পুরনো ঢাকার এই গলিটায় নব্য গজিয়ে ওঠা বড়-বড় বিল্ডিংগুলোর ভিড়ে স্যাঁতসেতে দেয়ালে ফার্ন ওঠা একতলা বাড়িটায় এখনো বাস করেন কপিঞ্জল কর্তা। বয়স হয়ে গেছে সত্তরের কাছাকাছি। লোম সাদা ফর্সা বুকটাতে বাঁধা পৈতেটা যেন তাকে সত্যিকার অর্থে জীবনের সঙ্গেই বেঁধে রেখেছে। মাঝে-মাঝে খুব রাত্তিরে একলা বিছানায় যখন তিনি শুয়ে থাকেন, মেঝেতে শুয়ে শুয়ে বিলাপের মতো সুরে কালো ভুড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে গান গায়, তার গত আট বছরের একমাত্র সঙ্গী মজিবর। কপিঞ্জল কর্তা হঠাৎ-হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকে বলেন, বুঝলিরে মজিবর, এই পৈতেটাই আমাকে বেঁধে রেখেছে জীবনের সঙ্গে। যেদিন প্রাণবায়ু বের হয়ে যাবে সেদিন এই পৈতেটা কেটে দিস। মজিবর তার ঠেলে বেরিয়ে আসা ভূড়ি নাচিয়ে হাসে। বলে এত সহজে মরবে নাগো কর্তা। আল্লাহ তোমারে আয়ুর ডিব্বা ভর্তি করে দিয়েছে, এত সহজে তা শেষ হওয়ার নয়। কপিঞ্জল কর্তা কথা বলেন না। কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। মাঝে-মাঝে রাত যখন গভীর হয় তখন বাড়ির পেছনের দেয়ালের বাইরে কবরস্থানে ঝিঁঝির ডাকের নীরবতা শোনেন তিনি। কারা যেন মনে হয় ধুপধুপ শব্দে মাটি কোপায়। কপিঞ্জল কর্তা সেই নিস্তব্ধতার মাঝে পুরনো দিনের কথা ভাবেন।
তার আসল নাম কপিঞ্জল কর্মকার। সেই দেশ ভাগেরও আগে কলকাতা থেকে সপরিবারে ব্যবসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন তার বাবা। ঢাকায় তখন নব্য গজিয়ে উঠা ধনিক শ্রেণির মধ্যে স্বর্ণের ব্যবসার ভালো কদর। বাবা এখানেই খুলে বসেছিলেন ব্যবসা। তারপর দেশভাগ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ কত কিছুই না হলো। কিন্তু এই বাতাসেই হেসে খেলে বড় হওয়া কপিঞ্জলের কাছে এইটাই এখন দেশ। ঢাকার এই মাটি, মানুষ, আবর্জনা, দাঙ্গা, ফ্যাসাদ সবই যেন তার খুব আপন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বৌ শোভা রানী তাকে বলেছিল, চলো ইন্ডিয়া চলে যাই। এই দেশে হিন্দুদের ভবিষ্যত নাই। মোসলমানেরা একটা একটা করে হিন্দু ধরবে আর খৎনা করবে। তাদের ছেলে ছোট্ট বলরাম নাক দিয়ে ঝরে পড়া সিঁকনি চাটতে চাটতে মায়ের কথা হা করে শুনত। শোভা রানীর কথা সত্য হয়নি। খান সেনারা এ দেশীয় হিন্দুদের খৎনা করেই শান্ত হয়নি। গুলি আর জবাই করেও মেরেছে। কপিঞ্জল তার বউ ছেলে নিয়ে ভয়ে আধমরা হয়ে থাকতেন সেই ভয়ঙ্কর সময়টাতে। এই বুঝি এসে যায় শেষ ক্ষণ। কিন্তু তবুও তার মনে হয়েছে কোথায় যাব নিজের দেশ ছেড়ে, নিজের ঘর মাটি ফেলে! তারপর একসময় দেশ স্বাধীন হলো, এই পুরনো বাড়িতে মোসলমানের ছেলেদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই বলরাম বড় হলো। শোভা রানীও মারা গেল। এই তো বুড়িগঙ্গার তীরেই তাকে দাহ করা হয়েছিল। সেই ছাই এনে কপিঞ্জল কর্তা মাটি চাপা দিয়েছিলেন উঠানের তুলসি তলায়। এখনো প্রতি সন্ধ্যায় সেখানে আলো জ্বালেন তিনি।
