নার্গিসের বৃত্তান্ত
লাশ মাটি দেওয়ার পরপরই পাড়াপড়শীর ঘর থেকে আসা ভাত আর মাছ-মাংসের তরকারি দিয়ে মেলামাইনের থালা ভর্তি করে নিজেই নিজের পাত পেতে খেতে বসে যায় নার্গিস। গ্রামাঞ্চলে এ-ই এক রীতি—মৃতের বাড়িতে খাবার দেওয়া। নানা ঘর থেকে এসেছে নানা পদ। পুলিশের গৎবাঁধা জেরা, নির্বিকার নিয়মের মর্গ—ইত্যাদি ঝামেলা শেষ করে লাশ গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে শেষ বিকাল। রোদ তখন গাছের মাথা ছেড়ে আকাশে লেপ্টে গেছে। আত্মহত্যার লাশ। তড়িঘড়ি জানাজা, কবর। তবু সব শেষ করতে করতে একেবারে ছোপ ছোপ অন্ধকারের সন্ধ্যা পার হয়ে দোয়াত উল্টানো কালো রাত। পড়শিরা মৃতের শোক ভুলে গা টেপাটেপি করে, মুখ টিপে হাসে, নার্গিস করে কী!
গ্রামের মানুষ টাউনের এই অচেনা অতিমারী সময়ের অভাব দেখেনি, শুনেওনি অনেকে। সেই শেখের ব্যাটারে যে শ্রাবণে মারলো, তার আগের বৈশাখে ধান ওঠেনি, ঘরে ঘরে অভাব, ভাত নেই—এই অথর্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মুখে শোনা রূপকথা। এখন ভরপেট খেয়ে উঠানের আমগাছের ছায়ায় চাটাই বিছিয়ে হাওরের ঢেউ মেখে ভেসে আসা মৌসুমি বাতাস গায়ে মাখতে মাখতে কখনো-সখনো তারা জাবর কাটে। ফুড়ুৎ করে পানের পিক ফেলতে গিয়ে তারা দেখে, থোকা থোকা আমের গায়ে জৈষ্ঠের রঙ। লালচে হলুদ পাটভাঙা লালডুরে শাড়ির মতো মুড়িয়ে দিচ্ছে গাছ, সবুজ পাতা ঢেকে দিয়ে, তাদের অভাবের গল্পের সূত্র হারিয়ে যায় পাকা আমের ম-ম গন্ধে।
লোকে বলাবলি করতো, দাদির রূপ পাইছে মাইয়াডা। রূপের ঠমকে পাখা গুটাতে ভুলে যেতো সে।
বৈশাখ যেতে না যেতেই আবার অভাব হয় কেমনে? সারাবছরের অভাব বৈশাখে ফুরাবে বলে অপেক্ষায় থাকে তারা। বৈশাখের ধান উঠেছে মাস ফুরায়নি। এখনো ঘরে ঘরে গোলা ভরা ধান। এবার সরকার দরও দিয়েছে বেশি। গেলোবারের দ্বিগুন। এই কি জানি, মহামারী, তার ক্ষতি পোষাতে। এসব জটিল হিসাব তাদের জানার দরকার নেই। গত কয়েক বছরে এমন দাম তারা পায়নি। এবার ধানও হইছে জব্বর। আর ঝড়বৃষ্টিহীন নিরূপদ্রব আবহাওয়ায় পরিকল্পনামতো সব গোলায়ও তোলা গেছে। সবার ঘরে ঘরে তাই ঈদের আনন্দ।
এই সময়ে টাউনে গলায় দড়ি দিয়েছে লিটন। গ্রামের মানুষ কারণ জানে, টাউনে নাকি ব্যবসাপাতি সব বন্ধ। বড় অভাব৷ বড়লোক হওয়ার জন্য টাউনে গিয়ে গরিব হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে লিটন। সোজাসাপটা এ হিসাবের বাইরে অন্যকোনো কারণজনিত সংকটের গভীরতা তারা জানে না। লিটনের মা শুধু নার্গিসের গোগ্রাসে গেলার দিকে তাকিয়ে বিলাপ করে, খা রাক্ষসী খা। এক্লা খাওনের জন্যই না টাউনে গেছিলি!
