বেরুবেন সন্ধ্যায়। হাঁটবেন। অফিস থেকে পৌরবাজার। এরপর টাউন হল। তারপর জিলা স্কুল মাঠ। সহহাঁটি থাকবেন কজন। একটু বসবেন মাঠে। চা হবে। গল্প হবে। দেশোদ্ধার হবে। হতেই থাকবে। কিন্তু তিনি ফিরবেন। তার কাজ আছে। অফিসে ঢুকবেন। হাতমুখ ধোবেন। নাশতা আনা থাকবে। খাবেন। তারপর ঢুকে যাবেন কাগজের স্তূপে। সেখানে শহরের পর শহর। গ্রামের পর গ্রাম। বাছতে হবে তাকে। কোন খবরটা দেবেন। কোনটা না। খুদ বাছার মতো।
এই তার সন্ধ্যাবেলার সূচি। বছর ১৪ ধরে এ-ই চলছে। হেরফের হয় না খুব একটা। কিন্তু সেদিন পাল্টে গেল সব।
বেরুলেন। হাঁটলেন। অফিস থেকে পৌরবাজার। তারপর টাউন হল। এরপর জিলা স্কুল মাঠ। সহহাঁটি ছিলেন দুজন। তাদের তাড়া ছিল। তাই বসলেন না মাঠে। তাই চা হয়নি। গল্প হয়নি। দেশোদ্ধার হয়নি। ফিরছিলেন। অফিসে ঢুকবেন। কিন্তু পারলেন না।
রাস্তা থেকে একটু নেমে আরেকটু উঠে তার অফিস। মাঝের জায়গাটায় কামিনি ফুলের গাছ। আর মাধবীলতার ঝোপ। রাতের বেলা কেন যেন আলো সহ্য হয় না তার। ভালো লাগে আঁধার। এদের ঝোঁপে যে আঁধার জমে, তাতে সুবাস জড়ানো, সেটা আরও পছন্দ।
সুবাসিত সেই আঁধার সেদিন হিংস্র হয়ে উঠল। ঝাঁপিয়ে পড়ল সমর সাহেবের ওপর।
তার হুঁশ ফিরলো ঘণ্টাদুয়েক পর। হাসপাতালে। শরীরে কোপের ক্ষত। হাত ভেঙেছে। কেটে পড়েছে একটা আঙুল। হাঁটুতে বেজায় আঘাত। সময় লাগবে সারতে। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বললেন ডাক্তার।
না ঘাবড়ানোরই বা কী আছে? ভাবছিলেন তিনি। কবে অফিসে যাবেন। কবে কলম ধরবেন। যতদিন ধরবেন না, ততদিন কিভাবে চলবে তার দিন। এবং আবার তিনি লিখতে পারবেন তো?
পারবেন। ও নিয়ে চিন্তা করতে না করলেন সুদর্শী তরুণী ডাক্তারটি। বললেন ঘুমোতে।
না বললেও তিনি ঘুমোতেন।
প্রচণ্ড ব্যথা। আর যন্ত্রণা। কাতরাচ্ছিলেন। তাই সুই দেওয়া হয়েছিল। ঘুমের। ফলে দ্রুতই সঙ্গমে লিপ্ত হয় চোখের চারটা পাতা। গভীর আবেগে সেঁটে থাকে দুপাতা দুপাতার সঙ্গে। তাই অনেকবছর পর নিশ্ছিদ্র একটা ঘুম হয় তার। টানা ৯ ঘণ্টা। একবারও তাকে ডাকতে আসে না ক্রিংক্রিং ঘড়িটা। কিংবা বাসার কলিংবেল। কিংবা কোনো নিউজ। কিংবা কোনো ফাইল।
ঘুমটা সেদিন ভেঙেছিলেন এক সেবিকা। পাশের বেডের রোগীটাকে বকছিলেন তিনি। ক্যারক্যার করে বাজছিল কণ্ঠটা তার। শুনে আর যা-ই হোক ঘুম হয় না। তাই জেগে উঠলেন সমর সাহেব। তখন সকাল।
এরপর সারাদিন জ্বলা। চিন্তা হচ্ছিল খুব। কী করেছেন তিনি? তার বন্ধুরা, স্কুলের কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ের, কে কোথায়! নাগাল পাওয়া দায়। আর তিনি পড়ে আছেন নিজের গ্রামোপম শহরে। দৌড়েছেন অসম্ভবের পেছনে। চেয়েছেন মহীরুহ হতে। হয়েছেন বনসাই।
বাবার মুখটা মনে পড়লো। গভীর দৃষ্টি আঁকা চোখ। পুরু ভুরু। থুতনীতে তিল। গাঢ়তর আরেকটা ঠোঁটে। মোটা গোঁফের নিচে সরু ঠোঁটদুটো কাঁপিয়ে কথা বলতেন। শান্তস্বর। অথচ কী দৃঢ়তা সেই সুরে! কী নিশ্চয়তা কথায়! সেই নিশ্চয়তা মেখেই বলেছিলেন, এ কাজ পারবে না তার ছেলে। করুক, তিনি চানও না। সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়ে সে কেন এই ঘানি টানবে? বিশ্ব চালাবে সে। নিদেনপক্ষে দেশ। প্রেস চালানো তো চুনোপুঁটির কাজ। এছাড়া নিজের চেহারায় ছেলেকে দেখতে পছন্দ করতেন না তিনি।
