লোকটার মধ্যে ভৃত্যভাব প্রবল। নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয়ে উঠলো বোরহানউদ্দিন। এ ধরনের লোককে মোটেই বরদাশত করতে পারে না সে। তার নিজের জমিদারি মেজাজ, সে কথা ঠিক, তা বলে সারাক্ষণ একজন লোক ছায়া হয়ে ঘুরছে পাশে, কথায় কথায় আপনি আজ্ঞে করছে, হাত কচলে, কাচুমাচু মুখে সায় দিচ্ছে সব কথায়, ভাবতেই প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা জাগে তার। বিরক্তিটা শেষে রাগে পরিণত হয়, আর রাগটা গিয়ে জমা হয় রুনুর প্রতি। গর্দভ মেয়ে একটা। মাথায় ঘিলু বলতে কিচ্ছু নাই। সুন্দরী মেয়েদের মাথায় গোবর থাকার যে প্রবাদ প্রচলিত আছে, তাতে পুরোপুরি বিশ্বাস করে বোরহানউদ্দিন। তার নিজের ধারণা, রুনুর মাথায় সেরখানেক গোবর ছাড়া সারবস্তু বলতে আর কিছু নাই।
বোরহানউদ্দিন রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো অনেকক্ষণ। বিদেশি একটা জার্নাল টেনে নিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ওপর লেখা আর্টিকেলটায় ডুবতে চেষ্টা করলো। ইউটিউবে ফানি ভিডিও দেখলো কিছুক্ষণ। চেষ্টা করল পর্ন ভিডিওতে মনঃসংযোগের। নাহ্। বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেলো সে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না রাগটা। বাধ্য হয়ে রুনুকেই শেষে ফোন দিলো বোরহানউদ্দিন। ঘুমঘুম গলায় ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই মেজাজ আরও খারাপ হলো তার। এটা রুনুর গলা নয়। ফোন ধরেছে কনক। কনক ফোন ধরা মানেই সহজে নিষ্কৃতি না মেলা। বকবক করে মাথা ধরিয়ে দেবে সে। এখন মোটেই বকবকানি শোনার মতো মনের অবস্থা নেই তার। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রেখে সে বললো, কে, কনক? এখনো ঘুমুচ্ছিস? শরীর খারাপ নাকি?
উমম। নাতো! শরীর খারাপ না। এমনিই ঘুমাচ্ছি। কোনো কাজ নাই তো। ভার্সিটি বন্ধ এখন, জানো না? শীতের ছুটি চলছে! কনকের ঘুম-ঘুম, আহ্লাদী উত্তর।
ও তাই তো! ভুলে গেছিলাম। রুনু কোথায় রে? ওর ফোন তোর কাছে কেন?
রুনুপু তো অনেক ভোরে বের হয়েছে আজ। কোথায় গেছে জানি না। ফোনটা মনে হয় ভুল করে রেখে গেছে। আমার মাথার কাছে ছিল। ফোনের শব্দেই তো ঘুমটা ভাঙলো আমার!
ও আচ্ছা। রুনু ফিরলে আমাকে ফোন করতে বলিস তো-বলেই কনককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা পট করে কেটে দিলো বোরহান। মেজাজটা খিঁচড়ে গেলো আরও। একটা মেয়ে কতটা গর্দভ হলে তার ব্যক্তিগত ফোনটা ভুল করে ফেলে রেখে বের হয়ে যায়, সে কি আর হিসাব কষে বের করতে হয় কারও! রাগে ব্রহ্মতালু জ্বলে যায় তার। কী করবে ভেবে পায় না। শেষে লোকটাকেই ডেকে পাঠায় আবার, বেল বাজিয়ে পিয়নকে বলে, মকবুল সাহেবকে সালাম দাও।
লোকটা রুমে ঢুকতেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায় আরও। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে লোকটার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলে, বসুন।
