কাগজপত্র সব সাথে রাখছো?
ম্যাসেঞ্জারে বৃষ্টির বার্তা। মতিঝিলের মতো ব্যস্ততম এলাকার বহুতল ভবনে গ্রুপ অব কোম্পানির অফিসে বসে এসিতেও ঘামছি আমি। পাশের সিটে বারকয়েক তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকাই। নাহ, স্পষ্ট মনে আছে সকালে হোটেল থেকে নাস্তা সেরে বেরুনোর সময় খামটা সঙ্গে নিয়েছি। খামে যাবতীয় দরকারি কাগজ। জীবনের আয়ু খেয়ে, লম্বা সেশনজটের একাডেমিক বছরগুলোর পরীক্ষা নামক দানবের মুখোমুখি হয়ে এসব কাগজ আনতে হয়েছে নিরক্ষর পিতার সন্তানের হাতে। গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি আবার নানাপদের বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি। গেলো বছর থেকে বারকয়েক তার দরবারে হাজিরা দিয়েছি ভাইয়াসহ, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে। প্রতিবারই তিনি হাসিমুখে আশ্বাসের বাণীটি শুনিয়ে দুপুরে ভালোমন্দ খাইয়ে বিদায় দিয়েছেন। সামনের মাসে, আগামী সপ্তাহে, এক্ষুণি, এমনতর কথাবার্তা শোনার পরেও আমি স্থির থাকি। স্বভাবগুণে নয়, ভাইয়ার চেহারার দিকে তাকিয়ে। আসার আগে ব্যাগ নাও, সনদপত্র সাথে নাও, তার ওপর ব্ল্যাকে রেলের টিকিট নাও; ইত্যাদি ঝক্কির পর ঘুম-আধঘুমের চাদরে চড়ে ঢাকার ইয়া বড় রেলস্টেশনে যখন নামি, তখন শরীরে তেমন থাকে না শক্তির বালাই। তবু হাসি-হাসি মুখ করে থাকি এই ভেবে, এবার বুঝি চাটগাঁর টিকিট কেনার আগে মা-বাবাকে শুভসংবাদটা শোনাতে পারবো! মনেমনে প্ল্যান করি, যাত্রাবিরতিকালে কুমিল্লা থেকে কিনে নেব কয়েক কেজি রসমালাই, মায়ের মুখে তুলে দিয়ে বলব, তোমাদের বেকুবটা এবার কাজের কাজ এক্কান করলো! তা হয় না, অনেকের মতে, কপাল-কারণে হয় না, প্ল্যানগুলো নীরবে যন্ত্রণা দিতে থাকে সিনার ভেতর, সেই আগুন কখনো বা মাথায় এসে যায়! চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা শহরে এসেছি আমি, ভাইয়া, আরেকজন ভাইয়ার আত্মীয়। আরেকজন, যিনি তার দৃশ্যমান কাজ তেমন নেই, রাজনীতি করেন; ফলে আরেকজনের কাঁধে ঢাকা সফর তিনি যতটা উপভোগ করেন, আমি তার নব্বই ডিগ্রি উল্টো। এক প্রকার না-পারাতে আসার মতো ব্যাপারে ঝুলে আছি আমি, আমার বেকারত্বের পেণ্ডুলাম। ভাইয়া ও সহযাত্রী গেছেন ভাইয়ার কাজে, তাদের ব্যবসায়িক কেন্দ্রে। যাওয়ার সময় আমাকে বলে যান, স্যার আসলে কল দিবা, চলে আসবো আমরা। বড়লোক স্যারদের এ-এক দোষ; টাইম দিয়ে মানুষকে বসিয়ে রাখতে আনন্দ পান। তাদের সামাজিক ও অবস্থানগত গুরুত্ব হয়তো বাড়ে তাতে, কিন্তু অপেক্ষার প্রহর কত ভয়ঙ্কর তা কি একবারও ভাবেন? নাকি তাদের উত্থানপর্বে পোড়খাওয়ার প্রতিশোধ নিতে চান চাকরি বা সুবিধা প্রত্যাশিতদের কাঁধে ভর করে? আল্লাহই মালুম!
