আজ বেতনের টাকা তুলেছেন।
অফিস থেকে ফেরার পথে একটা হাতুড়ি কিনে এনেছেন। মাঝারি সাইজের নতুন এক চাইনিজ হাতুড়ি। সুন্দর, চকচকে বার্নিশ করা বাঁট, ঢেউখেলানো, ধরার মধ্যে সুবিধা আছে। বাসায় ফিরে স্ত্রীর হাতে সমস্ত টাকা তুলে দিলেন; মুখে কিছু বললেন না। কথা না বলার কারণে স্ত্রী কিছু মনে করেনি, কারণ; এমনিতেই তনি কথা বলেন খুব কম। বরং সমস্ত টাকা একত্রে দিয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী কিছুটা অবাক হয়েছে; তবে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। শুধু জিজ্ঞাসা করেছে ঘড়িটা মেরামত করা হয়েছে কিনা; তিনি উত্তর দেন নাই।
জামা-কাপড় না পাল্টেই তিনি খাটের কিনারে হাঁটুতুলে বসে রইলেন; ক্যাঁচক্যাঁচ করে উঠল পুরনো খাট। এটার বয়স তো কম হয়নি; বিয়ের পরের বছর মেলা থেকে কিনেছেন। মেলার খাটÑ ভালো কাঠের হয় না, এটা জেনেও কিনেছেন। ভালো খাট বানাতে অনেক টাকার প্রয়োজন, আর এজন্য অনেকদিন অপেক্ষাও করতে হতো। ভাঙ্গা চৌকিতেই বাসর করেছেন। এখানে-সেখানে পেরেক ক্ষয়ে যাওয়া চৌকি, ক্যাচর ম্যাচর শব্দ হতো পাশ ফিরে শোওয়ার সময়। ভাবিরা করত হাসাহাসি। নানা কথা বলত। এখানে হাসির কী আছে! পুরনো জিনিস শব্দ তো হবেই। ভাবিরা কি তার পকেটের খবর রাখে! অভাব কি ঠাট্টার জিনিস!
পকেট থেকে ঘড়িটা বের করে খাড়া হাঁটুতে রাখলেন যাতে পড়ে না যায়। এটা পকেটঘড়ি না, হাতঘড়ি; সমস্যা আছে বলে পকেটে রাখতে হয়। হাতে রাখলে অনেকে সময় জিজ্ঞাসা করে; ঠিকমতো বলা যায় না। সমস্যা কোথায়, ব্যালান্স হুইলে, না হেয়ারস্প্রিংয়ে, এস্কেপে না প্যালেট ফোর্কে আজ পর্যন্তকোনো মেকারই ধরতে পারল না।
খানাডুলি, মানে মিটসেফের ভেতরে একটা গেলাসে টাকাগুলো রেখে পেছনে ঘুরে স্ত্রী বলে, “নতুন একটা ঘড়ি কিনলেই তো পারতে। মেকাররা কয়েকদিন পরপর যত টাকা খায়, সে টাকায় কম দামি ভালো ঘড়ি পাওয়া যায়।”
এই যে, এই এক কথা, বহুবার তাকে শুনতে হয়েছে। আরে, একটা ঘড়ি কিনব যত টাকা দিয়ে তাতে দশ দিনের বাজার চলে। বাপের দেওয়া ঘড়ি, কোন্ ছোটকালে খৎনার উৎসবে বাবা নিজের হাতের কবজি থেকে খুলে এটা দিয়েছেন উপহার। তখন খুব ভালো চলত। সে সময়ের জন্য অবশ্য দামি ঘড়িই ছিল। যে বছর মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন, সে বছর পর্যন্ত ভালোই চলেছে। টাইম-টু-টাইম চলত। ঠিক মতো তারিখ উঠত তিনে ঘরে ছোট্ট খোপে।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে গোলযোগ শুরু হয়েছে। আইএ পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় টাকা দরকার,কোনোদিক থেকে জোগাড় করা যাচ্ছিল না। সারা রাত টাকার চিন্তায় ছটফট করে ভোর রাতে ঘুমিয়েছিলেন। সকালে উঠে ভাবেন, ঘড়িটা পুরনো হলেও তো মোটামুটি দামি, বিক্রি করে দিলে টাকা হয়ে যাবে। হাত থেকে খুলে, ভালো করে মুছে, কেরোসিন দিয়ে ঘষে যাবতীয় দাগ-টাগ তুলে চেয়ে দেখেন কয়েক মিনিট ফার্স্ট হয়ে আছে। টাইম ঠিক করে নিয়েছেন। ঘষামাজার ব্যস্ততা দেখে মায়ের মনে সন্দেহ জেগেছিল, শেষে বলেই দিয়েছিলেন বিক্রির ইচ্ছার