙের বাচ্চাটি তখন নিমিষেই নিশ্চুপেই একটি ক্ষুদ্র মাংস স্তূপের মতো হলেন। মন্ত্রী এসব খেয়াল করল না কিন্তু ফরিদা খন্দকার, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে অনার্স শেষ বর্ষে রয়েছে, সে ব্যাপারটি খেয়াল করল এবং তার মুখ দিয়ে অস্ফুট একটি ‘আহ্’ শব্দ বের হলেন। তার গোমরা মুখ করা মা’ও ব্যাপারটি খেয়াল করেছিল এবং ফরিদার এই অস্ফুট ধ্বনিটিকে অহেতুক মনে করল। ফরিদার জন্য তার মায়ের একটি বিরক্তিপূর্ণ দৃষ্টি তার চোখ থেকে বের হয়ে আসলেন। ফরিদা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা জাতীয় কিছু খেল। যে কয়েকটি ব্যাগেজ লাগেজ ছিলেন, তা নিতে এসেছে এরফান আলি আর তার কিশোর বোবা ছেলে তারু। তারা ব্যাগগুলো নিয়ে সামনে হাঁটতে লাগল। বোঝাবাহীদের পাগুলো তাদের দ্রুত নিয়ে যাচ্ছিলেন। অপরপক্ষে মন্ত্রীপরিবারের পা’গুলো দেখাচ্ছিলেন বেশ ধীর গতি। সন্ধ্যা যখন লেগে এলেন, তখনই মন্ত্রী খেয়াল করল, গ্রামের পরিবর্তন খুব একটা হয়নি (ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যাপারটি খেয়াল হয়নি তার, কারণ সে সময় নিজ জেলায় এসেছে, কাজ সেরে জেলা সদর থেকেই ফিরে গেছে। জন্মগ্রামে আসার সময় হয়নি)। কাঁচা রাস্তাটি কাঁচাই রয়েছেন, বিদ্যুৎ এখনো গ্রামে আসেননি। সে বাড়িতে ঢুকল। এরফান আলি ঘরদোর আগে থেকে ঠিকঠাক করে রেখেছিল। তমিজ খন্দকার বলল—‘বুঝলে এরফান কয়েকদিন থাকব মনে করেই এসেছি’। এরফানের মাথাটি সোজা থেকে ডান কাঁধের দিকে ঝুঁকে এলেন এবং মুখ দিয়ে উচ্চারণ করল—‘জ্বী স্যার’।
মন্ত্রী যতদিন থাকবে, এরফান আর তার বোবা ছেলে তারু তাদের দেখাশোনা করবে। রান্নাবান্নার কাজ করার জন্য আছে তার বউ। বউটিকে নীল রংয়ের একটি শাড়ি জড়িয়ে রয়েছেন। বউ নিয়ে, বোবা ছেলে তারুকে নিয়ে এরফান বেশ ভালোই থাকে মন্ত্রীর এই বড় বাড়িতে। মন্ত্রীর বাড়িঘরসহ জমিজমাও দেখাশোনা করে। একটিই সন্তান। আরো সন্তানের চেষ্টা করেও যখন হয়নি, তখন লোকজন বলতে থাকে ‘এরফানের লাড়িতে প্যাঁচ পইড়্যা গেছে অথবা তার বউ এর লাড়িতে’।
মন্ত্রী যতদিন থাকবে, এরফান আর তার বোবা ছেলে তারু তাদের দেখাশোনা করবে। রান্নাবান্নার কাজ করার জন্য আছে তার বউ। বউটিকে নীল রংয়ের একটি শাড়ি জড়িয়ে রয়েছেন। বউ নিয়ে, বোবা ছেলে তারুকে নিয়ে এরফান বেশ ভালই থাকে মন্ত্রীর এই বড় বাড়িতে। মন্ত্রীর বাড়িঘরসহ জমিজমাও দেখাশোনা করে। একটিই সন্তান। আরো সন্তানের চেষ্টা করেও যখন হয়নি, তখন লোকজন বলতে থাকে ‘এরফানের লাড়িতে প্যাঁচ পইড়্যা গেছে অথবা তার বউ এর লাড়িতে’। চিকিৎসা করে ব্যর্থ হওয়ার পর কবিরাজও লোকজনের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিল — ‘এরফানের ছাইল্যা জর্মানোর ক্ষ্যামতা শ্যাষ হয়্যা গেছে। তার বউ এর কোনো সমস্যা নাই বলেই মনে হয়’। লুকু কবিরাজ খুব ভালো কবিরাজ। তার কথা ঠিক বলেই মানুষে মানে।
চার.
