আসিফ রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যেতেই সোনালীর ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে শফিকের নাম। সোনালী ধরে না। ফোন বাজতে বাজতে এক সময় মিসড কল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার। এবারে ফোনটা কেটে দেয় সোনালী। তার রাগটাও শফিক বুঝুক। সে জানে ও কী বলবে, কিন্তু নিজে উত্তর কী দেবে, তা জানে না। এছাড়া শফিকের ওপর রাগ তারও কম হয়নি। শুধু শুধু ওর জন্য ওকালতি করতে গিয়ে সকাল বেলায় আসিফের বকা খেতে হলো।
সকাল থেকে এমনিতেই আসিফের মেজাজ খারাপ হয়ে ছিল। কোরবানির ঈদের তৃতীয় দিনে অন্যরা যেখানে বাসায় বসে আয়েশ করছে, তাকে যেতে হচ্ছে অফিসে। অন্য কেউ না গেলেও তামান্না, নজরুল আর আসিফকে যেতেই হবে। প্যারিসে একটা শিপমেন্টের কাগজপত্র চূড়ান্ত করতে হবে। আমদানি-রফতানির ব্যবসায় ঈদের পর তিন-চার দিন নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর অবকাশ নেই। আসিফ তদারকি না করলে নজরুল কিংবা তামান্না কেউই ঠিকমতো কাগজপত্র রেডি করতে পারবে না। গতবারের মতো লেজে-গোবরে করে ফেলবে। সে জন্যই ঈদের আমেজ যেতে না যেতেই অফিসে ছোটা। মেজাজ খারাপ হওয়ার অন্য কারণও আছে। তিন সপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে সোনালী কো-অপারেট করছে না। সে দিন রাগ করে বলেছে, দুই দিন পরপর চাহিদা হলে আরেকটা বিয়ে করতে পারো। বয়স হচ্ছে না বুঝি। আসিফ ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু গত কয়েক দিন সে অ্যাডভান্সড হলেই সোনালী বলেছে ক্লান্তির কথা। কোভিডের কারণে ছুটা কাজের মেয়েকে আপাতত আসতে ‘না’ করেছে। বাসায় স্থায়ী একজন কাজের মেয়ে দিয়ে সব কাজ হয় না। তাকেও হাত লাগাতে হয়, অনেক কাজই করতে হয়। তার ওপর বাসায় বসে অনলাইনে অফিসের কাজ, জুম মিটিং এসব তো আছেই। সেইসঙ্গে ঈদের জোগাড়যন্ত্র, রান্নাবাড়ার বাড়তি চাপ। ক্লান্তির কথা একেবারে অমূলক নয়। লিবিডোও কমে যাচ্ছে মনে হয়। কিন্তু আসিফের চাহিদা তো কমেনি। এমনিতেই তিন সপ্তাহের বেশি, তার ওপর কয়দিন পর আবার দেবে পিরিয়ডের বাহানা। তাই একটু প্রচ্ছন্ন রাগ। ঠিক রাগ বলা যাবে না, অভিমান আর রাগের মাঝামাঝি কিছু একটা।
এর মধ্যে আবার শফিকের কারণে আরেক দফা মেজাজ খারাপ হলো। ঈদের দিন ভোর বেলায় শ্বশুরবাড়িতে গেছে দু’দিনের ছুটিতে। আজ ফিরে আসার কথা। অনেক বছর ধরেই আসিফের ড্রাইভার হিসেবে আছে। বিয়ে করেছে কিছুদিন আগে। ঢাকায় এখনো বউ নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি, নিজে থাকে দক্ষিণখানের একটা মেসে। ফাতেমা আপাতত কালিয়াকৈরে তার বাবার বাড়িতেই থাকছে। যদিও উঠিয়ে নিয়েছে তবু বউকে ভোলায় নিজের বাড়িতে রেখে আসেনি। কালিয়াকৈরে থাকলে মাসে অন্তত দু’রাত শ্বশুরবাড়িতে বউয়ের সঙ্গে কাটাতে পারে। আসিফ দু’ সপ্তাহে এক শুক্রবারে ওকে ছুটি দেয়, শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ ফিরে এলেই চলে। শনিবারে একটু দেরি করেই অফিসে যায় আসিফ। উত্তরা থেকে কালিয়াকৈর যেহেতু খুব বেশি দূরে নয়, তাই শফিকেরও তাতে তেমন অসুবিধা হয় না। সে সময়ে আসিফ খুব একটা বের হয় না কোথাও। জরুরি প্রয়োজনে কখনো সখনো উবার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু শফিকের ব্যাপারটাও তো দেখতে হবে। বেচারা নতুন বিয়ে করেছে।
ফাতেমা অবশ্য ফোনে বলেছিল আরও দু’একদিন পর আসতে। সে ইঙ্গিতটা ধরতে পারেনি শফিক। ফাতেমাও লজ্জায় সরাসরি কিছু বলতে পারেনি। আর চাইলেও শফিক পরে ছুটি পাবে না। ঈদের পর স্যারের অফিসের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। ছুটি জমিয়ে রাখার উপায় নেই কোনো। তাই দু’দিনের ঈদের ছুটিই কাজে লাগাতে হবে।
তবে আজকের বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আসিফ। এটা ঠিক, অফিস আর বাসার কিছু ব্যস্ততার কারণে গত একমাসে শফিককে ছুটি দেওয়া হয়নি। সে জন্যই তো দু’দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছে। বহুবার ভেবেছে নিজেই ড্রাইভিং শিখে নেবে, বিপদে আপদে কাজে দেবে। ড্রাইভিং একটা এসেনশিয়াল লাইফ স্কিল। কিন্তু এই বয়সে নতুন করে ড্রাইভিং শেখার ঝক্কির কথা ভেবে সেই পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে। সোনালী এন্টারপ্রাইজের এমডি নিজে ড্রাইভিং শিখছে, এটা দেখলে লোকেই বা ভাববে কী! শেষপর্যন্ত তাই শফিকই ভরসা। আজ অফিসে পৌঁছার প্ল্যান করেছে ১১টার মধ্যে। ঈদের পর রাস্তাঘাট এখনো তেমন ব্যস্ত হয়নি। উত্তরা থেকে বাংলামোটর পৌঁছাতে ৩০-৪০ মিনিটের বেশি লাগবে না। কিন্তু পৌঁছানো তো দূরের কথা, ১১টা অবধি শফিকের দেখাই নেই। অধৈর্য হয়ে আসিফ ফোন করে।
-শফিক, তুমি কোথায়? তোমার না ১০টায় আসার কথা? ১১টা বেজে গেছে। ব্যাপার কী?
-স্যার, আমি তো কালিয়াকৈর। আজকে একটু আটকাইয়া গেছি। আসতে পারতেছি না স্যার। শফিক আমতা আমতা করে জানায়।
-বলো কী! তোমাকে তো আজ ছুটি দেইনি। আজ যে আসতে পারবে না আমাকে জানিয়েছিলে? কী হয়েছে তোমার? আসিফের কণ্ঠে রাগ ও বিরক্তি।
-স্যার, আমি তো আসতে চাইছিলাম। রেডিও হইছিলাম। কিন্তু শাশুড়ি আম্মা আসতে দিতাছে না। বলতেছে কালকে যাইতে। শফিক কাচুমাচু করে।
-এটা কেমন কথা? তোমার শাশুড়ি বললেই তুমি আসবে না? উনি কি তোমার ছুটি দেওয়ার মালিক? আমার অফিসে দুনিয়ার কাজ পড়ে আছে। তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে? আসতে পারবে না আমাকে আগে জানাওনি কেন? এত দায়িত্বহীন কেন তুমি? তুমি আগেও কয়েকবার এমন করেছ। ভোলায় গিয়ে সময়মতো আসোনি। সেজন্য তো তোমাকে ওয়ার্নিংও দিয়েছি। তারপরও তুমি একই কাজ করছো। তোমার তো সাহস কম না। ভাবছ একই কাজ করে বারবার পার পেয়ে যাবে?
