তিতাসের পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অনেক নৌকা। সারিবদ্ধ দাঁড়ানো নৌকাগুলোর কোনোটা ছৈঅলা, কোনোটা ছৈহীন। এখানে পানসি কিংবা ময়ুরপঙ্খী নাও যেমন আছে, তেমনি আছে ছোট ছোট কুসা ডিঙ্গিও। এক সপ্তাহ ধরে একে একে এই তীরে এসে তরী ভিড়িয়েছে মাঝি-মাল্লারা। সঙ্গে এনেছে পণ্যসম্ভার। মাটির তৈরি গরু, ঘোড়া, হাতিসহ বিভিন্ন খেলনা, বাঁশের বাঁশি, তালপাতার পাখা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, মিষ্টির দোকানদার, বায়োস্কোপওয়ালা, তিনতাসের ধড়িবাজি খেলোয়াড়, সর্বরোগ সংহারী তাবিজ বিক্রেতা যেকোনো মেলা-বান্নি মাত্রই সুলভ। এ সব তো আছেই, তবে ভাদুঘরের বান্নির খ্যাতি মূলত কাঠের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় চেয়ার, টেবিল, খাট-পালঙ্ক থেকে শুরু করে যেকোনো বিলাসী সামগ্রী এবং শিমুল তুলা আর মৌসুমি ফলমূলের জন্য। যদিও বোশেখের চৌদ্দ তারিখ মাত্র একদিনেই এ মেলার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কথা, আসলে তা হয় না কখনো। মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষ না হতেই আসে জুয়াড়িরা-তিনতাসের ধড়িবাজি, গুটিওয়ালার টোকাটুকি, চরকা বোর্ডের ঘোরাঘুরি যখন শুরু হয় তখনো বান্নিমাঠের সবটাই থাকে ফাঁকা। পরপরই দূর-দূরান্তের শহর থেকে ফার্নিচার মার্টের মালিক-কর্মচারীরা এসে নৌকা বোঝাই মালামালসহ নোঙ্গর ফেলে এখানে। এরপর আসে ফল বিক্রেতার দল। তখন পাকা কাঁঠাল, ফেটে যাওয়া বাঙ্গি আর তরমুজের সুগন্ধে বান্নিমাঠে আগতরা মাঠের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে যেখানে ফলমূলের দোকানগুলো বসে প্রতিবার, একবার না যেয়ে পারে না। মাঠের দক্ষিণ-পূর্বে নদীর পাড়ঘেঁষে বসে ফলের দোকান, উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ফার্নিচার বিক্রেতারা আর তাদের মাঝখানে মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র সাজায় কুমারেরা। সবার আগে মেলায় পৌঁছে যাওয়ার সুবাদে নদীপাড়টা সবসময়ই থাকে তাদের দখলে। সাধারণত ফলের দোকানের পশ্চিমেই প্যান্ডেল সাজায় পুতুলনাচিয়েরা, তাদের পাশে নাগরদোলা আর বায়োস্কোপওয়ালা। অন্য দোকানদাররা বসে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। যদিও অলিখিত এ নিয়ম তবু তা প্রতিবছরই মেনে চলে সবাই। এইসব নিয়ে ভাদুঘরের বান্নির বিভিন্ন অংশ ফলবাজার, তুলাবাজার, কাঠবাজার, কুমারবাজার ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত।
পুতুলনাচের প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে হন হন করে হেঁটে নদীপাড়ে আসে বিপিন পাল। তার হাঁটার গতি আর অকস্মাৎ থেমে যাওয়ার মধ্যে স্পষ্টত একটা বৈপরীত্য চোখে পড়ে। প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে সে যখন হাঁটতে শুরু করেছিলো তখন দেখলে যে কেউ ভাবত কোনো কারণে খুব ব্যস্ততা আছে তার। অথচ এখন সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বিষণ্ন মুখে যেন তার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে কোনো কষ্টে। বিপিন পাল নদীপাড়ের যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই কাঁঠাল ব্যাপারীরা ভিড়িয়েছে তাদের নৌকা। ব্যাপারীদের সঙ্গে ক্রেতার দরদামের হট্টগোল, নাগরদোলার অবিশ্রাম দুলুনি, জুয়াড়িদের গুটি চালচালি সব মিলিয়ে এখানকার অতিচেনা এ দৃশ্যটি বারবার খুঁটিয়ে দেখে যে বিপিন পাল, আজ ভিড়ের মাঝখানে থেকেও এ সমস্তে কোন আকর্ষণবোধ করছে না সে। তার আকাশমুখী দৃষ্টি কী যেন হারায়ে খুঁজে।