আহা খাওয়া, ঘরে খাওয়ার অভাব হয়—এমন দিন কল্পনাতেও দেখেনি কোনোদিন নার্গিস। দাদার সম্পদ বাপের হাতে কিছু কমে গেলেও খাওয়ার অভাব বোঝেনি কখনো। আশেপাশের আব্দুল হাই, রাজা মিয়ারা যখন চাঁই দিয়ে মাছ ধরতে যায় গাঙে, তখন তার বাপ বাজার থেকে হাওরের তিন কেজি ওজনের রুইমাছ কিনে আনে ছালার ব্যাগে। মা সেই মাছ ডুবো
তেলে ভাজতে বসলে গন্ধ বেমালুম বন্ধনহীন পাড়ার ঘরে ঘরে ঢুকে ঈর্ষা আর লোভ উসকে দেয় ইঁচা-বৈঁচার পাতে।
প্রজাপতির মতো পাখা মেলে উড়তো সে। কাজলটানা চোখে কেবল একটাই স্বপ্ন, টাউনে গিয়ে বড়লোকের বউ হবে। ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে, লিপস্টিক লাগিয়ে টাউইন্যা বউ গ্রামে বাপের বাড়ি নাইওর আসবে আর গ্রামের মেয়েরা দলবেঁধে দেখতে দেখতে এমন হওয়াকেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য মানবে। অসম্ভব ছিল না। লোকে বলাবলি করতো, দাদির রূপ পাইছে মাইয়াডা। রূপের ঠমকে পাখা গুটাতে ভুলে যেতো সে।
লিটনের বৃত্তান্ত
আর বেহিসাবি উড়তে থাকা সেই প্রজাপতির পাখা ধরে একদিন টান দিয়েছিল লিটন। লিটনের দোষ কি, নিশানা করে শিকার ধরা তার নেশা। প্রজাপতি হোক কিংবা মথ। কত রকম নেশার বশ হয় মানুষ। মদ, গাঞ্জা, ফেন্সিডিল। এই নেশাও বশ করেছে লিটনকে। মাথা যখন গরম হয়, লিটন টের পায় প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই। অবশ্য ফুল থেকে মধু খেয়ে যেভাবে পালায় প্রজাপতি, সেভাবে পালাতে পারতো লিটনও—চতুরতার সঙ্গে। কিন্তু বান্ধা পড়লো প্রজাপতি নার্গিসের গোয়ার্তুমিতে।
প্রতিদিন রাতে বেড়ার ফাঁকে চোখ গলানো আর নিজের উত্তেজনা প্রশমণের নানা গলি-ঘুপচি আবিষ্কার।
পঞ্চায়েত বসেছিল উঠানেই। এও গাঁয়ের রীতি। প্রেম-প্রতারণা, বিয়ে-ছাড়াছাড়ি, জমিজিরাত ভাগাভাগি, সর্বরোগের দাওয়াইয়ের মতো সবই সমাধান হয় এই পঞ্চায়েত-বৈঠকে। এরাই থানা পুলিশ, এরাই কোর্ট কাছারি। সর্বজনস্বীকৃত। এর আগে মঞ্জু, রীনা সবার সালিশ টাকা জরিমানা দিয়ে শেষ করেছে। এবারও আগেই দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। লিটন ভেবেছিল এবারও সময়মতো পালিয়ে যাবে। আগের মতোই হাজার দশ-বিশ হাজারে রফা করে নেবে মা-ভাই।
কিন্তু সবসময় সব কাজ পরিকল্পনা মাফিক হয় না। সে পালাতে পারেনি কিংবা তার মা আর বড় ভাই তাকে পালাতে দেয়নি। বিচার গাইতে গাইতে আর জরিমানা গুনতে গুনতে তারা হাঁফিয়ে উঠেছে। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে পুবের ঘরের দরজায় বাইরে থেকে শিকলে তালা মেরে আটকে রাখা হয়। ফকির আলীর ছেলে পাগলা সোনা মিয়ার মতো। সোনা মিয়া বদ্ধ উন্মাদ, দরজা খুলে দিলেই এরে মারে, ওরে কামড়ায়—নির্বোধ প্রাণী যেন। সুস্থ সবল লিটনকেও সেদিন তার মতোই আটকে রাখা হয়েছিল। বন্ধ ঘরে একা একা সারাদিন বসে ভেবেছে, তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনেক হয়েছে, বিচারে যা হয় এবার সে মেনেই নেবে।