-আর ভুল হইবো না স্যার। কাল সকাল সকাল চইলা আসবো।
-তোমার আর আসতে হবে না। তোমার কথা মতো হবে না কি? নতুন চাকরি খোঁজো। আমাকে আর ফোন করবে না।
আসিফ রাগে কাঁপতে কাঁপতে ফোন কেটে দেয়। বিয়ের আগেও শফিক কয়েকবার এমন করেছে। ভোলায় গিয়ে কখনো এক দিন কখনো দুই দিন পর্যন্ত দেরি করে এসেছে। একবার মায়ের অসুখ, একবার খারাপ আবহাওয়া, একবার ডায়রিয়া এমন কত বাহানা। সত্য মিথ্যা কে জানে! তবে এটা ঠিক আসিফ কিংবা সোনালী কেউ তাকে মিথ্যা বলার অপবাদ কখনো দিতে পারেনি। ছেলেটা এমনিতে বিশ্বস্ত। কিন্তু এমন দায়িত্বহীন হলে শুধু বিশ্বস্ততা দিয়ে কিছু হয় না। তাছাড়া তার সময়মতো ফিরে না আসার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণও নেই।
শফিক আবারও ফোন করে। আসিফ কেটে দেয়। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। আর বসে থাকা যায় না। একটা উবার ডাকে। সোনালীকে বলে, খবরদার, ও ফোন করলে পাত্তা দেবে না, ফোন ধরবে না। ভেবেছে বারবার একই কাজ করে পার পেয়ে যাবে। আজ থেকে ওর চাকরি শেষ। যাওয়ার সময় বেতনও দিয়ে দিয়েছি। কোনো পাওনা নেই। ঈদের বোনাসও দিয়ে দিয়েছি। ও যেন আমার সামনে আর না আসে।
-আচ্ছা বাদ দাও। কী আর করবে? আগে তো এমন করেছে তখনো বিয়ে করেনি। ভোলা অনেকটুকু পথ। বিয়ের পর তো এই প্রথম এমন করলো। আরেকটা চান্স দাও। এরপর করলে ছাঁটাই করে দিও। আজ একটু কষ্ট করো উবারে। কাল সকালে নিশ্চয়ই চলে আসবে।
-একদম সুপারিশ করতে আসবে না। এই নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। এমন শয়তান ড্রাইভারের আমার দরকার নেই।
সুপারিশ করতে হলে করবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি রাজি হওয়া ঠিক হবে না। শয়তানটা আরেকটু টেনশনে থাকুক।
সোনালী চুপ হয়ে যায়। সে জানে এখন আসিফকে কিছু বলা অর্থহীন। তাছাড়া সত্যিই তো, এটা কেমন ইররেসপন্সিবল কাজ শফিকের? আসতে পারবে না, ভালো কথা; ফোন করে আগে জানাবে না? তবু এ ঘটনার জন্য একেবারে ছাঁটাই করে দেওয়া একটু বেশি মনে হচ্ছে। না হয় আগের চেয়ে একটু কড়া ওয়ার্নিং দিতো, কিংবা ওকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য একদিনের বেতন কেটে রাখলেই হতো। কিন্তু সোনালী জানে, আসিফ একবার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে সেখান থেকে তাকে ফেরানো দায়। ও সহজে কারও প্রতি কঠোর হয় না। কিন্তু একবার কঠোর হয়ে গেলে তার মন নরম করা প্রায় দুঃসাধ্য। আগেই বলেছিল এই শিপমেন্ট নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। একটু দেরি হলে বা কাগজপত্র ঠিকমতো রেডি করতে না পারলে বহু টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে। সোনালী ব্যবসায়ের অত কিছু বোঝে না। তবে আসিফের রাগের কারণ যে রয়েছে সেটা বোঝে। তবু এত দিনের পুরনো ড্রাইভার শফিকের জন্য মায়াও হয়। ভাবে, বিকেলে আসিফ ফিরলে একবার বুঝিয়ে সুঝিয়ে চেষ্টা করবে। বেচারা বউকে তো তেমন কাছে পায় না।
শাশুড়ি আম্মা শফিককে আসতে দিচ্ছে না–ব্যাপারটি তেমন নয়। ওকে আসতে দিচ্ছে না শরীরের ডাক। তাকে এই সময়ই ছুটি নিতে হতো। স্যারের অফিস খুলে গেলে তো আর ছুটি নেওয়া সম্ভব না। তাছাড়া ফাতেমার ইঙ্গিতও চট করে বুঝতে পারেনি। রাতে বিছানায় গিয়ে বুঝলো ফাতেমা কেন দুই-একদিন পরে আসতে বলেছিল।
-আইজ হইবো না। আরও মনে হয় দুই দিন ধৈর্য ধরন লাগবো।
-ও, এই জন্য তুমি আমারে দুই দিন বাদে আসতে বলছিলা?
-তোমারে সব কিছু কি ভাইঙ্গা কইতে হয়? বুঝো না বুঝি? তারিখ তুরিখ মনে থাহে না?
-আহহারে! আগে বুঝি নাই। তয় বুঝলেও ছুটি তো পাইতাম না। এখনই না আইস্যা উপায় কী বলো! ঈদ বইলা কথা!
-তুমি বুঝি খালি এই কামেই আসো? আমারে দেখতে আসো না? তয় অহন কী করবা?
-তোমারে দেখতেও আসি, আদর করতেও আসি। ঈদের দিন তোমারে না দেইখ্যা থাকুম? সেই জন্যই তো আসলাম। দরকারে আরেকদিন বেশি থাকুম। তবে এর বেশি পারা যাইবো না। দেইখো কিন্তু।
-না, আমার মনে লয় কাইলই ঠিক হইয়া যাইবো। কইম্যা গেছে। কিন্তু তোমার স্যার রাজি হইবো?