পুতুলনাচিয়ে বিপিন পাল খুব সকালে এসে মেলায় পৌঁছেছে। সঙ্গে এসেছে গোপাল ঢুলি, মন্তাজ মিয়ার কিসসার দল আর বিপিন পালের প্রিয় শিষ্য জওহর লাল ও কিশোরী কন্যা উমা। গতকাল বিকেল থেকে রাত অবধি রিহার্সেল শেষে দলটি বিপিন পালের বাড়িতেই রাত কাটিয়েছে। কেবল গতকাল নয়-গত কয়েকদিন ধরেই বিপিন পাল পুতুলে একটা পালা মঞ্চস্থ করার রিহার্সেল দিয়েছে। বড় দরদ দিয়ে পালাটা গায় মন্তাজ মিয়ার দল-সনকার কান্না, বেহুলার বিলাপ তাদের আন্তরিকতায় সকলেরে কাঁদায় আর মন্তাজ মিয়া যখন চাঁদ সওদাগরের সংলাপ বলে, গালি দেয় চেংমুড়ি কানিরে তখন মনে হয় সে নিজেই চাঁদবেনে হয়ে গেছে।
যান্ত্রিক নিয়মে সুতো দিয়ে নিয়ন্ত্রিত পুতুলনাচে প্রাণবন্ত গল্পের সমাবেশ না হলে দীর্ঘক্ষণ অনুষ্ঠান চালানো যায় না। বাঘ, কুমির আর স্বামীহারা গৃহস্থ বধূর গল্পের ফাঁকে তাই অনুপ্রবেশ করে প্রিন্সেস জরিনা আর রূপসী ললিতার নাচ। এসব বেলেল্লাপনা একেবারে অসহ্য বিপিনের। মনে পড়ে খুব ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর যখন সোবহান চাচার হাত ধরে গ্রাম-গ্রামান্তরের পথে ঘুরে বেড়াতো সেইসব দিনের কথা। তখন কোনো মেলাবান্নিতে পুতুল নাচাবার জন্য সরকারি অনুমতির দরকার হতো না। কেবল মেলাবান্নি নয়; ফসল কাটার পর ওরা সদলবলে চষে বেড়াত গ্রামের পর গ্রাম। কোথাও এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে ডাক আসত পাশের গ্রাম থেকে। আজকালকার মতো কারো ভাড়াটে হওয়া লাগত না তখন; নিজেরাই প্যান্ডেল সাজাত তারা, আয়-ব্যয়ের সবটাই ছিলো নিজেদের।
আবদুস সোবহানের দলে বিপিন যোগ দিয়েছিল একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। মঞ্চের আড়ালে বসে সে যখন কচিকণ্ঠে সংলাপ বলতো দর্শকরা বুঝতেও পারত না এই কণ্ঠ কোন নারীর নয়। সোবহান ওস্তাদের দলে কাটানো সেইসব দিনের স্মৃতি বিপিনের রক্তে ঢোল বাজিয়ে এক কিশোরের ঘুম ভাঙ্গায়, যে কিশোর ঠাঁই পেয়েছিল বেহুলা-লখিন্দরের পালা, গফুর রাজা আর বানেছা পরীর কিসসা, মধুমালা-মদনকুমার, রজকিনী-চণ্ডীদাস, ইউসুফ-জোলেখা ও লায়লী-মজনুর প্রেমের জগতে। এছাড়া, রাধা-কৃষ্ণ কাহিনিতে বাল্যলীলা, গোষ্ঠ, নৌকা বিলাস, দানখণ্ড, বংশী শিক্ষা, মানভঞ্জন, অক্রুর সংবাদ, দূতী সংবাদ, মাথুর ইত্যাদি খণ্ডে বিভক্ত করে মঞ্চস্থ করেছে সোবহান ওস্তাদের বীণাপাণি অপেরা। এসব পালায় বেহুলা, বানেছা, জোলেখা, মধুমালা, রজকিনী আর রাধার সংলাপ বলার দায়িত্ব ছিল বিপিনের। কিন্তু সে কেবল সংলাপ বলে নিজের কাজটুকু শেষ করেই ক্ষান্ত হয়নি। গভীর মনোযোগ দিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার যে স্বভাব ছিল তার সহজাত তাতেই সোবহান ওস্তাদ আকৃষ্ট হয় বিপিনের প্রতি। বর্ণপরিচয় থেকে মহাজন পদাবলী-সোবহান ওস্তাদ নিজের অর্জিত সকল জ্ঞান তিলে তিলে দান করে বন্ধুপুত্রকে।