ছেলেটারও জেদ। প্রেসই চালাবেন তিনি। বাপদাদার সম্পত্তি। বেচবেন না। সংস্কার করবেন। নতুন প্রযুক্তি আনবেন। শুরু করবেন নতুন দমে। নতুন উদ্যোমে।
একটা সংবাদপত্র বের করবেন। লাভ হবে দুদিকেই। প্রেসও চলবে। পত্রিকাও। সম্পাদনা করবেন তিনিই। ছাত্রাবস্থায় জাতীয় দৈনিকে প্রদায়ক ছিলেন। প্রচুর লিখেছেন। হাত ভালো। ছোটকাগজ করেছেন। সম্পাদনারও অভিজ্ঞতা আছে। সবচে বড় কথা এ-ই পারেন তিনি ভালো। এ-ই চেয়েছেন সবচে বেশি। সাংবাদিক হবেন। লেখক হবেন। কলম তার কথা কবে দশের হয়ে। দেশজুড়ে মানুষ চিনবে তাকে। ঠাকুরদা তার নায়ক। তাকে লিখতে দেখে, লেখা ছাপতে দেখে বড় হয়েছেন। বড় হতে হতে পড়েছেন বাবার লেখা। ফলে লেখা তার রক্তেই। আর কী লাগে? বলেছিলেন। এখন দরকার এ লিটল টাচ অব লাক। আর বাবার আশীর্বাদ।
বাপ তার মৃদুভাষী। আপত্তি জানিয়েছিলেন। মৃদুস্বরে। কিন্তু টেকেনি সেটা।
কদিন পর বাবা গেলেন চিরঘুমে। আর ছেলে নিলেন জোয়াল তুলে। আর বুঝলেন ঘানি টানা মানুষের কাজ নয়।
তবে তিনি আশাবাদী মানুষ। বিশ্বাস করেন অসম্ভব নয় কিছুই। তাই আঁকড়ে ধরলেন প্রেসের চাবি। আর বাবার কলম। আরও জোরে। আরও জোরে।
না হলে বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা তার। তার বদলে যে গিয়েছিল, সে এখন কত ওপরে! দেখতে হলে তাকাতে হয় আকাশে। আর তিনি…! দীর্ঘ হচ্ছিল শ্বাসগুলো। দীর্ঘতর হচ্ছিল।
সাধারণত এসব মনে পড়ে না তার। যা পেয়েছেন তাতেই তিনি খুশি। দুবেলা দুমুঠো খান। প্রাচুর্য নেই ঠিক, কিন্তু অভাবীও নন। দুই/দশ জন মানে। গুরুত্ব আছে সমাজে। ভালো লাগে। কী হতেন, আর কী হলেন, এই হিসাব তাই মেলান না কখনো। কিন্তু সেদিন গুলিয়ে যাচ্ছিল সব। পায়ের ব্যথা আর বুকের ব্যথাই কারণ। রাগ হচ্ছিল নিজের ওপর। কেন তিনি আটকে ছিলেন স্বপ্নঘোরে? সমাজটাকে বদলাতে চেয়েছিলেন, কেন? কেন তিনি বোঝেননি, কলম পারে না কিছুই। তাই উগরে দেয় বিবমিশা।
বমি করেছেন কিছুক্ষণ আগে। এমনটা তার হয়। কিছু একটা হলেই বমি।
নোংরা পোশাক বদলে দিচ্ছিলেন অসীমা। তার স্ত্রী। বন্ধু। অভিভাবক। তার সবচে বড় সহায়।
বড় মনের মানুষ। থিয়েটার করতেন। মিশে যেতেন চরিত্রের সঙ্গে। প্রশংসা বেরুত পত্রিকায়। স্বামী-সংসার সামলাতে গিয়ে ছেড়েছেন সব। ফাঁক পেলেই খোলেন পেপার কাটিংগুলো। দেখেন। পড়েন। হাসেন। কাঁদেন। কষ্টটা তবু বুঝতে দেন না কাউকে। মায়াময় হাসিটুকু ধরে রাখেন। সবসময়। ওলটাপালট ঢেউজীবন সমর সাহেবের। অসীমা সেখানে নোঙর সমান। আগলে রাখেন। অথচ কিছুই দিতে পারেননি সমর সাহেব এই অনন্য মানুষটিকে। না বিত্তের সুখ। না সাহচর্যের। ভাবছিলেন। টলমল করছিল চোখদুটো। তখনই ঢুকলো তার এক সহকারী। সাংবাদিক। রাজনীতি বিট দেখছে। ভালো লেখে। মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে। চোখ দুটো বসা। মুখে অস্বস্তির ছাপ। কারণটা আন্দাজ করা যায়।