-স্যাররে বলুম, আম্মা যাইতে দেয় নাই। একদিন থাকার আবদার করছে। কী আর করবো! নইলে একটু বকাই দিবো। তোমার লাইগ্যা না হয় একটু বকা খাইলাম।
-ইস! আমার লাইগ্যা? ফাতেমার হাসি অন্ধকার ঘরেও আলো জ্বেলে দেয়।
-আচ্ছা, যাও, দুই জনের লাইগ্যাই।
শফিককে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে ফাতেমা। দু’ জনে আগামী রাত বা তার পরের রাতের স্বপ্নে বিভোর হয়। ফাতেমা জানে এই দিনগুলোতেও কী করে শফিককে শান্ত করতে হয়। সে কার্পণ্য করে না।
ওদের চাওয়া বাস্তবায়িত হয় না। সন্ধ্যায় ফাতেমা ফিসফিস করে বলে, তোমার স্যাররে বলো কাইল তোমার যাওয়া হইবো না। শেষ হয় নাই। কী করুম, শরীরের ওপর তো জোর খাডে না। তয় কাইল শেষ হইবোই হইবো।
-না, অহন ফোন করব না। খামাখা ঝাড়ি খাইতে হইবো। তারপর যদি যাইতে বলে তখন না যাইয়া থাকা যাইব না। তার চেয়ে কাইল সকালে ফোন কইরা বলব। ১১টার সময় ফোন করলে তো স্যার যাইতে বললেও লাভ হইবো না উনার। তাই বকাবকি দিয়া ফোন রাইখা দিব।
তবে শফিক যেটুকু ভেবেছিল আসিফ রাগ করেছে তার চেয়ে ঢের বেশি। ও ভেবেছিল একটু আধটু বকাঝকা করেই বিষয়টার ইতি ঘটবে। কিন্তু এখন আসিফের কথা শুনে তার রক্ত হিম হয়ে আসে। এই করোনার সময়ে চাকরি চলে গেলে হুট করে আরেকটা চাকরি কোথায় পাবে? অনেক বছর ধরেই আসিফের গাড়ি ড্রাইভ করছে সে। জানে, স্যার এমনিতে খুবই ভালো মানুষ। কিন্তু রেগে গেলে তাকে ফেরানো মুশকিল। এখন ম্যাডামই ভরসা। খুব নরম মনের মানুষ। উনি যদি স্যারকে একটু নরম হতে বলেন।
কিন্তু ফোনের পর ফোন করেই যাচ্ছে, ম্যাডামের ধরার নাম নেই। তবে কি ম্যাডামও রেগে আছেন খুব? একদিনের দেরিতেই সবার এত রাগ? শফিক জানে না, সোনালীর যত না রাগ তারচেয়ে বেশি ভয় আর সংশয়। সে জানে শফিকের জন্য সুপারিশটা তাকেই করতে হবে। কিন্তু রেগে গেলে মানুষটার যে অগ্নিমূর্তি হয়, তার সামনে দাঁড়িয়ে সুপারিশ করা চাট্টিখানি কথা নয়। আর আসিফ যদি তার কথা না রাখে, তাহলে সেটা ড্রাইভারের কাছে একটা অপমানও বটে, শফিক জানবে ম্যাডামের কথা রাখেন না স্যার। সংশয়টা এখানেই। সোনালী এখন কী করবে? ফোন ধরে রাগ দেখাবে, নাকি সুপারিশের প্রতিশ্রুতি দেবে?
এসব ভাবতে ভাবতে একবার শফিকের ফোনটা ধরলো—কী ব্যাপার শফিক, বলো?
-ম্যাডাম, স্যারে আমার ওপর অনেক রাগ কইরা আছেন। আমার ভুল অইয়া গেছে। আমারে মাফ কইরা দিয়েন। স্যাররে একটু বুঝাইয়া বলেন যদি। আপনের কথা ফালাইতে পারবো না।
-আমার কী ঠেকা পড়েছে? স্যার রাগ করেছে আর আমি খুব খুশি হয়েছি, তাই না? তোমার কাণ্ডজ্ঞান দেখে আমি অবাক হয়েছি। এই নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। তুমি আগেও এমন করেছো। যা বলার তোমার স্যার বলে দিয়েছেন। পাওনা-দেনা তো কিছু নেই শুনেছি। সোনালী আর কথা না বাড়িয়ে ফোনটা কেটে দেয়। সুপারিশ করতে হলে করবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি রাজি হওয়া ঠিক হবে না। শয়তানটা আরেকটু টেনশনে থাকুক।
দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিতে যাবে এমন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন।
-সালামালাইকুম ম্যাডাম। আপনে ভালো আছেন? আমি ফাতেমা। কাচুমাচু গলায় কেউ বলে যায়।
-আমি ভালো আছি। কিন্তু কোন ফাতেমা?