___________________________________________________________________________________________________________________________________________
ঘটে তোলা জলে তুলসির পাতা ভেজান। পাশে থাকা শোভা রানীর দেহভস্মস্তূপে জল ছিটিয়ে দেন। সেখানে এখনও গতরাত্রির আলোর নিশানা পরে আছে। তিনি শোভা রানীর দেহভস্মস্তূপের কাছে বসেন কিছুক্ষণ, একা একা কথা বলেন, তুমি যেখানে গেছো শোভা রানী, জায়গাটা কেমন? ওখানে কি সবাই হিন্দু নাকি মোসলমান? আমাদের বাড়িটার পেছনে মোসলমানদের একটা কবরস্থান হয়েছে জানো! প্রতিদিন একজন দুজন করে মানুষকে সেখানে নামিয়ে রাখে। ওরা কই যায়! তুমি যেখানে আছো ওরাও কি সেইখানেই যায়? ধীরে ধীরে রোদ উঠতে থাকে
__________________________________________________________________________________________________________________________________________
বলরাম অবশ্য তার মায়ের কথা রেখেছে। বিয়েশাদী করে থিতু হয়েছে ইন্ডিয়ায়। মাঝে মাঝে বুড়ো বাপকে দেখতে আসে এই দেশে। বাড়িটার আশেপাশে গজিয়ে ওঠা উঁচু-উঁচু বিল্ডিংগুলোর দিকে ঈর্ষা নিয়ে তাকায় আর বলে এই দেশে হিন্দুদের ভবিষ্যৎ নাই বাবা। তুই আমার সঙ্গে ইন্ডিয়া চল। বাড়িটা দেই বিক্রি কইরা। কপিঞ্জল কর্তা মাথা নাড়েন। এদেশ ছেড়ে যাব না রে, তুই যা। বলরাম খেঁকিয়ে ওঠে, মোসলমানের ধরা ছোঁয়া খেতে তো তোর ভালোই লাগে। কদিন পর স্বর্গে যাবি, এখনো ঠাকুর দেবতার নাম নেস না। গরু জবাই দেখতে তোর ভালো লাগে। রক্ষা করো মা তারা, রক্ষা করো। মরবি, মরবি বাবা তুই মোসলমানের দুনিয়াতেই মরবি। তার চেয়ে চল, আমার সাথে ওপারে যাবি। সেখানে হিন্দু রাজত্ব। কপিঞ্জল কর্তা বলরামকে কিছু বলেন না, শুধু ক্রমে কমে আসা দৃষ্টিশক্তিতে তাকিয়ে থাকেন তার দিকে। অবশ্য কয়েক বছর আগে বলরাম ঠিকই জোর করে তাকে বাধ্য করেছিল বাড়িটা বিক্রি করতে। কিন্তু এখানে যে তার বেড়ে ওঠা, শৈশব, কৈশর, যৌবন। এখানের উঠানের তুলশি তলায় রাখা শোভা রানীর দেহভস্ম। কী করে ছাড়বেন তিনি এই বাড়ি! কিন্তু বলরামের চাপাচাপিতে যে ছাড়তেই হলো। এ কালের ছেলে, ওদের এসব আবেগ-টাবেগ থাকে না। তবে কপিঞ্জল কর্তা শর্ত দিয়ে রেখেছেন, যেই কিনুক এই বাড়ি, দখল নিতে হবে তার মৃত্যুর পর। মৃত্যুর কথা ভাবতেই কর্তার চোখে জল আসে। ধরা যাক, একদিন সত্যিই কেটে গেল পৈতের বান। কী হবে, কে নেবে? ছেলেটাকেও যদি শেষ দেখা না দেখতে পান? এই পুরনো বাড়িটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে বড় বড় সব অট্টালিকা। যৌবনের বুড়িগঙ্গাও সরে গেছে বহুদূর। সেই দূরের রাস্তা এখন আর চেনেন না তিনি। তাই মাঝে মাঝে মাঝ রাতে হাঁক দেন, মজিবর, ও মজিবর। ঘুমন্ত মজিবর বিদঘুটে শব্দ করে। আমার শ্মশান কই হবেরে মজিবর? আমার শ্মশান!
