শোন রুনু, মা-বাপরে ফলটল খাওয়াইস, বাপরে দুধ কিইনা দেইস। মদনের লগে কথা কইতে কইস রিয়াদরে; প্রতিদিন যাতে দুধ দিয়া যায়। মাস শেষে টাকা পাঠায়া দ্যাম। তরে হাত খরচের লাইগা দেম কিছু, রিয়াদরে দেম, মেজরে দেম। ভাইরে মাসে দুই হাজার কইরা পাঠায়াম। খাওয়া দাওয়া, রুম ভাড়া যায়া যত টাকা থাকে জমায়াম, ছোট ভাইটা ল্যাপটপ কিনতে চাইছে, তারে মাস ছয়েক পর কিইনা দেম। আইডিবিতে খোঁজ নিছি চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজারে ভালোটাই পাওয়া যাইব। দুই-চাইর বছর পর বাপ-মারে হজ্জে পাঠায়াম। জমিনের ঋণগুলা খুব তাড়াতাড়ি শোধ দেম। বাপ কইতো—পেটে ত্যানা পাঁচায়া, না খায়া জমি কিনছে তার আট বেটা-বেটির লাইগা। বাড়িটা দুই তালা ফাউন্ডেশন করুন লাগবো। বউ আসার অগেই সব ঠিক করুন লাগবো। পরের বেটি আইসা ভাঙা বাড়ি দেখলে তো নাক ছিটকাইবো। একটা কারও কিনুন লাগবো। চাকরিটা তো পাইছি, অ্যাহন একটা ব্যাংকের লগে কথা কইয়া লোন ন্যাম। লোন আস্তে আস্তে শোধ করাম।
মশার প্যানপ্যানিতে সাইয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। দেখে, সে শুয়ে আছে মশারি ছাড়া খাটকিতে। কই, তার চাকরি তো নাই, সঙ্গে স্বপ্নও গেল। তখন তার পকেটে মাত্র পাঁচ টাকা। মোবাইলে টাকা নাই, রিকোয়েস্ট কল দিয়ে ভাইকে বলেছে টাকা পাঠাও। টাকার আশায় সে দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে মোবাইল কাছে নিয়ে। না, মেসেজ তো আসে না। বারবার চেক করে। ফোন আসে, বলে—দেখ টাকা গেছে, ব্যালান্স চেক কর। ফোন রাখার পর সাইয়ান কয়েকবার চেক করে, টাকা নেই। এমারজেন্সি নেওয়ার চেষ্টা, কিন্তু মেসেজ আসে—স্যরি, ইউ হ্যাভ নট রিপেইড দ্য প্রিভিয়াস অ্যাডভান্স। আবার ফোন আসে, নম্বর মিলিয়ে নেয়, ঠিক আছে, বলে—আমি খাড়োয়া থাইকা টাকা পাঠাইছি। কিন্তু টাকা তো আসে নাই। সাইয়ান বুঝতে পারে সে টাকা পাঠায়নি। এমনি এমনি বলেছে, টাকা পাঠাইছি। সাইয়ান করবেটা কি? সে তো কম করছে না চাকরি পাওয়ার জন্য। পড়ছে, দৌঁড়াচ্ছে এর-ওর কাছে। যারা চাকরি দেয়, তাদের কাছে যাচ্ছে, কথা বলছে, আলোচনা চলছে। সেখানে যেতেও তো টাকা লাগে। সেদিন একজনের বাসায় গেছে। পকেটে মাত্র আশি টাকা। জায়গা চেনে না, নির্দেশনা অনুযায়ী বাসে যায়, পরে রিকশায়। দেখে অর্ধেকরও বেশি টাকা শেষ। ফিরতে তো হবে। সেই চিন্তা নিয়েই যায় তার কাছে। ফোনেও টাকা নেই। ফোন না করেই বাড়ির নম্বর খুঁজতে থাকে। ফোন করলে কাজটা সহজেই হতো। এ বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যায়, কিন্তু মিলছে না। ঘুরতে থাকে, অনেক্ষণ পরে খুঁজে পায়। ফেরার পথে হেঁটে আসে বাসস্ট্যান্ডে। যাওয়ার সময় রিকশাচালক যে পথ দেখিয়ে নিয়েছে ওই পথের অনুসরণে ফেরে। কিছু টাকা বাঁচানোর চেষ্টা। সেখান থেকে ফিরেই ভাইকে ফোন দেয় টাকা পাঠানোর জন্য। না পেয়ে ঘুমায়। ঘুমাতে ঘুমাতেই আজগুবি স্বপ্নটা দেখে ফেলে। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো। পড়ালেখা শেষ করলেই পরিবার বুঝে বসে যে, ছেলে এবার সংসারের খুঁটি শক্ত করবে। খোঁজ রাখে কবে তার মাস্টার্স পরীক্ষা হবে। হলেই তার টাকা পাঠানো কমতে থাকে। এক সময় সেই টাকা দাঁড়ায় শূন্যে। ছেলে তখন কি করবে করুক, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করিয়েছে, অনেক করে ফেলেছে। সেই বাপ তো বোঝে না, এইটুকুর পর চাকরি পাইতে আরও বছর দুয়েক বা চারেক সময় লাগে। এই সময় বাপের সাহায্য কত দরকারি। আগে হলে থাকতাম, সিট ভাড়া দিউন লাগত না, কেবল খাওয়ার খরচটা হইলেই চইলা যাইত। এখন বাসা ভাড়া দিওন লাগে মাসের ছয় তারিখের মইধ্যে। না দিলে মালিকের ভালো ভালো, মিঠা মিঠা কথা শুনুন লাগে। যে মিঠায় কোনো চিনি থাকে না, থাকে তুলসি পাতার রস। আগে মাস হইতই না, আর এখন বিজলির মতো দৌঁড়ায়। বাপে কি জানে তার পোলা দুই মাসে, ছয় মাসেও একটা শার্ট কিনে না। প্যান্ট ছিঁইড়া গেছে কিনতে পারে না, টাকা নাই। সেভ হওয়ার রেজার নষ্ট হয়া গেছে সেইটাই কিনতে পারে না, যে টাকায় রেজার কিনবে সেই টাকায় দুই বেলা খাইতে পায়। শ্যাম্পু শেষ হয়া গেছে কিনতে পারে না। একটা বডি স্প্রে আছিল সেইটাও শ্যাষ হয়া গেছে। ফ্যানটা নষ্ট হইছে ঠিক করার টাকা নাই। মশারি আছিল, বিক্রি কইরা কয়দিন চালাইছে। চাকরির একটা কইরা সার্কুলার হয়, কয় ব্যাংকড্রাফট করুন লাগবো পাঁচশ টাকা। সিভি তৈরি করুন লাগে, ছবি তুলুন লাগে, কাগজপাতি ফটোকপি করুন লাগে আট-নয় সেট কইরা। আবার পাঠান লাগে। এই টাকা তার পোলায় কই পায়? পাইতে পারে? অত ভাবার সময় কই, বাপ তো চায়া আছে পোলা টাকা পাঠায় না ক্যান, সেই প্রশ্ন নিয়া। পোলার একখান গার্লফ্রেন্ড আছিল, হ্যাও ভাগছে। ফোন করবার পায় না, ডেটিঙে যাইবার পায় না, গেলো ছুইটা। বাইর হওন লাগবো তো, একখান দুইখান কাপড় লয়া তার লগে প্রতিদিন কি দেখা করুন যায়। তার বার্থডে থাকে, তার বন্ধু-বান্ধবীর বার্থডে, ম্যারেজ ডে থাকে, সেখানেও থাকুন লাগে, গিফট দিয়ুন লাগে, সে এই টাকা কই পায়? পাবে? ঘুরতে গেলে বাস ভাড়া দিওন লাগে, রিকশা ভাড়া দিওন লাগে, কই থাইকা দেব? নিজের রাষ্ট্রই চলে না, গার্লফ্রেন্ডের রাষ্ট্র চালাই ক্যামনে? অয় চালাইতে পারতো, অর বিপদে সব সময় কাছে আছিলাম, কত বার কইছি—মন খারাপ করে না জানু, সব ঠিক হয়ে যাবে। তার মাথায় হাত রেখে আশার কথা শুনাইছি। ধৈর্য ধরবার কইছি। কত সম্ভাবনার কথা শুনাইছি। এখন নিজে বিপদে আছি, আমারও দরকার সম্ভাবনার গল্প, কেউ একটু নরম সুরে, সাপোর্টের সুরে কথা বলুক। না, সেসবের গন্ধ পাই না। হ্যায় তো আগেই ভাগছে, বাপও তাই করতাছে।
কদিন আগে একটা ভাইভা দিতে যাই। কয়—
—আপনি বই লিখতে পারেন, অথচ এককথায় উত্তর করতে পারেন না? তাহলে তো আপনার বই লেখাই বৃথা।
—আপনার যে প্রশ্ন করার যোগ্যতা নেই এটা কী আপনি জানেন? (সাইয়ান)
—মানে কী?
—একজন মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীর মগজে কী আছে তা জানার জন্য নিশ্চয় এককথায় উত্তর উত্তম পন্থা নয়? তাকে যদি টেস্ট করতে চান তাহলে ডিটেলস বলতে বলেন, লিখতে বলেন, দেখেন সে পারে কী না। যদি না পারে তাহলে আপনি অমন বাঁকা প্রশ্ন করবেন। আপনাদের তো প্রশ্ন করাই হয় না। কেন আপনারা পরীক্ষার বোর্ডে বসেছেন?
—আপনি কী আমাদের ভাইভা নিতে চাচ্ছেন?