-ম্যাডাম, আপনাগো ডেরাইভার…
-ও, তুমি শফিকের বউ?
-জি অয়! ম্যাডাম, উনারে মাফ কইরা দেন। সব আমার দোষে। এই সময়ে আমরা যাইমু কই আপনেরা যদি দয়া না করেন?
-শোনো, আমি তো চাকরিতে রাখা না রাখার মালিক না। অন্য সময়ে হলে তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু তোমাদের স্যার খুব রেগে আছেন। আর শফিক তো রাগ করার মতো কাজই করেছে। গতকাল আমাকে জানালে না হয় আমি বুঝিয়ে বলতে পারতাম। আগের কাজ পরে করলে তো হয় না।
-ম্যাডাম, আপনি স্যাররে একটু যদি বুঝাইয়া বলেন।
-স্যারকে বুঝিয়ে বলবো কী, আমি তো নিজেই রাগ। জানো, তোমাদের স্যারের কত জরুরি কাজ আজকে? অফিস থেকে যেতে হবে মতিঝিল, সেখান থেকে অফিস হয়ে আবার যেতে হবে তেজগাঁ। গাড়ি ছাড়া হয় এগুলো? শফিক তো সব জানে। সে এমন করলো কেন আজ? আজ চলে এসে দরকার হলে আরেকদিন ছুটি নিতো। দুই দিন তো থাকা হলো, নাকি? আমি পারবো না ওসব বলতে। আর বললেও শুনবে কে? শফিককে বলো ঢাকায় এসে অন্য চাকরি খুঁজতে।
ফাতেমা বুঝতে পারে না কিভাবে বললে ম্যাডামের মন গলবে। যতই মেয়ে মানুষ হোক, সব কথা কি বলা যায়। তবু সে নিরুপায়।
-ম্যাডাম, আমিই উনারে আটকাইয়া রাখছি। মায়ও আবদার কইরা থাকতে কইলো।
-তাইলে তো হলোই। তুমি আর তোমার মা মিলে তোমাদের স্যারকে বুঝিয়ে বলো। আমি এখন রাখি।
-ম্যাডাম, আপনে যদি না আমাগো দিকে না দেখেন আমরা কই যামু?
লো-স্পিড ফ্যানের বাতাসে বারবেরি ব্ল্যাকের ঘ্রাণ ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। আসিফ এখন আরও বেশি রিলাক্সড।
ফাতেমা কিছু বলতে গিয়ে ঢোক গিলে। কী বলবে, কিভাবে বলতে বুঝে উঠতে পারে না। এভাবে বলা কি ঠিক হবে? ম্যাডাম বেহায়া কিংবা বেয়াদব ভাবলে তো আরও বিপদ। কিন্তু উপায় কী? অসুখ-বিসুখের কথা বলতে পারতো কিছু একটা বানিয়ে। আগে তো তেমন কিছু বলেনি। হঠাৎ করে অসুখের গল্প ফাঁদলে কেউ বিশ্বাস করবে না। তাতে বরং হিতে বিপরীত হবে। তবে এই বুদ্ধিটা কারোই মাথায় এলো না কেন। প্রথমে যদি বলতো ডায়রিয়া হয়েছে তাহলে সহজেই বিশ্বাস করানো যেতো। এটা ঠিক ফাতেমা সত্যের মতো করে মিথ্যা বলতে পারে না। তালগোল পাকিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু প্রথমে বুদ্ধিটা মাথায় এলে তো শফিককে দিয়ে বলাতেই পারতো। কেন যে এই সহজ বুদ্ধিটা শফিকেরও মাথায় এলো না! ফাতেমা ডেসপারেট হয়ে ওঠে। এখন আর লজ্জা করে লাভ নেই। সত্যি বললে হয়তো ম্যাডামের মন নরম হবে। কাজ না হলে না হয় অন্য কিছু ভাবা যাবে। সে ঢোক গিলতে গিলতে সবটুকু শক্তি সঞ্চয় করে বলে, সব দোষ আমার, ম্যাডাম।
-কেন? তুমি আসতে দাওনি? তোমারা তো দুই দিন থাকলে একসাথে। আরেকদিন না থাকলে হতো না। তোমাদের একসাথে থাকা শফিকের চাকরির চেয়ে বড় হয়ে গেলো?
-ম্যাডাম!
-কী? দোষ যখন করেছো, তখন পস্তাও। আমি কী করবো?
