বিকেলের ছায়াটা আরেকটু ঘন হয়ে যখন সন্ধ্যার কাছাকাছি, তখন আকাশ মাটির মাঝখানের ঝুলন্ত শূন্যতা ঝনঝন করে বেজে উঠলো। আব্বা চিরদিনের জন্য চলে গেলেন পরাপরে। মায়ের চোখ আর নড়ে না, তিনি স্তব্ধ তাকিয়ে আছেন বোবা প্রকৃতির সেই ঝুলন্ত শূন্যতার দিকে। তাকে কে বোঝাবে, প্রকৃতির এই এক চিরন্তন নিয়ম! কে অশীতিপর আর কে যুবক, তার অত কিছু ভাবার অবকাশ নেই। তারপর কেতাবের পৃষ্ঠার মতো একটার পর একটা খুলে পড়তে লাগল সংসারের ভিত। ওপড়ানো খুঁটির মতো সমস্ত দায়িত্ব ভেঙে পড়লো আমার ঘাড়ে। বোন দুটি অনুচ্চকণ্ঠে শুধু চোখের জল মোছে। ওরা ভাবে বলেই নয়, এই সংসারে আমি ছাড়া হাল ধরার মতো আর কেউ নেই। বিএ পাস যুবক আমি। একদিন লেখাপড়ার এই সম্বলটুকু নিয়েই ঢাকা এলাম। সেই তো কবে এসেছি এই বিচিত্র নগরে, সময়টা শীতকালীন বিকেলের মতো দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তিন বছর কিভাবে পার হলো কে জানে! এখন মহাখালী উত্তরপাড়া মসজিদ কমিটির মেসে থাকি, পাশের একটা কলোনি বাড়িতে খেতে যাই দুই বেলা। সকালটা অনেক সময় না খেয়েও কাটে।
একবছর চারটি টিউশনি করে যখন আর চলছে না, তখন দেবদূতের মতো একটা চাকরির অফার নিয়ে এলেন একরাম ভাই। বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির উল্টো দিকে গার্মেন্টসের বায়িং হাউজে কাজ। এই শহরে বেতনের তুলনায় ঘাম ঝরে বেশি।
এই দুতিন বছর ঢাকায় অথচ মায়ের আপন বোন মিলু খালার বাসায় একবারও যাইনি। বেশ কয়েকবার তিনি ফোন করে অনুরোধ করলেন কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করে না। খালুজান ওয়াসার ইনস্পেক্টর, ঢাকায় দুই তিনটি বাড়ি। কী এক সুবিধার কারণে তিলপাপাড়ায় ভাড়া থাকেন। সমাজে অবস্থাসম্পন্ন আত্মীয়ের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সাধারণ আত্মীয়ের যে মানসিক দূরত্ব; হয়তো সে কারণেই আমাদের দুই পরিবারের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বহু বছর। খালার মেয়ে দুটি ভারি মিষ্টি দেখতে। নাম মৌরি আর নিপু। বছর দশেক আগে নানু বাড়ি এক অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম। জল ছিটানো আপেলের মতো দুই বোনের শহুরে মুখ! এখন আর অতটা মনে নেই। এই দশ বছরে না জানি কত বড় হয়েছে ওরা! আমাকে দেখে চিনতে হয়তো পারবে কিন্তু আমার মধ্যে উল্লেখ করার মতো এমন কিছু নেই যে, ওরা মনে রাখবে। খালা ফোন করে খুব ধরলেন এবার, তাদের বাসায় যেতেই হবে।
শুক্রবার একদিন মাত্র সাপ্তাহিক ছুটি, মা খুব করে বললেন, তার বোনটা কত হাহুতাশ করছেন আমাকে এক পলক দেখার জন্য। শুক্রবার সকালে মহাখালী ওয়্যারলেস গেট থেকে খালার বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেই। জিন্স প্যান্টের সঙ্গে পাঞ্জাবি পরলাম। বাসায় বড় আয়না নেই, নিজেকে ওভাবে আর দেখা হয়নি। শাহজাহানপুর পার হয়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভাবের নিচ দিয়ে যে সড়কটা গেছে দক্ষিণে, ডানপাশে বাজারটা লোকজনে সরগরম। মানুষে মানুষে গা মেশামিশি। মাছ-তরকারি, মাংসঅলার চৌকি, ছোট খোপের মতন দুতিনটা চা দোকান। রাস্তায় ইলেক্ট্রিক খাম্বায় ইন্টারনেটের তারের ঠাসাঠাসি। সেখান থেকে ডানের দিকে মোড় পেরিয়ে যে চওড়া রাস্তায় ঢুকে গেছে পূবে, সেখানে দাঁড়িয়ে খালাকে ফোন করলাম। গন্তব্য সামনের তিন নাম্বার বাড়িটা। আমাকে দেখে খালার সে কী কান্না!
