মুখের ওপর থেকে কুপির আলোটা সরে গেছে, বেড়ার ফাঁক গলিয়ে এক চিলতে চাঁদের আলো এসে পড়েছে শ্যামা আর তার দুই বছরের শিশুপুত্র নয়নের মুখে। নয়ন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নয়নের ওপাশেই হাঁটু ভাঙা দ হয়ে পড়ে আছে হালকা ছিপছিপে নীলা। অতীত-ভবিষ্যতের ভাবনার জটলা মাথায়, মাথা টনটন করছে। শ্যামার চোখে ঘুম নেই। ঘুমের ঘোরে কোমল হাতে মায়ের দুধ খোঁজে নয়ন। সময় অসময়ে ছেলের এই আবদারে সব সময় আমলে নেয় না শ্যামা। যখন আমলে নেয় না তখন নয়নের মুখ ঠেলে সরিয়ে দিয়ে দুয়েকটা কথাও শুনিয়ে দেয়। আজ তেমনটি করেনি। বুকের কাপড়টা সরিয়ে দিয়ে আগের মতোই নির্ভার চেয়ে থাকে ঘরের চালের দিকে।
আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছে শ্যামা, জমাট নৈঃশব্দ্যে এক ফালি জায়গা কি কোনো ভরসার আশ্রয়, ভাবে শ্যাম। অগোছালো স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে ছেঁড়া মাদুর, পিতলের কাঁসার তৈজসপত্র অযত্নে অবহেলায় ছড়ানো ছিটানো, কিছু কাপড়চোপড়, ইঁদুরের ছোটাছুটি; এই তো শ্যামার সংসার। এই ঘরে কোনো খিড়কি-জানালা নেই। ছোট্ট ঘরে বাঁশবেতের ঝাঁপ; দিনমজুরের সংসার যেমন হয়।
সামান্য ছোট্ট একটি ঘরে নৈঃশব্দ্যের গহীনে অন্তরীক্ষের অতল শূন্যতায় ডুবে ডুবুরির মতো হারানো ঐশ্বর্যের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হয় শ্যামা, ঘুমহীন চোখে নিরীক্ষণ করে চারপাশ দূষিত করা নোংরা জীবনের অভিলাষের উল্লাস, শুনতে পায় যেন বা শিয়াল-কুকুরের ভীবৎস চিৎকার আর মানুষের আর্তনাদের মিশ্র কোলাহল।
ক্লান্তিতে নিঃশেষ হয় ক্লান্তি। ক্ষুধায় মিলায় ক্ষুধা। খড়খড়ে শুকনো অশ্রুহীন দুচোখে সাহসী হয়ে অবিরাম ব্যবচ্ছেদ করে চলে অন্ধকারের শরীর, মাংস, হৃৎপিণ্ড, অর্থহীন আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাস বাতাসে মিশে যায়। তারপর পথের শেষ কোথায়, মগজের ঊর্ণাজালের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটি আকাঙ্ক্ষা, বেঁচে থাকার স্বপ্ন। জীবন বড় সুন্দর!
জোছনা ফিকে হয়ে আসে। অন্ধকারের গভীরে তলিয়ে যায়, ঘনকালো মেঘে আকাশের ঝুলন্ত চাঁদ ঢাকা পড়ে, থেকে থেকে বিদ্যুতের চমক। গুরু গুরু মেঘের ডাক।
ক্ষণকাল পরেই আকাশ বেঘোরে ঢালতে শুরু করে, তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যাচ্ছে শ্যামাদের পাটি-কাঁথার বিছানা। শ্যামা গা ভেঙে ওঠে নয়ন আর নীলাকে বৃষ্টির ছাঁট থেকে রক্ষা করে এক চিলতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। বুকের ভেতরে হু হু করে হাহাকার।
মা, তোঁই খডে? নীলার অস্পষ্ট ডাক।
আঁই এডে।
ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকায় না শ্যামা। এক সপ্তাহ হয়ে গেল ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারে না। তাকালেই বুকের ভেতর থেকে হু হু করে অরোধ্য কান্না বের হয়ে আসে। এভাবেই আড়াল করে নিজেকে লুকোনোর চাতুরি করে শ্যামা। কত আর পারা যায়?