সেদিন রাতের কথা। প্রুফ দেখছিলেন সমর সাহেব। একটা খবর নিয়ে ছুটে এসেছিল ছেলেটা। স্থানীয় নেতার কবলে পড়েছে এক মেয়ে। সম্পদ গেছে। সম্ভ্রমও যায় যায়। দাঁত চেপে লড়ছে সে। কিন্তু একা আর কত? চারপাশের সবাই জানে। অথচ বাঁধা দেয় না কেউ। ঘাড়ে পড়ার আগ পর্যন্ত আমাদের তো চুপ থাকার ব্যারাম।
কিন্তু সমর সাহেব অন্যমানুষ। ছুটে গিয়েছিলেন। দুদিনপর তার পত্রিকায় কেঁদে ওঠে মেয়েটা। প্রথমপাতায়। ছোপছোপ আঁকা হয় তাকে। লাল কালিতে মেশে তার কষ্টের নীল। সাদা নিউজপ্রিন্টের বুক কাঁপে ধূসর গল্পে।
তাতে নড়েচড়ে ওঠে মানুষ। বেঁকে যায় নেতাটার মুখ। ভাঁজ পড়ে কপালে। খোলে তার বাহারি মুখোশ! সামনে আসে ভেতরের অমানুষ। ক্ষমতায় তার দল। ফলে পাঁচ পাঅলা হাতির মতো সে চলতেই পারে। মানুষ তার কাছে কলাগাছ। দু/একটাকে সে দলতেই পারে। সে-ই হয়তো ঘটিয়েছে ঘটনাটা।
সহকারীটা নিশ্চয় চুপসে আছে। লজ্জায়। তার খবরেই এমনটা হলো।
এভাবে দায় টেনে নেওয়ার কিছু নেই। বোঝালেন সমর সাহেব। অমন সংবাদ তো তিনি কতই করেন। ওটার জন্য কেউ মারেনি তাকে। অন্য কারণ আছে। লেখালেখি তিনি ছেড়েই দিয়েছেন প্রায়। গান কবিতা গল্প সব বাদ। মাসে দু/চারটা কলাম শুধু লেখেন। ধর্মান্ধতা রাজনীতি শ্রেণীব্যবধান- যা ভাবেন তাই। খোলাখুলি। সাধারণ পর্যবেক্ষণমূলক লেখা। কিন্তু দিনকাল যা, কার কোথায় কীভাবে লেগেছে কে জানে! ওরাই কেউ হয়তো ক্ষেপেছে। না হলে আর কেন? কারও সঙ্গেই তো শত্রুতা নেই তার। দলবাজি করেন না। সঙ্গে নেই কারও। পাছেও না। সাতে নেই কারও, পাঁচেও না। নির্বিবাদী মানুষ। তাকে কেন মারবে মানুষ?
বলেও খুব একটা লাভ হলো না। সহজ হলো না ছেলেটা। কথা বলছিল সংকোচের স্বরে। তবে আনন্দে কাঁপা স্বরে খবর দিলো একটা।
শহরজুড়ে ঝড় তুলেছে এই খবর। তার দোল লেগেছে দেশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও! মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।
কান্না পায় সমর সাহেবের। চিকচিক করে চোখ। মেয়েটার চেহারা মনে করার চেষ্টা করেন। পারেন না। আজ মেয়েটার হাসির দিন। তার একটা ছবি নিতে হবে। প্রথম পাতার অর্ধেকজুড়ে ছাপতে হবে। সঙ্গে একটা ফলোআপ নিউজ। বললেন সহকারীটাকে।
উত্তর করলো না ছেলেটা। মাথা নিচু করে ছিল। সেভাবেই থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর মুখ খুললো। এই পরিস্থিতিতে কথাটা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার। বিব্রত ও অস্বস্তি বোধ করছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কালই নতুন একটা পত্রিকায় যোগ দেবে সে। মাসখানেক আগেই বলেছিল। নামমাত্র বেতনে চলছে না আর। কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। বলেছিল। তিনিও বলেছিলেন দেখবেন। এখন হয়তো ভুলে গেছেন।
আসলেই। ওর কথায় মনে পড়লো। মনে পড়লো আরও অনেক কিছু। তাতেই যেন পাথর হয়ে গেল ভেতরটা। তবু হাসিমুখ। বিদায় দিলেন ছেলেটাকে।
এই মুহূর্তে তার অফিসে যাওয়া দরকার। না হলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। চিন্তাটা যদিও বেশিক্ষণ ভোগালো না। আগেই দিয়ে যাওয়া সুঁইটা কাজ শুরু করে। বুজে আসে চোখ দুটো।
