কবে থেকে যে পাড়ার লোকেরা আমাদের বাসাকে কাক-কোকিলের বাসা নাম দিয়েছিল মনে নেই। তবে, প্রেয়তির মাকেই প্রথম প্রেয়তিকে বকা দিয়ে বলতে শুনেছিলাম, কাক-কোকিলের বাসার মেয়ে তোমার কাছে এত ঘনঘন আসে কেন? ওর সাথে ঘোরাঘুরি একটু কমাও।
আমি কলিংবেল বাজাতেই শুনলাম খালাম্মা প্রিয়তিকে কাক-কোকিলের বাসা, কাক-কোকিলের বাসা বলে কী সব বলাবলি করছেন। দরজাটা খালাম্মাই খুললেন। আমাকে দেখে কেমন যেন একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। আমি ভেতরে আসতেই খালাম্মা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। একটু পর ডাইনিং টেবিলে দুপুরের খাবার সাজিয়ে আমাকে আর প্রেয়তিকে খেতে দিলেন। টেবিলে চোখ পড়তেই দেখি গরম ধূমায়িত ভাত, ঘন ডাল, লালশাক ভাজি আর টমেটো দিয়ে রুইমাছের ঝোল। খাবারগুলো দেখে আমার চোখ লোভে চকচক করে উঠলো। খিদায় তখন আমার হাত-পা কাঁপছে। খালাম্মা বলার আগেই আমি গিয়ে টেবিলে বসে গোগ্রাসে খেতে শুরু করি। সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় আমার আম্মা ঘুমিয়ে থাকে। স্কুল ছুটির পর বাসায় এসে দেখি সেভাবেই রুম অন্ধকার করে মশারি টাঙিয়ে আম্মা ঘুমাচ্ছে। আম্মা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন কেউ মরে গেলেও তাকে ডাকা নিষেধ। কোনো রকম আওয়াজ বা জোরে কথা বলাও যায় না। কখনো যদি অসাবধানে কোনো শব্দ হয়, আর আম্মার ঘুম ভেঙে যায়, সেদিন বাসায় সাইক্লোন বয়ে যায়। অবশ্য কোনো কারণ ছাড়াও বাসায় প্রায়শই কোনো না কোনো সাইক্লোন বয়ে যায়। সে কারণেই আশেপাশের লোকজন আমাদের বাসাকে কাক-কোকিলের বাসা বলে ডাকে।
আব্বা অফিস থেকে ফেরার সময় ব্যাগ বোঝাই করে বাজার নিয়ে আসে। সেসব বাজার-সদাই ওভাবেই ব্যাগের ভেতর পড়ে পড়ে পচতে থাকে। আমাদের আম্মার রান্না করতে, ঘর গোছাতে বা বাসায় কোনো কাজ করতে কিছুই তার কখনো ভালো লাগে না। তিনি দিনরাত শুয়ে থাকেন। তার সারারাত ঘুম হয় না। তাই তিনি সারাদিন শুয়ে থেকে সন্ধ্যার দিকে উঠে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে বাড়িঘর মাথায় তোলেন। তার প্রধান শত্রু হচ্ছি আমরা তার চার ভাইবোন। মানে তার নিজেরই চার সন্তান। বাসায় আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। আমরা যেকোনো কিছু রান্না করে খাবো সেই পারমিশনও নেই। আমরা কোনো খাবারে হাত দিয়েছি বুঝতে পারলেই তিনি তেড়ে মারতে আসেন। চিৎকার করে গালাগালি করে পাড়া মাথায় তুলে চিৎকার করতে থাকেন—এটা তার সংসার, আমরা যা করতে চাই, সেটা যেন নিজের সংসারে গিয়ে করি। তার ধারণা আমাদের দুবোনের কখনো বিয়ে হবে না। কারণ আমরা সুন্দরী নই। আমরা কালো আর আমাদের বাবার ঘুষের টাকা নেই, তাই আমাদের বেশ্যাগিরি করে খেতে হবে, বস্তির লোকের সঙ্গে আমাদের বিয়ে হবে।
যাই হোক তার শুয়ে থাকার সময়টুকু ছাড়া তার একমাত্র বিনোদন ছেলেমেয়েদের পেছনে লেগে থেকে তাদের জীবন হারাম করে দেওয়া।
এভাবে একটি অসুস্থ পরিবেশে অভুক্ত, অর্ধভুক্ত অবস্থায় গালাগালি খেয়ে আমরা চার ভাইবোন বড় হতে থাকি। আমি সংসারের মেঝ মেয়ে, আমার বড় একটি বোন আছে। তারপর আমার পরে ছোট দুই ভাই। আমাদের আব্বা পিডব্লিউডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি কর্মকর্তা। প্রেয়তির বাবা আব্বার কলিগ। তিনিও ইঞ্জিনিয়ার। খালু আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমাদের বাসার এই অসুস্থ পরিবেশের কথা তিনি জেনেও না জানার ভান করেন। কিন্তু খালম্মা আমাকে ডেকে একদিন তাদের বাসায় আর যেন না আসি, সে কথা জানিয়ে দিলেন।