তিনদিন বলেও যখন আটটা দিন পার হয়ে গেলেন, তখন ফরিদার মা খেয়াল করে দেখল, পিতা-কন্যা কেউই এখন পর্যন্ত ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা বলছে না। তখন নিজে থেকেই সে তাদের ঢাকা ফিরে যাওয়ার তাড়া দিল। এবং পরবর্তী সময়ে আরো তিনদিন অব্যাহতভাবে তাড়া দেওয়ার ফলে মন্ত্রী ‘ঢাকা আগামীকাল ফিরে যাব’ বলে সিদ্ধান্ত জানায়। আগামীকালের আগের দিন সন্ধ্যায় মন্ত্রী হাঁটতে-হাঁটতে ফসলের মাঠ পার হয়ে একেবারে নদীর ধারে গিয়ে বসল কিছুক্ষণের জন্য। নদী বয়ে যাচ্ছেন বড়ই রুগ্ন হয়ে। মনটা খারাপ হলেন মন্ত্রীর। বিশাল-বিশাল চর বালুর বুক নিয়ে পড়ে আছেন। ওপারে একটা নৌকা ডাঙায় বসে আছেন আর বর্ষাকালের প্রতীক্ষা করছেন। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলেন। ফিরতি পথ ধরল মন্ত্রী কিছুক্ষণ পর। জোছনার আলোয় ভাসছেন সবকিছু। ঘড়িটার দিকে তাকাল মন্ত্রী। রেডিয়ামগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন। আটটা মাত্র বাজছেন। এর মধ্যেই চারদিক নিস্তব্ধ। ফিরতি পথে হঠাৎ সে গান শুনতে পেল যেন। গানটি অস্পষ্ট, কণ্ঠটি অস্পষ্ট কিন্তু বোঝা গেল এটি রবীন্দ্রসংগীতের সুর। তার মনে হলো—‘এ গাঁয়ের মানুষের পক্ষে রবীন্দ্রসংগীত সম্ভব না, ভূতই একমাত্র পারে এটি করতে।’ সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল, কাউকে দেখা যায় কি না। সে একটি ক্ষেতের ভেতর একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল এবং ততক্ষণে এটি নড়াচড়া করতে শুরু করেছেন। তার মনে পড়ল এটি তো সেই কাকতাড়ুয়াটি। ‘গান কি তবে এই কাকতাড়ুয়ার?’ ভাবল। এবং এখন এটি পা-হাতসহ পুরো শরীর নিয়ে নড়াচড়াও করছেন, বেশ উত্তেজিতভাবে নড়ছেন কাকতাড়ুয়া। এবার মন্ত্রী একটি শীৎহাসি শুনতে পেল আর গোঁ গোঁ শব্দ শুনতে পেল। মেয়েলি কণ্ঠের হাসি আর পুরুষালি কণ্ঠের গোঁ গোঁ শব্দ, ক্ষেতে নড়ার খসখস শব্দ আর কাকতাড়ুয়ার নাচন তাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। সে ভয় পায়। ভয় জড়িত কণ্ঠে বলে—‘কেএএএএ?’ এই ‘কে’ শব্দটি বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ব্যাপার একসাথে ঘটেন—
১. কাকতাড়ুয়ার নড়াচড়া, হাসি, শব্দ সব বন্ধ হয়ে যান।
২. মন্ত্রি মূর্ছা যায়।
৩. মৃত্যু মন্ত্রীকে দখল করে নেন।
৪. মন্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে রইলেন।
পাঁচ.