জড়সড়ো, ইতস্তত ভঙ্গিতে বসে লোকটা। মুখে ভয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। দুই হাত যথারীতি জড়ো করা। নিজের অজান্তেই হাত কচলাচ্ছে লোকটা। বোরহানউদ্দিনের মনে পড়লো, কোথায় যেন পড়েছিল, কোনো একটা জার্নালে সম্ভবত, মানসিক স্ট্রেস কমাতে বড় করে শ্বাস নেওয়া, হাত ঘষা, আঙুলগুলো টানা, বেশ ভালো কাজ দেয়। এবং যেকোনো মানুষ, সে যদি নিতান্ত গণ্ডমূর্খও হয়, তবু চরম মানসিক অস্থিরতার সময় নিজের অজান্তেই সে এই কাজগুলো করে। সম্ভবত প্রকৃতি তাকে দিয়ে এই কাজগুলো করিয়ে নেয়। প্রকৃতি চায় মানুষ অস্থিরতাকে জয় করে টিকে থাকুক, সে কারণেই সে এই প্রবণতা মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়। ভ্রূ কুঁচকে যায় বোরহানের। লোকটার আচরণ প্রমাণ করছে এইমুহূর্তে লোকটা অতিমাত্রায় অস্থির, অশান্ত। লোকটার মুখে ভয়ের ছাপও স্পষ্ট। কিন্তু কেন? বোরহানউদ্দিন ডেকে পাঠালে তাতে অশান্ত বা অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই, ভয়ের তো প্রশ্নই নেই। বোরহানউদ্দিন অত্যন্ত রাগী, জেদি, সে কথা যেমন সত্যি, তেমনি সে কারও ওপর রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না, কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও তার ধাতে নেই, সেটাও জানে সবাই। সে রেগে গেলে চিৎকার চেঁচামেচি না করে গুম হয়ে থাকে, গম্ভীর হয়ে চেষ্টা করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের। তাহলে রুনু কি এমন কিছু বলেছে এই লোকটাকে, যে কারণে সে ভয় পাচ্ছে তাকে? অস্থিরতা কাজ করছে সেই কারণে? হতে পারে, কারণ রুনু হচ্ছে নাম্বার ওয়ান গর্দভ। তার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। লোকটার দিকে তাকিয়ে সে মুখ যতটা সম্ভব হাসি-হাসি করলো। কণ্ঠ নরম করার চেষ্টা করলো। মোলায়েম গলায় বললো, কেমন আছেন, মকবুল সাহেব?
বিগলিত, বশংবদ হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে লোকটা বললো, জি স্যার। আপনাদের দোয়া।
উত্তরটা শুনেই মেজাজ আরও খারাপ হলো বোরহানউদ্দিনের। সাবধানে গ্লাসে রাখা পানি খেলো ঢকঢক। ইচ্ছে হলো, ধমক দেয় লোকটাকে, ধমক দিয়ে জিগ্যেস করে কোন জন্মে মকবুল নামক ভীতু, অপদার্থ লোকটার ভালো থাকার জন্য দোয়া করেছিল সে। ঠাণ্ডা পানিটায় মেজাজ ঠাণ্ডা হলো খানিকটা। লোকটাকে অসহ্য লাগছে। এমন মিনমিনে টাইপ মানুষ দুই চোখের বিষ তার। এর চেয়ে পিয়ন জীবন ছেলেটাও অনেক চৌকস। হাতের কাছের কলমটা টেনে নিলো বোরহানউদ্দিন। অকারণে কিছু আঁকিবুকি করলো পাশে পড়ে থাকা খালি রাইটিং প্যাডটায়। তারপর সোজা হলো এক ঝটকায়। সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে, লোকটার চোখের দিকে তাকালো সোজা। লোকটা চোখ নামিয়ে নিলো। চোখের পাতা কাঁপছে পিটপিট।
রুনুর সাথে কিভাবে পরিচয় আপনার—সরাসরি লোকটার মুখের দিকে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো বোরহানউদ্দিন। মুখের প্রতিটি রেখা, প্রতিটি নড়াচড়ায় চোখ রাখলো সতর্ক। কোনো অসঙ্গতি পেলেই ধরে ফেলবে সে। লোকটাকে তার পছন্দ হয়নি। একে কিছুতেই পার্সোনাল সেক্রেটারির কাজ দিতে সে রাজি নয়। এমন তেলতেলা লোক দু চোখের বিষ তার। কিন্তু তার মাথায় এখন অন্য প্ল্যান এসেছে। অন্য পরিকল্পনা। লোকটার চেহারা ভালো। বেশ ভালো। গোলআলু টাইপ। সাধারণত বোকাটাইপ মেয়েরা এ ধরনের ছেলেদের প্রেমে পড়ে। সমস্যা একটাই। দীবা বোকা নয়। সে ধূর্ত। শেয়াল টাইপ। কিন্তু অতি ধূর্তরাও মাঝে মাঝে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে বোকার মতো আচরণ করে। সেক্ষেত্রে দীবাও যে বোকামি করবে না, তেমন মনে করার কোনো কারণ নেই। সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। তবু পরীক্ষাটা করেই দেখা যাক।