-উনার দোষ নাই। আমার…
-তোমার? তোমার কী? যা বলবার তাড়াতাড়ি বলো। আমার এত সময় নেই, টায়ার্ড লাগছে। রেস্ট নিতে যাবো।
-এই দুই দিন আমার একটু অসুবিধা আছিল। ফাতেমা তার সবটুকু শক্তি দিয়ে এই কথা বলে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। এমন একটা কথা ম্যাডামকে বলতে পেরেছে ভেবে নিজেই অবাক হয়।
সোনালী রাগত স্বরে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, কী অসুবিধা। যদিও ফাতেমার লজ্জায় লাল হয়ে ওঠা দেখতে পায় না, তবু তার দ্বিধা এবং ব্রিবতভাবটা চিন্তা করে হঠাৎ ইঙ্গিতটা বোধগম্য হলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। মেয়েটার প্রতি একটু মায়া হলো। শফিকের প্রতিও। কিন্তু হাসি চেপে মুখে ও কণ্ঠে কপট রাগ ধরে রাখলো।
-ও, এই কথা! তোমাদের তো ডিউটির কথাও মনে রাখা দরকার না কি? সে জন্য তোমাকে দিয়ে ফোন করিয়েছে?
-জি না, ম্যাডাম। আমি নিজের থাইকাই করছি সাহস কইরা। আপনে অইলেন মায়ের জাত। জানি, আপনে বুঝবেন। মানুষটা বহুত ঘাবড়াইয়া গেছে।
-কী যে ঝামেলা করোনা তোমরা! দেখি আমি কী করতে পারি। তোমাদের স্যারের অনেক রাগ, উনি খুব রেগে আছেন। আমার কথা শুনবেন কি না, জানি না। আচ্ছা, শফিককে বলো ভোর বেলায় রওয়ানা দিয়ে চলে আসতে। ওর তো এমনিতেই ঢাকায় আসতে হবে। তোমাদের স্যার রাজি না হলে অন্য কোথাও তো চাকরি খুঁজতে হবে। কালিয়াকৈর বসে থাকলে তো চলবে না, তাই না?
-জি অয়!
-বাসায় আসার দরকার নেই। উত্তরায় কাছাকাছি থাকতে বলবে। যদি তোমাদের স্যারকে রাজি করাতে পারি তাইলে ফোন করলে যেন ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসতে পারে। ওকে বলবে আমাকে ফোন না করতে। আমি কিন্তু রেগে আছি। তুমি বউ, তোমাকে কিছু বললাম না।
-জি অয়! আপনের অনেক দয়া ম্যাডাম।
-আমি কিন্তু কথা দিচ্ছি না। তোমাদের স্যারকে তো চেনো না।
আসিফ যখন বাসায় ফিরে তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। চেহারায় রাগ বোঝা না গেলেও বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। ফ্রেশ হয়ে আসার পর সোনালী চা আর ঝালমুড়ি সামনে ধরে।
তোমার ওপর আজ অনেক ঝক্কি ঝামেলা গেলো, তাই না? সব কাজ হয়েছে ঠিকমতো?
-অনেক দূরই এগিয়েছে। সব কিছু কি এত সহজে হয়! কাল সকালে আবার দৌড়াতে হবে।
-রাগ কমেছে একটু?
-ও, ওই শয়তানটা তোমাকে ফোন করেছিল বুঝি? আমি তো যা বলার বলেই দিয়েছি। এই নিয়ে কথা বলতে চাই না। নজরুলকে বলেছি, কাল একজন ড্রাইভার অফিসে নিয়ে আসবে কথা বলার জন্য।
আমাকে ফোন করেছিল। ধমক দিয়ে রেখে দিয়েছি। পরে আননোন নম্বর থেকে একটা ফোন আসায় ধরে দেখি, ওর বউ। অনেক কাকুতি মিনতি করছিল মাফ করে দেওয়ার জন্য।
-তোমার অন্য কথা থাকলে বলো।
-লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে যাচ্ছে না কি?