কথা। মা বিক্রি করতে দেননি; অন্যভাবে টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে মাসেই বাবার প্রমোশন হয়েছিল। টাকার জন্য পরে আর চিন্তা করতে হয়নি। কলেজের যাবতীয় খরচ ঠিক মতো চলেও পকেটে কিছু থাকত। তখনই সিগারেট ধরেছিলেন; আর ঘড়িটা তখন থেকেই সমস্যা করত। দু-চার দিন পর পরেই দু’এক মিনিট ফার্স্ট হতো। ঘড়ি ব্যবহারকারীদের জন্য ফার্স্ট হওয়াটা ক্ষতিকর কিছু না, বরং কোথাও যেতে,কোনো কিছু করতে কয়েক মিনিট হাতে থাকে।
মুখের পাশটা অন্ধকারে কিন্তু ওর ফরসা মুখটা স্পষ্ট দেখা যায়, কপালে একটা মশা; রক্ত খেয়ে ফুলে আছে। সামান্য এগিয়ে তিনি সেটা মারলেন।
ডিগ্রি পাস করা পর্যন্ত এমন ছিল; ফার্স্ট হয়ে থাকত, তারপরে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটা বছর টিউশনিতে কেটেছে, তখন ঠিকমতো সময় দিয়েছে। এরপরে বাবা মারা গেলেন। বছর দুয়েক পরে বিয়ে করতে হলো। প্রথম সন্তান হলো মেয়ে। এর কয়েকদিন পর থেকেই ঘড়িটা স্লো হতে থাকল। চব্বিশ ঘণ্টায় দু-চার মিনিট। ঘড়ি স্লো হওয়াটা ক্ষতিকর। মেকার দেখানো আরম্ভ হলো, কিছুদিন ভালো থাকে, তারপর আবার আগের মতো স্লো হয়ে যায়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই অবস্থা চলছে।
কিনি কিনি করেও আরেকটা ঘড়ি কেনা হয়নি। কিছুই তো বদলানো হয়নি। এই যে খাট, ক্যাঁচক্যাঁচ করছে, এই যে খানাডুলিÑভাত-কাপড়, টাকা-পয়সা সব কিছু রাখার একটাই জায়গা। সবই তো সেই বিয়ের পরে পরেই কেনা। ফ্যানটা ঘুরছে, সিনেমা হলের সেই আদিম যুগের ডায়নামোর মতো শব্দ হয়; কিছুই পাল্টানো হলো না। ছোট্ট মেয়েটি মাঝে মাঝে মর্জি করে ফিডার ছুড়ে পেলে দেয়, খেতে চায় না। বলে তাকে নতুন ফিডার কিনে দিতে হবে। আসলে ওর জন্মের পরে আর ফিডার কেনা হয়নি। এটা বড় মেয়ের জন্মের পরে নানাবাড়ি থেকে দেওয়া হয়েছিল। মেয়েটি বেশিদিন ফিডার খায়নি, হাঁটতে শেখার পরেই দুধ ছেড়ে ভাত ধরেছে।
বড়টার জন্মের পাঁচ বছর পরে ছোটটির জন্ম। পুরনো ফিডারেই নিপল বদলে বদলে খেতে দেওয়া হয়েছে। ধারণা ছিল সেও অল্প দিনে ভাত ধরবে, কিন্তু হাঁটতে শিখেছে, কথা বলতে শিখেছে, ফিডার নিয়ে বড়দের মতো করে মুখ ভেঙে সমালোচনা করতে শিখেছে অথচ ফিডার ছাড়তে পারেনি। ভাতও খেতে শিখছে না। বহুদিনের ব্যবহারে স্বচ্ছ ফিডার পুরোপুরি ঘোলা হয়ে গেছে। ফাটা ফাটা আঁকাউঁকিতে ভরে গেছে। ওর জন্য নতুন একটা ফিডার কেনা হয়ে ওঠেনি।
স্ত্রী খাবার বেড়ে খাটের এক পাশে রেখে ঘুমন্ত ছোট মেয়েটির গায়ে একটা তোয়ালে মেলে দিয়ে ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। ফ্যানের শব্দ বেড়ে গেছে। তিনি কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন ফ্যানটার দিকে। তারপর আবার ঘড়িটার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন পুরোপুরি। খাটের কোনায় রাখা হাতুড়িটা এক হাতে তুললেন। এতক্ষণ স্ত্রী সেটা দেখতে পায়নি, অথবা খেয়াল করেনি। বালিশের কভারের রঙে মিশে রয়েছিল। এখন দেখেই জিজ্ঞাসা করে, “এটা দিয়া কী করবা? নতুন এই হাতুড়ি কিনে আনছ ক্যান?”
উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না তিনি। চুপচাপ আবার হাতুড়িটা বালিশের নিচে রেখে খাট থেকে নামলেন। এবার জামা খুলে, লুঙি পরে, হাত-মুখ ধুতে বাইরে যাবার জন্য এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে গামছা খুঁজতে লাগলেন।
স্ত্রী ঘুমন্ত মেয়েটির গায়ের ওপর থেকে তোয়ালেটা তুলে হাতে দিয়ে বলে, “গামছা একটা আনন লাগবে, আগেরটা নরম হয়ে ফেঁসে গেছে। ফেলে দিয়ে, আলমারি থেকে এটা নামাইছি।”
তিনি চেয়ে দেখেন বিয়ের সময় কেনা সেই গোলাপি তোয়ালেটা, বহুদিনের ব্যবহারে বিবর্ণ হয়ে গেছে। এক গামছা থেকে আরেক গামছার মাঝখানের কয়েকটা দিনের জন্য প্রতিবারই এটা নামানো হয়। টিউবওয়েল থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসে খেতে বসলেন। নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে ঘুমন্ত মেয়েটির পায়ের কাছে বালিশ নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়লেন।
ফ্যানটা প্রচণ্ড শব্দ করে ফুল স্পিডে ঘুরছে। ফ্যানঝোলানো সুপারি কাঠের আড়াটা ঠকঠক করে কাঁপছে। তাঁর নিজের ভেতরেও কি এমন কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে! ফ্যানটার দিকে এখন আর চোখ রাখা যাচ্ছে না। অসহ্য লাগছে, মাথা ঘোরার মতো অবস্থা। একটা হাত কপালে এনে কপাল আর চোখ দুটি ঢেকে রাখলেন। এবার যেন পার্থিব জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। পিরে গেছেন নিজদেশে, কিন্তু সেখানে ভয়।
অফিসে কেরানির কাজ করছেন আট বছর ধরে। কোনদিন কেউ সেধে দুয়েকটা টাকা দেয়নি। সবাই ঘুষের টাকা নিচ্ছে, তার ভাগ্যেকোনোদিন জোটেনি। কেউ সেধেও দেখেনি। এদেশে না চাইলে কিছু পাওয়া যায়? চক্ষুলজ্জায় চাইতে পারেননি, সে জন্যই পাননি। টাকার ব্যাপারে নীতিগত বৈধতা নিয়েই এত বছর ভাবাভাবি করে অস্থির হয়েছেন। গতকাল ছিল সেই ব্যতিক্রম দিনটা। ভদ্রলোকের কাজটা করে দেওয়ার পরে পাঁচশ টাকার একটা নোট ভদ্রলোক নিজেই টেবিলের ওপর রেখে গিয়েছিলেন। অন্যান্য কাগজপত্র গুছিয়ে নেওয়ার এইটুকু সময়ে হেড অফিসের তদন্ত কর্মকর্তা এসে হাজির! দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের যে পরিবর্তন ঘটে গেছে, সে খবরটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মনে করেই তিনি গুরুত্ব দেননি। কিন্তু কীভাবে কী ঘটে গেলো!
পাঁচশ টাকার নোট কোথা থেকে এলো? সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট হলো। একটা মামলাও নাকি হয়েছে, আজ শুনলেন। চাকরিও আজ গেছে। সবাই যে উকিল ধরতে বলেছে তার একদিনের কোর্ট ফি এক মাসের বেতনেও হবে না। ধরতে পারলে নাকি চাকরি বাঁচানো যাবে, কেউ তাঁর বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে না। ভাগ্য ভালো যে গত মাসের বেতনের টাকাটা তুলতে পেরেছেন। ব্যাংকের ডিপোজিট স্কিমের টাকাটা অফিস থেকে এক ফাঁকে বাইরে গিয়ে জমা করে দিয়েছেন। অন্যভাবে খরচ করার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু কী হলো! আগামীকাল কী হবে? পরশু কী হবে? এভাবে ভাবতে চেষ্টা করলেন। বেশিদূর যেতে পারলেন না। নিজেকে কখনও বেকার, উদভ্রান্ত, কখনও ডোরাকাটা পোশাকে গরাদের ভেতর দেখতে পেলেন। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লেন।
ঘুম থেকে জাগলেন সন্ধ্যার পরে। এক ভঙ্গিতেই ঘুমিয়েছেন। তখনও তাঁর হাতটা চোখ আর কপালে। উঠে দেখেন ছোট মেয়েটি মায়ের কোলে বুকের দুধ খাচ্ছে। বড় মেয়ে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে স্কুলব্যাগের পাশে। মুখের পাশটা অন্ধকারে কিন্তু ওর ফরসা মুখটা স্পষ্ট দেখা যায়, কপালে একটা মশা; রক্ত খেয়ে ফুলে আছে। সামান্য এগিয়ে তিনি সেটা মারলেন। শিশু মেয়েটির কপাল রক্তে ভরে গেল। আস্তে আস্তে ঘষে মুছে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
স্ত্রী জিজ্ঞাসা করে, “কী হইছে কও না! আজ একটা কথাও বললা না। কিছু একটা হইছে, কপালে হাত দিয়া ঘুমানো ভালো না, তুমি বিকাল থিকা এ পর্যন্ত ঠিক কপালে হাত দিয়াই ঘুমাইলা!