বাড়িটা দারুণ সুন্দর, প্রায় ছবির মতন। বিরাট ড্রইং রুম, ঝকঝকে ফ্লোর আর হরেক রকমের বাতি। রান্নার মানুষের থাকার জায়গাটাও সুন্দর। টবে লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, সবটা চিনে উঠতে পারিনা। তিনটে বেডরুম, এটাচড বাথ, ফ্লোরম্যাট, জানালায় ঝুলানো বাহারি কাপড়ের আড়াল। দক্ষিণদিকে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদাকৃতির ঝুলন্ত ব্যালকনি। সেখানে বেতের চেয়ার পাতা, সামনে কারুকাজ করা প্লাস্টিকের রঙিন টেবিল। ডান পাশের বাড়িটার কাঁধের ফাঁক দিয়ে রেলস্টেশনটা দেখা যায়। সেই ঝুলবারান্দায় চেয়ারে বসে বিল্ডিংয়ের ফাঁক দিয়ে সুনীল আকাশটা দেখছি। দূরের একটি পলেস্তারা খসা দালানে যুবতী বউয়ের কাপড় নাড়ার দৃশ্য দেখে মনে হয়, বর বধূর জীবনটা সত্যিই অদৃশ্য সুন্দরে ভরপুর।
মৌরি আর নিপু এখন বাসায় নেই, একটু পরে হয়তো এসে পড়বে। তখনই ডোর বেল বেজে উঠলো, আমি দাঁড়িয়ে যাই। ভাবছি কতদিন পর ওদের সঙ্গে দেখা হবে। এই ভাবনার আড়ালে দারিদ্র্য, হীনমন্যতা আমাকে গ্রাস করছে। মনে হয় কিছুতেই ওদের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না। সেই নানুবাড়ির ছোট্টটি এখন নেই ওরা, শরীর ও মনে এখন অনেক বড়। নিপু ঘরে ঢুকলো, কাঁধে স্কুলব্যাগ। ভ্রূ কুঁচকে তাকালো আমার দিকে। ওর চোখে ভেসে উঠলো বাহুল্য দৃষ্টির রেখা। মনে হলো, অপ্রাসঙ্গিক কিছু দেখেছে। আমাকে চিনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আমারও যেচে পরিচয় দিতে ইচ্ছে করে না। শুধু তাকিয়ে দেখলাম ওর পরিবর্তনটা। ভেবেছিলাম খালা যখন আমার কথা বলবেন, হয়তো সামনে এসে একগাল হেসেই বলবে, ওহ, ভাইয়া তুমি! কিন্তু তেমনটা কিছুই হয়নি। আমি চুপচাপ সোফায় বসে রইলাম। খানিক বাদে আবার ডোরবেল বাজে। এবার দরজা দিয়ে যে মেয়েটা ঢুকলো তাকে অনুমান করতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। দশ বছর আগে দেখা এক বেণী দোলানো মেয়ে, খুকির মতো ভাব অথচ কিশোরী মুখে কুমকুম রঙের প্রলেপ। নানুবাড়ি বাগানের হেলেপড়া আমাগাছের ছায়া, গুমোট দুপুর, ঘনো কালো আকাশে থরেথরে মেঘ। ইলশেগুঁড়ির রেণুগুলো গালের ওপর মুক্তোর দানা। বিদ্যুতের চমকের সঙ্গে কেঁপে কেঁপে ওঠা কিশোরী বুক। এই তো সেই মুখের পরিবর্তিত ছবি, এই তো মৌরি। মৌরি আমার চোখের সামনে কিশোরী থেকে যুবতী হয়ে ওঠেনি। সে কারণে ওর ভাঙা-গড়ার সময়টা আত্মস্থ নেই। ওই ভরাট যৌবন, পানপাতা মুখ, পাতলা রক্তাভ ঠোঁট। মৃদু হাসিতে রক্তজবার মতো লাল দুটো গাল কী মিহিন! ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা রেশমি কোমল চুল আর উজ্জ্বল গায়ের রঙ। চাঁপা ফুলের কলির মতো চিকন আঙুল, সুচারু করে কাটা নখে রক্তলাল নেইল পলিশ। এক পরিপূর্ণ যুবতী। লজ্জায় আড়ষ্ট নয় সে, চোখে মৃদু হাসির ঝিলিক। আড় চোখে সে আমাকে একবার দেখে পলকে চোখ নামায়, বোবা চাহনি তার। আমি তার বিস্ময় কিংবা সংশয় টের পাই।
মৌরি ভেতরে চলে যায়। ওর সাজ-পোষাক আর স্মার্টনেসের কাছে নিজেকে সাধারণ লাগে। সে কারণে ভেতরে ভেতরে কেমন চুপসে যাচ্ছি। আবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, এখানে থেকে কোণাকুণি তাকালে আকাশটা পুরোপুরি দেখা যায়। মটরসুটি বর্ণের আকাশের গায়ে গড়িয়ে যাওয়া দুপুরের ম্লান রঙ, মাঝেমধ্যে দুই-এক টুকরো সাদা মেঘের স্তূপ ভেসে যাচ্ছে কোথায়! দক্ষিণ আকাশের কালচে রঙের মতো বুকের ভেতরে নতুন রঙের অনুভব করি আর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের হুঁইসেল। এইসব প্রকৃতি!