সেই ঘুমে একটা স্বপ্ন দেখলেন তিনি। এমনই সেটা আজগুবি যে, স্বপ্নেই তার অবাক লাগে। অস্থির লাগে।
অস্থিরতাটা নিয়েই ঘুম ভাঙলো।
মাঝরাত। হালকা হওয়া দরকার। কিন্তু পটিটা দেখছেন না কোথাও। হাঁটাচলা নিষিদ্ধ তার। একা চলা তো যাবেই না। অসীমাকে দেখা গেল। মাথাটা বেডের ওপর নুয়ানো। ঘুমোচ্ছেন। ডাকা ঠিক হবে না। নামলেন সাহস করে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে কখনো রাত আসে না। আবছা হলেও জেগে থাকে আলো। অসুবিধা হলো না তাই।
স্বপ্নের কথাটা মনে হলো। হাসলেন তিনি। একটা ভালো কবিতাও লেখেননি কোনো দিন। আর তিনি পুরস্কার পাচ্ছেন কবিতায়! ছেলেমানুষি স্বপ্ন। এমন অবশ্য প্রায়ই দেখতেন আগে। বুকের ভেতর সেই সব দিন। জলরঙে আঁকা। প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল কবিতা লেখার। গান শেখার। গল্প লেখার। মৃত্যুর সঙ্গেই মরে যাওয়া কোনো কাজের কথা না। বাঁচার স্বপ্নে তাই বিভোর থাকতেন। সবসময়।
কিন্তু কেন তাকে মনে রাখবে মানুষ? কী কারণে ভুলবে না?
হতাশ লাগতো। আক্ষেপে পুড়তেন। ‘প্রতিদিন আসি যাই। হাসি খাই। কাগুজে জীবন।/কলমের মতো কিছু, লিখে ফেলে যাব পিছু, জানিনা কখন!’ লিখেছিলেন একরাতে। অনেক আগে। এখন আর কবিতা নেই। তার রসও নেই। কষও নেই। তবু কেন স্বপ্নটা দেখলেন? ভাবছিলেন। আর ঘুমুচ্ছিলেন। আর জাগছিলেন। আর ভাবছিলেন।
এই ঘুম কাকঘুম এগিয়ে নিলো তাকে। সকালে আজ সজাগ হলেন যখন, তখন পাশের জানলার ভাঙাকাঁচ গলে সূর্য আসছে। বুকের কাছটায় চিড়বিড় করছে তাপে। বিদ্যুৎ নেই। গরম লাগছে। অথচ বাইরে কী বাতাস! নাচছে আধবোজা কদমেরা। তাকিয়ে থাকলেন সেদিকে। জানলাটা খুললেই শান্তি। কিন্তু উপায় নেই।
অসীমা বোধ হয় পথ্য আনতে গিয়েছেন। বা গোসল সারতে। বা ডাক্তারের কাছে। বা অন্য কোথাও।
অফিসের কাজটার কথা মনে পড়লো। একদৌড়ে যদি চলে যেতে পারতেন! বাকশোটা লুকোতে পারলেই শান্তি হতো তার। কিন্তু সে উপায় নেই। পড়েই থাকলেন তাই।
উঠতে ইচ্ছে করছে খুব। এভাবে শুয়ে থাকা যায়? বিরক্তি আঁকা চোখ পড়ে আছে পত্রিকায়। নিজের পত্রিকা তিনি পড়েন না সাধারণত। কী মনে করে তুলে নিয়েছেন আজ। প্রথমে শেষের পৃষ্ঠা। তারপর শেষের আগেরটা। বিশ্বলোক। তারপর রঙ্গশালা। খেলাধুলা। সম্পাদকীয়। চোখ বুলোলেন। তাতেই বিষিয়ে উঠল দেহটা। কিচকিচ করছে ভুল! গাধাগুলো শিখল না কিছুই। দুটোদিন শুধু দেখেননি তিনি। তাতেই এই অবস্থা। রেখে দিলেন।
কিছুক্ষণপর ফিরলেন অসীমা। হাতে একটা জাতীয় দৈনিক। দারুণ এক খবর ছেপেছে। দেখতে বললেন।
ইচ্ছে করছে না তার। তবু নিলেন হাতে। স্ত্রী তখন খাইয়ে দিচ্ছেন। সাবধানে ধরেছেন পত্রিকাটা। ঝোল যেন না পড়ে। তখনই চোখ গেল প্রথম পাতার লাল শিরোনামে। আর নিচের ছবিটাতে। ছবিটায় লেপ্টে থাকা হাসিতে। হাসিতে লেগে থাকা স্বস্তিতে।
বয়স হয়েছে। ছেলেমানুষি যায়নি তবু। খুশির কিছু হলেই লাফিয়ে ওঠেন। চিৎকার জুড়ে দেন। বকাও খেতে হয় তাই। তার ছেলেরাও নাকি তারচে’ ম্যাচুরড। বলেন অসীমা।
আজও লাফাতে ইচ্ছে করল। কারণ মেয়েটা হাসছে। ফোটাশাপলার সাদা হাসি। এটাই ছাপতে চেয়েছিলেন তিনি।
