কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে মাঝপথে আট ঘণ্টার ট্রানজিটে সময় যেন কাটাতেই চায় না আর। ফোনে কথা হয় বড়বোন শামীমার সঙ্গে। শামীমা ঢাকায় থাকে, তার স্বামী আসিফ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান পড়ায়, একটি গবেষণা সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত। তাদের একমাত্র সন্তান রাতুলের বয়স সাত বছর। তার সঙ্গেও কথা বলে জুনায়েত। মামার সঙ্গে ভিডিও কলে অমন কথা প্রায় প্রতিদিনই হয় রাতুলের, কিন্তু আজ তার আনন্দ সীমাহীন, অন্যরকম একটা উত্তেজনায় চকচক করে চোখ-মুখ।
মামা আমেরিকা থেকে তার জন্য অনেক খেলনা আনবে। স্কুলের সব মিস্ ও বন্ধু এর মধ্যেই জেনে গেছে, তার মামার দেশে আসার গল্প ও রোবট কাহিনি। রাতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর এক সমুদ্র ভালোবাসা উথলে ওঠে জুনায়েতের। দেশের মাটিতে পা রাখার জন্য অধীর হয়ে ওঠে মন। শেষরাতের দিকে ঢাকায় ল্যান্ড করে জুনায়েত। এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষারত আসিফের গাড়িতে উঠে বসে ঢাকার রাস্তায় চোখ রাখে কৌতূহলে। রাতের এসময়েও ব্যস্ততা। সারি সারি গাড়ি। দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর এক বছরে পুরো পৃথিবীটা অনেক পাল্টে নিয়েছে নিজেকে। ঢাকাও পাল্টেছে পাল্লা দিয়ে। ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ। ‘নিউইয়র্ক শহর কখনো ঘুমায় না’। প্রবাসের গল্প বলতে গিয়ে জুনায়েত এ কথা কখনো কখনো বলে। ভেবে মনে মনে হাসে জুনায়েত। সময় কত দ্রুত সব পাল্টে দেয়! একদিন নিশ্চয় লেখা হবে, ঢাকা শহর কখনো ঘুমায় না, কেমন হবে! এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসিফের লালমাটিয়ার বাসার দিকে ফুলস্পিডে ছুটতে থাকে গাড়ি। রাস্তায় দীর্ঘ পথের যাত্রাক্লান্ত চোখে ভোর রাতের নিয়ন আলোর উজ্জ্বলতা আর পূর্বাকাশের সোনালি রঙের মৃদু আভা আছড়ে পড়ে। পাঁচ বছর পর জুনায়েত যেন প্রাণ ফিরে পায় আবার, চনমনে হয়ে ওঠে।
যথারীতি স্কুলে যাওয়ার সময়ে রাতুলের ঘুম ভাঙে আজও। কিন্তু গতকালই মিসকে বলে এসেছে আজ মামা আসবে, স্কুলে যাবে না সে। মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে হরলিক্স আর চকোতে ব্যস্ত রাতুলকে শামীমা তার মামা আসার খবর দেয় হাসিমুখে। মামা এখন ঘুমোচ্ছে, এখন তার কাছে যাওয়া যাবে না, সেটাও পইপই করে বলে দেয়। রাতুল ছটফট করে। মামা আসার বাহানায় আজ পড়তেও বসবে না, আগেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে। টেলিভিশনের পর্দায়ও মন বসে না আর। মামা যে রুমে ঘুমাচ্ছে সুযোগ বুঝে সে রুমের দরজাটা আলতো ঠেলে উঁকি দেয় রাতুল, চোখ যায় বিছানায়। দরজা খোলার মৃদু শব্দে তন্দ্রার ঘোর কেটে যায়, চোখ মেলে তাকায় জুনায়েত। রাতুলকে দেখে একগাল হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় সেও। ইশারা পেয়ে রাতুল দৌড়ে রুমে ঢুকে একদম মামার কোলে। ততক্ষণে বালিশ থেকে মাথা তুলে হাত দিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে ঘরের ভেতর সূর্যের আলোকেও ডেকে নিয়েছে জুনায়েত।
