রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আকাশ-জমিন জুড়ে বিজুরি চমকালো। সেই একটুকু আলোয় এখানের পলিথিন ছাওয়া ছোট-ছোট খুপরি ঘরগুলোকে বড় অদ্ভুত লাগে, অথচ এই ঘরগুলোয় বসবাসকারীরা বড় দ্বিধাহীন, সুখী, নির্লিপ্ত। তারা যে যার মতো ঘুমোচ্ছে। রাতগভীরে ঘর্মাক্ত শরীরে বাতাসের স্পর্শ পেয়ে তাদের ঘুমের গভীরতা আরও বাড়ছে।
রসু আজ ঘুমিয়েছে একটু দেরি করেই। সন্ধ্যা নামার আগমুহূর্তে হাতে গোল্ডলিফের একটা প্যাকেট নিয়ে সনজু এসেছিল তার কাছে। তখন ক্ষুধা পেটে নিয়ে রসু তাঁবুর পাশে একটা ভাঙা ইটের ওপর বসে ছিল। পেছনের বুয়েটের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রনিও এরইমধ্যে কয়েকবার ক্ষুধার কথা রসুকে জানিয়েছে। বার কয়েক শোনার পর রনিকে সে পাঠিয়েছে রাস্তার উল্টো পাশের শেফালির ভ্রাম্যমাণ ভাতের দোকানে। বলে দিয়েছে, শেফালিরে আমার কথা কইস।
শেফালি এই পায়ে হাঁটা পথের ওপরেই তার খুপরির পাশে তিন বেলা ভাত রাঁধে, সঙ্গে মাছের ঝোল। এখানে এই রাস্তার ওপর প্রায় একবছর ধরে তার ব্যবসা রমরমা। রিকশাচালক, ভ্যানচালক আর ক্লান্ত পথচারী তার কাস্টমার। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত হয়ে তারা আসে শেফালির কাছে। শেফালি তখন হাসিমুখে চটজলদি তার বহুব্যবহৃত থালা ধুয়ে তার ওপর গরম ভাত বেড়ে দেয়। চামচে ভরে মাছসহ ঝোল তুলে দেয় থালার এক কোণায়। ভাতের ওপর। মাছের ঝোলমাখা গরমভাত খায় তারা। চাইলে আরও ভাত তরকারি দেয় শেফালি। কার্পণ্য করে না। শুধু কেউ বাকি চাইলেই শেফালি ক্ষেপে যায়।
ছেলেকে টাকা ছাড়া শেফালির কাছে পাঠিয়ে সে কথাই বসে বসে ভাবছিল রসু। একটু পরই কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলো রনি। ভাত দেয়নি শেফালি। বলেছে, আগের বাকি টেকাগুলাই তোর বাপ অখনো দেয় নাই। যা ভাগ।
শুনে রাগে ফুসতে থাকে রসু। না হয় কয়টা টাকা রসুর কাছে সে পায়। তাই বলে এতটুকু রনিকে সে এভাবে ফিরিয়ে দেবে? শেফালি কি মানুষ! অথচ জমিলার সঙ্গে কত ভাব ছিল এই শেফালির। সময়ে-অসময়ে জমিলা চলে যেত শেফালির ঘরে। শেফালিও কত মাড়িয়েছে এ পথ। সেই জমিলা মরার কয়দিন পরই শেফালির এই রূপ! বিপদে মানুষ চেনা যায়। সনজুই তখন একটা দশ টাকার নোট দিলো রনিকে। রনি টাকাটা নিয়ে সামনের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে খেতে আরম্ভ করেছে।
মরার দিনও জমিলা প্রতিদিনের মতোই কাজে যাওয়ার জন্যই হলুদ রঙের ছাপা শাড়িটা পরে ঘর থেকে বেরিয়েছিল। বয়স তো তার বেশি ছিল না। গায়ের রঙটা ছিল শ্যামলা। সারাদিন খেটেও তার স্বাস্থ্য ভালো ছিল। শুধু পান খেয়ে খেয়ে দাঁতগুলো তার কালচে হয়ে গিয়েছিল। একটু পর পর পান খেতো বলে ঠোঁটের কোণে সবসময় পানের লাল দাগ লেগেই থাকতো। কাজ শেষে বিকালে ফেরার পথে বাসের ধাক্কায় সে লাশ হয়ে গেলো। নিজেরই তাজা রক্তে তার সারা শরীর মাখামাখি হয়ে গেলো। মাথাটা থেতলে গিয়েছিল।
পাশের ঘরের ছেলে সুরেশ এসে নেশার আড্ডায় খবরটা যখন রসুর কানে দিলো, তখন সে নেশায় চুর। গাঁজার ঘোর তখনো কাটেনি। খবরটা শুনে ‘অ্যাঁ’ বলে রসু কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো সুরেশের দিকে। আবারও ‘তোর বউটা মরে গেছে’ শুনে কপাল চাপড়ে নাকি সুরে কাঁদতে শুরু করলো রসু। আড্ডার অন্য সাঙ্গপাঙ্গরাও বলতে থাকে ‘তোর বউটা মরে গেছে’, ‘তোর বউটা মরে গেছে রে রসু’।