নীলার পাশে গিয়ে বসে মাথায় রাখে। বৃষ্টির ছাঁটে মাথার চুল কিঞ্চিৎ ভেজা। হঠাৎ বিদ্যুতের ঝিলিক বেড়ার ফাঁক গলিয়ে নীলার মুখের ওপর আছড়ে পড়াতে শ্যামার গোচরে আসে নীলার করুণ মুখের কায়া; চরের মতো শুকনো বুকের ভেতরে থেকে প্রবল বেগে কান্নার স্রোত নামে। মুখে আঁচল গুঁজে শব্দহীন করে বেগবান কান্নার শব্দ।
প্রায় নাওয়া-খাওয়া ছাড়া গেল হপ্তা। সামনে কত দিন বাকি জীবনের, ভাবে শ্যামা।
নীলার মাথায় হাত, অক্লেশে অবজ্ঞায় বাঁধা চুলের জুটি, খড়খড়ে শুকনো চোখ-মুখ বড় অচেনা ঠেকে মায়ের কাছে। এমন বিধস্ত পারাপারে অস্বস্তি আর ক্লান্তিকর জীবনের শেষ গন্তব্য কোথায়? ক্রমাগত কি এক ভাবান্তর! দুমাস আগের জীবন আর দুমাস পরের জীবনে এমন দুস্তর ফাঁরাক, কোথায় স্বপ্ন ছিল দুবেলা দুমুটো খেয়েপরে, দুটি সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার সাজাবে, আর সেই স্বপ্ন এভাবে ধ্বংস হয়ে গেল। একটি আশ্বাসের পর হতাশার ছায়া, জীবনের যেন এটিই অমোঘ নিয়ম। কোথা থেকে নামে এই অন্ধকার আবার কোথায় ফুটে আলোর ধারা? দুমাস আগের এমনই এক রাতে শ্যামা আর অপু এক জোছনা পাশাপাশি শুয়ে ছিল, কথা বলছি কানে কানে, তারপর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয়েছিল তুমুল বৃষ্টি। অপুর স্পর্শ, সব অপসৃয়মাণ। তুমুল বৃষ্টির শব্দ ক্রমাগত ঘনীভূত হয়, হতাশার দীর্ঘশ্বাস বৃষ্টির শব্দে মিলিয়ে যায়।
দুই মাসে গ্রাম থেকে উধাও হয়ে গেছে চল্লিশ-পঞ্চাশ যুবক-যুবতী। কারও কারও লাশ পাওয়া গেছে বইন্যার খালের পাশে। কারও কোনো হদিশ নেই, চিরতরে নিখোঁজ। বর্মীদের নির্বিচার হত্যা-ধর্ষণের ফলে এই আরকানের গ্রামগুলো মানুষশূন্য। রক্তে ভেজা মাটি, আগুনে পোড়া ভস্ম ঘরবাড়ি, প্রার্থনালয়, দোকানপাট, হাটবাজার। শ্যামার চোখে একটি দৃশ্যই বারবার ভাসে, অপুকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বর্মী সেনাবাহিনী, পিঠমোড়া বাঁধা, নীলা আর নয়নের বাঁধভাঙা অঝোর কান্নার রোল। অপু কি একা ছিল? গ্রামের আরও কুড়িজন ছিল সেই দড়িবাঁধা দলে। কেউ আর ফেরে নি। কেউ না। কয়েকজনের লাশ পাওয়া গেছে নদীর পাশে। অপুর লাশও পাওয়া যায় নি। এজন্যই আশায় বুক বেঁধে থাকা শ্যামার চোখ বিনিন্দ্র থাকে, রাতভর। ছোট্ট উঠোনটিতে পাতা ঝরার শব্দ হলেই কান খাড়া করে দরজার দিকে তাকায়, ভাবে, হয়তো এখনই ডাক দেবে, শ্যামা। ও বউ! কই পাতা ঝরার শব্দ এক সময় মিলিয়ে যায় বাতাসে।
কাকডাকা ভোরেই ঘর ছেড়ে বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে থাকে শ্যামা। দুচোখেও যেন আকাশের মতো গভীর শূন্যতা, ভোরের নরম আলোর তরঙ্গে মিশে থাকা দৃষ্টি, কালের স্রোতে ভেসে থাকা জিজ্ঞাসা, এদেশ কী আমাদের নয়? তবে কেন এভাবে শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে দগ্ধ হওয়া? শত শত বছরের বসতি, বংশের পর বংশের জন্মমৃত্যু, এই মাটিতে জন্ম-মৃত্যু, সব কর্ম-অর্চনা অথচ কিনা এদেশের মানুষ নয়, এদেশের নাগরিক নয়; কত বাধা নিষেধ চলাফেরায়! এই সময় দূরের আকাশে কয়েকটি পাখি উড়তে দেখে শ্যামা সেদিকে তাকিয়ে থাকে বিহ্বল হয়ে, হয়তো সে ভাবে, ওরা কত মুক্ত; অথবা কোনো কিছুই না ভেবে শুধু ফ্যালফ্যাল করে অর্থহীন তাকিয়ে থাকে। আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ উড়ছে, উত্তর থেকে দক্ষিণে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে। ভোরের ফিকে আলোয় বেড়ার ফাঁক গলে ফাঁকা হাহাকারা খাঁ খাঁ করা মাঠের দিকে চোখ যায় শ্যামার। আর হঠাৎই বুকের ভেতরটা নড়ে ওঠে। দুই বিঘে জমিতে ধান হলে বছরের তিন মাস চলে, এ-বছর লাঙল পড়ে নি মাটিতে, বুনো ঘাসে ছেয়ে আছে এইটুকু জমিনের বুক। বীজতলায় ধানের চারা বুড়ো হয়ে মাটিতে মিশেছে, ফসল বিয়ানোর মাটি পায় নি।