রাতুলর আনন্দে ছেদ পড়ে খানিক। দু’দিন পর জুনায়েত গ্রামের বাড়ি কুতুবদিয়া যাওয়ায় মন খারাপ হয়ে যায় তার। জুনায়েত হাসে। বলে, আরে পাগলা, আমি কাজ সেরেই চলে আসব! মাত্র তো দুদিন! মন খারাপ করে না! শৈশবের স্মৃতিঘেরা দক্ষিণ ধুরুং-এর এই বাড়িটা এখন কেবলই ইট-কাঠ-পাথরের একটা অবয়ব। জুনায়েত গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল ছুঁই ছুঁই। পরদিন পড়ন্ত বিকেলের দিকে গ্রামের পথে হাঁটতে থাকে জুনায়েত। দূর থেকে দেখা যায় ডিঙ্গাভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ স্কুলেই তার আর শামীমার হাতেখড়ি। স্কুলে ছুটির ঘণ্টা পড়তেই শিশুরা ক্লাস থেকে বের হয়ে দলে দলে দৌড়ায় যে যার পথে।
নিজের সদ্য ফেলে আসা গ্রামটাকে মনে পড়ে। শেষবারের মতো সব সম্পর্ক চুকিয়ে আসা সবুজ গ্রামটাকে ভেবে অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস তাকে নিয়ে যেতে চায় পরিচয়ের কাছাকাছি।
সেদিকে তাকিয়ে শেষ ঘণ্টা পড়ার শুভক্ষণের জন্য অপেক্ষমাণ নয় বছরের ছোট্ট জুনায়েতকে মনে পড়ে হঠাৎ। পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে যাওয়া শিশুদের পরশ এসে লাগে তার অনুভবে। জুনায়েত আনমনা হয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া শৈশব যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।সেই প্রাথমিক শেষ করে ঢাকা চলে যাওয়া তারপর আরও কত পথ। তার ভাবালুতা টুটে যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গফুর চাচাকে দেখে। গফুর চাচা তাদের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। বাড়িতে কেউ না থাকায় তিনি সব দেখে রাখেন। ভিটেটা বিক্রির কথা বেশ কিছুদিন ধরেই হচ্ছিল ফোনে। পরিবারের কেউ ভবিষ্যতে এ বাড়িতে এসে থাকবে, তেমন কোনো সম্ভাবনা যেহেতু নেই, কাজেই শুধু শুধু স্মৃতি ধরে রেখে বোঝা বাড়ানো কেন আর! ইউনিয়ন পরিষদের এক মেম্বার বাড়িটা কিনছে। বিদেশে বসেই জুনায়েত পাকাপাকি করে রেখেছে সব। এখন রেজিস্ট্রি করে দিয়ে চলে যাবে ঢাকায়। শেষবারের মতো কয়েকটা দিন সে কাটাতে চায় নিজের গ্রাম জুলেখা বিবির পাড়ায়। গফুর চাচা জুনায়েতকে শেষবারের মতো ভাবতে বলে, ব্যর্থ হয়ে কেমন মনমরা, উদাস হয়ে যায়। ফেরার সময় তার হাতে বেশকিছু টাকা ধরিয়ে দেয় জুনায়েত। চুপচাপ টাকাটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গফুর চাচা। জুনায়েতের চলে যাওয়া পথের দিকে সজল, শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে মূর্তির মতো। হঠাৎ পেছন ফিরে সেদিকে তাকিয়ে জুনায়েতের মন খারাপ হয়। খানিক এগোতেই সাগরের পাড়ে থাকা বাতিঘর দেখে ঘোর কেটে যায় জুনায়েতের। তার ভাবনায় হঠাৎ চমক লাগে। ভ্রমণের পথ শেষের দিকে। বাকি থাকে গন্তব্য ঢাকা টু নিউইয়ক।