স্যার, রায়হানা ম্যাডাম আর আমি একসঙ্গে একটা এনজিওতে কাজ করেছিলাম কিছুদিন। পরে ম্যাডাম চাকরি ছেড়ে দেন। আমারও স্যার চাকরি চলে যায় কিছুদিন পর।
মন দিয়ে মকবুল লোকটার উত্তরটা শুনলো বোরহানউদ্দিন। লোকটাকে বোঝা যাচ্ছে না। চাকরি চলে গেছিল বলছে। রুনু চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে লোকটার চাকরি গেছে। সেক্ষেত্রে চাকরি গেছে তথ্যটা গোপন করে সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেও বলতে পারতো। বলেনি। হতে পারে লোকটা ধুরন্ধর। কিংবা অতিরিক্ত সৎ। মুখ দেখে যদিও সৎই মনে হয়। মুখ দেখে অমন অনেক কিছুই মনে হয়। সেসবে পাত্তা দেওয়া নেহাত বোকামি বৈ নয়। অনেক সিরিয়াল কিলারের মুখ দেখে মনে হয় ফেরেশতা, ভাজা মাছও উল্টে খেতে জানে না।
চাকরি চলে গেল কেন—যতদূর সম্ভব নির্লিপ্তি কণ্ঠে রেখে প্রশ্ন করলো বোরহানউদ্দিন। চাকরি ছেড়ে দেওয়া আর চলে যাওয়া দুটো এক নয়। দেখা যাক ব্যাখ্যাটা কী দেয় লোকটা।
স্যার—হাত কচলে বলে চললো লোকটা, আমার ডিউটি ছিল ফিল্ডে। লোনের কিস্তি আদায় করা। গ্রামাঞ্চলে যেতে হতো, বস্তির মানুষদের সাথে কাজ করতে হতো। লোন যারা নিতো, তারা সবাই অভাবী, গরিব লোক স্যার। বেশিরভাগই মহিলা। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে লোন নিতো। তারপর সে লোন শোধ করতে পারতো না। আমার ওপর অফিস থেকে তাগাদা দেওয়া হতো লোন আদায়ের। মানুষগুলোকে দেখে আমার এত মায়া হতো, তাদের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল যে, তাদের কাছ থেকে লোন তোলার বদলে উল্টে নিজের বেতনের টাকা থেকেও অনেক সময় দিয়ে আসতাম। স্যার, অফিস সেটা মানতে পারেনি। তারা লোন দেয় লাভের আশায়। আমি উল্টে তাদের ক্ষতির কারণ ছিলাম। ফলে চাকরিটা চলে গেলো।
ভ্রূ কুঁচকে উত্তরটা মনে মনে উল্টেপাল্টে দেখলো বোরহানউদ্দিন। বিশ্বাসযোগ্য। শেষেরটুকু বাদে। নিজের বেতনের টাকাও দিতো বলছে। এটুকু মিথ্যে। সত্যের সাথে খানিকটা মিথ্যে মিশিয়ে বোরহানউদ্দিনকে গেলানোর চেষ্টা। তার মানে অতটা সহজপাত্র নয়। চলবে। একে দিয়ে কাজটা হতে পারে।
বাড়িতে কে কে আছে আপনার?
কেউ নেই স্যার। বাবা-মা মারা গেছে। বড় বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে। বড় ভাইটাও বিয়ে করে আলাদা। সেই অর্থে কেউ নেই বাড়িতে আমার।
চাকরি চলে গেছে বলছেন। তাহলে আপনার চলছে কী করে এখন? বিয়ে করেননি কেন এখনো?
চলছে স্যার। খুব খারাপ অবস্থায় আছি। বিয়েটা স্যার করা হয়নি। বাবা-মা নাই তো। গার্জিয়ান ছাড়া যা হয়, আর কী।
রুনু আমার সম্পর্কে কী বলেছে আপনাকে?
ম্যাডাম বলেছেন, আপনি খুব ভালো মানুষ। আপনি আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।
আর?