________________________________________________________________________________________________
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চম্পকনগর গ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহার যেমন সন্দেহ নেই একদা চম্পকনগর গ্রামে চাঁদ সওদাগর নামে দোদণ্ড প্রতাপশালী এক সওদাগর ছিল, তেমনি নিঃসন্দেহ ছিল সোবহান ওস্তাদ। শিমরাইলকান্দির বিপিন পাল, নাটঘরের গোপাল ঢুলি, সুহিলপুরের জওহরলাল, রামরাইলের মন্তাজ মিয়াসহ আরও অনেকেই এ গল্পে বিশ্বাস স্থাপন করে প্রশ্ন ব্যতিরেকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বুড়ো বজরায় চড়ে বিপিন পাল।
________________________________________________________________________________________________
বিপিন পাল যখন পুতুলনাচের প্যান্ডেলে আয়োজনকারী ছেলেদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শেষে বেরিয়ে আসে জওহরলাল তখন ছিল না সেখানে। বিপিন পাল বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই জওহরলাল ফিরে আসে এবং উমার কাছে সব শুনে বিপিন পালকে খুঁজতে বেরোয়। যদিও জওহর অনুমান করতে পারে বান্নির সবটা না ঘুরে বিপিন পাল বাড়ির রাস্তা ধরবে না, তবু প্রথমেই সে বাড়ি ফেরার রাস্তাতেই খুঁজতে যায়। জওহরের অনুমানই সত্য হলো দৃষ্টিসীমায় বিপিন পালের মতো কেউ নেই। কিন্তু বিপিন পালকে খুঁজে না পেলেই নয়। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্যান্ডেল থেকে জওহরের পিছুলাগা বাবরিচুলা ছোকরাটা। এই ছেলেই বিপিন পালের বাড়ি গিয়েছিল পুতুলনাচের দলকে কন্ট্রাক্ট করতে। ‘যেই প্যান্ডেলে আমি পুতুল নাচামু হেই প্যান্ডেলে কোনো মাইয়া মানুষ নাচাইতে পারবা না’—বিপিন পালের দেওয়া এ শর্ত সে মেনে নিয়েছিল বিনাবাক্যে। বিপিন পালের শর্ত মেনে নেওয়ার সময় ছোকরার মনে কী ছিল, তা জানা নেই জওহরের। তবে কিছুক্ষণ আগে জওহর জানতে পেরেছে ছোকরা তার পার্টনারদের সঙ্গে আলাপ না করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। ওরা অবশ্য জওহরকে বলেছে, পুতুল নাচের প্যান্ডেলে কেবল পুতুল নাচানোই ওদের উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হচ্ছে না এজন্য যে, অন্য একটি দলও প্যান্ডেল সাজিয়েছে এবারের বান্নিতে এবং পুতুলের সঙ্গে একজন প্রিন্সেসের নাচ দেখানোর ব্যবস্থা করেছে বলে ব্যাপক ঘোষণা দিয়েছে তারা। সুতরাং বাবরিচুলার দলও ব্যবসা সফল করার জন্য তড়িঘড়ি করে ডেকে এনেছে এক নাচনেওয়ালিকে।