প্রেয়তির বড় ভাই অর্থাৎ পলাশ ভাই কিছুদিন হলো এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ট্যোফেল করছেন। আমি আর প্রেয়তি ক্লাস এইটে পড়ি। পলাশ ভাই আমাকে খুবই পছন্দ করেন। আমিও করি। আমাকে দেখলেই পলাশ ভাই ভীষণ খুশি হন। নানা ধরনের মজার মজার কথা বলে আমাকে হাসাতে থাকেন। প্রেয়তিদের বাসায় গিয়েই যদি প্রথমেই তার রুমে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা না করি, তাহলে পলাশ ভাই খুব ক্ষেপে যান। আমার আর পলাশ ভাইয়ের এই বন্ধুত্ব, এই প্রাণ ঢালা উচ্ছ্বাসপূর্ণ সম্পর্কটি খালাম্মার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। তার একমাত্র ব্রিলিয়ান্ট, হ্যান্ডসাম ছেলের সঙ্গে কাক-কোকিলের বাড়ির মেয়ের এই সুসম্পর্ক তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না। তাই একদিন তিনি আমাকে ডেকে বলে দিলেন, আমি যেন আর কখনো তাদের বাসায় না যাই। একইসেঙ্গ প্রমিস করালেন, যেন একথা কোনোদিন প্রেয়তি আর পলাশ ভাইকে না বলি।
প্রেয়তিদের বাসায় দুদিন না যেতেই স্কুল থেকে আসার পথে পলাশ ভাই আমাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জেরা শুরু করলেন। বারবার জানতে চাইলেন আমি কেন তাদের বাসায় যাচ্ছি না। প্রেয়তিও জানতে চেয়েছিল ওদের বাসায় না যাওয়ার কারণ কিন্তু আমি তো খালাকে কথা দিয়েছিলাম যে, আমি কাউকে কথাটা জানাবো না। ফলে প্রেয়তি আর পলাশ ভাই দুজনই আমাকে ভুল বুঝলো। এই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই পলাশ ভাই পড়াশোনা করতে আমেরিকা চলে গেলো। এরপর আর কখনোই তার সঙ্গে আমার দেখা বা যোগাযোগ হয়নি।
এদিকে আমার আর প্রেয়তির বন্ধুত্ব কিন্তু দিনদিন গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো। আমি ওদের বাসায় যাই না কিন্তু স্কুলে সবাই আমাদের মাণিকজোড় বলে ডাকে। আমাদের যত গোপন কথা, ভাববিনিময়, পরিকল্পনা সব স্কুলকে ঘিরেই চলতে লাগলো। একসঙ্গে স্কুলে যাই, একসঙ্গে ক্লাসে বসি আবার একসঙ্গেই আমরা বাসায় ফিরি।যতক্ষণ একসঙ্গে থাকি শুধু গল্প আর গল্প। এ জীবনে যেন এই গল্প করা আর কখনো ফুরাবে না।
কী সুন্দর পরিবেশ! আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। প্রেয়তির মতো আমার আব্বাও একজন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু আমার আম্মার পাগলামির জন্য আমাদের চার ভাই-বোনের জীবন কেমন তছনছ হয়ে গেলো।
আমরা ক্লাস টেনে ওঠার পরপরই আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে প্রেয়তির প্রেম হয়ে গেলো। আরিফ ভাই তখন বুয়েটের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। তানাদের বাসা গুলশান এক নম্বরে। তিনি পল্লবীতে অর্থাৎ আমাদের বাসা যেখানে, সেখানে এক বন্ধুর সঙ্গে প্রায় দেখা করতে আসতেন। প্রেয়তিকে তিনি স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে দেখেছিলেন। তারপর বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় আর প্রেম। এদিকে আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরপরই এক বান্ধবীর মাধ্যমে প্রবাল নামের এক হিন্দু ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রবাল সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের বাংলার টিচার। একে তো স্কুলের টিচার তার ওপর আবার হিন্দু। ফলে আমরা দুজনেই বুঝতে পারলাম যে, আমাদের সামাজিকভাবে কখনো কোনো সম্পর্ক হবে না। এদিকে, আম্মার পাগলামি আর অত্যাচার দিনদিন বাড়তেই লাগলো। এমন অবস্থায় একদিন সকালে কয়েকটা জামাকাপড় একটা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। প্রবাল সাভারে ক্যান্টনমেন্টের পাশে রাস্তার অন্যদিকের একটি গলিতে ছোট একটা একরুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। পরিচয় হওয়ার পর ওখানে দুই-একবার আমাকে নিয়ে গেছে। তাই বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে গাবতলী গেলাম। তারপর সাভারের বাসে উঠে সরাসরি ওর বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। ও প্রথমে আমাকে এভাবে একেবারে চলে আসতে দেখে খুব ভড়কে গিয়েছিল। কিন্তু পরে ওর স্কুলের দুই কলিগকে সাক্ষী রেখে আমরা কোর্ট ম্যারেজ করি।
প্রবালকে বিয়ে করার পর আমার জীবন একেবারেই বদলে গেলো। আমাদের জীবনে সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু আমরা খুব সুখী ছিলাম। আমি সারাজীবনের মতো আমার মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করলাম। ভাই-বোনদের সঙ্গে কালেভদ্রে যোগাযোগ রাখতাম। আমি সাভারের ক্যান্টনমেন্ট কলেজেই সায়েন্সে ভর্তি হলাম। এইএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম। এবার এইচএসসিতেও ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে গণিতে ভর্তি হলাম।
অনার্স থার্ড ইয়ারে উঠেছি। তখন আমি তিন মাসের প্রেপনেট। একদিন ক্লাস থেকে বের হতেই হঠাৎ দেখলাম আমার বান্ধবী প্রেয়তি আর আরিফ ভাই এসেছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। জীবনে সত্যি এত খুশি কখনো হয়নি। প্রেয়তিকে দেখে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কতক্ষণ কেঁদেছি জানি না। আমার প্রেগনেন্সির খবরে প্রেয়তি মহা খুশি। ওরা গাড়ি নিয়ে এসেছিল তাই আমাকে সঙ্গে নিয়ে অনেক গিফট আর অনেক ধরনের খাবার কিনে আমার বাসায় এলো। এরমধ্যে প্রবালও স্কুল থেকে চলে এসেছে। সবাই মিলে বহুদিন পর একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে আড্ডা দিলাম।
প্রেয়তি ঢাকা মেডিক্যালে থার্ড ইয়ারে পড়ছে শুনে আমি খুব খুশি হলাম। আরিফ ভাই বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করেছে। এখন আমেরিকার টেক্সাসে পিএইচডি করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর দুমাস পরেই ওদের বিয়ে। তারপর আফির ভাই চলে যাবে অ্যামেরিকা আর প্রেয়তি পাস করলে তার কাছে যাবে।
প্রেয়তির বিয়েতে আমি আর প্রবাল লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে কোনো রকমে এক কোণায় গিয়ে বসে খেয়ে চলে এলাম। দূর থেকে পরীর মতো সুন্দর লাগছিল প্রেয়তিকে। ওকে এত অপূর্ব সাজে দেখে আমার বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। কী সুন্দর লাগছে ওকে আর আরিফ ভাইকে। কত চাকচিক্যময় আয়োজন। কত ভালো ভালো মানুষ এসেছে। কী সুন্দর পরিবেশ! আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। প্রেয়তির মতো আমার আব্বাও একজন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু আমার আম্মার পাগলামির জন্য আমাদের চার ভাই-বোনের জীবন কেমন তছনছ হয়ে গেলো।