আর বিশেষ কিছু বলেননি স্যার—বলেই লোকটা চোখ নামিয়ে এমনভাবে দু হাত ঘষতে লাগলো, যাতে এটা স্পষ্ট যে, রুনু লোকটাকে তার সম্পর্কে ‘বিশেষ’ কিছু বলেছে এবং লোকটা বিশেষভাবে সেটা গোপন করতে চাইছে।
রুনুর ওপর রাগটা বাড়লো আরও। কী বলেছে তার ঠিক কী! রুনুকে কথায় কথায় সে বলেছিল, তার একজন পার্সোনাল সেক্রেটারি দরকার, ছেলে। ব্যস। রুনু একে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ লোকটার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু আছে বলেই মনে হচ্ছে না। এ সারাক্ষণ তাকে তেল মারা ছাড়া আর কোনো কাজ পারবে বলে আপাতত বিশ্বাস হচ্ছে না বোরহানউদ্দিনের।
মকবুল সাহেব।
জি স্যার।
আপাতত আপনাকে আমি চাকরিটা দিতে পারছি না। তবে আপনাকে আমি একটা কাজ দিতে চাই। পরীক্ষামূলক কাজ বলতে পারেন। যদি কাজটায় ভালো পারফর্মেন্স দেখাতে পারেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে চাকরিটা আপনি পাবেন। তবে একটা শর্ত আছে।
কী কাজ স্যার? কী শর্ত?
কোনটা আগে শুনবেন? কাজটা নাকি শর্তটা?
কাজটা স্যার।
আমি শর্তটা আগে বলছি। শর্তে রাজি থাকলে কাজটা সম্পর্কে বলবো, তার আগে নয়।
জি স্যার বলুন।
রুনুকে এ ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় যদি রুনুর সাথে যোগাযোগটা একেবারেই কমিয়ে দেন।
আমি রাজি স্যার। এবার কাজটা বলুন।
গুড। আপনি ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসুন। আপনাকে ডাকবো আবার।
লোকটা চলে যেতেই বড় করে শ্বাস নিলো বোরহানউদ্দিন। লোকটা শর্তে রাজি। তবু তাকে অত বিশ্বাস করার কিছু নেই। রুনুকে কিছু জানাবে না, বলছে বটে, তবে জানাতে কতক্ষণ!
তবে লোকটাকে প্রথমে যতটা গোবরগণেশ টাইপ মনে হচ্ছিল, ততটা নয়, কথা বলে বোঝা গেছে। চাকরিটাও দরকার তার। কাজেই রুনুকে না জানানোটাই স্বাভাবিক তার পক্ষে। পরক্ষণেই ভুরু কুঁচকে উঠলো তার। বিরক্তি বাড়লো নিজের ওপর। রুনুকে জানালেই বা কী! কে রুনু! সে কি রুনুকে ভয় পায় নাকি! চুলোয় যাকগে রুনু। গর্দভ মেয়ে একটা। বলা নেই কওয়া নেই পাঠিয়ে দিয়েছে আরেকটা গর্দভটাইপ লোক।
ফোনটা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। রিংটোন এত জোরে দিলো কে! অদ্ভুত তো! রুনু। ফোনটা কানে নিয়ে চুপ থাকল বোরহানউদ্দিন। কথা বললো না ইচ্ছে করেই। মেজাজ খারাপ থাকলে ফোন রিসিভ করে চুপ থাকে সে, রুনু জানে।
হ্যালো!
বোরহানউদ্দিন চুপ।
হ্যালো!
উত্তর নেই।
কী ব্যাপার? কথা বলছো না কেন? কী হয়েছে?
নিরুত্তর।
আজব তো! কথা বলছ না কেন? আরে বাবা জরুরি কাজে বাইরে গেছিলাম। তাড়াহুড়োয় ফোন নিতে ভুলে গেছি। রাগ করেছ?
রাগ করতে যাবো কেন? কাকে পাঠিয়েছ অফিসে?
ও, মকবুল গেছে? ও আমার আগের অফিসে চাকরি করতো। বেচারার চাকরি নেই। খুব কষ্টে আছে। দেখ না ওকে কোনো কাজ দিতে পারো কি না!