আসলে এই নেশা যে কবে তার সর্বস্ব গ্রাস করেছে, লিটন মনে করতে পারে, সেই থ্রি ফোরে পড়ে যখন, তখনই। একটু বেশি বয়সে ভর্তি হওয়ার কারণে থ্রি-ফোরেই বয়স তার চৌদ্দ পনেরো। রাতটা সে ভোলেনি। রাতে ক্ষেতের আলে প্রস্রাব করে ফেরার সময় যে আওয়াজ তার কানে আসে, সেই আওয়াজ তার অপরিচিত বোধ হয়। আর সেই আওয়াজের উৎস ছিল নববিবাহিত ভাই বাতেনের ঘর। বয়সের কৌতূহল দমাতে পারেনি সে। বেড়ার ফাঁকে চুপি চুপি উজ্জ্বল ফিলামেন্টের আলোয় যা দেখে, মসৃণ টানটান ত্বক, উদ্ধত বাঁকের পরিপূর্ণ নারীদেহ, মদির দৃষ্টি আর তাতে হামলে পরা উন্মত্ত ষাঁড়। আদিমতা দেখার ঘোরে শরীরে অচেনা উত্তেজনা টের পায় লিটন—প্রথমবার। নিজেকে উন্মাদ উন্মাদ লাগে। নিয়ন্ত্রণহীন। ঘেমে নেয়ে একশেষ। এই উত্তেজনাই তার জীবনের কাল হয়। এক অদম্য নেশায় পায় তাকে। প্রতিদিন রাতে বেড়ার ফাঁকে চোখ গলানো আর নিজের উত্তেজনা প্রশমণের নানা গলি-ঘুপচি আবিষ্কার।
বিয়া মাইনষের একবারই হয়। কিভাবে নার্গিসের মাথায় এই পোকা ঢুকেছে আর কুটকুট করে বছরের পর বছর মাথা কেটে তাকে একগুঁয়ে করে তুলেছে ওপরওয়ালাই জানে। জীবনভর এই একগুঁয়েমিরই মাশুলই গুনতে হয়েছে লিটনকে। নইলে তার জীবনে এমন দুর্দিন আসে? অনিশ্চিত আশঙ্কায় খাবারহীন বেলা কাটাতে হয়?
টের পায়, পেটের খিদের প্রয়োজনের কাছে বাকি সব অর্থহীন অচল মুদ্রা, নারী শরীর, এর বাঁক। মায়ের কৌটায় পড়ে থাকা সেই কোন আমলের চারকোণা পাঁচ পয়সা কিংবা গোল দশ পয়সা।
না, লিটনের ভুল হয়েছে, খালি ওপরওয়ালাই জানে না; সেও জানে। দাদিমার গল্প শুনতে শুনতে দুই কান ফালাফালা তার। দাদিমার কথা মনে হতেই এক দলা জর্দার গন্ধ নাকে ঝাপটা দেয়। এই বয়সেও কী ধবধবে সাদা দাদিমা। চোখের কোলে গভীর কালো চক্র। একলা চলার সাক্ষী। প্রতিটি লড়াই চোখের নিচে চিড় ফেলে ফেলে গেছে। গভীর কালো কালো চিড় মিলে মিলে চোখ ঘিরে গভীর অভিজ্ঞতার খাদ।
সব চুকিয়ে টাউনে আসার দিন লিটনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন, এই বাদাইম্যার কাছেনি নাতিন বিয়া দিতে আছিলাম! কী দুর্দশা না জানি আছে নাতিনের কপালে! দূরদৃষ্টি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে তার কথায় যেন অমোঘ ভবিষ্যৎ। নার্গিসের দাদার মৃত্যুর পর তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে গণ্ডায় গণ্ডায় বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি, আর সেই পোকাটাই ঢুকেছে নার্গিসের মাথায়। বিয়া নাকি মাইনষের একবারই হয়। বিয়া মানে তো কাবিন, কবুল। না, বিয়া মানে শরীরের দখলদারি। নার্গিসের সোজাসাপটা উত্তর। যারে মনের দখলদারি দেওয়া যায়, তারেই দেহের দখলদারি দেওয়া যায়। কথাটা বড় দুর্বল করে দিয়েছিল লিটনকে। মেয়েটা আসলে অন্ধভাবেই ভালোবেসেছে তাকে।
লিটন জানে, ভালোই জানে—সে বাদাইম্যা, নিষ্কর্মা। মা আর বড় ভাই বাতেন মিয়া উঠতে বসতে তারে সেটা জানায়। কিন্তু টাউনে এসে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর নার্গিসকে নিয়ে সে সাধ করে টাউনে আসেনি। এই মেয়ে যেমন সেধে এসে ঘরে উঠেছে। তেমন তার সব স্বপ্ন লিটনকে ঘিরেই ডালপালা মেলেছে। এখানে কোনো ফাঁকি নেই। আর এই নিপাট প্রেমেই আটকে গেছে সেও। নইলে নার্গিসকে বিয়েও করে না, আর গাঁয়ের সঙ্গে সব লেনদেন চুকিয়ে টাউনেও আসে না।