ভাইয়ারা লিফটে নামার পরে রিসেপসনে থাকা মহিলাকে স্যার কবে আসবেন জিজ্ঞেস করতেই, কেমন ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে। বেচারি হয়তো আমার চেহারায় খেলতে থাকা ভাষাটি পড়ছে। একটা কর্পোরেট-হাসি দিয়ে চমৎকার উচ্চারণে বলে, বসুন, স্যার আসতে একটু লেট হতে পারে। এমন বাক্য সেই সকাল থেকে শুনে আসছি, স্যারের ছায়াটাও দেখিনি এখন পর্যন্ত। সকালের নাস্তা সম্ভবত পেটমহাশয় হজম করে দিয়েছে; ক্ষণে ক্ষণে তাড়া দিচ্ছে, কিছু দাও! তা নাহয় মানা যায়। সকালের ক্ষিদে নিয়ে রাতে খাওয়াটা ব্যাচেলরদের ঐতিহাসিক অভ্যেসও বটে। পরানফাটা তৃঞ্চাকে রক্ষা করব কিভাবে! স্যার আসবেন আসুক। সঙ্গে রাখা ফাইলটা হাতে নিয়ে নেমে যাই লিফট ধরে। মতিঝিলের বিশাল বিশাল ভবনের সাইনবোর্ডে খেয়াল করে এগুতে থাকি সামনের দিকে। অফিসটাতে বেশ কয়েকবার এলেও একবার কী এক নাগরিক ভূতের পাল্লায় পড়ে আমি আর ভাইয়া ঘুরতে থাকি মতিঝিল। হারিয়ে ফেলি উদ্দিষ্ট অফিসের ঠিকানা! অফিসপাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে ঘামেরা আমাদের ইস্ত্রি করা জামা নষ্ট করে খানিক ক্লান্ত হয়ে মনকে বলি, সকালের হাঁটাটা হলো আর কি! অথচ আমার চোখ বলে, ওই তো, ভৌতিক স্মৃতি স্মরণে রেখে সামনে পা দেই। একবার বেখেয়াল হলেই ভাইয়া সুযোগ নেবে, বলছি না তোমাকে অফিসে বসতে! অফিসপাড়ায় রোদ বাড়িয়ে দেয় তৃঞ্চার দাবি, সমানে হাঁটতে থাকি দূরের ভ্যানঅলার দিকে। ভ্যানে নাদুসনুদুস সব ডাব। সবুজ রঙের প্রতি দুর্বলতা বরাবরই আমার; ডাবেরা কেমন ডাকতে থাকে রঙের দৃঢ়তায়। আর সব জীবাণু ভরা খাবার খাই, অন্তত পানিটা! সেই উছিলায় ভ্যানঅলাকে ডাবের দাম জিজ্ঞেস করি। আরও জনাচারেক লোক ডাবের পানিতে তৃঞ্চা মেটানোর পর শক্তের দিকে হাঁটতে যাওয়া নারিকেলে ক্ষিদের অপবাদটা দূর করছে। দরদাম করে ডাবে নল ঢুকিয়ে পানি টানি মনের সুখে। যেনবা অমৃতপানের সুখ! একপলকে ডানেবামে তাকাই। ডানে ডাবঅলা ধারালো বটিতে ডাব কেটে দিচ্ছে ক্রেতাদের। বামে একজন ক্রেতা, মাঝবয়েসী, চেয়ে আছে ডাবঅলার দিকে। বটিতে কাটতে থাকা এবারের ডাবটি তারই ফরমায়েশে। কাঁচপাকা বাসি তার দাড়ি তার মুখে। হাতে ব্যাগ। অনেকটা নিরীহ গোছের চেহারা। ডাবে বেশ পানি, আমার দরকারেরও বেশি। কেনা জিনিস কে নষ্ট করে? দম বাড়িয়ে দিয়ে টানতে থাকি ডাবের পানি; আড়চোখে তাকাই বামের জনকে। বেচারার কেনা ডাবে পানি বেশি হয়নি, অতৃপ্তির ছাপ চেহারায়; হয়তো কম দামের ডাব চয়েজ করেছে।
কেটে দাও তো, ভদ্রলোকটি তাড়া দেয় ডাব বিক্রেতাকে।
বটি দিয়ে এক কোপে ডাবটি দুই ভাগ করে দু’জনেই প্রায় অবাক, নারেকেল বাঁধেনি!