দুটি শিশুর মুখে দুবেলা আহার জুটানোই এখন কঠিন দায় শ্যামার। কার কাছে হাত পাতবে? কে একটু সহায় হবে? এই গ্রামে কে আছে নির্ভরতার? বাবার সংসারেও টানাপড়েনের শেষ নেই। আর বর্মীদের চোখ এড়িয়ে এখন কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পর শ্যামা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়, নয়ন আর নীলা এখনো শুয়ে আছে। অনাহার অর্ধাহারে ওদের মুখের দিকে তাকালেই বুক ফেটে কান্না আসে, শ্যামা তাই মাটির দিকে তাকিয়ে নয়ন-নীলার করণীয় কাজ করে।
উঠোনের দক্ষিণ পাশের মিষ্টি কুমড়োগাছের মাচার নিচে দাঁড়িয়ে কুমড়ো গোনে কয়দিন চলবে শ্যামা এমন একটা হিসেব করে মনে মনে। পাতায় জমে থাকা রাতের বৃষ্টির পানি একটি দুটি ফোঁটা করে এখনও ঝরছে। লাল পিঁপড়ে কয়েকটি ফুলে ভিড় জমিয়েছে। চুলোর ছাই দিলে পিঁপড়ে অত্যাচার থেকে বাঁচা যেত, কিন্তু সেদিকে শ্যামার আর মন নেই।
বাইরে অনেক মানুষের সরগোল ধেয়ে আসছে। কানফাটা গোলাগুলির শব্দ, আগুনের পুড়ে বাঁশের ঠাস ঠাস দিগন্ত কাঁপে। আঁৎকে ওঠে শ্যামা, বাইরে এসে দাঁড়ায়। পৌঢ় আব্দুর রহমান হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে উত্তরের দিকে দৌড়াচ্ছে, তার পিছনে আরও কয়েকজন যুবক, তার পিছনে কয়েকজন নারী, কারও কারও কোলে জীর্ণশীর্ণ শিশুও রয়েছে। আতঙ্কে শরীর কাঁপতে থাকে শ্যামার। সকল চিন্তা নিরেট স্থবির।
আমেনা শ্যামার পাশে ক্ষণকাল দাঁড়ায়, বলে, অ্যাঁরা যাইগ্যোই। চাঁটগাঁওত। অ্যাঁই মেডিত আর ন থাইক্কুম, এই মেডি অ্যাঁরার ন। তোঁইয়ো লও। অক্কন লও। বর্মীরা মানুষ মারি ফালিতাচ্ছে। লও বইন।
শ্যামা ইতস্তত করে। কী করবে সে? যদি অপু এসে ওদের খুঁজে না পায় তখন সে পাগল হয়ে যাবে। এদিকে দুটি শিশুসন্তানকে অন্তত বাঁচান দরকার।
মানুষের সরগোলে হয়তো, অথবা এমনিতেই নয়ন আর নীলার ঘুম ভাঙে, মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। এদের দেখে আমেনার বুক ফেটে কান্না আসে। আবার চিৎকার করতে করতে বলে, এতে আর থাইকোন ন। আঁইয়ো অ্যাঁর লগে। যারগোই।
শ্যামার চোখ দুটি অন্ধকার হয়ে আসে। অনেকটা দিশেহারার মতই নয়নকে কোলে নেয় আর নীলার হাত ধরে টানতে টানতে আমেনাদের কাফেলায় মিশে যায়।
আঁর ন ফরিজ্জে, কাঁদো কাঁদো গলায় নীলা বলে মাকে।
মায়ের শরীরই বা কতটুকু চলে? রাতের বৃষ্টিতে এঁটেল মাটি গলে হাঁটুডোবা কাদা হয়েছে পথে পথে। এতো কাদা টেনে কত পথ হাঁটা যায়! খাওয়াহীন, নাওয়াহীন মানুষের কাফেলা নিজ দেশে ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে উদ্দেশ্যহীন, পথ বড় বন্ধুর। কোথাও পাহাড়, কোথাও আলপথ, কোথাও খালবিল। মাথার উপরে বারবার চক্কর মারছে শকূনের মতো হেলিকপ্টার। পাহাড়ি পথে বন্যহাতি, কেউ কেউ ভাল্লুকের দেখা পেয়েছে, বাঘ-সিংহ যে নেই তারই বা গ্যারান্টি কোথায়? না-ই বা থাকল বাঘ-সিংহ, এই পাহাড়ঘেরা অরণ্য সাপের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র, নিঃসন্দেহ।