—বিষয়টা তা নয়, বলছি আপনাদের ল্যাকিংস আছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে আরও যতœশীল হতে হবে। এককথায় উত্তর খেলা না খেলে বিস্তারিত লেখার সুযোগ করে দেন। কার অমুক কাব্যের প্রথম কবিতা কী ও শেষ কবিতার নাম কী? কার গ্রন্থ কোনটি? এটা কোন ধরনের রচনা? এ যদি আপনাকেও জিজ্ঞেস করা যায় আপনি নিশ্চিতভাবে ফেল মারবেন সেটা জানেন? বলি কি, এসব থেকে বেরিয়ে আসেন। দেশে বহুত পাবলিক আছে কারটা ছেড়ে কারটা পড়বে? সবই পড়লে মনে রাখাও সম্ভব নয়। প্রশ্ন এমন করেন যে সে সাহিত্যে কী যোগ করল? তাঁর বিশেষত্ব কী? এসব লিখতে বলেন। একজন বাংলা পড়াবে তাকে কেনই বা অঙ্ক, ইংলিশে পরীক্ষা দিতে হবে? আজাইরা।
—আপনি তো পুরাই বেশি জেনে ফেলেছেন আমাদের সম্পর্কে। আপনি জানেন এটাই প্রশ্নের নিয়ম? এখান থেকে আমাদের বের হবার সুযোগ নেই।
—এ জন্যই তো আপনারা সবাই টাকলু। এসব চিন্তা মাথায় গিজগিজ করে বলে মাথায় কোনো চুল নাই। আর পরীক্ষার প্রশ্নের কোনো তলা নাই। সবই ফাঁচুকি। গোল্লায় যাওয়ারও একটা সীমা আছে। আপনারা সেই সীমারও নিচে অবস্থান করছেন।
—আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?
—আপনাদের এসব আজাইরা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে এসে যে সময় নষ্ট করেছি, সেই সময়ে অন্তত দুটি গল্প লেখা যেত। লেখা যেত চার থেকে পাঁচটি কবিতা। কবিতা বোঝেন? গল্প বোঝেন? পড়েন? না বেহুদা প্রশ্ন বানানোর কলকব্জা রপ্ত করে মাথাটা ভরিয়ে রেখেছেন?
—আপনি সংযত হন!… (বোর্ডের ২য় ব্যক্তি)
চাকরিটা জোটে না। এইখানে যাইবার আগে হিমালয় জয়ের মতো বাধা ডিঙাইতে হইছে। রিকশা চালকরে কই—মামা অমুক প্রতিষ্ঠানটি কই? উত্তর—রোড পার হয়া একটা গলি পাইমেন, আর উয়াক ধরি হাঁইটপার ধরমেন, পায়া যাইমেন। রোড পার হই; গলির সামনে যাই, ঠিকানা পাই না। মোড়ে একজনরে জিগাই, সে কয়—ভাই আপনে একটা ফোন দেন, এই নামে কুনু প্রতিষ্ঠানের নাম হুনি নাই। সিউর হয়া লন। আমারে তো এই নামই কইলেন। আচ্ছা, আমায় কন মৌচাকের উত্তর কোনটা। ভাই খাঁড়োন এই নো। এইডা কী? এইডা হইলো পূর্ব দিক। তাইলে এইডা পশ্চিম দিক। এইডা দক্ষিণ দিক। আর ওইডা উত্তর দিক। বুঝলেন তো? হ ভাই, বুঝলাম। তাইলে রোড পার হওন লাগব? হ, যান। রোড পার হই, আবার জানুন লাগে। এবার যে উত্তর পাই—
ক. ভাই ওদি যান। ভিতরত একটা গলি দেখা যাইবে, অটে গেলে পাইমেন। (দোকান বন্ধ করে বসে থাকা একজন)
খ. দূর ব্যাডা, এইডা কী কইলি। এই নামো কোনো প্রতিষ্ঠানই নাই। (পাশে বসে থাকা পান ব্যবসায়ী)
গ. ভাই, কী বললেন, শাহজাহান? না ভাই, শাহ আলী নামে প্রতিষ্ঠান আছে, তা মিরপুরে। (গলায় কার্ড ঝুলানো একজন; হয়তো কোনো কেয়ারের লোক।)
ঘ. এই এইটা জানি কই? (এক পুলিশ জিজ্ঞেস করে এক বাদাম ও ছোলা বিক্রেতাকে)
হাঁটতে হাঁটতে, যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে এক সময় যাইবার পাই; কিন্তু কোনো লাভ ছাড়াই ফিরুন লাগে
পরিচিত স্যাররে ইনবক্স করি—
স্যার, একটা চাকরি খুব দরকার। আমি ভাবতে পারি নাই এত তাড়াতাড়ি চাকরিতে যেতে হবে, কিন্তু পরিস্থিতি তেতো হয়ে গেছে। বর্তমানে খুব কম টাকায় দিন যাপন করছি। যে ভাই টাকা দিতেন, তাঁর চাকরি নেই। তিনিও এখন বেকার। আমার দশা খুবই আশঙ্কাজনক। ভালো থাকবেন।
ইতি—
সাইয়ান
__________________________________________________________________________________________________
একা একা ভালো লাগে না, তাই জুনিয়রদের নিয়া রুমে আড্ডা বসাই। নিঃসঙ্গ লাইফ কতই বা আর ভালো লাগে? তারা যে চাকরির নিশ্চয়তা দিব, তা না। আশেপাশে কিছু মানুষ থাকুক, তাদের সঙ্গে সময় ভাগ কইরা যদি আগান যায়। খানিকটা হইলেও হতাশা কাটে। যদি কিছুটা সময় ভালো থাকপার পাই। অসময়ে কেউ কাউরে সময় দিবার চায় না। কেউ কারও কাছে চাপতে চায় না। কাছে আইসা মানুষ যাতে একটু সময় নিয়া থাকে হের লাইগা কই স্বপ্নের গপ্প।
_________________________________________________________________________________________________
হ্যায় সিভি দিতে কয়, দেই, সিভি রাখে, সেই রাখা কোনো কামে আয়ে না। বছর কাইটা যায় ফল ছাড়াই। তারে আবার নতুন সিভি দিয়ুন লাগে; হয়তো ছয় মাস পর আবার তাঁর অনুরোধে সেই কাজ করুন লাগব বার্তা ছাড়াই। দুইটা অকেজো মোবাইল নিয়া খেলা শুরু করি। নিজেই নিজের লগে খেলা সাজাই :
—কি মামা, তুমি না বেকার? চারহি নাই। তো দেহি দুইডা ফোন লইয়া বইয়া আছ?