ছোট ছোট নৌকাগুলোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বজরা থেকে এক বৃদ্ধ চিল্লাইয়ে ডাকে বিপিন পালকে। নিজের নাম শুনে বিপিন পাল চকিতে মুখ তুলে দেখে সোবহান ওস্তাদের দোস্ত গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা, যাকে ওস্তাদ ডাকত চাঁদ সওদাগর বলে, ইশারা করছে বজরায় উঠতে। চম্পকনগরের গৌরাঙ্গ সাহার আছে দুনের পর দুন কাঁঠাল বাগান, কিন্তু শুধু বাগান করেই সাওয়ের পুত খুশি হতে পারেনি কখনো, সওদাগরিতেও তার মন। যার গ্রাম চম্পকনগর, পেশায় যে সওদাগর সোবহান ওস্তাদ তারে চান সওদাগর ডাকবে এটাইতো স্বাভাবিক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চম্পকনগর গ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহার যেমন সন্দেহ নেই একদা চম্পকনগর গ্রামে চাঁদ সওদাগর নামে দোদণ্ড প্রতাপশালী এক সওদাগর ছিল, তেমনি নিঃসন্দেহ ছিল সোবহান ওস্তাদ। শিমরাইলকান্দির বিপিন পাল, নাটঘরের গোপাল ঢুলি, সুহিলপুরের জওহরলাল, রামরাইলের মন্তাজ মিয়াসহ আরও অনেকেই এ গল্পে বিশ্বাস স্থাপন করে প্রশ্ন ব্যতিরেকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বুড়ো বজরায় চড়ে বিপিন পাল। সোবহান ওস্তাদ যতদিন বেঁচেছিলেন প্রায়ই বিপিনদের সঙ্গে দেখা হতো গৌরাঙ্গ সাহার। শুধু মেলা-বান্নিতেই নয়, বছরে দু’তিনবার ওরা বায়না পেতো গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে। ওস্তাদের মৃত্যুর পরও মাঝে মধ্যে বিপিন পালকে পূজা-পার্বনে ডাক পাঠাত গৌরাঙ্গ সাহা। কিন্তু আজকাল পূজা-পার্বনে আগেকার দিনের মতো ঘটা হয় না, ফলে বিপিন পালেরও ডাক পড়ে না আর। কাঁঠাল বোঝাই বজরার শেষপ্রান্তে বসা গৌরাঙ্গ সাহার কাছে পৌঁছামাত্রই বুড়ো হাঁক ছেড়ে হুক্কায় আগুন দিতে বলে কামলাদের একজনকে। খানিকক্ষণ অভাবনীয় নীরবতায় হুক্কা টেনে বুড়ো বলে, ‘নেতারটেকের বন্দোবস্তি অইয়া গেছেগা যে খবর পাইছনি বিপিন?’ এ খবর বিপিন পালের জানা নেই জেনে আরো বলে, ‘হুমায়ুন কবির টেকের বন্দোবস্তি পাইছে। সে পুব এলাকাত বাড়ি বাইন্ধা পুর্বাঞ্চলকে ভোট বাক্স বানাইবার চেষ্টা করতাছে।’ অনেক সময় নিয়ে গৌরাঙ্গ সাহা যা বলে তাতে জানা যায় বহুকাল ধরে লোকজন চম্পকনগর গ্রামের যে পরিত্যক্ত ভূমিকে মনসাপালার নেতাই ধোপারটেক বলে জানে, ভাসানের সময় তারা যে টেকে পূজা দেয় তা একব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে আইনের মারপ্যাঁচে।
সোবহান ওস্তাদ কিশোর বিপিনের কাছে বলত, ‘কালীদহ নামে এক সায়র ছিল ত্রিপুরার পাহাড় আর মেঘনা নদীর মধ্যিধানে। ত্রিপুরার পাহাড়ঘেঁষে কালীদহের তীরে ছিল চম্পক নামে এক নগর। চম্পকনগরে ছিল না কোনো রাজ-রাজড়ার শাসন। ছিল এক সওদাগর, নাম তার চাঁদ। সওদাগরের ছিল চৌদ্দ ডিঙ্গার বহর আর বহু লোকলস্কর।’ বলতে বলতে ওস্তাদ কোনো কোনো সময় গেয়ে ওঠতো চাঁদ সওদাগরের সঙ্গে মনসাদেবীর বিরোধের গান। ওস্তাদের গলায় সুর ছিল না, কিন্তু আশ্চর্য দরদে গাওয়া তার গান শ্রোতার মন জুড়ায়ে দিত। বিপিন যেবার প্রথম নেতারটেকে যায় তারও বহু আগে ওর জানা হয়ে গিয়েছিল মনসাপালার সবটুকু। তাই যখন ওস্তাদ বলেছিল বুঝছ বিপিন এই অইলগা নেতারটেক। এই টেকে বাস করত নেতা ধোপানি। তখন তার চোখের সামনে ভেসে ওঠেছিল ব্যাঘ্ররূপী নেতার ছবি। সাপের ছোবলে নিহত স্বামীর লাশ সঙ্গে করে ভেলায় ভেসে যাচ্ছে বেহুলা সতী। বাঘের রূপ ধরে নেতা ধোপা বেহুলার কাছে এসে খেতে চাইল লখিন্দরের লাশ। বেহুলার এক কথা, ‘আগে আমারে খাও, তারপরে খাইও মোর স্বামীরে।’