কপিঞ্জল কর্তার খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস। বাড়ির উঠোনের চাপকল থেকে ফজরের আজান দেবার আগেই মজিবর জল তুলে রাখে রাখে বালতিতে। তা দিয়ে খুব ভোরে স্নান সারেন তিনি। স্নানের আগে সদ্য আলো হওয়া ঠাণ্ডা নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে স্নানের মন্ত্র পড়েন।
গঙ্গেচ্ব যমুনাচৈব, গোদাবরি, স্বরস্বতী,
নর্মদে, সিন্ধু, কাবেরি, জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু
তারপর স্নান শেষে ভিজে পৈতেটা টানতে টানতে এসে দাঁড়ান তুলসি তলায়। ঘটে তোলা জলে তুলসির পাতা ভেজান। পাশে থাকা শোভা রানীর দেহভস্মস্তূপে জল ছিটিয়ে দেন। সেখানে এখনও গতরাত্রির আলোর নিশানা পরে আছে। তিনি শোভা রানীর দেহভস্মস্তূপের কাছে বসেন কিছুক্ষণ, একা একা কথা বলেন, তুমি যেখানে গেছো শোভা রানী, জায়গাটা কেমন? ওখানে কি সবাই হিন্দু নাকি মোসলমান? আমাদের বাড়িটার পেছনে মোসলমানদের একটা কবরস্থান হয়েছে জানো! প্রতিদিন একজন দুজন করে মানুষকে সেখানে নামিয়ে রাখে। ওরা কই যায়! তুমি যেখানে আছো ওরাও কি সেইখানেই যায়? ধীরে ধীরে রোদ উঠতে থাকে। উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলোর বারান্দা থেকে নানান মুখ দেখা যায়। বাইরে রাস্তায় টুন টুন বেল বাজিয়ে যায় রিকশাওয়ালা। কপিঞ্জল কর্তা শোভা রানীর ভস্মস্তূপে হাত বুলান। তোমার তো দাহ, মুখাগ্নি, শ্মশান হলো। আমার শ্মশান কোথায় হবে!
মাঝে-মাঝে ভর দুপুরে ভাত খেয়ে কর্তা বসে থাকেন পেছনের জানালার ধারে। মোসলমানদের কবরস্থানটা ঘিরে বেশ কয়েকটা ছায়াশীল ফলের গাছ, মাঝে মাঝে পাখি ডাকে। কখনো কখনো দুপুর বেলা মাটি কোপানোর আওয়াজ পান তিনি। দেয়ালের ওপারে শোরগোল ওঠে। খাটিয়াতে শোয়া সাদা কাফনে ঢাকা মরা দেখতে পান। লোকজন মরাটাকে মাটি দেয়। সুর করে দোয়া পড়ে-আল্লাহুম্মা গফিরলি হায়্যি না ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া…। কপিঞ্জল কর্তা চোখ বন্ধ করে মোসলমান মড়াগুলোর জন্যও দূর থেকে আশীর্বাদ করেন। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবেন তার শশ্মানের কথা। তিনি মজিবরকে ডেকে বলেন, শোনরে মজিবর, এই এলাকায় তো মোসলমানের জন্য কবরের ব্যবস্থা হলো, কই হিন্দুদের জন্য তো কিছু হলো না! মজিবর খালি গায়ে বুকের লোমে হাত বুলাতে বুলাতে ময়লা দাঁত বের করে হাসে। মালাউনগো কবর হয় নাকি কর্তা, ওগো তো পোড়ায় !