লিটন ও নার্গিসের যৌথ বৃত্তান্ত
এককাপ দুধ চায়ের জন্য ভেতরটা ছিঁড়েখুঁড়ে যায়। পেট গুড়গুড় করে নতুন আষাঢ়ের মেঘ জমা আকাশের মতো। তোষকের তলা, কাঠের তক্তায় পাতানো শাকিব খান-বুবলির থম মারা নৃত্যের নিচে হাত ঢুকাতেই একটা টিকটিকি লাফিয়ে পড়ে পায়ে। জীবন্ত প্রাণের স্পন্দন নিজের অস্তিত্বকে কাঁপিয়ে দেয় সবসময়। মা বলতো, বাম পায়ে টিকটিকি পড়লে মানহানি হয়। ধুশ্শালা পেটে নেই খাবার, মানের চিন্তা। কোনো কাগুজে নোটের সন্ধান মিলে না ঘরের কোথাও। গ্রামে সেই হাইস্কুলে পড়া পর্যন্ত বাঁশের পাল্লা কেটে ব্যাংক বানাতো দুই ভাই। শহরে এসে সে পাট চুকেছে। এমন শূন্য পকেট জীবনে প্রথমবার। নার্গিসের কোনো লুকানো ভাণ্ডার আছে কি না, নিশ্চিত না হয়ে চুপসে যাওয়া মুড়ির ডিব্বা, তলানিতে পড়ে থাকা আটার ডিব্বা—সব তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাঁচ টাকারও সন্ধান মেলে না। ভুল করে ফেলে রাখা একটা ধাতব মুদ্রাও নেই কোথাও।
পাশেই আকর্ষণীয় প্রমত্তা নদীর বাঁক, অযত্নে অবহেলায় মোটেই থিতিয়ে যায়নি উদ্ধত আহ্বান নার্গিসের শরীরের। আসলে এটা ওর ধাত। সহজে মিইয়ে যাওয়ার মতো নয়। সর্বগ্রাসী ডাক এর বাঁকে বাঁকে। মাথার ওপর ফ্যান ঘোরে না। জৈষ্ঠের গরমে নিচের পেটিকোট ছাড়া সব খুলে ঘুমিয়েছে নার্গিস। কিন্তু আট-দশ ঘণ্টা পাশে থেকেও ছুঁতে ইচ্ছে করেনি লিটনের। টের পায়, পেটের খিদের প্রয়োজনের কাছে বাকি সব অর্থহীন অচল মুদ্রা, নারী শরীর, এর বাঁক। মায়ের কৌটায় পড়ে থাকা সেই কোন আমলের চারকোণা পাঁচ পয়সা কিংবা গোল দশ পয়সা।
বেশি না, মাত্র বছর পাঁচেক আগের নিজের অবিমৃষ্য রিপুর কথা ভেবে নিজেই অবাক হয়। কী না করতো, বাজারের দোকান থেকে সিডি ভাড়া, রাতভর নারীদেহ দেখে উত্তেজিত হওয়া আর একের পর এক লক্ষ্য আর শিকার। নিজের গানের গলাটাকে অস্ত্র বানিয়ে গোটা দশেক লক্ষ্য শিকার করেছে লিটন। প্রেমের উছিলা, গানের গলা আর নতুন আসা মোবাইলে পাতা ফাঁদ, বিয়ের আশ্বাস, লোভ ও স্বপ্ন—যা যা অনুষঙ্গ দরকার, সব মিলিয়ে-মিশিয়ে নির্ভুল শিকার, রাতে চোরের মতো হানা।
সে কি আর এক-দুজনের কথা! রিক্তা, সুফিয়া, রীনা, মঞ্জু—শেষমেশ নার্গিসকে বিয়ে করে ঘরে তোলা। কারণটা অবশ্য নিজের সান্ত্বনার জন্য যথেষ্ট যুৎসই ছিল। এরচেয়ে সুন্দরী গাঁয়ে আর কেউ ছিলও না। অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে। যেকোনো সময় যেকোনো শহুরে চাকরিজীবী বা মধ্যপ্রাচ্যফেরত পাত্র ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে প্রস্তুত ছিল। বাপের উপচেওঠা ধানের গোলা ফেলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নার্গিসের লিটনের ভাগের আধাগোলা ধানের ঘরে মন টেকে না কোনোমতেই। অশান্তি আর অস্বস্তি বাড়ে নিত্যদিনের যাপনে, খালি ভাঙা রেকর্ডের মতো সারাদিন এক কথা, টাউনে চলেন।