তুমি যে কাউকে পাঠাবে, সেটা আমাকে জানানো উচিত ছিল তোমার।
ধুর বাবা। সেদিন তুমিই তো বললে পার্সোনাল সেক্রেটারি খুঁজছ। বিশ্বস্ত লোক দরকার। তাই তো পাঠালাম মকবুলকে। ও অনেক অনেস্ট। ওকে বিশ্বাস করতে পারো।
ফোন রেখে দিয়ে গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো বোরহানউদ্দিন। বেয়ারাকে বললো কফি দিতে। কফিতে চুমুক দিতে দিতেই সে ছকটা এঁকে নিলেঅ মনে। পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক মিলে গেলে এ দানে কিস্তি মাত হবে তার।
রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছে না তৃপ্তি। আজকাল প্রায়ই অমন করে সে। কেন করে সেটা নিয়ে অত বেশি ভাবনা নেই বোরহানের। সম্ভবত মোহ কেটে যাচ্ছে, কেটে যাচ্ছে মায়ার ঘোর। কাটুক। আপাতত যে মোহজালে তাকে জড়িয়েছে দীবা, সেটা থেকে উদ্ধার পাওয়া দরকার। তারপর তৃপ্তিকে নিয়ে ভাবা যাবে। অমন কত তৃপ্তি তখন তৃপ্তি দিতে যেচে আসবে তার কাছে। আপাতত সময়টা তার অনুকূলে নয়। বিরুদ্ধতার হাওয়া বইছে চারপাশে। শত্রুতার গুমোট বাতাস। তৃপ্তি ফোন ধরবে না, যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল বোরহানউদ্দিন, তখনই ওপাশে তৃপ্তির ব্যস্তসমস্ত কণ্ঠ শোনা গেলো। হ্যালো, বোরহান!—কণ্ঠে মধু ঢেলে দেয় তৃপ্তি।
বেঁচে আছ? আমি তো ভেবেছি ইন্তেকাল করেছ! –ঠাণ্ডা, নিস্পৃহ সুরে বললো বোরহান।
ইন্তেকাল করলে খুশি হতে নাকি? ল্যাঠা চুকতো তাহলে?
তোমার ইন্তেকালের সাথে আমার ল্যাটা চুকা বা না চুকার সম্পর্ক কী?
সেই তো! তোমার কী আর ল্যাঠার অভাব!
প্রমাদ গুণলো বোরহান। তৃপ্তি কথা অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছে। সেটা হতে দেওয়া যাবে না। সরাসরি কথায় ফিরলো সে, বাজে কথা রাখো, ফ্রি আছ বিকেলে?
হুম। কেন?
কেন আবার কী? তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব!
উলে বাবা! তাই নাকি? হঠাৎ?
হঠাৎ নয়, ক দিন থেকেই ইচ্ছে করছে। বলা হয়নি।
হুম। ফ্রি আছি, চলে এসো।
আচ্ছা, ছাড়ছি।
ফোন রেখে একটু ভাবলো বোরহানউদ্দিন। ঠিক করে নিলো কী করবে। নওরীনকে জানিয়ে দিলো অফিসে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং সেরে তাকে দু দিনের জন্য ট্যুরে যেতে হচ্ছে সিলেটে। রাতের ট্রেনে রওনা দেবে। বাসায় ফিরবে পরশু রাতে। নওরীন তেমন কিছু বললো না অবশ্য। সন্দেহ হয়তো করে, প্রকাশ করে না। নওরীন অল্পতে ভেঙে পড়ার মেয়ে নয়, জানে বোরহান। সে যেদিন ধরবে, হাতেনাতে ধরবে, তারপর ঘাড় মটকাবে। আপাতত নওরীনকে নিয়েও ভাবার কিছু নেই। দীবাটাই এখন বড় মাথাব্যথা তার। বিষফোঁড়া। তাকে উপড়াতে হবে। অ্যাট এনি কস্ট। নওরীন বিয়ে করা বউ, তার সন্তানের মা, তাকে অতটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বোরহানকে বিপদে ফেলার আগে সে দু বার ভাববে। বোরহানের সঙ্গে নওরীনের এবং তার সন্তানের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। মেয়েরা নিরাপত্তার উষ্ণতা বড় ভালোবাসে। সহজে হাতছাড়া করতে চায় না।
কিন্তু তৃপ্তির কাছে যাওয়ার আগে মকবুল নামের লোকটাকে তার কাজটা বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। লোকটা সেই সকাল থেকে মাছি মারছে অফিসে। বেল বাজিয়ে আবার তাকে ডেকে পাঠালো বোরহানউদ্দিন। লোকটা এলো। অনেকটা ম্লান। বিধ্বস্ত। সকাল থেকে অপেক্ষার ধকল চেহারায় স্পষ্ট। অপেক্ষা। এই একটিই শব্দ আছে জগতে। এই শব্দটার যে কী অদ্ভুত ক্ষমতা! মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, সঙ্গে সঙ্গে তিলে তিলে ক্ষয় করেও কি দেয় না!