বিয়ের পরপরই শাশুড়ি আমাকে একটা এক ভরির চেইন আর লকেট দিয়েছিলেন। আর প্রবাল একটা আংটি বানিয়ে দিয়েছিল। আমাদের তো বাড়তি টাকা-পয়সা নেই। তাই ওগুলো একটা স্যাক্রার দোকানে বন্ধক রেখে ইংরেজির অক্ষরের পি দিয়ে একটি গলার লকেট বানিয়ে প্রেয়তিকে চুপিচুপি এক ফাঁকে গিয়ে দিয়ে এসেছি। আমার নাম প্রিয়া আর ওর নাম প্রেয়তি। তাই পি অক্ষর দিয়েই লকেট বানালাম। লকেটটা পেয়ে ও ভীষণ খুশি হয়েছিল। পরে দেখেছি, সবসময় ও সেই লকেটটি পরে থাকতো।
আরিফ ভাই আমেরিকা চলে গেলো। প্রেয়তিও ডাক্তারি পাস করে আরিফ ভাইয়ের কাছে চলে গেলো। আমিও পাস করে ক্যান্টনমেন্ট কলেজে গণিত পড়াই। আমার বড় মেয়ে পিয়ালির বয়স এখন আট বছর। ও ক্লাস থ্রিতে পড়ে। প্রেয়তি প্রায় ফোন করে। প্রতিমাসে ওর চিঠি পাই। পিয়ালির জন্মের পর আমরা একটি দুই রুমের বড় বাসা ভাড়া নিয়েছি। ওখানে টিঅ্যান্ডটির ল্যান্ড ফোনের কানেকশনও নিয়েছি। একদিন প্রেয়তি ফোন করে জানালো যে, ও এক্সপেক্ট করছে। তখন ওর তিন মাস চলছে। কথাটা শুনে আমি খুশিতে চিৎকার করে উঠলাম। আমারও একই অবস্থা। আমিও দুইমাসের প্রেগন্যান্ট। আমার কথা শুনে প্রেয়তি খুশিতে পাগল হয়ে গেলো।
বারবার বলতে লাগলো, আমাদের দুজনেরই এবার ছেলে হবে দেখিস। আর আমি কিন্তু ওদের নাম রাখবো। তুই কোনো মাতব্বরি করবি না কিন্তু!
—রাখিস বাবা। আমি কি তোকে নাম রাখতে মানা করেছি? আমার বাচ্চা মানে তো তোরই বাচ্চা। তুই-ই তো নাম রাখবি।
প্রেয়তিকে আমেরিকায় যাওয়ার পর বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল। ওখানে গিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আরও দুবছর দিনরাত পড়াশোনা করে একটা পরীক্ষায় পাস করে প্রেয়তি ডাক্তারি প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেয়েছিল। তারপর একসময় ও বুঝতে পারলো যে, দেরি হয়ে যাচ্ছে। একটা বাচ্চা নেওয়া দরকার। এরইমধ্যে আরিফ ভাইও বাচ্চা নেওয়ার কথা ওকে বারবার বলছিল। তাই ওরা প্ল্যান করেই বাচ্চাটা নিয়েছে। আমার জীবনের তো কোনো কিছুরই কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কীভাবে বিয়ে করলাম, কেমন কোরে একটা মেয়ে হলো আবার এখন আবারও এক্সপেক্ট করছি। জানি না কপালে কী আছে। এত কিছু ভাবার মতো অবস্থায় আমি কখনোই ছিলাম না। জীবনটা একরকমভাবে কেটে গেলেই আমি খুশি।
প্রেয়তি তো প্রেগন্যান্সি নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত। ওর আর আরিফ ভাইয়ের এসব নিয়ে এক্সাইটেন্টের কোনো শেষ নেই। আর আমাকে সারাক্ষণ নানা প্রশ্ন করে জর্জরিত করে রাখে। যাই হোক সময় মতো প্রেয়তির একটা ফুটফুটে ছেলে হলো। তার একুশ দিন পর আমারও একটা ছেলেই হলো। আশ্চর্য প্রেয়তি বারবার বলতো আমাদের দুজনের একই বয়সী দুটো ছেলে থাকবে। সত্যি হলোও তাই। ওর ছেলের নাম ও রাখলোও শুভ আর আমার ছেলের নাম ধ্রুব।