বিপিন পাল মনসামঙ্গল পালা মঞ্চায়নের জন্য যে পুতুলগুলো প্রস্তুত করেছে তার মধ্যে একমাত্র বাঘটাই পুরনো, আর সব পুতুল নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে তার। যদিও বিপিনের পৈতৃক পেশা পুতুল নির্মাণ, তবু কেবল এ পালার জন্যই প্রথম মাটি টিপে টিপে পুতুল বানিয়েছে সে, গতবছর দেশান্তরিত মেয়ের বাড়ি কৃষ্ণনগরে বেড়াতে গিয়ে যেমন পুতুল দেখেছিল ঠিক তেমন করে। ওস্তাদের আমলে তৈরি কাঠের পুতুলকে কৃষ্ণনগরের মাটি আর কাপড়ে নির্মিত পুতুলের কাছে বড় প্রাণহীন মনে হয়েছিল তার। সে বেশ বিস্মিত হয়েছে ওখানে মনসাপালার জনপ্রিয়তা দেখে। সেই থেকে বিপিন পাল ভেবেছে কেমন করে সুন্দর করে তোলা যায় পালাটি।
গৌরাঙ্গ সাহা বিপিনের হাতে হুক্কাটা ধরিয়ে দিয়ে অস্পষ্ট উচ্চারণে বারবার গুনগুনিয়ে চলে ভক্তিগীতের দুচরণ। উচ্চারণ স্পষ্ট না হলেও বহুবার শোনা এ গীতের পাঠোদ্ধার করতে অসুবিধা হয় না বিপিন পালের। ‘নামো মনসা দেবী শঙ্কর দুহিতা।/জরৎকারু মুণিপত্মী আস্তিকের মাতা।’ চরণদুটির পরের চরণগুলো বিপিনের মুখস্থ আছে কিন্তু এখন বাকি অংশটুকু শুনতে খুব ইচ্ছে করছে তার, অথচ অনুরোধ না করে অপেক্ষা করছে কখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরের অংশে যাবে গৌরাঙ্গ সাহা। গৌরাঙ্গের আহ্বানে গভীর আর্তি ফুটে ওঠছে, মনে হচ্ছে সত্যি দেবীর আগমন চায় সে। ভক্তের আপ্লুত সুর বিপিনের মধ্যে একধরনের স্থিতি প্রতিষ্ঠা করে; প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে যে অস্থিরতায় আক্রান্ত হয়েছিল সে, গীতের সুরে প্রশমিত হয়েছে, তা প্রবল ধূলিঝড়ের পর বৃষ্টির ছোঁয়ায় যেমন শান্ত হয় মাটি। পরের অংশটুকু শোনার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। এবার বেশ স্পষ্ট উচ্চারণে গান ধরে গৌরাঙ্গ সাহা—
ব্রহ্মার দুর্লভ রথ দিয়াছেন বাপে।
সেই রথে নামো, মাগো, পূজার মণ্ডপে॥
হংসবাহন রথে জয় পদ্মাবতী।
অষ্টনাগ লইয়া নামো দেবী পশুপতি॥
জালু-মালু দুই ভাই কার্তিক-গনাই।
সঙ্গে করে নিয়া নামো পাত্র নেতাই॥
গীতের সবটুকু শেষ না করেই থামে গৌরাঙ্গ সাহা। বিপিন পাল বুঝতে পারে নেতারটেকের কথা বলতে বলতেই এই গীত মনে পড়ছে তার। ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচিত মাটি জবর দখল হয়ে গেলো। মাটি বড় নিঃশব্দে মেনে নেয় সব অনাচার। দুঃখ বিপিনের এভাবে মাটির স্বত্ব বেচাকেনা হয় বলে; কুমারের ছেলে পুতুল নাচাতে শিখে মাটির কাজে যায়নি আর, কিন্তু মাটির প্রতি কুমারের সহজাত মমত্ব তারও আছে। এখন ব্যাখ্যাতীত এক অনুভূতিতে তাড়িত হয় সে, বুঝতে পারছে না নিজের ভেতরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধরনটাকে; মনে হয় হঠাৎ কোন পড়ন্ত বিকেলে গাছের পাতায় ছড়িয়ে পড়া আলোকে যেমন বিস্ময়কর ও অচেনা লাগে তেমনি অচেনা এক অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় ঘটছে তার। নিজের কাছে নিজেকে স্পষ্টতর করে তোলার চেষ্টা চালায় সে। বান্নি মাঠে আগত লোকজনের ভিড়, শিল্প নিয়ে তার ব্যর্থতা, গৌরাঙ্গ সাহার দুঃখবোধ সবকিছুর পারম্পর্য তাকে আত্মবিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাতে চিন্তার যে সূত্র খুঁজে পায় সেখানে জনশূন্য মাঠে নিজেকে দিকভ্রান্ত পথিকের মতো নিঃসঙ্গ মনে হয়। একে একে ছয়পুত্রের মৃত্যু, স্বর্গের বাগানতুল্য সুদৃশ্য গুয়াবাড়ির পতন, ডুবে যাওয়া ডিঙ্গার বহর, লখিন্দরের মৃত্যু, সনকার কান্না, বেহুলার বিলাপ কী এরকম নিঃসঙ্গ করে দিয়েছিল চাঁদ সওদাগরকে।