—হ, হ, সবাই তো তাই কয়। আমি কই। পরিবারও কয়। সমাজও কয়। জাতিও কয় আমি বেকার। তুমি বেকার। আমরা বেকার।
—হ, হাচাই তো।
—হুন, এইডার জীবনডা আঙ্গোর মতোই।
—কী কচ?
—দুইডার মধ্যে একটার সাত নাম্বার, আরেকটার আট-নয় নাম্বার বাটন বেকার অইয়া গেছে। কোনো কামে আয়ে না।
এক ভাইরে দেখলাম, চাকরি না পায়া পায়া অবস্থা কাহিল হয়া গেছে। তার পুরা শরীর জুইড়া কে জানি কালি মাইখা দিছে। তার কথায় কেবল হতাশা ও স্বপ্ন খোয়া যাইবার গপ্প। সে আর জোর দিয়া হাঁটে না, জোর দিয়া কথা কয় না। চুপচাপ একটা দোকানে আসে, চা খায় আবার চইলা যায়। আমারে দেখলে অন্য পথে হাঁটে। যদি তারে কই তার বিসিএস না পাওয়া নিয়া, যদি কই তার বর্তমান চাকরি নিয়া; মানে এখন সে কী করবে বা করছে জানতে চাই। জানতে চাইতাম না, নিজেরই কত না জানা কথা জমা আছে। তা-ও সে আর ধরা দিবার চায় না; পালায়া বেড়ায় উত্তর না থাকায়।
একা একা ভালো লাগে না, তাই জুনিয়রদের নিয়া রুমে আড্ডা বসাই। নিঃসঙ্গ লাইফ কতই বা আর ভালো লাগে? তারা যে চাকরির নিশ্চয়তা দিব, তা না। আশেপাশে কিছু মানুষ থাকুক, তাদের সঙ্গে সময় ভাগ কইরা যদি আগান যায়। খানিকটা হইলেও হতাশা কাটে। যদি কিছুটা সময় ভালো থাকপার পাই। অসময়ে কেউ কাউরে সময় দিবার চায় না। কেউ কারও কাছে চাপতে চায় না। কাছে আইসা মানুষ যাতে একটু সময় নিয়া থাকে হের লাইগা কই স্বপ্নের গপ্প। ভেতরটা নিরাশায় ভইরা গেলেও সে কথা চাপা রাইখা তার উপর ফলাই আশার ফসল। নিজে খাইতে যেখানে বেকায়দায় পড়ি, সেইখানে যারা আইল তাগোর লাইগা পটেটো, চানাচুর নিয়া আসি। দীর্ঘ সময় গপ্প জমুক আমি তা মন-প্রাণ দিয়া চাই। শরীরটারেও সচল রাইখা নানা গপ্পে সুর পেটাই। দেশ থাইকা সমাজ, সেইখান থাইকা পরিবার, শেষে চইলা যায় গপ্প ঘরে। মাইয়া মানুষের শরীরে লুকায়া থাকা গপ্পে জমে আসর। এইখানে, ওইখানে দেখা মাইয়ার শরীর বিশ্লেষণ চলতেই থাকে। কার বুকের মাপ কত? কার পাছা কত ঢোলা? সেইসব হিসাব কইষা বিদায়পর্ব হয় নতুন কোনো সন্ধ্যায় আবার গপ্পে গপ্পে জমে উঠবার অপেক্ষায়। বাপ কি জানে এই সব?
খ.