শুভ আর ধ্রুব দুই ভাই, দুই বন্ধু বড় হতে লাগলো। একজন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ আমেরিকায়। আরেকজন অনুন্নত দেশের সাভার নামক স্থানে। ওরা বড় হতে হতে আমাদের দুজনের মতো ওদেরও এক ধরনের যোগাযোগ আর বন্ধুত্ব হতে লাগলো। আর সেটা ফোন আর ইন্টারনেটের মধ্যেই মূলত সীমাবদ্ধ হয়ে রইলো।
শুভ আর ধ্রুবর বয়স এখন ১০ বছর। এর আগেও একবার প্রেয়তি এসে দেশ থেকে ঘুরে গেছে। এবার ওদের দশ বছর উপলক্ষে এসেছে। প্রেয়তি শুভর জন্য যা কিছু পছন্দজনক জিনিস কেনে একই রকম জিনিস ধ্রুবর জন্যও কেনে। অনেক অনেক জিনিস নিয়ে এবার ধ্রুবর জন্মদিনে প্রেয়তি আর শুভ এসেছে। আমেরিকা যাওয়ার পর প্রথম দিকে আরিফ ভাই শুধু একবার কোনো একটি কাজে দেশে এসেছিল। এরপর আর কখনো আসেনি। আমি যখনই তাকে বাংলাদেশে আসতে বলতাম সে বলতো, আসবো তো! যখন আসবো একেবারেই চলে আসবো বুঝলা? দেশের মাটিতেই আমার কবর দিও কিন্তু। আর যাই হোক থাকি বিদেশে কিন্তু জন্মেছি যে মাটিতে কবরও হবে সে মাটিতেই।
আমার মেয়ে পিয়ালি পড়াশোনার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। ও সবসময় ক্লাসে ফার্স্ট হয়। কিন্তু ধ্রুবকে নিয়ে যত চিন্তা। ওর নেশা হচ্ছে খেলাধুলো করা। হেন খেলা নেই, যাতে তার নেশা নেই। ফুটবল-ক্রিকেট থেকে শুরু করে দুনিয়ার সব খেলার প্রতি ও আসক্ত। পড়াশোনায় লবডঙ্গা কোনো রকমে এসএসসি আর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে আর্মিতে জয়েন করেছে। ওর জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল আর্মি অফিসার হওয়ার, ও তাই হয়েছে।
প্রেয়তি তো কেঁদে কেটে অস্থির কিন্তু শুভ আর আরিফ ভাই দুজনই ডিটারমাইন্ড যে, ছেলে আর্মিতেই যাবে। শুভ এখন আমেরিকান আর্মি অফিসার।
আপনাদের বলে রাখি, এরমধ্যে কিন্তু আমার আরেকটা মেয়ে হয়েছে। শুভ-ধ্রুব যখন ১১ বছরের তখন আমি বুঝতে পারি আমি আবার কন্সিভ করেছি। এবার আর কাউকেই জানাইনি। ছয় সপ্তাহের পর এমআর করতে যাওয়ার দিন শুধু প্রেয়তিকে ফোন করে জানালাম যে, আমার এই অবস্থা। একটু পর গাইনির কাছে যাবো, অ্যাপয়েন্টম্যান্ট নেওয়া আছে। এমআর করতে যাচ্ছি। ও শুনে হাওমাউ করে উঠলো। আমি যেন কিছুতেই এমআর না করাই। আমি ওকে অনেক বুঝালাম।
—দ্যাখ, আমরা তো স্কুল টিচার, তাই না? দুই বাচ্চা নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি। কী করে আবার আরেকটা বাচ্চা নেবো বল? এদিকে পিয়ালিও বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ধ্রুবও সিক্সে পড়ে। ওদের ক্যামন লাগবে এসব শুনলে? তোর প্রবাল দা একটুও রাজি না এই বাচ্চাটা নিতে।
—না না তুই কিছুতেই বাচ্চা নষ্ট করবি না। ওর দায়িত্ব আমার। ওর যা কিছু লাগে আমি করবো। আমি কথা দিচ্ছি ছেলে হোক, মেয়ে হোক আমি ওকে একটা ফ্ল্যাট লিখে দেবো। আব্বার বাসা থেকে তো আমি ৬টা ফ্ল্যাট পেয়েছি। আমার তো একটাই ছেলে আর আমরা তো কখনো হয়তো আর দেশে ফিরব না। একটা তোর বেবিকে লিখে দেবো আর একটা শুধু ভাড়া দিয়ে রেখে এমনিতেই সবগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। আরিফও গুলশানে ওর বাবার বাড়ি থেকে ৪টা ফ্ল্যাট পেয়েছে। শোন, প্লিজ তোর বাচ্চাদের জন্য একদম ভাববি না। পিয়ালি পাস করলে বল ওকে আমেরিকায় এমএস করতে আসতে। আমি ওর সব ব্যবস্থা করবো। তুই একদম চিন্তা করবি না।
—তুই আরেকটা বেবি নিচ্ছিস না কেন প্রেয়তি?