লিটনের কাছে তখন এসব ফালতু আবেগ। নার্গিসের প্রত্যক্ষ মদদ তখন সঙ্গী । টাউনে আসার তীব্র হাতছানি।
বশিরের স্টলে গেলে বাকিতে এককাপ চা খাওয়া যেতো। বশিরও শালা ঝাঁপ ফেলে বাড়ি গিয়ে বসে আছে আজ দুই মাস। যেতে হবে অন্য গলিতে, এরা তো আর চেনে না ভালো করে। বাকিতে চা দেবে। হয়তো দেবে। কিন্তু না দেওয়ার আশঙ্কা লজ্জা আটকে দেয়। নার্গিসের ঘুম ভেঙে যায় খিদে কিংবা উটকো শব্দে।
সূর্য তখন পুব দিকের রোদ কাঁপিয়ে থেমে থেমে নাচছে পিয়াদের একচালা টিনের ওপরে। পিয়াদের পরিবারের সবাই সেই যে বৈশাখের ধান তুলতে বাড়ি গেছেম আর ফেরেনি। লিটনেরও ফেরার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ফিরতে হলো।
ঘুম ভেঙে নার্গিসের মেজাজ তিরিক্ষি হয়। তিরিক্ষি হওয়ার পেছনে কারণ শুধু খিদে নয়, অনিশ্চিত আগামী দিন। তিন দিন ধরে ঝগড়া করছে লোকটা—মেসে যেতে। গায়ের শাড়িটা এদিক-সেদিক হাতড়ে খোঁজে নার্গিস। দরজার একপাট খোলা আলোতে পায়ের নিচে দলা পাকানো শাড়িটা চোখে পড়ে। মাথা খারাপ হইছে আপনার, দরজা খুলে দিছেন! যদি কেউ দেখতো! কে দেখবে? কে আছে টাউনে? কলোনির সব ভাড়াটিয়াই লিটনদের মতো গ্রাম থেকে আসা উড়ুক্কু ঘুড়ি, শহুরে হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষায় এসে জীবনের বহমানতার সুতো ছিঁড়ে মুখ থুবড়ে গাছের ডালে আটকে গেছে। না মাটি, না আকাশ—কোনো ঠিকানা নেই তাদের। তবু খেয়ে-বেঁচে টিকে ছিল। মহামারীতে বেকার হয়ে আবার গেছে মাটির সন্ধানে।
শাড়ি দ্রুত গায়ে গলিয়ে নগ্নতা ঢেকে চৌকি থেকে নিচে নামে নার্গিস—এভাবে ঘুমাইয়া ছিলাম! ডাকলেন না? কী খোঁজেন? টেকা নাই। খুঁইজা লাভ নাই। কথার ঝাঁজে নিত্য উপাসের তিক্ত উত্তাপ। লুকানো কঠিন। না চাইলেও বেরিয়ে পড়ে।
টেকা নাই, তবু তো কথা কানে তুলস না। উত্তরের অপেক্ষা না করে হনহন হাঁটা দেয় লিটন। আজ কয়দিন ধরেই মেসে গিয়ে রান্নার কাজ নেওয়ার জন্য নার্গিসকে পীড়াপীড়ি করছে সে। এরা রান্নার লোক খুঁজতে এসেছিল। নার্গিসকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছে না। কয়মাস আগে এই মেসের অশালীন উৎপাতে বাসাটাই ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছিল নার্গিস। লিটন ভোলেনি সে কথা। নার্গিসের মুখের ওপর বলতেও পারে না, খিদার চেয়ে তর মান বড়! অথচ এটাই চরমতম সত্য এখন। সব সত্য মুখে স্বীকার করা যায় না, স্বীকৃত সত্য মেনে নিয়ে না মানার ভাণ করে জীবন চালানোই জীবনের নিয়ম। লিটন মুখে বলে অন্য কথা, মেসে আছে মাত্র দুই জন, বাকিরা তো গেছে গা। এই দুই জন ভদ্রলোক, খবর লইয়া আইছি। লিটনের কণ্ঠে সত্য কিংবা মিথ্যার অস্পষ্ট ফারাক।