বাপরে কইবার পাই না, বাপ আমার লাইগা মেয়ে দেখো, বিয়া তো করুন লাগে, বয়স তো কম হয় নাই। না, কইবার পাই না। কইতে হইলে একটা জোর লাগে, চাকরি লাগে, তা তো নাই। মাইয়ার বাপেরে কি পিঁপড়ায় কামড়াইছে যে, কাম-কাজ ছাড়া পোলার লগে মাইয়া বিয়া দিব। খাওন দিবার পাইতাম না, পরবার দিবার পাইতাম না, বাদাইমার মতো ঘুইরা বেড়াইয়াম, আর পিটাইবাম তার বেটিরে; এইসব কি সে মানব। কিন্তু পোলারও তো একখান নারী দরকার। তারও তো একখান দেহ আছে, সেইখানরে তো ইউজ করুন লাগব। বাপেরে কইবার পাই না। সে ফার্মেসির দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় প্যানথার, সুপার সেক্সের প্যাকেট দেখে। কাছে যায়, জানে সেসবের ব্যবহার। জানে, সুপার সেক্স খেলে আধঘণ্টা ধরে সে সঙ্গম করতে পাবে। দেখে দেখে নিজের ভেতর লোভ জন্মে, জন্মাইতে জন্মাইতে চলে যায় নারীর কাছে। উপভোগ করতে চায় সেই সুখ, এত দিন ধরে যা যা জ্ঞান নিল দেখতে চায় সেসবের ব্যবহারের ফলটা কেমন হয়। যায়। একটি গলি দিয়ে ঢুকে। আন্ধার। আন্ধারে আন্ধারে সিঁড়ি পায়। না, এইখানে তো আন্ধার নাই। সব চকচকা। খালি লাইটে না, ওই মাইয়াগোর শইলের আলোও আছে এই আন্ধারে আলো দেওয়ায়। কেমনে কি করতে হয়, জানে না। তার সামনে দিয়ে চলে গেল একজন, বলে—সো সেক্সি। আবার আরেকজন গেল আরেক রুমে। টিকিটম্যানের সাথে কথা বলে—একঘণ্টা রাখলে কত দিয়ুন লাগব? তিন হাজার। কয়, পারবেন না, সর্বোচ্চ হইলে পাঁচমিনিট রাখতে পাবেন। কয় কি, বিদেশিরা পায় কেমনে? একেকটা শো আধা ঘণ্টা ধইরা চলে। অনেক নারী সামনে পেয়ে ঠিক করতে পায় না কোনটা ছেড়ে কোনটায় চোখ দিবে। যাক, তাকে সিদ্ধান্তে নিয়ে যায় ঐখানের এক নারী। সে করুণ চোখে তার দিকে তাকায়। ওরে শালি, তুই তো ঘায়েল কইরা ফালাইলি। কেমনে শিখছোস এই মায়া? উত্তর দরকার নাই। হাই হিল পরা মেয়েটা তাকে নিয়ে ছোট্ট একটা রুমে ঢোকে। সেখানে একটি ফ্যান চলছে। ঝুঁড়িতে আছে কয়েকটি ইউজ হওয়া কনডম। এবার তার জ্ঞান কাজে লাগাবে। এবারও এ মেয়েই সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু পপি নামের এই মেয়েটি কাঁদে। সাইয়ান কয়—কান্দো ক্যান? কী হইছে? সে কথা কয় না, বুঝতে পায় না সাইয়ান। শালা, সব মজাই গেল। মরারে ধাক্কায়া কোনো লাভ আছে? সে নামে, কথা বলে পপির সাথে। এখানে তো আর বেশি কথা বলার সুযোগ নাই। অল্প বলে। তাতে যা বোঝার বোঝে, পপিও বোঝায়। ফোন নাম্বার লেনদেন করে সাইয়ান চলে আসে। ধুর, বাল! এই আওয়াজটা কেবল শোনা যায়।
গ.
সন্ধ্যায় বসে আছে। মাত্র ঘুম ভাঙছে। বেকার মানুষ, আবার গার্লফ্রেন্ডও নাই, বাইরে কেমনে যায়? যায়াই বা কি হয়। তাই ঘুমায় সাইয়ান অনেকটা সময় নিয়ে। ফোন আসে সেই নাম্বার থেকে, কয় : হ্যালোও, পপি বলছি। আপনের আজ একটু সময় হবে। আহা রে, কি বিনয়। ক্যান? আপনার সাথে কথা আছে। কয়া ফেল? না সামনাসামনি কই। বিপদে ফালাইবা না তো, এমনিতেই সময় যায় না; ফ্যাকড়ার পর ফ্যাকড়া। পপি তারে বুঝাইবার পায়, এবারও সিদ্ধান্ত তারই। পপি নায়িকা পপি না। এখানে এলে তাদের একটি নাম দেওয়া হয়। ভাগ্যে তার এই নাম জুটে যায়। অবশ্য তার ফেসের সাথে নায়িকা পপির ফেসের একটু মিলও আছে। তার বাপ-মায়ের দেওয়া নাম রুপন্তি।
আচ্ছা, কও তো, তুমি এইহানো কেমনে আইছ?
আসি নাই, আসতে হইছে।
কও কী?