—না রে, তোর আরিফ ভাই একটুও রাজি না। আর এখানে আমরা তো দুজনই কাজ করি। বাচ্চার টেক কেয়ার করা খুব কঠিন। আমাদের শুভই সব। ওর সাথে আমরা কাউকে শেয়ার করতে পারবো না রে। আর বাচ্চার দরকার নেই। আর তোর বাচ্চারাই তো আমার বাচ্চা। আমার পেট থেকেই হতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
প্রেয়তির জোরাজোরিতে আমার মেয়েটা হলো। ওরই ইচ্ছেতেই মেয়ের নাম রাখলাম জুনিয়র প্রেয়তি। জুনিয়র প্রেয়তি এখন ক্লাস টুতে পড়ে। পিয়ালির আমেরিকার সিটিজেন এক ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। সিনিয়র প্রেয়তিই সব ব্যবস্থা করেছে বলতে গেলে। পিয়ালিও প্রথমে টেক্সাসে কিছুদিন থেকে এখন ফ্লোরিডাতে স্যাটলড করেছে। প্রেয়তিও ফ্লোরিডাতেই বাড়ি কিনেছে। ওর ছেলে শুভ অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। ছোটবেলা থেকেই ও স্কেটিং করতো। স্কটল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এমন অনেক দেশেই সে ঘুরতো স্নো বোর্ডিং করার জন্য। ম্যাসিচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি অর্থাৎ এমাইটিতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে ওর ডাক পড়লো আমেরিকান আর্মিতে। প্রেয়তি তো কেঁদে কেটে অস্থির কিন্তু শুভ আর আরিফ ভাই দুজনই ডিটারমাইন্ড যে, ছেলে আর্মিতেই যাবে। শুভ এখন আমেরিকান আর্মি অফিসার। এদিকে আমার ছেলে ধ্রুবও তো বাংলাদেশ আর্মি থেকে অফিসার হয়ে বের হয়েছে। এখন তার রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পোস্টিং হয়েছে।
শুভ এত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হয়েও এমাইটিতে না পড়ে আর্মিতে যাওয়ার ব্যাপারটা আমার আর প্রবালের কিছুতেই পছন্দ হলো না। আমি প্রেয়তিকে ব্যাপারটা অনেকবার বলেছিলাম। প্রেয়তিও আমার কথা শুনে অনেক কান্নাকাটি করেছিল কিন্তু শুভ তো তার নিজের ইচ্ছেতেই আমেরিকান আর্মি অফিসার হয়েছে।
আমেরিকান আর্মি মানেই পৃথিবীর যেখানেই যুদ্ধ হচ্ছে সেখানেই যেতে হবে। শুভকেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকে পাঠানো হলো। এর পর থেকেই প্রেয়তি অনেকটা পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করলো। ডাক্তারি প্র্যাকটিস করা ছেড়ে দিয়ে সারাদিন বাসায় টিভির সামনে বসে থাকে। সারাক্ষণ ছেলের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেই থাকে। আমিও এর মধ্যে স্কুল থেকে রিটায়ার্ড করেছি। বাসায় থেকেই একটা কোচিং সেন্টার চালাই। মাঝেমাঝে ছেলের কাছে যাই। কিছুদিন হলো ধ্রুবর বিয়ে দিয়েছি। এদিকে বড় মেয়ে পিয়ালির দ্বিতীয় বাচ্চা হবে তাই আমাকে ফ্লোরিডাতে যেতে হলো কয়েক মাসের জন্য। প্রেয়তিও যেহেতু ফ্লোরিডাতে থাকে, সেহেতু ওর সঙ্গে ঘনঘন দেখা হয়। ওর মানসিক অবস্থা দেখে আমি খুব চিন্তা হয়। কেমন অস্থির পাগলের মতো করে ও ছেলের জন্য। দিনরাত নামাজ কালাম আর এবাদতে ব্যস্ত হয়ে থাকে। পিয়ালির একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। প্রথমটা ছেলে ছিল। আমিও নাতি-নাতনি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এরমধ্যে একদিন শুনি আরিফ ভাই আর প্রেয়তি হজে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম ভালোই হলো। ওরা ঘুরে আসুক। আমিও তো এখন মেয়ের সংসার সামলাতে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। প্রেয়তিকে সঙ্গ দেয়ারও মতো তো যথেষ্ট সময় পাই না।