সন্ধ্যা হতে হতে জমিলার সারা গায়ে মাখামাখি ছোপ ছোপ রক্ত শুকিয়ে কালচে হয়ে গেলো। ততক্ষণে রসুর নেশা উবে গেছে। তখনো রসু বুঝতে পারছে না কোথায় দাফন হবে জমিলার। ফরিদপুরে জমিলার বাপের বাড়িতে সব জানিয়েছে সে। তারা জমিলার লাশ চায়। কিন্তু ঢাকা থেকে কিভাবে সে নিয়ে যাবে লাশটা? রসু তখন ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় বসলো গামছা পেতে। মানুষের দয়া ভিক্ষায় যা পেলো, তাই দিয়ে তারা জমিলার লাশ নিয়ে গেলো ফরিদপুর। দাফনের সব কাজ শেষ করে একদিন পর তারা ঢাকা শহরে ফিরে এলো। এসে রসুর যেন কিছুই ভালো লাগে না। যতটুকু না জমিলার না থাকার দুঃখে, তার চেয়ে বেশি পয়সার অভাবে তার রসদ কিনতে না পারার দুঃখে আর মা হারা রনির মুখের দিকে তাকিয়ে। জমিলা যতদিন ছিল, ততদিন তার কত কিছু নিয়ে ভাবতে হয়নি, সেসব রসু এখন বুঝতে পারে—প্রতিমুহূর্তে-প্রতিদিন।
সনজুর আনা বিশেষ উপায়ে বানানো সিগারেটে একটা জোরেসোরে টান দিয়ে খানিকটা ধোঁয়া নাক দিয়ে বের করে দিয়ে রসু বললো, সনজু বাই খিদায় জান যায়।
সনজু ঘোলাটে চোখে সামনের রেইনট্রি গাছটার দিকে তাকায়। পকেট হাতড়ায়। দুইটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দেয় রসুকে। দেখে রসুর চোখ চকচক করে ওঠে। এক প্লেট ভাত দুজনে ভাগ করে খায় ওরা। অন্য এক প্লেট খায় রনি। শেফালির দোকানে তারা যায়নি। রসু বরং এখন চায় শেফালির ব্যবসা লাটে উঠুক। আর সে খাবে না তার দোকানে। খাওয়ার পর যে টাকা থাকলো সে টাকায় তারা পুরিয়া কেনে। এতটুকু রনি মাহীন গুমট খুপরি ঘরটায় একা একাই ঘুমিয়ে পড়ে। রসু তার ঘরের পাশের ফুটপাতেই ইট পেতে বসে থাকে। সনজুও আছে তার সাথে। মুখোমুখি বসা তাদের মাথার ওপর ধূসর ধোঁয়া কুণ্ডুলী পাকিয়ে উড়তে থাকে। রাত গড়িয়ে গভীর হতে থাকে। ধীরে ধীরে ফুটপাতে লোকজনের আনাগোনা কমতে থাকে কিনা, সেদিকে ওদের ভ্রূক্ষেপ নেই।
হঠাৎ নেশার ঘোরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে রসু। সনজু তখন ওর পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেয়। রসু মাথা নাড়ে। হ্যাঁ, সে সব বোঝে। এই পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে হয়। একদিন তারও চলে যেতে হবে। চোখ মুছতে মুছতে রসু উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, সনজু বাই আমার ঘরটা কোনদিকে?
সনজু খানিকক্ষণ চোখ পিটপিট করে। এরপর বলে, এই যে। তোমার পেছনে। যাও ঘুমাও।
বলে সনজুই আগে ঢুকে যায় রসুর তাঁবুঘরে। তারও অনেক পরে ঘুম এসেছিল রসুর চোখে।
সকালে হারু মুন্সীর বৌয়ের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো রসুর।
শেষ রাতে কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ের তোড়ে রসুর ঘরের পাশের আমগাছের একটা মস্ত বড়ো ডাল ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। তার পাশেই রাখা হারু মুন্সীর ভ্রাম্যমাণ চটপটির দোকানের একপাশ সেই ডাল পড়ে ভেঙে গেছে। হারু মুন্সী কার বুদ্ধিতে দোকানটা এমন জায়গায় রাখলো? কারও কুপরামর্শ শুনলে কপালে এমনই হয়। তার মতো সরল বৌয়ের কথা শুনলে এমন সর্বনাশ হতো না। এখন কী হবে?