শোনো, তুমি তো দেখছ আমারে তোমার চোখ দিয়া। সেদিন কাঁদছি বইলাই তোমার দয়া হইছে। আমার লগে ভালো কইরা কথা কইছ। এইটা-ওইটা জানবার চাইছ। আমি প্রতিদিনই কাঁদি। কাঁদি ছোটবেলা থাইকাই। বড়বেলায় আইসা বুঝি সেই কান্দার কারণ। আগে না বুইঝাই কাঁদছি, এখন বুইঝা কাঁদি। মায়েরে দেখছি ম্যালা যন্ত্রণা পাইতে। বাপটা চিল্লায় চিল্লায় ঘুইরা বেড়াইত। মায়ের সংসারের কাজ করতে হইত। বাপে যে এতগুলো টাকা, অনেকখানি জমিন রাইখা যাইত আবাদের লাইগা, তা না। মায়ে সকালে উইঠা এর বাড়ি, ওর বাড়ি ঝিয়ের কাজ করত। টাকা পাইত, তয় খুব বেশি না। সেই টাকায় আমরা চার ভাইবোন চলবার পাইতাম না। সংসার চলত না। বাড়ির মালিক যেদিন মারে আদর করবার চান্স পাইত সেইমাসে টাকা বাড়ায়া দিত। সেদিন তারে কাঁদতে দেখছি। তারপর কয়দিন কাঁদে নাই। পরে দেখি টানা কাঁদতাছে। বুঝবার পাই সেই হিসাব। মা আমারে সেই টাকায় পড়াইতে থাকে। স্কুল, কলেজ শেষ কইরা ভার্সিটি আসি। মা-খান মইরা যায়। আমারেও মাইরা গেল। মাইরা গেল আরও তিনজনরে। বাপের তো খোঁজ নাই। আমারেই আসুন লাগে সংসারের আয় করবার। টিউশনি করাই। এইখানে দেখি মায়ের দশা আমার উপরেও।
ক্যামনে?
পড়াইতে আসি, মাঝে-মইধ্যে দেখি মালিকের ইয়ং পোলাটা কেমন কেমন কইরা তাকায়। কথা কয়। এইটা, ওইটা জানবার চায়। তারপর নানা অ্যাঙ্গেলে আমারে দেখে। দেখতে দেখতে একদিন ছুটির আগে আমার হাত ধরে। সেদিন এইখানেই স্টপ থাকে। পরের মাসে টিউশন ফি দেখি দুই হাজার বাইড়া গেছে। বেশি টাকা পাইলে আমারই সুবিধা। বাড়িত পাঠান যায়। আমারও লাগে। লাগে না। বিভাগে প্রোগ্রাম হইলে শাড়ি পরুন লাগে, মানে বান্ধবীরা পরে, আমি না পড়লে কেমন কেমন লাগে না। পরিবেশটা তাগোর আর আমার মইধ্যে পার্থক্য করে না। তারা পাঙ্গি পাড়ে, আমারও তো মন চায়। আমি হাসি না, জোর দিয়া হাসি না। কত প্রোগ্রাম গেল, আমি চুপচাপ থাকি, তেমন কথা কই না। মাঝে মাঝে আসতাম না। বান্ধবীরা বটতলায় খাইতে যায়, আমি যাই না; যাইতে বাধ্য হইলে ভর্তা-ভারতি দিয়া খাই। কই, গোশত-টোশত আমার ভালো লাগে না, খাইবার মন চাইতাছে না। আসলে মন চায়, কিন্তু টাকা না থাকলে কি করাম। অমনেই চালাইতে হয়। আমরা কত অভিনয় করি; খাইতে বইসাও করি, হাঁটতে গিয়াও করি, শুইতে গিয়াও করি, বইসা থাকলেও অভিনয়ের বশেই থাকি। পাবলিক ভার্সিটিতে একজন মেয়ে পড়তে আসলে কমছে কম ছয় হাজার টাকা তো লাগেই। আমি টিউশনিতে পাই ঐ ছয় হাজারই। তিন হাজার তাগোরে পাঠাই। নিজের লাইগা রাখি বাকিটা। এমনে চলে। বাজেটে ঘাটতি। তো সেই ঘাটতি যদি একটু কমে, কমুক না। এইটা কিন্তু কোনো স্বাভাবিক মেয়েই চায় না। আমিও না, কিন্তু চলুন তো লাগব। যেদিন বেশি টাকা পাইলাম, সেদিন কাঁদলাম। তারপর থাইকা নিয়মিত কাঁদি। কাঁদি মাসের মাঝে মাঝে মালিকের ইয়ং পোলারে পড়ানোর পর। কান্না আর থামে কই, চলে কাঁন্দন পর্ব।
রাত হয়ে গেলে পার্ক থেকে তাদের সরতে হয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা রাস্তায় আসে, বিদায় নেয়। রুমে ফিরে সাইয়ান ভাবে, এ ক্যামনে সম্ভব। আমারেও তো যন্ত্রণা ফালি ফালি করতাছে। কিন্তু তারটা এত মন দিয়া শুনলাম কেমন কইরা। বোঝাইলাম কেমন কইরা। শান্ত থাকবার কথা কইলাম কেমন কইরা। নিজের কাছে সুখ থাকলে পরের দুঃখটা নেওয়া যায়। তাইলে কি আমি তার চাইতে সুখে আছি? এ হিসেব আর আগাতে পারে নাই, ঘুমিয়ে পড়ে। স্বপ্ন আসে। মরার স্বপ্ন। বাপে