এখন যেও না বৃষ্টি, থাকো আরও একটু থেকে যাও। বিজলী এলে না হয় তখন যাবে। অন্ধকারে বাদল এসে তুলে নিতে পারে মেঘের ঘরে। জানি তখন কষ্টটা শুধু আমারই থাকবে। কত দিন পরে এলে, এবার কাটাও খানিকটা অবসর আমার পাশে। তোমার আগমন প্রত্যাশায় চৈতি আর বৈশাখির অত্যাচার সয়ে নিয়েছি, তোমার জন্যে পরানটা খা খা করে, রোদেলা মাঠের মতো চৌচির হয়ে গেছে বুকের প্রান্তর।
চৈতি, বৈশাখি, রোদেলা তোমাকে খুব ঈর্ষা করে, শুধু ফালগুনি কিছুটা সমিহ করে, বড্ড ভালো মেয়ে। না চাইতেই ফুল ফোটায়। তুমুল হুলস্থুল করে তুমি এলে। তোমার দৌড়ে বাতাস বয়ে যায়, তর তর করে কাঁপে বৃক্ষসখা। তুমি এলে, এদিকে রাগ করে চলে গেলো বিজলী। জানো কী বলে গেলো! আমরা নাকি নিধুবনের শ্যাম-রাই। তুমি আসো সময়-সুযোগ বুঝে গা বাঁচিয়ে।
তুমি তো চঞ্চল হরিণী, থাকবে না বেশিক্ষণ জানি। কালের মুখোশ পরে বৈশাখিও ভোরের দিকে আসবে। আমি বলি কী, তখন রবি’র ওই গানটি গেও ‘যামিনি যেতে জাগালি না, বেলা হলো মরি লাজে।’ বৃষ্টি জানো তুমি নাকি ঝরে পড়ো দারুন উল্লাসে বেলাজের মতো, কিন্তু মধুমাসি তোমাকে দ্রৌপদি বলে টিটকারি মারে।
তোমরা তো একই বৃক্ষের ফুল। তাই ভরসা পাই না। যদি তার কানে ওঠে এসব কথা, আমাকে ভাসাবে অথৈ জলে। জলাগ্নি ও জলাঙ্গি, তার দুটো রূপই আমি চিনি।
আরও কত সহ্য করেছি বঙ্কিম বাক্যবাণ। মাঝে মাঝে ইচ্ছে জাগে আম্রপলির মতো দলিত-মথিত করে নিংড়ে আনি সমস্ত রস, অধরে লাগিয়ে দেই আটালি পোকা, তার রসে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হোক সহস্র পিপীলিকা। বলো, এবার তুমি কোন সাগরে ছিলে, আকাশির সঙ্গে মিতালি করে কোন অরণ্য দিয়ে এলে? তুমি ক’দিন থাকো, বিজলি এলে তারপর যেও।
বর্ষা চিঠি লিখেছে, মেঘের খামে দিয়েছে তোমাকে, আর তুমি কিনা ভুল করে এলে শূন্য হাতে। দু’মাস পরে নাকি হিমালয় থেকে তার ছুটি! এবার অন্য কোথাও যাবে না সে। সোজা চলে আসবে আমার কাছে। মাস তিনেক কাটাবে দারুণ অবকাশে। তাই জেনেছি বাতাসির মুখে।
সে এখন আন্দামানে, নির্বাসনের সাক্ষী এই দ্বীপ, একদা উপনিবেশিক কারাগার যেন। আজ সুবর্ণ শহর নেহেরু-আজাদের সুনামে
দেশ-বিদেশের কত পরিব্রাজক, যুগল প্রেমিক এই যুগের বৃন্দাবন বলে জানে। আমার ভাবনা অন্যখানে, সেখানে আছে কি কোনো কবি, যার সঙ্গ সে কাটাচ্ছে একান্ত সময়।
বর্ষাগুরু কালিদাসকে তার ভীষণ অপছন্দ, মেঘ ও বাদলের সঙ্গে নাকি তার সমকামিতা। ছিঃ ছিঃ! বিজলী কেন যে আমাকে এসব জানাতে গেলো! তুমি আবার এসব কথা তাকে বলতে যেও না। তোমরা তো একই বৃক্ষের ফুল। তাই ভরসা পাই না। যদি তার কানে ওঠে এসব কথা, আমাকে ভাসাবে অথৈ জলে। জলাগ্নি ও জলাঙ্গি, তার দুটো রূপই আমি চিনি।
সে যে কয়দিন থাকতে চায়, যেন থাকে ঝঞ্জাট বিহীন। এবার আমি লিখে ফেলতে চাই এক মহাবর্ষাবন্দনা।