বড় মেয়ে জেগে উঠে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে নেমে এসেছ। বাচ্চারা ভয় পাবে বলে তার মৃতদেহটা তার স্ত্রী ঢেকে দিল সেই বিবর্ণ তোয়ালেটা দিয়ে।
কোনো উত্তর না দিয়ে বাইরে গেলেন। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বাথরুম সারলেন। কুঅভ্যাস হয়ে গেছে, আগে সিগ্রেট ধরালে ক্লিয়ার হতো, মাসখানেক হয় সিগ্রেট ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু শুধু মাসে তিনশ টাকা খরচ! এ টাকায় মেয়েটি টিচারের কছে পড়তে পারে। সামান্য টাকায় বেচারা দয়া করে দুবেলা পড়ায়।
হাত-মুখ ধুয়ে এসে দেখেন খাটে মশারি ফেলে, মেয়েদের যথাস্থানে শুইয়ে, সবার বালিশ ঠিক করে রেখে মেঝেতে ছেঁড়া মাদুর পেতে ভাত বেড়ে বসে আছে স্ত্রী। কিছুক্ষণ তিনি স্ত্রীর কাছে বসলেন। তারপর উঠে গেলেন। একবার ইচ্ছা হলো ওর হাতটা কপালে এনে ছোঁয়াবেন, একটু ভালো লাগবে। কিন্তু তা না করেই মশারির ভেতর উঠে এসে শুয়ে পড়লেন। চোখবুজে পড়ে রইলেন, যেহেতু এখন আর ঘুম হবে না। অবেলায় অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছেন।
চোখ বুজেই শুনতে পেলেন স্ত্রী কয়েকবার খাওয়ার কথা বলেছে। তারপর নিজেই খেতে বসেছে। সবকিছু গুছিয়ে মশারিতে ঢুকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, শুয়ে, বেডসুইচ অফ করে দিল। কিছুক্ষণ পরেই সে ঘুমিয়ে পড়ে, নাক থেকে শব্দ হতে থাকে।
এবার তিনি অন্ধকারেই অনুমানে বিছানা থেকে নেমে এলেন। আবার ইচ্ছা হলো স্ত্রীর হাতটা এনে কপালে আর বুকে একটু জড়িয়ে রাখবেন। এবারও আবেগকে অগ্রাহ্য করলেন। বাতি জ্বাললেন না। এবার ইচ্ছা হলো বড় ময়ের মুখটা একটু দেখবেন। বাতি না জ্বালিয়েই ঠিক যেন দেখতে পেলেন। কী নিশ্চিন্ত আরামে ঘুমাচ্ছে, শিশুরা যেমন ঘুমায়। ফরসা মুখটা ঘামের বিন্দুতে ভরে গেছে। একটা মশা কপালে বসে আছে। মশারির ভেতর ওটা ঢুকল কেমন করে! বোধহয়কোনো বড় ছিদ্র আছে মশারিরকোনো কোনায়।
বালিশের নিচ থেকে হাতড়িটা হাতে নিলেন। হাত থেকে ঘড়িটা খুলে রাখলেন মেঝেতে। রেডিয়ামের কাঁটা আর বিন্দুগুলো এখনও আবছা আলোয় জ্বলছে। শব্দ হচ্ছে, এখনও স্পন্দন আছে। ঘড়ির কাঁটাদুটি যেকোনোভাবে হোক বেঁচে থাকতে চাইছে। মেঝেতে রাখা ঘড়িটার দিকে তিনি অনেকক্ষণ চেয়ে রইলেন। তারপর ডানহাতে হাতুড়িটা তুলে সজোরে এক আঘাত করলেন। চিরিক করে ছলকে ওঠা রক্তে দেয়াল আর মেঝে ভরে গেল ঘড়ি থেকে।
তিনি এক দিকে কাত হয়ে পড়ে গেলেন। কেমন একটা শব্দ হলো! ভয়ে চিৎকার করে উঠে বাতিজ্বেলে স্ত্রী নিচে নেমে এসে দেখে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। বড় মেয়ে জেগে উঠে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে নেমে এসেছ। বাচ্চারা ভয় পাবে বলে তার মৃতদেহটা তার স্ত্রী ঢেকে দিল সেই বিবর্ণ তোয়ালেটা দিয়ে।
কোনো শব্দই হলো না আর।