হাসির নিচে তার নিজের ছবি। হাসপাতালে শুয়ে আছেন। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। সঙ্গে একটা প্রতিবেদন। পেশার প্রতি তার নিবেদন আর আপসহীনতার গুণগান। চেনা-অচেনা গুণীজনের শুভকামনা। বিবৃতি। পাশে একটা বক্সনিউজ। হত্যাচেষ্টায় জড়িত একজন গ্রেফতার। কিছুই দেখলেন না। চোখ পড়ে থাকলো হাসি মুখটায়। বার বার দেখলেন। চোখ ভরে। বুক ভরে। হাসিটা তিনিই দিয়েছেন মেয়েটাকে। মনে হলো। ভুলে গেলেন সব। দুঃখ। ব্যথা। অপ্রাপ্তি। আর কাল রাতের প্রতিজ্ঞা। যেখানে তিনি দাঁড়ি টেনেছেন একাজে। বেচে দেবেন প্রেসটা। দোকান দিয়ে খাবেন। তবু বনের মোষ আর তাড়াবেন না। ভুলেই গেলেন এই খবরটার জন্যই এ অবস্থা তার। মনে হলো এমন একটা হাসির জন্য অনেকগুলো হাত বিলি করা যায়। ফেরি করা যায় অনেকগুলো পা।
মনে হলো, তিনি ভুল করেননি।
মনে হলো এখনই তার সময়। পত্রিকাটাকে আবার জাগিয়ে তোলার এ-ই সুযোগ। ভাবতে ভাবতে ফিরে গেলেন সেই প্রথম দিনগুলোয়।
শহরের একমাত্র পত্রিকা। নিরপেক্ষ সংবাদ। ঝকঝকে ছাপা। আর চমৎকার ভাষা। সবমিলে একটা প্যাকেজ। কী কাটতিই না ছিল বাজারে! কিন্তু সুখগুলো তো বিজ্ঞাপনবিরতি। যত বড়ই হোক, শেষ হয়ই। এছাড়া একযুগ তো আর কম সময় না! টগবগে ঘোড়াটা তাই ক্লান্ত আজ। চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
তার ওপর অনেকগুলো প্রেস এখন শহরে। পত্রিকাও।
ওরা তো মনে হয় টাকশাল নিয়ে নেমেছে! এত টাকা কোথায় যে পায়!
দুটো কোম্পানির কাছে পত্রিকা শুধুই নাকি শো। ভেতরে ভেতরে অন্য কাজ। কালো টাকা সাদা করাই নাকি উদ্দেশ্য। দুই/একটা বাদে সবগুলোই ভুঁইফোড়। কোনোমতে ক’টা ছাপাকাগজ বের করলেই বাঁচে। না আছে ভালোবাসা। না আন্তরিকতা।
সর্বনাশটা ওরাই করেছে।
যোগ্য দক্ষ লোক ছিল সমর সাহেবের। টাকার লোভে চম্পট দিয়েছে সবাই। সর্বশেষ এই ছেলেটাও গেলো।
জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছেন। কোনোমতে। ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। সঙ্গে বিক্রি কমেছে। আগের সিকিভাগ হলেও খরচটা উঠত অন্তত। প্রায়ই তাই লোকসান গোনেন। এমন চললে পাততাড়ি গোটাতে হবে। তা হলে কি আর বাঁচবেন তিনি? বুক জুড়ে তার কাগজ আর কালি। কলাম আর ইঞ্চি। পেস্টিং আর মেকাপ। অন্যকিছু করার কথা ভাবতেও পারেন না তাই। কতবার কত কিছু ঘটল। ঘরে। বাইরে। মনে হলো, আর না। যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু কাজের সঙ্গেও তো দাম্পত্য সম্পর্ক মানুষের। প্রায়ই তাই খুনসুটি হয়। ঝগড়া হয়। হয় অভিমান। ছাড়াছাড়ি হব হব হয়। কিন্তু হয় না। কোথায় যেন বাধে। কোন সুতোর টান যেন টেনে আনে ঘরে। সমর সাহেবও তাই প্রতিসকালে অফিসে আসেন। মুখ গোঁজেন সংবাদে। লাইনগুলোর ফাঁকে। শব্দাবলির বাঁকে।
না, এ ছাড়া চলবে না তার। এ তিনি ঠিক বুঝেছেন। কিন্তু কী করা? গত প্রায় মাস ছয়েক এই ছিল ভাবনা তার।
ভাবছিলেন ঘুরে দাঁড়াবেন। কিছু ভাবনা আছে। ঢেলে সাজাবেন সব। শুরু করবেন গোড়া থেকে। কিন্তু অনেক টাকার ফ্যারা। পাবেন কোথায়?