কলোনির সীমানা পার হয়ে কী মনে হয়, আবার ফিরে আসে লিটন। রাস্তা থেকে একটা ইট কুড়িয়ে নিয়ে কলোনিমুখী হাঁটা করে দেয় আবার। ফুচকার ভ্যান থেকে বাতেন শব্দটা ঘষে তুলতে থাকলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে নার্গিস। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে লিটনের কাণ্ড। চটপটি ফুচকার ভ্যানটার নাম ‘নিউ লিটন অ্যান্ড বাতেন চটপটি ফুচকা ঘর’ থেকে এখন শুধুই ‘নিউ লিটন চটপটি ফুচকা ঘর’। হাসপাতালে বাপ মরতে মরতে বলেছিল, দুই ভাই মিল্যামিশ্যা থাইকো য্যান। নিজের জমি জিরাত সব বেচে টাউনে এসে উদ্বাস্তু জীবন শুরু করার মুহূর্তে মরা বাপের কথা মনে হয়েছিল তার। চটপটি ফুচকার ব্যবসা শুরুর সময় দুই ভাইয়ের নামটাই মিল্যামিশ্যা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল অনুশোচনার উপশমে। আজ এক ঘষায় সব শেষ করে দেয় ক্ষোভে-দুঃখে।
সিদ্ধান্ত নার্গিস রাতেই নিয়েছিল। যখন উদগ্র খিদের জ্বালায় কিছুতেই ঘুম আসছিল না, তখন তার মনে হয়েছে—অসহ্য, বীভৎস রাক্ষুসে খিদের কাছে এই মান-অপমান, রক্তে পুঁতে দেওয়া দাদিমার দেমাগ—সব অর্থহীন। থু করে একদলা থু থু ফেলে নার্গিস বাম দিকের গলি ধরে মেসের দিকে অনিচ্ছুক পা ফেলে হাঁটা দেয়। দেখেও না দেখার ভাণ করে সুড়কির টুকরাটা ছুড়ে ফেলে ডানদিকের গলি ধরে হাঁটে লিটন।
সেবার নার্গিসের তাড়ায়ই গ্রাম ছেড়ে টাউনে এসে ওঠা। জমি জিরাত ভাগাভাগি নিয়ে মায়ের সঙ্গে ভাইয়ের সঙ্গে সে কী ঝগড়াঝাঁটি। নিশিকান্ত দাসের ভাইয়েরা লিটন মিয়ার সব ধানী জমি কিনে নিলে বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি দিয়ে কী কান্না বাতেনের। বাপের সম্পদ এভাবে কিনে নিলো সেদিনের ক্ষেত মুনিশ নিশিকান্ত। মেজো ভাইটা তখন সবে মধ্যপ্রাচ্যের টাকা পাঠাতে শুরু করেছে। যে নিশিকান্ত ধান চুরি করে বিক্রির সময় একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ে গাঁয়ের পাঁচ মুরুব্বির সামনে কান ধরে ওঠবস করেছিল, তার আজ এই জমি কেনা কেবল সম্পদ কেনা নয়, সম্মানও কিনে নেওয়া কিংবা প্রতিশোধ নেওয়া। লিটনের কাছে তখন এসব ফালতু আবেগ। নার্গিসের প্রত্যক্ষ মদদ তখন সঙ্গী । টাউনে আসার তীব্র হাতছানি। টাউন মানে দালান কোঠা, রঙিন টিভি, সারাদিন সিনেমা, গ্যাসের চুলা, রিকশা-গাড়ির হল্লা, দোকানে সাজানো নেইল পালিশ, লিপস্টিক।
উবে যায় ঘাম, ক্লান্তি, খিদে। আসার আগের দিন নতুন বর্ষার পানির শীতল হাওয়া আর পাড়ে ধাক্কালাগা শব্দে অনেক দিন পর সুর তুলেছিল লিটন।
মোড়ে মুদিমাল আর বিকাশের দোকানের অর্ধেক ঝাঁপ খোলা। গলিটা খাঁ খাঁ করছে। স্টলের চুলা নেভানো। লোকজন নেই। কয়েকটা ফ্রুটফান বিস্কুট ঝোলানো। কফির প্যাকেট। কিন্তু চুলায় আগুন নেই। বেঞ্চগুলো খালি। একটা বেঞ্চে পা তুলে বসতে বসতে সিগারেটের ধোঁয়া নাকে ধাক্কা দেয়। দোকানির মুখের বিমর্ষতা তাকে যতটা স্পর্শ করে, তার চেয়ে বেশি তৃষ্ণার্ত করে সিগারেটের গন্ধ। হায়া লাজ শরম সব মিলিয়ে যায় কাতরতার কাছে। দাদা দ্যান একখান টান দেই, বলার লোভ সামলাতে পারে না সে। সব বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে দিয়ে দেয় ব্যাটা। টান একটা পরতেই টয়লেটে যাওয়ার তীব্র তাড়া স্বস্তি দেয় তাকে। যাক শালা, চা ছাড়াই টয়লেটের তাড়াটা তাড়া দিলো!