কই পোড়ায়, তুই জানিস?
নাহ, তবে শুনছি অনেক দূরে। সেই বুড়িগঙ্গার ওপার।
কপিঞ্জল কর্তা জানালার শিকের ভেতর দিয়ে মোসলমানদের কবরের দিকে তাকান। সারি সারি এক একটা কবর। তার ওপরে আম কাঁঠালের গাছগুলো ছায়া দিয়ে আছে। তাহলে আমার শ্মশান কই হবে! মজিবর আমি যখন মরব, তখন আমার দেহটারে বুড়িগঙ্গার ওই পাড়ে পাঠাতে পারবি না ?
নাহ, তোমারে পোড়ামু ক্যান! তুমিতো অর্ধেক মোসলমান হয়াই গেছো। মাটি দিয়া থুমু এই পাড়ে।
নারে মজিবর, এমন কাজ করিস না। হিন্দু হই আর মোসলমানই হই, সুখে দুখে আমরা তো এক সাথেই আছি আট বছর। শশ্মানে দিয়ে আসিসরে বাবা শরীরটা। পারলে অস্থিভস্ম এনে মাটি চাপা দিস শোভা রানীর পাশে তুলসি তলায়।
তুমি যে কতকিছু আবোল তাবোল ভাবতে পারো না কর্তা!
কপিঞ্জল কর্তা ঘরের ঠাণ্ডা পুরনো দেয়ালগুলোতে হাত বুলান। একজনমের স্মৃতির এই ঘর। তার আর শোভা রানীর বিয়ে, বলরামের জন্ম, তার বুড়ো হওয়া। এই ঘরটা যখন দখলে চলে যাবে, তুলসি তলাটা থাকবে তো! শোভা রানীর দেহভস্মটা যে ওখানেই রাখা। এইতো গতকাল বিকেলে কতদিন পর সদর দরজায় কড়া নেড়েছিলো যেন কে। মজিবর দরজা খুলতেই তিনজন মানুষ ঘরে ঢুকেছিল। দুজনের গায়ে ধোপদুরস্থ পোশাক, অন্যজন লুঙ্গি আর শার্ট পরা। তারা কপিঞ্জল কর্তাকে ডেকে এনে বসিয়েছিল।
কর্তা, বাড়িটা যে এখন ছাড়ন লাগে। দখল নেওয়া দরকার।
আর কটা দিন ধৈর্য ধরো বাবারা। আমিতো বলছি মরণ পর্যন্ত থাকব এই বাড়িতে। বলরাম তো তোমাদের তেমনই বলেছিল নাকি?