ধুর, ভদ্রলোকটির এক টুকরো দীর্ঘশ্বাস।
আমি চোখের ইশারায় আমার ডাবটি কাটতে বলি ডাবঅলাকে। ডাবটি দুই ভাগ করলে দেখি প্রায় ভালোই নারিকেল বেঁধেছে। ডাবে এরকম নারকেল, মানে একের ভেতর দুই আমরা প্রায়ই আগ্রাবাদে খাই হায়দার ভাইসহ। নগর ঢাকায়, মতিঝিলে হায়দার ভাইরে পাবো কোথাই! কেমন যেন মিস করতে থাকি ভাইকে। বামের জন ততক্ষণে ক্ষীণপায়ে হাঁটা শুরু করছে। গতি বাড়ানোর আগেই আমি ডাক পাড়ি, ভাইজান, ও ভাইজান! তিনি পেছন ফিরতে ইশারা করি, এদিকে আসুন।
ডাবঅলা খুব সুন্দর করে দুই ফালা করে আমার হাতে তুলে দেয় ডাবের দুইটি ভাগ। ভদ্রলোকটিকে আমি আবদার করি, খান ভাইজান। তিনি প্রথমে ইতস্তত করেন, হয়তো নগর ঢাকার অতি নাগরিকতায় তিনি অভ্যস্থ। সারা দেশের লোক এখানে আসে নানা কাজে। কত জনের কত দিকে ধান্ধা। প্রতারণাও তো কম না। অন্তত কাগজের পাতায় তেমনটি হরহামেশাই দেখা যায়। অপরিচিত কাউকে ডেকে খাওয়ানো দূরে থাক পরিচিতজন থেকেও দূরত্ব বজায় রাখে। ফোনে বেশ আন্তরিক, বাস্তবে তার উল্টো। স্বার্থ না থাকলে পাশে বসবে কেন; কথা বলবে কেন ইত্যাদিতে ভুগতে থাকা সময়ে লোকটি আমার ডাককে অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি হিসেবে ভাবতে থাকে; তার চোখে তা-ই আন্দাজ করি। আরে না, এত বড় ডাব-নারিকেল কেমনে খাই বলুন তো? নিন, আমিই তার হাতে একটু টুকরো নারকেল তুলে দেই। দুইজনে আলাপ জমে ওঠে বেশ। তার বাড়ি গাইবান্ধা। পেশায় চাকরিজীবী। অফিস ফকিরাপুল। অফিসের কাজে মতিঝিল আসা তার, ইত্যাদি। আমিও পরিচয়ে বলি হাবিজাবি। নিজেকে ঢাকার হোমড়া দেখাতে তাকে আরেক দফা বলি, ওই যে দেখছেন না টাওয়ারটা, ওটা অমুক ব্যাংকের হেড অফিস; ওটারই বড়কর্তা আমার বড়ভাই। তার আবার চট্টগ্রামে বড় ব্যবসা আছে, ওটা আমি দেখি। একটু বের হলাম, এসিতে কেমন অস্বস্থি লাগছে, সর্দিভাব তো। বিল মিটিয়ে প্রায় দ্রুত আমি ফিরে আসি গ্রুপ অব কোম্পানির অফিসে, সাইনবোর্ড ধরে। আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিসেপশনের মহিলাটি আমাকে বলেন, স্যার এসেছেন, বসুন!