দীবা! দীবার জন্য একসময় এক পৃথিবী অপেক্ষা ছিল তার। মনে পড়েই হেসে ওঠে বোরহানউদ্দিন। শুধু দীবা কেন? পৃথিবীর সব মেয়ের জন্যই সীমাহীন অপেক্ষারা অপেক্ষা করে থাকে তার বুকের মধ্যে। রুনুর জন্য, দীবার জন্য, তৃপ্তির জন্য, নওরীনের জন্য এমনকী কনকের জন্যও। তার কাছে নারী মানে তৃষ্ণার জল। আকাঙ্ক্ষার পদ্মপুকুর। তাকে আকণ্ঠপানে তৃপ্তি, তাতে অবাধ সন্তরণে সুখ। এ তৃষ্ণা তার রক্তে খেলা করে, এ অপেক্ষা তার মজ্জায় মিশে থাকে। সমস্যা একটাই। একই জল, একই পদ্মপুকুরে সে তৃপ্তি পায় না বেশিদিন। তার নতুন চাই। আনকোরা। অনেক নারীও আছে তার মতো। দেখেছে বোরহানউদ্দিন। তৃপ্তি তাদেরই একজন। তৃপ্তির সঙ্গে লুকিয়ে অনেকদিন লিভ টুগেটার করেছে সে, তার সন্তানের মা-ও হয়েছে তৃপ্তি। কিন্তু তার প্রতি তৃপ্তির তৃষ্ণা সম্ভবত ফুরিয়েছে। সমাপ্তি ঘটেছে আকাঙ্ক্ষার। তৃপ্তির প্রতি তার আগ্রহ সম্ভবত সে কারণেই বাড়ছে আজকাল। ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে তাকে। তৃপ্তি নাগালের বাইরে যেতে চাইছে বলেই কি এই বাড়তি আগ্রহ তার? তবে কি নওরীন বা দীবা যদি নাগালের বাইরে চলে যায় তার, যেতে চায়, তখন আবার ফিরে আসবে তার আকাঙ্ক্ষা, আবার শুরু হবে তার অপেক্ষা? এর মূলে কী? পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব? দখলদারিত্বের সেই চিরায়ত মনোবৃত্তি? দখলের বাইরে গেলেই তবে বেড়ে যায় আকাঙ্ক্ষা? নাগালের বাইরে গেলেই জন্মায় হাহাকার? কিন্তু দীবার প্রতি সেই পুরনো অপেক্ষা আর ফিরবে কি! ফিরবে কি সেই মধুময় আকাঙ্ক্ষা! না। জানে বোরহানউদ্দিন। ফিরবে না আর। ফেরে না। দীবা বদলে গেছে। আমূল। মানুষ চিনতে ভুল হয় না তার, সচরাচর। কিন্তু দীবার বেলায় হলো। হয়েছিল। দীবার পদ্মশ্রী মুখ আর ছন্দময় তনুতে সে পঙ্কিলতা খুঁজে পায়নি সামান্যও। সে ডুবেছিল। দীবা ডুবিয়েছিল। কিন্তু দীবা যে আক্ষরিক অর্থেই ডোবাতে চাইবে তাকে, সে কি আর টের পেয়েছিল সে ঘুণাক্ষরেও! পায়নি। তাই দীবা যখন বিয়ের প্রস্তাব দিলো তাকে, সব জেনেশুনেই, বোরহানউদ্দিন তাতে আপত্তিমাত্র করেনি। এসব বিয়ে-টিয়ের ছেলেখেলায় সে বরং হেসেছিল। দীবার অপরিপক্ব মানসিকতা তাকে দীবার প্রতি অনুরক্ত করেছিল আরও। এরই মধ্যে তৃপ্তিও ঢুকে গেল দৃশ্যপটে। কী থেকে যে কী হয়ে যায়! তালগোল পাকিয়ে যায় সব। সেদিন সম্ভবত একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিল বোরহানউদ্দিন। কাজের চাপ কম থাকলে অফিসেই সে খায় আজকাল। সেদিনও তেমনই চলছিল। এমন সময় তৃপ্তির ফোন। ফোন রিসিভ করলো বোরহান। স্বাভাবিক মানুষের মতোই কথা বললো। কিন্তু তারমধ্যেও কিছু বেতাল ছিল। বেসুর ছিল। তৃপ্তি ধরে ফেললো। বললো, কী ব্যাপার বলো তো? খেয়েছ নাকি?
অল্প! তেমন একটা না!
হুম! বুঝলাম।
তৃপ্তি, আসো এক কাজ করি আমরা!
কী কাজ?
চলো বেবি নেই!
মানে?—তৃপ্তির কণ্ঠ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো মুহূর্তেই।
মানে বুঝলে না? চলো সেক্স করি একদিন। বেবি নেই। তুমি মা হবে, আমি বাবা! দারুণ হবে না ব্যাপারটা? তুমি এত ব্রিলিয়ান্ট, আমিও আছি কম-বেশি! আমাদের বেবিটা অনেক ব্রিলিয়ান্ট হবে, দেখ!