কেমন করে মরছে, তাই দেখছে। না, সে তো এই স্বপ্নর জন্য প্রস্তুত আছিল না। বাপটা মরে ক্যান? বাপের কত দায়িত্ব পালনের বাকি আছে, সেসব তো শেষ করুন লাগব। তাইলে সে মরে ক্যান? এর দুই দিন আগে ভাইয়ের জেলে যাবার স্বপ্ন দেখতে পায়। ভাই তাকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার খরচ দিয়েছে। সে দেখতে পায়, কেমন করে ভাই টাকা কামাই করে। যে টাকার চাকরি করে, সেই টাকায় তো তারই চলবার কথা না। তাইলে চলে কেমনে? আমারে দেয় কই থাইকা? ভাইয়ের শরীরটা এত শুকায়া গেছে ক্যান? কেমনে কালা হয়া গেল? জেলে গেল ক্যামনে? না, টাকা মারছে। আমারে দিবার লাইগা টাকা মারছে। হের লাইগা অইনো। আমি তো বড় হয়া গেছি। কাঁদি না, তাই শরীরটা অবশ হয়া গেছে। স্বপ্ন গেল, আমারে শুকায়া গেল, কইলজায় পানি নাই। কি করুন লাগব বুঝবার পাইতাছি না। স্বপ্ন গেছে, কিন্তু জাগরণও তো পুরাপুরি আসে নাই। এমন লাগছে ক্যান? কেমন কইরা বোঝাই? কোনো সেন্স নাই। আহা, ক্যান এমন হইছে। অপেক্ষা করি, আমি তো আমার দুনিয়ায় নাই। আরেকটু অপেক্ষা করি। না, এখন একটু একটু বুঝবার পাইতাছি। ফজরের আজান দিতাছে, আজানের সময় শয়তান চল্লিশ হাত দূরে চইলা যায়। তাই বুঝি আমারে ছাড়ছে। নামাজে আসুন, নামাজে আসুন কইতে কইতে একজন যাইতাছে। আমি কই যায়াম? কতদিন পড়ি না নামাজ। কেবল জুম্মার নামাজটাই পড়ি। তাও চাইর যোগ দুই, সমান ছয় রাকাত। নামাজে যাই। আজান শেষ, কিন্তু বিছনা ছাড়বার পাই নাই। ঘুম আইতাছে।
ঘ.
ক-দিন পর পার্কে আবার রুপন্তির সাথে সাইয়ানের দেখা। তারা বাদাম খেতে খেতে গল্প করছে। রুপন্তির পরের গল্পটুকু জানতে চায় সাইয়ান। রূপন্তি বলে, এরপর যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ হয় তখন একটা চাকরিতে যাই। প্রাইভেট ফার্মে ঢুকি। সেলারিও ভালো। এ দিয়া নিজে একটা ফ্ল্যাট নেই। বাড়িতে পাঠাই। ছোট ভাইটারে স্কুলে ভর্তি করাই। দুই বোন কলেজে যায়। বাড়িটারে ঠিকঠাক কইরা দেই। তারা খাইতে পায়, ভালো পোশাক পরবার পায়। বোন দুইটারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। ভাইটা কলেজে যায়। চলতাছিলই। একদিন বস আমারে তার রুমে ডাইকা পাঠায়। গেলাম। বসলাম। সে আমারে কফি খাওয়ার অফার করল। বস মানুষ, কেমনে না করি। খাইলাম। সেইখানে যে মান হারানির ঔষধ আছিল বুঝবার পারি নাই। ওই শালা এমন পুংডা, আমার লগে এমনে কাম করছে, আবার সেই ভিডিও ছাড়ছে নেটে। পরের দিন অফিসে গেলে সবাই চায়া রইছে। কী হইছে? কিছুই তো মাথায় আসে না। একজন ভিডিও আইনা দেখাইল। দেখলাম। সেই যে অফিস থাইকা বাইর হইলাম, আর ফিরবার পাই নাই। পাই নাই ফিরবার কোনো অফিসেই। এখন এইখানে। বোনদের খরচ, ভাইয়ের খরচ দিয়ুন লাগে। তাদের যে জীবনের স্বাদ দিছি সেইখানেই তাগারো রাখতে হইতাছে। যখনই টাকা যাওয়া বন্ধ হইব, তখনই তো তারা হতাশ হইব, স্বপ্নের ভাঙন হইব, হাউকাউ বাড়ব। মাঝ পথে তো তাদের ছাড়বার পারি না। একসময়ে ইচ্ছা আছিল এসপি বা জজ হয়া দেশের, সমাজের সেবা করাম। এখনও অবশ্য সেবা করতাছি। প্রতিদিনই কত সেবা করতাছি। কত মানুষরে সেবা দিতাছি। যে সেবার কথা সমাজ জানে না, বোনেরা জানে না, ভাই জানে না, প্রধানমন্ত্রী জানে না, কোনো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া প্রতিষ্ঠানও জানে না। কিন্তু সেবা দিচ্ছি, তো দিচ্ছিই।
আচ্ছা সাইয়ান, তুমি এমন সানগ্লাস পইরা থাকো ক্যান?