একটা সঞ্চয়পত্র ছিল। ভাঙিয়েছেন।
একটা ডিপিএস ছিল। বছর খানেক বাকি আছে ম্যাচুরিটির। তবু ভাঙিয়েছেন।
একটা সমিতি করেছিলেন। অল্প কিছু জমেছিল। তুলেছেন।
তবু সংকুলান হয়নি সবটার। আরো উপায় খুঁজছিলেন। এটা সেটা ভাবছিলেন।
ঠাকুরদির কথা মনে পড়ছিল তখন। প্রতিরাতে গল্প শোনাতেন। রঙবেরঙের গল্প। স্বাদবেস্বাদের গল্প। আঁধারের গায়ে ছলছল করে উঠত দুঃখ। খলবল করে উঠতো সুখ। ঝলমল করে উঠতো সোনাভর্তি কলস। আর সাপের মাথার মণি। জ্বিনপরিদের সুনজরে বড়লোক হয়ে যেত কত গরিব। আবার সাধুবাবার অভিশাপে রাজা হতো নিঃস্ব। তন্ময় হয়ে শুনত ছোট্ট সমর। বিভোর হয়ে শুনত।
অমন একটা সোনার কলস কি তিনি পেতে পারেন না? বা সাপের মণি? বা এরকম কিছু? ভাবছিলেন।
তখনই মনে পড়ল গয়নার ওই বাকশোটার কথা। চাইলেই তো ওটা মেরে দেওয়া যায়।
কিন্তু সাই দিচ্ছিলো না মন। এই বয়সে। এই সময়ে। কিভাবে এমন একটা কাজে হাত দেন তিনি। একটা কানাকড়িও কুড়িয়ে নেননি কোনো দিন। চুরি করা তো দূরের কথা! তবু। দরকার কি দরিয়া বোঝে? ঝাঁপ দিতে হলে দিতে হয়। তাই আর ভাবেননি কিছু। তাকাননি পিছু।
দিন চারেক আগের কথা। তখন সন্ধ্যা।
বাড়িটা ফাঁকাই ছিল। তবু ঝামেলা হলো।
বাকশোটা খুঁজে পেয়েছেন কেবল। ভেতরটা দেখা হয়নি। হঠাৎ জ্বলে উঠলো আলোটা। আর তিনি অন্ধকার দেখলেন চোখে। দ্বিতীয় চিন্তার সুযোগ ছিল না। বেরিয়ে গেলেন। সামনেই প্রাচীর। দুটো ইট রাখা ছিল। উঠলেন। ভর দিলেন হাতে। প্রাচীরটা নিচু হয়ে গেল। নিজেকে ঠেলে দিলেন ওপর পানে। এরপর ফেলে দিলেন ওপাশে।
কত লাফিয়েছেন। ছাদ থেকে। গাছ থেকে। চলন্ত ট্রেন থেকেও একবার! কিচ্ছুটি হয়নি। সে এক সময় ছিল। ছোটবেলা। সবসম্ভবের সময়। এখন সবই অসম্ভব। এদিক থেকে ওদিক হলেই খবর। তা-ই হলো। হোক। ব্যথার কথা ভাবলে এখন চলবে না। আরেকটু থাকলেই ধরা পড়ে যাবেন। মুখ দেখানোর জো থাকবে না। যেতে হবে। যত দ্রুত যাওয়া যায়। কিছুদূর হাঁটলেই পথ। পথের ওপর দাঁড়ালেই রিকশা। রিকশায় উঠলেই শহর। শহরে পৌঁছলেই অফিস।
এগুলেন সমর সাহেব। পড়িমরি করে।
রিকশায় উঠতে বেগ পেতে হলো। কাল একবার রতন ডাক্তারের কাছে যাবেন। দুটো বড়ি খেলেই দফারফা। ব্যথাটাকে তাই পাত্তা দিলেন না। ভোগালো অস্বস্তিটা। ভেতরটা খা খা যেন। স্বস্তি নেই। অথচ সংশয়হীন হয়েই করেছেন কাজটা। এখন কেন এমন লাগছে? এমন কেন হয় তার? ভাবছিলেন।
রিকশা তখন অফিসের সামনে। তার নামার অপেক্ষায়।
নামলেন। যথাসম্ভব আড়ালে রাখলেন বাকশোটা। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটলেন। যতটা পারা যায়।
প্রেস থেকে ভেসে আসছে আড্ডার স্বর। ওদিকে মন দিলেন না। নিজের কক্ষে ঢুকলেন। লুকোলেন বাকশোটা।
তারপর বের হলেন। সন্তর্পণে।