গ্রামেই কবর দিয়ে ফরিদা এবং তার মা ফিরে যায় ঢাকায়। ঢাকা থেকে কয়েকজন নেতা এসেছিল দাফনে অংশ নিতে। ঢাকায় ফিরে যাবার পর কয়েকটি মাস যখন চলে গেলেন তখন প্রাণীবিজ্ঞানের ছাত্রী ফরিদা একদিন বেশ কয়েকবার বমি করে। তার মা তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে তার গর্ভের কথা বলে। ফরিদার মা অবাক হয়ে যায় এই সরল স্বীকারে এবং অবাক হওয়ার পর দ্বিতীয় প্রশ্নটি করে ‘সন্তানটি কার?’ ফরিদা হেসে বলে, ‘কাকতাড়ুয়ার’। ফরিদার মা বিস্মিত হয়ে ফরিদার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে বিস্ময় কাটিয়ে আবার প্রশ্ন করে—ঠিক করে বল সন্তানটি কার? ফরিদা নিশ্চুপ থাকে। তার মুখ চোখ বেশ শান্ত। তার এই ভাব দেখে ফরিদার মা ভীষণ রেগে যায় এবং বলে ‘হেঁয়ালি রেখে ঠিক করে বল’। ফরিদা বলে—‘ওই বোবা ছেলেটির, তার নাম এখন ভুলে গেছি, যার মা আমাদের রান্না করে খাওয়াতো—গ্রামের বাড়িতে।’ ফরিদার মা অবাক হয়ে বলে—‘গ্রাম্যদিনগুলোতে তুই এই কাজই করেছিস বোবা ছেলেটির সাথে?’ ফরিদা বলল—‘না মা ঐ এক দিনই করেছি। যেদিন আসি তার আগের দিন হঠাৎ সন্ধ্যার পর ছেলেটা আর আমি মাঠের দিকে ঘুরতে গিয়ে মিলিত হয়ে যায়। কিভাবে যে কী হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। আমরা সঙ্গমসুখি হয়ে উঠি সে ক্ষেতে, যে ক্ষেতে একটি কাকতাড়ুয়া আছে, একেবারে কাকতাড়ুয়াটির পা ঘেঁষে। ফলে কাকতাড়ুয়াটি নড়াচড়া করছিল। আর সম্ভবত কাকতাড়ুয়ার নড়াচড়া দেখেই বাবা হার্টফেইল করেছিলেন। বাবাকে অন্য কোনো মানুষ ভেবে আমরা পালিয়ে এসেছিলাম।’ আরো কয়েক মাস পার হলে ফরিদা বুঝতে পারে সে সম্ভবত আজকে জন্ম দেবে। ঠিক ঠিক সেদিনই সন্ধ্যার সময়। স্ট্রিটলাইটগুলো যখন জ্বলে উঠলেন আর বাসার ভেতর লোডশেডিং এলেন তখন ফরিদা ব্যথায় কোঁকাতে লাগল। এ বাড়িতে একটি সন্তান আসবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। একজন প্রশিক্ষিত দাই ডাকা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে ফরিদার স্বামী বিদেশে থাকে। ফরিদার মা মুখ গোমড়া করে বসে আছে কারণ এ সন্তানটি পৃথিবীতে আসুক তা চায়নি সে, প্রচুর বকাঝকা করে বা গা হাত নেড়ে বুঝিয়েও ফরিদাকে অ্যাবরেশনের জন্য রাজি করাতে পারেনি। শিশুটি কেঁদে উঠল কোঁহা…কোঁহা…
ছয়.