কি যে কন কর্তা, আমরা এত খারাপ না। আপনে একলা-একলা এইখানে মরবেন ক্যান, তার চেয়ে বলরামরে খবর দেই, হিন্দু মানুষ, ইন্ডিয়া যান গা।
___________________________________________________________________________________________________________________________________________
সেই রাতে কপিঞ্জল কর্তার চোখে ঘুম আসে না। তিনি মজিবরকে ডাকেন, মজিবর আমার শ্মশান কই হবে। ঘুমন্ত মজিবর ভুড়ির ওপর লুঙ্গি টানতে টানতে বলে, ঘুমোন তো কর্তা। কপিঞ্জল কর্তার মনে হয়, বাড়ির পেছনের কবরস্থান থেকে ধুপধুপ মাটি কাটার শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। প্রচণ্ড ভয় লাগে তার। শেষ রাতে স্বপ্নে শোভা রানী দেখা দেন। কপিঞ্জল কর্তার মনে হয় শোভা রানী তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, হবে, তোমার শ্মশান আমার সাথেই হবে। ওই তুলসি তলায়।
____________________________________________________________________________________________________________________________________________
না। এই দেশ ছেড়ে ইন্ডিয়া যাব কেন! এইটাই তো আমার মাটি। আমারে দয়া করে এইখানেই মরতে দাও। আর বাবারা আমার মরনের পর বাড়ি দখল নিলে একটা অনুরোধ করি। ওই তুলসি তলা আর স্তূপটা ভাইঙ্গো না। ওইখানে বলরামের মায়ের দেহভস্ম রাখা। আমার দেহভস্মও ওইখানেই মাটি চাপা দিও।
আপনারে পোড়াইবোই কে আর ছাইমাই মাটি দিবোই বা কে?
কপিঞ্জল কর্তা ঘোলাটে চোখে আগন্তুকদের দিকে তাকান। তার সত্তর বছরের কুঁচকানো চামড়া আরো কুঁচকে যায়। তাহলে আমার শ্মশান হবে না ?
লুঙ্গি পরা লোকটা পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসতে-হাসতে অন্যদের দিকে চোখ টিপে। দিমুনে, আপ্নের বউয়ের কাছেই ছাই মাটি দিমুনে। লোকগুলো চলে যায়। কপিঞ্জল কর্তার অসহায় লাগে। নিজের দেশ, নিজের মাটি, নিজের ঘর ! তার কি তবে শ্মশান হবে না! ওই তো বাড়ির পেছনে মোসলমানদের তো কবরস্থান আছে। কিন্তু তার শ্মশান কই হবে?
সেই রাতে কপিঞ্জল কর্তার চোখে ঘুম আসে না। তিনি মজিবরকে ডাকেন, মজিবর আমার শ্মশান কই হবে। ঘুমন্ত মজিবর ভুড়ির ওপর লুঙ্গি টানতে টানতে বলে, ঘুমোন তো কর্তা। কপিঞ্জল কর্তার মনে হয়, বাড়ির পেছনের কবরস্থান থেকে ধুপধুপ মাটি কাটার শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। প্রচণ্ড ভয় লাগে তার। শেষ রাতে স্বপ্নে শোভা রানী দেখা দেন। কপিঞ্জল কর্তার মনে হয় শোভা রানী তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, হবে, তোমার শ্মশান আমার সাথেই হবে। ওই তুলসি তলায়।
সেদিন অনেকদিন পর কপিঞ্জল কর্তার ভোরে উঠার বাঁধা নিয়মে অনিয়ম ঘটে। তিনি চোখ পিটপিট করে বিছানাতেই তাকান। মাথায় কেমন যেন একটা ভোঁতা যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে। উঠানে মজিবরের ঠুং ঠাং আওয়াজ পাওয়া যায়। তিনি কোনওমতে বিছানা ছেড়ে উঠানে এসে দাঁড়ান। তুলসির পাতাগুলো শিশিরে ভিজে আছে এখনো। তিনি দেখতে পান রাতে ঘুমের ঘোরে কিভাবে যেন ছিঁড়ে গেছে তার বুকের পৈত্যেটা। কপিঞ্জল কর্তা রোদ ওঠা নীল আকাশের দিকে তাকান। চারপাশে গাছগুলোরও মাথা ছাড়িয়ে গেছে উঁচু উঁচু সব বিল্ডিং। তাকে যেন ক্রমশ ঘিরে ধরছে ওগুলো সব। তার মনে হয় বিল্ডিংগুলো যেন তাদের লোহা ইটের দাঁত বের করে হাসছে। ওরা যেন সমস্বরে তাকে বলছে, কতদূর কপিঞ্জল? তোমার শ্মশান কতদূরে!