শহরে আসাই ছিল স্বপ্ন, তারপর? তারপরের কোনো পর ছিল না। কী করবে, কোথা থেকে আসবে নিত্য প্রয়োজন। দালান কোঠার ভাড়া শুনে আক্কেলগুড়ুম শেষ পর্যন্ত গ্রামসম্পর্ক পদুকাকার পিছু পিছু এই কলোনিতে। এখানকার বাসিন্দারা কলোনিই বলে একে। যতগুলো বাসা দেখেছে, এটাই কম ভাড়ায়। তখনো আয় রোজগার শুরু না হওয়া জীবনের জন্য মানানসই। এভাবে অন্ধের হাতি দেখার মতো কিচ্ছু না জেনে কেউ শহরে আসে? পরিকল্পনা ছিল—এসে একটা মুদি দোকান দেবে। রেজা, প্রবীর, রহমান—কতজনের উদাহরণ দেখিয়ে নার্গিসের দাদি বুঝিয়ে দিয়েছে শহরে এসে দোকান চালিয়ে কয়েকমাসে ঘরে ফ্রিজ টিভি কিনেছে তারা। খালি বুঝেশুনে চলতে হবে।
ব্যাপারটা এমনই জলবৎ-তরলং ভেবেছিল লিটনও। কিন্তু শহরে এসে এত জলের মতো তরল হয়নি, মুদি দোকান দিতে গিয়ে দেখা গেলো—কেউ না চিনে দোকান ভাড়া দেয় না। কেউ দিতে চাইলে অ্যাডভান্স চায় কয়েকগুণ। বর্ষার জলে ছয়মাস ডুবে থাকে যে জমিন, সে জমি বিক্রির যা টাকা শহরে দোকান বাসা শহুরে জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন কিনতে গিয়েই খুব সামান্য বোধ হয়। সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে মাস দুয়েক ভেঙে খেতে গিয়ে দেখা যায় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে সংগৃহীত অর্থ। তখনই রাশেদুল বুদ্ধিটা দেয়। ওর চায়ের টংয়ের সামনে চটপটি ফুচকার দোকান দেওয়া। স্থায়ী দোকান নয়, ভ্যানে বিক্রি করা।
বাড়ি ফিরে লিটন দেখে দরজার ওপরে শিকল আটকানো। কোনো বাড়তি সাবধানতার দরকার পড়ে না। ঘরে আছেই বা কী, নেবেই বা কী! চিটচিটে বিছানা আর ভাঙা তাকে তোলা কয়েকটা খালি ডিব্বা। একটা অ্যালমুনিয়ামের কড়াই আর হাড়ি। টাউইন্যা ভদ্রলোক হতে এসে এই সম্পদই জুড়িয়েছে কয়বছরে। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে পেটটা আরও চিনচিন করে জানিয়ে দেয় বর্তমান অসহায় অক্ষমতা। রাতেও খায়নি কিছু।
সেই লকডাউনের শুরুতে পুলিশ একদিন এলোপাথাড়ি বাড়ি দিয়ে সব ভেঙেচুরে দিয়েছিল। তারপর থেকে ঘরেই বসা। দুই-একদিন লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রির চেষ্টা করেছিল পাড়ার ভেতরে গলির চিপায়। লাভ হয়নি। ততদিনে মানুষও ঢুকে গেছে ঘরের ভেতরে। নেহাৎ চাল-ডাল কেনা ছাড়া ফুচকা চটপটি কিনতে কেউ বের হয় না। সপ্তাহ দুই কোনো রকমে কাটিয়ে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল।
বৈশাখী ধান তোলার হিড়িক পড়ে গেছে তখন। দলে দলে দাওয়ালরা ঢুকছে গ্রামে। এই সময় দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে কী আহ্লাদি বরণ বড় ভাই বাতেন আর তার বউয়ের। লিটন ভেবেছিল—যে কয়দিন শহরে কিছু করে খাবার পরিস্থিতি না হয়, গ্রামেই থেকে যাবে।
টিনের চাল থেকে ছড়িয়ে পড়া হলকা তাপে ঘামতে ঘামতে নীরব নিভৃত দুপুর গলে লিটনের গায়ে হাওরের শীতল বাতাস লাগে। উবে যায় ঘাম, ক্লান্তি, খিদে। আসার আগের দিন নতুন বর্ষার পানির শীতল হাওয়া আর পাড়ে ধাক্কালাগা শব্দে অনেক দিন পর সুর তুলেছিল লিটন। যে সুরে মাতাল ঝাঁপ দিয়েছিল একের পর এক প্রজাপতি। নার্গিসও—‘সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে।’