ওরা হজে থাকার সময়ই শুনতে পেলাম, শুভ নাকি আইএসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সিরিয়ায় গেছে। প্রেয়তি ফোন করে জানালো কথাটা। আমি খুব মন খারাপ করলাম। এত জিনিয়াস ছেলেটা এমাইটিতে পড়লে এখন কত বড় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতো। আর তা না করে এখন দেশে দেশে যুদ্ধ করে বেড়াচ্ছে।
নাতনিকে কোলে নিয়ে একদিন টেলিভিশন দেখছি আর তখনই দেখলাম আইএসের বোমা হামলায় কয়েকজন ইউএস আর্মির মৃত্যুর খবর। ব্রেকিং নিউজে দেখাচ্ছে। কেন জানি না টিভি বন্ধ করে দিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। পিয়ালি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছিল যে শুভর কিছুই হয়নি। আমি কেন এত চিন্তা করছি। কিন্তু মায়ের মন তো! আমার কেন যেন ভীষণ অস্থির লাগতে লাগলো। মনটা কেমন কু ডাক দিচ্ছিল যেন।
পরের দিনই প্রেয়তি ফোন করলো। পিয়ালির মেয়ের কথা, আমাদের সবার কথা জানতে চাইলো। ওরা সাতদিনের মধ্যেই ফিরে আসবে জানালো। কিন্তু শুভর কথা কিছুই জানে না বললো। আমিও বারবার বললাম কোনো দুশ্চিন্তা করিস না। ফিরে আয় হজ করে।
নিঃশব্দে শুধু ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে ওদের বিশাল পাজেরো জিপে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি প্রবাল আর ছোট্ট প্রেয়তি হাত ধরাধরি করে কতক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, জানি না।
দুদিন পরই শুভর মৃত্যুর খবর কনফার্ম করলো পিয়ালির বর রাফিদ। প্রেয়তি আর আরিফ ভাই হজ থেকে ফিরে এসেছে। শুভর লাশও আমেরিকায় চলে এসেছে। শুভকে নিয়ে আমি, প্রেয়তি আর আরিফ ভাই দেশে ফিরে এলাম। বনানী কবরস্থানে ওর দাদা-দাদির কবরের পাশে ওর কবর দেওয়া হলো। আমেরিকার সরকার অনেক ঝামেলা করেছিল লাশ দেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রেসারে পড়ে বাধ্য হয়েছে দেশে লাশ নিয়ে আসার পারমিশন দিতে।
আমেরিকার পর্ব গুটিয়ে প্রেয়তি আর আরিফ ভাই ওদের গুলশানের বাড়িতে পারমানেন্টলি থাকার জন্যই চলে এসেছে। পরবর্তী তিনমাস ওরা যে কী কী করলো, আমি তার কিছুই জানতে পারলাম না। দিনরাত ফোন করি কেউ রিসিভ করে না। কয়েকদিন বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। দুজনের কেউ কোনো কথা বলে না। অনেক চেষ্টা করেও একবারের জন্যেও ওদের সঙ্গে একটু সহজভাবে কথাবার্তা বলতে পারি না। অনেক চেষ্টা করে খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম, ওরা ওদের সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে আর বেশিরভাগ সম্পত্তিই গরিব আত্মীয় স্বজনকে দান করে দিয়েছে।