মামার আনা রোবটটা নিয়ে রাতুলের ব্যস্ত সময় কাটে ইদানীং। এমন রোবট আগে কখনো দেখেনি সে। একদম মানুষের আকৃতির সৈনিক রোবট। যুদ্ধের জন্য তৈরি। রাতুল কিছু নির্দেশনা দিলে রোবটটা সেই মতো কাজ শুরু করে। অ্যাটাক, ফাইট, রান, জাম্প এমন কত যে বাহাদুরি দেখায় রোবটটা! রোকসানার সঙ্গে রাতুলের খুব ভাব। রোকসানা তাদের বাসায় কাজ করে, কাজের ফাঁকে রাতুলের কাছ থেকে নিদের্শনাগুলো শেখে আর রাতুলের সঙ্গে সঙ্গে সেও রোবটকে নির্দেশনা দেয়। রোবটটার কাজকম্ম দেখে রোকসানার বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই চায় না, সে হেসে গড়ায়, বলে, আল্লারে! কি সুন্দর পোতলা! এক্কারে মানুষের বাচ্চার লাহান! রাতুল এ সময়টাতে তার অন্য অসংখ্য খেলনার কথা ভুলে যায়। রোবটের আদলে সে একটি ছবি আঁকে। ছবির এক পাশে লিখে রাখে, রোবট রাতুল। কুতুবদিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে জুনায়েত বেশ ফুরফুরে মেজাজে ঘোরে। এক সকালে আসিফের সঙ্গে তার অফিসেও যায়। গত কয়েক বছরে অনেক পাল্টে যাওয়া ঢাকাকে দেখে অবাক হয় জুনায়েত। আসিফ পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে না। বাসা থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথে মেট্রো স্টেশন। রাস্তায় ছয় মাইল দূরের পথ মেট্রোতে মাত্র সতেরো মিনিটে পৌঁছে যায় তারা। অফিসে আসিফের কাজের মগ্নতায় জুনায়েত সুযোগ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে খানিক হাঁটবে বলে। হাঁটতে গিয়ে দুপাশের আকাশ ছোঁয়া অনেক দালান দেখে মনটা কেমন উদাস হয় তার। নিজের সদ্য ফেলে আসা গ্রামটাকে মনে পড়ে। শেষবারের মতো সব সম্পর্ক চুকিয়ে আসা সবুজ গ্রামটাকে ভেবে অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস তাকে নিয়ে যেতে চায় পরিচয়ের কাছাকাছি। এর মধ্যে আসিফ তার অফিসে কলিগদের সঙ্গে একটি রিসার্চের ফাইন্ডিং নিয়ে কি সব কাজ সেরে দুপুরের একটু পরেই তারা ফিরে আসে বাসায়।
রোকসানা দু’দিন কাজে আসছে না। তার ছেলেটা অসুস্থ। তার স্বামী ইয়াকুব এস রোকসানার বেতনের অগ্রিম নিয়ে যায়। কাজের চাপে দিশেহারা লাগে শামীমার। সে মোবাইল অ্যাপ ‘রোবট ডাকো’ একটিভ করে অন ডিমান্ডে গৃহকর্মী খুঁজে নেয় অগত্যা। সবার দুপুরের খাবার খেতে দেরি হয়ে যায় তবু। আসিফ জুনায়েতকে বলে, এসো হে শ্যালক! এসো খেতে বসি বৈকালিক লাঞ্চ!খাবার টেবিলে শামীমাকে গম্ভীর দেখায়। সেজানায় স্কুল ছুটির সময় রাতুলের ক্লাস টিচার তাকে ফোন করেছিল। আজ ক্লাসে রাতুল ডিসিপ্লিন ভেঙেছে। ক্লাসে মারামারি করেছে। এসময় রাতুলের সাড়া পাওয়া যায় না কোনো। সে তখন পড়ার ঘরে ব্যস্ত, শিক্ষক এসেছেন। মামার আসায় রাতুলের অনেক কিছুর সময়ই পাল্টে গেছে এখন। আর কদিন পর মামা আবার ফিরে যাবে বিদেশে। ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায় তার, জল জমে যায় চোখে। রাতে ঘুমাতেও দেরি হয় তার এখন। মামার সঙ্গে সেঁটে থাকে সারাক্ষণ। বাবা-মা যখন মামার সঙ্গে গল্প করে, তখন রোবট রোবট অভিনয় করে সে।
আধো অন্ধকার নেমে আসে সাগরের জলে। তাতে কি! উদ্বেল শামীমা আবার সাগরের জলে ছুটে আর মনে মনে বলে, ওয়ার ফর পিস!