এরফান বলল—‘কে হামাকে কহে হামার লাড়িতে প্যাঁচ পড়ে গেছে, সন্তান হবে না! যারা এসব কহে তারা এসে দেখে যাও’। দাই এসেছে। মন খারাপ করে আঙিনায় বসে আছে তারু। দাই এরফানকে এসে বলল—‘এই যে, তোমার ছেলে হয়েছে’। তারুর মায়ের মনে পড়ল যেদিন মন্ত্রী মারা গেল, সেদিনের কথা। রান্না ঘরে সন্ধ্যার সময় রান্না করছিল আর মন্ত্রী ঘরে এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই জড়িয়ে ধরে আর তারুর মা চিৎকার করতে গিয়েও করে না—‘এত মানি মানুষ, সম্মান হানি হবে’ এই ভেবে। ‘এবং যাই হোক সেই তো এক রকম খাবার জোগাড় দেয় তাদের’ সুতরাং চিৎকারটি আর বের হয়ে আসতে পারেননি। সুখ নেওয়া শেষ হলে, মন্ত্রী উঠে দাঁড়ায় আর ভালো মানুষের মতো চুল আঁচড়ে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় মাঠের দিকে। কিছুণ আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে, বউটা এসব কথা মনে মনে নাড়া চাড়া করে। কিছুক্ষণ পর এরফান ঘরে ঢুকে ছেলেকে দেখতে। এরফানকে দেখে সে বলে—‘আমার ছেলে মন্ত্রী হবে দেখে নিও’। বাচ্চাটি কেঁদে ওঠে—কোঁহা…কোঁহা…
সাত.
ফানেস বিচ্ছু নতুন একটা কাকতাড়ুয়া তৈরি করছে। সে এবার দুটা শার্ট এনেছে কাকতাড়ুয়ার জন্য। মন্ত্রী তার পুরাতন একটা শার্ট ফানেসকে দিয়েছিল গায়ে দেওয়ার জন্য সেটি এবং যেদিন মন্ত্রী মারা যায় তার পরের দিন সকাল বেলা কাকতাড়ুয়াটির পায়ের কাছে একটি শার্ট পড়েছিলেন সেটি। কাকতাড়ুয়ার পায়ের কাছে পড়ে থাকা শার্টটিকে কুডিয়ে নিয়ে আসার সময় এরফানের সাথে দেখা হয়েছিল। এরফান বলেছিল—‘আরে, এটি যে আমার ছেলে তারুর শার্ট, দিয়ে দাও আমাকে’। ফানেস বিচ্ছু একথা শোনার পর এরফানকে শুধু বলেছিল—‘এখন এটি কাকতাড়ুয়ার শার্ট, তোমাকে দেব না’। এখন শার্ট দুটি সামনে নিয়ে দেখছে আর ভাবছে ফানেস বিচ্ছু। কোন শার্টটিতে কাকতাড়ুয়াটিকে বেশি মানাবে তা বুঝতেই পারছে না। এবার কাকতাড়ুয়াটিকে খুবই ভালো হওয়া চায়। গতবারেরটি তেমন ভালো হননি। কারণ মন্ত্রীকে মাটি দিয়ে ফিরে আসার সময় সে তার ক্ষেতের দিকে তাকালে কাকতাড়ুয়াটিকে দেখতে পেয়েছিল, যার ঘাড়ের ওপর একটি কাক বসে ছিলেন। শেষে ফানেস বিচ্ছু সিদ্ধান্ত নেয় দুটি শার্টই সে ব্যবহার করবে একদিন একদিন করে। আজ মন্ত্রীর শার্টটি তো কাল তারুরটি। কাল তারুর শার্টটি তো আজ মন্ত্রীর শার্টটি। সে একটি শার্ট পরিয়ে দিল কাকতাড়ুয়াটিকে এবং ফিরে আসতে লাগল। ফিরে আসার সময় সে বড় রাস্তাটি পার হওয়ার আগে ক্ষেতের দিকে তাকায় এবং কাকতাড়ুয়াটিকে দেখতে পায়। চমৎকারভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কাকতাড়ুয়া। বেশ বীরভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কাকতাড়ুয়া। ফানেস বিচ্ছু এই মূহূর্তে মনে করতে পারছে না কাকতাড়ুয়ার গায়ের শার্টটি মন্ত্রীর না তারুর। তার হাতের শার্টটি মন্ত্রীর না তারুর। সে বড় রাস্তা পার হয়। তরিকুল মোয়াজ্জিনের আজান শেষ হয়েছেন মাত্র। পিছনে, দূরে, ক্ষেতে, একটি কাকতাড়ুয়া দাঁড়িয়ে আছেন। সে মনে করার চেষ্টা করতেই থাকল কোন শার্টটা তারুর আর কোন শার্টটা মন্ত্রীর…