এরমধ্যে দেখতে দেখতে তিনমাস কেটে গেলো। একদিন সন্ধ্যায় আমার সাভারের বাড়িতে হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দুজন জীবন্মৃত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখালাম। বেডরুমে এসে আমার বিছানায় বসে প্রেয়তি একটি প্যাকেট আমার হাতে দিলো। ওর বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া একটি ফ্ল্যাটের দলিল। আমার ছোট্ট প্রেয়তির জন্য। সঙ্গে একটা বড় বক্সে করে কয়েক সেট গয়না। এগুলো সব ও ওর শুভর বিয়ের জন্য বানিয়েছিল। শুভ তো নেই। তাই সব গয়না ও আমার ধ্রুবর বউকে দিতে চায়।আমি কী করবো, কী বলবো, কিছুই তো বুঝতে পারছিলাম না। প্রেয়তিকে বুকে নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। কিন্তু ও তো পাথরের মতো বসে রইলো। এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি। ওর এমন আচরণে আমি যেন উন্মাদ হয়ে গেলাম। আমি চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে ওকে ঝাঁকাতে লাগলাম। কী বলবো? কী করবো? শুধু বললাম, আমার কাছে কয়দিন থেকে যা প্রেয়তি। প্লিজ…
বাসায় প্রবাল, আমি, প্রেয়তি, আরিফ ভাই আর জুনিয়র প্রেয়তি মানে আমার ছোট মেয়ে ছিলাম। ছোট প্রেয়তি আন্টি আন্টি করে অনেক কথা বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু একটা বাসায় যখন কিছু মৃত মানুষ পাশাপাশি বসে থাকে তখন আর যাই হোক সেখানে নৈঃশব্দ্যের অধিকার যতটা প্রতিষ্ঠিত হয়, ততটা তো শব্দের ঝঙ্কার হয় না। মনে আছে প্রেয়তি শুধু এক গ্লাস পানি খেয়েছিল আমার ছোট প্রেয়তিকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে ছিল অনেকক্ষণ। আমি আর প্রবাল কত করে বললাম, আজকের রাতটা অন্তত ওরা যেন আমাদের সঙ্গে থেকে যায়। কালকে সকালে আমরা সবাই মিলে ওদের সঙ্গে যাবো। আমি নিজে থেকেই বললাম, আমরা কয়েকদিন তোদের গুলশানের বাসায় থাকতে চাই।
—তোরা কালকে আয় প্রিয়া। আমাদের এখনই যেতে হবে। খুব জরুরি কাজ আছে।
—এত রাতে তোদের কী এমন কাজ? প্লিজ সোনা, লক্ষ্মী আমার আজকের রাতটা শুধু থাক। আমরা গরিব মানুষ। কিন্তু তোদের কোনো অযত্ন হবে না।
প্রেয়তি আর কোনো কথা না বলে ড্রইংরুমে আরিফ ভাইয়ের কাছে যেতেই আরিফ ভাই উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের ওপর সাজানো নাস্তা, চা, পানি, ফল—কিছুই স্পর্শ করেনি। আমাকে দেখে প্রবাল বললো দেখো, আরিফ ভাই কিছুই খেলো না। ওরা চলে যাচ্ছে দেখে আমি অঝোরে কেঁদে চলেছি। ছোট্ট প্রেয়তিও আনটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে আজকে আমাদের বাসায় থেকে যাও প্লিজ আন্টি। আরিফ ভাই ও প্রেয়তি যেন বধির হয়ে গেছে। কোনো কথাই যেন ওরা শুনতে পেলো না। নিঃশব্দে শুধু ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে ওদের বিশাল পাজেরো জিপে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি প্রবাল আর ছোট্ট প্রেয়তি হাত ধরাধরি করে কতক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, জানি না।
পরদিন জেনেছিলাম আগের রাতে আমার বাসা থেকে গিয়ে গভীর রাতে ওরা দুজন গুলশানের সেই বিলাসবহুল আলিশান বাড়ির ডাইনিং রুমের দুদিকে ঝুলে থাকা দুটো ফ্যানের সঙ্গে নিজেরাও চিরদিনের জন্য ঝুলে গিয়েছিল।