খুশিতে ঢোক গিলি আমি। এবার বুঝি চাকরিটা হয়েই গেলো! স্যারের কথা এবার বিফলে যাবে না, কত বড় অফিস, কত লোক আসে সমস্যা সমাধানের জন্যে। স্যারের চেহারা ভেবে ভেবে কিছুটা রোমান্সিত হতে থাকি, আহা, এ যুগের ফেরেশতা তিনি! এত লোকের কথা যে শোনেন, যে দিতে পারে সোনার হরিণ, তাকে কে না শ্রদ্ধা করে? ভাইয়াকে স্যার আবার বেশ স্নেহ করেন। হাজার হোক স্যারের বড় ব্যবসায়িক পার্টনার ভাইয়া। ভাইয়াকে কল দিতে যাব, তার আগেই বৃষ্টির ম্যাসেজ। একসঙ্গে পড়েছি এসএসসি পর্যন্ত, বেশ ভালো রেজাল্ট করেছিল সে। বিয়ে-থা করে এখন বৃষ্টি দুই সন্তানের জননী। আমার খবর এখনো রাখে নিয়মিত। বন্ধুত্বের খাতিরে সম্বোধনে তুইতোকারি হয়, রোমন্থন করে গ্রামে ফেলে আসা দিনগুলো। আমি কোথাও গেলে ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করলে সঠিক তথ্যটাই দেই। সে-ও বিশেষ চিন্তিত আমার বেকারত্ব নিয়ে। যুক্তি দিয়ে বলে, ধৈর্য ধরো, সবুরে মেওয়া ফলে। মাথা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে। না, খামটি নেই! গেল কই? ডাবঅলার কাছে রেখে এসেছি নিশ্চিত।
প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির হই ডাবঅলার ভ্যানের কাছে। আমার দিকে একপলক তাকায় সে। ‘মামা, আমার খামটি…’—আমার কথা পুরোপুরি ধরে নিয়ে সে বলতে থাকে, খামটা তো আপনার লগের লোকটা নিয়া গেছে। আপনেরা একলগে ডাব খাইলেন। ভাবছি চেনাজানা লোক। এই বিপদে আমার কেমন যেন হাসি পায়। রাতুলকে মনে পড়ে ঠাস করে! রাতুল আমাদের পাশের বাসার ভাড়াটিয়া করিম ভাইয়ের ছোটভাই। বয়সের কারণে হয়তো করিম ভাইয়ের সাথে আমার কেমন বন্ধু-বন্ধু সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাতুল বাপমরা ছেলে, বড় ভাইয়ের বকায় বয়সের দোষে টুপ করে কাউকে না জানিয়ে চেপে বসে ঢাকার বাসে। ব্যস, করিম ভাইও ভাবলেন, টুকটাক ইনকাম যেহেতু করে, কোথাও গেছে হয়তো, পকেটে টান পড়লে ফিরে আসবে। রাতুলের পকেটে টান পড়ে না প্রায় চারদিন, করিম ভাইয়ের কাছে ফোন আসে পাঁচ দিনের মাথায়। ভাইয়া, আমি রাতুল, কথা বলেন। কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে আরেকজনের কানে যায় মোবাইলফোনটি। করিম ভাইয়ের মনে তখন আরেক বেদিশা ভাবনা। কী হতে গিয়ে কী হলো! ভাইটি আমার কোন বিপদে পড়লো আবার! ভরাট পুরুষকণ্ঠটি ও প্রান্ত থেকে বলে, ভাইজান নিশ্চয়ই ভালো আছেন, আপনার ছোটভাই রাতুল আমাদের কাছে আছে কিন্তু।—একটানা শোনার পর করিম ভাই অস্থির হয়ে যায়। মায়ের পেটের ভাইয়ের বিপদে কেউ কি নীরব থাকতে পারে? করিম ভাই বলেন, কিন্তু কী? না, সকালে আপনার মামাসহ রাতুল সাইকেল কিনতে এসেছিল আমাদের দোকানে। আপনার মামা সাইকেল নিয়ে গেছে সেই সকালে, এখনো ফিরে আসেনি—ওপ্রান্তের লোকটি বলে। করিম নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না যেন, দ্বিধামাখা কণ্ঠে বলে, আপনাদের