শামীমা খেয়াল করে, ইদানীং রাতুল ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে। কী বলে ঠিক বুঝতে পারে না শামীমা। সেদিন রাত তিনটায় ঘুম ভাঙতেই সে চমকে উঠে দেখে পাশে রাতুল নেই। আসিফকে না ডেকে, আধো-আলোতে বেডরুমের চারপাশে তাকিয়ে দেখে, নেই। রুমের বাইরে বেড়িয়ে এসে ড্রইং রুমে সে আবিষ্কার করে রাতুলকে। টেবিল ল্যাম্পের মৃদু আলোয় রাতুলকে সে দেখতে পায় কার্পেটের ওপর উপুড় হয়ে শোয়া, বুকের সঙ্গে রোবটটি দুহাতে জড়িয়ে রেখে ঘুমে বিভোর! রাতুলের হাত থেকে রোবটটা ছাড়িয়ে নিতেই আচমকা সেটা কথা বলে ওঠে, ফাইট ফর পিস! শামীমা চমকায়। সুনসান এ মধ্য রাতে রাতুলকে এভাবে আবিষ্কার করে, আর রোবটের এমন কথায় তার মধ্যে এক অজানা ভয়ে জাগে হঠাৎ। শরীরটা ভারী হয়ে ওঠে—কী এক অশুভ শঙ্কায়।
পরদিন স্কুল থেকে ফিরে রাতুল তার রোবটটা খোঁজে হয়রান হয়ে, না পেয়ে কান্না শুরু করে। মাকে জানায়, রোবটটাকে খুঁজে পাচ্ছে না কোথাও। মা-ও তার সঙ্গে খুঁজতে থাকে ঘরের সব জায়গায়। রাতুল রোকসানার কথা জিগ্যেস করতে শামীমা বলে, ‘রোকসানার বাচ্চার আবার পেটের অসুখ করেছে, তাড়াতাড়ি চলে গেছে আজ। রাতুল দৌড়ে বিছানায় গিয়ে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদে। শামীমা তার পাশে শুয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে এটা ওটা বলে শান্ত করতে চায়। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে রাতুল। সন্ধ্যের দিকে ঘুম ভাঙে তার। ঘুম-ঘুম চোখে সে দেখে, ড্রইং রুমে মামা কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে আর জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। সবাই ব্যস্ত। রাতুলের হঠাৎ মনে পড়ে, আজ রাতে মামার ফ্লাইট। আমেরিকা ফিরে যাবে মামা। রোবট খুঁজে না পাওয়া আর মামার চলে যাওয়ার কথাটা মনে পড়তেই, কান্না পায় তার আবার। দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে ওড়নার আড়ালে মুখ লুকায়। মামা চলে যাওয়ার পর রাতুলের মন খারাপ কাটাতে বাবা-মা তাকে জানায় সপ্তাহের ছুটিতে তারা কক্সবাজার বেড়াতে যাবে। সব ভুলে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে রাতুল। তার সুন্দর, ছোট্ট জার্নি ব্যাগে সে নিজের আঁকা রোবটের ছবিটাও নেয়। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে জানালার পাশে বসে নিচের সব কিছু দেখে গভীর বিস্ময় জাগে তার, বুকের ভেতর ধুকপুক টের পায় সে। এত্ত সুন্দর! এত উঁচু থেকে নিচে দেখা সব কিছুতে তার ছোট ছোট খেলনা মনে হয়—বিড়বিড় করে আনমনে, হয়তো ঘুমের ঘোরের মতো।
কক্সবাজার নেমে সাগর পাড়ে আসতে তর সয় না রাতুলের, সাগরের জল ছুঁয়ে সে আনন্দে আত্মহারা হয় যায়। সাগরের পাড়েই তারা বর্ষার প্রথম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অনুভব করে। বাবা মা হঠাৎ যেন আরও বেশি বন্ধু হয়ে উঠেছে তার, সবকথাই কেমন মেনে নিচ্ছে প্রায় বিনা তর্কে! সাগর পাড়েই তাদের বাসা হলে কতই না ভাল হতো—ভাবে রাতুল। শামীমা একটু পর জল থেকে উঠে পড়ে, ছাতার নিচে বসে আসিফ আর রাতুলের জলে হুটোপুটি দেখে। মনের ভেতরের ঝড় সাগরের পাড়ে এসে জেগে ওঠে যেন আবার। রাতুলের সঙ্গে ঘরের এদিক ওদিক মিছেমিছি রোবট খোঁজাখুজি, রাতুলের কান্না থামাতে মিথ্যে সান্ত্বনা দেওয়া, একে একে মনে পড়ে সব। অস্থির লাগে। রাতুল তার রোবট হারানোর কষ্ট ভুলতে বালিশে মুখ রেখে কাঁদতে পারে, মায়ের ওড়নার আড়ালে মুখ লুকাতে পারে, কিন্তু শামীমা! রাতুলের কাছ থেকে তার মিথ্যে মুখ সে লুকাবে কোথায়? ব্যাগের ভেতর থেকে মোবাইলটা বের করে রোকসানাকে ফোন দিয়ে শামীমরা বলে, রোবটটা যেন সে আবার নিয়ে আসে। রোকসানার ছেলে এই রোবট দিয়ে খেলুক, সেটা এ মুহূর্তে চায় না শামীমা। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় রোবটটা সে টুকরো করে ফেলে দেবে আবর্জনার স্তূপে। সন্তানকে ছায়া দিয়ে রাখতে মায়ের এও এক মনযুদ্ধ। হঠাৎ খেয়াল করে জলের ভেতর থেকে আসিফ আর রাতুল শামীমাকে হাত নেড়ে ডাকছে। আধো অন্ধকার নেমে আসে সাগরের জলে। তাতে কি! উদ্বেল শামীমা আবার সাগরের জলে ছুটে আর মনে মনে বলে, ওয়ার ফর পিস!