পাশ ফেরে লিটন। তার ভোর হয় বন্ধ ফ্যানের শিকে নার্গিসের শাড়ির আঁচলে ঝুলে।
ধান কাটা শেষ হতে হতে জৈষ্ঠ। সেই চাতালে গিয়ে ধান তোলা, রোদে শুকানো, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পা দিয়ে নাড়িয়ে দেওয়া, সারাদিনের কাজ। শহরের কঠিন যুদ্ধে তখন নার্গিসেরও দেমাক শেষ। শেষ কদিন তো প্রায় না খাওয়া, আধা খাওয়া। শহরে ফ্রিজ রঙিন টিভির স্বপ্ন তখন ঘুমিয়ে গেছে অভুক্ত ক্লান্ত দিন যাপনে। পুরা বৈশাখ মাসটা যেন একটা ঈদের দিনের মতো হৈহৈ করতে করতে কেটে গেছে। সারাদিন ক্ষেতে ধান কাটা, খলায় বসে ধান শুকানো, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া। সন্ধ্যায় উঠানের পুবকোণে বিরাট বিরাট চুলায় গমগমে আগুনে সেদ্ধ ধানের কী সুবাস! খিদের জ্বালার সঙ্গে পরিচয় নেই সেই সুবাসের। রাতে পাটি বিছিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে আড়া আড়ি ঘুম। মরার মতো ঘুম। পেট দানায় ভরতি থাকলে ঘুম মরার মতোই নামে চোখ জুড়ে। যত জ্বালা খিদে পেটের, চোখ বন্ধ করতে দেয় না। প্রতিদিন বেঁচে থাকা শেখায় হাড়ে হাড়ে।
জৈষ্ঠের মাঝামাঝি বেমালুম বদলে যায় বাতেন আর তার বউয়ের ব্যবহার। দুপুর গড়িয়ে যায় খেতে ডাকে না। অসহায় বসে বসে দেখা ছাড়া মায়ের কিছুই করার থাকে না। মাকেও দয়া করে যখন ডাকে, তখন খায়। বাতেনের অভিযোগ মিথ্যে নয়, সত্যি তো গ্রামের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে একেবারে বাপের ধানী ক্ষেত স্পষ্ট দুভাগে ভাগ করে বিক্রি করে তবেই না গ্রাম ছেড়েছে সে। শহরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নেশায়। এখন কেন তবে ফিরে আসা, বসে বসে খাওয়া? আসলে বৈশাখী ধান তোলার আগে তাদের আপ্যায়ন ছিল শুধুই স্বার্থের খাতিরে। দুই জন কামলার কাজ বিনা পয়সায় করে দিয়েছে দুজন।
সন্ধ্যায় নার্গিস ঘরে ঢোকে দুজনের জন্য দুবাটি আঁটনি পোলাও নিয়ে। কতদিন পর পেট পুরে খায় দুজন। তারপর রাত গভীর হলে টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি নামে। লিটনের শরীরে জোয়ার আসে ভরা পেটের প্রশ্রয়ে কিংবা কৃতজ্ঞতায়। ব্লাউজ খুলতেই ঝপ করে বেরিয়ে পড়ে যে অবাধ্য স্তনযুগল। লিটন দেখে তাতে নখের আঁচড় যেন প্রাচীন অশ্বথের শেকড়। লিটনের পেটের আঁটনি পোলাও উগড়ে আসতে চায়। শরীর নিয়ে কী খুঁতখুঁতানি ছিল নার্গিসের।
নার্গিস তর দাদি আম্মায় না কইছে বিয়া মাইনষের একবারই হয়? নার্গিস ক্ষেপে ওঠে, হ আপনেও একবার করছেন না? সারা গ্রামের মাইনষে জানে। পেটিকোটের ফিতা টান মেরে খুলতে খুলতে সে ক্লান্ত হাই তোলে—একবার বিয়ায় ভাত জোটে না। জাইন্যাই তো মেসে রানতে পাঠাইছেন! তাড়াতাড়ি সারেন।
হঠাৎ একদল মেয়ের হা হা হা হো হো হো শব্দ ছলকে উঠে বিয়ে বাড়ির মতো, যেন নতুন বউ বাসরে ঢুকছে আর সখিরা রঙ তামাশায় মেতেছে। কারা তারা? মঞ্জু….রীনা….। পাশ ফেরে লিটন। তার ভোর হয় বন্ধ ফ্যানের শিকে নার্গিসের শাড়ির আঁচলে ঝুলে।