ঘুম থেকে জাগার পর থেকেই সে দম মেরে বসে আছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। শরীরটা ভারী দুর্বল লাগছে। বিছানায় রনিকে না দেখতে পেয়ে তাঁবুর বাইরে এসে ছেলেকে ইতিউতি খুঁজতে লাগলো। পেলো না কোথাও। পাশের ঘরের সুরেশ নাকি তাকে আমগাছের ভাঙা ডালের পাশে ঘুরঘুর করতে দেখেছে একটু আগে।
খুঁজতে খুঁজতে সেখানেই পাওয়া গেলো রনিকে। কিছু ভাঙা ডাল জড়ো করছে রনি। তখনই শেফালির রুক্ষ কর্কশ গলা শোনা গেলো, ‘আইজ রান্দি নাই, অন্যহানে যান’। জানা গেলো, আজ শেফালির চুলা বন্ধ। কারণ, তার চুলা জ্বালানোর মতো শুকনা খড়পাতা আর অবশিষ্ট নেই, এমনকি চুলাও গতরাতের ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।
______________________________________________________________
আমার ঘরে আইবা শেফালি?
______________________________________________________________
এতে রসু মনে মনে খুশিই হয়েছিল। কিন্তু শেফালির মুখটা আজ খুবই মলিন দেখায়। মনে হয় সারারাত ঘুমায়নি শেফালি। ঘুমাবে কেমন করে? ওর ছাউনিটার খানিকটা তো ছেঁড়া। নিশ্চয়ই রাতে সেখান থেকে চুয়ে চুয়ে তার বিছানায় জল গড়িয়ে পড়েছে। ভেবে রসুর একটু মায়াই হলো আজ। কিন্তু কম টাকা তো রোজগার করে না শেফালি। ছাউনিটা সারাতে পারে না? চোখ দুটোও ফুলে আছে তার। বহুদিনের আধোয়া রুক্ষ চুলগুলো পিঠের ওপর পড়ে আছে। ফিনফিনে হাত দিয়ে আঁচলের খুঁটে নাকটা মুছে এক ঝটকায় চুলগুলো খোপায় ভরে নিলো শেফালি।
জমিরউদ্দিনের সাথে শেফালির সংসারটা যে সুখের না, সে-কথা সবাই জানে। এখানে আসার আগে তারা থাকতো কামরাঙ্গীর চর। শেফালি বাসাবাড়িতে কাজ করতো আর জমিরউদ্দিন চকবাজারে ফরমায়েস খাটতো এক মহাজনের। সেই মহাজন প্রতিদিনই জমিরউদ্দিনকে হাতখরচের জন্য কিছু টাকা দিতো। জমিরুদ্দিন সেই টাকা নিয়ে জুয়ার আসরে চলে যেত রোজ। সর্বস্বান্ত হয়ে বাসায় ফিরে শেফালিকে না পিটালে যেন তার তখন চলতই না। একদিন হঠাৎ জমিরউদ্দিনের দুই পা কাটা পড়লো রেললাইনে। এরপরই ওরা এই ফুটপাতে চলে এলো। সেই থেকে রাতদিন ঘরে শুয়ে শুয়ে কাটে জমিরুদ্দিনের। ঘরে শুয়ে শুয়েই শেফালিকে একটু পরপর গালাগালি করে।
আজ শেফালির পাশে গিয়ে বসে রসু। সকাল বেলা ঠা ঠা রোদ উঠেছে। শেফালি ফুটপাতের রোদে তার জমানো ভেজা পাতাখড়ি মেলে দিয়েছে। পথচারীরা সেগুলোকে পায়ে পায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে। রসু মৃদুস্বরে শেফালির কাছে জমিরুদ্দিনের শরীরের খবর জানতে চায়। শেফালি তখন আড়চোখে তাকায় রসুর দিকে। এখানের কেউ জমিরুদ্দিনকে পছন্দ করে না। কেউ তার খোঁজও নেয় না। তাঁবুর ভেতরে শুয়ে থাকা জমিরুদ্দিন মনে মনে খুশি হয়ে ভেতর থেকে রসুকে ডাক দেয়। রসু যায় জমিরুদ্দিনের কাছে। বিছানার ওপর বসে। গল্পগুজব করে। জুয়া খেলে কতবার কত টাকা সে জিতেছে, সেই গল্প করতে করতে জমিরুদ্দিনের মুখটা চিকচিক করতে থাকে। হঠাৎ ব্যাপারটা খেয়াল করলো রসু! জমিরুদ্দিন লুঙ্গিটা খুলে আবার গিঁট দেওয়ার সময় তার লুঙ্গির কোচ থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট তার কোমরের পেছনে বিছানার ওপর পড়েছে। জমিরুদ্দিন সেটা খেয়াল করেনি। গল্প করতে করতে সে বেখেয়ালি। রসু আরও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চায় জুয়া খেলার খুঁটিনাটি। হঠাৎ জড়িয়ে ধরে জমিরুদ্দিনকে জানায় সে এমন গুণের অধিকারী মানুষ আর দেখেনি। বলতে বলতে ডান হাতে পাঁচশো টাকার নোটটা তুলে নেয়। আরও কিছুক্ষণ পর সে বের হয় জমিরুদ্দিনের স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘর থেকে। বাইরে শেফালিকে আর দেখতে পেলো না তখন।