খালা ভেতরে ডাকলেন। সুসজ্জিত টেবিলে খাবারের রকমারি আয়োজন। এতটা সুন্দর, গোছানো পরিবেশে আর কখনো খাইনি। একরাশ সংকোচ জাপটে ধরে আমায়। মৌরি আমার চেয়ারের ঠিক উল্টোদিকে আর নিপু পাশেরটায়। মৌরি এই প্রথম কথা বললো, ভাইয়া তুমি। বলবে তো? চেনা ই তো যায় না তোমাকে।
আমি চুপ থাকি, মুখে খাবার তুলতে পারি না। নীরব লজ্জায় প্লেটের ভেতর আঙুলগুলো যেন আর নড়ে না। অথচ ওরা! নিঃসংকোচে, নির্দ্বিধায় খেয়ে যাচ্ছে। খালা মায়ের সম্বন্ধে এটা ওটা জানতে চাইছেন, মৌরি তাতে হু হা করে তাল মেলায়। অথচ ওদের সম্পর্কে যেটুকু খোঁজ খবর আমি রাখি ওরা আমাদের সম্পর্কে এতটা জানে বলে মনে হয় না। মৌরি খেতে খেতে বলছে, কত বছর পর দেখা আমাদের?
—মনে নেই।
—আমি কিন্তু ঢাকা ভার্সিটি, আই আরে। জানোতো?
—হু। আমি মাথা নাড়লাম।
—ডোন্ট মাইন্ড ভাইয়া, তুমি কোথায় পড়ো?
প্রশ্নটা শুনে কী বলবো বুঝতে পারছি না। নড়েচড়ে উত্তর দেই, কাজ করি।
—ওহ। জব করছ, জানতাম না তো!
ওই খোলা প্রান্তরেই ঠাণ্ডা বাতাস যেন উসকে দিচ্ছে আমায়। শুধু ওর হাত ধরে একটুখানি উষ্ণ হওয়ার থেকে বেশিকিছু আর কী হতে পারে!
খাওয়া শেষ হলে সোফায় গিয়ে বসি, খালাকে বলে বিদায় নেব এমনটা ভাবছি। ঠিক তখন মৌরি এসে পাশের সোফায় বসলো। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছি কেমন আলোয় ভেসে যাচ্ছে মৌরির নিরাভরণ মুখ! জানালার কাঁচ গলে ঈষৎ আলো উড়ে আসছে ঘরে। ফ্যানের বাতাসে উড়ে উড়ে খেলা করছে মৌরির চুল। আর বার বার খসে পড়ছে ওড়নার আঁচল। আমি তো তাকিয়েই থাকি ওর দিকে কিন্তু দৃষ্টি স্থির করতে পারি না। নিস্তব্ধতা ভেঙে মৌরি হাসিহাসি মুখে বললো, আজ তোমার সঙ্গে অনেক গল্প করব ভাইয়া। সেই কবে নানুবাড়ি দেখা হয়েছিল! কেমন ছিপছিপে রোগা পাতলা ছিলে তুমি! আমার মনে আছে। এখন সেই তুমি কোথায়!
আমার ইচ্ছে হয় বলি, কী রঙ দেখলে তুমি আমার! কিন্তু ওসব কি আর বলা যায়! হয়তো মেয়েরা এক ঝলকে জাদুর দর্শনেই দেখে নিতে জানে পুরুষের আগাগোড়া। হয়তো ওরা জন্মগতভাবে এমনই!