খচখচ করছিল মন। কাজটা কি ঠিক হলো? তার মতো মানুষ, এমন একটা কাজ! ছিঃ ছিঃ করবে লোকে। কিন্তু কী-ই বা আর করার ছিল? তবু। বুঝ পাচ্ছিলেন না। সেই নিয়নকাটা আঁধারে নিজেকে তার শয়তান মনে হচ্ছিল। দূষছিলেন নিজেকে। যত যাই হোক, কাজটা ঠিক হয়নি। জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি। সবাই তাকে দেবতার মতো মানে। এখন তো চোর ভাববে! তারচে’ বাবা গোয়ালের গরু গোয়ালেই রেখে দেবেন। ঝামেলা চুকবে। ভাবছিলেন সমর সাহেব। ব্যথার কথাটা মনে ছিল না। মোড়ে এসে নামতেই কঁকিয়ে উঠেছিলেন। আবার।
ঘরে ঢুকেছিলেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে। দেখেই ছুটে এসেছিলেন অসীমা।
সর্বনাশ হয়ে গেছে। ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন সন্ধ্যায়। ফাঁক পেয়ে চোর ঢুকেছিল। গয়নার বাকশোটা নিয়ে গেছে। আলমারিতে ছিল। সারাজীবন আগলে রেখেছেন। নষ্ট হওয়ার ভয়ে তিনি পরেনও না। সামলে রাখেন যকের ধনের মতো। তাই কিনা চোরের নজরে পড়লো!
চোখেমুখে তৎপর একটা ভাব ফুটিয়ে তুলেছিলেন সমর সাহেব। ঘুরছিলেন সারাবাড়ি। তড়িৎবেগে। বসার ঘর থেকে শোয়ার। শোয়ার ঘর থেকে বারান্দা। সেখান থেকে দরজা। তারপর জানলা। তারপর গেট। কোনপথে ঢুকল চোরটা? কিভাবে বেরুল? গেট তো বন্ধই ছিল। তাহলে!
পেছনের দরজাটা লাগানো হয়নি।
একতলা বাসার এই সমস্যা। এক পলকও অসাবধান হওয়া যায় না।
চিৎকার করলেন একটু। গুষ্টি উদ্ধার করলেন চোরের। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার। আর সরকারের। মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা আছে এখন? বাজছিল বড় গলাটা তার।
ছোটবেলায় একবার অভিনয় করেছিলেন। মুকুট নাটকে। সহপাঠীদের আয়োজন। কিন্তু সে কি মুখের কথা? কী কষ্টেই না পার করেছিলেন সময়টুকু। এরপর আর করতে হয়নি কখনো। অভিনয় তার চরিত্রের সঙ্গে যায়ও না। তাই কসরত করতে হচ্ছে। ভেতর ভেতর ধিক্কার দিচ্ছিলেন নিজেকে। এতটা নিচে না নামলেও পারতেন।
চুপ থাকেননি অসীমাও।
কতদিন বলেছেন শিকলটা নষ্ট। ঠিক করাতে হবে। ঠিক করাতে হবে। কে শোনে কার কথা। থাকুন তিনি তার পত্রিকা নিয়ে। আড্ডা আর দাবা নিয়েই থাকুন। বাড়ির খোঁজখবর তার রাখতে হবে না।
চলছিল কথার রেল। বিভিন্ন বগিতে তার বিভিন্ন স্বর। কোনোটাতে দোষারোপ। কোনোটাতে অভিমান। কোনোটাতে ক্ষোভ।
রাত গভীর হলো। আলো নিভলো। ঘুমালো ঘরগুলো। খাটগুলো ঘুমালো। ঘুমালো না মাথার ওপরের ফ্যানটা। ঘুরতে থাকলো। আর জেগে থাকলেন তারা। এপাশ-ওপাশ করলেন। একটু চোখ বুজলেন। একটু ঘুমোলেন। একটু জাগলেন।
সকাল আসলো অন্যসব সকালের মতোই। কিন্তু কত যেন আলাদা। অস্থির লাগছিল সমর সাহেবের। নাশতা খেতে পারলেন না। পায়ের ব্যথাটা বেড়েছে। এটা নিয়েও মিথ্যা বললেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন। ডাক্তার দেখাতে হবে।
আচ্ছা, কোনোভাবে কি ফেরত দেয়া যায়? চুপিচুপি রেখে আসা যায় না আবার? না। মুখে নিয়েছেন যখন, গিলেই ফেলবেন। তারপর যা হয় হোক। দাম পেলেই ঝেড়ে ফেলবেন গা। ভাবনাটা বুকে করেই অফিসে ঢুকেছিলেন। কিন্তু করা হয়নি কিছুই। একটা মামলার শুনানি ছিল। বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সারাদিন কেটেছিল ওখানেই। বিকেলে ফিরে জগিং। তারপর হামলা। তারপর বদ্ধ গুমোট হাসপাতাল।