কী যা-তা বলছ? তোমার অবস্থা খারাপ দেখছি! মাতলামি শুরু করলে এখন!
সত্যি বলছি! দারুণ হবে! প্রয়োজনে মাস্ক পরে নেব আমরা, কেউ কাউকে দেখব না! শুধু বেবিটাকে আসতে দাও!
ওপাশের তৃপ্তির মুখটা দেখতে পাচ্ছিল না যদিও বোরহানউদ্দিন, তবে সে কতটা চমকেছে, কতটা ভ্যাবাচ্যেকা দেখাচ্ছে তার মুখ, ভাবতেই, দারুণ আনন্দ হচ্ছিল তার। কিন্তু তৃপ্তি অত সহজ পাত্রীটি নয়। সে বললো, তুমি অফিসে আছ?
হ্যাঁ, অফিসে।
থাকো। আসছি।
আধাঘণ্টার মধ্যে তৃপ্তি এসে গেছিল সেদিন। তারপরেরটা ইতিহাস।
হঠাৎ একদিন তৃপ্তিকে অফিসে আবিষ্কার করে দীবা বেঁকে বসল। বিয়ের কাবিননামা নিয়ে মামলা ঠুকে দিলো কোর্টে! দাবি কাবিনের পঞ্চাশ লাখ টাকা মাত্র! যাচ্চলে! শালা দীবার মতো মা দুগ্গা চেহারার মেয়েও যে এমন খচ্চর হয় কে জানতো বাপু! শালা! একটা দুটো টাকা নয়, সোজা পঞ্চাশ লাখ! নিজের ওপরও বিরক্ত হয় বোরহানউদ্দিন! মরতে মরতে বিয়েটাই বা করতে গেল কেন সে তখন! আর করবি তো করবি কাবিন একলাফে পঞ্চাশ লাখ! বলি, টাকা কি গাছে ধরে! মামলা চলছে। মাঝখানে তৃপ্তি তার সন্তানের মা হয়ে গেছে। সে নিয়ে তৃপ্তি বিচলিত নয়। সে সমাজের উঁচুতলায় অবস্থান করে। এসব ব্যাপার তার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। নওরীন বা দীবার কাছে যতটা। এই মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীটাই যত নষ্টের গোড়া। জীবনকে উপভোগ করতেই জানে না। ফাউ কতগুলো মিথ্যে আদর্শ আর বুলির ফাঁপা বেলুন জড়িয়ে ঘুমোয়। হাওয়া বেরিয়ে গেলেই ঠুস।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মকবুল লোকটাকে মন দিয়ে দেখলো বোরহানউদ্দিন। তারপর আচমকা প্রশ্ন করলো, বিয়ে করবেন?
জি স্যার?—সম্ভবত এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কোনোদিন শোনেনি লোকটা। বোকা বোকা মুখটা প্রায় হা হয়ে গেছে তার।
বললাম বিয়ে করবেন কি না। আমার হাতে ভালো পাত্রী আছে।
স্যার, আমার একটা চাকরি খুব দরকার।
সে তো জানি। শুনুন, আপনাকে যে কাজটা দেব আমি, সেটা খুব সহজ। এজন্য আমি আপনাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেব।
কাজটা কী স্যার?
বিয়ে করবেন। আমার পছন্দের পাত্রীকে।
কে সে?
শব্দ করে হাসল বোরহানউদ্দিন। কফিটা শেষ করলো ধীরেসুস্থে। তারপর বললো, জানবেন। তবে সমস্যা আছে।
কী সমস্যা স্যার?
পাত্রী আপনাকে বিয়ে করতে সহজে রাজি হবে না। সেজন্য আপনাকে বুদ্ধি খরচ করতে হবে। যেকোনো উপায়ে সেটা করবেন। কিভাবে করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আমি আপনাকে পারিশ্রমিক দেব, ব্যস।
স্যার আমার একটা চাকরি দরকার।
বললাম তো। কাজটা ঠিকঠাকমতো করতে পারলে আপনি চাকরি পাবেন। সেইসাথে কাজটার জন্য আপাতত প্রতিমাসে আপনাকে আমি যথেষ্ট পরিমাণে পারিশ্রমিক দেব। রাজি থাকলে এই মুহূর্তে আপনাকে কিছু অগ্রিমও দিতে পারি। এই ধরুন লাখ খানেক টাকা আপনি এই মুহূর্তেই পেতে পারেন।
কিন্তু স্যার, আমার মতো বেকার, গরিব একজনকে কেউ বিয়ে করতে রাজি হবে কেন?