আমি একটু করে সহজ হতে শুরু করেছি। মৌরি ভ্রূ তুলে হাসে, শরীর দুলিয়ে কথা বলে। হয়তো ও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে বলেই আমাকে সহজ করার চেষ্টা করছে। আমিও খোলস থেকে নিজেকে বের করার চেষ্টা করছি। তখন নিপুর ডাকে মৌরি ভেতরে চলে যায়। একটু পর আমাকে ওর রুমে ডাকলো। মৌরি ওর খাট বিছানা, দেয়ালে ঝোলানো বিদেশি ছবি আর বিভিন্ন বইপত্র দেখায়। একটা উজ্জ্বল হলুদ আলোর বাতি জ্বেলে দাঁড়ায় ড্রেসিং টেবিলের বিপরীতে। অন্যদিকে ফিরতেই এক ঝটকা বাতাসে ওর গা থেকে পারফিউমের বাসি সুবাস নাকের ভেতর দিয়ে ফুসফুসে জমা হয়। পিঠের মাঝখানে ব্রা-র ফিতেটা ফুটে উঠেছে চোখের সামনে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি।
সেদিন অনেক কথা হলো আমাদের। কতটা প্রাসঙ্গিক, কতটা অপ্রাসঙ্গিক। দূরত্বের দেয়ালটা ক্রমশ ক্ষয়ে মিলিয়ে যেতে লাগলো। সন্ধ্যায় আমি মহাখালী চলে এলাম।
তারপর ফোনে কথা হতে থাকে আমাদের। কখনো দিনের সামান্য অবসর সময়, কখনো দীর্ঘ। এরমধ্যে কথার কারণে কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে খুব। শুক্রবারের এক অবসরে দুজন বাইরে কোথাও আলাপ করব এমনটা ঠিকঠাক করি। ঢাকা শহরটা অত ভালো জানাশোনা নেই আমার। দশটার দিকে শাহাবাগ এসে ওর জন্য অপেক্ষা করছি, আধাঘণ্টা দেরিতে এসে অনেক স্যরিটরি বললো। তখন আকাশটা কেমন যেন গুমোট হয়ে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ঢুকে দুজন ছোট ছোট পায়ে হাঁটছি আর কথা বলছি। যখন রমনার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বাঁকা ওভারব্রিজটার কাছে আসি, তখন ছাই মাখা আকাশে জমাটবাঁধা মেঘ একটু একটু করে ইলশেগুঁড়ি ছড়াতে শুরু করেছে। কাছাকাছি বৃষ্টি থেকে গা বাঁচানোর উপায় নেই। ব্রিজটা পার হয়ে রমনায় যাব ভাবছি, তখন-ই ঝুম বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে এলো পরস্পরের মুখ। রমনার ওপার যেতেই একটা গাছের নিচে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা একনাগাড়ে পড়েই যাচ্ছে, সেই শব্দে আমার মনের ভেতর ছেঁড়া ছেঁড়া ভালোলাগা, আনন্দ আর কী এক সুখানুভূতির রাগিনী! দুজন ভিজে একদম জবুথুবু। চারপাশে তাকিয়ে দেখি জনশূন্য পার্কটা ধুয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির জলে, কোথাও কেউ নেই। ওই খোলা প্রান্তরেই ঠাণ্ডা বাতাস যেন উসকে দিচ্ছে আমায়। শুধু ওর হাত ধরে একটুখানি উষ্ণ হওয়ার থেকে বেশিকিছু আর কী হতে পারে! তখন একটুখানি দম নিয়েছে বৃষ্টি। রমনার পূর্ব গেটে ত্রিমুখী মোড়ে একটা রিকশা ডেকে দুজন উঠলাম। মৌরি আমাকে নিয়ে গেলো বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে।
পাশাপাশি দুজন বসে আছি, চুপচাপ। যেন কোনো কথা নেই আমাদের। মনে হয় কোনো কথা ছিলই না কখনো। মৌরি আমার দিকে তাকালো, ঠাণ্ডায় ওর ঠোঁট কাঁপছে। ওর চোখ বলছে একটু উষ্ণতা প্রয়োজন।
—জানো?