-লঘু পাপ? লঘু আর গুরুর তুমি কী বুঝবে! আজ অফিসে যেতে দেরি হয়েছে। সে জন্য সব জায়গায় দেরি হয়েছে। তেজগাঁ পৌঁছে অফিস ধরতে পারিনি। কাল লাস্ট ডেট। তুমি এগুলোর কী বুঝবে? কাল ফার্স্ট আওয়ারে কাজ সারতে না পারলে শিপমেন্ট ঝুলে যাবে। প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকার অর্ডার। তুমি তো এসব বুঝবে না। এত দয়ার শরীর হলে শিডিউল ঠিক রেখে ব্যবসা চালানো যায় না। আর এটা তো ফার্স্ট টাইম না। আমি চাই না তুমি এই নিয়ে আমার সাথে আর কোনো কথা বলো। এসব জিনিস আমাকে সামলাতে দাও। শফিক ফোন করলে বলে দিও, ওর শাশুড়ির কথায় যেহেতু রয়ে গেছে, শাশুড়িই যেন নতুন চাকরি ঠিক করে দেয়।
আসিফ চা আর ঝালমুড়ি শেষ না করেই উঠে পড়ে। সোনালী আর কথা বাড়ায় না। এভাবে হবে না। অন্য পথে যেতে হবে। আসিফের রাগের কারণ নিয়ে তার কোনো দ্বিধা নেই, কিন্তু রাগের তীব্রতা নিয়ে সে একমত হতে পারে না। সত্যিই লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে না। কিছু একটা করতে হবে।
কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে সোনালী অন্য প্রসঙ্গে গল্প শুরু করে। কোভিড চলে গেলে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে। ইউরোপে গেলে কেমন হয়? ইউরোপে বেড়ানো হয়েছে ওদের বহুবার। তবু ইউরোপ কখনো পুরনো হয় না। আসিফকে তখন একটু রিলাক্সড মনে হয়। বেড়াতে যাওয়া বা এই নিয়ে আলাপ করা তার প্রিয় একটা টপিক। সোনালী পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে জিব্রালটার প্রস্তাব করে। আসিফ যোগ করে, তাহলে একইসঙ্গে মরক্কো, মৌরিতানিয়া আর স্পেন ইনক্লুড করে নিতে। সবই তো কাছাকাছি।
ডিল! ছয় মাস ধরে ঘরে বসে থাকতে থাকতে শেকড় গজিয়ে যাচ্ছে। এখন ভালোয় ভালোয় করোনা বিদায় হলেই হয়। না হলে অন্তত ভ্যাক্সিন তো আসুক। রাশিয়ান, চাইনিজ, ইণ্ডিয়ান, কিছু একটা হলেই হলো। অক্সফোর্ডেরটা হলে তো কথাই নেই।
গুমোট পরিবেশ অনেকটাই কেটে গেছে। সোনালী তার নেক্সট মুভ ঠিক করে ফেলে।
-যা গরম পড়েছে! আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। তারপর ডিনার সেরে চলো একটা মুভি দেখি আজ। কতদিন মুভি দেখা হয় না।
-বাহ! মেজাজ বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছে? তা কোনটা দেখবে?
-দেখি নেট থেকে খুঁজে নেবো একটা। ‘চারুলতা ২০১১’ দেখতে পারি।
-ইন্টারেস্টিং?
-দেখলেই বুঝবে। আগেভাগে বলা যাবে না।
সোনালী তার টোলপড়া গালে রহস্যের হাসির ঝিলিক দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। বের হয় অনেকক্ষণ পর। গায়ে জংলি ছাপের একটা ম্যাক্সি। হাল্কা সাজ নিয়েছে। গায়ে মেখে নেয় আসিফের প্রিয় পারফিউম বারবেরি ব্ল্যাক। এবারের এনিভার্সারিতে গিফট পেয়েছে। করোনার কারণে কোথাও বের হওয়া হয়নি তেমন। ব্যবহারও করা হয়নি। আজই উদ্বোধন। লো-স্পিড ফ্যানের বাতাসে বারবেরি ব্ল্যাকের ঘ্রাণ ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। আসিফ এখন আরও বেশি রিলাক্সড।
সিক্সথ সেন্স সম্পর্কে ফাতেমার কোনো ধারণা না থাকলেও ওর অচেনা সিক্সথ সেন্সের মধ্যেই সোনালীকে পড়ে ফেলেছে।
ডিনার সেরে দু’জন ‘চারুলতা ২০১১’ ছবিটা দেখে। বেশ টেম্পটিং একটা ছবি। বিছানায় গিয়ে আসিফ টের পায় সোনালীর ফার্স্ট মুভ। আসিফের তিন সপ্তাহের ডিপ্রাইভেশনের রাগ মিটে গেলেও অভিমান ঝুলে ছিল অনেকটাই। সে প্রথম মুভ নেবে না, এটা তার ইগো। বউ প্রথম মুভ নিলে আসিফ তা খুব উপভোগ করে। এটা সোনালীর পুরনো আবিষ্কার। তা ছাড়া আসিফের অভিমানও সে বুঝতে পারে। সেইসঙ্গে অন্য এজেন্ডা তো আছেই। সব কিছু মিলে সোনালী নিজেকে বেপরোয়া করে তোলে। ওরা নিজেদের নতুনভাবে উন্মোচন করে। আসিফ ডুবে যায় সোনালীর অতলে।
ভোর বেলায় আসিফের ঘুম ভাঙে সোনালীর খুনসুটিতে। ওরা আবারও পরস্পরের অতলে ডুবতে ডুবতে আনন্দের চূড়ায় ওঠে। আসিফের অভিমান সব বরফ গলার মতো গলতে থাকে। সোনালী গলে মোমের মতো। রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে সে আসিফের বুকে মাথা রাখে।
-খুশি এখন? কী অভিমানটাই না করেছিলে!