আপনাকে যে একলাখ টাকা দিতে চাইছি এখন, সেটা দিয়ে আপনি নিজেকে কিছুটা ঠিকঠাক করে নিন। নিজেকে পয়সাওয়ালা হিসেবে জাহির করুন। প্রয়োজনে আরও টাকা নিতে পারবেন। অফিসের একটা গাড়ি আপনাকে দেওয়া হবে চব্বিশ ঘণ্টার জন্য। শর্ত একটাই। কাজটা আপনাকে করতে হবে। সবমিলিয়ে ছ মাস থেকে একবছর সময়।
কিন্তু স্যার, মনে করেন, আমি টাকা নিলাম। কিন্তু কাজটা করতে পারলাম না। তখন টাকাটা কী করে ফেরত দেব? টাকা তো স্যার খরচ হয়ে যাবে।
টাকা আপনাকে ফেরত দিতে হবে না। শেষ পর্যন্ত কাজটা না হলে আপনার জন্য অন্য অপশন থাকবে।
কী সেটা, স্যার?
খুন করবেন। মাত্র একটা। পারবেন না?
খুন!—বিস্ময়ে লোকটার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাবে যেন।
হ্যাঁ, খুন।—স্বাভাবিক, সহজ গলায় বললো বোরহানউদ্দিন। বললো, এমন চমকানোর কিছু নাই মকবুল সাহেব। বাংলাদেশে প্রতিদিন কত খুন হচ্ছে। কে কার খোঁজ রাখছে বলুন। খুন করা তেমন কঠিন কিছু না। ধরুন কোনো উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। কিংবা ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিলেন। মানে যেগুলোতে কোনো ক্লু থাকার সম্ভাবনা নাই আর কী। আপনি কাজটা করতে রাজি থাকলে পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা করা যাবে। এমনও হতে পারে বিয়েতেই রাজি হয়ে যাবে সে। তখন আর খুনের দরকারই পড়বে না। তখন আপনিই অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন বা না করবেন।
লোকটার চোয়াল অনেকটা ঝুলে পড়েছে হতাশায়। চাকরি হবেই, এমন আশ্বাস দিয়েই রুনু সম্ভবত পাঠিয়েছিল তাকে। গর্দভ মেয়ে।
কী করবেন? করবেন কাজটা? ম্যানেজারকে বলব টাকাটা দিতে?
স্যার, আমার একটা চাকরি খুব দরকার। টাকারও দরকার অনেক। কিন্তু আমি স্যার সৎপথে রোজগার করতে চাই। মাসে একহাজার টাকা সৎপথে উপার্জন করলেও চলবে আমার, অসৎপথে একলাখ টাকাতে প্রয়োজন নাই। কাজটা আমি করব না স্যার। মাফ করবেন। আসি স্যার। স্লামায়কুম।
লোকটা চলে গেলো। পালিয়ে বাঁচলো বলতে গেলে। থম ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকলো বোরহানউদ্দিন। তারপর হাসলো আপন মনেই। শালা মধ্যবিত্ত! এইসব বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট আর আদর্শের ফানুস গিলেই মরলো শেষ পর্যন্ত। লোকটা কাজটা করবে না। তাতে কার ক্ষতি? লোকটারই তো। কারণ এই কাজটা ঠিকই অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেবে বোরহানউদ্দিন। দীবা ঠিকই সরে যাবে তার পথ থেকে। হয়তো তাতে দশ-বিশ লাখ খরচ হবে বোরহানউদ্দিনের। তা হোক। টাকাটা বড় নয় তার কাছে। তাকে জিততে হবে। দীবার অনেক সাহস। বোরহানউদ্দিনকে হারাতে চায়। সে হারবে না। কিছুতেই না।
বেপরোয়া গাড়ি চালায় বোরহানউদ্দিন। ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তৃপ্তির ফ্ল্যাটে যাওয়ার সময় ড্রাইভারকে সঙ্গে নেয় না সে। সাবধানের মার নাই। তৃপ্তি তার কাছে খোলা আকাশ। স্বর্গের সিঁড়ি। শুধু উঠছে আর উঠছে। রুনু, নওরীন, দীবাদের মতো নিচে পড়ার ভয় নেই। গতি বাড়ায় বোরহানউদ্দিন। আকাঙ্ক্ষা তাকে টানে। বাড়ায় অপেক্ষা।