গৌরাঙ্গ সাহা আবারো নেতারটেকের প্রসঙ্গ ফিরিয়ে আনে এবং এ সূত্রে বলে দেশান্তরিত ছেলেমেয়ের কথা; ‘বুঝছ বিপিন পোলাপানে কয় যে বাবা এইদেশ আর তোমরার বাস করনের উপযুক্ত নাই। আমিঅ বুঝি কথাডা মিথ্যা না। কিন্তু নিজের দেশ ছাইড়া যামু কেমনে? দেশ ছাইড়া যাওন লাগব মনে অইলে বুকডা টনটন কইরা ওঠে। অথচ দেখ টেকের লাগাইল আমার দুই কানি খেত পানির দামে বেচতে বাধ্য করল হুমায়ুন কবির। এই অত্যাচার বুকে বড় বাজে।’ শুনতে শুনতে বিপিন পালের বুকেও ব্যথার বাদ্য বাজে। ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই বিঘা জমি পড়ছ বিপিন’—প্রশ্ন শেষে উত্তরের অপেক্ষা না করে গৌরাঙ্গ সাহা বলে, ‘হুয়ামুন কবির অইল জমিদার আর আমি অইলাম উপেন। একদিন উপেনের মতন মাটি ধইরা হাহাকার করুম।’ বিপিন পালের মেয়ে আর মেয়ে জামাই চিঠির পর চিঠিতে এখানকার পাঠ চুকিয়ে কৃষ্ণনগরে চলে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। বাবার অনীহা বুঝতে পেরে শেষ চিঠিতে ঊষা লিখেছে উমাকে যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অনেকদিনের তিক্ততায় বুকের মধ্যে যে ভারী পাথরটা স্থির হয়ে আছে একজন সমব্যথীর কাছে বলে তা হাল্কা করে নেওয়া যেত কিন্তু উমার কথা মনে পড়ায় আর বসে থাকতে পারল না বিপিন পাল। উচ্ছন্নে যাওয়া কয়েকজন ছেলের কাছে মেয়ে আর দলবল রেখে এরকম নিরুদ্বিগ্ন বসে আছে বলে ধিক্কার দিল নিজেকে। প্যান্ডেলে ফেরার পথে হঠাৎ বিপিন পালের মনে হলো উমাকে জওহরের কাছে বিয়ে দেবার যে গোপন অভিলাষ তার মনে আছে ঊষা তা টের পেয়ে গেছে এবং এ জন্যই সে উমাকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায়।
বিপিন পালকে না জানিয়ে জওহরের পক্ষে পুতুল নাচাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পুতুল না নাচিয়ে বান্নি ছাড়া সম্ভব নয়। যদি তাই করতে চায় তবে ছোকরার দল কতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠবে তা অনুমান করতে পারে জওহর। শুধু পুতুলের নাচে যেমন ব্যবসা হয় না তেমনি শুধু নাচনেওয়ালি দিয়ে প্যান্ডেল চলে না। দর্শককে বুঝ দেওয়া গেলেও পুলিশকে বোঝানো সম্ভব হবে না। ডিসি, এসপির কাছ থেকে তারা যে অনুমোদনপত্র পেয়েছে তাতে স্পষ্ট লেখা আছে, পুতুলনাচের মতো একটি লৌকিক শিল্প পরিচর্যা পাবে বিধায় নিষ্কর অনুমোদন দেওয়া গেল। পুলিশি উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হলেও প্যান্ডেলে সর্বক্ষণ পুতুলনাচের দলকে উপস্থিত রাখতে হবে। জওহরের সঙ্গী বাবরিওয়ালা ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, ওর কণ্ঠে আগুনে তাতানো উত্তপ্ত লোহার কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলের ঝাঁঝ; ‘প্যান্ডেলেঅ ফির। ওস্তাদ-ফুস্তাদের দরকার নাই আমরার। তুমিই নাচাইবা, তুমিই পেমেন্ট লইবা।’ জওহর ওকে বোঝাবার চেষ্টা করে ওস্তাদের আদেশ ছাড়া এই লাইনের কেউ সুতা হাতে তোলে না। সে অনুনয় করে বলে, ‘তুমি প্যান্ডেলে যাও আমি একটা চক্কর মাইরা ফিরতাছি।’ ছোকরা এইবার চুপ হয়ে গেলেও ওর সঙ্গ ছাড়ে না।