—কী? আমি বললাম।
—তোমাকে আমার খুব পছন্দ।
যদিও ওর হাবভাবে এতদিনে এ কথাটি বুঝেছি আমি। তবে এসব বিষয়ে আর আলাপ হয়নি। তবু হঠাৎ আমার রক্ত হিম হয়ে এলো, চুপ করে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর বলি, চলো, এবার যাই।
তারপর দিন যায়, রাত আসে। আবার রাত ঘুরে দিন। কেমন যেন উদাস উদাস লাগে আমার। যেন দিন দিন অরুচি হতে থাকে সকল কাজে। যখন তখন মনটা ছটফট করে। সারাক্ষণ শুধু মৌরির মুখটা ভাসে চোখে। রাতে ঘুম হয় না ঠিকভাবে, ফোনে কথা বলে জেগে জেগে কাটে দুজনার। কখনো মেসের লোকের অসুবিধা ভেবে বাইরে গিয়ে আকাশের তারার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকি, আর কথা বলি। আমার মাথায় কোনো ভাবেই আসে না, কেন ও আমাকে পছন্দ করতে গেলো! ভার্সিটিতে কত বন্ধু ওর, অথচ আমার ভেতর তো সেই বন্ধুদের মতো এমন কিছুই নেই।
এরপর কয়েকবার দেখা হলো আমাদের। কখনো রেল লাইনের স্লিপার ধরে দীর্ঘ পথ হেঁটেহেঁটে কথা বলা, কখনো ফুটপাত ধরে গন্তব্যহীন হেঁটে চলা আবার কখনো রমনার নির্জন গাছ তলায় কোনো বেঞ্চের ওপর, কখনো ধানমন্ডি লেকে। মিথ্যে বলবো না, অতটা গভীরে না ভেবে আমিও ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে লাগলাম মৌরির প্রেমে। যৌবনের তরঙ্গের সঙ্গে যখন বাতাস এসে মিশে একাকার হয়ে যায়, তখন ফেনায়িত তরঙ্গে সুউচ্চ ঢেউ তৈরি করতে কে তাকে আটকায়! আমিও আটকাতে পারিনি নিজের মনকে।
একদিন মৌরি খুব করে বললো দেখা করার জন্য। কিন্তু দেখা করি কোথায়। ও একবার বলেছিল আহসান মঞ্জিল যেতে চায় একদিন। ভাবলাম সেখানেই যাই। কমলাপুর ছাড়িয়ে আরামবাগ থেকে রিকশায় উঠলাম দুজন। রিকশাওয়ালাকে যেতে বললাম আহসান মঞ্জিলের দিকে। পাশাপাশি দুজন বসেছি অথচ কথা নেই। কেমন এক নিস্তব্ধ মৌনতা। মৌরি আমার দিকে বিবর্ণ মুখে তাকায়। কেমন যেন বেদনার ছায়া ফুটে উঠেছে ওর মুখে। ভেতরে ভেতরে জোরে একটা ধাক্কা অনুভব করি। মৌরি অনেক্ষণ কোনো কথাই বললো না, শুধু চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। পুরো পথে চাঞ্চল্য আর ফেরে না, আমরা আহসান মঞ্জিলে পৌঁছাই। পুরনো ঐহিত্যবাহী বাড়ি আহসান মঞ্জিল। ধাপ ধাপ সিঁড়ির পর দীর্ঘ মাঠ। এক কিনারে ছোট একটা গাছের নিচে গিয়ে দুজন বসলাম। আরেকটু দূরে আমাদের মতো যুবক-যুবতী জোড়ায় জোড়ায়। গাছের তলাটা ঠাণ্ডা, শান্ত। পরিষ্কার ছোটছোট ঘাস। পান্না-সবুজ রঙ, একদম সতেজ। গাছের নিচের দিকে ঈষৎ বেগুনি ফুলগুলো ঝুলছে নির্জীব, ছোটছোট থোপায়। সামনে বুড়িগঙ্গা। নদীর ওপারকার আদিগন্ত বিস্তৃত আকাশটা দুটো লম্বা দালানের ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ে। মাঝেমাঝে বাতাসের ঝাপটায় ঝিলিমিলি ভেঙে তরাঙ্গায়িত হয়ে ওঠে এক রৌদ্রময় কুজঝটিকা। মৌরির বেজার মুখ আমার ভেতরটা ভেঙে দিচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি, কোনো এক ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস চলছে। হয়তো আমি সেই সংবাদের জন্য প্রস্তুত নই। আর কিছুক্ষণ পর ও জানালো, বাসায় ওর বিয়ে ঠিকঠাক। এবার ধাক্কাটা বেশ জোরেই খেলাম। কেমন যেন নিশ্চিত হয়ে গেলাম, আমাদের আর বেশি সময় নেই। হয়তো দ্রুতই দুজন আলাদা হতে চলছি।
আরেকবার মনে হয়, জীবনে সাচ্ছন্দ্যে থাকতে হলে একটু রোশনাই চাই। টাকা ছাড়া এই জগতে ভালোভাবে কে আর বাঁচে!