পাহাড়। তারপর আলপথ। তারপর নদী। নাফ নদী। তারপর ওই যে, চাটগাঁ। এভাবে শ্যামারা নিজেদের পথের দূরত্ব কমিয়ে মনে মনে সান্ত্বনা খোঁজে। ক্লান্তিতে শরীর কাদার তাল। গাছের নিচে শুয়ে আছে হাজার মানুষ। শ্যামার বুক উদোম। শুকনো বুকে মাই টেনে যাচ্ছে নয়ন, আর দুধ না পেয়ে মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছে। শ্যামার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। চোখ বন্ধ করে ঝিম ধরে মাটির মতই পড়ে আছে পাহাড়ের পাশে গাছের ছায়ায়। আমেনার বুচকাবুচকিতে কিছু শুকনো চিড়া ছিল, কয়েক মুঠ শ্যামার দিকে এগিয়ে দেয়, নে খা।
শ্যামা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নীলাকে কিছু দিয়ে নিজে কিছু চিবোয়।
আবার পথ চলা। আরও দুদিন পর এসে থামে নাফ নদীর তীরে। কিছুক্ষণ আগেই স্থল মাইন বিস্ফোরণে মারা গেছে দুজন। কারও শোক নেই, কান্না নেই। যেন মৃত্যুর মতো সহজ আর কিছুই নেই এই আরকান রাজ্যে।
কাফেলার বাসু মিস্ত্রি চাঁদা তুলল নৌকার ভাড়ার। শ্যামাকে বলল, কিয়েট দে।
শ্যামা হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বলল, আঁত্তন ন আছে।
ন আছে?
বাসু মিস্ত্রি যেন আকাশ থেকে পড়ে। পাশে থেকে আমেনা বলল, আঁই দেওম নে।
নৌকার ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়েছে এদেশের মাঝিরা।
যাত্রীরা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে নদীর অপর প্রান্তে। প্রবল অনিশ্চয়তা যদিও বা, তবু আশায় বুক বাঁধে হয়তো ওরা নদী পার হয়ে আশ্রয় পাবে। ওখানে মানুষের কাফেলা যাচ্ছে। কোথাও না কোথাও থাকার জায়গা হবে। আতঙ্কহীন রাত পাব। একটু ঘুম। কত দিন চোখে ঘুম নেই!
নীলা মায়ের পাশে বসে মায়ের আঁচল শক্ত করে ধরে আছে। নদীতের জোয়ারের পানি ঢুকেছে। উত্তাল তরঙ্গ। ছোট্ট নৌকাটি বারবার হেলেদুলে উঠছে। মনে হয় এখনি তলিয়ে যাবে গভীর জলে।
মাঝিরা প্রবল তরঙ্গে নৌকার তাল সামলাতে না পেরে সাগরের দিকে ছুটতে শুরু করে, চারপাশে পানি আর পানি, আকাশ আর বিস্তৃত জলরাশি একাকার। ভয়ার্ত নীলা মাকে জিজ্ঞেস করল, মা, ফানি আর ফানি। মেডি কই? আঁরা খডে যারগোই?
মায়ের চোখ ভিজে আসে। নয়নের মুখে হাত বুলিয়ে আদর করে। নীলাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, মেডি ফাইয়ুম যে। আর এক্কান ফরেই।
তরঙ্গে তরঙ্গে দুলতে থাকে নৌকা, ভাসতে থাকে। প্রমত্ত স্রোতে মাঝি হাল ছেড়ে দিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওরা বাঁচার কৌশল জানে। হয়তো বাঁচার জন্যই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মাতাল নৌকাটিও দিশেহারা। একবার ডুবে তো একবার ভাসে। নীলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, মা, মেডি খডে? আঁরা কি মইরা যারগোই?
মায়ের কথা বলার আগেই স্রোতের টানে নীলা আর নয়ন পানিতে ভেসে যায়। কীভাবে নৌকার গলইয়ে ধরে শ্যামা বেঁচে ছিল সেও জানে না। অন্য একটা স্রোতের টানে নৌকাটি নাফ নদীর এক কিনারে এসে ডুবো চরে আটকে যায়।
তীরে দাঁড়িয়ে শ্যামা দেখে নৌকার মানুষেরা পানিতে ভেসে যাচ্ছে। দূর থেকে দূরে। এই ভেসে যাওয়া কাফেলায় নীলা আর নয়নও আছে।
ওরা কখনও মাটির সন্ধান পায়নি।