-হুম! আমাদের অবস্থা তো এখন পুরনো দিনের মফস্বলের সাপ্তাহিক পত্রিকার মতো। হাসতে হাসতে বলে আসিফ।
-কেমন?
-মনে নেই? ছোটবেলায় জেলা শহরগুলো থেকে যে সব সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হতো সেগুলো প্রায়ই দুই তিন সংখ্যা পর পর প্রকাশনায় গ্যাপ পড়তো। বিজ্ঞাপন নেই কিংবা ছাপানোর কাগজ কেনার টাকা নেই কিংবা কম্পোজিটর অসুস্থ। এ সব কত কারণই না ছিল।
-হা হা হা। খোটা দিচ্ছ? খালি নিজের কথা ভাবলে চলে? তবে তোমার উপমাটা কিন্তু ব্রিলিয়ান্ট হয়েছে। সে সব পত্রিকায় কিন্তু মাঝে মাঝে বোনাস হিসেবে আজকের মতো ক্রোড়পত্রও প্রকাশিত হতো। তাই না?
-ক্রোড়পত্র?
-তা নয় তো আবার কী? চার পাতার পত্রিকা আট পৃষ্ঠা হলে অতিরিক্ত পৃষ্ঠাগুলো তো ক্রোড়পত্রই, না কি?
সোনালী আদর করে আসিফের নাক টিপে দেয়। আসিফ উপমাটা বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর দু’জনেই। ওদের হাসি বাধ মানে না। সোনালী এবারে নেক্সট মুভে যায়।
-খুশি কি না, তা তো বললে না?
আসিফ কিছু বলে না। শুধু আলতো করে সোনালীর ঠোঁটে চুমে খায়।
-তুমি শফিককে মাফ করে দাও। ওদের কি এক-আধটু স্বাদ-আহ্লাদ থাকতে নেই? হোয়াট ইজ গুড ফর গুজ ইজ গুড ফর গেন্ডার।
এবারে আসিফ রাগ করে না। হাসতে হাসতে বলে—ওই শয়তানটার জন্য তোমার এত মায়া? আমার ব্যবসার বারোটা বাজাচ্ছিল। আগেও তো এমন করেছে।
মায়া ওর জন্য না, ওর বউয়ের জন্য। তুমি না হয় একদিন উবারেই চলাফেরা করেছ। এরচেয়ে বেশি কিছু তো হয়নি। আর বিয়ের পর তো এই প্রথম এমন করলো। আগেরগুলোর সাথে এটা মিলিও না প্লিজ!
-ওদের তো পরপর দুই রাত চান্স দিয়েছিলাম। তাতেও সাধ মেটেনি। হা হা হা।
-চান্স নিতে পারেনি। ঝামেলা ছিল। সে জন্যই তো।
-মানে কী? তুমি কোত্থেকে জানো?
-তোমার অতো মানে জানতে হবে না। বলেছিলাম না, ওর বউ ফোন করে অনেক কাকুতি মিনতি করেছে। সব কিছু জানতে হয় না, অনেক কিছু বুঝে নিতে হয়।
আসিফ আর কথা বাড়ায় না। শফিকের ওপর ওর সব রাগ কর্পূরের মতো উবে যায়। একটু পর আলো ফুটে উঠবে। শফিককে নিয়ে আলাপ করে নষ্ট করার মতো সময় ওর হাতে নেই। তার চেয়ে নতুন ক্রোড়পত্রের পাণ্ডুলিপিতে মন দেওয়ার কথা ভাবে। সোনালী বলে, এই! সকাল হয়ে গেছে কিন্তু…
ততক্ষণে ফাতেমার অতল থেকে সাঁতরে উঠেছে শফিক। আরেকবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ফাতেমা বাধ সাধে। আজ দেরি করা ঠিক হবে না। ও জানে, ম্যাডাম চাইলেই স্যারকে রাজি করাতে পারবে। সিক্সথ সেন্স সম্পর্কে ফাতেমার কোনো ধারণা না থাকলেও ওর অচেনা সিক্সথ সেন্স ইতোমধ্যেই সোনালীকে পড়ে ফেলেছে।