একে তো ভুলোমনা, তায় এত ঝক্কি, মনে ছিল না বাকশোটার কথা।
এখন কিন্তু ঝিমঝিম করছে মাথাটা। মেয়েটার হাসিও দূর করতে পারছে না তা। সঙ্গে তীব্র ব্যথা। আর চিন্তা। বাকশোটা সরাতেই হবে। অফিসের সবার যাতায়াত তার চেম্বারে। কে কখন দেখে বলা যায় না। মেরে দিলে তিনি নিঃস্ব। জানাজানি হলে মরণ। তাই বুদ্ধি করলেন একটা। যা করার এখনই করতে হবে।
তাকে নিয়ে করা ফিচারটা পড়েছেন অসীমা। তবু পড়ছেন আবার। খুবই উচ্ছ্বসিত তিনি। বোঝা যাচ্ছে। এই তো ঝোপ। কোপটা দিয়েই দিলেন সমর সাহেব। হোটেলের খাবার খেতে আর ভাল্লাগছে না। এছাড়া উদযাপনেরও তো উপলক্ষ পাওয়া গেছে। অসীমার হাতের আলুভর্তা ভাতও যদি..।
অমনি ছুটলেন অসীমা।
একদল মানুষ আছেন, খাওয়ানোর সুযোগ পেলে যারা শ্বাস নিতেও ভুলে যান। অসীমা সেই দলের সভানেত্রী। ফলে পুরো রান্নাঘরই যে উঠে আসবে এখন, তা সমর সাহেব ঠিক জানেন। তার মানে যথেষ্ট সময় পাওয়া গেলো। এর মধ্যেই কাজটা করে ফিরতে হবে। ধরা পড়া চলবে না। তাই দেরি করলেন না। বেরোলেন। শরীরের আঘাত গুলো যেন ওৎ পেতে ছিল। কামড় বসালো একসঙ্গে। প্রাণটা বেরিয়ে যেতে চাইলো। গেলে যাক। প্রাণের চে তার মানের গুরুত্ব বেশি। তাছাড়া পাপ যেহেতু করেছেন, এটুকু সহ্য তো করতেই হবে! তাই থামলেন না।
অফিসে ঢুকলেন সন্তর্পণে। আটকে দিলেন দরজাটা। তারপর বাকশো। তারপর বিস্ময়।
এত গয়না অসীমার! পুরনোগুলো তো আছেই। নতুনও যোগ হয়েছে কয়েকটা। তলে তলে এতকিছু! বুঝতেও পারেননি তিনি। ওটুকুই শুধু না। আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল তার জন্য।
একটা কাগজ পাওয়া গেলো। চিরকুট। মিটিমিটি অক্ষরে লেখা। চিনতে সময় লাগে না।
‘আমার হাতে তুমিই দিয়েছিলে গয়নাগুলো। নিজেরচে’ যত্ন করে রেখেছিলাম। তবু নানা দরকারে বলেছি, চলো বেচে দেই। নাওনি। মায়ের শেষ স্মৃতি। ভাঙবে না বলেছ। কিন্তু এবার যে অবস্থা, তাতে মনে হয় লাগবেই এগুলো। তোমাকে তো চিনি। চুরি করবে, তবু মুখ ফুটে চাইবে না। কিন্তু চুরির মাল বেচতে গেলে সন্দেহ করবে মানুষ। ধরাও পড়ে যেতে পারো। তা হলে তো হেঁট হবে মাথা। সেটা চাই না। সাবধানে করো কাজটা। প্রয়োজনে ঢাকায় যাও। নতুনগুলো বউমাদের জন্য করেছিলাম। বালাদুটো পারলে রেখে দিয়ো।
দ্রুতচোখে শেষ করেন লেখাটা। তারপর বসে পড়েন সমর সাহেব।
গয়নাগুলো তাকায় তার দিকে। চিরকুট তাকায়। বুকখোলা বাকসোটা তাকায়। জ্বলজ্বলে সোজা সোজা চোখে। সেদিকে তাকাতে পারেন না তিনি। চোখ সরিয়ে নেন।
মাথা ঘুরছে। আবার পড়তে চাইলেন লেখাটা। পারলেন না। ঘামছেন তিনি। একটু বাতাস দরকার। জানলায় চোখ পড়লো। রক্তজবার গাছটা দেখা যাচ্ছে। বাতাসে হেলছে সে। আর দুলছে। রক্তলাল ফুল নিয়ে। গাঢ় সবুজ পাতা নিয়ে। কিন্তু তার এখানে গরম খুব। বাতাস নেই। ওপরের ফ্যানটা ঘুরছে যদিও।