বিপিনের মতো সর্বস্বজ্ঞানে পুতুল নাচানোর পেশাকে গ্রহণ করতে পারেনি জওহর। পুতুল নাচানো ওর পেশা নয়, নেশা। মাছের আড়তদারিতে আয় সে মন্দ করে না। হয়তো অনেক আগেই কেটে যেত এ নেশা যদি অস্বীকার করতে পারত বিপিন পালের স্নেহবন্ধন। এক সময় বিপিন পালের কাছে অনেকেই আসত পুতুলনাচ শিখবে বলে কিন্তু অনিশ্চিত এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারেনি কেউ। বিপিন পাল তাকে প্রায়ই বলে, ‘আমি মরলে ব্যবসাপাতির একটু লস দিয়া অইলেঅ মেলাবান্নিগুলা করিছ আর অন্তত একজনরে কামডা শিক্ষা দিছ।’ তখন জওহরের মনে হয় বিপিন পাল তাকে কঠিন নাগপাশে বেঁধে দিচ্ছে যে বাঁধন থেকে মুক্ত অসম্ভব, একলব্যের মতো নিজের আঙ্গুল কেটে দিয়ে গুরুদক্ষিণা শোধ করা এরচেয়ে সহজ। মানুষ দেখতে না চাইলে কার জন্য পুতুল নাচাবে ওরা-জওহরের পক্ষে বিপিন পালের কাছে এ প্রশ্ন উত্থাপন করা অসম্ভব। সে জানে সত্যি যদি কোনোদিন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, মানুষ যতটা আশ্চর্য হবে এ প্রশ্নে ঠিক ততটুকু আশ্চর্য হবে বিপিন পাল। কিছু মানুষ আছে অনেক জেনেও যারা কোনো কোনো বিষয়ে একেবারে অজ্ঞ থেকে যায়, একে মাটি ছেড়ে যাওয়া বলা যাবে কি না তা জানা নেই জওহরের। সে জানে, বিপিন পালের মনের সবটা সে দেখতে পায় না; জলের নিচের মাছেদের ওপর থেকে দেখতে পাওয়া না গেলেও জলের নিচে মাছের বসত যেমন সত্য বিপিন পালের মনের গভীরে কোনো গোপন সত্য লুকানো আছে তাও তেমন সত্য। এ সত্য জওহরের কাছে ঈশ্বরের মতো বাস্তব কিন্তু অধরা।
________________________________________________________________________________________________
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পুতুলগুলোর সাজ-পোশাক পাল্টাতে শুরু করে সে। সনকা হয়ে গেল জেলেবউ, লখিন্দরকে পরাল জেলের পোশাক, কাঁধে জাল। মাছ ধরতে গিয়ে কুমিরের শিকারে পরিণত হয়েছে এক জেলে। জেলে বউ দু দিন দু রাত অপেক্ষা করে স্বামীর খুঁজে পথে বেরুলে, তার সঙ্গে দেখা হয় এক কাঠুরিয়ার। কাঠুরিয়া তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিজের কুটিরে নিয়ে বন্দি করে রাখে। জেলে বউ কেঁদে বুক ভাসাতে লাগল। দয়ার্দ্র এক পরী ওই পথ ধরে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়ায় কান্না শুনে। কাঠুরিয়ার কুটির থেকে জেলেবউকে উদ্ধার করে পরি।
_________________________________________________________________________________________________
প্যান্ডেল থেকে বেরোনোর সময় জওহরের মনে হয়েছিল কুমার বাজারে গেলেই বিপিন পালকে পাওয়া যাবে। ভেবেছিল দেখবে ধীরু পালের দোকানে বসে আছে মন খারাপ করে। ধীরু পালের সঙ্গে বিপিনের দেখাই হয়নি শুনে অস্থির হয়ে ওঠে সে, বান্নিতে অজস্র মানুষের যে ভিড় এতক্ষণ তার চোখেই পড়েনি, এখন তা কঠিন অবরোধের মতো মনে হয়; এই ভিড়ে বিপিন পালকে খুঁজে বের করা খড়ের গাদায় সুঁই খুঁজে পাওয়ার মতো। বাতাসের সঙ্গে উড়ে এসে তুলা বাজারের তুলা জ্বালা ধরায় তার নাকে-চোখে। প্যান্ডেলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