এই পরি, নিজের ভালোর লাইগা পরি। দেখ না কত রোদ, কত ধূলা, এগোর হাত থাইকা বাঁচার লাইগাই পরি।
আসলেই কি তাই? না, তা না। সে চাকরি পায় না অনেকদিন থেকেই। বাড়ির অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে আগায়। পড়ালেখা শেষ করার পরপরই, না, মাস্টার্স পড়ার মাঝ থেকেই সে কোনো টাকা পায় না। টিউশনি করে তাকে দিন কাটাতে হয়। যেভাবে কাটে আরকি। বাবা-ভাইবোনদের পড়ার খরচ জোগাতে জোগাতে সব জমিই বন্ধক রেখে ফেলেছে। এখন আবাদের মতো কোনো জমি নাই। বাবার তো ইনকামও নাই যে সেই টাকায় চাল কিনে খাবে। ছোট বোনটা জানাল এ কথা। সে যন্ত্রণার ভেতর স্কয়ার যন্ত্রণায় পড়ে। নিজেও চলতে পারছে না, আবার ছোট বোনের এই হিসেব। সে বিজ্ঞপ্তি দেখে, বলা আছে চোখ লাগবে। এত লাখ টাকা। সে হাসপাতালে যায়। কথা বলে। টাকা নেয়। যে টাকার সাথে জড়িত সে ও তার ছোট বোনের বলা কথাগুলো। হাসপাতাল থেকে ফেরে। ফেরে একটা সানগ্লাস নিয়ে। বাড়িতে যায়। টাকা দেয় বাবাকে। বাবা জমির বন্ধক খুলে। জিগায় না বাবা তুই এত টাকা কই পাইছস, টাকা হাতে পায়া বাপ সবই ভুইলা গেছে। এবার সে সব ঋণ শোধ করবে। করেও তাই। সে বাড়িতে থাকতে থাকতেই সব পাওনাদারদের ডাকে, তাদের টাকা পাই পাই কইরা বুঝায়া দেয়। বাপ মহা আনন্দের টগবগানিতে আছে। সাইয়ান কিছু বলে না, বাপও জানতে চায় না। বাপ দেখে পোলা তো বেশ ফিটফাট। সে যা চেয়েছিল। সানগ্লাস পরে। কোর্ট পরে। সুজ পরে। আরকি চাই। এই চাওয়ার মাঝেই মার খায় পোলা কেমনে এত টাকা আয় করল সেই প্রশ্ন। গ্রামের মানুষের তাক লেগেছে। কিছু বলতে পায় না। যারা কয়দিন আগে ছেলেটারে নিয়া নানা কথা কইছে, তারা তো আর কিছু কইবার পায় না। বাপ এইটা খেয়াল কইরা আরও খুশি। সমাজে এখন তার কত সম্মান। সবাই খাতির করে। নানা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়। চারপাশের মানুষ কতই না সামাজিক হয়ে উঠেছে।
কিন্তু একখান চোখ না থাকার গল্প কেউ কি জানে? না জানে তার বাবা, না জানে সমাজের মানুষ। তারা জানবারও চায় নাই। কেবল জানতে চায় এই মাইয়াটা। সে হয়তো জানে না, এই আস্ত মানুষটাও ভেজালে ভরা। তাকে বাইরে থেকে যত রসে ভরা লাগে, সে তত শুকনা। ভেতরে একটা কিডনি নাই। এটি বিক্রি করে বাপরে হজ্জে পাঠাইছে। সব ঋণ খালাস করছে। কিন্তু আরেকখান ঋণ তো বাকি আছিল। সেইখানও পূরণ করে। সাইয়ান জানতে চায়—তুমি বিয়া করো নাই ক্যান? করতে চাইছিলাম, কিন্তু পারি নাই। বিয়ার পিঁড়িতে গেলে ভাই-বোনদের লেখাপড়া হয় না। তাদের দায়িত্ব অন্যরা নিবার চায় নাই। একজন দেখতে আইসা সেই ভিডিও ঘাপলার ফেস খুঁইজা পায়া ভাগে। তুমি গ্রামে যাও না? গেলে তো জানবার চাইব আমার কথা, তাদের কী জানায়াম? তাদের কী বলাম? বয়স তো কম হয় নাই, বিয়া কেন করি নাই, জানবার চাইব। কী কয়াম? এই কথা তো তাদের কয়ুন যাইব না। শোনো রুপন্তি, কেউ তোমার সঙ্গে গেলে মাইন্ড করবা? (হাসি) মাইন্ড? কে যাইব? যাওনের মানুষ আছে, চলো, আগাই!