আমি কোনোভাবেই চাইনি আমাদের বিষয়টি শুনে মা দুশ্চিন্তায় থাকুক কিংবা খালা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ুক। খালুকে বেশ জানাশোনা আছে আমার। খুব মেজাজি মানুষ, কামার সেতারা পৃথিবীর ওপর ভর করলেও খালুজান মোটেও সদয় হবেন না। আর এ মুহূর্তে আমার পক্ষে বিয়ের মতো এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াও সম্ভব নয়। হয়তো আর কিছুদিন পরে দুবাই যাচ্ছি কাজে। এখন মৌরিকে ভুলে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
সে আমি ভুলে যেতেও হয়তো পারতাম। কেননা প্রয়োজন সবকিছুকে একসময় ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু হিসাবটা উল্টে দিলো মৌরি। তখন রাত প্রায় দশটা হবে হবে, একদিন মহাখালী এসে ও ফোন করে আমাকে। সবকিছু ছেড়েছুড়ে ও নাকি আমার কাছে চলে এসেছে। বাসায় ফিরবে না আর, যা হওয়ার হবে। আমাকে কিছুতেই ও হারাতে চায় না। ওই মুহূর্তে আমার ভেতর কী কাজ করল জানি না। হঠাৎ মনে হতে লাগলো, ধোঁয়া আর ধূলির জীবনে প্রেমের অদৃশ্য সুখের ভ্রূণ লুকায়িত থাকে। সংগ্রামে, যন্ত্রণায়, জীবনের নানাবিধ বৈচিত্র্যে প্রেমের ধাক্কাগুলোও মানুষকে সাহসী করে তোলে। মানুষ বেঁচে থাকে সীমাহীন পাওয়ার আনন্দ নিয়ে। আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। যে কলোনি ঘরে আমি খাই রাতটুকু সেখানেই রাখলাম ওকে। যদিও ওই পরিবেশে ওর কষ্ট হয়েছে খুব কিন্তু উপায় কিছু নেই। মাঝরাতে খালার ফোন পেয়ে কলিজায় আর জল নেই মোটেও। আমি জানি, নিপুর কাছে এতক্ষণে সবকিছু শুনেছেন খালা। হয়তো খালুও আর না শুনে নেই। রিং বাজতে বাজতে কল কেটে যায়, আমি আর ফোন ধরি না। সকালে টিবি গেইট এলাকায় একটা মহিলা হোস্টেলে ওকে ঠিকঠাক করে রেখে আসি।
মায়ের কাছে খবরটা সেই রাতেই চলে গেছে। কদিন-ই বা আর মায়ের ফোন না ধরে থাকব! ওদিকে ভিসাও চলে এসেছে। মৌরিকে রেখে চলে যেতে হবে হাজার মাইল দূরে। কথা এভাবেই ঠিকঠাক হয়ে থাকে, বছর দুইয়েকে ওর পড়াশোনা শেষ হবে। দুবছর পর আমি দেশে ফিরলে তখন বিয়ে করব।
রাগ করে মা আমার সঙ্গে কথাই বললেন না আর। ছোট বোন দুটোকে চোখের দেখা দেখতে ইচ্ছে করলো খুব। কিন্তু মৌরিকে নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়লাম শেষে বাড়ি আর যাওয়া হয়নি। মৌরি আমার সঙ্গে এয়ারপোর্ট এসেছে। সকাল ন’টা নাগাদ ওকে বিদায় জানিয়ে ভেতরের লাউঞ্জে প্রবেশ করলাম। একবার মনে হলো, বিদেশ গিয়ে হবে কী, মা বোন আর মৌরিকে নিয়ে এখানেই তো বেশ চলছে। কিন্তু আরেকবার মনে হয়, জীবনে সাচ্ছন্দ্যে থাকতে হলে একটু রোশনাই চাই। টাকা ছাড়া এই জগতে ভালোভাবে কে আর বাঁচে!