সাইকেলের দোকান কোথাই? ঢাকায় তো কোনো মামা নাই আমার! ওদিকের লোকটি বিরক্ত হয় বোঝা যায়, আপনার মামা নাই ভালো কথা, রাতুলকে কে এনেছে আমাদের দোকানে? আপনার মামা না হলে রাতুল তার সাথে আসবে কেন? আপনার মামাই বলে গেলো, ভাগিনারে রেখে গেলাম, আপনাদের সাইকেলের বাকি টাকাটা নিয়ে আসছি একটু পরে। এই রাখেন কিছু টাকা। যতই শোনে ততই অবাক হয় করিম ভাই। তবে কার হাতে পরলো আমার ভাই, আহা, আমার একমাত্র ছোটভাই রাতুল! করিম ভাইয়ের ভাবনায় ভয় ও উৎকণ্ঠা। কিছুটা সাহস করে বলে, আপনার পাওনা কত টাকা? ছয় হাজার টাকা, লোকটির উত্তর। আপনার বিকাশে সাত হাজার টাকাই দিচ্ছি ভাই, আপনার টাকাটা রেখে, বাকি টাকায় রাতুলকে টিকিট কেটে চট্টগ্রামের বাসে তুলে দেবেন দয়া করে। আমার ভাই, আপনারও ভাই, প্লিজ এই উপকারটা করেন ভাই। ওদিকে রাতুল কাঁদছে ফাঁদে পড়ে, এদিকে করিম কাঁদছে ভাইকে ফিরে পাওয়ার আকুতিতে। দোকানদার ঘটনা বুঝতে পেরে করিম ভাইকে বলে, বিকাশ নাম্বার নেন ভাই, চিন্তা করবেন না, আপনার ভাইকে আমিই তুলে দিচ্ছি গাড়িতে। ঢাকা আসলে আমার দোকানে আসবেন। সহিসালামতে রাতুল চট্টগ্রামের বাসায় ফিরে আসার পর জানায়, ঢাকাবাসের চারদিনের দিনমান সময়ে সে মুখ কালো করে বসে ছিল সুপ্রিম কোর্ট এলাকায়। দুই ভদ্রলোক তার কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য নিয়ে বলে, চলো ভাগিনা, তোমাকে বাস কাউন্টারে দিয়ে আসি। সেই মামাদের সঙ্গে সাইকেল দোকানে আসা রাতুলের! রাতুল কিছু শিখছে হয়তো এই ঘটনায়, এর পর থেকে মন দিয়ে মেকানিকের কাজ শিখেছে, করিম ভাই উঠেপড়ে লাগছে ভাইকে বিয়ে দিতে। করিম ভাইকে নিয়ে আড্ডায় বসলে কতবার এই গল্প সে করেছে, রাতুলের গল্প বারবার শোনার পর ঢাকা সম্পর্কে কেমন একটা চিত্র আমার মনে তৈরি হতে থাকে। এই দুপুরবেলায়, ব্যস্ততম মতিঝিলে আমার স্মৃতিতে ফিরে আসে রাতুল। কাকে কী বলবো আমি! হুহু করে কাঁদবো, সে পরিস্থিতিও নেই। ওপারের উঁচু বিল্ডিংটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে তার সবটুকু জৌলুস নিয়ে—যেটা দেখিয়ে ভদ্রলোকটিকে বলেছিলাম, আমার ভাই ওই ব্যাংকের বড়কর্তা। মোবাইল বেজে ওঠে তখন, ভাইয়ার ফোন—তুমি চলে এসো হোটেলে। স্যার আজ আর আসবে না অফিসে। চট করে কেটে যায় ফোনের সংযোগ। আমি শুনে এলাম, স্যার অফিসে এসেছেন! এখন স্যারই জানিয়েছেন, তিনি অফিসে নেই!
ভালোই হয়েছে, স্যার অফিসে থেকেও মিথ্যে বলেছেন। না দিলে তো জোর নাই বাপ! চাটগাঁ থেকে ঢাকায় এনে এমন অপমানের কোন মানে হয়? পড়ালেখা তো ধান দিয়ে করিনি! সনদের অপমান করার অধিকার কি কেবল বড়সাহেবদের দেয় আল্লাহমিয়া? তা তাদের থাক। দায়গ্রস্ত সনদের কপিগুলো দামি জিনিস ভেবে নিয়ে গেলো আমারই সরলতায় ডাব-নারিকেল খাওয়া ভদ্রলোকটি!
তা-ই ভালো। ম্যাচের আগুন পাব কই, আমি তো আর সিগারেট খাই না! অন্তত ভাইয়ার সামনে পোড়াতে হয়নি সনদগুলো!