খোদার অশেষ রহমত! কিছু টের পায়নি জমিরুদ্দিন। ভাবতে ভাবতে রসু সোজা হেঁটে চলে গেলো আজিমপুর গোরস্থানে। ওখানে গেলে মাঝেমধ্যে গোর খোঁড়ার কাজ পাওয়া যায়। তাতে কিছু পয়সা জোটে। আজ অবশ্য তার কাছে অনেক টাকা আছে। আগে পাঁচশো টাকার নোটটা ভাঙানো দরকার। একটা পাউরুটি আর কলা কিনতে গিয়ে রনির কথা ভাবে সে। ছেলেটা কিছু খায়নি। শেফালি কি খেয়েছে? পাঁচশো টাকার নোটটা তো নিশ্চয় শেফালিরই। জমিরুদ্দিন তো কোনো রোজগার করে না। কী পেয়েছে শেফালি তার কাছ থেকে? একটু ভালো করে কথাও তো বলে না জমির। আহা। শেফালির জন্য মায়া হয় রসুর।
ছিপছিপে গড়নের কালো শেফালির বয়স কত, তা রসু জানে না। জানার প্রয়োজনও নেই তার। সে চায় শেফালি একটু সুখে থাকুক। হাসি হাসি মুখে পান গুঁজে ভাত রাঁধুক। একটু সুখের ঠিকানা পেলে শেফালি কি এতটুকু রনিকে ভালোবেসে কোলে তুলে নেবে না! ভেবে ভেবে শেফালিকে তার খুপরি ঘরটায় তার বুকে কল্পনা করে নেয় রসু।
সূর্যটা তখন ঠিক মাথার ওপরে। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। শেফালির ঘরের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে রসু শেফালিকে ঘরের বাইরেই পেলো। রসুকে দেখেই শেফালি খিস্তি-খেউড় আরম্ভ করলো। তার পাওনা টাকা কেন দিচ্ছে না রসু? রসু মনে মনে আশ্বস্ত হয়। কারণ পাঁচশো টাকার কথাটা শেফালি জানে না। কোনো কথা না বলে রসু শেফালির দিকে বাড়িয়ে দিলো তার পাওনা একশো চল্লিশ টাকা। টাকা পেয়ে থামলো শেফালি। রসু তখন মৃদুস্বরে বলে, আইজ তো রান্দো নাই। চলো আমার লগে, তোমারে ভাত খাওয়াই। শুনে শেফালির শুকনো ঠোটে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। প্রচণ্ড গরমে তার কালো ঘামে ভেজা মুখটা চিকচিক করছে। রসুর ইচ্ছা করে শেফালিকে নিয়ে ঠাণ্ডা জলের কোনো এক নদীতে ডুব দেয়।
রনিকে খুঁজে এনে তিনজনে আজিমপুর গোরস্থানের পাশের ভাতের দোকানে ভাত খায়। খাওয়ার পর খিলিপান কিনে রসু শেফালির হাতে গুঁজে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিড়িতে জোরেসোরে টান দেয়। মুখের ধোঁয়াটা উড়িয়ে দেয় আকাশে। পানের রসে শেফালির ঠোঁট লাল হয়ে ওঠে।
সন্ধ্যাবেলার শেষ আলোটুকু রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলে রসু আর সনজু একসঙ্গে বসে চুরুটে পুরিয়া ভরে। শুরু হয় ধোঁয়া ধোঁয়া বাতাস তৈরির খেলা। চোখ দুটো লাল টকটকে হলে সনজু ফুটপাত ধরে হেঁটে চলে যায়। রসু তখনও চোখ বন্ধ ক’রে একটা আধলা ইটের ওপর বসে থাকে। হঠাৎ শেফালির ডাকে চোখ মেলে তাকায়। রাত হয়ে গেছে। রসু কি খাবে না? জানতে চায় শেফালি। রাতে ভাত রেঁধেছে সে। নিয়ন আলোয় রসুর চোখে শেফালিকে বড়ো মায়াবতী দেখায়। হাত বাড়িয়ে শেফালির হাতটা ধরে রসু বলে, আমার ঘরে আইবা শেফালি? বলেই রসু লাল চোখে তাকিয়ে থাকে। শেফালি তখন রসুর পাশের পায়ে হাঁটা রাস্তায় বসে। আবছা অন্ধকারে রসুর চোখে চোখ রাখে।