হাজার মাইল উঁচু দিয়ে উড়ছে প্লেন। এত স্বচ্ছ এত গাঢ় নীল যে আকাশ হতে পারে অত দূরের মাটিতে বসে তা অনুমান করা যায় না। ধুলোভরা মাটির থেকে এখন কত ওপরে আমি! এখানে মা, বোন দুটো আর মৌরি কারও দেখা নেই। পৃথিবীটা দারুণ শূন্য মনে হতে থাকে। তখন বিমানবালার মিষ্টি কণ্ঠস্বর; আর, আর দেখে নেই শেষবারের মতো দেশের মাটি, দেশের জল। আমি জানালার ফাঁক দিয়ে আমার প্রিয়জনদের মাটিটা আবছা দেখতে চাই। চেয়ে দেখি, চারিদিকে মহাশূন্যতা, নীল আর ঝিরিঝিরি সাদায় একাকার।
দুবাই গিয়ে আমার নতুন করে সংগ্রামের জীবন শুরু। যে জীবনের সঙ্গে আমার আগে পরিচয় নেই। সেই কাকভোরে বিছানা ছেড়ে হুড়মুড় করে ওঠা, তারপর দীর্ঘপথ যেতে হয় গাড়ি করে সেই আজমান শহর। কাজের জায়গা থেকে ফিরি প্রায় রাত নটায়। প্রতিদিন মৌরির সঙ্গে কথা হয়, আমি অতীতের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করি। এমনও হয়, কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে যায়। ক্রমশ ফোনের কার্ড কিনতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠি। শরীরটা ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। তবু এই কথার মায়া ছাড়তে পারি না। আমি দুবাইয়ের আকাশ, আরব সাগরের পাড় আর দূরের ধূধূ মরুর বুকে দেখতে পাই মৌরির মিষ্টি মুখের ছায়া। শুধু আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করি, কবে ফিরব সোনার বাংলাদেশে।
ছয়মাস অতিক্রান্ত হলে মৌরিকে পাঠাতে শুরু করি এটাওটা, বিভিন্ন জিনিষপত্র। মোবাইল, পারফিউম, ব্রা, বডি লোশন ইত্যাদি। অফডেতে মার্কেটে যাই, ভিডিও কলে মৌরিকে এটাসেটা দেখাই। পছন্দ হলে যত দাম-ই হোক কিনে ফেলি। সেই সঙ্গে ফিরে পাই একটা মিষ্টি হাসি। সেই হাসিতে প্রাণসঞ্চার হয়। আহা প্রেম! কেন এত মায়া, কেন এত আকুলতা! কেন উপচে পড়ে জীবনের এত সুখ!
মৌরিকে এসব পাঠাই দেশে ফেরত যাওয়া বিভিন্ন মানুষের কাছে। ঢাকায় আমার বন্ধু জসিমের ছোটভাই প্রীতম মৌরির কাছে জিনিসপত্রগুলো দিয়ে আসে। প্রীতমকে আগে থেকেই আমি চিনি। অস্থির, চঞ্চল স্বভাবের ছেলেটা। কোথাও দুদণ্ড বসবে এমন জো নেই। সারাক্ষণ এখানে ওখানে ছোটা এটাই ওর ধারাপাত। বন্ধুর ছোটভাই এটুকু সাহায্য তো করবেই! মৌরি প্রীতমের সঙ্গে মাঝেমাঝে বাইরে বের হয়। কোনোদিন মার্কেটে, কোনোদিন সিনেমায় আবার কখনো বেইলি রোড। আমি কখনো জানি আবার কখনো জানাও হয় না। এসব শুনে কিছুটা হলেও ভালো লাগে আমার। আমি দেশে নেই, মৌরি একা একা কতটা বিষণ্ন হয়ে থাকে। প্রীতম সেই একঘেয়েমিটা কিছুটা হলেও দূর করছে। আমি দিন গুনতে থাকি, এই তো আর একটা বছর অপেক্ষা।
কষ্টের এতবড় বোঝা বইবার মতো শক্তি আমার নেই। আমি চূড়ান্ত দিশেহারা!
খালা-খালু মৌরিকে দুই-একবার নিতেও এসেছে কিন্তু ও যায়নি। এজন্য মাঝেমাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আবার যখন ভাবি, আমার জন্য ও কত ত্যাগ স্বীকার করছে। বাবার আহ্লাদি মেয়েটা সুখের ঠিকানা ছেড়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এসব ভাবলে মনে হয় পৃথিবীতে আমার চেয়ে সুখি বোধ হয় আর কেউ নেই। কিন্তু ইদানিং মৌরিকে তেমন ফোনে পাই না। প্রায় রাতেই সে ফোন ধরে না। প্রথমে ওয়েটিং, তারপর বন্ধ। সেই ভোরভোর ফোনটা খোলা পেয়ে কল করি। কারণ জানতে চাইলে বলে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার এসব শুনে আর এই বিদেশ বিভূইয়ে থাকতে ইচ্ছা করে না। মাঝেমাঝে মনে হয় সবকিছু ফেলে দেশে ফিরে যাই। কিন্তু মা বোনদের দেখাশুনা আর নিজের জীবনের একটু দিশার কথা ভেবে আপ্রাণ চেষ্টা করি। যদি জীবনে একটু আলোর দেখা পাই! এরপর দিনেদিনে আমাদের কথাবার্তা কমতে শুরু করে। কোথায় যেন দেখা দেয় একটা অদৃশ্য দেয়াল। সেই দেয়ালটা ধীরেধীরে পুরু হয়, ধুলোর আস্তরণ পড়তে চায় অথচ, আমি সম্পর্কটা তাজা রাখতে প্রাণপণে চেষ্টা করি। আমার বুকটা প্রায়ই কেমন বিষণ্নতায় হাহাকার করে ওঠে। মৌরির সঙ্গে যেটুকু কথা হয় আমি বুঝতে পারি কথায় যেন মন নেই ওর। কোথায় সেই মৌরি, কোথায়! প্রীতমের কাছে ফোন করে প্রায়ই ফোনটা বন্ধ পাই। যখন পাই সে আশ্বস্ত করে, সবকিছু ঠিকঠাক।