জওহর ফেরার আগেই প্যান্ডেলে গৌঁছে বিপিন পাল। বাবাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে উমার চেপে রাখা কান্না জল হয়ে নামে, ফোঁপাতে থাকে সে। ‘বাবা তুমি পুতুল না নাচাইলে বলে হ্যারা বলে আমারে’… কান্নার দমকে কথা শেষ করতে পারে না সে। উমার কথা শেষ না হলেও বিপিন পাল বুঝতে পারে উমা যা বোঝাতে চেয়েছে। তার বুকের ভেতর হাহাকার মাখানো বৃক্ষটি পতিত হয় হন্তারক কাঠুরিয়ার কুঠারের আঘাতে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পুতুলগুলোর সাজ-পোশাক পাল্টাতে শুরু করে সে। সনকা হয়ে গেল জেলেবউ, লখিন্দরকে পরাল জেলের পোশাক, কাঁধে জাল। মাছ ধরতে গিয়ে কুমিরের শিকারে পরিণত হয়েছে এক জেলে। জেলে বউ দু দিন দু রাত অপেক্ষা করে স্বামীর খুঁজে পথে বেরুলে, তার সঙ্গে দেখা হয় এক কাঠুরিয়ার। কাঠুরিয়া তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিজের কুটিরে নিয়ে বন্দি করে রাখে। জেলে বউ কেঁদে বুক ভাসাতে লাগল। দয়ার্দ্র এক পরী ওই পথ ধরে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়ায় কান্না শুনে। কাঠুরিয়ার কুটির থেকে জেলেবউকে উদ্ধার করে পরি। পরির সহযোগিতায় কুমিরের পেট থেকে স্বামীকে উদ্ধার করে জেলেবউ। দশ-বার মিনিটের এ কাহিনিটির জন্য নেতা ধোপার মাথার মেয়েদের চুল ফেলে কাঠুরিয়া আর বেহুলাকে পরিতে রূপান্তরিত করল বিপিন পাল। গোপাল ঢুলিকে পাঠাল কাগজের কুমির কিনে আনতে।
চাঁদ সওদাগরের কাছে তার ডিঙ্গার বহর যতটা মূল্যবান ছিলো বিপিন পালের কাছে পুতুলগুলো তার চেয়ে একটুও কম না-এ কথা জওহর নিশ্চিত করে অনুমান করতে পারে। জওহর বিপিনের কর্মতৎপরতা দেখে নিঃশব্দে, ধন-সম্পদে পূর্ণ চৌদ্দ ডিঙ্গার চেয়ে উমার সম্মান কী কম কিছু। সে বিপিন পালের কাছ থেকে দূরে সরে প্যান্ডেলের এক কোণায় উমা যেখানে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটায় এসে দাঁড়ায়। কান্নায় ফোলা চোখ মাটিতে নত করে উমা বলে, ‘আপনেরে আমি ভালোবাসি, কথাটা অনেকবার কইতে গিয়া লজ্জায় কইতে পারি নাই।’ যে কথা অনেকবার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি তা এখনই কেন বলতে হবে জওহর বুঝতে পারে না, অপার বিস্ময়ে সে চোখ রাখে উমার ওপর। নতমুখি উমা আরো নুয়ে পড়ে, ‘আপনে কিছু না করলে বাবা আমারে ইন্ডিয়ায় পাঠাইয়া দিবে।’ উমার দিদি ঊষার ইচ্ছা জওহরের অজানা নয়, এবার বুঝতে পারে, এতদিনের না বলা কথাটা কেন এ মুহূর্তে এ অবস্থানে বলেছে উমা। অনেকক্ষণ পর উমা চোখ তুলে তাকায় জওহরের চোখে, কী বোঝে সেই জানে, তার গলার স্বরে জড়তা নেই আর বলে, ‘বাবারে পাঠাইয়া আজগার নাচনটা আপনেই নাচান। ভাসান যাত্রা শেষ কইরা বেউলা সুন্দরী ফিরলে পর বারবারই কি চান সওদাগর কানির পূজা করব?’
না, চাঁদ সওদাগর কেন কানির পূজা করবে—সিদ্ধান্ত নেয় জওহর।