আমার দেশে ফিরতে মাত্র দুমাস বাকি। মৌরিকে ফোন করে এটাওটা দেখাই, ওর পছন্দের কতকিছু জানতে চাই। বিয়ের গহনা ও অন্যান্য জিনিস দুবাই থেকেই নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু মৌরির কেন যেন এসবে আগ্রহ নেই, ও আমাকে আরও একবছর পর ফিরতে বলে। প্রীতমকেও এখন আর ফোনে পাওয়া যায় না, বন্ধুর কাছে ফোন করেও তেমন সদুত্তর মেলে না। প্রকৃতির এইসব খেলা বড় নিষ্ঠুর লাগে।
২৭ জুলাই রাতের ফ্লাইটে সবকিছু গুছিয়ে বাংলাদেশে রওয়ানা দেই। সারাটা পথ এতটুকু ঝিমুনি আসেনি, একটুও ঘুমাইনি। দুই বছর ধরে যে মুখ প্রতিদিন শত-সহস্রবার হৃদয়ে উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল, সেই মুখ, শুধু সেই মুখের হসিতে খুশির ঝলকটুকু দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসি। কিন্তু ফোন করে মৌরিকে আর পাই না। মাথার ভেতর একরাশ আঁধার খেলা করে। চুপ করে ভাবি মৌরি দিব্যি আছে। টিবি গেইট সেই মহিলা হোস্টেলে গিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেব এমনটা ভাবছি। কিন্তু কে জানতো, প্রকৃতি আমার জন্য কতবড় সারপ্রাইজ নিয়ে অপেক্ষা করছে! মৌরিকে সেই হোস্টেলে আর পাই না। ছয়মাস আগে এখান থেকে চলে গেছে। কোথায় গেলো মৌরি, এমন তো হওয়ার কথা নয়! কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছে না। পুরোদিন ফোন করে একবারের জন্যও মৌরির ফোনটা খোলা পাইনি। কিন্তু দুই বছরের এত আকুলতা কী করে আমি আটকে রাখি! মৌরির দেখা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়লাম। প্রীতমেরও কোনো খোঁজ নেই। বন্ধুর বাসায় গিয়ে শুনি অন্যরকম কিছু। যা আমার জন্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত। প্রীতম আর মৌরি বিয়ে করেছে, এখন ওরা কোথায় থাকে বন্ধুর জানা নেই। প্রীতমকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে বন্ধুটি। এখন আমাকে সামনে পেয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইল। কিন্তু এইসব ক্ষমাটমা আমার মাথায় কিচ্ছু নেই। মনে হলো আকাশটা মাথার ওপর ভেঙে পড়েছে। আমি মাটির গভীরে দেবে যাই। কষ্টের এতবড় বোঝা বইবার মতো শক্তি আমার নেই। আমি চূড়ান্ত দিশেহারা!
এতটা নাটকীয়তা আমার জন্য অপেক্ষা করছে তা অবশ্য ভাবিনি। আমি তো রীতিমতো অহঙ্কার করেই থাকতাম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেম আর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার মানুষ আমার। মৌরির থেকে জগতে ভালো মেয়ে আর কে আছে! ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েটি আমার জন্য ঘর ছাড়লো! এ যুগে কে এমন করে ভালোবাসবে আমায়? তবে সেই কবে-ই সহজ স্বাভাবিকতা ভেঙে আহত হৃদয় ধীরে ধীরে সাড়া দিতে শুরু করেছিল অন্যরকম কিছু। যা আজ চোখের সামনে দৃশ্যমান। পৃথিবীর সব রঙ মুছে গিয়ে একটা ধূসর পৃথিবী আমার সামনে, বাতাসে বিষাদের গন্ধ। শুধু সাধ হয়, যদি একবার মৌরির মুখটা দেখতে পেতাম! কিন্তু যে প্রেম রঙ বদল করে তাকে আবির মাখিয়ে গাঢ় রঙিন করে এমন সাধ্য কার! জীবনের বাঁকে বাঁকে এত যে নাটকীয়তা থাকে, জীবন যে এতটা রহস্যময় কে জানে!